নীলাদ্রি লেক

নীলাদ্রি লেক | ছবি: গ্রিন বেল্ট

নীলাদ্রি লেক

নীলাদ্রি লেক সুনামগঞ্জ এর একটি অন্যতম পর্যটন স্থান। এটি মূলত লাইমস্টোন বা চুনাপাথরের খনির পরিত্যাক্ত লেক। এর অবস্থান সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী টেকেরঘাট গ্রামে। নীলাদ্রী লেক এর প্রকৃত নাম শহীদ সিরাজ লেক। তবে পর্যটকদের কাছে এটি নীলাদ্রি লেক নামে বেশি পরিচিত। আর স্থানীয়দের কাছে এর নাম টেকেরঘাট পাথর কোয়ারি। ঘন নীল জলের এই লেকের একপাশে মেঘালয়ের পাহাড়, তার চারপাশে ছড়ানো ছিটানো পাথর। অনেকে একে বাংলার কাশ্মীর নামে অভিহিত করেন। মোহনীয় এই লেকের পাড়ে একটা দিন কাটিয়ে দেওয়াই যায়।

কিভাবে যাবেন

নীলাদ্রি লেক মোটামোটি ৩ ভাবে যাওয়া যায়। সুনামগঞ্জ লাউড়ের গড় হয়ে, সুনামগঞ্জ তাহিরপুর হয়ে এবং নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ হয়ে। তবে ঢাকা থেকে গেলে সুনামগঞ্জ হয়ে যাওয়াটাই সুবিধাজনক।
 
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ: ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন মামুন পরিবহন, এনা পরিবহন ও শ্যামলী পরিবহনের বাস সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ টাকা। যেতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা। সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা ব্রিজের উপর থেকে নীলাদ্রী লেক যাওয়ার মোটর সাইকেল ভাড়ায় পাবেন। এক মোটর সাইকেলে দুইজন বসা যায়। মোটর সাইকেল ভাড়া নিবে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। ফেরার সময় ওখান থেকে মোটর সাইকেল পেয়ে যাবেন। আর সারাদিনের জন্য বাইক রিজার্ভ নিলে সিজন ভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা।

বর্ষাকালে নীলাদ্রি লেক ভ্রমণে গেলে সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর হয়ে যেতে পারবেন। তখন তাহিরপুর থেকে নৌকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর এর উপর দিয়ে চলে যাবেন টেকেরঘাট। ওখান থেকে হেঁটে ৩/৪ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন নীলাদ্রি লেক।

মোহনগঞ্জ থেকে নীলাদ্রি লেক: আপনি চাইলে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ হয়েও নীলাদ্রি লেক যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে রাত ১১টার হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রথমে মোহনগঞ্জ। মোহনগঞ্জ নেমে অটোরিকশায় মধ্যনগর যেতে হবে। সময় লাগবে ১ ঘন্টা। মধ্যনগর থেকে টেকেরঘাট যাওয়ার নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোট পাবেন। আর শুকনো মৌসুমে মধ্যনগর থেকে বাইক রিজার্ভ নিয়ে নীলাদ্রী লেক যাওয়া যায়। তবে এই রুটে সময় ও খরচ কিছুটা বেশি হবে। তাই সুনামগঞ্জ হয়ে নীলাদ্রী লেক যাওয়ার প্ল্যান করা ভালো। তবে যাদের বাড়ি নেত্রকোনার আশেপাশে তারা এই পথ দিয়ে নীলাদ্রী লেক যেতে পারেন।

ভ্রমণ পরিকল্পনা

নীলাদ্রি লেক এর কাছাকাছি যাদুকাটা নদী, বারিক্কা টিলা, শিমুল বাগান, লাকমাছড়া ও টাঙ্গুয়ার হাওর আছে। আপনি দুইদিন সময় বের করতে পারলে এগুলো সব স্পট রিলাক্সে ঘুরতে পারবেন। তাছাড়া বাইক নিয়ে আপনি একদিনেও ঘুরে আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে স্ক্যাজিউল অনেক টাইট হয়ে যায় বলে ভ্রমণে পূর্ণতা আসেনা। পড়ুন এর ১ রাত ২ দিন এর পূর্ণাঙ্গ টাঙ্গুয়ার হাওর ট্যুর প্ল্যান

কখন যাবেন নীলাদ্রি লেক

নীলাদ্রি লেক বা হাওর এলাকার প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা যায় বর্ষায়। তখন রোদ মেঘ বৃষ্টির লুকোচুরিতে প্রকৃতি মোহনীয় রূপ ধারণ করে। তাই বলা যায় বর্ষাকালই নীলাদ্রি লেক ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে পাখি প্রেমীরা শীতকালেও এই এলাকা ভ্রমণ করেন। শীতে এখানে প্রচুর পাখি আসে।

কোথায় থাকবেন

নীলাদ্রি লেক এর আশেপাশে থাকার জন্য ভালো হোটেল নেই। বড়ছড়া বাজারে কয়েকটি গেস্ট হাউজ ও তাহিরপুর বাজারে দুইটি হোটেল রয়েছে। আর বর্ষাকালে গেলে নৌকায় থাকা যাবে। টাঙ্গুয়ার হাওর এর বোট সম্পর্কে এখানে পড়ুন।

কোথায় খাবেন

টেকেরঘাট বাজার, বড়ছড়া বাজার বা তাহিরপুর বাজারে আপনি মোটামোটি মানের খাবারের দোকান পেয়ে যাবেন। ভালো রেস্টুরেন্টে এর জন্য সুনামগঞ্জ শহরে আসতে হবে। আর বর্ষায় নৌকা ভাড়া নিলে নৌকায় রান্নার ব্যবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে বোটে উঠার আগে বাজার করে উঠতে হবে।

নীলাদ্রি লেক ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

* ভ্রমণের সময় টিম সাইজ যত বড় হবে খরচ তত কম হবে। দলে সদস্য সংখ্যা একেবারে কম হলে কোনো ট্যুর গ্রুপ এর সাথে ভ্রমণ করতে পারেন। এতে ভ্রমণ খরচ কমে আসবে। নিরাপত্তাও বাড়বে।
 
* যাদুকাটা নদীতে অল্প পানিতে কিছুদূর হাঁটার পর হঠাৎ খাড়া গভীর! নদীর তলদেশে তীব্র স্রোত আছে। যা উপর থেকে দেখে বোঝা যায়না। তাই যাদুকাটা নদীতে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নামবেন না।
 
*বর্ষায় টাংগুয়া হাওর ভ্রমণে বজ্রবৃষ্টি বা ভারী বৃষ্টি হলে নৌকার ছাদ থেকে নেমে ভিতরে অবস্থান নিন।
 
*টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে লাইফ জ্যাকেট সাথে নিন। তাহিরপুরে ৫০থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায় লাইফ জ্যাকেট পাবেন। এছাড়া প্রিমিয়াম বোট গুলোর নিজস্ব লাইফজ্যাকেট থাকে। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া অল্প পানিতেও নামবেন না।
 
* হাওরে কোনো ভাবেই মাইক এমনকি স্পীকারও ব্যাবহার করে গান বাজাবেন না। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। স্থানীয়রাও বিরক্ত হয়।
 
*ভ্রমণের সময় ছাতা নিন সাথে। রোদ বৃষ্টি যেকোনো সময় কাজে দিবে। মাঝি ও স্থানীয়দের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করুন।
 
*কোনো ধরণের অপচনশীল দ্রব্য হাওরে ফেলবেন না। পরিবেশ সংরক্ষণে মনযোগ দিন। শুধু টাঙ্গুয়ার হাওড় এ গিয়ে নয়, আপনার দৈনন্দিন জীবনেও যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা আপনার ব্যাক্তিত্বের পরিচায়ক।
 
অনেকে ঝামেলা এড়াতে ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর টাঙ্গুয়া হাওর ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন। আপনার স্বপ্নগুলো স্মৃতি হোক।

আরো পড়ুন