Blog

অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক

কিশোরগঞ্জের চারটি উপজেলা হাওরবেষ্টিত। এগুলো হলো নিকলী, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা। বর্ষাকালে যখন হাওরাঞ্চল পানিতে কানায় কানায় ভরে উঠে। একসময় এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা একমাত্র নৌকার উপর নির্ভরশীল ছিলো। হাওরের প্রবাদও আছে “বর্ষাকালে নাও আর শুকনায় পাও” ; অর্থাৎ বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হাঁটাই যাতায়তের একমাত্র মাধ্যম। এখন দিন বদলেছে। বর্তমানে হাওরে যোগাযোগের জন্য নির্মিত হয়েছে অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সাবমারসিবল সড়ক। ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি অল ওয়েদার সড়ক নামে পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যানে  এটি এখন পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে!

কখন যাবেন

হাওর মূলত সব সিজনেই তার রূপ বদলায়। এক এক মৌসুমে আর এক এক রঙ। তবে অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক ভ্রমণের আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তখন হাওরের আসল রূপ দেখতে পাবেন। চারদিকে জলমগ্ন থাকে। তার মাঝখান দিয়ে চলে গেছে পিচ ঢালা কালো রস্তা। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাবমারসিবল রোড ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় যেতে।

কিভাবে যাবেন সাবমারসিবল রোড

অষ্টগ্রাম মিঠামইন রোড ভ্রমণের জন্য প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার গোলাপবাগ থেকে অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। দিনে গিয়ে আবার ঐদিনই ঢাকায় ফিরে আসতে চাইলে আপনাকে সকাল ৭টার মধ্যে রওনা করতে হবে।

ঢাকা থেকে চাইলে এগারোসিন্ধুর ট্রেনেও কিশোরগঞ্জ যেতে পারবেন। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে এই ট্রেনটি সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১২৫ থেকে ২৫০ টাকা। মনে রাখা দরকার আসার পথে আপনি ট্রেন পাবেন না, যদি ঐদিনই ফিরে আসতে চান। বাসেই ফিরতে হবে।

কিশোরগঞ্জ থেকে হাওর রোড

সাবমারসিবল রোড ভ্রমণ করতে চাইলে প্রথমে কিশোরগঞ্জ সদর থেকে করিমগঞ্জ বালিখোলা ঘাট যেতে হবে। কিশোরগঞ্জ সদর থেকে বালিখোলা ফেরী ঘাটের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। সেখান থেকে ফেরী দিয়ে ধনু নদী পার হয়ে মিঠামইন বাজার। নদী পার হতে ঘন্টাখানেক সময় লাগবে। বাজার থেকে একটু সামনে গেলে তিন রাস্তার মোড়। সেখানে সাইনবোর্ডে লিখা দেখবেন বামে ইটনা ডানে অষ্টগ্রাম। এরপর অল ওয়েদার সড়ক ধরে ইটনা বা অষ্টগ্রামের দিকে যেতে পারবেন। যে পথেই যান, একই পথে ফিরে আসতে হবে। দুইটা রাস্তাতেই যেতে চাইলে কিছুদূর গিয়ে ফিরে এসে অন্য রাস্তাতে যান। সেখানে ঘোরার জন্য মোটরবাইক বা ইজিবাইক ভাড়ায় পাবেন। তবে মোটরবাইক সবসময় নাও থাকতে পারে। কিশোরগঞ্জ থেকে যাওয়া আসা ঘোরাঘুরি মিলিয়ে আবার কিশোরগঞ্জ ফেরত আসতে ৬/৭ ঘন্টা সময় লাগবে। আপনি যদি নিকলী হাওর সহ ঐ রাস্তায় ঘুরতে চান তাহলে নিকলী বেড়িবাধ থেকে আপনাকে নৌকা রিজার্ভ নিতে হবে। দেড় ঘন্টার হাওর ভ্রমণ শেষে পৌছে যাবেন ঐ রাস্তায়।

কোথায় খাবেন

খাবারের জন্য অষ্টগ্রাম বা মিঠামইনে ভালো কোনো রেস্টুরেন্ট নাই। তবে মোটামুটি মানের অনেক খাবারের দোকান পেয়ে যাবেন। এসব দোকানে হাওরের তাজা মাছ, ভাত ভর্তা মাংস পাওয়া যায়। জনপ্রতি খাবার খরচ পড়োবে ১০০ থেকে ২০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

অষ্টগ্রাম বা মিঠামইনে থাকার জন্য সরকারী ডাক বাংলো আছে। থাকতে চাইলে আগে থেকে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া থাকার ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই। একান্তই থাকতে হলে কিশোরগঞ্জ শহরে এলে ভালো মানের কিছু হোটেল পাবেন। এগুলোর মধ্যে হোটেল রিভারভিউ, ক্যাসেল সালাম, নিরালা, হোটেল গাঙচিল, উজানভাটি উল্লেখযোগ্য। এইসব হোটেলে থাকতে পারবেন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

বর্ষায় হাওর ভ্রমণ এখন খুবই জনপ্রিয়। অষ্টগ্রাম মিঠামইন রোড ভ্রমণে অনেকে বাইক নিয়ে আসেন। অনেক বাইকারদেরকে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে উশৃঙ্খল বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাতে দেখা যায়। যার ফলে এখানে প্রতিনিয়ত মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। বাইকারদেরকে অতিরিক্ত গতিতে বাইক চালাতে নিরুৎসাহিত করা হলো। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নৌকায় চড়বেন না। স্থানীয় লোকজন ও মাঝিদের সাথে মার্জিত আচরণ করুন। নৌকা ভাড়া নেওয়ার সময় দরদাম করে নিবেন ভালোমতো। অষ্টগ্রামের রয়েছে ৪০০ বছরের পুরনো পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট কুতুবশাহ মসজিদ। আর মিঠামইনের কামালপুরে আছে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের গ্রামের বাড়ি। সময় পেলে এগুলোতেও ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। অষ্টগ্রাম মিঠামইন রোড খুবই পরিচ্ছন্ন জায়গা। যেখানে সেখানে অপচনশীল দ্রব্য ফেলবেন না।

আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

অষ্টগ্রাম মিঠামন ইটনা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিকলি হাওর, মিঠামইন হাওর, বালিখলা হাওর, অষ্টগ্রাম হাওর ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

মিঠামইন হাওর

মিঠামইন হাওর এর অবস্থান কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায়। হাওর মানেই চারদিকে থইথই পানি, ছোট নৌকায় মানুষের কর্মচাঞ্চল্যতা, হাওরের পানিতে দ্বীপের মতো ভেসে থাকা গ্রাম। ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে হাওর আলাদা বিশেষত্ব বহন করে। বর্ষায় হাওর মানেই এক ভিন্ন রকম প্রকৃতি, ভিন্ন রকমের জীবনধারা। নিজের দৈনন্দিন জীবন থেকে কিছুটা সময় বের করে বর্ষায় একবার হাওর জীবন উপভোগ করতেই পারেন। মিঠামইন এর চারপাশে রয়েছে কিশোরগঞ্জের অন্য তিনটি হাওর উপজেলা ইটনা, অষ্টগ্রাম ও নিকলী। তাই বলা চলে ভ্রমণের জন্য আদর্শ একটি জায়গা। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়ি এই উপজেলার কমলাপুর গ্রামে। চাইলে ভ্রমণের সময় সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসতে পারেন।

কখন যাবেন মিঠামইন হাওর

হাওরের প্রকৃতি একেক সিজনে একেক রকম। হাওর সব মৌসুমেই তার রূপ বদলায়। মিঠামইন হাওর ভ্রমণে আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তখন হাওরের আসল রূপ দেখতে পাবেন। চারদিকে জলমগ্ন থাকে। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিঠামইন ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় যেতে।

কিভাবে যাবেন

মিঠামইন যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার মহাখালী গোলাপবাগ ও সায়েদাবাদ থেকে অনন্যা, অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যেতে সময় লাগে সাড়ে তিন ঘন্টার মতো।

ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ

ট্রেনে মিঠামইন যেতে চাইলে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে আসতে হবে। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে এই ট্রেনটি সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। চাইলে বিমানবন্দর  থেকেও উঠতে পারবেন। এটি টঙ্গী, নরসিংদী ও ভৈরব বাজার ইস্টিশন হয়ে কিশোরগঞ্জ যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১৩০ থেকে ২৮০ টাকা। কমলাপুর থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত যেতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লাগে।

কিশোরগঞ্জ থেকে মিঠামইন হাওর

কিশোরগঞ্জে বাস বা ট্রেন থেকে নেমে প্রথমে একরামপুর বাস/সিএনজি স্টেশনে যেতে হবে। একরামপুর থেকে লোকাল সিনজি বা অটোরিকশা নিয়ে চামড়া বন্দর ঘাট। ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে মিঠামইন হাওর ঘুরে আসতে পারবেন। ভ্রমণের জন্য নৌকা ভাড়া হয়ে থেকে ঘন্টা হিসেবে। ঘন্টাপ্রতি ভাড়া নিবে ২৫০-৩৫০ টাকার মতো। আপনি চাইলে সারাদিনের জন্যও নৌকা ভাড়া করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে খরচ কমে আসবে। চামড়া ঘাট থেকে নৌকায় মিঠামইন যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টার মতো।

মিঠামইনে হাওর বাদেও দেখার মতো অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। এর মধ্যে মালিকের দরগা, দিল্লির আখড়া ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এর বাড়ি উল্লেখযোগ্য। এই অঞ্চলে অনেক ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার এখনো প্রচলন আছে। যেমন নৌকা বাইচ, লাঠিখেলা ইত্যাদি। বর্ষায় প্রায়ই নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয় মিঠামইন হাওরে। আগে থেকে খোঁজ খবর নিয়ে গেলে এই খেলাটি দেখতে পারবেন। নৌকা বাইচ এর স্মৃতি আপনার অনেকদিন মনে থাকবে।

কোথায় থাকবেন

মিঠামইনে থাকার ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই। তারপরও কোনো কারণে চাইলে শিকদার হোটেল ও সোহেল গেস্ট হাউজে থাকতে পারবেন। এগুলো সাধারণ মানের বোর্ডিং। এছাড়া উপজেলা ডাকবাংলোতে থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে আগে থেকে যোগাযোগ করে যেতে হবে। অথবা কিশোরগঞ্জ শহরে হোটেল রিভারভিউ, ক্যাসেল সালাম, নিরালা, হোটেল গাঙচিল, উজানভাটি নামে ভালো মানের কিছু হোটেল রয়েছে। এগুলোতে থাকতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

খাওয়ার জন্য মিঠামইন বাজারে মোটামুটি মানের কয়েকটি খাবারের দোকান আছে। এসব রেস্টুরেন্টে ভাত ভর্তার সাথে মিঠামইন হাওরের হরেক রকম তাজা মাছের আইটেম পাবেন। জনপ্রতি খাবার খরচ পড়োবে ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। মিঠামইন হাওরে রাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাধারণ মানের। বড় গ্রুপ না হলে রাতে নৌকায় রাত না কাটানোই শ্রেয়। নৌকা ভাড়ার বিষয়টা ওইদিনের পর্যটক সমাগমের উপর নির্ভর করে। সাধারণত শুক্রবার বা সরকারী ছুটির দিনে নৌকা ভাড়া কিছুটা বেশি থাকে। স্থানীয় মাঝি ও অন্যান্যদের সাথে সবসময় ভালো ব্যবহার করুন। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।

আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

অষ্টগ্রাম মিঠামন ইটনা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিকলি হাওর, অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক, বালিখলা হাওর, অষ্টগ্রাম হাওর ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

অষ্টগ্রাম হাওর

অষ্টগ্রাম হাওর এর অবস্থান কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলায়। কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। যতদূর চোখ যায় চারপাশে থইথই পানি, সেই পানির মাঝখানে ভেসে থাকা দ্বীপের মতো ছোট ছোট গ্রাম। নৌকায় মানুষের দৈনন্দিন যাতায়ত, জেলেদের মাছ ধরার কর্মচাঞ্চল্যতা। সব মিলিয়ে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে বেড়ানোর জন্য আদর্শ একটি জায়গা অষ্টগ্রাম হাওর।

কখন যাবেন অষ্টগ্রাম হাওর

হাওর মূলত সব সিজনেই তার রূপ বদলায়। এক এক মৌসুমে আর এক এক রঙ। তবে অষ্টগ্রাম হাওর ভ্রমণের আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তখন হাওরের আসল রূপ দেখতে পাবেন। চারদিকে জলমগ্ন থাকে। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অষ্টগ্রাম হাওর ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় যেতে।

কিভাবে যাবেন

অষ্টগ্রাম হাওর যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ জেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে কিশোরগঞ্জ আসা যায়। ঢাকার গোলাপবাগ থেকে অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। বাস থেকে নামবেন কুলিয়ারচর। কুলিয়ার লঞ্চ ঘাট থেকে সকাল ৮টা থেকে এক দেড় ঘন্টা পরপর লঞ্চ ছাড়ে অষ্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। ভাড়া ৯০ টাকা। চাইলে স্পিডবোটেও যেতে পারবেন অষ্টগ্রাম। সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া পড়োবে ২০০ থকে ২৫০ টাকা। আর বেশি মানুষ গেলে নৌকাও রিজার্ভ করতে পারবেন ঘাট থেকে।

ঢাকা থেকে ট্রেনেও অষ্টগ্রাম হাওর যেতে পারবেন। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে সকাল সাতটায় কিশোরগঞ্জগামী এগারোসিন্ধুর ট্রেন ছেড়ে যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১১০ থেকে ২৫০ টাকা। ট্রেন থেকে নামবেন কুলিয়ারচর ইস্টিশনে। তারপর লঞ্চঘাট থেকে একইভাবে অষ্টগ্রাম যেতে পারবেন।

অন্যকোনো ট্রেনে গেলে ভৈরব বাজার ইস্টিশনে নেমে সেখান থকে সিএনজিতে কুলিয়ারচর আসা যাবে। ভৈরব বাজার থকে কুলিয়ারচরের লোকাল সিএনজি ভাড়া ৪০ টাকা। রিজার্ভ নিলে ২শ টাকার নিবে।

কোথায় থাকবেন অষ্টগ্রাম হাওর

অষ্টগ্রামে থাকার ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই। তারপরও কোনো কারণে চাইলে উপজেলা ডাকবাংলোতে থাকতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আগে থেকে যোগাযোগ করে যেতে হবে। আর কয়েকজন একসাথে গেলে নৌকাতেও রাত্রিযাপন করতে পারবেন। জোছনা রাতে হাওরে কাটাতে পারলে আপনার অনেকদিন সেই স্মৃতি মনে থাকবে। ১৫ জনের বেশি মানুষ হলে রাত্রিযাপনের আগে থানায় রিপোর্ট করতে হয়। রাতে হাওরে নৌকায় থাকলে নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন।

কোথায় খাবেন

খাওয়ার জন্য অষ্টগ্রাম বাজারে সাধারণ মানের কয়েকটি খাবারের দোকান আছে। এসব রেস্টুরেন্টে ভাত ভর্তার সাথে অষ্টগ্রাম হাওরের হরেক রকম তাজা মাছের আইটেম পাবেন। জনপ্রতি খাবার খরচ পড়োবে ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পনির এখানেই পাওয়া যায়। পনির খেতে চাইলে আগেরদিন রাতে স্থানীয় পনির বিক্রেতাদের জানিয়ে রাখতে হবে।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। অষ্টগ্রাম হাওরে রাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাধারণ মানের। বড় গ্রুপ না হলে রাতে নৌকায় রাত না কাটানোই শ্রেয়। আর নৌকা ভাড়ার বিষয়টা ওইদিনের পর্যটক সমাগমের উপর নির্ভর করে। সাধারণত শুক্রবার বা সরকারী ছুটির দিনে নৌকা ভাড়া কিছুটা বেশি থাকে। রাতে যেখানে সেখানে নৌকা না রেখে, অষ্টগ্রাম বাজারের কাছাকাছি নোঙ্গর করুন। স্থানীয় মাঝি ও অন্যান্যদের সাথে সবসময় ভালো ব্যবহার করুন। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।

অষ্টগ্রামের উত্তরে কিশোরগঞ্জের ইটনা ও মিঠামইন। দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর। পূর্বে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই ও পশ্চিমে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা। এগুলোও হাওর এলাকা। এসব এলাকায় গেলে সেখান থেকে অষ্টগ্রাম বেড়িয়ে আসতে পারেন সহজেই। কিংবা অষ্টগ্রাম গেলে হাতে সময় থাকলে এর যেকোনোটিতে ঘুরে আসতে পারবেন।

আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

অষ্টগ্রাম মিঠামন ইটনা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিকলি হাওর, অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক, বালিখলা হাওর, মিঠামইন হাওর ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

নিকলী হাওর

নিকলী হাওর (Nikli Haor) কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলি উপজেলায় অবস্থিত। কিশোরগঞ্জ সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। প্রকৃতি এখানে তার রূপের পসরা সাজিয়ে রেখেছে ভ্রমণপ্রেমীদের আতিথেয়তা দিয়ে। চারদিকে বিস্তৃর্ণ জলরাশি, থইথই পানি, এর মাঝখানে দ্বীপের মতো ভেসে আছে ছোট ছোট গ্রাম। এর মধ্যেও জেলেদের মাছ ধরার কর্মচাঞ্চল্যতা। ঢাকা থেকে একদিনে বেড়িয়ে আসার মতো আদর্শ একটি জায়গা নিকলি হাওর। ইচ্ছে হলে বড় নৌকা ভাড়া নিয়ে রাতেও থাকতে পারবেন এখানে।

নিকলী হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বছরের এক এক সময় হাওরের এক এক রূপ থাকে। তবে পানি দেখতে চাইলে আপনাকে বর্ষাকালে নিকলি আসতে হবে। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিকলী হাওর ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় আসতে।

নিকলী যাওয়ার উপায়

নিকলী হাওর যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার গোলাপবাগ থেকে অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। দিনে গিয়ে আবার ঐদিনই ঢাকায় ফিরে আসতে চাইলে আপনাকে সকাল ৭টার মধ্যে রওনা করতে হবে। বাস থেকে নামতে হবে কিশোরগঞ্জের আগেই কটিয়াদি বাস স্ট্যান্ডে। ঢাকা থেকে কটিয়াদি পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা। সেখান থেকে নিকলি হাওরের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। রিজার্ভ সিএনজি নিলে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হবে। যেতে সময় লাগে ১ ঘন্টা ২০ মিনিট এর মতো।

ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ

নিকলী হাওরে ডে ট্যুর দিতে চাইলে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে আসতে হবে। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে এই ট্রেনটি সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১২৫ থেকে ২৫০ টাকা। সবচেয়ে ভালো হবে কিশোরগঞ্জের আগে গচিহাটা ইস্টিশনে নেমে যেতে পারলে। এখানেও ট্রেন থামে। কমলাপুর থেকে গচিহাটা পর্যন্ত যেতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লাগে। সেখান থেকে নিকলীর দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সিএনজি রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মতো। যেতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট। মনে রাখা দরকার আসার পথে আপনি ট্রেন পাবেন না, যদি ঐদিনই ফিরে আসতে চান। বাসেই ফিরতে হবে।

কিশোরগঞ্জ থেকে নিকলী হাওর

কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকেও নিকলি হাওর যেতে পারবেন। কিশোরগঞ্জ রেল ইস্টিশনের পাশেই আছে নিকলি যাওয়ার সিএনজি ইস্টিশন। ওখান থেকে নিকলীর দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। লোকাল সিএনজিতে ভাড়া জনপ্রতি ৭০ টাকা। আর রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টার মতো।

ভৈরব থেকে নিকলী হাওর

ভৈরব বাজার থেকে লোকাল কিংবা রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে নিকলী হাওর যাওয়া যায়। লোকাল সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ১২০ টাকা। আর রিজার্ভ নিলে খরচ পড়োবে ৬০০ টাকা। ভৈরব থেকে সিএনজিতে নিকলি যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টার মতো। আপনি যেখান থেকে যেভাবে নিকলী হাওর যান না কেন, পথের দুই পাশের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। হাওরের কাছাকাছি যেতেই আপনার মন প্রশান্তিতে ভরে উঠবে।

কোথায় খাবেন

সিএনজি থেকে যেখানে নামবেন সেখানে মোটামোটি মানের কয়েকটি খাবারের দোকান আছে। তার মধ্যে হোটেল সেতু বা ক্যাফে ঢেউ উল্লেখযোগ্য। এসব রেস্টুরেন্টে ভাত ভর্তার সাথে নিকলী হাওরের হরেক রকম তাজা মাছের আইটেম পাবেন। জনপ্রতি খাবার খরচ পড়োবে ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো।

নিকলী হাওরে নৌকা ভ্রমণ

খাওয়া দাওয়া শেষে ইজিবাইকে বেড়ি বাঁধের শেষ প্রান্তে চলে আসুন। সেখান থেকে দরদাম করে নৌকা ঠিক করতে পারবেন। ছোট নৌকার ভাড়া ঘন্টাপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর বড় নৌকার ভাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। ছোট নৌকায় ৮/১০ জন আর বড়ো নৌকায় ৩০ জন বসতে পারবেন অনায়াসেই। দুই তিন ঘন্টার জন্য নৌকা নিলে ভাড়া একটু কমে আসবে।

চেষ্টা করবেন কমপক্ষে তিন ঘন্টা যেন নৌকায় ঘোরা যায়। নৌকায় উঠার পর প্রথমেই নৌকা নিয়ে চলে যান ছাতিরচর গ্রামে। এখানে আছে ছোটখাটো সোয়াম্প ফরেস্ট। চাইলে জলাবনে নেমে গোসল সেরে নিতে পারেন। তারপরে আপনার গন্তব্য হবে চর মনপুরা। এই চরে নেমে কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়াতে পারেন। ঘোরাঘুরি শেষে ঘাটে ফিরে এসে নিকলী সিএনজি স্টেশন থেকে সিএনজি নিয়ে কটিয়াদি চলে আসুন। কটিয়াদি থেকে ঢাকাগামী লাস্ট বাস ছেড়ে যায় সন্ধ্যা সাতটায়। তাই সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন।

কোথায় থাকবেন

নিকলীতে থাকার ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই। তারপরও কোনো কারণে চাইলে চেয়ারম্যান গেস্ট হাউজ বা উপজেলা ডাকবাংলোতে থাকতে পারবেন। অথবা কিশোরগঞ্জ শহরে এলে ভালো মানের কিছু হোটেল পাবেন। সেখানে থাকতে পারবেন। আবার কয়েকজন একসাথে এলে নৌকাতেও রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

আপনি ঢাকা থেকে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চাইলে অবশ্যই বাসে যাবেন। সকাল সাতটার মধ্যে রওনা করাই ভালো। কটিয়াদি স্টেশনে নামলে আপনার সময় বাঁচবে। কটিয়াদি থেকে ফেরার পথে ঢাকার লাস্ট বাস সন্ধ্যা সাতটায়। তাই সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। নিকলী হাওরে রাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাধারণ মানের। বড় গ্রুপ না হলে রাতে নৌকায় রাত না কাটানোই শ্রেয়। আর নৌকা ভাড়ার বিষয়টা ওইদিনের পর্যটক সমাগমের উপর নির্ভর করে। সাধারণত শুক্রবার বা সরকারী ছুটির দিনে নৌকা ভাড়া কিছুটা বেশি থাকে।

আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

অষ্টগ্রাম মিঠামন ইটনা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মিঠামইন হাওর, অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক, বালিখলা হাওর, অষ্টগ্রাম হাওর ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এই ঝর্ণার আরেকটি নাম হলো মায়াবী ঝর্ণা। সিলেট শহর থেকে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার দূরত্ব ৬২ কিঃমিঃ। সিলেটের জাফলং থেকে হাঁটাপথে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দূরত্বে এর অবস্থান।  মায়াবী এই ঝর্ণা মূলত ভারতীয় ভূখন্ডে পড়েছে। তারপরও বিএসএফ এর প্রহরায় সেখানে বাংলাদেশীরা ভ্রমণ করতে পারে। সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার মূলত তিনটি ধাপ। শেষ ধাপে রয়েছে একটী রহস্যময় সুড়ঙ্গ! ঝর্ণা বেয়ে উপরে উঠা খুব ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। পানির স্রোতের কারণে ঝর্ণার গা সবসময় পিচ্ছিল থাকে। তাই পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে ঝর্ণার উপরে উঠার চেষ্টা না করাই ভালো। নিচ থেকেও চমৎকার ভাবে এই ঝর্ণাটি দেখা যায়। এই ঝর্ণাটি মূলত জাফংলং জিরো পয়েন্টের কাছে।

কিভাবে যাবেন সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

সংগ্রামপুঞ্জি মায়াবী ঝর্ণায় যেতে হলে প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে চায়ের দেশ সিলেট আসতে হবে। বাস, ট্রেন কিংবা উড়োজাহাজে করে আপনি সিলেট আসতে পারবেন। বাসে এলে ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে জাফলং

এই সংগ্রামপুঞ্জি মায়াবী ঝর্ণা অভিযানের জন্য প্রথমে সিলেট থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা বা মাইক্রোবাসে করে আপনি জাফলং যেতে হবে। লোকাল বাস ছাড়ে শহরের শিবগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। মাইক্রোবাসে গেলে আসা যাওয়া রিজার্ভ ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। আর সিএনজি নিলে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা। তাই দলগত ভাবে খরচ কম পড়বে। সিলেট থেকে জাফলং যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।

জাফলং থেকে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

জাফলংয়ে যে নদীটি বয়ে গেছে সেটি পিয়াইন নদী। নদীর তীরেই নৌকা ঘাট পাবেন। সেখান থেকে নৌকা নিয়ে নদী পার হতে হবে। নদীর ওপারে গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণায় যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিবে। সেখান থেকে হেঁটে যেতে ১৫ মিনিটের মতো সময় লাগবে। মনে রাখা দরকার নদী পার হয়ে ৫ মিনিট হাঁটার পরই আপনার মোবাইলে আর নেটওয়ার্ক থাকবেনা। কারণ জায়গাটি ভারতের মেঘালয়ের সীমান্তঘেঁষা।

কখন যাবেন সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারা বছরই ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে ছুটে আসেন। তবে শীতকালে এখানে পানি থাকেনা তেমন। তাই মায়াবী এই ঝর্ণার আসল রূপ দেখতে চাইলে বর্ষায় আসা উচিত। এক কথায় বলা যায় বর্ষা ও তার পরবর্তী সময়টা সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত।

কোথায় থাকবেন

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার নিকটস্থ জনপদ জাফলং। কিন্তু জাফলংয়েও রাতে থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই।  তাই সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার সিলেট শহরে চলে আসতে পারেন। সিলেট শহরে প্রচুর হোটেল রয়েছে। আম্বরখানা, দরগাহ গেইট, জিন্দাবাজার এসব এলাকায় অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হিল টাউন, হোটেল ব্রিটানিয়া, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট হোটেল। এখানে ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যাবে।

বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র‍্যান্ড প্যালেস, হোটেল নূরজাহান ইত্যাদি। রুম ভাড়া ৫০০০ থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে। সিজন অনুযায়ী রুম ভাড়ায় তারতম্য হয়।

একদম সস্তার মধ্যে সিলেটের দরগাহ গেইট এলাকায় অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার সাধ্যমতন হোটেল ভাড়া করতে পারবেন ওখান থেকে।

কি খাবেন কোথায় খাবেন

দুপুরের খাবার জাফলংয়ে খেতে হবে। এছাড়া সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার পথেও একাধিক ভালো মানের রেস্টুরেন্ট পাবেন।  চাইলে ওখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। জাফলংয়ে দুপুরে খাওয়ার খরচ পড়বে জনপ্রতি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা। মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ভর্তা ইত্যাদি মেনু পাওয়া যাবে এখানে।

এছাড়া সিলেট শহরে অনেকগুলো বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসী, ভোজন বাড়ি, পালকি, এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার ভর্তার সাথে আপনার পছন্দ মতো মেনু পাবেন এখানে। খরচ হবে জনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকার মতন। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ২৯ রকমের ভর্তা আছে! চাইলে সকালের নাস্তাও এইসব রেস্টুরেন্টে সেরে নিতে পারবেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা দেখতে গেলে এমনিতেই জাফলং দেখে আসতে পারবেন। কাছাকাছি রয়েছে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। সেগুলোর মধ্যে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল অন্যতম। এছাড়া ঘুরে আসতে পারেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, ভোলাগঞ্জ, কিংবা বিছানাকান্দি  অথবা পান্থুমাই ঝর্ণা থেকেও।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা ভ্রমণের সময় বর্ষাকাল। বর্ষাকালে ঝর্ণা থাকে পূর্ণ যৌবণা। এডভেঞ্চারের নেশায় ঝর্ণায় উঠতে গিয়ে অসতর্ক হয়ে পড়লে যেকোনো দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তখন পিয়াইন নদীতেও অনেক স্রোত থাকে। নদী পার হওয়ার সময়ও সাবধান থাকতে হবে। মনে রাখবেন দলগত ভাবে ভ্রমণ করলে সবসময় খরচ কম পড়বে।

অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

আরো পড়ুন

পান্থুমাই ঝর্ণা

পান্থুমাই ভারতের মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামের নাম। এই গ্রামের নামেই পান্থুমাই ঝর্ণা (Panthumai Waterfall) এর নামকরণ। গ্রামটির অবস্থান সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলংয়ে। শুধু ঝর্ণা নয়, এই গ্রামটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর একটি। মেঘালয়ের পাহাড়, পিয়াইন নদী আর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে এই ঝর্ণা। পান্থুমাই ঝর্ণার অবস্থান মূলত ভারতে। সেখানে এটি বড়হিল ঝর্ণা বা বোরহিল ঝর্ণা নামে পরিচিত। ভারতে হলেও নোকা নিয়ে এই ঝর্ণার কাছাকাছি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত বাংলাদেশীরা যেতে পারে। নৌকা ভাড়া ২শ থেকে ৩শ টাকা।

পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সিলেটকে বলা হয় সৌন্দর্যের রাণী। প্রকৃতির অমোঘ টানে সারা বছরই পর্যটকরা সিলেট ভ্রমণ এ ছুটে আসেন। তবে এখানকার প্রকৃত রূপ দেখা যায় বর্ষায়। পান্থুমাই ঝর্ণাও বর্ষায় দেখতে যেতে হয়। তখন ঝর্ণা থাকে পূর্ণযৌবণা। পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকে মেঘ আর পিয়াইন নদীতে টলটোলে স্বচ্চ জল। তাই এক কথায় বলা যায় জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণ এর ভালো সময়। শুকনো মৌসুমে এখানে নৌকায় যাওয়া যায়না।

কিভাবে পান্থুমাই ঝর্ণা যাবেন

পান্থুমাই ঝর্ণা যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে সিলেট আসতে হবে। বলে রাখা ভালো পান্থুমাই এবং বিছানাকান্দি কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত। তাই পান্থুমাই প্রায় একই খরচে বিছানাকান্দি সহ ঘুরে আসতে পারবেন।

ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে পান্থুমাই ঝর্ণা

পান্থুমাই যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে সিলেট নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। সেখানে বিমানবন্দর রোডের মুখে সিএনজি স্টেশন রয়েছে। এই স্টেশন থেকে লোকাল সিএনজি যায় হাদারপাড় বাজার পর্যন্ত। ভাড়া জনপ্রতি ১০০-১২০ টাকা। চাইলে আপনি পুরো সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে মাথাপিছু পাঁচজন হিসাব করে যে ভাড়া আসবে তারচেয়ে খানিক বেশি দেওয়া লাগতে পারে। রিজার্ভ নিতে চাইলে সিএনজি ছাড়াও লেগুনা ও মাইক্রোবাস ভাড়া পাবেন। হাদারপাড় বাজারে নামার পর আপনি নৌকাঘাট পেয়ে যাবেন। এখান থেকে পান্থুমাই ঝর্ণা ও বিছানাকান্দি যাওয়ার জন্য একসাথে নৌকা রিজার্ভ করুন। সিলেট শহর থেকে হাঁদারপাড় যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। ফিরতেও একই সময় লাগবে। তাই ট্যুর প্ল্যান করার সময় যাওয়া আসার দীর্ঘ সময়টি হিসেবের মধ্যে রাখুন।

নৌকা ভাড়া

হাদারপাড় ঘাট থেকে রিজার্ভ নৌকাভাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্তৃক নির্ধারিত ১৫৫০ টাকা। এক নৌকায় যেতে পারবেন ১০ জন। ইঞ্জিনচালিত এসব নৌকায় বিছনাকান্দি যেতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট। পান্থুমাই আসা যাওয়ায় বাড়তি দেড় ঘন্টা সময় লাগে। বেশিরভাগ সময় মাঝিরা বিছানাকান্দির সাথে পান্থুমাই যেতে বাড়তি টাকা দাবি করে।

সিলেটে কোথায় থাকবেন

পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণ এর জন্য সিলেট শহরকে আপনার কেন্দ্রস্থল বিবেচনা করতে হবে। সিলেট শহরে প্রচুর হোটেল রয়েছে। আম্বরখানা, দরগাহ গেইট, জিন্দাবাজার এসব এলাকায় অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হিল টাউন, হোটেল ব্রিটানিয়া, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট হোটেল। এখানে ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যাবে।

বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র‍্যান্ড প্যালেস, হোটেল নূরজাহান ইত্যাদি। রুম ভাড়া ৪৫০০ থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে। সিজন অনুযায়ী রুম ভাড়ায় তারতম্য হয়।

একদম সস্তার মধ্যে সিলেটের দরগাহ গেইট এলাকায় অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার সাধ্যের মধ্যে হোটেল ভাড়া নিতে পারবেন ওখান থেকে।

কি খাবেন কোথায় খাবেন

পান্থুমাইতে কোনো খাবার দোকান নাই। বিছনাকান্দিতে দুটি ভাসমান রেস্টুরেন্ট রয়েছে। চাইলে ওখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। খরচ পড়বে জনপ্রতি ১২০ থেকে ২০০ টাকা। মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ভর্তা ইত্যাদি মেনু পাওয়া যাবে এখানে। হাদারপাড় বাজারেও কিছু খাবার দোকান আছে। বেশিরভাগ দোকানেই খিচুড়ি হয় বেশি। দাম পড়বে ৫০-১০০ টাকার মধ্যে।

এছাড়া সিলেট শহরে অনেকগুলো বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসী, ভোজন বাড়ি, পালকি, এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার ভর্তার সাথে আপনার পছন্দ মতো মেনু পাবেন এখানে। খরচ হবে জনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকার মতন। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ২৯ রকমের ভর্তা আছে! চাইলে সকালের নাস্তাও এইসব রেস্টুরেন্টে সেরে নিতে পারবেন।

 ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

*নৌকা ও সিএনজি রিজার্ভের সময় ভালোভাবে দরদাম করে নিবেন।
*সাতার না জানলে বেশি পানিতে নামা থেকে বিরত থাকুন।
* বর্ষাকালে পানির প্রবাহ বেশি থাকায় সাঁতার জানলেও গভীর পানিতে না নামাই নিরাপদ।
* দলগতভাবে ভ্রমণ করুন, এতে খরচ অনেকাংশে কম হবে।
*পান্থুমাই ভারতের ভিতরে পড়েছে। তাই মাঝির পরিপূর্ণ নির্দেশনা মেনে চলুন।
*বিছনাকান্দিতে প্রচুর পাথর, হাটাচলার সময় তাই একটু সাবধানে থাকতে হবে। পিচ্ছিল পাথরে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
* স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী থাকুন।
* চেষ্টা করবেন সন্ধ্যার আগে সিলেট ফিরে আসার।
*চাইলে একইদিনে রাতারগুল, বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই ভ্রমণ করতে পারবেন।
* পরিবেশ এবং প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।

অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণে গেলে সিলেটে আরো অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান আছে। এগুলোর মধ্যে আছে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, সারি নদীর লালাখাল,  গোয়াইনঘাটের জাফলং, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। এছাড়া যেতে পারেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ও বিছানাকান্দি

আরো পড়ুন

জাফলং

জাফলং (Jaflong) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব ৬২ কিঃমিঃ। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে এর অবস্থান। জাফলং জিরো পয়েন্টে দাঁড়ালেই সামনে পড়বে ডাউকি ব্রিজ। তার নিচ দিয়ে বয়ে গেছে পিয়াইন নদী। পাহাড়, পাথুরে নদী, ঝর্ণা সব মিলিয়ে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ মোহনীয় রূপ ধারণ করেছে। জাফলংকে বলা হয় প্রকৃতি কন্যা! জাফলংকে বিশেষত্ব দিয়েছে এখানকার আদিবাসীদের জীবনধারা। পিয়াইন নদী পার হলেই খাসিয়াপুঞ্জি। খাসিয়া ভাষায় পুঞ্জি মানে গ্রাম। খাসিয়াদের বাড়ি নির্মাণশৈলী কিংবা সেখানকার পানের বরজ, সবকিছু মিলিয়ে জাফলং ভ্রমণ এ একটা দিন আপনি কাটিয়ে দিতে পারবেন।

জাফলং শুধু সিলেট বিভাগ নয়, এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য। এখানকার প্রকৃতির সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায় ভারতের বিখ্যাত শৈল শহর শিলং চেরাপুঞ্জির। শিলং এর প্রবেশদ্বার ডাউকি শহর জাফলং থেকেই দেখা যায়। যারা জাফলং ভ্রমণ এর ভিডিও গাইডলাইন পেতে আগ্রহী, তারা গ্রিন বেল্ট ট্রাভেল চ্যানেলের নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।

জাফলং ভ্রমণ গাইডলাইন | যাতায়ত হোটেল ভাড়া ও ভ্রমণ খরচ এর বিস্তারিত দেখুন | Jaflong Tour Sylhet

 

কিভাবে যাবেন

জাফলং যেতে হলে আপনাকে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে চায়ের দেশ সিলেট আসতে হবে। বাস, ট্রেন কিংবা উড়োজাহাজে করে আপনি সিলেট আসতে পারবেন। বাসে এলে ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে জাফলং

সিলেট থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা বা মাইক্রোবাসে করে আপনি জাফলং যেতে পারবেন। লোকাল বাস ছাড়ে শহরের শিবগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। মাইক্রোবাসে গেলে আসা যাওয়া রিজার্ভ ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। আর সিএনজি নিলে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা। তাই দলগত ভাবে খরচ কম পড়বে। সিলেট থেকে জাফলং যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।

কখন যাবেন জাফলং

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারা বছরই ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে ছুটে আসেন। শীতে এখানে নদীতে পানি কম থাকে বলে হেঁটেই পার হওয়া যায়। আর বর্ষায় নদীতে অনেক স্রোত থাকে। তখন চারপাশে ছড়ানো পাথর, সবুজ পাহাড়, আর মায়াবী ঝর্ণা মিলে জাফলং তার রূপের দুয়ার মেলে দেয়। তাই এক কথায় বলা যায় বর্ষা ও তার পরবর্তী সময়টা জাফলং ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জাফলং ভ্রমণ করলে বেশি ভালো লাগবে।

কোথায় থাকবেন

জাফলংয়ে রাতে থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই।  তাই সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার সিলেট শহরে চলে আসতে পারেন। সিলেট শহরে প্রচুর হোটেল রয়েছে। আম্বরখানা, দরগাহ গেইট, জিন্দাবাজার এসব এলাকায় অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হিল টাউন, হোটেল ব্রিটানিয়া, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট হোটেল। এখানে ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যাবে।

বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র‍্যান্ড প্যালেস, হোটেল নূরজাহান ইত্যাদি। রুম ভাড়া ৫০০০ থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে। সিজন অনুযায়ী রুম ভাড়ায় তারতম্য হয়।

একদম সস্তার মধ্যে সিলেটের দরগাহ গেইট এলাকায় অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার সাধ্যমতন হোটেল ভাড়া করতে পারবেন ওখান থেকে।

কি খাবেন কোথায় খাবেন

জাফলংয়ে খাওয়ার জন্য বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়া সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার পথেও একাধিক ভালো মানের রেস্টুরেন্ট পাবেন।  চাইলে ওখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। জাফলং এ দুপুরে খাওয়ার খরচ পড়বে জনপ্রতি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা। মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ভর্তা ইত্যাদি মেনু পাওয়া যাবে এখানে।

এছাড়া সিলেট শহরে অনেকগুলো বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসী, ভোজন বাড়ি, পালকি, এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার ভর্তার সাথে আপনার পছন্দ মতো মেনু পাবেন এখানে। খরচ হবে জনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকার মতন। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ২৯ রকমের ভর্তা আছে! চাইলে সকালের নাস্তাও এইসব রেস্টুরেন্টে সেরে নিতে পারবেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

জাফলং ভ্রমণ এ গেলে কাছাকাছি রয়েছে আরো কয়েকটি দর্শনীয় স্থান দেখতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে সংগ্রামপুঞ্জী মায়ারী ঝর্ণা। যেটি পিয়াইন নদী পার হয়ে ১৫ কিঃমিঃ হাঁটলেই পাওয়া যাবে। এটি মূলত ভারতের অংশে পড়েছে। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারবেন। এছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল। এছাড়া আছে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, বিছানাকান্দির কাছে পান্থুমাই ঝর্ণা। সারি নদীর লালাখাল,  কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। এছাড়া যেতে পারেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ও বিছানাকান্দি

জাফলং ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সিলেট বিভাগের যেকোনো দর্শনীয় স্থান বর্ষাতেই সুন্দর। জাফলং ভ্রমণের সময়ও বর্ষাকাল। তখন নদীতে অনেক স্রোত থাকে। সাঁতার না জানলে নদী নামবেন না। সাঁতার জানলেও লাইফ জ্যাকেট পরুন। মনে রাখবেন দলগত ভাবে ভ্রমণ করলে সবসময় খরচ কম পড়বে। জাফলংয়ে অনেক ভারতীয় পণ্যের দোকান পাবেন। বেশিরভাগই নকল, তাই কিছু কিনতে চাইলে সাবধানে কিনতে হবে। আর নৌকা নেওয়ার সময় দরদাম করে নিন। ছুটির দিনে সব কিছুর দাম বেড়ে যায়, তখন ভ্রমণে খরচ বেশি হয়।

অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

আরো পড়ুন

ভোলাগঞ্জ

ভোলাগঞ্জ (Bholaganj) সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানিগঞ্জের একটি পাথর কোয়ারি। ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর নামে এটি পরিচিত । প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বর্তামানে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান উঠেছে। একপাশে মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়, সেখান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঝর্ণা, আর অন্যপাশে পাথুরে নদী এই জায়গাটির সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মেঘালয়ের পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো থেকে যে নদীটির উৎপত্তি হয়ে ভোলাগঞ্জে উপর দিয়ে বয়ে গেছে তার নাম ধলাই নদ। পাহাড় থেকে ঝর্ণার পানির স্রোতে এই নদী বেয়ে নেমে আসে সাদা পাথর। ধলাই নদের উৎসমুখের এই জায়গাটির নাম ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট। এর কাছাকাছি আরো দুইটি সুন্দর জায়গা রয়েছে উৎমাছড়া ও তুরুংছড়া নামে। ভোলাগঞ্জ কিভাবে যাবো এই প্রশ্নটা আপনার মনে প্রথমেই আসতে পারে।

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ভ্রমণ এর বিস্তারিত ভিডিও গাইডলাইন পেতে গ্রিন বেল্ট ট্রাভেল চ্যানেলের নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।

YouTube video player

কিভাবে যাবেন

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর দেখতে যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে সিলেট আসতে হবে। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ

সিলেটের আম্বরখানা থেকে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর যাওয়ার সিএনজি পাবেন। লোকাল সিএনজিতে জনপ্রতি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা নিবে। চাইলে সিএনজি রিজার্ভও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আসা যাওয়ায় ভাড়া পড়বে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। এক সিএনজিতে ৫ জন বসতে পারবেন। আম্বরখানা থেকে ভোলাগঞ্জ যেতে কমবেশি দেড় ঘন্টার মতো সময় লাগে। ভোলাগঞ্জ বাজারে নেমে দশ নম্বর নৌকা ঘাটে যেতে হবে। নৌকা ঘাট থেকে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর যাওয়ার নৌকা পাওয়া যায়। আসা যাওয়ার ভাড়া ৮০০ টাকা। এক নৌকায় ১০ জন বসা যায়। এক্ষেত্রে নিজেরা গ্রুপ করে গেলে খরচ কমে আসে।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর

উৎমাছড়া ও তুরংছড়া

ভোলাগঞ্জ এর কাছেই আরো দুইটি পর্যটন স্থান উৎমাছড়া ও তুরংছড়া। অনেকেই ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর থেকে উৎমাছড়া ও তুরংছড়া ঘুরতে যান। সেখানে যেতে হলে  প্রথমেই যেতে হবে দয়ারবাজার। ভোলাগঞ্জ যে নৌকায় যাবেন সেই নৌকার মাঝিকে বললে আপনাকে দয়ারবাজার ঘাটে নামিয়ে দিবে। সেক্ষেত্রে নৌকা ঠিক করার সময়ই এই বিষয়ে কথা বলে রাখতে হবে। দয়ারবাজার থেকে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়ায় চলে যান চরার বাজার। চরার বাজার নেমে ১৫/২০ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন উৎমাছড়া। আর তুরংছড়া যেতে ৩০/৪০ মিনিট সময় লাগবে। চাইলে সেখান থেকে লোকাল বাইক ভাড়া করেও যেতে পারবেন। বাইকে ভাড়া পড়বে ২০০ টাকা। ফেরার সময় চরারবাজার-দয়ারবাজার-ভোলাগঞ্জ হয়ে চলে আসতে পারবেন আম্বরখানায়। ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এর সাথে উৎমাছড়া তুরংছড়া ঘুরে আসতে চাইলে বাড়তি ৩/৪ ঘন্টা সময় লাগবে।

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর কখন যাবেন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারাবছরই ভ্রমণপিপাসুরা ভোলাগঞ্জ ছুটে আসেন। তবে বর্ষায় এখানে পানি থাকে বলে বর্ষাকালে প্রকৃতি বেশি সুন্দর। তখন মেঘালয়ের পাহাড়, সেখান থেকে নেমে আসা ঝর্ণা, পাথুরে নদী- সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক মোহনীয় রূপের সৃষ্টি হয়। তাই এক কথায় বলা যায় জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ ভ্রমণের ভালো সময়।

কোথায় খাবেন

ভোলাগঞ্জ দুপুরের খাবারের জন্য সাধারণ মানের কিছু খাবার হোটেল আছে। কোম্পানিগঞ্জ সদরে খেতে চাইলে দেশবন্ধু রেস্টুরেন্ট বা আলম হোটেলে খেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সকালের খাবার সিলেট থেকে খেয়ে গেলে দুপুরের খাবারটা লোকাল কোনো হোটেলে খেয়ে নিবেন। আর রাতের খাবারটা সিলেট শহরে এসে খেতে পারবেন। আর দুপুরের খাবারের প্যাকেট সিলেট থেকে নিয়ে যেতে চাইলে কোনো অবস্থাতেই সেটা যেখানে সেখানে ফেলে আসবেন না।

কোথায় থাকবেন

ভোলাগঞ্জ ঘুরতে গেলে সেখানে থাকার জন্য আশেপাশে কোনো ভালো হোটেল নাই। তাও যদি কোনো কারণে থাকতে হয় কোম্পানিগঞ্জ সদরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল আল সাদিক বা হালিমা বোর্ডিং অন্যতম। আর সিলেটে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের সব ধরণের হোটেল আছে। আশাকরি পুরো আর্টিকেলের মাধম্যে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর কিভাবে যাবো এই উত্তরটি পেয়ে গেছেন।

ভোলাগঞ্জ ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

* সময়ের দিকে খেয়াল রাখবেন। যেন সন্ধ্যার আগেই শহরে ফিরে আসতে পারেন।
* ভোলাগঞ্জ একটি সীমান্তবর্তী এলাকা। তাই সাবধানে থাকবেন।
*খাওয়ার জন্য ভালো হোটেল নেই। যেগুলো আছে ওগুলোতেই খেতে হবে।
*বর্ষায় নদীতে অনেক স্রোত থাকে। তাই সাঁতার জানলেও লাইফ জ্যাকেট ছাড়া বেশি পানিতে নামা যাবেনা।
* মনে রাখবেন অতিরিক্ত এডোভেঞ্চার দূর্ঘটনা ডেকে আনে।
* উৎমাছড়া ও তুরংছড়া সহ ঘুরতে চাইলে খুব সকালে রওনা করতে হবে। নইলে সময়ে কুলাবেনা।
*সিএনজি ও নৌকা ভাড়ার সময় ঠিকঠাক দরদাম করে নিবেন।
* কম খরচে ঘুরতে চাইলে গ্রুপ করে ঘুরতে হবে।
* পরিবেশ এবং প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ভ্রমণে গেলে সিলেটে আরো অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান আছে। এর মধ্যে রয়েছে গোয়াইনঘাটের জাফলং এবং  সংগ্রামপুঞ্জী মায়ারী ঝর্ণা। যেটি জাফলং গিয়ে পিয়াইন নদী পার হয়ে ১৫ কিঃমিঃ হাঁটলেই পাওয়া যাবে। এটি মূলত ভারতের অংশে পড়েছে। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারবেন। এছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল। এছাড়া আছে বিছানাকান্দির কাছে পান্থুমাই ঝর্ণা। সারি নদীর লালাখাল,  গোয়াইনঘাটের জাফলং। যেতে পারেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ও বিছানাকান্দি

আরো পড়ুন

হাসন রাজা জাদুঘর

সুনামগঞ্জ ও সিলেটে হাসন রাজার জমিদারি ছিলো। তার পরিচিতি একজন মরমি কবি হিসেবে। সমাদৃত হয়েছেন দেশ বিদেশে। রবীন্দ্রনাথ থাকুর পর্যন্ত তাঁর গানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। সেই মরমি কবি হাসন রাজার বাড়ি এখন জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। হাসন রাজার জাদুঘর সুনামগঞ্জ শহরের সুরমা নদীর পাড়ে অবস্থিত। সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রীর বিখ্যাত জমিদার দেওয়ান পরিবারে ১৮৫৪ সালে হাসন রাজার জন্ম।

জাদুঘরে ঢুকতে প্রথমেই চোখে পড়বে লালন ফকিরের ছবি। কলকাতার একটি ফটো স্টুডিওতে তোলা হাসন রাজার একমাত্র আলোকচিত্রটি এখানে সংরক্ষিত আছে। তবে অনেক শিল্পীর হাতে আঁকা আরো কিছু হাসন রাজার ছবি এখানে দেখতে পাবেন। তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এখানে প্রথম মেলা হয় ১৯৬২ সালে। এরপর থেকে এই বাড়ি ও সংগ্রহশালা দেখতে দেশের নানান প্রান্ত থেকে হাছন রাজার ভক্তরা এখানে ভিড় জমান। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিব হাছন রাজা একাডেমিকে নগদ ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেন। যা দিয়ে হাসন রাজা মিউজিয়াম গড়ে উঠে।

হাসন রাজা মিউজিয়াম

হাসন রাজা মিউজিয়ামে তার ব্যবহৃত বহু মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রঙিন আলখাল্লা। সাধারণত তিনি ধুতি পাঞ্জাবি পরতেন। তবে নওয়াবদের সাথে সাক্ষাতের সময় এই আলখাল্লাটি পরিধান করতেন। পানি শোধনের পাত্র অর্থাৎ পানির ফিল্টার। উইলিয়াম লিটল নামের এক ইংরেজ নায়েব তাকে সেই আমলে অস্ট্রিয়া থেকে এনে এই উপহারটি দিয়েছিলেন। তার একটি বাহারি তলোয়ার ছিলো। এটি তাদের পারিবারিক। বংশানুক্রমে এটি তার হাতে এসে পৌছেছিল। এগুলো ছাড়াও হাসনের ব্যবহৃত চেয়ার টেবিল, খড়ম, মোমদানি সহ ইংরেজ আমলের বহু জিনিস মিউজিয়ামে আছে। এমনকি হাসন রাজার নিজের হাতে লেখা গানের কপিও এখানে সংরক্ষিত আছে।

কিভাবে যাবেন

হাসন রাজার বাড়ি যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সুনামগঞ্জ শহরে আসতে হবে। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন মামুন পরিবহন, এনা পরিবহন ও শ্যামলী পরিবহনের বাস সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ টাকা। যেতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা। সুনামগঞ্জ নেমে রিকশা বা অটোরিকশা নিয়ে সুরমা পাড়ের হাসন রাজা জাদুঘর এ যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

সুনামগঞ্জ থাকার মোটামোটি মানের কিছু হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো-  নুরানী হোটেল, সুরমা ভ্যালি রেসিডেন্সিয়াল রিসোর্ট, হোটেল মিজান, হোটেল সারপিনিয়া, হোটেল প্যালেস, হোটেল গুলবাগ ও সুনামগঞ্জ রেস্ট হাউজ উল্লেখযোগ্য।

কোথায় খাবেন

সুনামগঞ্জে খাওয়ার জন্য বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সিলেটের প্রখ্যাত পানসি হোটেলের একটি শাখা রয়েছে এখানে। এছাড়া হোটেল ফাইভ স্টার, জনতা, রাজ হোটেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্ষায় গেলে এসব খাবারের দোকানে হাওরের মাছ খেতে ভুলবেন না। তখন চাইলে নৌকায় করে হাওরে একটা চক্কর দিয়ে আসতে পারেন।

সুনামগঞ্জ জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পুরো সুনামগঞ্জ জেলা গত কয়েক বছর ধরে পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। সুনামগঞ্জে রয়েছে অনেকগুলো হাওর। একপাশে মেঘালয়ের পাহাড়, লেক, ঝর্ণা ইত্যাদি। পড়ুন টাঙ্গুয়ার হাওর পূর্ণাঙ্গ ট্যুর প্ল্যান, শুধুমাত্র নীলাদ্রি লেক অথবা শিমুল বাগান হতে পারে আপনার একদিনের ভ্রমণ গন্তব্য।

আরো পড়ুন

টাঙ্গুয়ার হাওর নৌকার তথ্য

সাজেক ভ্যালি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন

বিছানাকান্দি রাতারগুল পান্থুমাই

ভ্রমণে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। শুধু ঘুরতে গিয়ে নয়, এমনকি আপনার শহরেও আবর্জনা ফেলবেন না যত্রতত্র। এটা আপনার ব্যাক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।

শিমুল বাগান

শিমুল বাগান (Shimul Bagan) সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর তীরে মানিগাঁও গ্রামে অবস্থিত। ২০০৩ সালে স্থানীয় জয়নাল আবেদিন নামে এক শৌখিন ব্যবসায়ী এই বাগান গড়ে তোলেন। পুরো বাগানের আয়তন একশ বিঘার বেশি। এখানে শিমুল গাছ আছে ৩ হাজার এর মতো। ফাল্গুনে যখন রক্তরাঙা শিমুল ফুল ফোটে তখন দেখে মনে হয় বাগানে আগুন ধরে গেছে। পাশের মেঘালয়ের পাহাড় – বারিক্কা টিলা আর যাদুকাটা নদীর পাড়ের এই বাগানে একটা বিকেল অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারবেন। সেখান থেকে চাইলে যেতে পারবেন কাছাকাছি নীলাদ্রি লেক ও টেকেরঘাটে।

কিভাবে যাবেন

শিমুল বাগান আসতে হলে আপনাকে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সুনামগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন মামুন পরিবহন, এনা পরিবহন ও শ্যামলী পরিবহনের বাস সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ টাকা। যেতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা। সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা ব্রিজের উপর থেকে বারিক্কা টিলা যাওয়ার সিএনজি ও মোটর সাইকেল ভাড়ায় পাবেন। এক মোটর সাইকেলে দুইজন বসা যায়। মোটর সাইকেল ভাড়া নিবে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। যেতে সময় লাগবে দেড় ঘন্টার মতো। বারিক্কা টিলায় নেমে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই শিমুল বাগান দেখিয়ে দিবে।
 
সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ: যারা সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ যেতে চান, তারা সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জ যেতে পারবেন। কুমারগাঁও থেকে লোকাল ও সিটিং দুই ধরণের বাসই পাওয়া যায়। সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ এর সিটিং বাসে ভাড়া ১০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ২ ঘন্টার মতো।

কখন যাবেন শিমুল বাগান

শিমুল বাগান যাওয়ার সময় মূলত দুইটি। রক্তরাঙা শিমুল ফুল দেখতে চাইলে আপনাকে ফাল্গুন মাসে যেতে হবে। শিমুল ফুল গাছে থাকে মাত্র ১৫/২০ দিন। এর পর ঝরে যায়। তাই ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ থেকে ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখের মধ্যে যেতে হবে। অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে শিমুল বাগানে না যেতে পেরে বাগানের ফুল দেখতে পায়না।
 
আর বর্ষায় গেলে ঘন সবুজ শিমুল বাগান দেখে আসতে পারবেন। তখন টাঙ্গুয়ার হাওর পানিতে ভরপুর থাকে। তাই একসাথে নৌকায় টাঙ্গুয়া হাওর ভ্রমণ করে আসতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

শিমুল বাগান এর আশেপাশে থাকার জন্য ভালো হোটেল নেই। বড়ছড়া বাজারে কয়েকটি গেস্ট হাউজ ও তাহিরপুর বাজারে দুইটি হোটেল রয়েছে। শুকনো মৌসুমে গেলে রাতে সুনামগঞ্জ থাকাই ভালো। আর বর্ষাকালে গেলে নৌকায় থাকা যাবে।
 
শিমুল বাগানের কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে পড়তে পারেন-
 
 

কোথায় খাবেন

কাছাকাছি বারিক্কা টিলার পাশে ছোট বাজার আছে। ওখানে খেতে পারবেন। এছাড়া টেকেরঘাট বাজার, বড়ছড়া বাজার বা তাহিরপুর বাজারে আপনি মোটামোটি মানের খাবারের দোকান পেয়ে যাবেন। তবে ভালো রেস্টুরেন্টে এর জন্য সুনামগঞ্জ শহরে আসতে হবে। আর বর্ষায় নৌকা ভাড়া নিলে নৌকায় রান্নার ব্যবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে বোটে উঠার আগে বাজার করে উঠতে হবে।
আরো পড়ুন

নীলাদ্রি লেক

নীলাদ্রি লেক সুনামগঞ্জ এর একটি অন্যতম পর্যটন স্থান। এটি মূলত লাইমস্টোন বা চুনাপাথরের খনির পরিত্যাক্ত লেক। এর অবস্থান সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী টেকেরঘাট গ্রামে। নীলাদ্রী লেক এর প্রকৃত নাম শহীদ সিরাজ লেক। তবে পর্যটকদের কাছে এটি নীলাদ্রি লেক নামে বেশি পরিচিত। আর স্থানীয়দের কাছে এর নাম টেকেরঘাট পাথর কোয়ারি। ঘন নীল জলের এই লেকের একপাশে মেঘালয়ের পাহাড়, তার চারপাশে ছড়ানো ছিটানো পাথর। অনেকে একে বাংলার কাশ্মীর নামে অভিহিত করেন। মোহনীয় এই লেকের পাড়ে একটা দিন কাটিয়ে দেওয়াই যায়।

কিভাবে যাবেন

নীলাদ্রি লেক মোটামোটি ৩ ভাবে যাওয়া যায়। সুনামগঞ্জ লাউড়ের গড় হয়ে, সুনামগঞ্জ তাহিরপুর হয়ে এবং নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ হয়ে। তবে ঢাকা থেকে গেলে সুনামগঞ্জ হয়ে যাওয়াটাই সুবিধাজনক।
 
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ: ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন মামুন পরিবহন, এনা পরিবহন ও শ্যামলী পরিবহনের বাস সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ টাকা। যেতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা। সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা ব্রিজের উপর থেকে নীলাদ্রী লেক যাওয়ার মোটর সাইকেল ভাড়ায় পাবেন। এক মোটর সাইকেলে দুইজন বসা যায়। মোটর সাইকেল ভাড়া নিবে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। ফেরার সময় ওখান থেকে মোটর সাইকেল পেয়ে যাবেন। আর সারাদিনের জন্য বাইক রিজার্ভ নিলে সিজন ভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা।

বর্ষাকালে নীলাদ্রি লেক ভ্রমণে গেলে সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর হয়ে যেতে পারবেন। তখন তাহিরপুর থেকে নৌকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর এর উপর দিয়ে চলে যাবেন টেকেরঘাট। ওখান থেকে হেঁটে ৩/৪ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন নীলাদ্রি লেক।

মোহনগঞ্জ থেকে নীলাদ্রি লেক: আপনি চাইলে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ হয়েও নীলাদ্রি লেক যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে রাত ১১টার হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রথমে মোহনগঞ্জ। মোহনগঞ্জ নেমে অটোরিকশায় মধ্যনগর যেতে হবে। সময় লাগবে ১ ঘন্টা। মধ্যনগর থেকে টেকেরঘাট যাওয়ার নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোট পাবেন। আর শুকনো মৌসুমে মধ্যনগর থেকে বাইক রিজার্ভ নিয়ে নীলাদ্রী লেক যাওয়া যায়। তবে এই রুটে সময় ও খরচ কিছুটা বেশি হবে। তাই সুনামগঞ্জ হয়ে নীলাদ্রী লেক যাওয়ার প্ল্যান করা ভালো। তবে যাদের বাড়ি নেত্রকোনার আশেপাশে তারা এই পথ দিয়ে নীলাদ্রী লেক যেতে পারেন।

ভ্রমণ পরিকল্পনা

নীলাদ্রি লেক এর কাছাকাছি যাদুকাটা নদী, বারিক্কা টিলা, শিমুল বাগান, লাকমাছড়া ও টাঙ্গুয়ার হাওর আছে। আপনি দুইদিন সময় বের করতে পারলে এগুলো সব স্পট রিলাক্সে ঘুরতে পারবেন। তাছাড়া বাইক নিয়ে আপনি একদিনেও ঘুরে আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে স্ক্যাজিউল অনেক টাইট হয়ে যায় বলে ভ্রমণে পূর্ণতা আসেনা। পড়ুন এর ১ রাত ২ দিন এর পূর্ণাঙ্গ টাঙ্গুয়ার হাওর ট্যুর প্ল্যান

কখন যাবেন নীলাদ্রি লেক

নীলাদ্রি লেক বা হাওর এলাকার প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা যায় বর্ষায়। তখন রোদ মেঘ বৃষ্টির লুকোচুরিতে প্রকৃতি মোহনীয় রূপ ধারণ করে। তাই বলা যায় বর্ষাকালই নীলাদ্রি লেক ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে পাখি প্রেমীরা শীতকালেও এই এলাকা ভ্রমণ করেন। শীতে এখানে প্রচুর পাখি আসে।

কোথায় থাকবেন

নীলাদ্রি লেক এর আশেপাশে থাকার জন্য ভালো হোটেল নেই। বড়ছড়া বাজারে কয়েকটি গেস্ট হাউজ ও তাহিরপুর বাজারে দুইটি হোটেল রয়েছে। আর বর্ষাকালে গেলে নৌকায় থাকা যাবে। টাঙ্গুয়ার হাওর এর বোট সম্পর্কে এখানে পড়ুন।

কোথায় খাবেন

টেকেরঘাট বাজার, বড়ছড়া বাজার বা তাহিরপুর বাজারে আপনি মোটামোটি মানের খাবারের দোকান পেয়ে যাবেন। ভালো রেস্টুরেন্টে এর জন্য সুনামগঞ্জ শহরে আসতে হবে। আর বর্ষায় নৌকা ভাড়া নিলে নৌকায় রান্নার ব্যবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে বোটে উঠার আগে বাজার করে উঠতে হবে।

নীলাদ্রি লেক ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

* ভ্রমণের সময় টিম সাইজ যত বড় হবে খরচ তত কম হবে। দলে সদস্য সংখ্যা একেবারে কম হলে কোনো ট্যুর গ্রুপ এর সাথে ভ্রমণ করতে পারেন। এতে ভ্রমণ খরচ কমে আসবে। নিরাপত্তাও বাড়বে।
 
* যাদুকাটা নদীতে অল্প পানিতে কিছুদূর হাঁটার পর হঠাৎ খাড়া গভীর! নদীর তলদেশে তীব্র স্রোত আছে। যা উপর থেকে দেখে বোঝা যায়না। তাই যাদুকাটা নদীতে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নামবেন না।
 
*বর্ষায় টাংগুয়া হাওর ভ্রমণে বজ্রবৃষ্টি বা ভারী বৃষ্টি হলে নৌকার ছাদ থেকে নেমে ভিতরে অবস্থান নিন।
 
*টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে লাইফ জ্যাকেট সাথে নিন। তাহিরপুরে ৫০থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায় লাইফ জ্যাকেট পাবেন। এছাড়া প্রিমিয়াম বোট গুলোর নিজস্ব লাইফজ্যাকেট থাকে। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া অল্প পানিতেও নামবেন না।
 
* হাওরে কোনো ভাবেই মাইক এমনকি স্পীকারও ব্যাবহার করে গান বাজাবেন না। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। স্থানীয়রাও বিরক্ত হয়।
 
*ভ্রমণের সময় ছাতা নিন সাথে। রোদ বৃষ্টি যেকোনো সময় কাজে দিবে। মাঝি ও স্থানীয়দের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করুন।
 
*কোনো ধরণের অপচনশীল দ্রব্য হাওরে ফেলবেন না। পরিবেশ সংরক্ষণে মনযোগ দিন। শুধু টাঙ্গুয়ার হাওড় এ গিয়ে নয়, আপনার দৈনন্দিন জীবনেও যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা আপনার ব্যাক্তিত্বের পরিচায়ক।
 
অনেকে ঝামেলা এড়াতে ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর টাঙ্গুয়া হাওর ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন। আপনার স্বপ্নগুলো স্মৃতি হোক।

আরো পড়ুন

টাঙ্গুয়ার হাওরের নৌকা – চন্দ্রাবতী

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী ছুটে আসেন টাঙ্গুয়ার হাওরে। উদ্দেশ্য থাকে টাঙ্গুয়ার হাওর নৌকা ভ্রমণ। বর্ষায় মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢলে হাওর কানায় কানায় ভরে উঠে। এখানকার সীমান্তঘেঁষা গ্রাম টেকেরঘাট, এটা হাওরের শেষ প্রান্ত। এখান থেকে মেঘালয় পাহাড়ের শুরু। টেকেরঘাটেই আছে চুনাপাথরের লেক নীলাদ্রী (শহীদ সিরাজ লেক), আর লাকমাছড়া। এছাড়া জাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান কিংবা বারিক্কা টিলা, টাঙ্গুয়ার হাওরের যে প্রান্তেই যান না কেন এর রূপ বৈচিত্রে আপনি মুগ্ধ হবেন।

বর্ষাকালে টাঙ্গুয়া হাওরে চলাচলের একমাত্র বাহন হলো নৌকা। পর্যটকরা হাওরে বেড়ানোর জন্য তাহিরপুর ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তবে ভালো নৌকার জন্য আগে থেকে বুকিং দিয়ে আসতে হয়। আজকে জানাবো টাঙ্গুয়ার হাওরের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও সুযোগসুবিধা সম্পন্ন নৌকা চন্দ্রাবতী সম্পর্কে।

tanguar haor boat 2
চন্দ্রাবতীর ছাদে

 

টাঙ্গুয়ার হাওর নৌকা চন্দ্রাবতী এর সুযোগ সুবিধা

* এই নৌকায় প্যান এবং কমোড দুইটাই আছে এবং পর্যাপ্ত স্পেস সহ। যেখানে হাওরের বেশিরভাগ নৌকাতেই ঝুলন্ত টয়লেট।

* ছেলে ও মেয়েদের রাতে ঘুমানোর জন্য দুইটি আলাদা কম্পার্টমেন্ট আছে এই বোট এ। যেখানে প্রায় ১৮ জন ঘুমাতে পারে। এছাড়া নৌকার ছাদে বসার ব্যাবস্থা আছে ৫০ জন এর।

*জেনারেটর, ৩টা হাই স্পিড মুভিং ফ্যান এবং ২টা এয়ার পাসার এক্সস্টেড ফ্যান আছে। মোবাইল ও ক্যামেরা চার্জিং পয়েন্ট আছে প্রতিটি কর্নারে। বোটের অভ্যন্তরের সবই এলইডি বাল্ব, যে কারনে পোকা আসে না।

* পার্সনাল লকার ফ্যাসিলিটি আছে, বুক সেলফ আছে, স্যানিটারি ন্যাপকিন প্যাড আছে ফ্রি ইউজের জন্য।

* ১৬টা লাইফ জ্যাকেট আছে। ফার্স্ট এইড বক্স আছে। উপরে ফ্ল্যাড লাইট আছে। আছে এমার্জেন্সি সিগনাল লাইট। পানি নিষ্কাশন পাম্প আছে। কোন কারনে নৌকাতে বেশি পানি উঠলে পাম্প চালালে ৪-৫ মিনিটের মধ্যেই সব পানি বাইরে ফেলে দেয়া যায়।

*রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে আছে স্পেশাল ত্রিপল। পুরাটাই ছাতার ফাইবার দিয়ে বানানো। একটু আয়েশ করে উপরে শুয়ে রাতের জ্যোতস্না বিলাশের জন্য শীতল পাটি আছে।

 

tanguar haor boat 3
চন্দ্রাবতীতে

নৌকা ভাড়া

শুক্র-শনিবার (১ রাত ২ দিন)
৪৫,০০০ টাকা (১০ জনের জন্য)
১০ জনের কম হলেও ৪৫ হাজার টাকা থাকবে। ১০ জন এর বেশি হলে অতিরিক্ত প্রতি জনের জন্য জনপ্রতি ২৫০০ টাকা যুক্ত হবে।
রবি থেকে বৃহস্পতিবার (১ রাত ২ দিন)
৩৬,০০০ টাকা (১০ জনের জন্য)
১০ জনের কম হলেও ৩৬ হাজার টাকা থাকবে। ১০ জন এর বেশি হলে অতিরিক্ত প্রতি জনের জন্য জনপ্রতি ২০০০ টাকা যুক্ত হবে।
রবি থেকে বৃহস্পতিবার (১ রাত ১ দিন)
৩০,০০০ টাকা (১০ জনের জন্য)
১০ জনের কম হলেও ৩২ হাজার টাকা থাকবে। ১০ জন এর বেশি হলে অতিরিক্ত প্রতি জনের জন্য জনপ্রতি ১৫০০ টাকা যুক্ত হবে।
❑ ফুড মেনু
১ম দিন
ব্রেকফাস্টঃ খিচুড়ি + ডিম + সালাদ + আচার
নুন স্ন্যাকসঃ চা + কেক/বিস্কিট
লাঞ্চঃ ভাত + ভর্তা/সবজি + হাওড়ের মাছ + ডাল।
ইভিনিং স্ন্যাকসঃ নুডুলস + চা
ডিনারঃ ভাত + ভর্তা/সবজি + হাঁসের মাংস + ডাল।
২য় দিন
ব্রেকফাস্টঃ খিচুড়ি + ডিম + আচার
নুন স্ন্যাকসঃ চা + কেক/বিস্কিট
লাঞ্চঃ ভাত + ভর্তা/সবজি + হাওড়ের মাছ + ডাল।
ইভিনিং স্ন্যাকসঃ নুডুলস + চা

প্যাকেজে যা যা থাকছে

⦿ প্রথমদিন সকালের খাবার থেকে শুরু করে আসার দিন সান্ধ্যকালীন খাবার পর্যন্ত ২ দিনে ৯ বেলা খাবার।
⦿ সুনামগঞ্জ থেকে পিকআপ ও ড্রপ।
⦿ রাতে নীলাদ্রী লেকের পাড়ে টেকেরঘাটে অবস্থান।

যোগাযোগ

ঢাকা অফিস:
রুম নং ১৪০৩; ১৪ তম তলা;
শাহ্‌ শাহ্‌ আলী প্লাজা। মিরপুর ১০ গোলচত্বর।

ফোনঃ 01884710723
01869649817
01810137002

চন্দ্রাবতীর ফেসবুক পেজ: Daughter of Tangua

টাংগুয়া হাওড় ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

*যারা সরাসরি তাহিরপুর গিয়ে ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া নিবেন তারা ভালোমতো দরদাম করে নিবেন। সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিবেন। লোকাল বোট সাধারণত ৮০০০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। আর হাওরে ২/৩টা প্রিমিয়াম বোট আছে। এগুলোর ভাড়া ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

*টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে লাইফ জ্যাকেট সাথে নিন। তাহিরপুরে ৫০থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায় লাইফ জ্যাকেট পাবেন। এছাড়া প্রিমিয়াম বোট গুলোর নিজস্ব লাইফজ্যাকেট থাকে। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া অল্প পানিতেও নামবেন না।

* ভ্রমণের সময় টিম সাইজ যত বড় হবে খরচ তত কম হবে। দলে সদস্য সংখ্যা একেবারে কম হলে কোনো ট্যুর গ্রুপ এর সাথে ভ্রমণ করতে পারেন। এতে ভ্রমণ খরচ কমে আসবে।

*জাদুকাটা নদীতে অল্প পানিতে কিছুদূর হাঁটার পর হঠাৎ খাড়া গভীর! নদীর তলদেশে তীব্র স্রোত আছে। যা উপর থেকে দেখে বোঝা যায়না। তাই জাদুকাটা নদীতে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নামবেন না।

* লাকমাছড়া মূলত ইন্ডিয়াতে পড়েছে। তাই লাকমাছড়াতে গেলে সাইনবোর্ড দেওয়া নির্দিষ্ট অংশ পর্যন্ত ভ্রমণ করুন। ভারতের অংশে প্রবেশ কবেন না।

*হাওরে কোনো ভাবেই মাইক এমনকি স্পীকারও ব্যাবহার করে গান বাজাবেন না। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। স্থানীয়রাও বিরক্ত হয়।

*ভ্রমণের সময় ছাতা নিন সাথে। রোদ বৃষ্টি যেকোনো সময় কাজে দিবে। মাঝি ও স্থানীয়দের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করুন।

* জুলাই থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত হাওরে কানায় কানায় পানি থাকে। তাই এই সময়টার মধ্যেই টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করুন। বছরের অন্য সময় এখানে পানি থাকেনা। শুকনো মৌসুমে পাখি দেখতে অনেক পর্যটক আসেন। তবে তখন নৌকা চলে না।

ট্রাভেল এজেন্সি

এছাড়া যারা ঝামেলা এড়াতে ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর টাঙ্গুয়া হাওর ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন। এটি ১ রাত ২ দিনের ভ্রমণ প্যাকেজ। ভ্রমণ আপনার স্বপ্ন। আপনার স্বপ্নগুলো স্মৃতি হোক।

 

আরো পড়ুন

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ গাইডলাইন

বান্দরবানের সেরা ২০ টি রিসোর্ট

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ তথ্য

কোনো ধরণের অপচনশীল দ্রব্য হাওরে ফেলবেন না। পরিবেশ সংরক্ষণে মনযোগ দিন। শুধু হাওরে গিয়ে নয়, আপনার দৈনন্দিন জীবনেও যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা আপনার ব্যাক্তিত্বের পরিচায়ক।

টাঙ্গুয়ার হাওর

টাঙ্গুয়ার হাওর (Tanguar Haor) সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এরিয়া জুড়ে বিস্তৃত। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। তার মাঝে ডুবে আছে অসংখ্য গ্রাম। বর্ষায় সেখানে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যাতায়াতের বাহন নৌকা। হাওরের একপ্রান্তে মেঘালয়ের পাহাড়, সেখান থেকে নেমে আসা ছোটবড় ৩০টি ঝর্ণাধারা আর দিগন্তজোড়া নীল আকাশ। সাত হাজার একরের এই টাঙ্গুয়ার হাওর এর আয়তন বর্ষায় বেড়ে তিনগুন হয়।

বাংলাদেশে যত দর্শনীয় স্থান আছে একই রকমের জায়গা দক্ষিণ এশিয়ায় অন্য কোথাও না কোথাও আছে। কিন্তু টাঙ্গুয়া হাওর এর মতো বৈচিত্রময় স্থান আর কোথাও নেই। তাই একজন বিদেশী পর্যটক বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানের নাম জানতে চাইলে তাকে টাঙ্গুয়ার হাওরের নাম সাজেস্ট করার কথা জানান ট্রাভেল এক্সপার্টরা।

টাঙ্গুয়া হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বর্ষাকাল টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পুরো হাওর তখন কানায় কানায় ভরে উঠে। পাশাপাশি দুই বাড়িতে বিয়েও হয় নৌকায়! এক কথায় বলা চলে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত টাঙ্গুয়া হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। তবে পাখি প্রেমীরা শীতকালেও টাঙ্গুয়া হাওর ভ্রমণ করেন।

টাঙ্গুয়ার হাওর এর দর্শনীয় স্থান গুলো

প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে পুরো হাওরটাই দর্শনীয়। তবে নির্দিষ্ট করে বললে- হাওরে রয়েছে অনেকগুলো ছোট ছোট সোয়াম্প ফরেস্ট। এছাড়া নীলাদ্রি লেক (শহীদ সিরাজ লেক), লাকমাছড়া, বারিক্কা টিলা, শিমুল বাগান, ওয়াচ টাওয়ার, যাদুকাটা নদী উল্লেখযোগ্য। হাওরের সূর্যাস্ত আপনার স্মৃতিতে অনেকদিন থাকবে। চাঁদনী রাতে গেলে মাতাল জোছনা আর বাউলা বাতাস আপনাকে মাতাল করে দিবে!

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ: ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন মামুন পরিবহন, এনা পরিবহন ও শ্যামলী পরিবহনের বাস সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ টাকা। যেতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা।

সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ: যারা সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ যেতে চান, তারা সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জ যেতে পারবেন। সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের বাস ভাড়া ১০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ২ ঘন্টার মতো।

সুনামগঞ্জ থেকে টাংগুয়া: সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা ব্রিজের উপর থেকে টাংগুয়া যাওয়ার সিএনজি, লেগুনা এবং বাইক পাবেন। যেতে সময় লাগবে দেড় ঘন্টার মতো। তাহিরপুর নেমে ঘাট থেকে নৌকা পেয়ে যাবেন। ট্যুরের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী ছোট বড় নৌকা ভাড়া করেতে পারবেন বাজেটের মধ্যে। তবে সবচেয়ে ভালো নৌকা গুলো পেতে আগে থেকে ফোন করে বুকিং করাই ভালো।

রাতে কোথায় থাকবেন

রাতে থাকার জন্য টাঙ্গুয়া হাওরে ভালো হোটেলের ব্যাবস্থা নেই। হাওর বিলাস নামে একটি কটেজ রয়েছে হাওরের মাঝখানে, এছাড়া টেকেরঘাটে একটি বোর্ডিং আছে। সাধারণত হাওর ভ্রমণ এ রাতে সবাই নৌকাতেই ঘুমায়। যারা রাতে ঘুমানোর সময় প্রাইভেসি পছন্দ করেন তারা মাঝিকে বলে হোটেলের ব্যাবস্থা করতে পারবেন।

টাঙ্গুয়ার হাওর এর নৌকা ভাড়া

টাংগুয়া হাওড়ের নৌকা ভাড়া আসলে বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন নৌকার ধারণ ক্ষমতা, নৌকার সুযোগ সুবিধা, কতদিনের জন্য ভাড়া নিচ্ছেন ইত্যাদি। সাধারণত মাঝারি আকারের একটা নৌকা ভাড়া ৫০০০ থেকে ৭০০০ টাকা। এসব নৌকায় ১৫/২০ জন বসতে পারে, ৭/৮ জন রাতে ঘুমাতে পারে। বড় নৌকার ভাড়া ৭০০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। বড় নৌকাতে বসতে পারে ৩০/৩৫ জন, রাতে ঘুমাতে পারে ১০/১২ জন। নৌকা নেওয়ার সময় সোলার আছে কিনা, টয়লেটের অবস্থা কেমন ইত্যাদি দেখে নিতে হবে।

এছাড়া টাংগুয়া হাওরে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন দুই তিনটি বোট আছে। এগুলোতে জেনারেটর থেকে শুরু করে হাই কমোড, লাইট ফ্যান, গ্যাসের চুলা ইত্যাদি রয়েছে। এসব নৌকায় প্রায় ৪০ জন বসতে পারে। রাতে ঘুমাতে পারে ১৪ থেকে ১৮ জন। দুইদিনের জন্য এসব নৌকার ভাড়া পড়ে ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে সব ধরণের নৌকা ভাড়া শুক্র শনিবারে কিছুটা বেশি ও অন্যান্য দিন কিছুটা কম থাকে।

টাঙ্গুয়ার হাওরের সবয়েচে প্রিমিয়াম হাউজবোট চন্দ্রাবতীর ফোন নাম্বার সহ বিস্তারিত তথ্য দেখুন  এখানে।

খাবার ব্যাবস্থা

টাঙ্গুয়ার হাওড় এর তাহিরপুর ও টেকেরঘাটে কয়েকটা খাবারের দোকান আছে। এসব দোকানে হাওরের নানান সুস্বাদু মাছ, হাঁস, ভর্তা ইত্যাদি দিয়ে দুপুর ও রাতের খাবার খেতে পারবেন। আর নিজেরা রান্না করতে চাইলে তাহিরপুর বাজার থেকে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে উঠতে হবে। লোকজন বেশি হলে মাঝিকে বলে একজন বাবুর্চি নিতে পারবেন বোটে। দুই দিনের জন্য বাবুর্চিকে দিতে হবে ১৫০০ টাকা।

নীলাদ্রী লেক
নীলাদ্রি লেক | ছবি: গ্রিন বেল্ট

টাঙ্গুয়ার হাওর ট্যুর প্ল্যান ২ দিন ১ রাত

হাওড়ে যেতে হলে রাতের বাসে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে সুনামগঞ্জ চলে আসতে হবে। ভোরের মধ্যে সুনামগঞ্জ পৌঁছে যাবেন। এরপর সুনামগঞ্জের সুরমা ব্রিজ থেকে সিএনজি লেগুনা বা বাইকে করে রওনা করে দিন তাহিরপুরের উদ্দেশ্যে। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর যেতে ঘন্টা দেড়েক সময় লাগবে। তাহিরপুর পৌঁছে প্রথমে নৌকা ঠিক করে এরপর প্রয়োজনীয় বাজার করে নিন। সব কাজ শেষে নৌকা নিয়ে প্রথমেই চলে আসুন ওয়াচ টাওয়ার।

ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় রয়েছে ছোট ছোট অনেক জলাবন। এখানে আপনি গোসল সেরে নিতে পারেন। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া হাওরে নামবেন না। এর মধ্যেই দুপুরের খাবারের আয়োজন করে ফেলুন। গোসল শেষে মাঝ হাওর দিয়ে চলে যান টেকেরঘাট। টেকেরঘাট পৌঁছাতে বিকেল হবে। সেদিনের জন্য নৌকা ওখানেই বাধা থাকবে। টেকেরঘাট হচ্ছে সীমান্তঘেঁষা গ্রাম। নৌকা থেকে নেমে পায়ে হেঁটে ঘুরে আসুন লাকমাছড়া। ঘাট থেকে লাকমাছড়া হেঁটে যেতে বিশ মিনিটের মতো সময় লাগবে। স্থানীয় যে কাউকে বললে পথ দেখিয়ে দিবে। আর সন্ধ্যেটা কাটিয়ে দিন চুনাপাথরের লেক নীলাদ্রি এর মনোরম পরিবেশে।

পরদিন সকালের খাবারের পর চলে যাবেন যাদুকাটা নদী, বারিক্কা টিলা ও শিমুল বাগানের উদ্দেশ্যে। এই তিনটা স্পটে আপনি লোকাল বাইক ভাড়া নিয়ে যেতে পারেন। ১৫০ টাকা নিবে জনপ্রতি। আর নৌকায় যেতে চাইলে নৌকা ভাড়া নেওয়ার সময়ই মাঝিকে বলতে হবে। নইলে পরে বাড়তি ভাড়া দাবি করতে পারে। এই স্থানগুলো ঘুরতে ঘুরতে বিকেল হয়ে যাবে। এরপর তাহিরপুর হয়ে বা টেকেরঘাট থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জ চলে আসুন। তারপর রাতের বাসে গন্তব্যে ফিরে যান।

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ খরচ

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জের বাস ভাড়া আসা যাওয়া ১১০০ টাকা। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর সিএনজি বা বাইক ভাড়া আসা যাওয়া ২০০ থেকে ৪০০ টাকা জনপ্রতি। নৌকা ভাড়া ৫০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা, এটা আপনার দলের সদস্যদের মধ্যে ভাগ হবে। খাবার খরচ প্রতি বেলা গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পড়বে। দলে কম মানুষ হলে নিজেরা রান্না করে খেলে একটু বেশি খরচ হবে। এগুলোই মূল খরচ। এর বাইরে টুকটাক ১০০ টাকা জনপ্রতি খরচ হতে পারে।

টাংগুয়া হাওড় ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

*টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে লাইফ জ্যাকেট সাথে নিন। তাহিরপুরে ৫০থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায় লাইফ জ্যাকেট পাবেন। এছাড়া প্রিমিয়াম বোট গুলোর নিজস্ব লাইফজ্যাকেট থাকে। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া অল্প পানিতেও নামবেন না।

* ভ্রমণের সময় টিম সাইজ যত বড় হবে খরচ তত কম হবে। দলে সদস্য সংখ্যা একেবারে কম হলে কোনো ট্যুর গ্রুপ এর সাথে ভ্রমণ করতে পারেন। এতে ভ্রমণ খরচ কমে আসবে। নিরাপত্তাও বাড়বে।

*জাদুকাটা নদীতে অল্প পানিতে কিছুদূর হাঁটার পর হঠাৎ খাড়া গভীর! নদীর তলদেশে তীব্র স্রোত আছে। যা উপর থেকে দেখে বোঝা যায়না। তাই জাদুকাটা নদীতে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নামবেন না।

* টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে বজ্রবৃষ্টি বা ভারী বৃষ্টি হলে নৌকার ছাদ থেকে নেমে ভিতরে অবস্থান নিন।

* হাওরে কোনো ভাবেই মাইক এমনকি স্পীকারও ব্যাবহার করে গান বাজাবেন না। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। স্থানীয়রাও বিরক্ত হয়।

*ভ্রমণের সময় ছাতা নিন সাথে। রোদ বৃষ্টি যেকোনো সময় কাজে দিবে। মাঝি ও স্থানীয়দের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করুন।

*কোনো ধরণের অপচনশীল দ্রব্য হাওরে ফেলবেন না। পরিবেশ সংরক্ষণে মনযোগ  দিন। শুধু টাঙ্গুয়ার হাওড় এ গিয়ে নয়, আপনার দৈনন্দিন জীবনেও যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা আপনার ব্যাক্তিত্বের পরিচায়ক।

অনেকে ঝামেলা এড়াতে ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর টাঙ্গুয়া হাওর ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন। ভ্রমণ সম্পর্কিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ। আপনার স্বপ্নগুলো স্মৃতি হোক।

আরো পড়ুন

ট্রাভেল ফটোগ্রাফি : ভালো ছবি কীভাবে তুলবেন

ট্রাভেল ফটোগ্রাফি হচ্ছে এমন এক শখ যা আপনার ব্যাক্তিত্বকে বহুগুন বাড়িয়ে দেয়। ঘুরতে গিয়ে আমরা সবাই কমবেশি ছবি তুলি। এর মাধ্যমে নিজের ফটোগ্রাফি স্কিল যেমন বাড়ে, তেমনি পরবর্তীতে ছবি দেখে ভ্রমণের দিনগুলোর স্মৃতি আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠে। কাজেই আলুটিলা গুহায় প্রবেশের আগ মুহূর্তে কিংবা কক্সবাজারে প্যারাসেইলিং করার সময় নিজের একটা ছবি তুলে রাখতে ভুলে যাবেন না। একটি সুন্দর ছবি মানে এক টুকরো স্মৃতি আর ছবির পেছনে একটি গল্প।

নিজেকে আড়াল করুন

ট্রাভেল ফটোগ্রাফি এর সময় যথা সম্ভব কম জিনিষ সাথে নিন। ভীড়ের মাঝে মিশে যান। দেখেই চেনা যায় এমন ক্যামেরা ব্যাগ বহন করবেন না। যদি আপনি অপরাধ-প্রবণ এলাকায় ছবি তুলতে যান তাহলে ক্যামেরাটা ডান কাঁধে ঝুলিয়ে নিন এবং এর উপরে একটা জ্যাকেট পরে নিন। ক্যামেরার লেন্স টা এক্ষেত্রে আপনার শরীরের দিকে তাক করা থাকবে, যাতে প্রয়োজন কব্জির এক মোচড়েই ক্যামেরাটা আপনার চোখের সামনে নিয়ে আসা যায়।

ভোরে উঠুন
আমরা অনেকেই ঘুরতে গেলে একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠি। ভালো ছবির জন্য আপনাকে ভোরে উঠতে হবে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে অনেক কিছু পাল্টে যায়। ধরুণ ভোরবেলা কক্সবাজার সৈকতে কিংবা সাজেক ভ্যালির পাহাড়ে যে ছবিটা তুলতে পারবেন, সকাল দশটায় সেটা পারবেন না। কারণ ততক্ষণে মানুষের ভিড়ে সাবজেক্টকে ফাঁকা পাবেন না। তাছাড়া ভোরে তোলা ছবি সুন্দর আসে।

নিজের পছন্দকে প্রাধাণ্য দিন

যদি স্বর্ণ মন্দিরের চাইতে চা বিক্রেতাকে আপনার কাছে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়ে থাকে তবে সেই চা বিক্রেতার ছবিই তুলুন। গতানুগতিক ট্যুরিস্টরা যেসব ছবি তুলে থাকেন সেগুলো আপনি গুগলে শত-শত পাবেন। অ্যাডভেঞ্চারাস হোন, যেখানে যাবেন সেখানকার স্থানীয়দের ছবি তুলতে চেষ্টা করুন, অবশ্যই তাদের অনুমতি নিতে ভুলবেন না। তাদের দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটাবেন না। তারা যদি আপনাকে ছবি তুলতে অনুমতি না দেয় তবে তাদের মতামত কে সম্মান দিন এবং অন্য কিছুর ছবি তুলুন। তবে সাধারণত কেউ না করে না, এর ফলে আপনি পাবেন সুন্দর ছবি আর সেই ছবির একটি চমৎকার গল্প।
মানুষের জীবনযাত্রা
হয়তো কেউ ইট মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে, বা ছোট ছোট বাচ্চারা খেলছে, কেউ বা মাছ বিক্রি করছে…এধরনের ছবি গুলো নিন। যাতে আপনার ছবির দর্শকরা বুঝতে পারে সেই এলাকার লোকজন কী ধরনের জীবন যাপন করছে। অনুগহ করে এধরনের ছবি তোলার সময় তাদের কে পোজ দিতে বলবেন না। আপনার ছবির সাবজেক্ট কে তাদের নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকতে দিন এবং সে সময়ে তাদের ছবি তুলুন। হ্যা, অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু কিছু পোর্ট্রেট খুবই চমৎকার দেখায় নিঃসন্দেহে। কিন্তু মনে রাখবেন তা যেন আপনি যার ছবি তুলছেন তার বিরক্তির উদ্রেক না করে।

কম্পোজিশন এক্সপেরিমেন্ট

একই ছবি বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে তুলুন। আপনার আই লেভেল থেকে একটা ছবি যেরকম দেখাবে, বসে তুললে হয়তো আরো ভালোও দেখাতে পারে! আপনি ভাবলেন এই ছবিটা এভাবেই ভালো আসবে। পরে বাসায় গিয়ে দেখলেন সেটা ভালো আসেনি। বরং অন্য এঙ্গেল থেকে কোনোমতে তোলা ছবিটাই ভালো হয়েছে!
নৈসর্গিক দৃশ্য
ট্রাভেল ফটোগ্রাফি করার মূল উদ্দেশ্যই হলো স্মৃতি জমা করা। আপনি অবশ্যই মনে করতে চাইবেন যেখানে আপনি ঘুরতে গিয়েছিলেন সে জায়গাটা কত সুন্দর ছিলো। যা দেখে আপনার মন বিমোহিত হয় যেমন ফুল, সূর্যাস্ত কিংবা পাহাড়ি ঝর্ণা, তার একটা ছবি তুলে নিন।
ভ্রমণসঙ্গীদের ছবি
আপনার ভ্রমণসঙ্গীদের ছবি নিতে ভুল করবেন না। এটা ট্রাভেল ফটোগ্রাফি এর গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। নৈসর্গিক দৃশ্যের ছবি নেয়ার সাথে সাথে যাদের সাথে আপনি ঘুরতে গিয়েছেন তাদের ছবিও নিন। আপনার স্মৃতির ভান্ডারে ট্যুরমেটরাও থাকুক। সমুদ্র পারে, বা কোন রেস্টুরেন্টের কিংবা রিসোর্টের সামনে তাদের একটা ছবি তুলে ফেলুন।
ডে লাইট এর সুবিধা
দিনের বিভিন্ন সময়ের আলোর সুবিধা নিন। ঠিক সূর্যোদয়ের পরে এবং সূর্যাস্তের আগ মুহূর্তে দিনের আলো সবচাইতে আকর্ষণীয় থাকে, এসময় অনেক সাধারণ ছবিও দেখে মোহময় মনে হতে পারে। নিজের কিছু ল্যান্ডস্কেপ এবং স্ট্রিট ফটোগ্রাফি এসময় তোলার জন্য মনে মনে একট প্ল্যান তৈরি করে রাখুন।
ক্যামেরার জুম অপশন
ডিজিটাল জুম ব্যাবহার করবেন না। ডিজিটাল ক্যামেরাতে অপ্টিক্যাল এবং ডিজিটাল দু ধরনের জুম অপশন আছে। সাধারণত ডিজিটাল জুম ব্যাবহার করে ছবি তুললে ছবি ঝাপসা আসে। অপ্টিক্যাল জুম এ ছবি অপেক্ষাকৃত ভালো আসে। আপনার ক্যামেরার সেটিংস এ গিয়ে ডিজিটাল জুম টার্ন অফ করে দিন।

রাতারগুল বিছানাকান্দি পান্থুমাই | সিলেট ভ্রমণ

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হলো সিলেট। মেঘালয়ের পাহাড় বেষ্টিত সিলেটের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে প্রচুর দর্শনীয় স্থান। আজকে আমরা জানবো সিলেট ভ্রমণ এর পর্যটন আকর্ষণ রাতারগুল বিছানাকান্দি ও পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণ সম্পর্কে। যেকোনো জায়গা ভ্রমণের ক্ষেত্রে পূর্ণতা আসে সঠিক ট্যুর প্ল্যানে। যে জায়গাটা আপনি রিলাক্সে একদিনে ঘুরতে পারবেন, ভুলভাল ট্যুর প্ল্যান করলে সেটা ঘুরতে দুইদিন লাগে। একদিনে কিভাবে বিছনাকান্দি রাতারগুল এবং পান্তুমাই ঝর্ণা থেকে ঘুরে আসা যায় সে বিষয়টির খুটিনাটি নিয়েই আজকের আলোচনা।

কখন যাবেন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে এখানে সারা বছরই পর্যটকরা ছুটে আসেন। তবে সিলেট ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। বর্ষায় মেঘালয় পাহাড় সাজে সবুজের আবরণে। ঝর্ণা ও পাথরের উপত্যকা থাকে পূর্ণ যৌবণা। সব মিলিয়ে এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলো যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উপচে পড়ে! তাই এক কথায় বলা চলে মে থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সিলেট ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

বিছনাকান্দি

বিছনাকান্দি (Bichanakandi) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত৷ ঢাকা থেকে ৩১৫ কিলোমিটার এবং সিলেট থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। । বিছানাকান্দির তিনদিকে মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড়। সেখান থেকে নেমে আসা অসংখ্য ঝর্ণাধারা, আর যতদুর চোখ যায় শুধু পাথরের সমারোহ। ঝর্ণার পানি যখন পাথরের গায়ে ধাক্কা লেগে প্রবাহিত হয়, তখন কলকল শব্দের মোহনীয় আবেশ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।

রাতারগুল

রাতারগুল (Ratargul) দেশের সবচেয়ে বড় সোয়াম্প ফরেস্ট। অনেকে রাতারগুলকে বাংলার আমাজন নামে অভিহিত করেন। সিলেট শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এ বনের অবস্থান। অরণ্যের মধ্যে ঘুরে ঘুরে প্রকৃতির আরো নিকটে যেতে হলে আপনাকে ডিঙি নৌকায় চড়তে হবে। কোনো এক বৃষ্টির দিনে ডিঙি নৌকায় রাতারগুলে ঘুরে বেড়ানোর সময় আপনার মনে হবে চমৎকার এক জলে ভাসা জীবন!

পান্থুমাই ঝর্ণা

পান্তুমাই ঝর্ণা (Panthumai Waterfall) গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের একটি গ্রামে অবস্থিত। বিছনাকান্দি থেকে নৌকা নিয়ে যাওয়া যায় এই ঝর্ণার কাছে। তবে ঝর্ণার খুব কাছাকাছি যাওয়া যায় না। ঝর্ণাটি ভারতে অবস্থিত। ভারতে এই ঝর্ণা বোরহিল নামে পরিচিত৷

কিভাবে যাবেন সিলেট

রাতারগুল বিছানাকান্দি পান্থুমাই যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে সিলেট আসতে হবে। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে ট্যুর প্ল্যান

তিনটি স্থান (রাতারগুল বিছানাকান্দি পান্থুমাই) ভ্রমণ করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি সময়টা কিভাবে ব্যবহার করছেন। সময়ের সঠিক ব্যবহারে আপনি খুব ভালো ভাবেই ঘুরতে পারেন একদিনে এই তিনটি জায়গায়। সেক্ষেত্রে সিলেট পৌঁছে হোটেল ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে আপনার দলের সদস্য সংখ্যাভিত্তিতে সিএনজি অথবা লেগুনা বা মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে নিতে পারেন। রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া নিবে ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা সারাদিনের জন্য। তবে ভাড়া করার সময় অবশ্যই কথা বলে নিবেন যে একসাথে রাতারগুল এবং বিছনাকান্দি এই দুই জায়গা দেখবেন। একইভাবে লেগুনা রিজার্ভ নিলে ভাড়া পড়বে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে। সিএনজি বা মাইক্রোবাস রিজার্ভ করতে পারবেন সিলেট শহরের আম্বরখানা পয়েন্টের স্ট্যান্ড থেকে আর লেগুনা রিজার্ভ করতে হবে সোবহানীঘাট পয়েন্ট এর শিশুপার্কের সামনের লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে। গাড়ি রিজার্ভ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রওয়ানা দেওয়া ভালো।

এখানে বলে রাখা আপনি দুইভাবে যেতে পারবেন। প্রথমে রাতারগুল পরে বিছনাকান্দি ও পান্তুমাই, কিংবা প্রথমে বিছনাকান্দি ও পান্তুমাই পরবর্তীতে রাতারগুল। ভ্রমণকারীরা সাধারণত প্রথমে রাতারগুল দেখতে চায়। বিকেলটা বিছানাকান্দির স্বচ্চ জলে কাটিয়ে দিবে বলে।

সিলেট থেকে রাতারগুল

সিলেট শহর থেকে রওয়ানা দেওয়ার পর রাতারগুল পৌঁছাতে ১ ঘন্টার একটু বেশি সময় লাগবে। রাতারগুল নৌকাঘাট হচ্ছে তিনটি। মোটরঘাট, মাঝের ঘাট এবং চৌরঙ্গী ঘাট। তিনটি ঘাটের মধ্যে সবচেয়ে শেষের ঘাট চৌরঙ্গী ঘাট। এইখান থেকে  নৌকা ভাড়া তুলনামূলক সস্তা। এক নৌকায় একসাথে ৫ জন উঠা যায়। নৌকাভাড়া ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা। নৌকা দেড় ঘন্টার মত সময় নিয়ে জলাবনে ঘুরাবে। রাতারগুল ঘুরে আবার ঘাটে ফিরে আসুন। এর পরের গন্তব্য বিছানাকান্দি।

বিছানাকান্দি যাওয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে চলে আসতে হবে হাদারপাড় বাজার। এখানে নামার পর আপনি নৌকাঘাট পেয়ে যাবেন। তবে হাদারপাড় পৌঁছানোর তিন কিলোমিটার আগে পীরের বাজারেও চাইলে নেমে যেতে পারেন। পীরের বাজারেও বড় একটা নৌকাঘাট আছে। চাইলে এখান থেকেও আপনি নৌকা নিয়ে বিছনাকান্দি যেতে পারবেন। রাতারগুল থেকে হাঁদারপাড় যেতে দুই ঘন্টা সময় লাগে।

হাদারপাড় বা পীরের বাজার ঘাট থেকে রিজার্ভ নৌকাভাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্তৃক নির্ধারিত ১৫৫০ টাকা। এক নৌকায় যেতে পারবেন ১০ জন। মাঝির সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে ১২ জন পর্যন্ত বসতে পারবেন। ইঞ্জিনচালিত এসব নৌকায় বিছনাকান্দি যেতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট।

বিছানাকান্দিতে ৪০ মিনিট সময় কাটিয়ে নৌকা নিয়ে চলে যান পান্থুমাই এর উদ্দেশ্যে। বিছানাকান্দিতে এর বেশি সময় দিলে পান্থুমাই ভ্রমণের সময় থাকবেনা হাতে। বিছানাকান্দি থেকে পান্থুমাই যেতে নৌকায় ১ ঘন্টা সময় লাগবে।

রাতারগুল
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

কোথায় থাকবেন

আম্বরখানা, দরগাহ গেইট, জিন্দাবাজার এসব এলাকায় অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হিল টাউন, হোটেল ব্রিটানিয়া, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট হোটেল। এখানে ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যাবে।

বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র‍্যান্ড প্যালেস, হোটেল নূরজাহান ইত্যাদি। রুম ভাড়া ৪৫০০ থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে। সিজন অনুযায়ী রুম ভাড়ায় তারতম্য হয়।

একদম সস্তার মধ্যে সিলেট ভ্রমণ এর সময় থাকতে চাইলে দরগাহ গেইট এলাকায় অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার পছন্দমতো হোটেল নিতে পারবেন ওখান থেকে।

কি খাবেন কোথায় খাবেন

বিছনাকান্দিতে দুটি ভাসমান রেস্টুরেন্ট রয়েছে। চাইলে ওখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। খরচ পড়বে জনপ্রতি ১২০ থেকে ২০০ টাকা। মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ভর্তা ইত্যাদি মেনু পাওয়া যাবে এখানে। হাদারপাড় বাজারেও কিছু খাবার দোকান আছে। বেশিরভাগ দোকানেই খিচুড়ি হয় বেশি। দাম পড়বে ৫০-১০০ টাকার মধ্যে।

এছাড়া সিলেট শহরে অনেকগুলো বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসী, ভোজন বাড়ি, পালকি, এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার ভর্তার সাথে আপনার পছন্দ মতো মেনু পাবেন এখানে। খরচ হবে জনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকার মতন। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ২৯ রকমের ভর্তা আছে! চাইলে সকালের নাস্তাও এইসব রেস্টুরেন্টে সেরে নিতে পারবেন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

*নৌকা ও সিএনজি রিজার্ভের সময় ভালোভাবে দরদাম করে নিবেন।
*সাতার না জানলে বেশি পানিতে নামা থেকে বিরত থাকুন।
* বর্ষাকালে পানির প্রবাহ বেশি থাকায় সাঁতার জানলেও গভীর পানিতে না নামাই নিরাপদ।
* দলগতভাবে ভ্রমণ করুন, এতে খরচ অনেকাংশে কম হবে।
*বিছনাকান্দিতে প্রচুর পাথর, হাটাচলার সময় তাই একটু সাবধানে থাকতে হবে। পিচ্ছিল পাথরে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
* স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী থাকুন।
* চেষ্টা করবেন সময়ের ব্যাপারে সচেতন থাকার
*পান্তুমাই ঝর্ণার বেশি কাছে যাবেন না। সীমান্ত এলাকায় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা শ্রেয়।
* রাতারগুলে বর্ষায় বিভিন্ন প্রজাতির সাপ গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। তাই গাছে হাত দেওয়া কিংবা চড়ে বসা থেকে বিরত থাকুন।
* পরিবেশ এবং প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।

অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

সিলেটে রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে গোয়াইনঘাটের জাফলং সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়া জাফলংয়ের কাছে রয়েছে সংগ্রামপুঞ্জী মায়ারী ঝর্ণা। যেটি পিয়াইন নদী পার হয়ে ১৫ কিঃমিঃ হাঁটলেই পাওয়া যাবে। এটি মূলত ভারতের অংশে পড়েছে। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারবেন। অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল। এছাড়া আছে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, বিছানাকান্দির কাছে পান্থুমাই ঝর্ণা। সারি নদীর লালাখাল, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর

আরো পড়ুন

 

 

Exit mobile version