ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ভোলাগঞ্জ কিভাবে যাবো

ছবি: ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর

ভোলাগঞ্জ

ভোলাগঞ্জ (Bholaganj) সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানিগঞ্জের একটি পাথর কোয়ারি। ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর নামে এটি পরিচিত । প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বর্তামানে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান উঠেছে। একপাশে মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়, সেখান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঝর্ণা, আর অন্যপাশে পাথুরে নদী এই জায়গাটির সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মেঘালয়ের পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো থেকে যে নদীটির উৎপত্তি হয়ে ভোলাগঞ্জে উপর দিয়ে বয়ে গেছে তার নাম ধলাই নদ। পাহাড় থেকে ঝর্ণার পানির স্রোতে এই নদী বেয়ে নেমে আসে সাদা পাথর। ধলাই নদের উৎসমুখের এই জায়গাটির নাম ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট। এর কাছাকাছি আরো দুইটি সুন্দর জায়গা রয়েছে উৎমাছড়া ও তুরুংছড়া নামে। ভোলাগঞ্জ কিভাবে যাবো এই প্রশ্নটা আপনার মনে প্রথমেই আসতে পারে।

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ভ্রমণ এর বিস্তারিত ভিডিও গাইডলাইন পেতে গ্রিন বেল্ট ট্রাভেল চ্যানেলের নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।

কিভাবে যাবেন

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর দেখতে যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে সিলেট আসতে হবে। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ

সিলেটের আম্বরখানা থেকে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর যাওয়ার সিএনজি পাবেন। লোকাল সিএনজিতে জনপ্রতি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা নিবে। চাইলে সিএনজি রিজার্ভও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আসা যাওয়ায় ভাড়া পড়বে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। এক সিএনজিতে ৫ জন বসতে পারবেন। আম্বরখানা থেকে ভোলাগঞ্জ যেতে কমবেশি দেড় ঘন্টার মতো সময় লাগে। ভোলাগঞ্জ বাজারে নেমে দশ নম্বর নৌকা ঘাটে যেতে হবে। নৌকা ঘাট থেকে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর যাওয়ার নৌকা পাওয়া যায়। আসা যাওয়ার ভাড়া ৮০০ টাকা। এক নৌকায় ১০ জন বসা যায়। এক্ষেত্রে নিজেরা গ্রুপ করে গেলে খরচ কমে আসে।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর

উৎমাছড়া ও তুরংছড়া

ভোলাগঞ্জ এর কাছেই আরো দুইটি পর্যটন স্থান উৎমাছড়া ও তুরংছড়া। অনেকেই ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর থেকে উৎমাছড়া ও তুরংছড়া ঘুরতে যান। সেখানে যেতে হলে  প্রথমেই যেতে হবে দয়ারবাজার। ভোলাগঞ্জ যে নৌকায় যাবেন সেই নৌকার মাঝিকে বললে আপনাকে দয়ারবাজার ঘাটে নামিয়ে দিবে। সেক্ষেত্রে নৌকা ঠিক করার সময়ই এই বিষয়ে কথা বলে রাখতে হবে। দয়ারবাজার থেকে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়ায় চলে যান চরার বাজার। চরার বাজার নেমে ১৫/২০ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন উৎমাছড়া। আর তুরংছড়া যেতে ৩০/৪০ মিনিট সময় লাগবে। চাইলে সেখান থেকে লোকাল বাইক ভাড়া করেও যেতে পারবেন। বাইকে ভাড়া পড়বে ২০০ টাকা। ফেরার সময় চরারবাজার-দয়ারবাজার-ভোলাগঞ্জ হয়ে চলে আসতে পারবেন আম্বরখানায়। ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এর সাথে উৎমাছড়া তুরংছড়া ঘুরে আসতে চাইলে বাড়তি ৩/৪ ঘন্টা সময় লাগবে।

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর কখন যাবেন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারাবছরই ভ্রমণপিপাসুরা ভোলাগঞ্জ ছুটে আসেন। তবে বর্ষায় এখানে পানি থাকে বলে বর্ষাকালে প্রকৃতি বেশি সুন্দর। তখন মেঘালয়ের পাহাড়, সেখান থেকে নেমে আসা ঝর্ণা, পাথুরে নদী- সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক মোহনীয় রূপের সৃষ্টি হয়। তাই এক কথায় বলা যায় জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ ভ্রমণের ভালো সময়।

কোথায় খাবেন

ভোলাগঞ্জ দুপুরের খাবারের জন্য সাধারণ মানের কিছু খাবার হোটেল আছে। কোম্পানিগঞ্জ সদরে খেতে চাইলে দেশবন্ধু রেস্টুরেন্ট বা আলম হোটেলে খেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সকালের খাবার সিলেট থেকে খেয়ে গেলে দুপুরের খাবারটা লোকাল কোনো হোটেলে খেয়ে নিবেন। আর রাতের খাবারটা সিলেট শহরে এসে খেতে পারবেন। আর দুপুরের খাবারের প্যাকেট সিলেট থেকে নিয়ে যেতে চাইলে কোনো অবস্থাতেই সেটা যেখানে সেখানে ফেলে আসবেন না।

কোথায় থাকবেন

ভোলাগঞ্জ ঘুরতে গেলে সেখানে থাকার জন্য আশেপাশে কোনো ভালো হোটেল নাই। তাও যদি কোনো কারণে থাকতে হয় কোম্পানিগঞ্জ সদরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল আল সাদিক বা হালিমা বোর্ডিং অন্যতম। আর সিলেটে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের সব ধরণের হোটেল আছে। আশাকরি পুরো আর্টিকেলের মাধম্যে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর কিভাবে যাবো এই উত্তরটি পেয়ে গেছেন।

ভোলাগঞ্জ ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

* সময়ের দিকে খেয়াল রাখবেন। যেন সন্ধ্যার আগেই শহরে ফিরে আসতে পারেন।
* ভোলাগঞ্জ একটি সীমান্তবর্তী এলাকা। তাই সাবধানে থাকবেন।
*খাওয়ার জন্য ভালো হোটেল নেই। যেগুলো আছে ওগুলোতেই খেতে হবে।
*বর্ষায় নদীতে অনেক স্রোত থাকে। তাই সাঁতার জানলেও লাইফ জ্যাকেট ছাড়া বেশি পানিতে নামা যাবেনা।
* মনে রাখবেন অতিরিক্ত এডোভেঞ্চার দূর্ঘটনা ডেকে আনে।
* উৎমাছড়া ও তুরংছড়া সহ ঘুরতে চাইলে খুব সকালে রওনা করতে হবে। নইলে সময়ে কুলাবেনা।
*সিএনজি ও নৌকা ভাড়ার সময় ঠিকঠাক দরদাম করে নিবেন।
* কম খরচে ঘুরতে চাইলে গ্রুপ করে ঘুরতে হবে।
* পরিবেশ এবং প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ভ্রমণে গেলে সিলেটে আরো অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান আছে। এর মধ্যে রয়েছে গোয়াইনঘাটের জাফলং এবং  সংগ্রামপুঞ্জী মায়ারী ঝর্ণা। যেটি জাফলং গিয়ে পিয়াইন নদী পার হয়ে ১৫ কিঃমিঃ হাঁটলেই পাওয়া যাবে। এটি মূলত ভারতের অংশে পড়েছে। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারবেন। এছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল। এছাড়া আছে বিছানাকান্দির কাছে পান্থুমাই ঝর্ণা। সারি নদীর লালাখাল,  গোয়াইনঘাটের জাফলং। যেতে পারেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ও বিছানাকান্দি

আরো পড়ুন