নীলগিরি

দিগন্ত জোড়া সবুজ পাহাড় আর বিস্তীর্ণ প্যানারোমা, এর মাঝে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘেদের দল। স্বপ্নের মতো এই দৃশ্য আপনি বাস্তবে দেখতে পাবেন বাংলার দার্জিলিং খ্যাত নীলগিরি তে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নীলগিরির উচ্চতা ২২০০ ফিট। বান্দরবানের দূর্গম পাহেড়ের কোলে নীলগিরি সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রকৃতি এখানে বৈচিত্র্যময়। ক্ষণে ক্ষণে তার রূপ বদলায়।

সকালে একরকম তো সন্ধ্যায় তার অন্য-রূপ।

বান্দরবান জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিঃমিঃ দূরে নীলগিরির অবস্থান। এর খুব কাছেই রয়েছে পাহাড়ি গ্রাম কাপ্রু পাড়া। এটি ম্রো আদিবাসী অধ্যুষিত একটি জনপদ। তাই পাহাড়ীদের জীবন যাপন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন খুব কাছ থেকে। নীলগিরির চূড়ায় দাঁড়িয়ে আকাশ পরিষ্কার থাকলে দূরের সাগর পর্যন্ত দেখা যায়! এছাড়া দেখতে পাবেন দেশের সর্বোচ্চ পর্বত সাকাহাফং, বগালেক, কেওক্রাডং ও সাঙ্গু নদী! এটি সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি পর্যটন কেন্দ্র। এর কাছেই রয়েছে আর্মি ক্যাম্প। তাই নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রকার সমস্যা নেই। আপনার কোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে। আপ পরিবার পরিজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরে আসার জন্য নীলগিরি একটি আদর্শ স্থান।

কিভাবে নীলগিরি যাবেন

নীলগিরি যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে বান্দরবান আসতে হবে। রাতের বাসে আসাই ভালো। ঢাকা থেকে এসি – নন এসি সব ধরণের বাসই বান্দরবান যায়। নন এসির মধ্যে শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বাস পাবেন। বাস ছাড়ে কলাবাগান, ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে। রাত এগারোটার মধ্যে লাস্ট বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে উঠতে হবে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সূবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, চট্টলা, মহানগর ও গোধুলী সহ অনেকগুলো ট্রেইন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেন ও আসন ভেদে ভাড়া ২০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানের বাস পাবেন নতুন ব্রিজ, দামপাড়া ও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে। বহদ্দারহাট থেকে ৩০ মিনিট পরপর ‘পূর্বাণী’ ও ‘পূরবী’ নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২২০ টাকা।

বান্দরবান থেকে নীলগিরি

বান্দরবান থেকে বাসে, জিপে, চন্দের গাড়ি অথবা সিএনজিতে আপনি নীলগিরি যেতে পারেন। সিএনজিতে গেলে ভাড়া পড়বে সিজন ভেদে ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা। যদি সদস্য সংখ্যা ৬/৭ জন হয় তাহলে ল্যন্ড ক্রুজার জিপ নিতে পারেন। এতে ভাড়া পড়বে ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকা। আর চান্দের গাড়ির ভাড়া ৪৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। চান্দের গাড়িতে বসতে পারে ১২/১৩ জন।

বর্ষা মৌসুমে কম বেশি সারাদিন মেঘের দেখা পাওয়া যায় এখানে। তবে শুকনো মৌসুমে নীলগিরিতে মেঘ থাকে মূলত ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত। তাই মেঘ দেখতে চাইলে খুব ভোরে আপনাকে রওনা করতে হবে। যেন সকাল সাতটা আটটার মধ্যে নীলগিরি থাকতে পারেন। বান্দরবান থেকে জিপে নীলগিরি যেতে দেড় থেকে দুই ঘন্টার মতো সময় লাগে।

ভ্রমণ পরিকল্পনা

নীলগিরি যাওয়ার পথে পড়বে মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট, শৈলপ্রপাত ও চিম্বুক পাহাড়। আপনি গাড়ি থামিয়ে এই স্থানগুলো দেখতে দেখতে নীলগিরি যেতে পারবেন। তাহলে দুপুরের পরের সময়টা নীলগিরিতে কাটালেন। আবার চাইলে প্রথমে সকালে একটানে নীলগিরি চলে যাবেন। ফেরার পথে চিম্বুক শৈলপ্রপাত ও মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট দেখতে দেখতে আসবেন। এসব স্পটে যে থামবেন, এটা গাড়ি ঠিক করার সময়ই ড্রাইভারের সাথে কনফার্ম হয়ে নিবেন। শৈলপ্রপাতের ঝর্ণার জলে গা এলিয়ে বিভিন্ন পাহাড়ি ফলের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবেন। শৈলপ্রপাতের পাশেই বম আদিবাসী অধ্যুষিত পাড়া। বম তরুণ তরুণীরা এখানে আম, লিচু, পেপে, পেয়ারা, কলা সহ বিভিন্ন পাহাড়ি ফল বিক্রি করে বছরজুড়ে। সুস্বাদু এসব ফলের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

যারা দুইদিন বান্দরবান থেকে  নীলগিরি বাদেও স্বর্ণমন্দির, নীলাচল, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স সহ মেইন স্পটগুলো দেখতে চান, তাদের জন্য আমাদের ১ রাত দুইদিনের বিস্তারিত ভ্রমণ তথ্য পোস্টের শেষে দেওয়া আছে।

নীলগিরি ভ্রমণের সময়

বলা হয়ে থাকে কোনো ভ্রমণ স্থান যতই সুন্দর হোক, ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় না গেলে, ভালো নাও লাগতে পারে। নীলগিরি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও নিরাপদ পর্যটন স্পষ্ট হিসেবে স্বীকৃত। তাই বছরজুড়ে ভ্রমণপ্রেমীরা এখানে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন প্রকৃতির অমোঘ টানে। তারপরও বলা যায় চৈত্রের প্রচন্ড গরমে ও বর্ষার শুরুতে নীলগিরি ভ্রমণ না করাই ভালো। নীলগিরি ভ্রমণের উপযুক্ত সময় বর্ষার শেষ থেকে শরৎ হেমন্ত ও শীতকাল। অর্থাৎ জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত। বর্ষায় প্রকৃতি সবচেয়ে সতেজ ও সবুজ থাকে। তখন মেঘেদের আনাগোনা লুকোচুরি চলে দিনভর। মেঘের জন্য খুব বেশি দূরে দেখা না গেলেও মেঘের সমুদ্রে একদিন ডুব দেওয়াই যায়। আর শীতে যতদূর চোখ যায় ততদূর দেখা যায় বলে চমৎকার ভিউয়ের সৃষ্টি হয়!

কম খরচে নীলগিরি ভ্রমণ

ট্যুরের সদস্য সংখ্যা কম হলে, কিংবা কম খরচে নীলগিরি যেতে চাইলে আপনি বাসে করে যেতে পারবেন। বান্দরবান থেকে থানচিগামী যেকোনো বাসে উঠলে নীলগিরিতে নামিয়ে দিবে। ভাড়া জনপ্রতি ১২০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য টিমের সাথে জিপ শেয়ার করতে পারেন। এতেও কম খরচ হবে। সবচেয়ে ভালো হয় নিজেরা গ্রুপ করে যেতে পারলে। গ্রুপে গেলে সব খরচ ভাগ হয় বলে কম খরচে ঘুরে আসা যায়।

কোথায় থাকবেন

নীলগিরিতে থাকার জন্য সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত কটেজ আছে ৬টি। এসব কটেজে থাকার জন্য রুম ভাড়া পড়বে ৪০০০ থেকে ১০০০০ টাকা। থাকতে চাইলে ক্ষেত্রবিশেষে দেড় থেকে দুই মাস আগে বুকিং দিতে হবে। বুকিংয়ের জন্য আর্মির অফিসার পর্যায়ের কারো রেফারেন্স লাগে। সুযোগ থাকলে নীলগিরিতে একটা রাত কাটানো যেতেই পারে।

তবে বেশিরভাগ পর্যটকই এত ঝামেলায় না গিয়ে নীলগিরি ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যে আবার বান্দরবান শহরে ফিরে আসেন। বান্দরবানে থাকার জন্য রয়েছে বিভিন্ন মানের অনেকগুলো হোটেল। রয়েছে কটেজ ও রিসোর্ট। এর মধ্যে কয়েকটি হোটেল হলো-

হোটেল হিল ভিউ: এর অবস্থান বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। এটি বেশ ভালো মানের একটি হোটেল। রুম ভাড়া ১২০০ থেকে ২৮০০ টাকা।
পর্যটন মোটেল: এটি শহর ৪ কিঃমিঃ দূরে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এর কাছে অবস্থিত। রুম ভাড়া ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
হোটেল নাইট হ্যাভেন: এটিও শহর থেকে ৪ কিঃমিঃ দূরে নীলাচলের কাছে। এর রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা।
হোটেল প্লাজা: এটি শহরের মধ্যেই। এই হেটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। ছিমছাম গুছানো সুন্দর হোটেল। রুম ভাড়া পড়বে ১৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা।
রিভার ভিউ: শহরের ভিতর সাঙ্গু নদীর পাড়ে এই হোটেলটির অবস্থান। রুম ভাড়া ৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা।

নীলগিরি বান্দরবান
নীলগিরি আর্মি রিসোর্ট | ছবি: এ.কে.এম মাসুদুজ্জামান

কোথায় খাবেন

নীলগিরিতে খাওয়ার জন্য একটি ক্যান্টিন রয়েছে। ওখানে দুপুরে খাওয়া যেতে পারে। খাবার জন্য আগে থেকে অর্ডার করতে হয়। এছাড়া নীলগিরির আগে চিম্বুক পাহাড়ের সাথে আর্মির আরেকটি ক্যান্টিন আছে। ওখানে সাধারণত খিছুড়ি মুরগির মাংস পাওয়া যায়। আর বান্দরবান শহরে খাওয়ার জন্য রয়েছে বেশকিছু রেস্তোরা। এর মধ্যে রূপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট, কলাপাতা রেস্টুরেন্ট, ফুড প্যালেস, রি সং সং, তাজিং ডং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

নীলগিরি ভ্রমণ খরচ

ভ্রমণের খরচ সবসময় নিজের উপর নির্ভর করে। কেউ কম খরচে ঘুরে আসতে পারেন। অনেকে একটু বেশি আরাম আয়েশ পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে খরচ অনেকটা বাড়ে। বেশিরভাগ ভ্রমণকারী এই দুইটা বিষয়ে সামঞ্জস্য রেখে ঘুরতে পছন্দ করেন। নীলগিরি ভ্রমণের খরচ সম্পর্কে একটু ধারণা দেওয়া যাক।

বাস ভাড়া আসা যাওয়ায় ৬২০ x ২ = ১২৪০ টাকা।
এসি বাসের ভাড়া আসা যাওয়া ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
হোটেল ভাড়া জনপ্রতি ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
যানবাহন ভাড়া দুইদিনে সিএনজি নিলে ৩০০০ টাকা, জিপ ৫৫০০ ও চান্দের গাড়ি ভাড়া ৮৫০০ টাকা। সিএনজিতে ৪ জন, জিপে ৭ জন এবং চান্দের গাড়িতে ১৩ জন বসতে পারবেন সর্বোচ্চ।
খাবার খরচ প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।
নীলগিরি এন্ট্রি ফি জনপ্রতি ৫০ টাকা ও গাড়ি পার্কিং চার্জ ৩০০ টাকা।

নীলগিরি ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

*গ্রুপ ট্যুর হলে ভ্রমণ খরচ কমবে।
*হোটেল ও জিপ নেওয়ার সময় দরদাম করে নিবেন।
*চান্দের গাড়ির ছাদে উঠবেন না। আঁকাবাঁকা রাস্তায় ছাদে উঠা বিপদজনক। আর্মির পক্ষ থেকেও নিষেধ আছে।
*শৈলপ্রপাতে ঝর্ণার জলে ভিজতে চাইলে সাবধানে নামবে। জায়গাটা পিচ্ছিল।
*অনুমতি না নিয়ে আদিবাসীদের ছবি তুলবেন না। এটি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান।
*আদিবাসীদের কালচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্যকোনো জাতির মানুষ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগতো।
*কোনো প্রকার অপচনশীল বস্তু পাহাড়ে ফেলবেন না। শুধু পাহাড় নয়, এমনকি আপনার শহরেও ফেলবেন না। এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।

আরো পড়ুন

⦿ দুই দিনের বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান (নীলগিরি, নীলাচল, মেঘলা, স্বর্ণমন্দির ও শৈলপ্রপাত)

⦿ নাফাখুম, বগালেক কেওক্রাডং সহ বান্দরবানের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর ভ্রমণ তথ্য এখানে পড়ুন

দেবতাখুম

দেবতাকুম বা দেবতাখুম (Debotakhum) বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়িতে অবস্থিত একটি খুম। বান্দরবানকে বলা যায় খুমের স্বর্গরাজ্য। এডভেঞ্চারপ্রেমীরা ঘুরতে পছন্দ করেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের এই পাড়া থেকে ওই পাড়ায়। বছরজুড়ে ছুটে যান পাহাড়ের আনাছে কানাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সৌন্দর্যের খোঁজে। বান্দরবানে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য মনি মুক্তোর মধ্যে নতুন করে জনপ্রিয় হওয়া একটি ভ্রমণ গন্তব্য হলো এই দেবতাকুম।

বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২০ কিঃমিঃ দূরের রোয়াংছড়ি উপজেলার শীলবাঁধা পাড়ায় দেবতাকুমের অবস্থান। খুমের গভীরতা এখানে ৫০ থেকে ৭০ ফিট। আর দৈর্ঘে ৬০০ ফিট। এটি বান্দরবানের আরেক জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান ভেলাখুম থেকে অনেক বড় এবং অনেক বেশি ওয়াইল্ড। পাহাড়ে ট্রেকিং বরাবরই রোমাঞ্চকর। এই রোমাঞ্চের হাতছানিতে আপনি যখন ট্রেকিং করে দেবতাকুম এসে পৌঁছাবেন, প্রকৃতির রূপ লাবণ্যে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। দুই পাশে উঁচু পাথুরে ঢাল, কলকল শব্দে বয়ে যাও পাহাড়ি ঝিরি, আর শুনশান খুমের পাড়ে নিজেকে আবিষ্কার করবেন ভিন্ন এক স্বর্গীয় পরিবেশে! যে পরিবেশে নিজেকে বিলীন করে দিতে ইচ্ছে করে প্রকৃতির মাঝে।

কিভাবে দেবতাখুম যাবেন

দেবতাকুম যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে বান্দরবান আসতে হবে। রাতের বাসে আসাই ভালো। ঢাকা থেকে এসি – নন এসি সব ধরণের বাসই বান্দরবান যায়। নন এসির মধ্যে শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বাস পাবেন। বাস ছাড়ে কলাবাগান, ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে। রাত এগারোটার মধ্যে লাস্ট বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে উঠতে হবে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সূবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, চট্টলা, মহানগর ও গোধুলী সহ অনেকগুলো ট্রেইন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেন ও আসন ভেদে ভাড়া ২০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানের বাস ছাড়ে নতুন ব্রিজ, দামপাড়া ও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে। বহদ্দারহাট থেকে ৩০ মিনিট পরপর ‘পূর্বাণী’ ও ‘পূরবী’ নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২২০ টাকা।

বান্দরবান থেকে কচ্ছপতলী

বান্দরবান থেকে দেবতাখুম যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে রোয়াংছড়ি উপজেলার কচ্ছপতলী আর্মি ক্যাম্পে। বান্দরবান শহর থেকে রোয়াংছড়ির দূরত্ব ২০ কিঃমিঃ। রোয়াংছড়ি থেকে কচ্ছপতলী ৫/৬ কিঃমিঃ। প্রথমে বাসে করে রোয়াংছড়ি, পরে ওখান থেকে সিএনজি নিয়ে কচ্ছপতলী যাওয়া যায়। বান্দরবান থেকে প্রতি ঘন্টায় রোয়াংছড়ির বাস ছাড়ে, ভাড়া ৬০ টাকা। আর রোয়াছড়ি থেকে কচ্ছপতলীর সিএনজি ভাড়া ১৫০ টাকার মতো। এছাড়া আপনি চাইলে বান্দরবান শহর থেকে সরাসরি জিপেও কচ্ছপতলী চলে যেতে পারেন। জিপ ভাড়া ১৮০০ টাকা। এক জিপে ১২/১৩ জন বসতে পারবেন।

কচ্ছপতলী থেকে দেবতাখুম

কচ্ছপতলীতে প্রথম কাজ হবে ওখানকার আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে রিপোর্ট করা। সেখানে সবার জাতীয় পরিচয় পত্র বা অন্যকোনো ফটোআইডির ফটোকপি জমা দিয়ে পারমিশন নিতে হবে। ফটোকপি ঢাকা থেকেই করে নিবেন। যেহেতু ওখানে ফটোকপি করার কোনো দোকান পাওয়া যাবেনা। এরপর আর্মিকে বললে তারা গাইড ঠিক করে দিবে। আপনি চাইলে নিজেও গাইড ঠিক করতে পারবেন। গাইড ফি ৫০০ টাকা।

কয়েকজন গাইডের নাম্বার

আপন জয় তঞ্চঙ্গ্যা 01882-267714
শুভজয় তঞ্চঙ্গ্যা 01881-554582
রুন্ময় লাল 01857-272095
চিকু 01890-170803

গাইড ঠিক করার পর ট্রেকিং শুরু করুন দেবতাকুমের উদ্দেশ্যে। এটি মোটামোটি মধ্যম মানের একটি ট্রেকিং রুট। কচ্ছপতলী থেকে দেবতাখুম পৌঁছাতে আপনার ১.৫ থেকে ২ ঘন্টার মতো সময় লাগবে। পাহাড়, বন, নদী ঝিরির পাশ দিয়ে আপনার ট্রেকিং চলতে থাকবে। ঝিরি পার হতে কয়েকবার। একসময় পৌঁছে যাবেন শীলবাঁধা পাড়ায়। এই পাড়াই মূলত আপনার বেজক্যাম্প। পাড়ার পাশে শীলবাঁধা ঝর্ণা নামে একটি ঝর্ণা আছে। যাওয়া বা আসার পথে ওটাও দেখে আসতে পারবেন।

এই পাড়া থেকে দেবতাকুম যেতে ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। চারপাশে পাখির ডাক, সবুজ বন, ছড়ানো ছিটানো ছোট বড় পাথর, আর কলকল শব্দে অবিরাম বয়ে যাওয়া ঝিরির পাশ দিয়ে শুধু হেঁটে চলা। দেবতাকুমে বাঁশের ভেলায় ভেসে আপনি অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারবেন অনেকটা সময়।

Debotakhum Bandarban
দেবতাখুম এর শুরুর অংশ | ছবি : ইমরান ইমু

কোথায় খাবেন

সকালের ব্রেকফাস্ট বান্দরবান শহরেই করে নিন। বাসস্ট্যান্ডের পাশেই অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট আছে। এর মধ্যে রূপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট ও কলাপাতা রেস্তোরা মানসম্পন্ন। ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ব্রেকফাস্ট হয়ে যাবে। কচ্ছপতলী পৌঁছে ট্রেকিং শুরু করার আগেই দুপুরের খাবারের অর্ডার দিয়ে নিন। নয়তো পরে ট্রেকিং শেষ করে এসে খাবার পাবেন না। কচ্ছপতলীতে ৩/৪টি খাবারের দোকান আছে। আপনি অর্ডার করলেই মূলত তারা রান্না করবে। মুরগী মাংস, ডাল আর আলুভর্তা পাবেন মেনু হিসেবে। খাবার খরচ আসবে ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মতো।

দেবতাখুম ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সারাবছরই দেবতাখুম যাওয়া যায়। তবে ভরা বর্ষায় অনেক সময় ঝিরি ও খুমে পানি অতিরিক্ত বেড়ে গেলে আর্মি তখন দেবতাকুম যাওয়ার পারমিশন দেয়না। আবার শীতের শেষ থেকে গ্রীষ্মের শুরু পর্যন্ত পানি খুব কমে যায়, তখন আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। অর্থাৎ জুন থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দেবতাকুম যাওয়ার ভালো সময়। যেতে চাইলে এই সময়ের মধ্যেই ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন।

কোথায় থাকবেন

আপনি সকালে বান্দরবান থেকে দেবতাকুমের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে সন্ধ্যার মধ্যেই আবার শহরে এসে পৌঁছাতে পারবেন। তাই আপনি চাইলে রাতের খাবার শেষে সেদিনই ঢাকা অথবা আপনার গন্তব্যে ফিরে আসতে পারেন। আর থেকে যেতে চাইলে বান্দরবান শহরে বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল রয়েছে।

বান্দরবানের কয়েকটি হোটেল

হোটেল হিল ভিউ: বান্দরবান শহরের মূল বাস স্ট্যান্ডের পাশেই এই হোটেলটি। মোটামুটি বেশ ভালো মানের একটি হোটেল। রুম ভাড়া ১২০০ থেকে ২৮০০ টাকা।

হোটেল প্লাজা: এটিও বেশ ভালো মানের একটি হোটেল। এই হেটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। ছিমছাম গুছানো সুন্দর হোটেল। রুম ভাড়া পড়বে ১৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা।

রিভার ভিউ: শহরের ভিতর সাঙ্গু নদীর পাড়ে এই হোটেলটির অবস্থান। রুম ভাড়া ৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা।

হোটেল নাইট হ্যাভেন: এটিও শহর থেকে ৪ কিঃমিঃ দূরে নীলাচলের কাছে। এর রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা।

পর্যটন মোটেল: এটি শহর ৪ কিঃমিঃ দূরে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এর কাছে অবস্থিত। রুম ভাড়া ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

দেবতাকুম ভ্রমণ টিপস

*কচ্ছপতলীতে গিয়ে আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট না করে আপনি দেবতাকুম যেতে পারবেন না।
*পারমিশনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্যকোনো ফটো আইডির ফটোকপি লাগবে। ওখানে ফটোকপির দোকান নেই। ঢাকা থেকেই করে নিতে হবে।
*কচ্ছপতলী পর আপনাকে নেটওয়ার্কের বাইরে থাকতে হবে।
*ট্রেকিংয়ের জন্য ট্রেকিং বুট ব্যবহার করুন। চাইলে প্লাস্টিক বা রাবারের স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন।
* দেবতাখুম এ ভেলায় চড়ার জন্য লাইফ জ্যাকেট সাথে করে নিয়ে যাবেন।
*চান্দের গাড়ির ছাদে উঠবেন না। আঁকাবাঁকা রাস্তায় ছাদে উঠা বিপদজনক।
*অনুমতি না নিয়ে আদিবাসীদের ছবি তুলবেন না। এটি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান।
*আদিবাসীদের কালচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্যকোনো জাতির মানুষ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগতো।
*কোনো প্রকার অপচনশীল বস্তু পাহাড়ে ফেলবেন না। শুধু পাহাড় নয়, শহরেও ফেলবেন না। এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।

আরো পড়ুন

বান্দরবানের অন্যান্য স্থানগুলোর ভ্রমণ তথ্য এখানে পড়ুন। এছাড়া যারা ঝামেলা এড়াতে ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর দেবতাখুম ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান

বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরতম জেলার নাম বান্দরবান। আপনার বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান এ মেঘ ছুঁয়ে দেখতে চাইলে যেমন এখানকার নীলগিরি নীলাচল যেতে হবে, তেমনি পাহাড়ি রূপ ও পাহাড়ী সংস্কৃতি দেখার জন্য ঘুরতে হবে স্বর্ণমন্দির, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক ইত্যাদি। এছাড়া এডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য রয়েছে নাফাখুম, অমিয়াখুম, বগালেক, কেওক্রাডং, জাদিপাই ঝর্ণা, ডিম পাহাড়, দেবতাকুম, আলীকদম সহ অনেক জায়গা। বলা হয়ে থাকে বান্দরবান ভ্রমণ তালিকায় না থাকলে একজন বাংলাদেশী পর্যটকের বাকেট লিস্ট অসম্পূর্ণ থাকে! প্রকৃতিক রূপ বৈচিত্র্যে অনিন্দ্য সুন্দর এই জেলাকে বলা হয় “পাহাড়ি কন্যা”।

বান্দরবান ভ্রমণ পরিকল্পনা

এই বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান মূলত যারা ফ্যামিলি নিয়ে বান্দরবান যেতে চান তাদের জন্য। যেইসব জায়গা পরিবার পরিবার পরিজন নিয়ে ঘোরার উপযুক্ত না, সেইসব স্পট বাদ দেওয়া হয়েছে। যারা প্রথমবার বান্দরবান যাবেন, কিংবা মেঘের রাজ্যে পরিবার পরিজন বা বন্ধুবান্ধব সহ দুটো দিন কাটিয়ে আসতে চান, তাদের জন্য এই ভ্রমণ পরিকল্পনাটি ফলপ্রসু হবে। এই ট্যুর প্ল্যানে ঘোরার জন্য আপনার কমপক্ষে ১ রাত ২ দিন লাগবে। ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে নিখুঁত ট্যুর প্ল্যান খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে সময় বাঁচে এবং কম খরচে ঘোরা যায়।

যা যা দেখবো এই ট্যুরে
১ম দিনঃ নীলগিরি, চিম্বুক পাহাড়, শৈলপ্রপাত
২য় দিনঃ নীলাচল, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, স্বর্ণমন্দির

বান্দরবন ঘুরতে আপনাকে বাহন হিসেবে সিএনজি, ল্যন্ডক্রুজার জীপ বা চান্দের গাড়ি নিতে হবে। সিএনজিতে সর্বোচ্চ ৪ জন, ল্যান্ডক্রুজারে ৭ জন ও চান্দের গাড়িতে সর্বোচ্চ ১৩ জন বসা যায়। সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী ঘোরার বাহন ঠিক করুন।

প্রথম দিন

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে রাতের বাসে রওনা দিলে ভোরে বান্দরবান এসে পৌঁছে যাবেন। চট্টগ্রাম থেকে যারা আসবেন তারা খুব ভোরে রওনা করলে সকালের মধ্যে বান্দরবান থাকতে পারবেন। এরপর প্রথম কাজ হবে হোটেল নিয়ে নেওয়া। আগে থেকে হোটেল ঠিক করে রাখতে পারেন, চাইলে বান্দরবান এসেও হোটেল নেওয়া যাবে। এরপর ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা সেরে রওনা করুন নীলগিরির উদ্দেশ্যে। যাওয়ার পথে পড়বে শৈলপ্রপাত, মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট ও চিম্বুক পাহাড়। যাওয়ার সময় গাড়ি থামিয়ে এগুলো দেখতে দেখতে যেতে পারেন। অথবা সরাসরি নীলগিরি চলে যেতে পারেন। আসার পথে দেখতে দেখতে আসবেন। পাহাড়ের গা বেয়ে আকাবাঁকা পথ ধরে চলে যাওয়া নীলগিরির রাস্তা আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্রতিটা বাঁকে নতুন সৌন্দর্য।

সন্ধ্যার মধ্যে আবার বান্দরবান শহরে ফিরে আসুন। এরপর হোটেলে ফ্রেশ হয়ে সন্ধ্যার পরের সময়টা শহরে ঘোরাঘুরি করে কাটিয়ে দিতে পারেন। চাইলে সাঙ্গু ব্রিজে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ঘুরে আসা যায়। শহরে বিভিন্ন আদিবাসী পণ্যের দোকান আছে। প্রিয়জন বা কাউকে গিফট দেওয়ার জন্য এসব দোকানে বিভিন্ন রকম স্যুভেনির পাবেন।

বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরির দূরত্ব ৫০ কিঃমিঃ। আসা যাওয়াতে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা লাগবে। এর সাথে ঘোরাঘুরির সময় যুক্ত হলে ৭/৮ ঘন্টা লেগে যায়। সুতরাং ঘোরাঘুরির সময় ঘড়ির দিকে তাকাতে ভুলবেন না। এই স্পটগুলো ঘুরে দেখতে সিনজি ভাড়া সম্ভাব্য ২০০০ টাকা, জিপ ভাড়া ২৪০০ থেকে ৩০০০ টাকা, এবং চান্দের গাড়ির ভাড়া ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। গাড়ি নেওয়ার সময় ভালোমতো দরদাম করে নিবেন। ছুটির দিন ছাড়া গেলে গাড়ি কিছুটা কম খরচে পাওয়া যাবে।

দ্বিতীয় দিন

আগেরদিন অনেক সারাদিন যেহেতু ভ্রমণের ধকল গেছে, তাই এদিন চাইলে একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠতে পারেন। এরপর ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিন। এদিন আমরা দেখবো স্বর্ণমন্দির, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স ও নীলাচল। প্রত্যেকটা স্পটই শহর থেকে ৫ কিঃমিঃ এর মধ্যে।

এই জায়গাগুলো দুইভাবে ঘোরা যাবে। সকালবেলা স্বর্ণমন্দির ঘুরে হোটেলে এসে রেস্ট নিয়ে দুপুরের পর মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র এবং নীলাচল ঘোরা যায়। মেঘলা এবং নীলাচল পাশাপাশি।

অথবা দুপুর বারোটার দিকে বের হয়ে প্রথমে স্বর্ণমন্দির এরপর লাঞ্চ। তারপর চলে যান মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র। মনোরম পরিবেশের বিকেলটা কাটিয়ে দিতে পারেন নীলাচলে। নীলাচল থেকে শহরে ফিরতে ২০ মিনিট লাগবে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে শহরে ফিরে আসুন। এরপর রাতের খাবার খেয়ে রাতের বাসে আপনার গন্তব্যে ফিরে ফিরতে চলুন কিছু সুন্দর স্মৃতি নিয়ে।

বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান এর এদিনের স্পটগুলো ঘুরতে রিজার্ভ সিএনজিতে আপনার খরচ হবে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। জিপে লাগবে লাগবে ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা এবং চান্দের গাড়ি নিলে খরচ পড়বে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

নীলগিরি বান্দরবান
নীলগিরি আর্মি রিসোর্ট | ছবি: এ.কে.এম মাসুদুজ্জামান

কিভাবে বান্দরবান যাবেন

দেশের প্রায় সব বিভাগীয় শহর থেকে বান্দরবানের বাস আছে। ঢাকা থেকে এসি – নন এসি সব ধরণের বাসই বান্দরবান যায়। নন এসির মধ্যে শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বাস পাবেন। বাস ছাড়ে কলাবাগান, ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে। রাত এগারোটার মধ্যে লাস্ট বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে উঠতে হবে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সূবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, মহানগর ও গোধুলী সহ অনেকগুলো ট্রেইন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেন ও আসন ভেদে ভাড়া ২০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে হলে প্রথমে বহদ্দারহাট যেতে হবে। ওখান থেকে ৩০ মিনিট পরপর ‘পূর্বাণী’ ও ‘পূরবী’ নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২২০ টাকা।

ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বান্দরবান প্রকৃতির এর অপূর্ব লীলাভূমি। এর সৌন্দর্যের টানে বছরজুড়েই এখানে পর্যটকরা ছুটে আসেন। প্রকৃতি এখানে রূপ বদলায় প্রতিটা মৌসুমে। এক এক সিজনে বান্দরবন একেক রকম। যারা মেঘ আর সতেজ প্রকৃতি দেখতে চান তাদের জন্য বান্দরবান ঘোরার আদর্শ সময় হলো বর্ষার শুরু থেকে হেমন্ত পর্যন্ত। অর্থাৎ জুন থেকে নভেম্বর। আর যারা বর্ষা এড়িয়ে শুকনো মৌসুমে বান্দরবানের ভিউ দেখতে চান তাদের জন্য ভালো সময় হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে মার্চ। এপ্রিল -মে – জুন এই তিন মাস প্রচন্ড গরম থাকে বলে তখন বান্দরবান ভ্রমণ পরিকল্পনা না করাই শ্রেয়।

থাকার ব্যবস্থা

বান্দরবানে থাকার জন্য শহর ও এর আশেপাশে বেশকিছু হোটেল ও রিসোর্ট আছে। আপনার সুবিধামতো এর যেকোনোটিতে থাকতে পারেন। কয়েকটি হোটেলের নাম ও ফোন নাম্বার-

হোটেল হিল ভিউ: এর অবস্থান বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। এটি বেশ ভালো মানের একটি হোটেল। রুম ভাড়া ১২০০ থেকে ২৮০০ টাকা।
পর্যটন মোটেল: এটি শহর ৪ কিঃমিঃ দূরে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এর কাছে অবস্থিত। রুম ভাড়া ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
হোটেল নাইট হ্যাভেন: এটিও শহর থেকে ৪ কিঃমিঃ দূরে নীলাচলের কাছে। এর রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা।
হোটেল প্লাজা: এটি শহরের মধ্যেই। এই হেটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। ছিমছাম গুছানো সুন্দর হোটেল। রুম ভাড়া পড়বে ১৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা।
রিভার ভিউ: শহরের ভিতর সাঙ্গু নদীর পাড়ে এই হোটেলটির অবস্থান। রুম ভাড়া ৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা।

নীলাচল বান্দরবান
নীলাচল | ছবি: মহিন রিয়াদ

কোথায় খাবেন

বান্দরবান শহরে খাওয়ার জন্য রয়েছে বেশকিছু রেস্তোরা। এর মধ্যে রূপসী বাংলা রেস্টুরেন্টে, কলাপাতা রেস্টুরেন্ট, ফুড প্যালেস, রি সং সং, তাজিং ডং ইত্যাদি রেস্তোরাঁয় খেতে পারেন।

বান্দরবান ভ্রমণ খরচ

একটা জায়গা ভ্রমণে কেমন খরচ হতে পারে সেটা সম্পূর্ণ নিজের উপর নিজের করে। কেউ হয়তো খুব কম খরচে ঘুরতে চান। আবার কেউ হয়তো একটু আরাম আয়েশ লাক্সারি বেশি পছন্দ করেন। এতে ভ্রমণ খরচ কিছুটা বাড়ে। বেশিরভাগ পর্যটক এই দুইটার মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে ঘুরতে পছন্দ করেন। এই বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান এর ভ্রমণ খরচ সম্পর্কে একটু ধারণা দেওয়া যাক-

বাস ভাড়া আসা যাওয়ায় ৬২০ x ২ = ১২৪০ টাকা।
এসি বাসের ভাড়া আসা যাওয়া ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
হোটেল ভাড়া জনপ্রতি ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
যানবাহন ভাড়া দুইদিনে সিএনজি নিলে ৩০০০ টাকা, জিপ ৫৫০০ ও চান্দের গাড়ি ভাড়া ৮৫০০ টাকা। সিএনজিতে ৪ জন, জিপে ৭ জন এবং চান্দের গাড়িতে ১৩ জন বসতে পারবেন সর্বোচ্চ।
খাবার খরচ প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।
এন্ট্রি ফি সবগুলো স্পট মিলে জনপ্রতি ২০০ টাকা।
*এর সাথে পার্সোনাল অন্যান্য খরচ যুক্ত হবে।

কম খরচে বান্দরবান ভ্রমণ

স্টুডেন্ট, ব্যাকপ্যাকার কিংবা বাজেট ট্রাভেলাররা কম খরচে ঘুরতে পছন্দ করেন। কম খরচে ঘুরতে হলে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। শুক্রবার কিংবা সরকারী ছুটির দিনে না যাওয়াই ভালো। মিড উইকে গেলে হোটেল ও জিপ ভাড়া কম পড়বে। শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে হেঁটে পাঁচ মিনিট সামনে গেলে বাজেট হোটেল আছে অনেক। ছিমছাম গুছানো পরিচ্ছন্ন এসব হোটেলে লাক্সারি না থাকলেও ব্যাকপ্যাকারদের জন্য আদর্শ। কম খরচে এসব হোটেল পেয়ে যাবেন। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসে পর্যটকদের প্রচুর ভিড় হয় বান্দরবানে। সবকিছুর খরচ তুলনামূলক বেশি থাকে। এসময় ওখানে ঘুরতে না যাওয়াই ভালো। ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে যে বিষটা সবসময় খেয়াল রাখবেন, নিজেরা গ্রুপ করে গেলে খরচ কম পড়ে। খরচ তখন সবার সাথে ভাগাভাগি হয়ে যায়। এতে খরচ কমলেও আনন্দের কমতি হবেনা।

নাফাখুম বগালেক সহ বান্দরবানের অন্যান্য স্থানগুলোর ভ্রমণ তথ্য এখানে পড়ুন। এছাড়া যারা ঝামেলা এড়াতে ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর বান্দরবান ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

নাফাখুম

নাফাখুম জলপ্রপাত (Nafakhum Waterfall) এর অবস্থান বান্দরবানের সর্বদক্ষিণের উপজেলা থানচির রেমাক্রি ইউনিয়নে। আয়তন ও পানিপ্রবাহের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলপ্রপাত। ঝর্ণাটি বাংলার নায়াগ্রা নামে পরিচিত। রেমাক্রি অঞ্চলটি মূলত মারমা অধ্যুষিত। মারমা ভাষায় খুম মানে জলপ্রপাত। রেমাক্রি খালের পানি পাথুরেপথে নামতে গিয়ে চমৎকার এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। সবুজপাহাড় – বন – পাথুরে ভূমির মাঝখানে এটি স্বপ্নময় অসাধারণ একটি স্থান। নিজের চোখে দেখা ছাড়া এর বর্ণনা পড়ে কিছুই অনুধাবন করা যাবেনা। তাই এডভেঞ্চারপ্রেমীরা প্রকৃতির টানে নাফাখুম ভ্রমণ এর উদ্দেশ্যে ছুটে আসেন।

কিভাবে যাবেন নাফাখুম জলপ্রপাত

নাফাখুম যেতে হলে প্রথমে বান্দরবান যেতে হবে। ঢাকা থেকে এসি, নন এসি সব ধরণের বাসই বান্দরবান যায়। নন এসির মধ্যে শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বাস পাবেন। ভাড়া ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে যেতে হলে প্রথমে বহদ্দারহাট যেতে হবে। ওখান থেকে ৩০ মিনিট পরপর ‘পূর্বাণী’ ও ‘পূরবী’ নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২২০ টাকা।

বান্দরবান থেকে থানচি

বান্দরবান পৌছানোর পর আপনাকে যেতে হবে ৮২ কিঃমিঃ দূরের উপজেলা থানচিতে। বাসে অথবা রিজার্ভ জিপে দুইভাবে থানচি যাওয়া যায়। জিপে গেলে ভাড়া পড়বে ৫৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা। আসা যাওয়া ১২০০০ টাকা। এক জিপে ১২/১৩ জন বসা যায়। জিপে সময় লাগে সাড়ে ৩ ঘন্টা।

বাসে না যেতে চাইলে থানচি বাস স্ট্যান্ড থেকে লোকাল বাস পাবেন। ভাড়া ২০০ টাকা। এক ঘন্টা পরপর বাস ছাড়ে। লাস্ট বাস দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে ছেড়ে যায়। বাসে যেতে সময় লাগবে সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা। যাত্রাপথে পড়বে মিলনছড়ি, চিম্বুক পাহাড় ও নীলগিরি।

থানচি থেকে রেমাক্রি

থানচি পৌছানোর পর আপনার প্রথম কাজ হবে গাইড ঠিক করা। গাইড সমিতির অফিস আছে, আপনি যে কাউকে বললেই দেখিয়ে দিবে। সমিতির অফিস ফি ১০০ টাকা, এবং গাইড ফি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা।

এরপর সাদাকাগজে আপনার টিমের সব টুরিষ্টদের নাম, ঠিকানা, পিতার নাম, ফোন নাম্বার, মাঝির নাম, গাইডের নামও জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি ইত্যাদি জমা দিয়ে নাফাখুম জলপ্রপাত যাওয়ার অনুমতি নিতে হবে। আপনার হয়ে গাইডই কাজগুলো করে দিবে।

রেমাক্রি যেহেতু নৌপথে যেতে হবে, তাই আপনাকে নৌকা নিতে হবে। আপডাউন নৌকা ভাড়া পড়বে ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা। এক নৌকায় ৪ থেকে ৫ জন বসা যায়। থানচি থেকে রেমাক্রি পর্যন্ত যেতে নোকায় সময় লাগবে ২.৫ থেকে ৩ ঘন্টার মতো। শুকনো মৌসুমে সাঙ্গু ( শঙ্খ ) নদীতে পানি কম থাকে বলে কয়েক জায়য়ায় আপনাকে নৌকা থেকে নামতে হতে পারে। যাত্রাপথে সাঙ্গু নদীর অপার সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। যাওয়ার পথেই পরবে পদ্মমুখ ঝিরি, ভূ-স্বর্গ খ্যাত তিন্দু, রাজাপাথর বড়পাথর এলাকা ও রেমাক্রি ফলস।

একটা বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে দুপুর ৩ টার পর ঘাট থেকে কোনো নৌকা রেমাক্রির উদ্দেশ্যে ছাড়ার পারমিশন পাওয়া যাবেনা। অর্থাৎ আপনাকে দিনে দিনে রেমাক্রি পৌঁছাতে চাইলে দুপুর ২টার মধ্যে থানচি থাকতে হবে। অন্যথায় ট্যুর শেষ করতে ১ দিন বেশি সময় লাগবে।

রেমাক্রি থেকে নাফাখুম জলপ্রপাত

বান্দরবান থেকে সকালে রওনা দিলে রেমাক্রী পৌঁছাতে বিকাল হয়ে যায়। ঐদিন আর নাফাখুম জলপ্রপাত যাওয়া যায়না। সবাই সাধারণত পরদিন ভোরে নাফাখুমের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রেমাক্রি থেকে নাফাখুম হেঁটে যেতে ২ থেকে ৩ ঘন্টা লাগে। কত সময় লাগবে তা মূলত নির্ভর করে আপনার টিমে যিনি সবচেয়ে আস্তে হাঁটেন তার হাঁটার গতির উপর।

বর্ষায় রেমাক্রী খালের পানি বেশি থাকে। এমনকি কোথাও কোমর সমান বা তার বেশি পানি থাকতে পারে। এসব জায়গায় পার হতে আপনার গাইডই আপনাকে সহায়তা করবে। আপনি চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতেই একসময় নাফাখুমের গর্জন শুনতে পাবেন!

নাফাখুম ভ্রমনে রাতে কোথায় থাকবেন

থানচিতে থাকার জন্য একটি সরকারী রেষ্ট হাউজ আছে। রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। কিন্তু থানচিতে রাতে না থাকাটাই উত্তম, অযথা টাকা ও সময় নষ্ট। সময় বাঁচাতে চাইলে রেমাক্রিতে থাকাই ভালো। এখানে আদিবাসীদের ঘর ও তাদের ছোট কটেজ আছে। জনপ্রতি থাকার খরচ পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

খাবেন কোথায়

থানচি বাজারে মোটামোটি মানের কয়েকটা হোটেল আছে। এর যে কোনোটাতে খেতে পারেন। আর রেমাক্রিতে খাওয়ার ব্যাবস্থা হয় আদিবাসীদের বাড়িতে/ দোকানে। খেতে চাইলে আগে থেকে বলে রাখতে হবে। খাবার সাধারণত প্যাকেজ সিস্টেমে বিক্রি করে। প্রতিবেলা খাবার খরচ পড়বে ১২০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে।

নাফাখুম ট্যুর প্ল্যান কিভাবে সাজাবেন

যেখান থেকেই রওনা করেন সকাল বেলাতেই বান্দরবান থাকার চেষ্টা করবেন। এরপর সময় নষ্ট না করে বাস অথবা জিপে থানচিতে চলে যান। থানচিতে আপনার প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নৌকায় রেমাক্রিতে চলে আসুন বিকেলের মধ্যে। রাতটা রেমাক্রিতে কাটিয়ে দিন। পরদিন সকালে রেমক্রি থেকে নাফাখুম জলপ্রপাত এর উদ্দেশ্যে রওনা করলে দুপুরের মধ্যে ঘুরে আসতে পারবেন। এরপর সময় নষ্ট না করে নৌকায় করে আবার থানচির উদ্দেশ্যে রওনা করুন। তারপর বাসে অথবা জিপে সন্ধ্যার মধ্যে বান্দরবান শহরে ফিরে আসুন। এদিন রাতে চাইলে বান্দরবান থাকতে পারেন, অথবা রাতের বাসে ঢাকা বা আপনার গন্তব্যে ফিরতে পারবেন।

নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণের সময়

সারা বছরই নাফাখুমে পর্যাপ্ত পানি থাকে। তাই এডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষজন বছরজুড়ে ছুটে যায় নাফাখুম ভ্রমণ এর উদ্দেশ্যে। বর্ষায় বেশিরভাগ সময় নাফাখুমের পানি বিপদসীমার বেশি থাকে বলে এই সময় নাফাখুম ভ্রমণের অনুমতি দেয়না স্থানীয় প্রশাসন। আবার শীতের শেষ থেকে গ্রীষ্মের শুরু পর্যন্ত (January to April) পানি অনেক কম থাকে বলে অনেকে এই সময়টায় যেতে পছন্দ করেন না। মোটের উপর বলা যায় বর্ষার শেষ থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত নাফাখুম ভ্রমণের সবচেয়ে সেরা সময়। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে যে মৌসুমেই যাননা কেন- নাফাখুম ভ্রমন আপনার জীবনে উল্লেখযোগ্য স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে আজীবন।

কম খরচে নাফাখুম ভ্রমণ

নাফাখুম ভ্রমণ খরচ মূলত বেশি হয় যাতায়ত খরচের কারণে। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে আপনি খরচ কমাতে পারবেন। যেহেতু এক জিপে সর্বোচ্চ ১৩ জন বসতে পারে, এবং এক নৌকাতে গাইড সহ ৫ জন বসতে পারে, তাই খরচ কমাতে চাইলে টিমের সদস্যসংখ্যর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ আপনার টিমের সদস্য সংখ্যা হতে হবে ৪, ৯ বা ১৩ জন।

উল্লেখযোগ্য খরচ সমূহ

ঢাকা থেকে বাস ভাড়া ৬২০ X ২ = ১২০০ (জনপ্রতি)
খাবার খরচ প্রতিবেলা গড়ে ১৫০ টাকা (জনপ্রতি)
বান্দবান থেকে থানচি আসা যাওয়া বাস ভাড়া ২০০ X ২ = ৪০০ টাকা
জিপে গেলে আসা যাওয়া ১২০০০ টাকা (টিমের সবার মধ্যে ভাগ হবে।)
নাফাখুম ভ্রমনে গাইড ফি ৩০০০ টাকা (টিমের সবার মধ্যে ভাগ হবে।)
নৌকা ভাড়া ৪৫০০ টাকা (এক নৌকায় গাইড সহ সর্বোচ্চ ৫ জনের পারমিশন। )
নাফাখুমে থাকার খরচ ১৫০ টাকা। (জনপ্রতি)

নাফাখুম ভ্রমণ টিপস এবং সতর্কতা

⦿নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণে জাতীয় পরিচয় সাথে রাখুন।
⦿খরচ কমাতে চাইলে দলগতভাবে ভ্রমণ করুন।
⦿ট্রেকিং এর জন্য প্লাস্টিক অথবা রাবারের স্যন্ডেল ব্যবহার করুন।
⦿পানির বোতল, শুকনো খাবার, টর্চ লাইট, স্যাভলন, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ফার্স্ট এইড সাথে রাখুন।
⦿বর্ষায় নাফাখুম জলপ্রপাত গেলে রেমাক্রি খাল পার হওয়ার জন্য দড়ি লাগবে। নিজেরা নিলে ভালো, অন্যথায় গাইডের কাছেও পাওয়া যাবে।
⦿ বর্ষায় লাইফ জ্যাকেট মাস্ট লাগবে।
⦿থানচির পর বিদ্যুত ও মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। ডিভাইস চার্জ দেওয়ার জন্য পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখুন।
⦿থানচির পর পান করার জন্য ঝিরির পানিই একমাত্র উৎস।
⦿একা একা কোথাও যাবেন না, পাহাড়ে পথ হারালে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। দলবদ্ধ ভাবে থাকুন।
⦿সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। পাশেরজনকে সহায়তা করুন।
⦿নাফাখুম জলপ্রপাত অনেক গভীর এবং নিচে বড়বড় পাথর ছড়ানো ছিটানো আছে। কোনোভাবেই উপর থেকে জলপ্রপাতে লাফ দিবেন না।
⦿পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন। প্লাস্টিক সহ কোনোপ্রকার অপচনশীল বস্তু পাহাড় ঝর্না ঝিরিতে ফেলবেন না।

নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণে দেখতে আরো পাবেন

চিম্বুক, নীলগিরি, সাঙ্গু নদী, থানচি, তিন্দু, রাজাপাথর বা বড়পাথর, পদ্মমুখ ঝিরি, রেমাক্রি পাড়া ও রেমাক্রি ফলস। আশেপাশে বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বগালেক, অমিয়খুম, কেওক্রাডং, স্বর্ণমন্দির দেবতাকুম, নীলাচল ইত্যাদি।

আরো দেখুন

Exit mobile version