বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত

বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত

বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত এর অবস্থান চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলায়। পাহাড় ঝর্ণা সমুদ্র সব মিলিয়ে সীতাকুন্ড উপজেলা প্রাকৃতিক রূপ বৈচিত্রে অনন্য। এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। তাই সারা বছরই এখানে সারা দেশ থেকে প্রচুর ভ্রমণপিপাসু মানুষ বেড়াতে আসেন। ঝাউ বাগান, জেগে উঠা ঘাসের চর, বালির মাঠ, খোলা সমুদ্রের হাওয়া সব মিলিয়ে কিছুটা সময় আপনি প্রকৃতির মাঝে কাটিয়ে দিতে পারবেন। এখানে সূর্যাস্ত অনেক বেশি মনোমুগ্ধকর। বিকেলটা আপনার কাছে বেশি ভালো লাগবে। এই বিচ এর মূল আকর্ষণ একটা লোহার ব্রিজ। এই ব্রিজ এর উপর দিয়ে আপনি সমুদ্রের উপর হাঁটতে পারবেন। বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত এর পাশে গুলিয়াখালী সৈকত নামে আরো একটি বিচ আছে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত যাওয়ার জন্য চট্টগ্রামী বাসে উঠে সীতাকুন্ড বাজার পার হয়ে বাঁশবাড়িয়া বাজারে নামতে হবে। এটি চট্টগ্রাম এর আগেই পরবে। বাসে উঠে সুপারভাইজারকে আগে থেকে বলে রাখবেন আপনাকে যেন বাঁশবাড়িয়া নামিয়ে দেয়। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ, সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। এসব টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন সহ সব বড় কোম্পানির বাস আছে এই রুটে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত আসতে সময় লাগে পাঁচ ঘন্টা। বাসের মান ভেদে ভাড়া ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম থেকে আসতে চাইলে চট্টগ্রামের একে খান বা অলংকার মোড় থেকে সীতাকুন্ড যাওয়ার লেগুনা পাবেন। ভাড়া জনপ্রতি ৩০/৪০ টাকা। যেতে ৪০/৪৫ মিনিটের মতো সময় লাগতে পারে। চট্টগ্রাম থেকে বাঁশবাড়িয়ার দূরত্ব ২৫ কিলোমিটারের মতো।

ট্রেনে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম মেইল নামে একটা ট্রেন আছে। এই ট্রেনটা সীতাকুন্ড দাঁড়ায়। এছাড়া সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যাবেন মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী বাসে করে সীতাকুন্ড বাজার পার হয়ে বাঁশবাড়িয়া নামতে হবে। মহিপাল থেকে বাঁশবাড়িয়ার বাস ভাড়া ৮০ থেকে ১২০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।

যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে আসা চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে বাঁশবাড়িয়া বাজারে আসা যাবে।

বাঁশবাড়িয়া বাজারে নেমে সিএনজি নিয়ে ১৫ মিনিটেই বাঁশবাড়িয়া সি বিচ যেতে পারবেন। রিজার্ভ সিএনজিতে ভাড়া পড়বে ৭০ থেকে ১০০ টাকা।

কোথায় খাবেন

বাঁশ বাড়িয়া সমুদ্র সৈকত এর পাশে সম্প্রতি কিছু খাবার দোকান হয়েছে। পর্যটকদের চাপ থাকলে তখন শুধুমাত্র ওগুলো খোলা থাকে। এছাড়া সীতাকুন্ড বাজারে আপনি খেতে পারবেন। খাবারের জন্য হোটেল সৌদিয়া, আল আমিন ও আপন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এখানে আপনি ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ডাল, সবজি ইত্যাদি মেন্যু হিসেবে পাবেন। খাবার খরচ পড়বে প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো। রাতের বাসে গেলে সকালের ব্রেকফাস্টও এখানে সেরে নিতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

সীতাকুন্ড বাজারে মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ এর জন্য একটা বিকেলই যথেষ্ট। আপনি একদিনের ট্যুর প্ল্যান করলে আশেপাশে আরো অনেককিছু দেখতে পারবেন। পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে অনেকগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান রয়েছে। বাঁশবাড়িয়ার কাছেই রয়েছে সীতাকুন্ড ইকো পার্ক,  গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, ঝরঝরি ঝর্ণা আর সোনাইছড়ি ট্রেইল। সীতাকুন্ড ইকোপার্ক এর ভিতরে আছে  সুপ্তধারা ঝর্ণা, সহস্রধারা ঝর্ণা। কাছেই চন্দ্রনাথ পাহাড়। আপনি কতগুলো স্পট ভ্রমণ করতে পারবেন সেটা নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। আর হাইওয়ে ধরে সীতাকুন্ড থেকে ঢাকার দিকে দশ কিলোমিটার এগুলে পাবেন কমলদহ ঝর্ণা। যদি বিশ কিলোমিটার যান তাহলে  খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার ট্রেইল পাড়বে। ভ্রমণ বিষয়ে আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।

বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ সতর্কতা

স্থানীয় মতামতকে কখনোই অগ্রাহ্য করবেন না। ভাটার সময় কোনোভাবেই সমুদ্রে নামবেন না। তখন সাঁতার কাজে দিবেনা। শান্ত সমুদ্রে শুধুমাত্র ভাটার সময় নামার কারণে গত কয়েক বছরে অনেকেই বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত বেড়াতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই ১৫ থেকে ২৩ বছর বয়সী। যাদেরকে ভাটার কারণ দেখিয়ে স্থানীয়রা সমুদ্রে নামতে নিষেধ করেছিলো। কিন্তু উনারা নিষেধ অমান্য করেই সমুদ্রে নেমেছে। এই বয়সে স্থানীয়দের মতামতকে অগ্রাহ্য করার প্রবণতা থাকে অনেক তরুণের মধ্যে।

আরো পড়ুন