মারায়ন তং বা মারায়ং তং বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মিরিঞ্জা রেঞ্জের একটি পাহাড়ের নাম। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে এর উচ্চতা ১৬৫০ ফুট। এই পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় আছে একটি বৌদ্ধ উপাসনালয়। যেখানে রয়েছে গৌতম বুদ্ধের একটি আবক্ষ মূর্তি। উপাসনালয়টি পুরো স্থানটিকে একটি বিশেষত্ব দিয়েছে। মারায়ন তং জাদী পাহাড় এর চূড়ার অংশটি পুরোপুরি সমতল। চূড়ায় দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায় ততদূর শুধু পাহাড়ের সারি৷ এ যেন পাহাড়ের সমুদ্র। আর পাহাড়ের নিচে দিয়ে সাপের মতো এঁকেবেকে চলে গেছে মাতামুহুরি নদী।
মারায়ন তং জাদী পাহাড় ও এর আশেপাশে রয়েছে বিভিন্ন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। এরমধ্যে অন্যতম হলো ত্রিপুরা মারমা আর মুরং। পাহাড়ের নিচের দিকে মারমাদের বসবাস। আর মুরং জাতির পাড়াগুলো ছড়িয়ে আছে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে। পাহাড়িরা সাধারণত মাচাংয়ের উপর ঘর বানায়। উপরে পরিবারের সদস্যরা বসবাস করে। আর নিচে মুরগী শূকর ইত্যাদি গবাদিপশু থাকে। বৈচিত্র্যময় এই সংস্কৃতির সৌন্দর্য বান্দরবানকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। এখানকার অধীবাসীরা জীবিকার জন্য পাহাড়ের উপর নির্ভরশীল। এখানে ফলমূল, শস্য, তামাক ইত্যাদির চাষ হয়।
কিভাবে মারায়ন তং যাবেন
দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কক্সবাজারগামী বাসে উঠে চকরিয়া নামতে হবে। ওখান থেকে বাস জিপ বা সিএনজিতে আসতে হবে আলীকদম। লোকাল গাড়িতে গেলে ভাড়া আসবে ৭০ টাকা, আর জিপ রিজার্ভ করলে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এক জিপে ১২/১৩ জন বসতে পারবেন। আলীকদম থেকে অটোরিকশা নিয়ে আবাসিক নামক যায়গায় যেতে হবে। ভাড়া ২০ টাকা।
আবাসিকে গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই মারায়ন তং এর রাস্তা দেখিয়ে দিবে। একটাই রাস্তা। এই রাস্তা ধরে আড়াই তিন ঘন্টা হাঁটলে পৌঁছে যাবেন মারায়ং তং জাদীতে। এটি আলীকদমের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। এই পাহাড়টি মারায়ন ডং ও মেরাইথং নামেও পরিচিত।
কোথায় থাকবেন
মারায়ন তং’এ সবাই সাধারণত ক্যাম্পিং করতেই যায়। তাই ক্যাম্পিংয়ের জিনিসপত্র সাথে নিতে হবে। যেমন পানি গ্লুকোজ, শুকনো খাবার, ফার্স্ট এইড এবং রান্না করতে চাইলে রান্নার প্রয়োজনীয় উপকরণ সাথে নিবেন। তাঁবুর সাথে অবশ্যই চাদর ও স্লিপিং ব্যাগ নিবেন। কারণ গরমের দিনেও পাহাড়ে রাতে ঠান্ডা পড়ে।
ক্যাম্পিং করার সময় প্রথমে স্থানীয় পাড়ার হেডম্যানের সাথে কথা বলুন। উনাকে আপনার ফোন নাম্বার দিন, আপনিও উনার ফোন নাম্বার রাখুন। যাতে প্রয়োজনে কোনোপ্রকার সহযোগিতার জন্য হেডম্যানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
আর যারা ক্যাম্পিং করতে চান না, তারা আলীকদমে বা চকরিয়ায় কিছু থাকার হোটেল আছে, ওখানে থাকতে পারেন। চাইলে চকরিয়া থেকে কক্সবাজারও চলে যেতে পারেন। চকরিয়া থেকে বাসে কক্সবাজার যেতে ২ ঘন্টা সময় লাগে।
পরামর্শ ও সতর্কতা
*এখানে অনেকক্ষণ পাহাড়ি পথে হাঁটতে হয়। তাই শিশু ও বয়স্কদের না যাওয়াই উচিত।
*ট্রেকিংয়ের জন্য ট্রেকিং বুট ব্যবহার করুন। চাইলে প্লাস্টিক বা রাবারের স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন।
*পর্যাপ্ত পরিমান পানি ও শুকনো খাবার বহন করুন।
*পূর্বে ক্যাম্পিংয়ের অভিজ্ঞতা না থাকলে, অভিজ্ঞতা আছে এরকম কাউকে সঙ্গে নিন।
*আশেপাশে শস্য কিংবা ফলজ গাছ থাকতে পারে। অনুমতি ছাড়া হাত দিবেন না। কথা বলে খুব সস্তায় কিনে নিতে পারবেন।
*অনুমতি না নিয়ে আদিবাসীদের ছবি তুলবেন না। এটি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান।
*আদিবাসীদের কালচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্যকোনো জাতির মানুষ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগতো।
*ক্যাম্পিং শেষে পাহাড় থেকে নামার সময় কাঠ কয়লা সহ অন্যান্য বর্জ্য পরিষ্কার করে আসুন।
*কোনো প্রকার অপচনশীল বস্তু পাহাড়ে ফেলবেন না। শুধু পাহাড় নয়, এমনকি শহরেও ফেলবেন না। এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।
আরো পড়ুন
⦿ কেওক্রাডং
⦿ দামতুয়া ঝর্ণা
বান্দরবানের অন্যান্য স্থানগুলোর ভ্রমণ তথ্য এখানে পড়ুন। ভ্রমণ বিষয়ক আপনার যেকোনো সাহায্যের জন্য গ্রিন বেল্ট এর ইনবক্সে নক করুন।
ভ্রমণ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ। মায়াদ্বীপ সম্পর্কে আপনার আরো কোনো তথ্য কিংবা পরামর্শ দেওয়ার থাকলে আমাদেরকে জানান।