টাঙ্গুয়ার হাওর নৌকা

চন্দ্রাবতী

টাঙ্গুয়ার হাওরের নৌকা – চন্দ্রাবতী

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী ছুটে আসেন টাঙ্গুয়ার হাওরে। উদ্দেশ্য থাকে টাঙ্গুয়ার হাওর নৌকা ভ্রমণ। বর্ষায় মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢলে হাওর কানায় কানায় ভরে উঠে। এখানকার সীমান্তঘেঁষা গ্রাম টেকেরঘাট, এটা হাওরের শেষ প্রান্ত। এখান থেকে মেঘালয় পাহাড়ের শুরু। টেকেরঘাটেই আছে চুনাপাথরের লেক নীলাদ্রী (শহীদ সিরাজ লেক), আর লাকমাছড়া। এছাড়া জাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান কিংবা বারিক্কা টিলা, টাঙ্গুয়ার হাওরের যে প্রান্তেই যান না কেন এর রূপ বৈচিত্রে আপনি মুগ্ধ হবেন।

বর্ষাকালে টাঙ্গুয়া হাওরে চলাচলের একমাত্র বাহন হলো নৌকা। পর্যটকরা হাওরে বেড়ানোর জন্য তাহিরপুর ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তবে ভালো নৌকার জন্য আগে থেকে বুকিং দিয়ে আসতে হয়। আজকে জানাবো টাঙ্গুয়ার হাওরের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও সুযোগসুবিধা সম্পন্ন নৌকা চন্দ্রাবতী সম্পর্কে।

tanguar haor boat 2

চন্দ্রাবতীর ছাদে

 

টাঙ্গুয়ার হাওর নৌকা চন্দ্রাবতী এর সুযোগ সুবিধা

* এই নৌকায় প্যান এবং কমোড দুইটাই আছে এবং পর্যাপ্ত স্পেস সহ। যেখানে হাওরের বেশিরভাগ নৌকাতেই ঝুলন্ত টয়লেট।

* ছেলে ও মেয়েদের রাতে ঘুমানোর জন্য দুইটি আলাদা কম্পার্টমেন্ট আছে এই বোট এ। যেখানে প্রায় ১৮ জন ঘুমাতে পারে। এছাড়া নৌকার ছাদে বসার ব্যাবস্থা আছে ৫০ জন এর।

*জেনারেটর, ৩টা হাই স্পিড মুভিং ফ্যান এবং ২টা এয়ার পাসার এক্সস্টেড ফ্যান আছে। মোবাইল ও ক্যামেরা চার্জিং পয়েন্ট আছে প্রতিটি কর্নারে। বোটের অভ্যন্তরের সবই এলইডি বাল্ব, যে কারনে পোকা আসে না।

* পার্সনাল লকার ফ্যাসিলিটি আছে, বুক সেলফ আছে, স্যানিটারি ন্যাপকিন প্যাড আছে ফ্রি ইউজের জন্য।

* ১৬টা লাইফ জ্যাকেট আছে। ফার্স্ট এইড বক্স আছে। উপরে ফ্ল্যাড লাইট আছে। আছে এমার্জেন্সি সিগনাল লাইট। পানি নিষ্কাশন পাম্প আছে। কোন কারনে নৌকাতে বেশি পানি উঠলে পাম্প চালালে ৪-৫ মিনিটের মধ্যেই সব পানি বাইরে ফেলে দেয়া যায়।

*রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে আছে স্পেশাল ত্রিপল। পুরাটাই ছাতার ফাইবার দিয়ে বানানো। একটু আয়েশ করে উপরে শুয়ে রাতের জ্যোতস্না বিলাশের জন্য শীতল পাটি আছে।

 

tanguar haor boat 3

চন্দ্রাবতীতে

নৌকা ভাড়া

শুক্র-শনিবার (১ রাত ২ দিন)
৪৫,০০০ টাকা (১০ জনের জন্য)
১০ জনের কম হলেও ৪৫ হাজার টাকা থাকবে। ১০ জন এর বেশি হলে অতিরিক্ত প্রতি জনের জন্য জনপ্রতি ২৫০০ টাকা যুক্ত হবে।
রবি থেকে বৃহস্পতিবার (১ রাত ২ দিন)
৩৬,০০০ টাকা (১০ জনের জন্য)
১০ জনের কম হলেও ৩৬ হাজার টাকা থাকবে। ১০ জন এর বেশি হলে অতিরিক্ত প্রতি জনের জন্য জনপ্রতি ২০০০ টাকা যুক্ত হবে।
রবি থেকে বৃহস্পতিবার (১ রাত ১ দিন)
৩০,০০০ টাকা (১০ জনের জন্য)
১০ জনের কম হলেও ৩২ হাজার টাকা থাকবে। ১০ জন এর বেশি হলে অতিরিক্ত প্রতি জনের জন্য জনপ্রতি ১৫০০ টাকা যুক্ত হবে।
❑ ফুড মেনু
১ম দিন
ব্রেকফাস্টঃ খিচুড়ি + ডিম + সালাদ + আচার
নুন স্ন্যাকসঃ চা + কেক/বিস্কিট
লাঞ্চঃ ভাত + ভর্তা/সবজি + হাওড়ের মাছ + ডাল।
ইভিনিং স্ন্যাকসঃ নুডুলস + চা
ডিনারঃ ভাত + ভর্তা/সবজি + হাঁসের মাংস + ডাল।
২য় দিন
ব্রেকফাস্টঃ খিচুড়ি + ডিম + আচার
নুন স্ন্যাকসঃ চা + কেক/বিস্কিট
লাঞ্চঃ ভাত + ভর্তা/সবজি + হাওড়ের মাছ + ডাল।
ইভিনিং স্ন্যাকসঃ নুডুলস + চা

প্যাকেজে যা যা থাকছে

⦿ প্রথমদিন সকালের খাবার থেকে শুরু করে আসার দিন সান্ধ্যকালীন খাবার পর্যন্ত ২ দিনে ৯ বেলা খাবার।
⦿ সুনামগঞ্জ থেকে পিকআপ ও ড্রপ।
⦿ রাতে নীলাদ্রী লেকের পাড়ে টেকেরঘাটে অবস্থান।

যোগাযোগ

ঢাকা অফিস:
রুম নং ১৪০৩; ১৪ তম তলা;
শাহ্‌ শাহ্‌ আলী প্লাজা। মিরপুর ১০ গোলচত্বর।

ফোনঃ 01884710723
01869649817
01810137002

চন্দ্রাবতীর ফেসবুক পেজ: Daughter of Tangua

টাংগুয়া হাওড় ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

*যারা সরাসরি তাহিরপুর গিয়ে ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া নিবেন তারা ভালোমতো দরদাম করে নিবেন। সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিবেন। লোকাল বোট সাধারণত ৮০০০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। আর হাওরে ২/৩টা প্রিমিয়াম বোট আছে। এগুলোর ভাড়া ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

*টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে লাইফ জ্যাকেট সাথে নিন। তাহিরপুরে ৫০থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায় লাইফ জ্যাকেট পাবেন। এছাড়া প্রিমিয়াম বোট গুলোর নিজস্ব লাইফজ্যাকেট থাকে। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া অল্প পানিতেও নামবেন না।

* ভ্রমণের সময় টিম সাইজ যত বড় হবে খরচ তত কম হবে। দলে সদস্য সংখ্যা একেবারে কম হলে কোনো ট্যুর গ্রুপ এর সাথে ভ্রমণ করতে পারেন। এতে ভ্রমণ খরচ কমে আসবে।

*জাদুকাটা নদীতে অল্প পানিতে কিছুদূর হাঁটার পর হঠাৎ খাড়া গভীর! নদীর তলদেশে তীব্র স্রোত আছে। যা উপর থেকে দেখে বোঝা যায়না। তাই জাদুকাটা নদীতে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নামবেন না।

* লাকমাছড়া মূলত ইন্ডিয়াতে পড়েছে। তাই লাকমাছড়াতে গেলে সাইনবোর্ড দেওয়া নির্দিষ্ট অংশ পর্যন্ত ভ্রমণ করুন। ভারতের অংশে প্রবেশ কবেন না।

*হাওরে কোনো ভাবেই মাইক এমনকি স্পীকারও ব্যাবহার করে গান বাজাবেন না। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। স্থানীয়রাও বিরক্ত হয়।

*ভ্রমণের সময় ছাতা নিন সাথে। রোদ বৃষ্টি যেকোনো সময় কাজে দিবে। মাঝি ও স্থানীয়দের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করুন।

* জুলাই থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত হাওরে কানায় কানায় পানি থাকে। তাই এই সময়টার মধ্যেই টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করুন। বছরের অন্য সময় এখানে পানি থাকেনা। শুকনো মৌসুমে পাখি দেখতে অনেক পর্যটক আসেন। তবে তখন নৌকা চলে না।

ট্রাভেল এজেন্সি

এছাড়া যারা ঝামেলা এড়াতে ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর টাঙ্গুয়া হাওর ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন। এটি ১ রাত ২ দিনের ভ্রমণ প্যাকেজ। ভ্রমণ আপনার স্বপ্ন। আপনার স্বপ্নগুলো স্মৃতি হোক।

 

আরো পড়ুন

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ গাইডলাইন

বান্দরবানের সেরা ২০ টি রিসোর্ট

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ তথ্য

কোনো ধরণের অপচনশীল দ্রব্য হাওরে ফেলবেন না। পরিবেশ সংরক্ষণে মনযোগ দিন। শুধু হাওরে গিয়ে নয়, আপনার দৈনন্দিন জীবনেও যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা আপনার ব্যাক্তিত্বের পরিচায়ক।