মারায়ন তং

মারায়ন তং বা মারায়ং তং বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মিরিঞ্জা রেঞ্জের একটি পাহাড়ের নাম। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে এর উচ্চতা ১৬৫০ ফুট। এই পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় আছে একটি বৌদ্ধ উপাসনালয়। যেখানে রয়েছে গৌতম বুদ্ধের একটি আবক্ষ মূর্তি। উপাসনালয়টি পুরো স্থানটিকে একটি বিশেষত্ব দিয়েছে। মারায়ন তং জাদী পাহাড় এর চূড়ার অংশটি পুরোপুরি সমতল। চূড়ায় দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায় ততদূর শুধু পাহাড়ের সারি৷ এ যেন পাহাড়ের সমুদ্র। আর পাহাড়ের নিচে দিয়ে সাপের মতো এঁকেবেকে চলে গেছে মাতামুহুরি নদী।

মারায়ন তং জাদী পাহাড় ও এর আশেপাশে রয়েছে বিভিন্ন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। এরমধ্যে অন্যতম হলো ত্রিপুরা মারমা আর মুরং। পাহাড়ের নিচের দিকে মারমাদের বসবাস। আর মুরং জাতির পাড়াগুলো ছড়িয়ে আছে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে। পাহাড়িরা সাধারণত মাচাংয়ের উপর ঘর বানায়। উপরে পরিবারের সদস্যরা বসবাস করে। আর নিচে মুরগী শূকর ইত্যাদি গবাদিপশু থাকে। বৈচিত্র্যময় এই সংস্কৃতির সৌন্দর্য বান্দরবানকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। এখানকার অধীবাসীরা জীবিকার জন্য পাহাড়ের উপর নির্ভরশীল। এখানে ফলমূল, শস্য, তামাক ইত্যাদির চাষ হয়।

কিভাবে মারায়ন তং যাবেন

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কক্সবাজারগামী বাসে উঠে চকরিয়া নামতে হবে। ওখান থেকে বাস জিপ বা সিএনজিতে আসতে হবে আলীকদম। লোকাল গাড়িতে গেলে ভাড়া আসবে ৭০ টাকা, আর জিপ রিজার্ভ করলে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এক জিপে ১২/১৩ জন বসতে পারবেন। আলীকদম থেকে অটোরিকশা নিয়ে আবাসিক নামক যায়গায় যেতে হবে। ভাড়া ২০ টাকা।

আবাসিকে গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই মারায়ন তং এর রাস্তা দেখিয়ে দিবে। একটাই রাস্তা। এই রাস্তা ধরে আড়াই তিন ঘন্টা হাঁটলে পৌঁছে যাবেন মারায়ং তং জাদীতে। এটি আলীকদমের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। এই পাহাড়টি মারায়ন ডং ও মেরাইথং নামেও পরিচিত।

কোথায় থাকবেন

 

মারায়ন তং’এ সবাই সাধারণত ক্যাম্পিং করতেই যায়। তাই ক্যাম্পিংয়ের জিনিসপত্র সাথে নিতে হবে। যেমন পানি গ্লুকোজ, শুকনো খাবার, ফার্স্ট এইড এবং রান্না করতে চাইলে রান্নার প্রয়োজনীয় উপকরণ সাথে নিবেন। তাঁবুর সাথে অবশ্যই চাদর ও স্লিপিং ব্যাগ নিবেন। কারণ গরমের দিনেও পাহাড়ে রাতে ঠান্ডা পড়ে।

ক্যাম্পিং করার সময় প্রথমে স্থানীয় পাড়ার হেডম্যানের সাথে কথা বলুন। উনাকে আপনার ফোন নাম্বার দিন, আপনিও উনার ফোন নাম্বার রাখুন। যাতে প্রয়োজনে কোনোপ্রকার সহযোগিতার জন্য হেডম্যানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

আর যারা ক্যাম্পিং করতে চান না, তারা আলীকদমে বা চকরিয়ায় কিছু থাকার হোটেল আছে, ওখানে থাকতে পারেন। চাইলে চকরিয়া থেকে কক্সবাজারও চলে যেতে পারেন। চকরিয়া থেকে বাসে কক্সবাজার যেতে ২ ঘন্টা সময় লাগে।

পরামর্শ ও সতর্কতা

*এখানে অনেকক্ষণ পাহাড়ি পথে হাঁটতে হয়। তাই শিশু ও বয়স্কদের না যাওয়াই উচিত।
*ট্রেকিংয়ের জন্য ট্রেকিং বুট ব্যবহার করুন। চাইলে প্লাস্টিক বা রাবারের স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন।
*পর্যাপ্ত পরিমান পানি ও শুকনো খাবার বহন করুন।
*পূর্বে ক্যাম্পিংয়ের অভিজ্ঞতা না থাকলে, অভিজ্ঞতা আছে এরকম কাউকে সঙ্গে নিন।
*আশেপাশে শস্য কিংবা ফলজ গাছ থাকতে পারে। অনুমতি ছাড়া হাত দিবেন না। কথা বলে খুব সস্তায় কিনে নিতে পারবেন।
*অনুমতি না নিয়ে আদিবাসীদের ছবি তুলবেন না। এটি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান।
*আদিবাসীদের কালচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্যকোনো জাতির মানুষ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগতো।
*ক্যাম্পিং শেষে পাহাড় থেকে নামার সময় কাঠ কয়লা সহ অন্যান্য বর্জ্য পরিষ্কার করে আসুন।
*কোনো প্রকার অপচনশীল বস্তু পাহাড়ে ফেলবেন না। শুধু পাহাড় নয়, এমনকি শহরেও ফেলবেন না। এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।

আরো পড়ুন
⦿ কেওক্রাডং
⦿ দামতুয়া ঝর্ণা

বান্দরবানের অন্যান্য স্থানগুলোর ভ্রমণ তথ্য এখানে পড়ুন। ভ্রমণ বিষয়ক আপনার যেকোনো সাহায্যের জন্য গ্রিন বেল্ট এর ইনবক্সে নক করুন।

ভ্রমণ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ। মায়াদ্বীপ সম্পর্কে আপনার আরো কোনো তথ্য কিংবা পরামর্শ দেওয়ার থাকলে আমাদেরকে জানান।

মায়াদ্বীপ

নারায়গঞ্জে মেঘনা নদীর মাঝখানে মায়াদ্বীপ এর অবস্থান। এটি মূলত মেঘনার বুকে জেগে উঠা ত্রিকোন আকৃতির একটি চর। ডে ট্যুরে একবেলা কাটানোর জন্য মায়াদ্বীপ চমৎকার একটি স্থান। সবুজ প্রকৃতি, সবজি ক্ষেত, বিশাল মেঘনা নদী আর নদী পাড়ের জনপদ। এই মধ্যেই কখন একটা বেলা কেটে যাবে আপনি খেয়ালই করবেন না। মায়াদ্বীপ খুব একটা বড় না। তবে সবুজ প্রকৃতি আর এখানকার মনোরম পরিবেশ আপনার ভালো লাগবে। নদীর বাতাস একটানা বইতে থাকে এখানে। সেই নির্মল বাতাসকে কিছুক্ষণের জন্য আপনার মনে হবে মাতাল হাওয়া! ঢাকার কাছে ডে ট্যুর দিতে চাইলে কোনো এক ছুটির দিনে মায়াদ্বীপ থেকে ঘুরে আসা যায়।

কিভাবে যাবেন মায়াদ্বীপ

ঢাকার গুলিস্তান থেকে সারাদিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এর বাস পাওয়া যায়। পাঁচ দশ মিনিট পরপরই বাস ছাড়ে। বাসে উঠে নামতে হবে সোনারগাঁও বা চৈতি গার্মেন্টস এর সামনে। তারপর সেখানে থেকে মোটর রিকশা বা ইজিবাইকে করে যেতে হবে বৈদ্যের বাজার। বৈদ্যের বাজার গিয়ে নৌকা ঘাট পাবেন। সেখান থেকে মায়াদ্বীপ যাওয়ার জন্য নৌকা পাওয়া যায়। মায়াদ্বীপ থেকে ঘুরে আসার জন্য নৌকা রিজার্ভ নিতে হবে। তিন চার ঘন্টার জন্য ভাড়া নিলে ঘন্টায় ভাড়া পড়বে ৪শ থেকে ৫শ টাকা। এক নৌকাতে ৭ থেকে ৮ জন বসতে পারবেন। যেতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটের মতো। মেঘনার বুকে এই নৌভ্রমণ বেশ উপভোগ করতে পারবেন। স্থানীয়রা এই দ্বীপকে নুনেরটেক নামে চিনে। তাই মায়াদ্বীপ নামে কোনো মাঝি চিনতে না পারলে নুনেরটেক বলুন।

মায়াদ্বীপে কোনো ধরণের অবকাঠামো নেই। আপনি কোনো ধরণের ওয়াশরুম পাবেন না সেখানে। নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। খুব জরুরী হলে স্থানীয়দের বাড়িতে গিয়ে ওয়াশরুম ব্যবহার করা যেতে পারে।

মায়াদ্বীপ ফেরার সময় ঘুরে আসতে পারেন। এটা বৈদ্যের বাজার থেকে মেইনরোডে আসার পথেই পড়বে। সকালটা মায়াদ্বীপে কাটিয়ে, দুপুরে বৈদ্যের বাজারে লাঞ্চ করে বিকেলটা পানাম নগরীতে কাটাতে পারেন। এরপর সন্ধ্যার মধ্যে বাসে উঠে বাড়ি ফিরতে পারেন। হাইওয়েতে জ্যামের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

কোথায় খাবেন মায়াদ্বীপ

মায়াদ্বীপে খাওয়ার জন্য কোনো ধরণের খাবারের দোকান নাই। দুপুরে খাওয়ার জন্য আপনাকে বৈদ্যের বাজারে আসতে হবে। বৈদ্যের বাজারে অনেকগুলো খাবারের দোকান আছে। এগুলোর মধ্যে ঘাটের কাছেই সবুজ পাতা রেস্টুরেন্ট অন্যতম। এখানে আপনি ভাত মাছ সবজি ভর্তা ইত্যাদি পাবেন। দুপুরের খাওয়ার জন্য জনপ্রতি খরচ পড়বে ১২০ থেকে ১৮০ টাকা। মায়াদ্বীপ যাওয়ার সময় খাওয়ার পানি ও হালকা স্ন্যাকস কিনে নিয়ে যেতে পারেন বৈদ্যের বাজার থেকে।

কোথায় থাকবেন

ঢাকার কাছাকাছি হওয়াতে আপনি দিনে গিয়ে দিনেই মায়াদ্বীপ থেকে ফিরতে পারবেন। তাই রাতের বেলা সেখানে থাকার প্রয়োজন পড়বে না। তারপরও থাকতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ এসে থাকতে হবে। নারায়ণগঞ্জ থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল রিসোর্ট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সাঁতার না জানলে কোনোভাবেই নদীতে নামবেন না। প্রয়োজনে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন। বর্ষাকালে মেঘনা নদীতে পানির স্রোত অনেক বেশি থাকে। তাই ভরা বর্ষায় মায়াদ্বীপ না যাওয়াই মঙ্গল। সন্ধ্যার পর ওখানে থাকা যাবে না। মায়াদ্বীপ থেকে ফেরার সময় নৌকা এমনভাবে ছাড়বেন যেন সন্ধ্যার আগে বৈদ্যের বাজার এসে পৌছাতে পারেন। আর নৌকা ভাড়া নেওয়ার সময় ভালোমতো দরদাম করে নিবেন। নৌকার মাঝি ও স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলফেন না। এটা শুধু ভ্রমণে গিয়ে নয়, এমনকি আপনার প্রত্যাহিক জীবনেও।

ডে ট্যুরে আরো যেতে পারেন

ভ্রমণ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ। মায়াদ্বীপ সম্পর্কে আপনার আরো কোনো তথ্য কিংবা পরামর্শ দেওয়ার থাকলে আমাদেরকে জানান।

জিন্দা পার্ক

জিন্দা পার্ক এর অবস্থান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আধ ঘন্টার দূরত্বে ১৫০ একর জমির উপর এই সুন্দর পার্ক এর অবস্থান। সবুজ গাছপালা বেষ্টিত এই পার্ক পাখির কলকাকলীতে মুখরিত থাকে সবসময়। এখানে পার্কের ভিতরে রয়েছে ছোট বড় ৫টি লেক। পর্যাপ্ত জলাধার থাকায় গরম কালেও পার্কের পরিবেশ শীতল থাকে তুলনামূলক। পরিবার নিয়ে ঢকার কাছে ভ্রমণ এর জন্য জিন্দা পার্ক এখন বেশ সুপরিচিত জায়গা। লেকের মাঝে দ্বীপের মতো জায়গায় গড়ে উঠা বাঁশের টি রুমে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে এক কাপ চা কিংবা জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে বেশ ভালো লাগবে। দারুণ উপভোগ করবেন কাটানো সময়গুলো। সাথে নিজস্ব গাড়ি না থাকলেও সমস্যা নেই। দিনশেষে বাড়ি ফেরার জন্য পার্কের সামনেই পাবেন রিকশা অথবা সিএনজি। মেইনরোডে এসেই কুড়িল বিশ্বরোড আসার বাস পেয়ে যাবেন। আর হ্যাঁ, বেশি সংখ্যক সদস্য নিয়ে পিকনিক করতে চাইলে কয়েকদিন আগেই যোগাযোগ করুন। পিকনিকের খাবারের আয়োজন পার্ক কর্তৃপক্ষই করবে।

কিভাবে যাবেন জিন্দা পার্ক

জিন্দা পার্ক যাওয়ার অনেকগুলো পথ আছে। ঢাকা থেকে সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হলো ঢাকার ৩০০ফিট দিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ কুড়িল বিশ্বরোড হাইওয়ে দিয়ে। কুড়িল হয়ে যেতে হবে কাঞ্চন ব্রিজ। তারপর এরপর কাঞ্চন ব্রিজ থেকে অটোরিকশা নিয়ে জিন্দা পার্ক পর্যন্ত যেতে পারবেন।

আর ঢাকা টঙ্গী হতে যেতে চাইলে মীরের বাজার হয়ে বাইপাস রাস্তা দিয়েও যেতে পারবেন। এছাড়া কাঁচপুর ব্রিজ দিয়েও জিন্দা পার্ক যাওয়া যায়। কাঁচপুর থেকে ভুলতা গাওছিয়া দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ হয়ে জিন্দা পার্কে যেতে পারবেন।

কি দেখবেন

জিন্দা পার্ক গড়ে উঠেছে প্রায় ১০০ একর জায়গার উপর। এখানে রয়েছে একটি কমিউনিটি স্কুল। আছে কমিউনিটি ক্লিনিক। জিন্দা পার্কে নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী বিশিষ্ট একটি লাইব্রেরি আছে। পার্কের ভিতরে মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান আছে। নির্মল সবুজে ঘেরা বিশাল এই পার্কে ২৫০ প্রজাতির ১০ হাজারেরও বেশি গাছ আছে। তাই স্থানটি পাখির কলতানে মুখরিত থাকে সবসময়। পার্কের ভিতরে লেক সদৃশ ছোট বড় ৫টি জলাধার রয়েছে।

সবুজ গাছপালায় ঘেরা বনের ভিতরে কিছুদূর গেলেই একটা লেক। সেখানে অনেক মানুষ কেউ ব্যাডমিন্টন খেলছে, কেউ চাদর বিছিয়ে গল্প করছে। লেকের মাঝখানে চোখে পড়বে কৃত্রিম দ্বীপ। দ্বীপে যাওয়ার রাস্তা বানানো হয়েছে ভাসমান প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে। যদিও একসাথে বেশি মানুষ ব্রিজে উঠলে ব্রিজ দোলে।

দারুন এই দ্বীপে পানিতে পা ডুবিয়ে ঘাসের উপর বসে থাকতে পারবেন। এরকম মোট পাঁচটি ছোট বড় লেক আছে জিন্দা পার্কে। লেকের ঘাটে বাধা আছে ছোত নৌকা। মন চাইলে নোউকায় চড়ে লেকে ভেসে বেড়াতে পারবেন কিছুক্ষণ। পাশাপাশি উপভোগ করতে পারবেন প্রকৃতিকে। লেকের পাড়েই আছে গাছের ওপর কয়েকটা টংঘর। চাইলে টংঘরে উঠে ছবি তোলা যাবে।

জিন্দা পার্কে প্রবেশ টিকেট এর মূল্য​ প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিজনের জন্য জনপ্রতি ১০০ টাকা। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৫০টাকা। পার্কে খাবার নিয়ে প্রবেশ করা যাবে। সেক্ষেত্রে টিকিটের মুল্য হবে ১২৫টাকা। জিন্দা পার্কের লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতে চাইলে আলাদা ফি দিতে হবে ১০ টাকা করে। নৌকায় ঘুরে বেড়াতে খরচ পড়বে প্রতি ৩০ মিনিট ২০০ টাকা। গাড়ি নিয়ে গেলে পার্কিং ফি দিতে হবে। গাড়ি ভেদে খরচ পড়বে ৫০থেকে ১০০ টাকা।

পার্কের পেছনের গল্প​

জিন্দা মূলত একটি গ্রামের নাম। গ্রামের “অগ্রপথিক পল্লী সমিতি”-র তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে পার্কটি। প্রায় চল্লিশ বছর আগে, ১৯৭৯ সালে রূপগঞ্জ পূর্বাচল উপশহরে জিন্দা ঐকতান পার্ক গড়ে তুলেন সমিতির সদস্যরা। এত স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং ভীষণ আলাদা রকমের পার্কটি কোনো সরকারি উদ্যাগে তৈরি নয়। আবার কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেও নির্মাণ করা হয়নি জিন্দা পার্ক। পার্কটি তৈরি হয়েছে এলাকাবাসীর প্রাণবন্ত অংশগ্রহনের মাধ্যমে। গ্রামের নামেই পার্কের নামকরণ। এই গ্রামটিকে একটি আদর্শ গ্রাম বলা চলে।

কোথায় খাবেন

জিন্দা পার্কের ভিতরেই রয়েছে খাবার রেস্টুরেন্ট। যেখানে মিলবে ভাত, ভাজি, ডাল, মাংস ইত্যাদি। একবেলা খাবার খরচ পড়োবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন হালকা খাবার এবং সফট ড্রিঙ্কস পাবেন পার্কের ভিতরে।

কোথায় থাকবেন

যদি রাতে থাকতে চান তাহলে তার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। থাকার জন্য রয়েছে মহুয়া গেস্ট হাউজ। এছাড়া ঘোরাঘুরির জন্য জিন্দা পার্ক খোলা থাকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

ভ্রমণ সতর্কতা ও টিপস

পার্কের ভেতরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে দর্শনার্থীদেরকে অনুরোধ করা হয়। এটা এমনিতেও একজন ভ্রমণকারীর দায়িত্ব। প্রকৃতিতে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। পার্কের ভিতরে উচ্চস্বরে লাউডস্পিকারে গান বাজানো যাবেনা।

ডে ট্যুর এর অন্যান্য স্থান

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর এর জন্য অনেকগুলো চমৎকার জায়গা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মৈনট ঘাট, মায়াদ্বীপ, সারিঘাট, বেলাই বিল, ছুটি রিসোর্ট, গোলাপ গ্রাম সহ অনেকগুলো স্থান রয়েছে। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে পড়ুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers

আরো পড়ুন

চাঁদপুর – ডে ট্যুর

একদিনের ছুটি কাটানোর জন্য চাঁদপুর চমৎকার একটি জায়গা। অল্প সময়ে এবং অল্প জার্নিতে সুন্দর একটি ট্রিপ হতে পারে চাঁদপুরে। লঞ্চ ভ্রমণ, নদী, খোলা বাতাস, মিনি কক্সবাজার, চাঁদপুরের ইলিশ ও বিখ্যাত আইসক্রিম এবং মিষ্টি। সেখানে পদ্মা নদীর পাড়ে আড্ডা দেয়া,এবং নদীর মোহনা (পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া) উপভোগ করা যায়। সম্ভব হলে নদীতে ঝাপাঝাপি করেও আসতে পারেন। সব মিলিয়ে খুব ভালো একটা রিফ্রেশমেন্ট। এমনিতেই লঞ্চ জার্নিতে ক্লান্তি আসেনা। তাই ডে ট্যুর এর জন্য চাঁদপুরকে বেছে নিতে পারেন।

কিভাবে যাবেন চাঁদপুর

ঢাকা থেকে চাঁদপুর বাসে,ট্রেনে কিংবা লঞ্চে যাওয়া যায়। কিন্তু ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গেলে লঞ্চে যাওয়াই ভালো। ঢাকা-চাঁদপুর রুটে চলাচলকারী লঞ্চের মধ্যে এমভি সোনারতরী, এমভি তাকওয়া, এমভি বোগদাদীয়া, এমভি মেঘনা রাণী, এমভি আল বোরাক, এমভি ঈগল, এমভি রফরফ, এমভি তুতুল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সদরঘাট থেকে সকাল ৬/৬:৩০ থেকে এক/আধ ঘন্টা পরপরই লঞ্চ ছাড়ে৷ আসন ভেদে লঞ্চ ভাড়া ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। আর কেবিন নিলে ভাড়া পড়বে ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা।

সদরঘাট থেকে লঞ্চ উঠে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে পৌঁছাতে সময় লাগে ৩ ঘন্টা। চাঁদপুর নেমেই লঞ্চঘাট থেকে ফেরার সিডিউল টা জেনে নিবেন।

চাঁদপুর লঞ্চঘাটে নেমে বড় স্টেশনে রিকশা অথবা অটোতে করে চলে যেতে পারেন তিন নদীর মোহনায়। ভাড়া পড়বে রিকশায় ৩০-৩৫ টাকা, অটো তে একজনের ১০ টাকা। চলে যাবেন বড় স্টেশন পার্কে। সেখানে একটা ইলিশের ভাস্কর্য আছে। ওটার সামনে পিছে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে চলে যাবেন পার্কের শেষ মাথায়। সেখান থেকে তিন নদীর মোহনা দেখা যায়। আর এই মাথায় আসতে আসতে দেখবেন অদ্ভুত আকৃতির রক্তের ফোঁটার একটা ভাস্কর্য আছে।

কি দেখবেন চাঁদপুর

প্রত্যকটা নদীর রয়েছে আলাদা আলাদা রূপ। চাঁদপুর গেলে সেটা আরো ভালোভাবে বোঝা যায়। নদীর পাড়ে একটি ছোট পার্ক রয়েছে। পার্কের মধ্যেই রয়েছে “রক্ত ধারা” নামের মনোমুগ্ধকর একটি ভাস্কর্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ভাস্কর্যটি নির্মিত। শীতকালে মেঘনার মাঝখানে অনেক চর জাগে। নদীর পাড় থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে সেইসব চরে ঘুরে আসতে পারবেন কিছুক্ষণের জন্য। যাওয়া আসা আর আধা ঘণ্টা থাকার জন্য বোট ভাড়া করতে ৫০০ টাকা দিতে হয়।

কোথায় খাবেন

চাঁদপুর মানেই ইলিশের শহর। লঞ্চঘাটেই খাবার হোটেল আছে কয়েকটা। সবগুলোতে দাম প্রায় একই। ইলিশ প্রতি পিস ১২০টাকা। আপনি চাইলে ইলিশ চত্বর থেকে ইলিশ মাছ কিনে যেকোনো দোকানে ১০০ টাকায় ভেজে নিয়ে সাথে আলুর ভর্তা আর ডাল দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আসতে পারবেন।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে চলে যাবেন কালীবাড়ি। ঘাটের থেকেই অটোরিক্সা পাবেন জনপ্রতি ৫ টাকা নিবে। কালীবাড়ি নেমে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই স্থানীয়রা দেখিয়ে দিবে “ওয়ান মিনিট” মিষ্টির দোকান। মিষ্টির দোকানেই পাওয়া যায় স্পেশাল আইস্ক্রিম। দাম নিবে ৪০ টাকা। চেখে দেখতে পারেন ওয়ান মিনিট এর মিষ্টি গুলো। মিষ্টির দাম নিবে প্রতি পিস ১০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

ইলিশ খাওয়া কিংবা এক দিনের ভ্রমণে ঢাকা হতে চাঁদপুর দিনে গিয়ে রাতের মধ্যে ফিরে আসা যায়। আর এই ডে লং ট্যুরই চাঁদপুর ভ্রমণে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তবুও পর্যটকদের রাত্রি যাপনের কথা বিবেচনা করে এখানে হোটেল তাজমহল, হোটেল শ্যামলী, হোটেল জোনাকী ছাড়াও বেশকিছু আবাসিক হোটেল আছে।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

চাঁদপুর ভ্রমণ যেহেতু লঞ্চ এর উপর নির্ভর করে, তাই লঞ্চের টাইম টেবিল ঠিকভাবে খেয়াল রাখুন। নৌকায় চড়ার জন্য লাইফ জ্যাকেট সাথে নিন। নদীতে কিংবা কোথাও ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। চাঁদপুর ইলিশের শহর, তাই এখানে এসে ইলিশ চেখে দেখতে ভুলবেন না।

ডে ট্যুরে আরো যেতে পারেন

চৌদ্দার চর – আড়াইহাজার

চৌদ্দর চর মেঘনা নদীর মাঝখানে জেগে উঠা সাড়ে তিন কিলোমিটার লম্বা একটি চরের নাম। এটি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার (Araihazar)  উপজেলায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে মাত্র দেড় থেকে/দুই ঘণ্টার পথ। নদীর চারপাশ জুড়ে আছে বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেত, ক্ষীরাই আর বাঙ্গী ক্ষেত। তার মধ্যেই বিশাল বালুকাবেলা। এটি আপনাকে কুয়াকাটার কথা মনে করিয়ে দিবে। নদীর স্বচ্চ টলটোলে পানিতে কিছুক্ষণের জন্য গা ভিজিয়ে নিতে পারবেন চাইলে। এখানকার পানি টলটলে নীলাভ। যারা একটাদিন ঢাকার আশেপাশে ঘুরে আসতে চান, তাদের জন্য চৌদ্দারচর চমৎকার একটি জায়গা।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে আড়াইহাজার গামী অভিলাস পরিবহণ এর বাস পাবেন। ভাড়া ৬৫ টাকা। এটা মদনপুর দিয়ে যায়। আর গুলিস্তান থেকে যেতে চাইলে দোয়েল/স্বদেশ পরিবহনে মদনপুর নেমে ওখান থেকে ওখান থেকে আড়াইহাজার এর সি এন জি নিতে পারবেন। লোকাল জনপ্রতি ভাড়া ৫০ টাকা।

আর ঢাকার  কলাবাগান থেকে পাবেন মেঘলা পরিবহনের বাস। এগুলোতে গেলে নামতে হবে ভুলতা/গাউসিয়া। ভাড়া ৬৫ টাকা। গাউসিয়া নেমে কিছুটা সামনে যেয়ে লোকাল সি এন জি তে আড়াইহাজার বাজার । এতে ভাড়া ৩০ টাকা।

আড়াইহাজার নেমে থানার মোড় থেকে সিএনজিতে যেতে হবে খাগকান্দা ঘাট। ভাড়া নিবে ৪০ টাকা। খাগকান্দা ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে চৌদ্দার চর ভ্রমণ করতে পারবেন। রিজার্ভ নৌকায় ভাড়া পড়বে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।

কখন যাবেন চৌদ্দার চর

আড়াই হাজারে একেক মৌসুমে একেক রকম দৃশ্য দেখা  যায়৷ বর্ষায় মেঘনা নদীতে পানি বেশি থাকে বলে অনেকে তখন ভ্রমণ করতে চান না। বলা যায় অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত চৌদ্দার চর ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। তখন নদী শান্ত থাকে। আড়াইহাজার এর চৌদ্দার চর এর বালি অনেক শক্ত। চোরাবালির কোন ভয় নেই। শীতে চরে অনেক রকমের শস্য ক্ষেত দেখা যায়। তখন হরেক রকমের পাখি আসে এখানে।

আড়াইহাজার উপজেলায় চৌদ্দার চর ছাড়াও আরো অনেকগুলো চর আছে। আপনি চাইলে নৌকা নিয়ে এসব চরে যেতে পারবেন। চৌদ্দারচর এর আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ১২৫ বছরের পুরানো স্কুল। ১০৫ বছরের পুরানো জমিদার বাড়ি। শদাসদি ভুইয়া বাড়ি (জমিদার বাড়ি), আড়াইহাজার চৌধুরী পাড়া রাজ বাড়ি। কয়েকশ বছরের পুরানো বটগাছ ইত্যাদি। এছাড়া যাবার পথে  রাস্তার পাশেই লতব্দি মোড়ে কাতান শাড়ীর শিল্প, গামছা শিল্পের তাঁতঘর চোখে পড়বে। কম দামে ভাল কাতান শাড়ি কিনতে পারবেন এখান থেকে।

কোথায় খাবেন

চৌদ্দারচর এ কোনো খাবারের দোকান নেই। খাওয়ার জন্য আপনাকে নিকটস্থ আড়াইহাজার বাজারে আসতে হবে। আড়াইহাজারে খাবারের বেশ কিছু দোকান আছে। এখানে আপনি দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারবেন। এছাড়া দস্তরদি মোড়ে চাচার মালাই চা, আড়াইহাজার বাজারে জিয়ার ডাল পুরি, পাশেই আরেকটা দোকানে আলু পুরি, নোয়াপাড়া ব্র্যাক এর পাশে ডাল পুরি, গোপালদি বাজার এ নাজিমুদ্দিন হোটেল এর গরুর মাংসের টেস্ট নিতে পারেন ভ্রমণে গেলে।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য আড়াইহাজার বা চৌদ্দারচর এ কোনো ব্যবস্থা নাই। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা ভালো। তবে কেউ একান্তই থাকতে চাইলে আড়াইহাজার এর জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে থাকতে পারবেন। মোবাইল নম্বর ০১৯১৭-০০৮-৪৯৬।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

আড়াইহাজার বা চৌদ্দার চর কোনো পর্যটন এলাকা না। এটি সম্পূর্ণ নদী কেন্দ্রীক একটি জনপদ। যারা সাদামাটা প্রকৃতি পছন্দ করেন, তাদের ভালো লাগবে। সাঁতার না জানলে নদীতে নামবেন না। প্রয়োজনে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন। বর্ষায় মেঘনা নদীতে পানির স্রোত অনেক বেশি ও নদী উত্তাল থাকে। পরিবার নিয়ে যেতে চাইলে বর্ষায় না যাওয়াই ভালো। ভ্রমণের সময় স্থানীয় মানুষজন ও নৌকার মাঝির সাথে ভালো ব্যবহার করুন। যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলবেন না। এটা শুধু ঘুরতে গিয়ে না, এমনকি শহরেও।

আরো পড়ুন

চন্দ্রনাথ পাহাড়

চন্দ্রনাথ পাহাড় চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায়। একপাশে সাগর আর অন্যপাশে পাহাড়; এই দুই মিলে সীতাকুন্ডের প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্রকে করেছে অনন্য। সীতাকুন্ড বাজার থকে এর দুরত্ব ৪ কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ১১৫২ ফুট। পাহাড় চূড়া থেকে সমুদ্র দর্শনের চমৎকার অভিজ্ঞতা পাবেন এই ভ্রমণে। চন্দ্রনাথের চূড়ায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের একটি মন্দির আছে। যেটি চন্দ্রনাথ মন্দির নামে পরিচিত। চট্টগ্রাম সহ এই অঞ্চলটি দীর্ঘকাল আরাকানের দখলে ছিলো। পরবর্তীতে দখল এর নেয় পর্তুগীজরা। ষোড়শ শতকে মোঘলরা পর্তুগীজ ও আরাকানীদের হটিয়ে এই অঞ্চল দখলমুক্ত করেন।

কিভাবে যাবেন চন্দ্রনাথ পাহাড়

চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান আছে। এই অঞ্চলকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার বলা যায়। চন্দ্রনাথ পাহাড় যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি সীতাকুন্ড আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। এসব টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন সহ সব বড় কোম্পানির বাস আছে এই রুটে। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত যেতে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

ট্রেনে সীতাকুন্ড

ঢাকা থেকে সীতাকুন্ডের সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই সীতাকুন্ড বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে সীতাকুন্ডের বাস ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।

যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে সীতাকুন্ড বাজারে আসা যাবে।

সীতাকুন্ড থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়

সীতাকুন্ড থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড় এর গেট ৪ কিলোমিটার। রিকশা বা সিএনজিতে করে গেট পর্যন্ত যেতে পারবেন। পাহাড়ে উঠার আগে ছোট্ট একটি ঝর্ণা (ক্যাসকেড) পাবেন। এখান থেকে রাস্তা রাস্তা দুই ভাগ হয়ে গেছে। বাম পাশের রাস্তা পাহাড়ি, আর ডান পাশের রাস্তায় সিড়ি করা আছে। উপরে উঠার সময় পাহাড়ি পথ দিয়ে উঠাই সুবিধাজনক। সময়ও কম লাগে। আর নামার সময় সিঁড়ি পথ দিয়ে নামুন, এতে সুবিধা হবে। পাহাড়ের গোড়া থেকে চূড়া পর্যন্ত উঠতে সর্বোচ্চ দেড় ঘন্টা সময় লাগবে রিলাক্সে উঠতে। এটি মূলত আপনার হাঁটার গতির উপর নির্ভর করে। উপরে উঠা কিছুটা পরিশ্রমসাধ্য কাজ হলেও, চূড়ায় উঠার পর চারপাশের সৌন্দর্য দেখে আপনি সব কষ্ট ভুলে যাবেন। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হবেন। পাহাড়ের শুরুতে মাঝখানে ও চূড়ায় টং দোকান আছে। হালকা খাবার খেতে পারবেন এখান থেকে।

কোথায় থাকবেন

সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।

কোথায় খাবেন

সীতাকুন্ড বাজারে বেশ কিছু খাবারের দোকান আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া, আল আমিন ও আপন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এখানে আপনি ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ডাল, সবজি ইত্যাদি মেন্যু হিসেবে পাবেন। খাবার খরচ পড়বে প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো। রাতের বাসে গেলে সকালের ব্রেকফাস্টও এখানে সেরে নিতে পারেন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

চন্দ্রনাথ পাহাড় এর তিন পাশে ঘন জঙ্গল। কোনো লোকালয় নেই। রাতের বাসে চন্দ্রনাথ পাহাড় ভ্রমণে গেলে ভোর পাঁচটার মধ্যেই সীতাকুন্ড বাজারে পৌঁছে যাবেন। ভোরের আলো ফোটার পরপরই চন্দ্রনাথ রওনা করবেন না। এর আগে আকাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ভোরে পাহাড়ে চলে যাওয়ার কারণে। তাই অন্তত সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর রওনা করুন। এর আগে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে নিন স্থানীয় কোনো রেস্টুরেন্টে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ছোটলোকি। ভুলেও এই কাজ করবেন না, গোপনেও না। জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে অনেকগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান রয়েছে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। চন্দ্রনাথ পাহাড় এর একদম কাছাকাছি আছে সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। ইকোপার্ক এর ভিতরে আছে সুপ্তধারাসহস্রধারা নামে আলাদা দুইটা জলপ্রপাত। আছে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। গুলিয়ালীর কাছাকাছি বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। আর হাইওয়ে ধরে ঢাকার দিকে দশ কিলোমিটার এগুলে পাবেন কমলদহ ঝর্ণা। যদি বিশ কিলোমিটার যান তাহলে  খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার ট্রেইল পাড়বে। মিরসরাইতে আরো আছে এই রুটের সবচেয়ে এডভেঞ্চারাস সোনাইছড়ি ট্রেইল

আরো পড়ুন

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ও ট্রেইল

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা (Napittachora Waterfalls) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত। এডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে এই ঝর্ণাটি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নাপিত্তাছড়া ট্রেইলে একাধিক ঝর্ণা ও কুম আছে কাছাকাছি। এগুলো হলো বান্দরকুম, কুপিকাটাকুম, বাঘবিয়ানি ঝর্ণা, টিপরাকুম। চারপাশে পাহাড়, ঘন জঙ্গল, ঝিরিপথ আর মনোমুগ্ধকর ট্রেইল এই ঝর্ণাকে অনন্যতা দিয়েছে। ৪/৫ ঘন্টা সময় নিয়ে গেলে পুরো ট্রেইল সুন্দরভাবে শেষ করে আসা সম্ভব। খৈয়াছড়া আর নাপিত্তাছড়া জলপ্রপাত এই রেঞ্জের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেইল।

কিভাবে যাবেন নাপিত্তাছড়া

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার নয়দুয়ারী (ন’দুয়ারী) বাজারে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি নয়দুয়ারী আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে মিরসরাই এর নয়দুয়ারী বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে নয়দুয়ারী পর্যন্ত যেতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

ট্রেনে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা

ঢাকা থেকে নয়দুয়ারী বাজারের সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই নয়দুয়ারী বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে নয়দুয়ারীর বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।

যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে নয়দুয়ারী বাজারে আসা যাবে।

নাপিত্তাছড়া ট্রেইল

নয়দুয়ারী বাজারে নেমে হাইওয়ের পূর্ব পাশে একটা রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তা ধরে ২০/২৫ মিনিট হাঁটলে রেললাইন। রেল লাইন পার হয়ে আবার সোজা ২০/২৫ মিনিট গেলে নাপিত্তাছড়া নামের একটা ত্রিপুরা পাড়া পাবেন। এখান থেকে ট্রেইল ও ঝিরিপথের শুরু। প্রথম ক্যাসকেড হিসেবে স্বাগত জানাবে টিপরা কুম। এরপর কুপিকাটা কুম। কুপিকাটা কুমের ডান পাশদিয়ে পাহাড়ের উপর উঠে কিছুদূর হেঁটে গেলে আবার ঝিরিপথ পাবেন। এই ঝিরিপথের শেষে বাগবিয়ানি ঝর্ণা, তার আগে পাবেন ট্রেইলের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণা বান্দরকুম।

যারা ট্রেকিংয়ে অভিজ্ঞ তারা সহজেই পথ চিনতে পারবেন। অভিজ্ঞতা না থাকলে নয়দুয়ারী বাজার বা রেললাইনের আশেপাশে কোনো বাড়ি থেকে কাউকে গাইড হিসেবে নিতে পারেন। গাইডকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হতে পারে। গাইড নিয়ে গেলে সবগুলো খুম, ক্যাসকেড ও ঝর্ণা সুন্দর ভাবে ঘুরে আসা যাবে কম সময়ে।

কোথায় থাকবেন নাপিত্তাছড়া

থাকার জন্য নয়দুয়ারী বাজারে কোনো হোটেল নাই। নিকটস্থ থাকার হোটেলের জন্য আপনাকে যেতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। বড়তাকিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটারের মতো।

কোথায় খাবেন

নয়দুয়ারী বাজার থেকে কিছুদূর গেলে একটা খাবারের দোকান আছে। যাওয়ার সময় খাবার অর্ডার করে গেলে ফেরার পথে খেতে পারবেন। সেখানে খাবার না পেলে মিরসরাই বাজারে এসে খেতে হবে। তাই সাথে কিছু শুকনো খাবার ও পানি বহন করুন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। শুকনো মৌসুমে এখানে পানি থাকেনা। তাই বর্ষাতেই ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। ঝর্ণার ট্রেইল যত সহজ মনে হোক না কেন, ঝর্ণা মানেই এদিক ওদিক বিপদ ওৎ পেতে থাকে। এজন্য প্রতি পদে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ট্রেইলে প্রতিটা স্টেপে নিজের কমনসেন্স ব্যাবহার করুন। গ্রুপ করে ঘুরতে যাওয়াই ভালো। ক্যাম্পিং করতে চাইলে ক্যাম্পিং এর বেসিক জেনে যাবেন। রাতে আগুন জ্বালালে সকালে সেগুলোর ছাই পরিষ্কার করে আসতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ছোটলোকি। ভুলেও এই কাজ করবেন না, গোপনেও না। জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডকে বলা যায় ঝর্ণা উপত্যকা। নাপিত্তাছড়া ট্রেইলে গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। নাপিত্তাছড়ার একদম কাছাকাছি আছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর কমলদহ ঝর্ণা। এছাড়া বিশ কিলোমিটার দূরের চন্দ্রনাথ পাহাড় কিংবা গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতেও যেতে পারেন। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের কাছেই সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। ইকোপার্ক এর ভিতরে আছে সুপ্তধারা ও  সহস্রধারা নামে দুইটা মায়াবী জলপ্রপাত।

আরো পড়ুন

কমলদহ ঝর্ণা

চট্টগ্রামের মিরসরাই সীতাকুন্ড রেঞ্জকে বলা যায় ঝর্ণা উপত্যাকা। মীরসরাই ও সীতাকুন্ডে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য ঝর্ণা, ঝিরি, ট্রেইল ও ক্যাসকেড। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ঝর্ণা হলো কমলদহ ঝর্ণা।  এটি মোটামোটি সহজ ট্রেইল। তাই অল্প সময়ে এই ঝর্ণা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে। কমলদহ ট্রেইলে অনেকগুলো ঝর্ণা আছে। প্রথম ঝর্ণার উপরে উঠে কিছুদূর গেলে ট্রেইল ভাগ হয়ে গেছে ডানে বাঁয়ে। যেদিকেই যান ছোটছোট আরো কিছু ঝর্ণা আর ক্যাসকেডের দেখা মিলবে।

কিভাবে যাবেন

কমলদহ ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার বড় দারোগাহাট বাজারে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি বড়দারোগারহাট আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে সীতাকুন্ডের দারোগাহাট বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে দারোগাহাট পর্যন্ত যেতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

ট্রেনে কমলদহ ঝর্ণা

ঢাকা থেকে বড়দারোগাট এর সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই বড়দারোগাহাট যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে বড়দারোগারহাট এর বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।

কমলদহ ঝর্ণা ট্রেইল

বড়দারোগাহাট থেকে মহাসড়ক ধরে ঢাকার দিকে কিছুদূর হাঁটলে রাস্তার ডান পাশে একটি ইটভাটার দেখা মিলবে। ইট ভাটার পাশ দিয়েই একটি মাটির রাস্তা নেমে গেছে। সেই রাস্তা ধরে সোজা বিশ মিনিট হেঁটে গেলে ঝিরিপথ পাবেন। এই ঝিরি থেকেই মূলত কমলদহ ট্রেইলের শুরু। ঝিরিপথ ধরেই বাকিপথটুকু হাঁটতে হবে। মোটামুটি একঘন্টার হাঁটাপথ।

কমলদহ ঝর্ণার তিনটি ধাপ। নিচ থেকে শুধু প্রথম ধাপই দেখা যায়। বাকি ধাপগুলো দেখতে ঝর্ণার উপরে উঠা লাগবে। ঝর্ণার উপরে উঠে কিছুদূর গেলে দেখবেন ঝিরিপথ ডানে বামে দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। বামের ঝিরিপথ দিয়ে কিছুদূর গেলে আবারো ঝিরিপথ ডানে বামে ভাগ হয়ে যাবে। এবার বামের দিকে কিছুদূর গেলে ছাগলকান্দা ঝর্ণা পাবেন। আর ডানের দিকে গেলে শেষমাথায় নামহীন সুন্দর দুইটি ঝর্ণা চোখে পড়বে।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য বড়দারোগাহাট বাজারে কোনো আবাসিক হোটেল নাই। তবে সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। বড়দারোগাহাট থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটারের মতো।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

কমলদহ ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। শুকনো মৌসুমে এখানে পানি খুব কম থাকে। তাই বর্ষাতেই ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। বড়দারোগাহাট এর পর কোথাও খাবার দোকান পাবেন না। নিজের সাথে খাবার বহন করুন। ঝর্ণার ট্রেইল যত সহজ মনে হোক না কেন, ঝর্ণা মানেই এদিক ওদিক বিপদ ওৎ পেতে থাকে। এজন্য প্রতি পদে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ট্রেইলে প্রতিটা স্টেপে নিজের কমনসেন্স ব্যাবহার করুন।

গ্রুপ করে ঘুরতে যাওয়াই ভালো। ঝিরিপথ যেখান থেকে শুরু সেখানে কয়েকটি বাড়িঘর আছে। প্রয়োজন বোধ করলে সেখান থেকে কোনো ছেলেকে গাইড হিসেবে নিতে পারেন। ক্যাম্পিং করতে চাইলে ক্যাম্পিং এর বেসিক জেনে যাবেন। রাতে আগুন জ্বালালে সকালে সেগুলোর ছাই পরিষ্কার করে আসতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ছোটলোকি। ভুলেও এই কাজ করবেন না, গোপনেও না। জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডকে বলা যায় ঝর্ণা উপত্যকা। কমলদহ ট্রেইলে গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। কমলদহ ঝর্ণা এর ঢাকার দিকে দশ কিলোমিটার আগে আছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা। আর চট্টগ্রামের দিকে দশ কিলোমিটার গেলে পড়োবে চন্দ্রনাথ পাহাড় কিংবা গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। চন্দ্রনাথ এর কাছেই সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। আর ইকোপার্ক এর ভিতরে আছে সুপ্তধারাসহস্রধারা নামে দুইটি মায়াবী ঝর্ণা।

 

আরো পড়ুন

খৈয়াছড়া ঝর্ণা

খৈয়াছড়া ঝর্ণা (Khoiyachora Waterfalls) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত। বড়তাকিয়া বাজার থেকে এর দূরত্ব ৪.২ কিলোমিটার।  গঠনগত দিক দিয়ে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণা গুলোর একটি। চারপাশে পাহাড়, ঘন জঙ্গল, ঝিরিপথ আর মনোমুগ্ধকর ট্রেইল এই ঝর্ণাকে অনন্যতা দিয়েছে। আপনি যখন ট্রেকিং করে ক্লান্ত অবস্থায় ঝর্ণার সামনে এসে দাঁড়াবেন তখন এক নিমিষে আপনার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। এডভেঞ্চারপ্রেমীদের অনেকে খৈয়াছড়াকে ঝর্ণার রাণী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। খৈয়াছড়া ঝর্ণায় মোট নয়টি ধাপ রয়েছে। প্রত্যেকটা ধাপেরই আছে আলাদা সৌন্দর্য! কোনোদিন জোছনা রাতে যদি এখানে ক্যাম্পিং করতে পারেন, তাহলে সেই সময়গুলো আপনার আজীবন মনে থাকবে। চাঁদের আলো, ঝিঝির ডাক, জোনাক পোকা আর ঝর্ণার জলের অবিরাম শব্দ আপনাকে বিমোহিত করে রাখবে পুরোটা সময়। নাপিত্তাছড়া ও খৈয়াছড়া এই রেঞ্জের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঝর্ণা।

 

খৈয়াছড়া ঝর্ণা | Khoiyachora Waterfalls | Green Belt Travel Guide

 

কিভাবে যাবেন

খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া বাজারে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি বড়তাকিয়া আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে মিরসরাই এর বড়তাকিয়া বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে বড়তাকিয়া পর্যন্ত যেতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

ট্রেনে খৈয়াছড়া ঝর্ণা

ঢাকা থেকে বড়তাকিয়ার সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই বড়তাকিয়া বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে বড়তাকিয়ার বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।

যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে বড়তাকিয়া বাজারে আসা যাবে।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা ট্রেইল

বড়তাকিয়া বাজারে নেমে সিএনজিতে করে খৈয়াছড়া ঝর্ণার ঝিরিপথ পর্যন্ত আসা যাবে। সিএনজি ভাড়া নিবে ১০০ টাকা। চাইলে এই পথটুকু হেঁটেও আসতে পারবেন। স্থানীয় যে কাউকে বললে পথ দেখিয়ে দিবে। বাজার থেকে ঝিরিপথের দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার। যেখান থেকে ঝিরিপথ শুরু, সেখান থেকে ট্রেকিংও শুরু।

শুরুতে বাড়িঘর, ধানক্ষেত, তারপর পাহাড় জঙ্গলের মঝখান দিয়ে ট্রেইল। প্রায় ৪৫ মিনিট হাঁটার পর আপনি ঝর্ণার প্রথম ধাপে পৌঁছে যাবেন। এখানে পথ হারানোর ভয় নেই। ছুটির দিনগুলোতে সাধারণত অনেক পর্যটকের দেখা পাবেন একই পথে। ঝিরিপথের শুরুতে অনেক বাড়িঘর আছে। চাইলে সেখান থেকে কাউকে গাইড হিসেবে নিতে পারে। গাইড ফি দিতে হবে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।

ঝর্ণার প্রথম ধাপে পৌঁছানোর পর বাকি ধাপগুলোতে উঠার রাস্তা পেয়ে যাবেন একটু খেয়াল করলে। তবে সাবধানে ট্রেকিং করতে হবে। সামান্য সাবধান হয়ে ট্রেকিং করা কোনো পর্যটকের এখন পর্যন্ত কোনো দূর্ঘটনা ঘটেনি খৈয়াছড়াতে। কিন্তু অতিরিক্ত এডভেঞ্চার করতে যাওয়া, হৈ হল্লা লম্ফঝম্প করা প্রচুর পর্যটক সেখানে গিয়ে দূর্ঘটনায় পড়েছে। তাই এমন কিছু থেকে বিরত থাকুন।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য খৈয়াছড়া বা বড়তাকিয়া বাজারে কোনো হোটেল নাই। খৈয়াছড়া গ্রামে কারো বাড়িতে থাকতে চাইলে স্থানীয় চেয়ারম্যান এর অনুমতি নিতে হবে।  অথবা নিকটস্থ থাকার হোটেলের জন্য আপনাকে যেতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। বড়তাকিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটারের মতো।

কোথায় খাবেন

ঝিরিপথের শুরুতে বেশ কিছু খাবারের দোকান আছে। যাওয়ার সময় খাবার অর্ডার করে গেলে ফেরার পথে খেতে পারবেন। এসব খাবারের দোকানে মাছ মাংস ভাত ডাল ইত্যাদি পাবেন। অন্যান্য দোকানের সাথে সেখানে রয়েছে ফখরুল মিয়ার দোকান। ফখরুলকে গ্রিন বেল্ট ট্রাভেল গ্রুপ এর রেফারেন্স দিলে আপনি দিকনির্দেশনা সহ সব কিছুতে ভালো আতিথেয়তা পাবেন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। শুকনো মৌসুমে এখানে পানি কমে যায়। তাই বর্ষাতেই ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। ঝর্ণার ট্রেইল যত সহজ মনে হোক না কেন, ঝর্ণা মানেই এদিক ওদিক বিপদ ওৎ পেতে থাকে। এজন্য প্রতি পদে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ট্রেইলে প্রতিটা স্টেপে নিজের কমনসেন্স ব্যাবহার করুন। গ্রুপ করে ঘুরতে যাওয়াই ভালো। ক্যাম্পিং করতে চাইলে ক্যাম্পিং এর বেসিক জেনে যাবেন। রাতে আগুন জ্বালালে সকালে সেগুলোর ছাই পরিষ্কার করে আসতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ছোটলোকি। ভুলেও এই কাজ করবেন না, গোপনেও না।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডকে বলা যায় ঝর্ণা উপত্যকা। খৈয়াছড়া ঝর্ণা অভিযানে গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। খৈয়াছড়ার একদম কাছাকাছি আছে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ও কমলদহ ঝর্ণা। বিশ কিলোমিটার দূরের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত কিংবা চন্দ্রনাথ পাহাড়ও চাইলে একই দিন কাভার করতে পারবেন। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের কাছে আছে সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। ইকোপার্ক এর ভিতরে আছে সুপ্তধারাসহস্রধারা নামে দুইটা ঝর্ণা।  আর ঝর্ণায় গিয়ে ক্লান্ত থাকায় আবার পাহাড়ে যেতে না চাইলে মহামায়া লেকে ঘুরে আসতে পারেন।

আরো পড়ুন

বালিখলা

দিগন্ত বিস্তৃত হাওর। চারদিকে থইথই পানি। এর মাঝখান দিনে চলে গেছে রাস্তা। এরকম ছবির মতো সুন্দর একটি জায়গা কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা! প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রস্তাটি চলে গেছে বালিখলা থেকে নিয়ামতপুর পর্যন্ত। হাওর থেকে রাস্তাটি বেশ উঁচু হওয়ায় বর্ষাকালেও এটি ডুবে যায়না। এখান থেকে আপনি চাইলে নৌকা নিয়ে হাওরে ভ্রমণ করতে পারবেন। ঢাকা থেকে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার জন্য বালিখোলা হতে পারে চমৎকার একটি স্থান।

কখন যাবেন বালিখলা

বছরের এক এক সময় হাওরের এক এক রূপ থাকে। তবে রাস্তার দুইপাশে পানি দেখতে চাইলে আপনাকে বর্ষাকালে বালিখলা আসতে হবে। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বালিখলা ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় আসতে।

কিভাবে যাবেন

বালিখলা যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার গোলাপবাগ থেকে অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। দিনে গিয়ে আবার ঐদিনই ঢাকায় ফিরে আসতে চাইলে আপনাকে সকাল ৭টার মধ্যে রওনা করতে হবে। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘন্টা। সেখান থেকে নিকলি হাওরের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। রিজার্ভ সিএনজি নিলে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হবে। যেতে সময় লাগে ১ ঘন্টা ২০ মিনিট এর মতো।

ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ

ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যেতে চাইলে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে যেতে হবে। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে এই ট্রেনটি সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১২৫ থেকে ২৫০ টাকা। কমলাপুর থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত যেতে প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা সময় লাগে। মনে রাখা দরকার আসার পথে আপনি ট্রেন পাবেন না। যদি ঐদিনই ফিরে আসতে চান তবে বাসেই ফিরতে হবে।

কিশোরগঞ্জ থেকে বালিখলা

কিশোরগঞ্জ নেমে রিকশা বা অটোরিকশায় করে আপনি চলে আসুন একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ডে। এখান থেকে রিজার্ভ সিএনজিতে বালিখোলা যেতে পারবেন। সময় লাগবে ১ ঘন্টা। ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। একরামপুর থেকে বালিখলার দূরত্ব প্রায় ১৯ কিলোমিটার। হাওরের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া বালিখলা রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার। রাস্তার শেষ মাথায় বালিখলা বাজার। এখান থেকে নৌকা নিয়ে হাওরে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এখানে নৌকা ভাড়া হয় ঘন্টাপ্রতি। প্রতি ঘন্টার জন্য নৌকা ভাড়া পড়োবে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। আপনার হাতে সময় থাকলে বালিখলা থেকে মিঠামইন ঘুরে আসতে পারেন। যেতে আসতে সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মতো।

কোথায় খাবেন

বালিখলায় খাওয়ার জন্য কোনো খাবারের দোকান নেই। ছোট কিছু টং দোকান পাবেন। সেখানে হালকা নাস্তা করা যাবে। ভারী খাবারের জন্য কিশোরগঞ্জেই আসতে হবে। অথবা যাত্রাপথে করিমগঞ্জ বাজারে থেকে খেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য কিশোরগঞ্জ শহরে ভালো মানের কিছু হোটেল পাবেন। এগুলোর মধ্যে হোটেল রিভারভিউ, ক্যাসেল সালাম, নিরালা, হোটেল গাঙচিল, উজানভাটি উল্লেখযোগ্য। এইসব হোটেলে থাকতে পারবেন। একদিনের জন্য ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

বালিখলা ভ্রমণে আপনি সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নৌকায় চড়বেন না। স্থানীয় লোকজন ও মাঝিদের সাথে মার্জিত আচরণ করুন। নৌকা ভাড়া নেওয়ার সময় দরদাম করে নিবেন ভালোমতো। মিঠামইনের কামালপুরে আছে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের গ্রামের বাড়ি। সময় পেলে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চাইলে সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। হাওর এলাকা খুবই পরিচ্ছন্ন জায়গা। যেখানে সেখানে অপচনশীল দ্রব্য ফেলবেন না।

আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

বালিখলা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিকলি হাওর, মিঠামইন হাওর, অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক, অষ্টগ্রাম হাওর ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক

কিশোরগঞ্জের চারটি উপজেলা হাওরবেষ্টিত। এগুলো হলো নিকলী, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা। বর্ষাকালে যখন হাওরাঞ্চল পানিতে কানায় কানায় ভরে উঠে। একসময় এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা একমাত্র নৌকার উপর নির্ভরশীল ছিলো। হাওরের প্রবাদও আছে “বর্ষাকালে নাও আর শুকনায় পাও” ; অর্থাৎ বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হাঁটাই যাতায়তের একমাত্র মাধ্যম। এখন দিন বদলেছে। বর্তমানে হাওরে যোগাযোগের জন্য নির্মিত হয়েছে অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সাবমারসিবল সড়ক। ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি অল ওয়েদার সড়ক নামে পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যানে  এটি এখন পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে!

কখন যাবেন

হাওর মূলত সব সিজনেই তার রূপ বদলায়। এক এক মৌসুমে আর এক এক রঙ। তবে অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক ভ্রমণের আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তখন হাওরের আসল রূপ দেখতে পাবেন। চারদিকে জলমগ্ন থাকে। তার মাঝখান দিয়ে চলে গেছে পিচ ঢালা কালো রস্তা। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাবমারসিবল রোড ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় যেতে।

কিভাবে যাবেন সাবমারসিবল রোড

অষ্টগ্রাম মিঠামইন রোড ভ্রমণের জন্য প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার গোলাপবাগ থেকে অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। দিনে গিয়ে আবার ঐদিনই ঢাকায় ফিরে আসতে চাইলে আপনাকে সকাল ৭টার মধ্যে রওনা করতে হবে।

ঢাকা থেকে চাইলে এগারোসিন্ধুর ট্রেনেও কিশোরগঞ্জ যেতে পারবেন। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে এই ট্রেনটি সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১২৫ থেকে ২৫০ টাকা। মনে রাখা দরকার আসার পথে আপনি ট্রেন পাবেন না, যদি ঐদিনই ফিরে আসতে চান। বাসেই ফিরতে হবে।

কিশোরগঞ্জ থেকে হাওর রোড

সাবমারসিবল রোড ভ্রমণ করতে চাইলে প্রথমে কিশোরগঞ্জ সদর থেকে করিমগঞ্জ বালিখোলা ঘাট যেতে হবে। কিশোরগঞ্জ সদর থেকে বালিখোলা ফেরী ঘাটের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। সেখান থেকে ফেরী দিয়ে ধনু নদী পার হয়ে মিঠামইন বাজার। নদী পার হতে ঘন্টাখানেক সময় লাগবে। বাজার থেকে একটু সামনে গেলে তিন রাস্তার মোড়। সেখানে সাইনবোর্ডে লিখা দেখবেন বামে ইটনা ডানে অষ্টগ্রাম। এরপর অল ওয়েদার সড়ক ধরে ইটনা বা অষ্টগ্রামের দিকে যেতে পারবেন। যে পথেই যান, একই পথে ফিরে আসতে হবে। দুইটা রাস্তাতেই যেতে চাইলে কিছুদূর গিয়ে ফিরে এসে অন্য রাস্তাতে যান। সেখানে ঘোরার জন্য মোটরবাইক বা ইজিবাইক ভাড়ায় পাবেন। তবে মোটরবাইক সবসময় নাও থাকতে পারে। কিশোরগঞ্জ থেকে যাওয়া আসা ঘোরাঘুরি মিলিয়ে আবার কিশোরগঞ্জ ফেরত আসতে ৬/৭ ঘন্টা সময় লাগবে। আপনি যদি নিকলী হাওর সহ ঐ রাস্তায় ঘুরতে চান তাহলে নিকলী বেড়িবাধ থেকে আপনাকে নৌকা রিজার্ভ নিতে হবে। দেড় ঘন্টার হাওর ভ্রমণ শেষে পৌছে যাবেন ঐ রাস্তায়।

কোথায় খাবেন

খাবারের জন্য অষ্টগ্রাম বা মিঠামইনে ভালো কোনো রেস্টুরেন্ট নাই। তবে মোটামুটি মানের অনেক খাবারের দোকান পেয়ে যাবেন। এসব দোকানে হাওরের তাজা মাছ, ভাত ভর্তা মাংস পাওয়া যায়। জনপ্রতি খাবার খরচ পড়োবে ১০০ থেকে ২০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

অষ্টগ্রাম বা মিঠামইনে থাকার জন্য সরকারী ডাক বাংলো আছে। থাকতে চাইলে আগে থেকে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া থাকার ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই। একান্তই থাকতে হলে কিশোরগঞ্জ শহরে এলে ভালো মানের কিছু হোটেল পাবেন। এগুলোর মধ্যে হোটেল রিভারভিউ, ক্যাসেল সালাম, নিরালা, হোটেল গাঙচিল, উজানভাটি উল্লেখযোগ্য। এইসব হোটেলে থাকতে পারবেন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

বর্ষায় হাওর ভ্রমণ এখন খুবই জনপ্রিয়। অষ্টগ্রাম মিঠামইন রোড ভ্রমণে অনেকে বাইক নিয়ে আসেন। অনেক বাইকারদেরকে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে উশৃঙ্খল বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাতে দেখা যায়। যার ফলে এখানে প্রতিনিয়ত মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। বাইকারদেরকে অতিরিক্ত গতিতে বাইক চালাতে নিরুৎসাহিত করা হলো। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নৌকায় চড়বেন না। স্থানীয় লোকজন ও মাঝিদের সাথে মার্জিত আচরণ করুন। নৌকা ভাড়া নেওয়ার সময় দরদাম করে নিবেন ভালোমতো। অষ্টগ্রামের রয়েছে ৪০০ বছরের পুরনো পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট কুতুবশাহ মসজিদ। আর মিঠামইনের কামালপুরে আছে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের গ্রামের বাড়ি। সময় পেলে এগুলোতেও ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। অষ্টগ্রাম মিঠামইন রোড খুবই পরিচ্ছন্ন জায়গা। যেখানে সেখানে অপচনশীল দ্রব্য ফেলবেন না।

আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

অষ্টগ্রাম মিঠামন ইটনা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিকলি হাওর, মিঠামইন হাওর, বালিখলা হাওর, অষ্টগ্রাম হাওর ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

মিঠামইন হাওর

মিঠামইন হাওর এর অবস্থান কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায়। হাওর মানেই চারদিকে থইথই পানি, ছোট নৌকায় মানুষের কর্মচাঞ্চল্যতা, হাওরের পানিতে দ্বীপের মতো ভেসে থাকা গ্রাম। ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে হাওর আলাদা বিশেষত্ব বহন করে। বর্ষায় হাওর মানেই এক ভিন্ন রকম প্রকৃতি, ভিন্ন রকমের জীবনধারা। নিজের দৈনন্দিন জীবন থেকে কিছুটা সময় বের করে বর্ষায় একবার হাওর জীবন উপভোগ করতেই পারেন। মিঠামইন এর চারপাশে রয়েছে কিশোরগঞ্জের অন্য তিনটি হাওর উপজেলা ইটনা, অষ্টগ্রাম ও নিকলী। তাই বলা চলে ভ্রমণের জন্য আদর্শ একটি জায়গা। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়ি এই উপজেলার কমলাপুর গ্রামে। চাইলে ভ্রমণের সময় সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসতে পারেন।

কখন যাবেন মিঠামইন হাওর

হাওরের প্রকৃতি একেক সিজনে একেক রকম। হাওর সব মৌসুমেই তার রূপ বদলায়। মিঠামইন হাওর ভ্রমণে আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তখন হাওরের আসল রূপ দেখতে পাবেন। চারদিকে জলমগ্ন থাকে। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিঠামইন ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় যেতে।

কিভাবে যাবেন

মিঠামইন যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার মহাখালী গোলাপবাগ ও সায়েদাবাদ থেকে অনন্যা, অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যেতে সময় লাগে সাড়ে তিন ঘন্টার মতো।

ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ

ট্রেনে মিঠামইন যেতে চাইলে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে আসতে হবে। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে এই ট্রেনটি সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। চাইলে বিমানবন্দর  থেকেও উঠতে পারবেন। এটি টঙ্গী, নরসিংদী ও ভৈরব বাজার ইস্টিশন হয়ে কিশোরগঞ্জ যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১৩০ থেকে ২৮০ টাকা। কমলাপুর থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত যেতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লাগে।

কিশোরগঞ্জ থেকে মিঠামইন হাওর

কিশোরগঞ্জে বাস বা ট্রেন থেকে নেমে প্রথমে একরামপুর বাস/সিএনজি স্টেশনে যেতে হবে। একরামপুর থেকে লোকাল সিনজি বা অটোরিকশা নিয়ে চামড়া বন্দর ঘাট। ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে মিঠামইন হাওর ঘুরে আসতে পারবেন। ভ্রমণের জন্য নৌকা ভাড়া হয়ে থেকে ঘন্টা হিসেবে। ঘন্টাপ্রতি ভাড়া নিবে ২৫০-৩৫০ টাকার মতো। আপনি চাইলে সারাদিনের জন্যও নৌকা ভাড়া করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে খরচ কমে আসবে। চামড়া ঘাট থেকে নৌকায় মিঠামইন যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টার মতো।

মিঠামইনে হাওর বাদেও দেখার মতো অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। এর মধ্যে মালিকের দরগা, দিল্লির আখড়া ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এর বাড়ি উল্লেখযোগ্য। এই অঞ্চলে অনেক ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার এখনো প্রচলন আছে। যেমন নৌকা বাইচ, লাঠিখেলা ইত্যাদি। বর্ষায় প্রায়ই নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয় মিঠামইন হাওরে। আগে থেকে খোঁজ খবর নিয়ে গেলে এই খেলাটি দেখতে পারবেন। নৌকা বাইচ এর স্মৃতি আপনার অনেকদিন মনে থাকবে।

কোথায় থাকবেন

মিঠামইনে থাকার ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই। তারপরও কোনো কারণে চাইলে শিকদার হোটেল ও সোহেল গেস্ট হাউজে থাকতে পারবেন। এগুলো সাধারণ মানের বোর্ডিং। এছাড়া উপজেলা ডাকবাংলোতে থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে আগে থেকে যোগাযোগ করে যেতে হবে। অথবা কিশোরগঞ্জ শহরে হোটেল রিভারভিউ, ক্যাসেল সালাম, নিরালা, হোটেল গাঙচিল, উজানভাটি নামে ভালো মানের কিছু হোটেল রয়েছে। এগুলোতে থাকতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

খাওয়ার জন্য মিঠামইন বাজারে মোটামুটি মানের কয়েকটি খাবারের দোকান আছে। এসব রেস্টুরেন্টে ভাত ভর্তার সাথে মিঠামইন হাওরের হরেক রকম তাজা মাছের আইটেম পাবেন। জনপ্রতি খাবার খরচ পড়োবে ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। মিঠামইন হাওরে রাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাধারণ মানের। বড় গ্রুপ না হলে রাতে নৌকায় রাত না কাটানোই শ্রেয়। নৌকা ভাড়ার বিষয়টা ওইদিনের পর্যটক সমাগমের উপর নির্ভর করে। সাধারণত শুক্রবার বা সরকারী ছুটির দিনে নৌকা ভাড়া কিছুটা বেশি থাকে। স্থানীয় মাঝি ও অন্যান্যদের সাথে সবসময় ভালো ব্যবহার করুন। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।

আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

অষ্টগ্রাম মিঠামন ইটনা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিকলি হাওর, অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক, বালিখলা হাওর, অষ্টগ্রাম হাওর ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

অষ্টগ্রাম হাওর

অষ্টগ্রাম হাওর এর অবস্থান কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলায়। কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। যতদূর চোখ যায় চারপাশে থইথই পানি, সেই পানির মাঝখানে ভেসে থাকা দ্বীপের মতো ছোট ছোট গ্রাম। নৌকায় মানুষের দৈনন্দিন যাতায়ত, জেলেদের মাছ ধরার কর্মচাঞ্চল্যতা। সব মিলিয়ে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে বেড়ানোর জন্য আদর্শ একটি জায়গা অষ্টগ্রাম হাওর।

কখন যাবেন অষ্টগ্রাম হাওর

হাওর মূলত সব সিজনেই তার রূপ বদলায়। এক এক মৌসুমে আর এক এক রঙ। তবে অষ্টগ্রাম হাওর ভ্রমণের আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তখন হাওরের আসল রূপ দেখতে পাবেন। চারদিকে জলমগ্ন থাকে। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অষ্টগ্রাম হাওর ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় যেতে।

কিভাবে যাবেন

অষ্টগ্রাম হাওর যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ জেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে কিশোরগঞ্জ আসা যায়। ঢাকার গোলাপবাগ থেকে অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। বাস থেকে নামবেন কুলিয়ারচর। কুলিয়ার লঞ্চ ঘাট থেকে সকাল ৮টা থেকে এক দেড় ঘন্টা পরপর লঞ্চ ছাড়ে অষ্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। ভাড়া ৯০ টাকা। চাইলে স্পিডবোটেও যেতে পারবেন অষ্টগ্রাম। সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া পড়োবে ২০০ থকে ২৫০ টাকা। আর বেশি মানুষ গেলে নৌকাও রিজার্ভ করতে পারবেন ঘাট থেকে।

ঢাকা থেকে ট্রেনেও অষ্টগ্রাম হাওর যেতে পারবেন। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে সকাল সাতটায় কিশোরগঞ্জগামী এগারোসিন্ধুর ট্রেন ছেড়ে যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১১০ থেকে ২৫০ টাকা। ট্রেন থেকে নামবেন কুলিয়ারচর ইস্টিশনে। তারপর লঞ্চঘাট থেকে একইভাবে অষ্টগ্রাম যেতে পারবেন।

অন্যকোনো ট্রেনে গেলে ভৈরব বাজার ইস্টিশনে নেমে সেখান থকে সিএনজিতে কুলিয়ারচর আসা যাবে। ভৈরব বাজার থকে কুলিয়ারচরের লোকাল সিএনজি ভাড়া ৪০ টাকা। রিজার্ভ নিলে ২শ টাকার নিবে।

কোথায় থাকবেন অষ্টগ্রাম হাওর

অষ্টগ্রামে থাকার ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই। তারপরও কোনো কারণে চাইলে উপজেলা ডাকবাংলোতে থাকতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আগে থেকে যোগাযোগ করে যেতে হবে। আর কয়েকজন একসাথে গেলে নৌকাতেও রাত্রিযাপন করতে পারবেন। জোছনা রাতে হাওরে কাটাতে পারলে আপনার অনেকদিন সেই স্মৃতি মনে থাকবে। ১৫ জনের বেশি মানুষ হলে রাত্রিযাপনের আগে থানায় রিপোর্ট করতে হয়। রাতে হাওরে নৌকায় থাকলে নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন।

কোথায় খাবেন

খাওয়ার জন্য অষ্টগ্রাম বাজারে সাধারণ মানের কয়েকটি খাবারের দোকান আছে। এসব রেস্টুরেন্টে ভাত ভর্তার সাথে অষ্টগ্রাম হাওরের হরেক রকম তাজা মাছের আইটেম পাবেন। জনপ্রতি খাবার খরচ পড়োবে ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পনির এখানেই পাওয়া যায়। পনির খেতে চাইলে আগেরদিন রাতে স্থানীয় পনির বিক্রেতাদের জানিয়ে রাখতে হবে।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। অষ্টগ্রাম হাওরে রাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাধারণ মানের। বড় গ্রুপ না হলে রাতে নৌকায় রাত না কাটানোই শ্রেয়। আর নৌকা ভাড়ার বিষয়টা ওইদিনের পর্যটক সমাগমের উপর নির্ভর করে। সাধারণত শুক্রবার বা সরকারী ছুটির দিনে নৌকা ভাড়া কিছুটা বেশি থাকে। রাতে যেখানে সেখানে নৌকা না রেখে, অষ্টগ্রাম বাজারের কাছাকাছি নোঙ্গর করুন। স্থানীয় মাঝি ও অন্যান্যদের সাথে সবসময় ভালো ব্যবহার করুন। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।

অষ্টগ্রামের উত্তরে কিশোরগঞ্জের ইটনা ও মিঠামইন। দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর। পূর্বে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই ও পশ্চিমে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা। এগুলোও হাওর এলাকা। এসব এলাকায় গেলে সেখান থেকে অষ্টগ্রাম বেড়িয়ে আসতে পারেন সহজেই। কিংবা অষ্টগ্রাম গেলে হাতে সময় থাকলে এর যেকোনোটিতে ঘুরে আসতে পারবেন।

আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

অষ্টগ্রাম মিঠামন ইটনা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিকলি হাওর, অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক, বালিখলা হাওর, মিঠামইন হাওর ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

নিকলী হাওর

নিকলী হাওর (Nikli Haor) কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলি উপজেলায় অবস্থিত। কিশোরগঞ্জ সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। প্রকৃতি এখানে তার রূপের পসরা সাজিয়ে রেখেছে ভ্রমণপ্রেমীদের আতিথেয়তা দিয়ে। চারদিকে বিস্তৃর্ণ জলরাশি, থইথই পানি, এর মাঝখানে দ্বীপের মতো ভেসে আছে ছোট ছোট গ্রাম। এর মধ্যেও জেলেদের মাছ ধরার কর্মচাঞ্চল্যতা। ঢাকা থেকে একদিনে বেড়িয়ে আসার মতো আদর্শ একটি জায়গা নিকলি হাওর। ইচ্ছে হলে বড় নৌকা ভাড়া নিয়ে রাতেও থাকতে পারবেন এখানে।

নিকলী হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বছরের এক এক সময় হাওরের এক এক রূপ থাকে। তবে পানি দেখতে চাইলে আপনাকে বর্ষাকালে নিকলি আসতে হবে। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিকলী হাওর ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় আসতে।

নিকলী যাওয়ার উপায়

নিকলী হাওর যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার গোলাপবাগ থেকে অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। দিনে গিয়ে আবার ঐদিনই ঢাকায় ফিরে আসতে চাইলে আপনাকে সকাল ৭টার মধ্যে রওনা করতে হবে। বাস থেকে নামতে হবে কিশোরগঞ্জের আগেই কটিয়াদি বাস স্ট্যান্ডে। ঢাকা থেকে কটিয়াদি পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা। সেখান থেকে নিকলি হাওরের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। রিজার্ভ সিএনজি নিলে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হবে। যেতে সময় লাগে ১ ঘন্টা ২০ মিনিট এর মতো।

ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ

নিকলী হাওরে ডে ট্যুর দিতে চাইলে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে আসতে হবে। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে এই ট্রেনটি সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১২৫ থেকে ২৫০ টাকা। সবচেয়ে ভালো হবে কিশোরগঞ্জের আগে গচিহাটা ইস্টিশনে নেমে যেতে পারলে। এখানেও ট্রেন থামে। কমলাপুর থেকে গচিহাটা পর্যন্ত যেতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লাগে। সেখান থেকে নিকলীর দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সিএনজি রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মতো। যেতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট। মনে রাখা দরকার আসার পথে আপনি ট্রেন পাবেন না, যদি ঐদিনই ফিরে আসতে চান। বাসেই ফিরতে হবে।

কিশোরগঞ্জ থেকে নিকলী হাওর

কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকেও নিকলি হাওর যেতে পারবেন। কিশোরগঞ্জ রেল ইস্টিশনের পাশেই আছে নিকলি যাওয়ার সিএনজি ইস্টিশন। ওখান থেকে নিকলীর দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। লোকাল সিএনজিতে ভাড়া জনপ্রতি ৭০ টাকা। আর রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টার মতো।

ভৈরব থেকে নিকলী হাওর

ভৈরব বাজার থেকে লোকাল কিংবা রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে নিকলী হাওর যাওয়া যায়। লোকাল সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ১২০ টাকা। আর রিজার্ভ নিলে খরচ পড়োবে ৬০০ টাকা। ভৈরব থেকে সিএনজিতে নিকলি যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টার মতো। আপনি যেখান থেকে যেভাবে নিকলী হাওর যান না কেন, পথের দুই পাশের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। হাওরের কাছাকাছি যেতেই আপনার মন প্রশান্তিতে ভরে উঠবে।

কোথায় খাবেন

সিএনজি থেকে যেখানে নামবেন সেখানে মোটামোটি মানের কয়েকটি খাবারের দোকান আছে। তার মধ্যে হোটেল সেতু বা ক্যাফে ঢেউ উল্লেখযোগ্য। এসব রেস্টুরেন্টে ভাত ভর্তার সাথে নিকলী হাওরের হরেক রকম তাজা মাছের আইটেম পাবেন। জনপ্রতি খাবার খরচ পড়োবে ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো।

নিকলী হাওরে নৌকা ভ্রমণ

খাওয়া দাওয়া শেষে ইজিবাইকে বেড়ি বাঁধের শেষ প্রান্তে চলে আসুন। সেখান থেকে দরদাম করে নৌকা ঠিক করতে পারবেন। ছোট নৌকার ভাড়া ঘন্টাপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর বড় নৌকার ভাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। ছোট নৌকায় ৮/১০ জন আর বড়ো নৌকায় ৩০ জন বসতে পারবেন অনায়াসেই। দুই তিন ঘন্টার জন্য নৌকা নিলে ভাড়া একটু কমে আসবে।

চেষ্টা করবেন কমপক্ষে তিন ঘন্টা যেন নৌকায় ঘোরা যায়। নৌকায় উঠার পর প্রথমেই নৌকা নিয়ে চলে যান ছাতিরচর গ্রামে। এখানে আছে ছোটখাটো সোয়াম্প ফরেস্ট। চাইলে জলাবনে নেমে গোসল সেরে নিতে পারেন। তারপরে আপনার গন্তব্য হবে চর মনপুরা। এই চরে নেমে কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়াতে পারেন। ঘোরাঘুরি শেষে ঘাটে ফিরে এসে নিকলী সিএনজি স্টেশন থেকে সিএনজি নিয়ে কটিয়াদি চলে আসুন। কটিয়াদি থেকে ঢাকাগামী লাস্ট বাস ছেড়ে যায় সন্ধ্যা সাতটায়। তাই সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন।

কোথায় থাকবেন

নিকলীতে থাকার ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই। তারপরও কোনো কারণে চাইলে চেয়ারম্যান গেস্ট হাউজ বা উপজেলা ডাকবাংলোতে থাকতে পারবেন। অথবা কিশোরগঞ্জ শহরে এলে ভালো মানের কিছু হোটেল পাবেন। সেখানে থাকতে পারবেন। আবার কয়েকজন একসাথে এলে নৌকাতেও রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

আপনি ঢাকা থেকে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চাইলে অবশ্যই বাসে যাবেন। সকাল সাতটার মধ্যে রওনা করাই ভালো। কটিয়াদি স্টেশনে নামলে আপনার সময় বাঁচবে। কটিয়াদি থেকে ফেরার পথে ঢাকার লাস্ট বাস সন্ধ্যা সাতটায়। তাই সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। নিকলী হাওরে রাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাধারণ মানের। বড় গ্রুপ না হলে রাতে নৌকায় রাত না কাটানোই শ্রেয়। আর নৌকা ভাড়ার বিষয়টা ওইদিনের পর্যটক সমাগমের উপর নির্ভর করে। সাধারণত শুক্রবার বা সরকারী ছুটির দিনে নৌকা ভাড়া কিছুটা বেশি থাকে।

আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

অষ্টগ্রাম মিঠামন ইটনা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মিঠামইন হাওর, অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক, বালিখলা হাওর, অষ্টগ্রাম হাওর ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এই ঝর্ণার আরেকটি নাম হলো মায়াবী ঝর্ণা। সিলেট শহর থেকে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার দূরত্ব ৬২ কিঃমিঃ। সিলেটের জাফলং থেকে হাঁটাপথে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দূরত্বে এর অবস্থান।  মায়াবী এই ঝর্ণা মূলত ভারতীয় ভূখন্ডে পড়েছে। তারপরও বিএসএফ এর প্রহরায় সেখানে বাংলাদেশীরা ভ্রমণ করতে পারে। সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার মূলত তিনটি ধাপ। শেষ ধাপে রয়েছে একটী রহস্যময় সুড়ঙ্গ! ঝর্ণা বেয়ে উপরে উঠা খুব ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। পানির স্রোতের কারণে ঝর্ণার গা সবসময় পিচ্ছিল থাকে। তাই পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে ঝর্ণার উপরে উঠার চেষ্টা না করাই ভালো। নিচ থেকেও চমৎকার ভাবে এই ঝর্ণাটি দেখা যায়। এই ঝর্ণাটি মূলত জাফংলং জিরো পয়েন্টের কাছে।

কিভাবে যাবেন সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

সংগ্রামপুঞ্জি মায়াবী ঝর্ণায় যেতে হলে প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে চায়ের দেশ সিলেট আসতে হবে। বাস, ট্রেন কিংবা উড়োজাহাজে করে আপনি সিলেট আসতে পারবেন। বাসে এলে ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে জাফলং

এই সংগ্রামপুঞ্জি মায়াবী ঝর্ণা অভিযানের জন্য প্রথমে সিলেট থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা বা মাইক্রোবাসে করে আপনি জাফলং যেতে হবে। লোকাল বাস ছাড়ে শহরের শিবগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। মাইক্রোবাসে গেলে আসা যাওয়া রিজার্ভ ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। আর সিএনজি নিলে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা। তাই দলগত ভাবে খরচ কম পড়বে। সিলেট থেকে জাফলং যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।

জাফলং থেকে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

জাফলংয়ে যে নদীটি বয়ে গেছে সেটি পিয়াইন নদী। নদীর তীরেই নৌকা ঘাট পাবেন। সেখান থেকে নৌকা নিয়ে নদী পার হতে হবে। নদীর ওপারে গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণায় যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিবে। সেখান থেকে হেঁটে যেতে ১৫ মিনিটের মতো সময় লাগবে। মনে রাখা দরকার নদী পার হয়ে ৫ মিনিট হাঁটার পরই আপনার মোবাইলে আর নেটওয়ার্ক থাকবেনা। কারণ জায়গাটি ভারতের মেঘালয়ের সীমান্তঘেঁষা।

কখন যাবেন সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারা বছরই ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে ছুটে আসেন। তবে শীতকালে এখানে পানি থাকেনা তেমন। তাই মায়াবী এই ঝর্ণার আসল রূপ দেখতে চাইলে বর্ষায় আসা উচিত। এক কথায় বলা যায় বর্ষা ও তার পরবর্তী সময়টা সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত।

কোথায় থাকবেন

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার নিকটস্থ জনপদ জাফলং। কিন্তু জাফলংয়েও রাতে থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই।  তাই সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার সিলেট শহরে চলে আসতে পারেন। সিলেট শহরে প্রচুর হোটেল রয়েছে। আম্বরখানা, দরগাহ গেইট, জিন্দাবাজার এসব এলাকায় অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হিল টাউন, হোটেল ব্রিটানিয়া, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট হোটেল। এখানে ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যাবে।

বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র‍্যান্ড প্যালেস, হোটেল নূরজাহান ইত্যাদি। রুম ভাড়া ৫০০০ থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে। সিজন অনুযায়ী রুম ভাড়ায় তারতম্য হয়।

একদম সস্তার মধ্যে সিলেটের দরগাহ গেইট এলাকায় অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার সাধ্যমতন হোটেল ভাড়া করতে পারবেন ওখান থেকে।

কি খাবেন কোথায় খাবেন

দুপুরের খাবার জাফলংয়ে খেতে হবে। এছাড়া সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার পথেও একাধিক ভালো মানের রেস্টুরেন্ট পাবেন।  চাইলে ওখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। জাফলংয়ে দুপুরে খাওয়ার খরচ পড়বে জনপ্রতি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা। মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ভর্তা ইত্যাদি মেনু পাওয়া যাবে এখানে।

এছাড়া সিলেট শহরে অনেকগুলো বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসী, ভোজন বাড়ি, পালকি, এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার ভর্তার সাথে আপনার পছন্দ মতো মেনু পাবেন এখানে। খরচ হবে জনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকার মতন। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ২৯ রকমের ভর্তা আছে! চাইলে সকালের নাস্তাও এইসব রেস্টুরেন্টে সেরে নিতে পারবেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা দেখতে গেলে এমনিতেই জাফলং দেখে আসতে পারবেন। কাছাকাছি রয়েছে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। সেগুলোর মধ্যে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল অন্যতম। এছাড়া ঘুরে আসতে পারেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, ভোলাগঞ্জ, কিংবা বিছানাকান্দি  অথবা পান্থুমাই ঝর্ণা থেকেও।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা ভ্রমণের সময় বর্ষাকাল। বর্ষাকালে ঝর্ণা থাকে পূর্ণ যৌবণা। এডভেঞ্চারের নেশায় ঝর্ণায় উঠতে গিয়ে অসতর্ক হয়ে পড়লে যেকোনো দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তখন পিয়াইন নদীতেও অনেক স্রোত থাকে। নদী পার হওয়ার সময়ও সাবধান থাকতে হবে। মনে রাখবেন দলগত ভাবে ভ্রমণ করলে সবসময় খরচ কম পড়বে।

অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

আরো পড়ুন

Exit mobile version