মহামায়া লেক (Mohamaya Lake) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি কৃত্রিম হ্রদ। ১১ বর্গ কিলোমিটার এর এই লেকের অবস্থান মিরসরাইয়ের ঠাকুরদীঘি ইউনিয়নে। বিস্তীর্ণ লেকের মধ্যে ডুবে আছে অনেকগুলো পাহাড়, আছে পাহাড়ি ঝর্ণা। টলটলে পানি আর সবুজ প্রকৃতির মাঝে নৌকা নিয়ে এসব পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে ঘুরে বেড়ানো যায়। কায়াকিং এর ব্যাবস্থাও আছে এই লেকে। রাতে থাকতে চাইলে এখানে ক্যাম্পিং করা যাবে। মহামায়া লেক মূলত একটি রাবার ড্যাম এর জন্য সৃষ্টি হয়েছে। লেকটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে আছে।
কিভাবে যাবেন মহামায়া লেক
মহামায়া লেক যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ঠাকুরদীঘি বাজারে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি ঠাকুরদীঘি আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে মিরসরাই এর ঠাকুরদীঘি বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে ঠাকুরদীঘি পর্যন্ত যেতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
ট্রেনে মহামায়া লেক
ঢাকা থেকে ঠাকুরদীঘির সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই ঠাকুরদীঘি বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে ঠাকুরদীঘির বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।
যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে ঠাকুরদীঘি বাজারে আসা যাবে। আর চট্টগ্রাম থেকে আসতে চাইলে চট্টগ্রামের অলংকার বা সিটি গেইট থেকে ফেনী বা বারৈয়ারহাট এর বাসে উঠলেই হবে। বারৈয়ারহাট এর সরাসরি চয়েস বাস আছে। ভাড়া ৮০ টাকা।
ঠাকুরদীঘি বাজারে নেমে সিএনজিতে করে মহামায়া ইকো পার্ক এ আসা যাবে। ইকো পার্ক এর ভিতরেই মহামায়া লেক। লোকাল সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ১৫/২০ টাকা। আর রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে ৮০ থেকে ১২০ টাকা।
মহামায়া লেকে কায়াকিং
মহামায়া লেকে কায়াকিং করার ব্যবস্থা আছে। এক কায়াক বোটে ২ জন বসতে পারবেন। ঘন্টাপ্রতি কায়াক ভাড়া ৩০০ টাকা। আধা ঘন্টার জন্য ২০০ টাকা। স্টুডেন্টদের জন্য ডিসকাউন্ট অফার করে তারা। স্টুডেন্টরা আধা ঘন্টার ভাড়াতেই এক ঘন্টা কায়াকিং এর সুযোগ পেয়ে থাকে। কায়াকিং ছাড়াও এখানে ইঞ্জিন বোটে ঘুরতে পারবেন আপনি। ১০ জন বসার মতো একটা ইঞ্জিন বোটের ভাড়া ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। ইঞ্জিন নৌকা আপনাকে পুরো মহামায়া লেক ঘুরে দেখাবে।
কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য ঠাকুরদীঘি বা নিকটস্থ বারৈয়ারহাট বাজারে কোনো হোটেল নাই। থাকতে চাইলে সেখানে ক্যাম্পিং করতে পারবেন। অথবা থাকার হোটেলের জন্য আপনাকে যেতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। ঠাকুরদীঘি বাজার থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটারের মতো।
কোথায় খাবেন
মহামায়া লেক এর আশেপাশে কোনো খাবার দোকান নাই। ঘুরতে গেলে আপনাকে খাবার নিয়ে যেতে হবে। ঠাকুরদীঘি বাজারে কিছু খাবারের দোকান পাবেন। তবে ভালো মানের খাবারের জন্য আপনাকে আসতে হবে বারৈয়ারহাট বাজারে। এখানে ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। মেনু হিসেবে ভাত মাছ মাংস ভর্তা ইত্যাদি পাওয়া যাবে।
কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। মহামায়া লেক ভ্রমণে গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। মহামায়ার একদম কাছাকাছি আছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ও কমলদহ ঝর্ণা। বিশ কিলোমিটার দূরের সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত কিংবা চন্দ্রনাথ পাহাড়ও চাইলে একই দিন কাভার করতে পারবেন। যেতে পারেন সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। যার ভিতরে আছে সুপ্তধারা ও সহস্রধারা নামে মায়াবী দুইটা ঝর্ণা। জয়েন করুন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।
এই মুহুর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হচ্ছে সাজেক ভ্যালি (Sajek Valley)। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফিট উচ্চতায় এর অবস্থান। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে আপনাকে খাগড়াছড়ি হয়ে যেতে হবে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭৩ কিঃমিঃ আর দীঘিনালা থেকে ৪০ কিঃমিঃ এর মতো। ভ্রমণ পিপাসুদের অনেকে সাজেক ভ্যালিকে বাংলার ভূস্বর্গ নামে অভিহিত করেন। চারপাশে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি, আর তুলোর মতো মেঘ, এর মধ্যেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সাজেক ভ্যালি। প্রকৃতি এখানে সকাল বিকাল রঙ বদলায়। দিনের প্রতিটি মুহুর্তে আপনি সাজেকের আলাদা রূপ দেখতে পাবেন। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ সহ বিস্তারিত গাইডলাইন থাকবে এই আর্টিকেলে।
কী কী দেখবেন সাজেক ভ্যালিতে
প্রকৃতিপ্রেমী হলে আপনার কাছে পুরো সাজেক ভ্যালিটাই দর্শনীয় মনে হবে। তারপরও বলতে হয় পর্যটকদের কাছে সবচয়ে আকর্ষণীয় স্থান কংলাক পাড়া। এছাড়া হ্যালিপ্যাড, রুইলুই পাড়া, রক গার্ডেন, লুসাই ভিলেজ উল্লেখযোগ্য।
কংলাক হলো সাজেকের সবচেয়ে উঁচু স্থান। এটি লুসাই অধ্যুষিত পাড়া। কংলাকের চূড়া থেকে আপনি পুরো সাজেক ভ্যালি এক নজরে দেখতে পাবেন। ভাগ্য ভালো হলে দিগন্তে দেখা পাবেন রংধনুর। এই অপার সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য কংলাকের চূড়া পর্যন্ত উঠতে আপনাকে ৪০ মিনিটের মতো ট্রেকিং করতে হবে। বিকেল বেলা কংলাক ভ্রমণের আদর্শ সময়। আপনি চাইলে কংলাকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে পারেন। এটি আপনার ভ্রমণ জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য স্মৃতি হয়ে থাকবে।
সাজেকের নিচে একটি ঝর্ণা আছে। প্রচলিত ভাষায় এটি কমলক ঝর্ণা নামে পরিচিত। এর মূল নাম পিদাম তৈসা বা সিকাম তৈসা। রুইলুক পাড়া থেকে এখানে ট্রেকিং করে যেতে চাইলে আসা যাওয়ায় ৪ ঘন্টার মতো সময় লাগবে।
সূর্যাস্তের পরও সাজেক তার রূপবদল থামাবে না। সন্ধ্যার পরপরই আকাশ ভরা নক্ষত্রের দেখা মিলবে। রাত যত বাড়বে তার রূপও তত গাঢ় হবে। দূষণমুক্ত পরিবেশ ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এখানে প্রতিদিনই রাতের আকাশে তারার মেলা বসে। জোছনারাতে প্রকৃতি হয়ে উঠে আরো স্বর্গীয়! খোলা মাঠে বাতাসে গা এলিয়ে দিয়ে রাতের আকাশ দেখতে চাইলে হ্যালিপ্যাড সবচেয়ে চমৎকার জায়গা।
সাজেকে মেঘ দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ভোরবেলা। সারারাত জেগে থেকে যদি আপনি ভোর মিস করেন, তাহলে আপনি অনেক কিছুই মিস করবেন। ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সবচেয়ে ফ্রেশ মেঘ দেখা যায়। যেন হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারেন। মেঘের গায়ে যখন সূর্যের আলো পড়তে শুরু করে তখন অবর্ণনীয় এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। এইসময় প্রতি ১০ মিনিটে একবার করে প্রকৃতির রঙ বদলে যেতে দেখবেন। তাই খেয়াল রাখবেন সূর্যোদয় দেখা যেন কোনোভাবেই মিস না হয়। শুধু মেঘের গায়ে সূর্যোদয় দেখার জন্যই সাজেক ভ্যালি আসা যায়।
সাজেক থেকে ফেরার সময় আপনার যাত্রাপথেই পড়বে হাজাছড়া ঝর্ণা। সুযোগ থাকলে ঢুঁ মেরে আসতে ভুলবেন না।
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
সত্যি বলতে প্রতিটি মৌসুমে সাজেকের আলাদা আলাদা সৌন্দর্য আপনার চোখে পড়বে। শীতের সাজেক একরকমতো বর্ষায় সম্পূর্ণ অন্যরকম। তাই ভ্রমণপিপাসুরা বছরজুড়ে সাজেকে ছুটে যায়। তবে বর্ষার শুরু থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত, অর্থাৎ মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রকৃতি সবচেয়ে সতেজ থাকে বলে এসময় সাজেক বেশি সুন্দর। তখন সারাদিন মেঘ ভেসে বেড়ায় এখানে সেখানে। মেঘ এসে আপনাকে ঢেকে দিতে পারে যখন তখন।
সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়
সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি থেকে যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক সহজ। তাই দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে প্রথমে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির প্রধান বাস শান্তি পরিবহন। এছাড়া সৌদিয়া, শ্যামলী, ঈগল, হানিফ, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস আছে। নন এসি বাসে সব পরিবহনের ভাড়া ৫২০ টাকা। এসি বাসের মধ্যে রয়েছে শান্তি, হানিফ, ঈগল ও সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস। এসি বাস ভাড়া ৯৫০ থেকে ১২৫০ টাকা। ঢাকার গাবতলী, কলাবাগান, ফকিরাপুল ও আরামবাগ থেকে এসব বাস ছাড়ে। লাস্ট বাস রাত এগারোটার মধ্যে ছেড়ে যায়। সরকারী ছুটির দিন বা বৃহস্পতিবার শুক্রবার যেতে চাইলে আগে থেকে টিকিট কেটে রাখলে ঝামেলা এড়ানো যায়। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ বাস থেকে শুরু হবে।
খাগড়াছড়ি থেকে জিপে সাজেক ভ্যালি
খাগড়াছড়ির থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার জন্য কোনো লোকাল গাড়ি বা শেয়ার্ড জিপ নেই। আপনাকে গাড়ি রিজার্ভ করতে হবে। এক্ষেত্রে চান্দের গাড়ি অথবা মাহেন্দ্র জিপ প্রধাণ বাহন। আপ-ডাউন রিজার্ভ জিপ ভাড়া পড়বে ৮০০০ থেকে ১০০০০ টাকা। এক গাড়িতে সর্বোচ্চ ১২ জন বসার পরমিশন আছে।
আপনার টিমে সদস্য সংখ্যা কম হলে অন্য কারো সাথে জিপ শেয়ার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে খরচ কমবে। যদি শেয়ার করার মতো কাউকে না পান, তবে সিএনজি নিতে পারেন। সিএনজি ভাড়া পড়বে ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকার মতো। তবে সম্ভব হলে সিএনজিতে না যাওয়াই ভালো। তাছাড়া সিএনজিতে সাজেক পৌঁছাতে কখনো কখনো ৬ ঘন্টাও লেগে যায়। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ এর অন্যতম খরচ হলো জিপ খরচ।
খাগড়াছড়ি জিপ সমিতির ভাড়ার নির্ধারিত তালিকা
আপনি যদি একা বা ২/৩ জন হন, তাহলে চেষ্টা করবেন অন্য কোনো গ্রুপের সাথে জয়েন করে ফেলতে। নিজে কোনো গ্রুপ ম্যানেজ করতে না পারলে জিপ সমিতির অফিসে গিয়ে বললেও হবে। তারাই আপনাকে কোনো গ্রুপের সাথে জযেন করিয়ে দিতে আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করবে।
আপনি খাগড়াছড়ি থেকে মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েও সাজেক ভ্যালি যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে আগে থেকে দরদাম করে নিবেন ভালোভাবে। আপনি যে বাহনই রিজার্ভ করেন না কেন, আগে থেকেই বলে নিবেন কোন কোন স্পট দেখতে চান।
এছাড়া আপনি যদি ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি দীঘিনালার বাসে উঠেন, তাহলে দীঘিনালা থেকেও আপনি সাজেকের জিপ পাবেন। খাগড়াছড়ি থেকে জিপে উঠলে সেটাও দীঘিনালা হয়েই যায়। খাগড়াছড়ি থেকে জিপে সাজেক যেতে ৩ ঘন্টার মতো সময় লাগে।
দীঘিনালার পরের আর্মি ক্যাম্প থেকে আমি স্কর্ট দিয়ে প্রত্যেকটা গাড়ি সাজেকে নিয়ে যায়। স্কর্ট ছাড়ে সকাল ৯ঃ৩০ মিনিট এবং দুপুর ২ঃ৩০ মিনিটে। অর্থাৎ সকাল ৯ঃ৩০ মিনিটের মধ্যে আপনি ওখানে উপস্থিত থাকতে না পারলে আপনাকে দুপুর ২ঃ৩০ মিনিটের স্কর্টে সাজেক যেতে হবে। দুপুরের স্কর্টেও যদি আপনি আর্মি ক্যাম্পে উপস্থিত না থাকতে পারেন, তাহলে আপনি ওইদিন আর সাজেক যেতে পারবেন না৷ পরদিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর্মি স্কর্ট বাদে একা কোনো গাড়ির সাজেক যাওয়ার পারমিশন নেই। আবার একা জিপ বা সিএনজি নিয়ে গেলে আপনার সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ বেশি পড়বে।
সাজেক ভ্রমণে পাহাড়ি আঁকাবাতা এই পথের সৌন্দর্যের বর্ণনা দেওয়া অসম্ভব! রাস্তার প্রতিটি বাঁকে নতুন সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। যাওয়ার পথে জিপের এই জার্নিটাই স্মরণীয় হয়ে থাকবে অনেকদিন। যতক্ষণে সাজেক গিয়ে পৌঁছাবেন তার আগেই মনোরম পরিবেশ আর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের জন্য আপনার ভ্রমণক্লান্তি অনেকটাই কেটে যাবে।
চট্টগ্রাম থেকে সাজেক ভ্রমণ
চট্টগ্রামের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বিআরটিসির এসি বাস ছাড়ে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। দিনে এসি বাস অবশ্য মাত্র ৪টি। ভাড়া ২০০ টাকা। এছাড়া অক্সিজেন মোড় থেকে ১ ঘন্টা পরপর শান্তি পরিবহনের বাস আছে। ভাড়া ১৯০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে বাসে খাগড়াছড়ি যেতে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় লাগে।
রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক ভ্রমণ
রাঙামাটি থেকে সাজেক ভ্রমণ করার জন্য সড়ক ও নৌপথে আলাদা রুট আছে। রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে বাঘাইছড়ির লঞ্চ ছাড়ে। যেতে ৫/৬ ঘন্টা সময় লাগে। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। এছাড়া রাঙামাটি বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭ঃ৩০ মিনিটে বাস ছাড়ে। ২শ টাকা ভাড়া ও ৫/৬ ঘন্টা সময় লাগে। বাঘাইছড়ি থেকে মোটর সাইকেলে সাজেক যাওয়া যায়। আসা যাওয়া জনপ্রতি ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা। তবে সাজেক যেতে চাইলে রাঙামাটি হয়ে না যাওয়াই ভালো। এই পথে গেলে আপনার সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ বেশি হবে, সময়ও বেশি লাগবে।
সাজেকে থাকার রিসোর্ট
সাজেকে ছোট বড় মিলিয়ে বিভিন্ন কোয়ালিটির ১০০র মতো রিসোর্ট রয়েছে। এসব রিসোর্টে সর্বনিম্ন জনপ্রতি ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা ভাড়া পড়বে। শুক্রবার বা সরকারি ছুটিতে যেতে চাইলে কমপক্ষে ১৫/২০ দিন আগে রুম বুকিং করে রাখা ভালো। নইলে ভালো রিসোর্টে রুম পাওয়া যায়না সাধারণত। রিসোর্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রিসোর্টের কোয়ালিটি ও অবস্থানকে প্রাধান্য দিবেন। ভিউ খুব একটা ইমপর্টেন্ট না। কারণ সব রিসোর্ট থেকেই কমবেশি ভিউ পাওয়া যায়। রিসোর্ট থেকে বের হলে ভিউতো আছেই।
রিসোর্টের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিছু রিসোর্ট আছে সাজেকের বাইরে। আবার কিছু রিসোর্ট এমন একটা অবস্থানে যেখান থেকে মূল পয়েন্টে আসতে অনেক বেশি সময় নষ্ট হবে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় রিসোর্টের ভিউ তুলনামূলক ভালো, কিন্তু ইন্টেরিয়র ও ওয়াশরুম বেশ জরাজীর্ণ। তাই রিসোর্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ইন্টেরিয়র কোয়ালিটি ও লোকেশনকে প্রাধান্য দিন। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ কিছুটা বাড়লেও রিসোর্ট এর ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ না করাই ভালো।
সাজেকের সকাল। Photo: G’Son Biswas
সাজেকের উল্লেখযোগ্য কিছু রিসোর্ট ও কটেজ এর ফোন নাম্বার
রিসোর্ট রুংরাং: সাজেকের বেস্ট রিসোর্ট গুলোর মধ্যে একটি রিসোর্ট রুংরাং। রিসোর্টের বারান্দা থেকে দিগন্তজোড়া পাহাড়সারি ও মেঘ দেখতে পাবেন। এর অবস্থান আর্মি রিসোর্টের উল্টো পাশে প্রিমিয়াম লোকেশনে। এই রিসোর্টের ইন্টেরিয়র এবং ওয়াশরুম সাজেকের অন্যতম সেরা। রিসোর্টে কাপল ডাবল মিলিয়ে ৮টি রুম আছে। শুক্রবারে এর রুম ভাড়া পড়বে ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মতো। অন্যান্য দিন ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে রুম পাবেন। রুংরাংয়ের বুকিং নাম্বার 01869-649817, 01632-698158, 01869-649817। ফেসবুক পেজ: Resort RungRang
সাজেক রিসোর্ট: এই রিসোর্টটি বাংলাদেশ আর্মি পরিচালিত। রুম ভেদে এসি ও নন এসি রুমের ভাড়া পড়বে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো। সাজেক রিসোর্টের রয়েছে নিজস্ব রেস্টুরেন্ট। সেনাবাহিনী বা প্রথম সারির সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য এখানে ডিসকাউন্ট এর ব্যবস্থা রয়েছে। রুম বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন 01859-025694, 01847-070395 অথবা 01769-302370 নাম্বারে।
রুন্ময় রিসোর্ট (Runmoy Resort) : এই রিসোর্টের মোট ৫ টি রুম আছে। প্রতিটি রুমে সর্বোচ্চ ২ জন থাকার ব্যবস্থা আছে। ৬০০ টাকা বাড়তি পরিশোধ করলে রুমে অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করা হয়। নিচতলার রুম ভাড়া ৪৪৫০ টাকা, উপরের তলার রুম ভাড়া ৪৯৫০ টাকা। বুকিংয়ের জন্য ফোন করতে পারেন 0186547688 নাম্বারে।
মেঘ মাচাং (Megh Machang): ব্র্যান্ডিং বিবেচনায় এটি সাজেকের অন্যতম একটি রিসোর্ট। এর ভিউ সাজেকের অন্যতম সেরা। মেঘ মাচাংয়ের রুম রয়েছে ৫টি। রুম ভাড়া ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন 01822-168877 নাম্বারে।
মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট: সাজেকের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট। এই রিসোর্টে রয়েছে ৪টি রুম। রুম ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। বুকিং নাম্বার 01884-208060
জুমঘর রিসোর্ট: এটি সাজেকের আরেকটি ভালো রিসোর্ট। এর রুম ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন 01884-208060 নাম্বারে।
কম খরচের কিছু রিসোর্ট
কম খরচের রিসোর্টগুলো আপনার সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ কমাতে সাহায্য করবে। যারা বাজেট ফ্রেন্ডলি ভ্রমণ করতে চান তারা এই রিসোর্টগুলো দেখতে পারেন।
আলো রিসোর্ট: কম খরচে থাকার জন্য এটি একটি ভালো রিসোর্ট। কোনো ভিউ নাই। এই রিসোর্টে রুম রয়েছে ৬টি। রুম ভাড়া পড়বে প্রতিরাতের জন্য ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা। বুকিং দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন 01841-000645 নাম্বারে।
লুসাই কটেজ (TGB Lushai Cottage): কাপল ডাবল সব রকম রুম আছে এই রিসোর্টে। সাদামাটা ভালো একটি রিসোর্ট। রুম ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মতো। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন 01634-198005 নাম্বারে।
মেঘের ঘর রিসোর্ট: কম খরচে থাকার জন্য এটি সাজেকের আরেকটি ভালো রিসোর্ট। ৮টি রুম রয়েছে এই রিসোর্টে। এখানে রুম ভাড়া পড়বে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। এর বেশি দিয়ে থাকা ঠিক হবেনা। রুম বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন 01842605788 নাম্বারে।
হাফং তং: এটিও বাজেটের মধ্যে একটি রিসোর্ট। এই রিসোর্টে ৬টি রুম রয়েছে। রুম ভাড়া পড়বে। ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন 01869-649817 নাম্বারে।
পাহাড়িকা রিসোর্ট: কম বাজেটের মধ্যে এটি আরেকটি ভালো রিসোর্ট। এই রিসোর্টে ১২টির মতো রুম রয়েছে। রুম ভাড়া পড়বে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এর বেশি চাইলে না নেওয়াই ভালো। বুকিং নাম্বার 01724-658766, 01871-771777
আদিবাসী ঘর: আপনি ব্যাকপ্যাকার হলে কম খরচে আদিবাসীদের ঘরে থাকতে পারেন। জনপ্রতি ১৫০ – ৩০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। ফ্যামিলি নিয়ে থাকার জন্য আদিবাসী ঘর ভালো চয়েস হবেনা। তবে বন্ধু বান্ধব মিলে চাইলে থাকা যায়।
সাজেকে খাওয়ার ব্যবস্থা
সাজেকে খাওয়ার জন্য অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট আছে। এছাড়া অনেক রিসোর্টের নিজস্ব খাবার ব্যবস্থা রযেছে। জনপ্রতি প্রতিবেলা খাবার খরচ পড়বে ১২০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। খাবারের মেনু হিসেবে পাবেন ভাত, মুরগী, আলুভর্তা, সবজি ইত্যাদি। রাতে বারকিউর ব্যবস্থা রয়েছে অনেকগুলো রেস্টুরেন্টে। এছাড়া ভালো মানের রিসোর্টগুলোতে নিজস্ব চুলায় বারবিকিউর ব্যবস্থা আছে। সাজেকে পেপে কলা আনারস সহ অনেক সুস্বাদু পাহাড়ি ফল পাবেন বেশ সস্তায়। খেয়ে পরখ করতে ভুলবেন না।
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ
ভ্রমণের সময় সাজেক ভ্যালিতে থাকা খাবার খরচ কিছুটা বেশি হয়। তাই নিজেরা গ্রুপ করে গেলে খরচ কমানো যেতে পারে। তারপরও সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়া যাক। জিপ ভাড়া ৮ থেকে ১১ হাজার টাকা। আপনি কী কী ঘুরবেন তার উপর জিপ ভাড়া নির্ভর করে। এক জিপে দশ থেকে বারো জন বসা যায়। খাবার জন্য প্রতি বেলা খরচ হবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। বিভিন্ন এন্ট্রি ফি ও জিপ পার্কিং চার্জ বাবদ খরচ হতে পারে জনপ্রতি ১৫০ টাকা। আর কটেজ ভাড়া গড়ে জনপ্রতি ৫০০ টাকা। মনে রাখা দরকার বর্ষাকালে সাজেক ভ্রমণ করলে খরচ কম হয় তুলনামূক। তখন মেঘও বেশি দেখা যায়।
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ টিপস
*শুধুমাত্র রবি ও এয়ারটেলের নেটওয়ার্ক রয়েছে সাজেক ভ্যালিতে। তাই রবি বা এয়ারটেল সাথে রাখার চেষ্টা করুন।
* সাজেকে বিদ্যুত নেই। সোলার ও জেনারেটরে পাওয়ার সাপ্লাই করে রিসোর্টগুলো। তাই পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখুন।
*সাজেকের যাত্রাপথে জিপের ছাদে উঠবেন না। এটি করতে আর্মির পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে। তাছাড়া পাহাড়ি পথে জিপের ছাদে উঠা বিপদজনক।
* আদিবাসীদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে ভুলবেন না। এটা বেসিক ম্যানার। আপনার ব্যাক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।
*পাহাড়িদের কালচারের প্রতি সম্মান দেখান। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্যকেউ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগতো।
* যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। সেটি শুধু পাহাড়ে নয়, এমনকি শহরেও।
অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এরসাজেক ট্যুর প্যাকেজটিদেখতে পারেন। এতে আপনার সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ কিছুটা বেশি হলেও ঝামেলাহীন ভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন।
ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুরের জন্য চমৎকার একটি স্থান কেরানীগঞ্জ এর সারিঘাট। ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতা থেকে সরে কিছুটা প্রাকৃতিক ছোঁয়ার জন্য সারিঘাট থেকে ঘুরে আসা যায়। সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশ, নদী, খোলা জায়গা, কাশবন আর সাথে নৌকা ভ্রমণ। এখানকার নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে একটা বিকেল অনায়াসেই কাটিয়ে দেওয়া যায়। সারিঘাট গিয়ে হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির মাঝে। ঢাকায় যারা বসবাস করেন, তারা ঢাকার কাছাকাছি একটা দিন বেড়িয়ে আসার জন্য সারিঘাট কে বেছে নিতে পারেন।
সারিঘাট কিভাবে যাবেন
সারিঘাট এর নাম শুনলে প্রথমে আমাদের মাথায় আসে সিলেটের লালাখাল এর সারিঘাটের কথা। কিন্তু ঢাকার কাছে কেরানীগঞ্জের সারিঘাট যাওয়ার জন্য ঢাকার যে কোন জায়গা প্রথমে যাত্রাবাড়ী আসতে হবে। সেখান থেকে জুরাইন রেল গেইট। বাস বা লেগুনাতে ভাড়া ৮ টা। জুরাইন রেল গেইট থেকে পোস্তগলা ব্রিজ পার হতে হবে। পোস্তাগলা ব্রিজ পার হলেই সারিঘাট যাওয়ার অটোরিক্সা বা সিএনজি পেয়ে যাবেন। লোকাল সিএনজিতে ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা।
লোকাল সিএনজির ঝামেলায় যেতে না চাইলে জুরাইন রেল গেইট থেকে সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১২০ টাকা। একসাথে ৪/৫ জন গেলে জুরাইন বা পোস্তগোলা থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে যাওয়াই ভালো। ফেরার পথেও ওখান থেকে সিএনজি পাওয়া যাবে।
কখন যাবেন
সারাবছরই সারিঘাট যাওয়া যায়। সারিঘাট ভ্রমণের জন্য একটা বিকেলই যথেষ্ট। সাধারণত শুক্রবার বিকালে এখানে প্রচুর লোক সমাগম হয়। ভীড় পছন্দ না করলে শুক্রবার বিকেলে না যাওয়াই ভালো। কেউ চাইলে সারিঘাট এ ক্যাম্পিং করতে পারবেন। সেখানেই ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা আছে। তবে ক্যাম্পিংয়ের ক্ষেত্রে গ্রুপ করে যাওয়াই ভালো।
কি দেখবেন সারিঘাট
সারিঘাট এর বিশাল সবুজ প্রকৃতি, নদী, গাছপালা, খোলা জায়গা এসব আপনাকে প্রশান্তি দিবে। নদীতে কায়াকিং ও নৌকা ভ্রমণের সুযোগ আছে। কেউ চাইলে কায়াকিং ও নৌকা ভ্রমণও করতে পারবেন। গোসলও করা যাবে এখানে। নদীর পানি যথেষ্ট পরিষ্কার। কায়াকিং এর খরচ পড়বে জনপ্রতি ঘন্টায় ১৫০ টাকা, ৩০ মিনিটের জন্য ৭৫ টাকা। নৌকা ভ্রমণ ১০০-১৫০ টাকা। তবে আগে থেকে দরদাম করে নেয়াই ভালো। কায়াক হচ্ছে এক ধরণের ছোট ফাইবার বোট। বৈঠা বা লগি ব্যবহার করে এটি চালানো যায়। কায়াকে করে ভেসে বেড়াতে পারবেন পানি দেখতে দেখতে। এর জন্য কোনো ধরণের অগ্রিম প্রশিক্ষণের দকরকার হয়না। শুধুমাত্র ডানে ও বামে নেওয়ার কৌশল রপ্ত করলেই হবে।
এছাড়া সারিঘাট এর খোলা জায়গার নির্জনতায় অনেকটা সময় কাটিয়ে দিতে পারেন। এখানে কিছু ঝুপড়ি দোকান আছে। হালকা খাবার দাবারের জন্য এই দোকানগুলোই যথেষ্ট। সেখানে দুপুরের খাবার দাবারও পাওয়া যাবে। দুপুরের খাবারের ক্ষেত্রে খরচ হবে জনপ্রতি খরচ হবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। খাবারের মেনু হিসেবে থাকবে ভাত, ভর্তা, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল।
সতর্কতা
সাঁতার না জানলে কায়াকিং এর সময় অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পরে নিবেন। এর জন্য কোনো অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে না।কায়াকিং শুরুর আগে এবং শেষে নিজের ব্যাক্তিগত জিনিসপত্র সামলে রাখবেন। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অতিরিক্ত লোক সমাগম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন, চিপস ও বিরিয়ানির প্যাকেট বা খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না। শুধু ভ্রমণে গিয়ে নয়, প্রত্যাহিক জীবনেও যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর
ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো দোহারের মৈনট ঘাট, সাভারের সাদুল্লাপুর এর গোলাপগ্রাম, নুহাশ পল্লী, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, বেলাই বিল, নারায়ণগঞ্জ এর চৌদ্দার চর, মায়াদ্বীপ, পানাম নগরী ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক ট্রাভেল গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। সারিঘাট সম্পর্কে আরো বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে চাইলে আমাদেরকে জানান।
ঢাকার কাছেই, সবুজেঘেরা কোলাহলমুক্ত পরিবেশের জন্য ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বিখ্যাত। দেশে যে কয়টি প্রাকৃতিক বনভূমি রয়েছে তার মধ্যে মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় একটি। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে একসময় বাঘ, কালো চিতা, চিতাবাঘ, মেঘাবাঘ, হাতি, ময়ূর, মায়া হরিণ ও সম্বর হরিণ দেখা যেত। এ বনে এক সময় খেকশিয়াল, বাঘডাস, বেজি, কাঠবিড়ালী, গুঁইসাপ আর কয়েক প্রজাতির সাপ দেখা যেত। বর্তমানে সে সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। বন বিভাগ এই বনে অজগর, ময়ূর, হরিণ ও মেছোবাঘ ছেড়েছে। উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের দিক দিয়েও এ বন বিশেষভাবে আলোচিত।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে উত্তরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় এই উদ্যানটি অবস্থিত। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে এই বনের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যে কোনো বাসে চড়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ফটকের সামনেই নামা যায়। এছাড়া ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস চলে এই পথে। ন্যাশনাল পার্কের ৩ নাম্বার গেটে নামার কথা বললে সরাসরি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের প্রধান গেটে নামতে পারবেন। বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। নিজস্ব বাহনে গেলে জয়দেবপুর চৌরাস্তা ছাড়িয়ে ময়মনসিংহের দিকে কিছু দূর চলতে হাতের ডানে পড়বে এর প্রধান প্রবেশপথ।
বনের ভেতরে আছে ৩১টি বনভোজন কেন্দ্র। কেন্দ্রগুলোর নাম আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর, বিনোদন ইত্যাদি। পিকনিক বা পারিবারিকভাবে দলবদ্ধ ভ্রমণের জন্য ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানটি একটি সুন্দরতম স্থান।
কোথায় থাকবেন?
ঢাকা থেকে ভাওয়াল উদ্যানে সারাদিন ঘুরে বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসা যায়। চাইলে অনুমতি ও বুকিং সাপেক্ষে উদ্যানের ভেতর প্রাকৃতিক পরিবেশে দিন অতিবাহিত করা যায়। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ভেতরে আছে ১৯টি বিশ্রামাগার ও কটেজ। এগুলোর নামও বেশ মজার। চম্পা, জেসমিন, অর্কিড, রজনীগন্ধা, শাপলা, মালঞ্চ, গোলাপ, মাধবী, বকুল, জুঁই, চামেলী, বেলি, আনন্দ-১, আনন্দ-২, আনন্দ -৩, শ্রান্তি ও কেয়া। খুবই চমৎকার ডিজাইলের কটেজ ও রেস্ট হাউজগুলো আগে থেকে বুক করে যেতে হয়। রেস্ট হাউজেই খাবারের ব্যবস্থা আছে। সেটার জন্যও আগে থেকে বলে রাখা লাগে। এসব গেস্ট হাউজে রাত্রী যাপনের অনুমতি নেই।
পুরো পিকনিক স্পট বা রেস্ট হাউজ ভাড়া নেওয়ার জন্য বন বিভাগের মহাখালি কার্যালয় থেকে অগ্রিম বুকিং দিতে হয়। এছাড়া ভাওয়াল গড় থেকেই সামান্য দূরে অবস্থিত রাজেন্দ্রপুর জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কার্যালয় থেকেও নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের বুকিং নেওয়া যায়। মোবাইল: 01781-733000, 01713-575055
এছাড়াও এছাড়া রাতে থাকার জন্য ভাওয়াল গড়ের কাছে আছে সারাহ, সোহাগ পল্লী, স্প্রিং ভ্যালী, ছুটি, নক্ষত্রবাড়ি এবং জল ও জঙ্গলের কাব্যের মতো বেশ কিছু বেসরকারি রিসোর্ট। রিসোর্টগুলোতে যেতে চাইলে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা ভাল।
ভ্রমণ টিপস সতর্কতা
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এর ভেতর নিজেদের সাথে যাওয়া ছোট শিশুদের নজরের ভেতর রাখবেন। বিশেষ করে ওয়াচ টাওয়ারে বা জঙ্গলে হাটার সময়। ভ্রমণের সময় কোন আবর্জনা ময়লা জঙ্গলে ফেলবেন না। উদ্যানে মাছ বা পাখি শিকার বা উচ্চ শব্দ করলে জরিমানা সহ শাস্তির মুখে পড়তে পারেন। এছাড়া উদ্যানের সিসিটিভি রেঞ্জের বাইরে যাওয়াটা নিরাপদ নয় একদমই।
ডে ট্যুর এর অন্যান্য স্থান
ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর এর জন্য অনেকগুলো চমৎকার জায়গা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মৈনট ঘাট, মায়াদ্বীপ, সারিঘাট, বেলাই বিল, ছুটি রিসোর্ট, গোলাপ গ্রাম সহ অনেকগুলো স্থান রয়েছে। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে পড়ুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers এ
বিল বা নৌকা ভ্রমণ যাদের পছন্দ, তাদের কাছে গাজীপুরের বেলাই বিল হতে পারে ডে ট্যুর এর জন্য চমৎকার একটি জায়গা। বেলাই বিল ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। চেলাই নদীর সাথে বেলাই বিল। চেলাই নদী সংলগ্ন বাড়িয়া, ব্রাহ্মণগাঁও, বক্তারপুর ও বামচিনি মৌজা গ্রাম ঘেরা একটি মনোমুগ্ধকর বিলের নাম বেলাই বিল। কথিত আছে ভাওয়ালের ভূস্বামী ঘটেশ্বর ঘোষ ৮০ টি খাল কেটে চেলাই নদীর পানি নিঃশেষ করে ফেলেন। তারপরই এটি প্রকাণ্ড বিলে পরিণত হয়। বর্ষায় জেলেরা বিলের চারপাশে মাছ ধরার জন্য ডাঙ্গি খনন করে। নদী ও বিলের অপূর্ব সংমিশ্রণ এই বিলটি গাজীপুরের কানাইয়া বাজার নামক এলাকায় অবস্থিত।
খরস্রোতা চেলাই নদীর কারণে বিলটিও খরস্রোতা রূপে বিরাজমান ছিল। বর্ষা মৌসুমে জেলেরা বিলের চারপাশে মাছ ধরার জন্য ডাঙ্গি খনন করে। আর শুষ্ক মৌসুমে বিলটি হয়ে ওঠে একফসলি জমি। তাতে চাষ হয় বোরো ধান।
কিভাবে যাবেন বেলাই বিল
রাজধানী ঢাকার যেকোন স্থান থেকে বাস বা যেকোন সুবিধাজনক পরিবহণে গাজীপুর বাসস্ট্যান্ড অথবা গাজীপুর শিববাড়ি নেমে সেখান থেকে রিকশা বা সিএনজি দিয়ে কানাইয়া বাজার আসতে হবে। চাইলে টেম্পুতেও কানাইয়া বাজার যেতে পারেন, ভাড়া নেবে ১০ টাকা করে। কানাইয়া বাজার ঘাটে বেলাই বিল ভ্রমণের জন্য নৌকা ভাড়া পাবেন। কানাইয়া বাজারে নেমেই সামনে ব্রিজ আছে, ব্রিজ পার হয়েই নদীতে বাধা নৌকা ঠিক করে উঠে পড়ুন। দরদাম করে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন উন্মুক্ত বিলে। এখানে ইঞ্জিন চালিত আর ডিঙ্গি নৌকা দুটোই পাওয়া যায়। তাড়া থাকলে ইঞ্জিন নৌকা, আর হাতে সময় থাকলে হাতে বাওয়া ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে নিন। মাঝির সাথে কথা বলে নিজেই সেই নৌকা বেয়ে দেখতে পারেন, ভিন্ন একটা অভিজ্ঞতা হবে সন্দেহ নেই। চাইলে নৌকা সারাদিনের জন্য ভাড়া করতে পারবেন।
বেলাই বিল ভ্রমণে কি দেখবেন?
প্রায় ৮ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত এই বিলের অনেক স্থানেই প্রায় সারা বছর পানি থাকে। তবে বেলাই বিলের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে বর্ষা কালের বিকল্প নেই। বিলে সারাবছর পানি না থাকলেও বর্ষায় দ্বিগুণ সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়। সারা বিল জুড়ে চলে শাপলা ফুলের রাজত্ব। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন বিলের মধ্যে অবস্থিত বামচিনি মৌজা নামক দ্বীপ গ্রামটি থেকে। এই গ্রামটির মজার একটি ব্যাপার হলো গ্রামটির একটা মৌজায় কেবলমাত্র একটিই বাড়ি, বাংলাদেশের আর কোথাও এমন নজির নেই।
কোথায় খাবেন?
কানাইয়া বাজারে দুপুরে খাওয়ার মতো ভালো দোকান নেই। তবে চা বা হালকা স্ন্যাকস পাবেন এখানে। দুপুরে খাওয়ার জন্য গাজীপুর শিববাড়ি আসতে হবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য ভ্রমণে গেলে সাথে কিছু খাবার নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।
কোথায় থাকবেন?
কানাইয়া যাবার পথে নীলের পাড়ায় বেশ কিছু রিসোর্ট আছে। উল্লেখযোগ্য হল, আনন্দবাড়ি, সবুজ ছায়া, নির্জন নিবাস। চাইলে আগে থেকে ওখানে বুকিং দিয়ে একবেলা বা একদিনের জন্য সংরক্ষণ করতে পারেন।
সতর্কতা
বর্ষা কালে নৌকায় চড়তে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। এইক্ষেত্রে সাথে লাইফ জ্যাকেট থাকলে সবচেয়ে ভালো। যারা সাতার জানেন না, বয়স্ক বা শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে পুরোটা সময়। ভ্রমণের সময় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোন ময়লা-উচ্ছিষ্ট যেন আমরা ভ্রমণ স্পটগুলোতে ফেলে না আসি।
ডে ট্যুর এর অন্যান্য স্থান
ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর এর জন্য অনেকগুলো চমৎকার জায়গা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মৈনট ঘাট, মায়াদ্বীপ, সারিঘাট, জিন্দা পার্ক, ছুটি রিসোর্ট, গোলাপ গ্রাম সহ অনেকগুলো স্থান রয়েছে। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে পড়ুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers এ। বেলাই বিল সম্পর্কে আপনার কোনো তথ্য শেয়ার করার থাকলে আমাদেরকে জানান।
মারায়ন তং বা মারায়ং তং বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মিরিঞ্জা রেঞ্জের একটি পাহাড়ের নাম। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে এর উচ্চতা ১৬৫০ ফুট। এই পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় আছে একটি বৌদ্ধ উপাসনালয়। যেখানে রয়েছে গৌতম বুদ্ধের একটি আবক্ষ মূর্তি। উপাসনালয়টি পুরো স্থানটিকে একটি বিশেষত্ব দিয়েছে। মারায়ন তং জাদী পাহাড় এর চূড়ার অংশটি পুরোপুরি সমতল। চূড়ায় দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায় ততদূর শুধু পাহাড়ের সারি৷ এ যেন পাহাড়ের সমুদ্র। আর পাহাড়ের নিচে দিয়ে সাপের মতো এঁকেবেকে চলে গেছে মাতামুহুরি নদী।
মারায়ন তং জাদী পাহাড় ও এর আশেপাশে রয়েছে বিভিন্ন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। এরমধ্যে অন্যতম হলো ত্রিপুরা মারমা আর মুরং। পাহাড়ের নিচের দিকে মারমাদের বসবাস। আর মুরং জাতির পাড়াগুলো ছড়িয়ে আছে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে। পাহাড়িরা সাধারণত মাচাংয়ের উপর ঘর বানায়। উপরে পরিবারের সদস্যরা বসবাস করে। আর নিচে মুরগী শূকর ইত্যাদি গবাদিপশু থাকে। বৈচিত্র্যময় এই সংস্কৃতির সৌন্দর্য বান্দরবানকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। এখানকার অধীবাসীরা জীবিকার জন্য পাহাড়ের উপর নির্ভরশীল। এখানে ফলমূল, শস্য, তামাক ইত্যাদির চাষ হয়।
কিভাবে মারায়ন তং যাবেন
দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কক্সবাজারগামী বাসে উঠে চকরিয়া নামতে হবে। ওখান থেকে বাস জিপ বা সিএনজিতে আসতে হবে আলীকদম। লোকাল গাড়িতে গেলে ভাড়া আসবে ৭০ টাকা, আর জিপ রিজার্ভ করলে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এক জিপে ১২/১৩ জন বসতে পারবেন। আলীকদম থেকে অটোরিকশা নিয়ে আবাসিক নামক যায়গায় যেতে হবে। ভাড়া ২০ টাকা।
আবাসিকে গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই মারায়ন তং এর রাস্তা দেখিয়ে দিবে। একটাই রাস্তা। এই রাস্তা ধরে আড়াই তিন ঘন্টা হাঁটলে পৌঁছে যাবেন মারায়ং তং জাদীতে। এটি আলীকদমের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। এই পাহাড়টি মারায়ন ডং ও মেরাইথং নামেও পরিচিত।
কোথায় থাকবেন
মারায়ন তং’এ সবাই সাধারণত ক্যাম্পিং করতেই যায়। তাই ক্যাম্পিংয়ের জিনিসপত্র সাথে নিতে হবে। যেমন পানি গ্লুকোজ, শুকনো খাবার, ফার্স্ট এইড এবং রান্না করতে চাইলে রান্নার প্রয়োজনীয় উপকরণ সাথে নিবেন। তাঁবুর সাথে অবশ্যই চাদর ও স্লিপিং ব্যাগ নিবেন। কারণ গরমের দিনেও পাহাড়ে রাতে ঠান্ডা পড়ে।
ক্যাম্পিং করার সময় প্রথমে স্থানীয় পাড়ার হেডম্যানের সাথে কথা বলুন। উনাকে আপনার ফোন নাম্বার দিন, আপনিও উনার ফোন নাম্বার রাখুন। যাতে প্রয়োজনে কোনোপ্রকার সহযোগিতার জন্য হেডম্যানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
আর যারা ক্যাম্পিং করতে চান না, তারা আলীকদমে বা চকরিয়ায় কিছু থাকার হোটেল আছে, ওখানে থাকতে পারেন। চাইলে চকরিয়া থেকে কক্সবাজারও চলে যেতে পারেন। চকরিয়া থেকে বাসে কক্সবাজার যেতে ২ ঘন্টা সময় লাগে।
পরামর্শ ও সতর্কতা
*এখানে অনেকক্ষণ পাহাড়ি পথে হাঁটতে হয়। তাই শিশু ও বয়স্কদের না যাওয়াই উচিত।
*ট্রেকিংয়ের জন্য ট্রেকিং বুট ব্যবহার করুন। চাইলে প্লাস্টিক বা রাবারের স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন।
*পর্যাপ্ত পরিমান পানি ও শুকনো খাবার বহন করুন।
*পূর্বে ক্যাম্পিংয়ের অভিজ্ঞতা না থাকলে, অভিজ্ঞতা আছে এরকম কাউকে সঙ্গে নিন।
*আশেপাশে শস্য কিংবা ফলজ গাছ থাকতে পারে। অনুমতি ছাড়া হাত দিবেন না। কথা বলে খুব সস্তায় কিনে নিতে পারবেন।
*অনুমতি না নিয়ে আদিবাসীদের ছবি তুলবেন না। এটি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান।
*আদিবাসীদের কালচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্যকোনো জাতির মানুষ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগতো।
*ক্যাম্পিং শেষে পাহাড় থেকে নামার সময় কাঠ কয়লা সহ অন্যান্য বর্জ্য পরিষ্কার করে আসুন।
*কোনো প্রকার অপচনশীল বস্তু পাহাড়ে ফেলবেন না। শুধু পাহাড় নয়, এমনকি শহরেও ফেলবেন না। এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।
বান্দরবানের অন্যান্য স্থানগুলোর ভ্রমণ তথ্য এখানে পড়ুন। ভ্রমণ বিষয়ক আপনার যেকোনো সাহায্যের জন্য গ্রিন বেল্ট এর ইনবক্সে নক করুন।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ। মায়াদ্বীপ সম্পর্কে আপনার আরো কোনো তথ্য কিংবা পরামর্শ দেওয়ার থাকলে আমাদেরকে জানান।
নারায়গঞ্জে মেঘনা নদীর মাঝখানে মায়াদ্বীপ এর অবস্থান। এটি মূলত মেঘনার বুকে জেগে উঠা ত্রিকোন আকৃতির একটি চর। ডে ট্যুরে একবেলা কাটানোর জন্য মায়াদ্বীপ চমৎকার একটি স্থান। সবুজ প্রকৃতি, সবজি ক্ষেত, বিশাল মেঘনা নদী আর নদী পাড়ের জনপদ। এই মধ্যেই কখন একটা বেলা কেটে যাবে আপনি খেয়ালই করবেন না। মায়াদ্বীপ খুব একটা বড় না। তবে সবুজ প্রকৃতি আর এখানকার মনোরম পরিবেশ আপনার ভালো লাগবে। নদীর বাতাস একটানা বইতে থাকে এখানে। সেই নির্মল বাতাসকে কিছুক্ষণের জন্য আপনার মনে হবে মাতাল হাওয়া! ঢাকার কাছে ডে ট্যুর দিতে চাইলে কোনো এক ছুটির দিনে মায়াদ্বীপ থেকে ঘুরে আসা যায়।
কিভাবে যাবেন মায়াদ্বীপ
ঢাকার গুলিস্তান থেকে সারাদিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এর বাস পাওয়া যায়। পাঁচ দশ মিনিট পরপরই বাস ছাড়ে। বাসে উঠে নামতে হবে সোনারগাঁও বা চৈতি গার্মেন্টস এর সামনে। তারপর সেখানে থেকে মোটর রিকশা বা ইজিবাইকে করে যেতে হবে বৈদ্যের বাজার। বৈদ্যের বাজার গিয়ে নৌকা ঘাট পাবেন। সেখান থেকে মায়াদ্বীপ যাওয়ার জন্য নৌকা পাওয়া যায়। মায়াদ্বীপ থেকে ঘুরে আসার জন্য নৌকা রিজার্ভ নিতে হবে। তিন চার ঘন্টার জন্য ভাড়া নিলে ঘন্টায় ভাড়া পড়বে ৪শ থেকে ৫শ টাকা। এক নৌকাতে ৭ থেকে ৮ জন বসতে পারবেন। যেতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটের মতো। মেঘনার বুকে এই নৌভ্রমণ বেশ উপভোগ করতে পারবেন। স্থানীয়রা এই দ্বীপকে নুনেরটেক নামে চিনে। তাই মায়াদ্বীপ নামে কোনো মাঝি চিনতে না পারলে নুনেরটেক বলুন।
মায়াদ্বীপে কোনো ধরণের অবকাঠামো নেই। আপনি কোনো ধরণের ওয়াশরুম পাবেন না সেখানে। নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। খুব জরুরী হলে স্থানীয়দের বাড়িতে গিয়ে ওয়াশরুম ব্যবহার করা যেতে পারে।
মায়াদ্বীপ ফেরার সময় ঘুরে আসতে পারেন। এটা বৈদ্যের বাজার থেকে মেইনরোডে আসার পথেই পড়বে। সকালটা মায়াদ্বীপে কাটিয়ে, দুপুরে বৈদ্যের বাজারে লাঞ্চ করে বিকেলটা পানাম নগরীতে কাটাতে পারেন। এরপর সন্ধ্যার মধ্যে বাসে উঠে বাড়ি ফিরতে পারেন। হাইওয়েতে জ্যামের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
কোথায় খাবেন মায়াদ্বীপ
মায়াদ্বীপে খাওয়ার জন্য কোনো ধরণের খাবারের দোকান নাই। দুপুরে খাওয়ার জন্য আপনাকে বৈদ্যের বাজারে আসতে হবে। বৈদ্যের বাজারে অনেকগুলো খাবারের দোকান আছে। এগুলোর মধ্যে ঘাটের কাছেই সবুজ পাতা রেস্টুরেন্ট অন্যতম। এখানে আপনি ভাত মাছ সবজি ভর্তা ইত্যাদি পাবেন। দুপুরের খাওয়ার জন্য জনপ্রতি খরচ পড়বে ১২০ থেকে ১৮০ টাকা। মায়াদ্বীপ যাওয়ার সময় খাওয়ার পানি ও হালকা স্ন্যাকস কিনে নিয়ে যেতে পারেন বৈদ্যের বাজার থেকে।
কোথায় থাকবেন
ঢাকার কাছাকাছি হওয়াতে আপনি দিনে গিয়ে দিনেই মায়াদ্বীপ থেকে ফিরতে পারবেন। তাই রাতের বেলা সেখানে থাকার প্রয়োজন পড়বে না। তারপরও থাকতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ এসে থাকতে হবে। নারায়ণগঞ্জ থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল রিসোর্ট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
সাঁতার না জানলে কোনোভাবেই নদীতে নামবেন না। প্রয়োজনে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন। বর্ষাকালে মেঘনা নদীতে পানির স্রোত অনেক বেশি থাকে। তাই ভরা বর্ষায় মায়াদ্বীপ না যাওয়াই মঙ্গল। সন্ধ্যার পর ওখানে থাকা যাবে না। মায়াদ্বীপ থেকে ফেরার সময় নৌকা এমনভাবে ছাড়বেন যেন সন্ধ্যার আগে বৈদ্যের বাজার এসে পৌছাতে পারেন। আর নৌকা ভাড়া নেওয়ার সময় ভালোমতো দরদাম করে নিবেন। নৌকার মাঝি ও স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলফেন না। এটা শুধু ভ্রমণে গিয়ে নয়, এমনকি আপনার প্রত্যাহিক জীবনেও।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ। মায়াদ্বীপ সম্পর্কে আপনার আরো কোনো তথ্য কিংবা পরামর্শ দেওয়ার থাকলে আমাদেরকে জানান।
জিন্দা পার্ক এর অবস্থান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আধ ঘন্টার দূরত্বে ১৫০ একর জমির উপর এই সুন্দর পার্ক এর অবস্থান। সবুজ গাছপালা বেষ্টিত এই পার্ক পাখির কলকাকলীতে মুখরিত থাকে সবসময়। এখানে পার্কের ভিতরে রয়েছে ছোট বড় ৫টি লেক। পর্যাপ্ত জলাধার থাকায় গরম কালেও পার্কের পরিবেশ শীতল থাকে তুলনামূলক। পরিবার নিয়ে ঢকার কাছে ভ্রমণ এর জন্য জিন্দা পার্ক এখন বেশ সুপরিচিত জায়গা। লেকের মাঝে দ্বীপের মতো জায়গায় গড়ে উঠা বাঁশের টি রুমে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে এক কাপ চা কিংবা জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে বেশ ভালো লাগবে। দারুণ উপভোগ করবেন কাটানো সময়গুলো। সাথে নিজস্ব গাড়ি না থাকলেও সমস্যা নেই। দিনশেষে বাড়ি ফেরার জন্য পার্কের সামনেই পাবেন রিকশা অথবা সিএনজি। মেইনরোডে এসেই কুড়িল বিশ্বরোড আসার বাস পেয়ে যাবেন। আর হ্যাঁ, বেশি সংখ্যক সদস্য নিয়ে পিকনিক করতে চাইলে কয়েকদিন আগেই যোগাযোগ করুন। পিকনিকের খাবারের আয়োজন পার্ক কর্তৃপক্ষই করবে।
কিভাবে যাবেন জিন্দা পার্ক
জিন্দা পার্ক যাওয়ার অনেকগুলো পথ আছে। ঢাকা থেকে সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হলো ঢাকার ৩০০ফিট দিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ কুড়িল বিশ্বরোড হাইওয়ে দিয়ে। কুড়িল হয়ে যেতে হবে কাঞ্চন ব্রিজ। তারপর এরপর কাঞ্চন ব্রিজ থেকে অটোরিকশা নিয়ে জিন্দা পার্ক পর্যন্ত যেতে পারবেন।
আর ঢাকা টঙ্গী হতে যেতে চাইলে মীরের বাজার হয়ে বাইপাস রাস্তা দিয়েও যেতে পারবেন। এছাড়া কাঁচপুর ব্রিজ দিয়েও জিন্দা পার্ক যাওয়া যায়। কাঁচপুর থেকে ভুলতা গাওছিয়া দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ হয়ে জিন্দা পার্কে যেতে পারবেন।
কি দেখবেন
জিন্দা পার্ক গড়ে উঠেছে প্রায় ১০০ একর জায়গার উপর। এখানে রয়েছে একটি কমিউনিটি স্কুল। আছে কমিউনিটি ক্লিনিক। জিন্দা পার্কে নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী বিশিষ্ট একটি লাইব্রেরি আছে। পার্কের ভিতরে মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান আছে। নির্মল সবুজে ঘেরা বিশাল এই পার্কে ২৫০ প্রজাতির ১০ হাজারেরও বেশি গাছ আছে। তাই স্থানটি পাখির কলতানে মুখরিত থাকে সবসময়। পার্কের ভিতরে লেক সদৃশ ছোট বড় ৫টি জলাধার রয়েছে।
সবুজ গাছপালায় ঘেরা বনের ভিতরে কিছুদূর গেলেই একটা লেক। সেখানে অনেক মানুষ কেউ ব্যাডমিন্টন খেলছে, কেউ চাদর বিছিয়ে গল্প করছে। লেকের মাঝখানে চোখে পড়বে কৃত্রিম দ্বীপ। দ্বীপে যাওয়ার রাস্তা বানানো হয়েছে ভাসমান প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে। যদিও একসাথে বেশি মানুষ ব্রিজে উঠলে ব্রিজ দোলে।
দারুন এই দ্বীপে পানিতে পা ডুবিয়ে ঘাসের উপর বসে থাকতে পারবেন। এরকম মোট পাঁচটি ছোট বড় লেক আছে জিন্দা পার্কে। লেকের ঘাটে বাধা আছে ছোত নৌকা। মন চাইলে নোউকায় চড়ে লেকে ভেসে বেড়াতে পারবেন কিছুক্ষণ। পাশাপাশি উপভোগ করতে পারবেন প্রকৃতিকে। লেকের পাড়েই আছে গাছের ওপর কয়েকটা টংঘর। চাইলে টংঘরে উঠে ছবি তোলা যাবে।
জিন্দা পার্কে প্রবেশ টিকেট এর মূল্য প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিজনের জন্য জনপ্রতি ১০০ টাকা। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৫০টাকা। পার্কে খাবার নিয়ে প্রবেশ করা যাবে। সেক্ষেত্রে টিকিটের মুল্য হবে ১২৫টাকা। জিন্দা পার্কের লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতে চাইলে আলাদা ফি দিতে হবে ১০ টাকা করে। নৌকায় ঘুরে বেড়াতে খরচ পড়বে প্রতি ৩০ মিনিট ২০০ টাকা। গাড়ি নিয়ে গেলে পার্কিং ফি দিতে হবে। গাড়ি ভেদে খরচ পড়বে ৫০থেকে ১০০ টাকা।
পার্কের পেছনের গল্প
জিন্দা মূলত একটি গ্রামের নাম। গ্রামের “অগ্রপথিক পল্লী সমিতি”-র তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে পার্কটি। প্রায় চল্লিশ বছর আগে, ১৯৭৯ সালে রূপগঞ্জ পূর্বাচল উপশহরে জিন্দা ঐকতান পার্ক গড়ে তুলেন সমিতির সদস্যরা। এত স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং ভীষণ আলাদা রকমের পার্কটি কোনো সরকারি উদ্যাগে তৈরি নয়। আবার কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেও নির্মাণ করা হয়নি জিন্দা পার্ক। পার্কটি তৈরি হয়েছে এলাকাবাসীর প্রাণবন্ত অংশগ্রহনের মাধ্যমে। গ্রামের নামেই পার্কের নামকরণ। এই গ্রামটিকে একটি আদর্শ গ্রাম বলা চলে।
কোথায় খাবেন
জিন্দা পার্কের ভিতরেই রয়েছে খাবার রেস্টুরেন্ট। যেখানে মিলবে ভাত, ভাজি, ডাল, মাংস ইত্যাদি। একবেলা খাবার খরচ পড়োবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন হালকা খাবার এবং সফট ড্রিঙ্কস পাবেন পার্কের ভিতরে।
কোথায় থাকবেন
যদি রাতে থাকতে চান তাহলে তার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। থাকার জন্য রয়েছে মহুয়া গেস্ট হাউজ। এছাড়া ঘোরাঘুরির জন্য জিন্দা পার্ক খোলা থাকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
ভ্রমণ সতর্কতা ও টিপস
পার্কের ভেতরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে দর্শনার্থীদেরকে অনুরোধ করা হয়। এটা এমনিতেও একজন ভ্রমণকারীর দায়িত্ব। প্রকৃতিতে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। পার্কের ভিতরে উচ্চস্বরে লাউডস্পিকারে গান বাজানো যাবেনা।
ডে ট্যুর এর অন্যান্য স্থান
ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর এর জন্য অনেকগুলো চমৎকার জায়গা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মৈনট ঘাট, মায়াদ্বীপ, সারিঘাট, বেলাই বিল, ছুটি রিসোর্ট, গোলাপ গ্রাম সহ অনেকগুলো স্থান রয়েছে। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে পড়ুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers এ
একদিনের ছুটি কাটানোর জন্য চাঁদপুর চমৎকার একটি জায়গা। অল্প সময়ে এবং অল্প জার্নিতে সুন্দর একটি ট্রিপ হতে পারে চাঁদপুরে। লঞ্চ ভ্রমণ, নদী, খোলা বাতাস, মিনি কক্সবাজার, চাঁদপুরের ইলিশ ও বিখ্যাত আইসক্রিম এবং মিষ্টি। সেখানে পদ্মা নদীর পাড়ে আড্ডা দেয়া,এবং নদীর মোহনা (পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া) উপভোগ করা যায়। সম্ভব হলে নদীতে ঝাপাঝাপি করেও আসতে পারেন। সব মিলিয়ে খুব ভালো একটা রিফ্রেশমেন্ট। এমনিতেই লঞ্চ জার্নিতে ক্লান্তি আসেনা। তাই ডে ট্যুর এর জন্য চাঁদপুরকে বেছে নিতে পারেন।
কিভাবে যাবেন চাঁদপুর
ঢাকা থেকে চাঁদপুর বাসে,ট্রেনে কিংবা লঞ্চে যাওয়া যায়। কিন্তু ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গেলে লঞ্চে যাওয়াই ভালো। ঢাকা-চাঁদপুর রুটে চলাচলকারী লঞ্চের মধ্যে এমভি সোনারতরী, এমভি তাকওয়া, এমভি বোগদাদীয়া, এমভি মেঘনা রাণী, এমভি আল বোরাক, এমভি ঈগল, এমভি রফরফ, এমভি তুতুল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সদরঘাট থেকে সকাল ৬/৬:৩০ থেকে এক/আধ ঘন্টা পরপরই লঞ্চ ছাড়ে৷ আসন ভেদে লঞ্চ ভাড়া ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। আর কেবিন নিলে ভাড়া পড়বে ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা।
সদরঘাট থেকে লঞ্চ উঠে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে পৌঁছাতে সময় লাগে ৩ ঘন্টা। চাঁদপুর নেমেই লঞ্চঘাট থেকে ফেরার সিডিউল টা জেনে নিবেন।
চাঁদপুর লঞ্চঘাটে নেমে বড় স্টেশনে রিকশা অথবা অটোতে করে চলে যেতে পারেন তিন নদীর মোহনায়। ভাড়া পড়বে রিকশায় ৩০-৩৫ টাকা, অটো তে একজনের ১০ টাকা। চলে যাবেন বড় স্টেশন পার্কে। সেখানে একটা ইলিশের ভাস্কর্য আছে। ওটার সামনে পিছে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে চলে যাবেন পার্কের শেষ মাথায়। সেখান থেকে তিন নদীর মোহনা দেখা যায়। আর এই মাথায় আসতে আসতে দেখবেন অদ্ভুত আকৃতির রক্তের ফোঁটার একটা ভাস্কর্য আছে।
কি দেখবেন চাঁদপুর
প্রত্যকটা নদীর রয়েছে আলাদা আলাদা রূপ। চাঁদপুর গেলে সেটা আরো ভালোভাবে বোঝা যায়। নদীর পাড়ে একটি ছোট পার্ক রয়েছে। পার্কের মধ্যেই রয়েছে “রক্ত ধারা” নামের মনোমুগ্ধকর একটি ভাস্কর্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ভাস্কর্যটি নির্মিত। শীতকালে মেঘনার মাঝখানে অনেক চর জাগে। নদীর পাড় থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে সেইসব চরে ঘুরে আসতে পারবেন কিছুক্ষণের জন্য। যাওয়া আসা আর আধা ঘণ্টা থাকার জন্য বোট ভাড়া করতে ৫০০ টাকা দিতে হয়।
কোথায় খাবেন
চাঁদপুর মানেই ইলিশের শহর। লঞ্চঘাটেই খাবার হোটেল আছে কয়েকটা। সবগুলোতে দাম প্রায় একই। ইলিশ প্রতি পিস ১২০টাকা। আপনি চাইলে ইলিশ চত্বর থেকে ইলিশ মাছ কিনে যেকোনো দোকানে ১০০ টাকায় ভেজে নিয়ে সাথে আলুর ভর্তা আর ডাল দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আসতে পারবেন।
খাওয়াদাওয়া শেষ করে চলে যাবেন কালীবাড়ি। ঘাটের থেকেই অটোরিক্সা পাবেন জনপ্রতি ৫ টাকা নিবে। কালীবাড়ি নেমে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই স্থানীয়রা দেখিয়ে দিবে “ওয়ান মিনিট” মিষ্টির দোকান। মিষ্টির দোকানেই পাওয়া যায় স্পেশাল আইস্ক্রিম। দাম নিবে ৪০ টাকা। চেখে দেখতে পারেন ওয়ান মিনিট এর মিষ্টি গুলো। মিষ্টির দাম নিবে প্রতি পিস ১০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
ইলিশ খাওয়া কিংবা এক দিনের ভ্রমণে ঢাকা হতে চাঁদপুর দিনে গিয়ে রাতের মধ্যে ফিরে আসা যায়। আর এই ডে লং ট্যুরই চাঁদপুর ভ্রমণে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তবুও পর্যটকদের রাত্রি যাপনের কথা বিবেচনা করে এখানে হোটেল তাজমহল, হোটেল শ্যামলী, হোটেল জোনাকী ছাড়াও বেশকিছু আবাসিক হোটেল আছে।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
চাঁদপুর ভ্রমণ যেহেতু লঞ্চ এর উপর নির্ভর করে, তাই লঞ্চের টাইম টেবিল ঠিকভাবে খেয়াল রাখুন। নৌকায় চড়ার জন্য লাইফ জ্যাকেট সাথে নিন। নদীতে কিংবা কোথাও ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। চাঁদপুর ইলিশের শহর, তাই এখানে এসে ইলিশ চেখে দেখতে ভুলবেন না।
চৌদ্দর চর মেঘনা নদীর মাঝখানে জেগে উঠা সাড়ে তিন কিলোমিটার লম্বা একটি চরের নাম। এটি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার (Araihazar) উপজেলায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে মাত্র দেড় থেকে/দুই ঘণ্টার পথ। নদীর চারপাশ জুড়ে আছে বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেত, ক্ষীরাই আর বাঙ্গী ক্ষেত। তার মধ্যেই বিশাল বালুকাবেলা। এটি আপনাকে কুয়াকাটার কথা মনে করিয়ে দিবে। নদীর স্বচ্চ টলটোলে পানিতে কিছুক্ষণের জন্য গা ভিজিয়ে নিতে পারবেন চাইলে। এখানকার পানি টলটলে নীলাভ। যারা একটাদিন ঢাকার আশেপাশে ঘুরে আসতে চান, তাদের জন্য চৌদ্দারচর চমৎকার একটি জায়গা।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে আড়াইহাজার গামী অভিলাস পরিবহণ এর বাস পাবেন। ভাড়া ৬৫ টাকা। এটা মদনপুর দিয়ে যায়। আর গুলিস্তান থেকে যেতে চাইলে দোয়েল/স্বদেশ পরিবহনে মদনপুর নেমে ওখান থেকে ওখান থেকে আড়াইহাজার এর সি এন জি নিতে পারবেন। লোকাল জনপ্রতি ভাড়া ৫০ টাকা।
আর ঢাকার কলাবাগান থেকে পাবেন মেঘলা পরিবহনের বাস। এগুলোতে গেলে নামতে হবে ভুলতা/গাউসিয়া। ভাড়া ৬৫ টাকা। গাউসিয়া নেমে কিছুটা সামনে যেয়ে লোকাল সি এন জি তে আড়াইহাজার বাজার । এতে ভাড়া ৩০ টাকা।
আড়াইহাজার নেমে থানার মোড় থেকে সিএনজিতে যেতে হবে খাগকান্দা ঘাট। ভাড়া নিবে ৪০ টাকা। খাগকান্দা ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে চৌদ্দার চর ভ্রমণ করতে পারবেন। রিজার্ভ নৌকায় ভাড়া পড়বে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।
কখন যাবেন চৌদ্দার চর
আড়াই হাজারে একেক মৌসুমে একেক রকম দৃশ্য দেখা যায়৷ বর্ষায় মেঘনা নদীতে পানি বেশি থাকে বলে অনেকে তখন ভ্রমণ করতে চান না। বলা যায় অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত চৌদ্দার চর ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। তখন নদী শান্ত থাকে। আড়াইহাজার এর চৌদ্দার চর এর বালি অনেক শক্ত। চোরাবালির কোন ভয় নেই। শীতে চরে অনেক রকমের শস্য ক্ষেত দেখা যায়। তখন হরেক রকমের পাখি আসে এখানে।
আড়াইহাজার উপজেলায় চৌদ্দার চর ছাড়াও আরো অনেকগুলো চর আছে। আপনি চাইলে নৌকা নিয়ে এসব চরে যেতে পারবেন। চৌদ্দারচর এর আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ১২৫ বছরের পুরানো স্কুল। ১০৫ বছরের পুরানো জমিদার বাড়ি। শদাসদি ভুইয়া বাড়ি (জমিদার বাড়ি), আড়াইহাজার চৌধুরী পাড়া রাজ বাড়ি। কয়েকশ বছরের পুরানো বটগাছ ইত্যাদি। এছাড়া যাবার পথে রাস্তার পাশেই লতব্দি মোড়ে কাতান শাড়ীর শিল্প, গামছা শিল্পের তাঁতঘর চোখে পড়বে। কম দামে ভাল কাতান শাড়ি কিনতে পারবেন এখান থেকে।
কোথায় খাবেন
চৌদ্দারচর এ কোনো খাবারের দোকান নেই। খাওয়ার জন্য আপনাকে নিকটস্থ আড়াইহাজার বাজারে আসতে হবে। আড়াইহাজারে খাবারের বেশ কিছু দোকান আছে। এখানে আপনি দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারবেন। এছাড়া দস্তরদি মোড়ে চাচার মালাই চা, আড়াইহাজার বাজারে জিয়ার ডাল পুরি, পাশেই আরেকটা দোকানে আলু পুরি, নোয়াপাড়া ব্র্যাক এর পাশে ডাল পুরি, গোপালদি বাজার এ নাজিমুদ্দিন হোটেল এর গরুর মাংসের টেস্ট নিতে পারেন ভ্রমণে গেলে।
কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য আড়াইহাজার বা চৌদ্দারচর এ কোনো ব্যবস্থা নাই। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা ভালো। তবে কেউ একান্তই থাকতে চাইলে আড়াইহাজার এর জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে থাকতে পারবেন। মোবাইল নম্বর ০১৯১৭-০০৮-৪৯৬।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
আড়াইহাজার বা চৌদ্দার চর কোনো পর্যটন এলাকা না। এটি সম্পূর্ণ নদী কেন্দ্রীক একটি জনপদ। যারা সাদামাটা প্রকৃতি পছন্দ করেন, তাদের ভালো লাগবে। সাঁতার না জানলে নদীতে নামবেন না। প্রয়োজনে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন। বর্ষায় মেঘনা নদীতে পানির স্রোত অনেক বেশি ও নদী উত্তাল থাকে। পরিবার নিয়ে যেতে চাইলে বর্ষায় না যাওয়াই ভালো। ভ্রমণের সময় স্থানীয় মানুষজন ও নৌকার মাঝির সাথে ভালো ব্যবহার করুন। যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলবেন না। এটা শুধু ঘুরতে গিয়ে না, এমনকি শহরেও।
চন্দ্রনাথ পাহাড় চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায়। একপাশে সাগর আর অন্যপাশে পাহাড়; এই দুই মিলে সীতাকুন্ডের প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্রকে করেছে অনন্য। সীতাকুন্ড বাজার থকে এর দুরত্ব ৪ কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ১১৫২ ফুট। পাহাড় চূড়া থেকে সমুদ্র দর্শনের চমৎকার অভিজ্ঞতা পাবেন এই ভ্রমণে। চন্দ্রনাথের চূড়ায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের একটি মন্দির আছে। যেটি চন্দ্রনাথ মন্দির নামে পরিচিত। চট্টগ্রাম সহ এই অঞ্চলটি দীর্ঘকাল আরাকানের দখলে ছিলো। পরবর্তীতে দখল এর নেয় পর্তুগীজরা। ষোড়শ শতকে মোঘলরা পর্তুগীজ ও আরাকানীদের হটিয়ে এই অঞ্চল দখলমুক্ত করেন।
কিভাবে যাবেন চন্দ্রনাথ পাহাড়
চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান আছে। এই অঞ্চলকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার বলা যায়। চন্দ্রনাথ পাহাড় যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি সীতাকুন্ড আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। এসব টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন সহ সব বড় কোম্পানির বাস আছে এই রুটে। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত যেতে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
ট্রেনে সীতাকুন্ড
ঢাকা থেকে সীতাকুন্ডের সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই সীতাকুন্ড বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে সীতাকুন্ডের বাস ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।
যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে সীতাকুন্ড বাজারে আসা যাবে।
সীতাকুন্ড থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়
সীতাকুন্ড থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড় এর গেট ৪ কিলোমিটার। রিকশা বা সিএনজিতে করে গেট পর্যন্ত যেতে পারবেন। পাহাড়ে উঠার আগে ছোট্ট একটি ঝর্ণা (ক্যাসকেড) পাবেন। এখান থেকে রাস্তা রাস্তা দুই ভাগ হয়ে গেছে। বাম পাশের রাস্তা পাহাড়ি, আর ডান পাশের রাস্তায় সিড়ি করা আছে। উপরে উঠার সময় পাহাড়ি পথ দিয়ে উঠাই সুবিধাজনক। সময়ও কম লাগে। আর নামার সময় সিঁড়ি পথ দিয়ে নামুন, এতে সুবিধা হবে। পাহাড়ের গোড়া থেকে চূড়া পর্যন্ত উঠতে সর্বোচ্চ দেড় ঘন্টা সময় লাগবে রিলাক্সে উঠতে। এটি মূলত আপনার হাঁটার গতির উপর নির্ভর করে। উপরে উঠা কিছুটা পরিশ্রমসাধ্য কাজ হলেও, চূড়ায় উঠার পর চারপাশের সৌন্দর্য দেখে আপনি সব কষ্ট ভুলে যাবেন। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হবেন। পাহাড়ের শুরুতে মাঝখানে ও চূড়ায় টং দোকান আছে। হালকা খাবার খেতে পারবেন এখান থেকে।
কোথায় থাকবেন
সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।
কোথায় খাবেন
সীতাকুন্ড বাজারে বেশ কিছু খাবারের দোকান আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া, আল আমিন ও আপন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এখানে আপনি ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ডাল, সবজি ইত্যাদি মেন্যু হিসেবে পাবেন। খাবার খরচ পড়বে প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো। রাতের বাসে গেলে সকালের ব্রেকফাস্টও এখানে সেরে নিতে পারেন।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
চন্দ্রনাথ পাহাড় এর তিন পাশে ঘন জঙ্গল। কোনো লোকালয় নেই। রাতের বাসে চন্দ্রনাথ পাহাড় ভ্রমণে গেলে ভোর পাঁচটার মধ্যেই সীতাকুন্ড বাজারে পৌঁছে যাবেন। ভোরের আলো ফোটার পরপরই চন্দ্রনাথ রওনা করবেন না। এর আগে আকাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ভোরে পাহাড়ে চলে যাওয়ার কারণে। তাই অন্তত সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর রওনা করুন। এর আগে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে নিন স্থানীয় কোনো রেস্টুরেন্টে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ছোটলোকি। ভুলেও এই কাজ করবেন না, গোপনেও না। জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।
কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে অনেকগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান রয়েছে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। চন্দ্রনাথ পাহাড় এর একদম কাছাকাছি আছে সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। ইকোপার্ক এর ভিতরে আছে সুপ্তধারা ও সহস্রধারা নামে আলাদা দুইটা জলপ্রপাত। আছে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। গুলিয়ালীর কাছাকাছি বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। আর হাইওয়ে ধরে ঢাকার দিকে দশ কিলোমিটার এগুলে পাবেন কমলদহ ঝর্ণা। যদি বিশ কিলোমিটার যান তাহলে খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার ট্রেইল পাড়বে। মিরসরাইতে আরো আছে এই রুটের সবচেয়ে এডভেঞ্চারাস সোনাইছড়ি ট্রেইল।
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা (Napittachora Waterfalls) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত। এডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে এই ঝর্ণাটি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নাপিত্তাছড়া ট্রেইলে একাধিক ঝর্ণা ও কুম আছে কাছাকাছি। এগুলো হলো বান্দরকুম, কুপিকাটাকুম, বাঘবিয়ানি ঝর্ণা, টিপরাকুম। চারপাশে পাহাড়, ঘন জঙ্গল, ঝিরিপথ আর মনোমুগ্ধকর ট্রেইল এই ঝর্ণাকে অনন্যতা দিয়েছে। ৪/৫ ঘন্টা সময় নিয়ে গেলে পুরো ট্রেইল সুন্দরভাবে শেষ করে আসা সম্ভব। খৈয়াছড়া আর নাপিত্তাছড়া জলপ্রপাত এই রেঞ্জের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেইল।
কিভাবে যাবেন নাপিত্তাছড়া
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার নয়দুয়ারী (ন’দুয়ারী) বাজারে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি নয়দুয়ারী আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে মিরসরাই এর নয়দুয়ারী বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে নয়দুয়ারী পর্যন্ত যেতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
ট্রেনে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা
ঢাকা থেকে নয়দুয়ারী বাজারের সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই নয়দুয়ারী বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে নয়দুয়ারীর বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।
যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে নয়দুয়ারী বাজারে আসা যাবে।
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
নয়দুয়ারী বাজারে নেমে হাইওয়ের পূর্ব পাশে একটা রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তা ধরে ২০/২৫ মিনিট হাঁটলে রেললাইন। রেল লাইন পার হয়ে আবার সোজা ২০/২৫ মিনিট গেলে নাপিত্তাছড়া নামের একটা ত্রিপুরা পাড়া পাবেন। এখান থেকে ট্রেইল ও ঝিরিপথের শুরু। প্রথম ক্যাসকেড হিসেবে স্বাগত জানাবে টিপরা কুম। এরপর কুপিকাটা কুম। কুপিকাটা কুমের ডান পাশদিয়ে পাহাড়ের উপর উঠে কিছুদূর হেঁটে গেলে আবার ঝিরিপথ পাবেন। এই ঝিরিপথের শেষে বাগবিয়ানি ঝর্ণা, তার আগে পাবেন ট্রেইলের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণা বান্দরকুম।
যারা ট্রেকিংয়ে অভিজ্ঞ তারা সহজেই পথ চিনতে পারবেন। অভিজ্ঞতা না থাকলে নয়দুয়ারী বাজার বা রেললাইনের আশেপাশে কোনো বাড়ি থেকে কাউকে গাইড হিসেবে নিতে পারেন। গাইডকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হতে পারে। গাইড নিয়ে গেলে সবগুলো খুম, ক্যাসকেড ও ঝর্ণা সুন্দর ভাবে ঘুরে আসা যাবে কম সময়ে।
কোথায় থাকবেন নাপিত্তাছড়া
থাকার জন্য নয়দুয়ারী বাজারে কোনো হোটেল নাই। নিকটস্থ থাকার হোটেলের জন্য আপনাকে যেতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। বড়তাকিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটারের মতো।
কোথায় খাবেন
নয়দুয়ারী বাজার থেকে কিছুদূর গেলে একটা খাবারের দোকান আছে। যাওয়ার সময় খাবার অর্ডার করে গেলে ফেরার পথে খেতে পারবেন। সেখানে খাবার না পেলে মিরসরাই বাজারে এসে খেতে হবে। তাই সাথে কিছু শুকনো খাবার ও পানি বহন করুন।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। শুকনো মৌসুমে এখানে পানি থাকেনা। তাই বর্ষাতেই ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। ঝর্ণার ট্রেইল যত সহজ মনে হোক না কেন, ঝর্ণা মানেই এদিক ওদিক বিপদ ওৎ পেতে থাকে। এজন্য প্রতি পদে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ট্রেইলে প্রতিটা স্টেপে নিজের কমনসেন্স ব্যাবহার করুন। গ্রুপ করে ঘুরতে যাওয়াই ভালো। ক্যাম্পিং করতে চাইলে ক্যাম্পিং এর বেসিক জেনে যাবেন। রাতে আগুন জ্বালালে সকালে সেগুলোর ছাই পরিষ্কার করে আসতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ছোটলোকি। ভুলেও এই কাজ করবেন না, গোপনেও না। জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।
কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডকে বলা যায় ঝর্ণা উপত্যকা। নাপিত্তাছড়া ট্রেইলে গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। নাপিত্তাছড়ার একদম কাছাকাছি আছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর কমলদহ ঝর্ণা। এছাড়া বিশ কিলোমিটার দূরের চন্দ্রনাথ পাহাড় কিংবা গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতেও যেতে পারেন। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের কাছেই সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। ইকোপার্ক এর ভিতরে আছে সুপ্তধারা ও সহস্রধারা নামে দুইটা মায়াবী জলপ্রপাত।
চট্টগ্রামের মিরসরাই সীতাকুন্ড রেঞ্জকে বলা যায় ঝর্ণা উপত্যাকা। মীরসরাই ও সীতাকুন্ডে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য ঝর্ণা, ঝিরি, ট্রেইল ও ক্যাসকেড। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ঝর্ণা হলো কমলদহ ঝর্ণা। এটি মোটামোটি সহজ ট্রেইল। তাই অল্প সময়ে এই ঝর্ণা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে। কমলদহ ট্রেইলে অনেকগুলো ঝর্ণা আছে। প্রথম ঝর্ণার উপরে উঠে কিছুদূর গেলে ট্রেইল ভাগ হয়ে গেছে ডানে বাঁয়ে। যেদিকেই যান ছোটছোট আরো কিছু ঝর্ণা আর ক্যাসকেডের দেখা মিলবে।
কিভাবে যাবেন
কমলদহ ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার বড় দারোগাহাট বাজারে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি বড়দারোগারহাট আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে সীতাকুন্ডের দারোগাহাট বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে দারোগাহাট পর্যন্ত যেতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
ট্রেনে কমলদহ ঝর্ণা
ঢাকা থেকে বড়দারোগাট এর সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই বড়দারোগাহাট যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে বড়দারোগারহাট এর বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।
কমলদহ ঝর্ণা ট্রেইল
বড়দারোগাহাট থেকে মহাসড়ক ধরে ঢাকার দিকে কিছুদূর হাঁটলে রাস্তার ডান পাশে একটি ইটভাটার দেখা মিলবে। ইট ভাটার পাশ দিয়েই একটি মাটির রাস্তা নেমে গেছে। সেই রাস্তা ধরে সোজা বিশ মিনিট হেঁটে গেলে ঝিরিপথ পাবেন। এই ঝিরি থেকেই মূলত কমলদহ ট্রেইলের শুরু। ঝিরিপথ ধরেই বাকিপথটুকু হাঁটতে হবে। মোটামুটি একঘন্টার হাঁটাপথ।
কমলদহ ঝর্ণার তিনটি ধাপ। নিচ থেকে শুধু প্রথম ধাপই দেখা যায়। বাকি ধাপগুলো দেখতে ঝর্ণার উপরে উঠা লাগবে। ঝর্ণার উপরে উঠে কিছুদূর গেলে দেখবেন ঝিরিপথ ডানে বামে দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। বামের ঝিরিপথ দিয়ে কিছুদূর গেলে আবারো ঝিরিপথ ডানে বামে ভাগ হয়ে যাবে। এবার বামের দিকে কিছুদূর গেলে ছাগলকান্দা ঝর্ণা পাবেন। আর ডানের দিকে গেলে শেষমাথায় নামহীন সুন্দর দুইটি ঝর্ণা চোখে পড়বে।
কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য বড়দারোগাহাট বাজারে কোনো আবাসিক হোটেল নাই। তবে সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। বড়দারোগাহাট থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটারের মতো।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
কমলদহ ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। শুকনো মৌসুমে এখানে পানি খুব কম থাকে। তাই বর্ষাতেই ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। বড়দারোগাহাট এর পর কোথাও খাবার দোকান পাবেন না। নিজের সাথে খাবার বহন করুন। ঝর্ণার ট্রেইল যত সহজ মনে হোক না কেন, ঝর্ণা মানেই এদিক ওদিক বিপদ ওৎ পেতে থাকে। এজন্য প্রতি পদে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ট্রেইলে প্রতিটা স্টেপে নিজের কমনসেন্স ব্যাবহার করুন।
গ্রুপ করে ঘুরতে যাওয়াই ভালো। ঝিরিপথ যেখান থেকে শুরু সেখানে কয়েকটি বাড়িঘর আছে। প্রয়োজন বোধ করলে সেখান থেকে কোনো ছেলেকে গাইড হিসেবে নিতে পারেন। ক্যাম্পিং করতে চাইলে ক্যাম্পিং এর বেসিক জেনে যাবেন। রাতে আগুন জ্বালালে সকালে সেগুলোর ছাই পরিষ্কার করে আসতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ছোটলোকি। ভুলেও এই কাজ করবেন না, গোপনেও না। জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।
কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডকে বলা যায় ঝর্ণা উপত্যকা। কমলদহ ট্রেইলে গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। কমলদহ ঝর্ণা এর ঢাকার দিকে দশ কিলোমিটার আগে আছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা। আর চট্টগ্রামের দিকে দশ কিলোমিটার গেলে পড়োবে চন্দ্রনাথ পাহাড় কিংবা গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। চন্দ্রনাথ এর কাছেই সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। আর ইকোপার্ক এর ভিতরে আছে সুপ্তধারা ও সহস্রধারা নামে দুইটি মায়াবী ঝর্ণা।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা (Khoiyachora Waterfalls) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত। বড়তাকিয়া বাজার থেকে এর দূরত্ব ৪.২ কিলোমিটার। গঠনগত দিক দিয়ে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণা গুলোর একটি। চারপাশে পাহাড়, ঘন জঙ্গল, ঝিরিপথ আর মনোমুগ্ধকর ট্রেইল এই ঝর্ণাকে অনন্যতা দিয়েছে। আপনি যখন ট্রেকিং করে ক্লান্ত অবস্থায় ঝর্ণার সামনে এসে দাঁড়াবেন তখন এক নিমিষে আপনার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। এডভেঞ্চারপ্রেমীদের অনেকে খৈয়াছড়াকে ঝর্ণার রাণী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। খৈয়াছড়া ঝর্ণায় মোট নয়টি ধাপ রয়েছে। প্রত্যেকটা ধাপেরই আছে আলাদা সৌন্দর্য! কোনোদিন জোছনা রাতে যদি এখানে ক্যাম্পিং করতে পারেন, তাহলে সেই সময়গুলো আপনার আজীবন মনে থাকবে। চাঁদের আলো, ঝিঝির ডাক, জোনাক পোকা আর ঝর্ণার জলের অবিরাম শব্দ আপনাকে বিমোহিত করে রাখবে পুরোটা সময়। নাপিত্তাছড়া ও খৈয়াছড়া এই রেঞ্জের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঝর্ণা।
কিভাবে যাবেন
খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া বাজারে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি বড়তাকিয়া আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে মিরসরাই এর বড়তাকিয়া বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে বড়তাকিয়া পর্যন্ত যেতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
ট্রেনে খৈয়াছড়া ঝর্ণা
ঢাকা থেকে বড়তাকিয়ার সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই বড়তাকিয়া বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে বড়তাকিয়ার বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।
যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে বড়তাকিয়া বাজারে আসা যাবে।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা ট্রেইল
বড়তাকিয়া বাজারে নেমে সিএনজিতে করে খৈয়াছড়া ঝর্ণার ঝিরিপথ পর্যন্ত আসা যাবে। সিএনজি ভাড়া নিবে ১০০ টাকা। চাইলে এই পথটুকু হেঁটেও আসতে পারবেন। স্থানীয় যে কাউকে বললে পথ দেখিয়ে দিবে। বাজার থেকে ঝিরিপথের দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার। যেখান থেকে ঝিরিপথ শুরু, সেখান থেকে ট্রেকিংও শুরু।
শুরুতে বাড়িঘর, ধানক্ষেত, তারপর পাহাড় জঙ্গলের মঝখান দিয়ে ট্রেইল। প্রায় ৪৫ মিনিট হাঁটার পর আপনি ঝর্ণার প্রথম ধাপে পৌঁছে যাবেন। এখানে পথ হারানোর ভয় নেই। ছুটির দিনগুলোতে সাধারণত অনেক পর্যটকের দেখা পাবেন একই পথে। ঝিরিপথের শুরুতে অনেক বাড়িঘর আছে। চাইলে সেখান থেকে কাউকে গাইড হিসেবে নিতে পারে। গাইড ফি দিতে হবে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।
ঝর্ণার প্রথম ধাপে পৌঁছানোর পর বাকি ধাপগুলোতে উঠার রাস্তা পেয়ে যাবেন একটু খেয়াল করলে। তবে সাবধানে ট্রেকিং করতে হবে। সামান্য সাবধান হয়ে ট্রেকিং করা কোনো পর্যটকের এখন পর্যন্ত কোনো দূর্ঘটনা ঘটেনি খৈয়াছড়াতে। কিন্তু অতিরিক্ত এডভেঞ্চার করতে যাওয়া, হৈ হল্লা লম্ফঝম্প করা প্রচুর পর্যটক সেখানে গিয়ে দূর্ঘটনায় পড়েছে। তাই এমন কিছু থেকে বিরত থাকুন।
কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য খৈয়াছড়া বা বড়তাকিয়া বাজারে কোনো হোটেল নাই। খৈয়াছড়া গ্রামে কারো বাড়িতে থাকতে চাইলে স্থানীয় চেয়ারম্যান এর অনুমতি নিতে হবে। অথবা নিকটস্থ থাকার হোটেলের জন্য আপনাকে যেতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। বড়তাকিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটারের মতো।
কোথায় খাবেন
ঝিরিপথের শুরুতে বেশ কিছু খাবারের দোকান আছে। যাওয়ার সময় খাবার অর্ডার করে গেলে ফেরার পথে খেতে পারবেন। এসব খাবারের দোকানে মাছ মাংস ভাত ডাল ইত্যাদি পাবেন। অন্যান্য দোকানের সাথে সেখানে রয়েছে ফখরুল মিয়ার দোকান। ফখরুলকে গ্রিন বেল্ট ট্রাভেল গ্রুপ এর রেফারেন্স দিলে আপনি দিকনির্দেশনা সহ সব কিছুতে ভালো আতিথেয়তা পাবেন।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। শুকনো মৌসুমে এখানে পানি কমে যায়। তাই বর্ষাতেই ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। ঝর্ণার ট্রেইল যত সহজ মনে হোক না কেন, ঝর্ণা মানেই এদিক ওদিক বিপদ ওৎ পেতে থাকে। এজন্য প্রতি পদে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ট্রেইলে প্রতিটা স্টেপে নিজের কমনসেন্স ব্যাবহার করুন। গ্রুপ করে ঘুরতে যাওয়াই ভালো। ক্যাম্পিং করতে চাইলে ক্যাম্পিং এর বেসিক জেনে যাবেন। রাতে আগুন জ্বালালে সকালে সেগুলোর ছাই পরিষ্কার করে আসতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ছোটলোকি। ভুলেও এই কাজ করবেন না, গোপনেও না।
কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডকে বলা যায় ঝর্ণা উপত্যকা। খৈয়াছড়া ঝর্ণা অভিযানে গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। খৈয়াছড়ার একদম কাছাকাছি আছে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ও কমলদহ ঝর্ণা। বিশ কিলোমিটার দূরের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত কিংবা চন্দ্রনাথ পাহাড়ও চাইলে একই দিন কাভার করতে পারবেন। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের কাছে আছে সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। ইকোপার্ক এর ভিতরে আছে সুপ্তধারা ও সহস্রধারা নামে দুইটা ঝর্ণা। আর ঝর্ণায় গিয়ে ক্লান্ত থাকায় আবার পাহাড়ে যেতে না চাইলে মহামায়া লেকে ঘুরে আসতে পারেন।
দিগন্ত বিস্তৃত হাওর। চারদিকে থইথই পানি। এর মাঝখান দিনে চলে গেছে রাস্তা। এরকম ছবির মতো সুন্দর একটি জায়গা কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা! প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রস্তাটি চলে গেছে বালিখলা থেকে নিয়ামতপুর পর্যন্ত। হাওর থেকে রাস্তাটি বেশ উঁচু হওয়ায় বর্ষাকালেও এটি ডুবে যায়না। এখান থেকে আপনি চাইলে নৌকা নিয়ে হাওরে ভ্রমণ করতে পারবেন। ঢাকা থেকে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার জন্য বালিখোলা হতে পারে চমৎকার একটি স্থান।
কখন যাবেন বালিখলা
বছরের এক এক সময় হাওরের এক এক রূপ থাকে। তবে রাস্তার দুইপাশে পানি দেখতে চাইলে আপনাকে বর্ষাকালে বালিখলা আসতে হবে। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বালিখলা ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় আসতে।
কিভাবে যাবেন
বালিখলা যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার গোলাপবাগ থেকে অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। দিনে গিয়ে আবার ঐদিনই ঢাকায় ফিরে আসতে চাইলে আপনাকে সকাল ৭টার মধ্যে রওনা করতে হবে। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘন্টা। সেখান থেকে নিকলি হাওরের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। রিজার্ভ সিএনজি নিলে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হবে। যেতে সময় লাগে ১ ঘন্টা ২০ মিনিট এর মতো।
ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ
ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যেতে চাইলে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে যেতে হবে। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে এই ট্রেনটি সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১২৫ থেকে ২৫০ টাকা। কমলাপুর থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত যেতে প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা সময় লাগে। মনে রাখা দরকার আসার পথে আপনি ট্রেন পাবেন না। যদি ঐদিনই ফিরে আসতে চান তবে বাসেই ফিরতে হবে।
কিশোরগঞ্জ থেকে বালিখলা
কিশোরগঞ্জ নেমে রিকশা বা অটোরিকশায় করে আপনি চলে আসুন একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ডে। এখান থেকে রিজার্ভ সিএনজিতে বালিখোলা যেতে পারবেন। সময় লাগবে ১ ঘন্টা। ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। একরামপুর থেকে বালিখলার দূরত্ব প্রায় ১৯ কিলোমিটার। হাওরের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া বালিখলা রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার। রাস্তার শেষ মাথায় বালিখলা বাজার। এখান থেকে নৌকা নিয়ে হাওরে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এখানে নৌকা ভাড়া হয় ঘন্টাপ্রতি। প্রতি ঘন্টার জন্য নৌকা ভাড়া পড়োবে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। আপনার হাতে সময় থাকলে বালিখলা থেকে মিঠামইন ঘুরে আসতে পারেন। যেতে আসতে সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মতো।
কোথায় খাবেন
বালিখলায় খাওয়ার জন্য কোনো খাবারের দোকান নেই। ছোট কিছু টং দোকান পাবেন। সেখানে হালকা নাস্তা করা যাবে। ভারী খাবারের জন্য কিশোরগঞ্জেই আসতে হবে। অথবা যাত্রাপথে করিমগঞ্জ বাজারে থেকে খেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য কিশোরগঞ্জ শহরে ভালো মানের কিছু হোটেল পাবেন। এগুলোর মধ্যে হোটেল রিভারভিউ, ক্যাসেল সালাম, নিরালা, হোটেল গাঙচিল, উজানভাটি উল্লেখযোগ্য। এইসব হোটেলে থাকতে পারবেন। একদিনের জন্য ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
বালিখলা ভ্রমণে আপনি সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নৌকায় চড়বেন না। স্থানীয় লোকজন ও মাঝিদের সাথে মার্জিত আচরণ করুন। নৌকা ভাড়া নেওয়ার সময় দরদাম করে নিবেন ভালোমতো। মিঠামইনের কামালপুরে আছে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের গ্রামের বাড়ি। সময় পেলে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চাইলে সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। হাওর এলাকা খুবই পরিচ্ছন্ন জায়গা। যেখানে সেখানে অপচনশীল দ্রব্য ফেলবেন না।