সীতাকুন্ড ইকো পার্ক

ছবি: কালপুরুষ অপু

সীতাকুন্ড ইকোপার্ক

সীতাকুন্ড ইকোপার্ক চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায়। পাহাড়ে পাহাড়ে বিশাল বনভূমি, বন্যপ্রাণী ও হরেক রকম বৃক্ষরাজির মনোরম পরিবেশে একটা দিন কাটানোর জন্য প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক পর্যটক এখানে ছুটে আসেন। ইকোপার্কের ভিতরে সুপ্তধারাসহস্রধারা নামের দুইটি ঝর্ণা আছে। ঝর্ণায় যেতে হলে পাহাড় দিয়ে কিছুটা উঠানামা করা লাগে। এখানে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও এসেছিলেন। পাহাড় ও ঝর্ণার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি “আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ” নামে বিখ্যাত গানটি রচনা করেন। যার ফলক এখনো ইকো পার্কের ভিতরে আছে। বোটানিক্যাল গার্ডেন এর ভিতরে পাহাড়ের উপর থেকে বঙ্গোপসাগরও দেখা যায়।

কিভাবে যাবেন সীতাকুন্ড ইকোপার্ক

সীতাকুন্ড ইকোপার্ক যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি সীতাকুন্ড আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। এসব টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন সহ সব বড় কোম্পানির বাস আছে এই রুটে। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত যেতে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

ট্রেনে সীতাকুন্ড

ঢাকা থেকে সীতাকুন্ড ইকোপার্ক যাওয়ার সরাসরি ট্রেন হলো চট্টলা এক্সপ্রেস। এছাড়া সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই সীতাকুন্ড বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে সীতাকুন্ডের বাস ভাড়া ৮০ থেকে ১৫০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।

যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে সীতাকুন্ড বাজারে আসা যাবে। চট্টগ্রাম থেকে এলে অলংকার বা  একে খান বাস স্ট্যান্ড থেকে সীতাকুন্ডের বাস আছে। ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা।

সীতাকুন্ড থেকে ইকোপার্ক

সীতাকুন্ড বাজার থেকে হাইওয়ে ধরে চট্টগ্রামের দিকে ২ কিলোমিটার গেলে ফকিরহাট বাজার পড়োবে। ফকিরহাট থেকে হাইওয়ের পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে দেড় কিলোমিটার গেলেই সীতাকুন্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন অর্থাৎ সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। জনপ্রতি প্রবেশ ফি ৫০ টাকা। সিএনজি নিয়ে প্রবেশ করলে বাড়োতি ৮০ টাকা দিতে হয়। জীব বৈচিত্র ও প্রাণী বৈচিত্রের সাথে পরিচিত হতে প্রতি বছর শিক্ষা সফরে দেশের নানান প্রান্ত থেকে প্রচুর ছাত্রছাত্রী এখানে আসেন। সীতাকুন্ড ইকোপার্ক এর ভিতরে বিশুদ্ধ পানি ও ওয়াশরুমের সুব্যবস্থা আছে।

কোথায় থাকবেন

সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।

কোথায় খাবেন

হালকা নাস্তা করার মতো কয়েকটি দোকান আছে সীতাকুন্ড ইকোপার্ক এর প্রবেশ মুখে। ভারী খাবারের জন্য আপনাকে সীতাকুন্ড বাজারে আসতে হবে। খাবারের জন্য হোটেল সৌদিয়া, আল আমিন ও আপন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এখানে আপনি ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ডাল, সবজি ইত্যাদি মেন্যু হিসেবে পাবেন। খাবার খরচ পড়বে প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো। রাতের বাসে গেলে সকালের ব্রেকফাস্টও এখানে সেরে নিতে পারেন।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে অনেকগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান রয়েছে। সীতাকুন্ড ইকোপার্ক এর ভিতরে রয়েছে সুপ্তধারা ও সহস্রধারা নামে দুইটি ঝর্ণা। এছাড়া ইকো পার্ক এর বাইরে নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন একইদিন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর।  চন্দ্রনাথ পাহাড় আর গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত সীতাকুন্ড ইকো পার্কের পাঁচ কিলোমিটার এর মধ্যে। কাছেই বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। আর হাইওয়ে ধরে ঢাকার দিকে দশ কিলোমিটার এগুলে পাবেন কমলদহ ঝর্ণা। যদি বিশ কিলোমিটার যান তাহলে  খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার ট্রেইল পাড়বে। জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।

আরো পড়ুন