সেন্টমার্টিন হোটেল রিসোর্ট রিভিউ

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দ্বীপ সেন্টমার্টিন। ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে থাকার জন্য ছোট বড় প্রায় ১৫০টি হোটেল রিসোর্ট রয়েছে। সেন্টমার্টিন যেহেতু শুধুমাত্র শুকনো মৌসুমে যাওয়া যায়, তাই অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত এখানে পর্যটকের ভিড় লেগেই থাকে। সেন্টমার্টিন রিসোর্ট হোটেল সমূহে থাকার জন্য রুম ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত। বন্ধের দিন গুলোতে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করতে চাইলে আগে থেকে হোটেল রিসোর্ট বুকিং করা লাগে।

সেন্টমার্টিনের রিসোর্ট সমূহ

সেন্টমার্টিনে থাকার জন্য যে রিসোর্ট সমূহ রয়েছে সেগুলোকে অবস্থানের ভিত্তিতে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। পূর্ব বিচ এর রিসোর্ট, পশ্চিম বিচ রিসোর্ট, এবং উত্তর বিচ রিসোর্ট। এর মধ্যে পশ্চিম বিচ হলো সেন্টমার্টিনে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো। উত্তর বিচ হলো জেটি ঘাট এর কাছে বাজার এরিয়া। যারা কম বাজেটে রুম চাচ্ছেন তারা এই রিসোর্টে থাকতে পারেন। সেন্টমার্টিনে থাকার অনেকগুলো হোটেল ও রিসোর্ট আছে। এগুলোর ভাড়া সিজন ভেদে উঠানামা করে। তবে ডিসেম্বর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারীতে ভাড়া সর্বোচ্চ থাকে। সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আগে থেকে হোটেল-রিসোর্ট কনফার্ম করে যাওয়াই ভালো। কারণ সিজনের সময় সপ্তাহর মাঝামাঝিতেও ভালো রিসোর্ট গুলোতে রুম ফাঁকা থাকেনা।

Dwipantar Beach Resort
ছবি : দ্বীপান্তর বিচ রিসোর্ট
দ্বীপান্তর বিচ রিসোর্ট: ভিউ ফ্যাসিলিটিজ ও কোয়ালিটি বিবেচনায় এটি সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে সেরা রিসোর্ট। সমুদ্র লাগোয়া এই রিসোর্টের স্থাপত্যশৈলী চমৎকার। আলাদা আলাদা বিচ কটেজ বাদেও এখানে রয়েছে কাঠের ডুপ্লেক্স রুম। রয়েছে কাঠের দোতলা রেস্টুরেন্ট। যেখানে খোলা ছাদে বসে গায়ে সমুদ্রের হাওয়া মেখে সমুদ্র উপভোগ করা যায়। ফ্যামিলি নিয়ে থাকার জন্য এটি সবচেয়ে ভালো। রিসোর্টে রুম ভাড়া রুম ভেদে ৪০০০  থেকে ৮০০০ টাকা। স্টুডিও রুম ৪০০০ টাকা, এক্সক্লুসিভ কটেজ ৫০০০ টাকা, প্রিমিয়াম কাপল কটেজ ৬০০০ টাকা, এবং  ডুপ্লেক্স কটেজ ৮০০০ টাকা।
ফেসবুক পেজঃ Dwipantor Beach Resort
গুগল ম্যাপঃ Dwipantor Beach Resort
ফোন নাম্বার:  01886-363232, 01884-710723
এসকেডি রিসোর্ট: এই রিসোর্টটি পশ্চিম বিচের চমৎকার একটি বিচ রিসোর্ট। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে সমুদ্র পাড়ের এই রিসোর্টটি পরিবার নিয়ে থাকার জন্য বেশ ভালো। তবে এটি জেটি ঘাট থেকে বেশ দূরে। এখানে রুম ভাড়া পাওয়া যাবে ২৫০০ থকে ৩৫০০ টাকায়। ফোন নাম্বার: 01717000966
ব্লু মেরিন রিসোর্ট : সেন্টমার্টিনের আরেকটি সুন্দর রিসোর্ট হলো ব্লু মেরিন রিসোর্ট। এখানে আরো কিছু বাড়তি সুযোগ সুবিধা ব্যবস্থা আছে যেমন পার্টি জোন, হল রুম ইত্যাদি। কর্পোরেট ট্যুরের জন্য এটি বেশি ব্যবহৃত হয়। রুম ভাড়া ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01713-399001
সীমানা পেরিয়ে রিসোর্ট: এই রিসোর্টের অবস্থান পশ্চিম বিচে, ভ্যানে করে যেতে হবে। এতে চোদ্দটি রুম ও একটি নিজস্ব রেস্ট্যুরেন্ট আছে। এর ভাড়া এক হাজার পাঁচশো থেকে দুই হাজার পাঁচশো টাকা।
ফোন নাম্বার: 01911-121292
কোরাল ভিউ রিসোর্ট: এই রিসোর্টটি নৌবাহিনী পরিচালনা করে। এটি সেন্টমার্টিনের পূর্ব বিচে। জেটি থেকে বেশ খানিকটা দূরে বলে ভ্যান/বোট নিয়ে যেতে হবে। এর আয়তন অনেক বড়ো এবং রুমগুলো থেকে মোটামুটি সমুদ্র দেখা যায়। এর রুমপ্রতি ভাড়া দুই হাজার পাঁচশো টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01859-397045
হ্যাভেন বিচ রিসোর্ট: এই হোটেলটির অবস্থান সেন্টমার্টিন এর জেটি ঘাট এর কাছে উত্তর বিচে। রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা। ফোন নাম্বার: 01868066339
দ্য আটলান্টিক রিসোর্ট: (আগের নাম ছিলো লাবিবা বিলাস) সুপ্রশস্ত এই দ্বিতল রিসোর্টে এর অবস্থান উত্তর বিচে।  রুম ভাড়া রুম ভেদে দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা। আটলান্টিক রিসোর্ট সেন্টমার্টিন হোটেল ফোন নাম্বার : 01719584899
সমুদ্র বিলাস রিসোর্ট: পশ্চিম বিচের এর রিসোর্টটি সাদামাটা আর দশটা রিসোর্টের মতোই। তবে এর একটি বিশেষত্ব আছে। এটি মূলত হুমায়ূন আহমেদ এর বাড়ি। এখানে রুম ভাড়া সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01911-920666
প্রাসাদ প্যারাডাইস: জেটি ঘাট এর কাছে এটি আরেকটি বিচ রিসোর্ট। রুম পরিচ্ছন্ন। রুম ভাড়া পড়বে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। ফোন নাম্বার: 01556347711
নীল দিগন্তে রিসোর্ট: সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সুন্দর একটি রিসোর্ট। এখানে সবগুলো রুমই টিনশেড। রুম ভাড়া দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা। কোনো বিচ ভিউ রুম নেই।
ফোন নাম্বার: 01730-051005
সি ভিউ রিসোর্ট এন্ড স্পোর্টস: এই রিসোর্টের অবস্থান জেটি ঘাট এর পাশে উত্তর বিচেই। কম খরচে থাকার জন্য এটি ভালো একটি রিসোর্ট। রুম ভাড়া দেড় থেকে তিন হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার:  01840-477957
হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজ: এই দ্বিতল হোটেলটির অবস্থান ব্লু মেরিনের কিছুটা উত্তরে। কম খরচে থাকার জন্য এটিও ভালো একটি রিসোর্ট। বিচ থেকে একটু দূরে বলে অল্প কয়েকটি রুম থেকে সমুদ্রের খানিকটা দেখা যায়। প্রাসাদ প্যারাডাইজের প্রতিটি রুমের ভাড়া দুই হাজার থেকে চারহাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01556-347711
হোটেল সী ইন: সেন্টমার্টিন বাজারের মূল রাস্তা ধরে পাঁচ মিনিট হাটলেই এই হোটেলটির অবস্থান। স্টুডেন্ট বা কম খরচে যারা থাকতে চান তাদের জন্য এটি ভালো একটি হোটেল। এখানে রুম ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
ফোন নাম্বার: 01764-190586
সমুদ্র কুটির: এটি পশ্চিম বিচ এর একটি বিচ রিসোর্ট। সেন্টমার্টিন জেটি ঘাট থেকে কিছুটা দূরে হলেও এটি বেশ ভালো একটি বিচ রিসোর্ট। রুম ভাড়া পড়োবে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। ফোন নাম্বার : 01858222521
সি প্রবাল রিসোর্ট: উত্তর বিচে কম খরচে থাকার আরেকটি ভালো রিসোর্ট সি প্রবাল। এর রুম ভাড়া ১২শ থেকে ২৫শ পর্যন্ত। স্টুডেন্ট কিংবা যারা কম খরচে থাকতে চান তারা এই রিসোর্টে থাকতে পারবেন। 
ফোন নাম্বার: 01756-208383
প্রিন্স হ্যাভেন রিসোর্ট: জেটি ঘাটের কাছে সেন্টমার্টিন হোটেল প্রিন্স হ্যাভেন একটি বাজেট রিসোর্ট। যারা কম খরচে সেন্টমার্টিন যেতে চান তারা এই রিসোর্টটি বেছে নিতে পারেন। রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। ফোন নাম্বার +8801601222456
এগুলো ছাড়াও সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাত্রিযাপনের জন্য কোরাল ব্লু, ড্রিম নাইট, সায়রি, অবকাশ, স্যান্ড শোর, ব্লু লেগুন, সিটিবি ইত্যাদি রিসোর্ট পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।

আরো পড়ুন

ট্রাভেল বিষয়ে নিয়মিত আপডেট থাকতে, কক্সবাজার সাজেক সেন্টমার্টিন হোটেল ফোন নাম্বার সহ বিস্তারিত জানতে জয়েন করুন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers ফেসবুক গ্রুপে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- সেন্টমার্টিন এর কোনো হোটেল বা রিসোর্ট এর সাথে কোন প্রকার আর্থিক লেনদেন নিজ দায়িত্বে করতে হবে। আর্থিক লেনদেন এর বিষয়ে গ্রিন বেল্ট কোনো দায় দায়িত্ব বহন করবে না।

ভারতীয় ভিসা

একই সময়ে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা। উত্তর ভারতে যখন বরফ পড়ে; দক্ষিণে তখন গরম। একপাশে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। অন্যপাশে পাহাড় আর মরুভূমি। এই হচ্ছে বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারতের দৃশ্য। শিক্ষা চিকিৎসা, বানিজ্য কিংবা ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের ভারতে যাওয়া হয়ে থাকে। কিছু নিয়মাবলীর মেনে খুব সহজেই ভারতে যাওয়া যায়৷ এর জন্য সর্ব প্রথম প্রয়োজন ভারতীয় ভিসা।

বাংলাদেশীদের জন্য ভারতীয় স্টেট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে ১৫টি ভারতীয় ভিসা আবেদনপত্র কেন্দ্র বা আইভ্যাক আছে। সেগুলো হচ্ছে ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্ক, যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা, বগুড়া, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এ অবস্থিত। ভারত ভ্রমণ এর বিস্তারিত গাইডলাইন নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করবো।

ভারতীয় ভিসা আবেদন এর নিয়মাবলী

সব ধরণের ভারতীয় ভিসা ওয়াক-ইন পদ্ধতিতে কোন অনলাইন সাক্ষাতের তারিখ ছাড়া গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী যারা চট্টগ্রাম বিভাগ, রাজশাহী বিভাগ,  সিলেট বিভাগ, খুলনা বিভাগ ব্যতীত অন্যান্য বিভাগ বসবাস করছে তারা ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্ক, ময়মনসিংহ, যশোর এবং বরিশালে ভিসা আবেদনপত্র কেন্দ্র থেকে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারে। যেসব পাসপোর্টধারী চট্টগ্রাম বিভাগ এর বাসিন্দা কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া তারা চট্টগ্রামের ভিসা আবেদনপত্র কেন্দ্র থেকে  ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বাংলাদেশী নাগরিক, যারা রাজশাহী বিভাগে বাস করছে, তারা রাজশাহী বা  রংপুরের ভিসা আবেদনপত্র কেন্দ্র থেকে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

যারা সিলেট বিভাগে আওতাভুক্ত বসবাসকারী তারা সিলেট মিশন বরাবর আবেদন করবে। যারা খুলনা জেলা আওতাভুক্ত বসবাসকারী তারা খুলনা মিশন বরাবর আবেদন করবে। ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদনকারী বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদেরও কোন ভিসা ফি প্রয়োজন নেই।

বাংলাদেশের যেকোন আইভ্যাক (Indian Visa Application Center)  এ ভিসার জন্য আবেদন পত্র জমা দেয়ার আগেই আবেদনকারী সকল ব্যক্তিবর্গেরও ভিসা প্রসেসিং ফি  পরিশোধ করতে হবে। আপনি বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও যদি আপনার কাছে অন্যদেশের পাসপোর্ট থাকে তবে বৈদেশিক পাসপোর্ট দ্বারা ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

ভিসা আবেদনপত্র প্রত্যাখ্যান

আপনার ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে যদি আপনি জীবনের জন্য হুমকীসরূপ কোন রোগে ভোগেন, মানসিক রোগে ভোগেন। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্য ভারত ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়া মাদকাসক্ত বা মাদক পাচার করেন, অপরাধী বা কোন দেশে কোন অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে থাকেন, কোন দেশ হতে দ্বীপান্তুরিত বা বহিষ্কৃত হয়ে থাকেন, অপর্যাপ্ত/ অসম্পূর্ণ/ মিথ্যা কাগজপত্র দিয়ে থাকেন, অবৈধ ভ্রমণ নথির অধিকারী হয়ে থাকেন, প্রাসঙ্গিক কোন তথ্য গোপন করে থাকেন অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে এমন কোন ভিত্তিতে, যা আবেদনকারীকে ভিসার জন্য অযোগ্য হিসাবে পেশ করবে। কোনো কারণে ভিসা আবেদন রিজেক্ট হলে কী কারণে রিজেক্ট হলো তা আবেদনকারীর কাছে মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে জানানো হবেনা।

ভারতীয় ভিসা আবেদন পদ্ধতি

ভারতীয় টুরিস্ট ভিসা আবেদন এর নিয়মাবলী ও আবেদন এর জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে এগুলো হলো-

⦿ পাসপোর্ট এর ফটোকপি। (প্রথম দুই পেজ)

⦿ ভোটার আইডি কার্ড/ জন্মনিবন্ধন/ স্মার্ট কার্ড এর ফটোকপি (যে ডকুমেন্ট দিয়ে পাসপোর্ট করেছেন।)

⦿ বিদ্যুৎ বিল অথবা ওয়াসার বিল অথবা টেলিফোন বিল এর ফটোকপি।

⦿ যেখানে কর্মরত আছেন সেই কোম্পানির নাম এবং ডেজিগনেশন। শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর আইডি কার্ড। যিনি অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি তার ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত কাগজপত্র থাকতে হবে। ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে তার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। গৃহিনী হলে বাড়তি কিছু লাগবেনা।

⦿ ইন্ডিয়ান ভিসা সাইজ ছবি। ( ২ ইঞ্চি বাই ২ ইঞ্চি সাইজের রঙিন ছবি। ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা হতে হবে এবং ছবি পূর্বের কোন ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এমন হওয়া যাবে না। )

⦿ যেইদিন ভিসার আবেদন করবেন আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ সেইদিন থেকে কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে।  অন্তত দু’টি সাদা পাতা থাকতে হবে পাসপোর্টে।

⦿ পুরাতন পাসপোর্ট থাকলে নতুন পাসপোর্টের সাথে পুরোনো পাসপোর্টও জমা দিতে হবে।

⦿ আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ স্বরূপ পাসপোর্টে কমপক্ষে ১৫০ মার্কিন ডলার সমমানের বৈদেশিক মুদ্রার এসডোর্সমেন্ট করতে হবে। ক্রেডিট কার্ড থাকলে কার্ডে এনডোর্স করলেই হবে।

⦿ সর্বশেষ ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর অনুলিপি দিতে হবে। একাউন্টে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা ব্যালেন্স থাকলে ভালো হয়।

⦿ আবেদনকারীকে তাদের ছবি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে অনলাইন এপ্লিকেশন ফরম এ দেয়া নির্ধারিত স্থানে। আবেদনকারীকে অবশ্যই নিশ্চিত থাকতে হবে যেন বর্তমান পাসপোর্টের জন্মতারিখ এবং জন্মস্থান এর সাথে পুরোনো পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং/ অথবা জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্যের মিল থাকে। আবেদনপত্র পূরণ করার পর অবশ্যই ৮ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে |

⦿ ভারতে শিক্ষার্থী ভিসার উপর আগত ১৮ বছরের নীচের সন্তানের বাবা-মা / আইনী অভিভাবকরা এন্ট্রি ভিসা বিভাগের অধীনে আবেদন করতে পারেন, ১৮ বছরেরও বেশি বয়সের সন্তানের বাবা-মা ভারত ভ্রমণের জন্য পর্যটন ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

ভারতীয় বিজনেস ভিসা

ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে ভারত গমনে ইচ্ছুক ব্যাক্তিগণ চাইলে ভারতের বিজনেস ভিসা নিতে পারবেন। বিজনেস ভিসার জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত  ডকুমেন্ট প্রয়োজন সেগুলো হলো-

⦿ বাংলাদেশে আবেদনকারীর প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ের নাম, ঠিকানা ও যোগাযোগের নম্বর। ভারত থেকে যে প্রতিষ্ঠান/ কোম্পানী স্পন্সর করছে, তার চিঠি।

⦿ বাংলাদেশের স্বীকৃত কোন চেম্বার অব কমার্স থেকে সুপারিশ চিঠি, কোন ভারতীয় কোম্পানীর সাথে হয় শেষ ব্যবসায়িক লেনদেন এর ব্যাপারে, নতুবা ব্যবসায়িক লেনদেনের আবেদনপত্র।

⦿ টিন সহ ট্রেড লাইসেন্স এর একটি কপি, সফরের উদ্দেশ্য এবং ব্যবসায়িক চুক্তির প্রকৃতি বর্ণনা করে সহায়ক পত্র, বিগত ছয় মাসের আবেদনকারীর কোম্পানীর ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর কপি।

⦿ কোন কোম্পানী বা প্রাইভেট ফার্মে কর্মরত থাকলে, কর্মসংস্থান চুক্তিপত্রের কপি যেটাতে আবেদনকারীর চুক্তিবদ্ধ হওয়ার তারিখ, অধিষ্ঠিত পদ এবং মাসিক বেতন উল্লেখ থাকবে |

⦿ ভারতে কোন বাণিজ্য / ব্যবসায় প্রদর্শনী/মেলায় অংশগ্রহণ করতে বা ঘুরতে গেলে, অংশগ্রহণের ধরণের বর্ণনা এবং ফেডারেশনের  সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অথবা প্রদর্শনী কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ পত্র। স্বল্পমেয়াদী একক সফর ভিসা।

ভারতীয় মেডিকেল ভিসা

⦿ টুরিস্ট ভিসার সাধারণ কাগজপত্র (উপরে উল্লেখিত আছে)।

⦿ নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে ভারত থেকে মেডিকেল আমন্ত্রণ পত্র, সব ঔষধ মূল নথি,পেশা প্রমাণ। স্বীকৃত হাসপাতাল/ ডাক্তার এর কাছ থেকে রোগীর চিকিৎসাধীন অবস্থার বিশদ নির্দেশ সহকারে চিকিৎসার মূল সনদপত্র।

⦿ প্রথম ভ্রমণের ক্ষেত্রে, বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা উপভোগের জন্য উপস্থিত ডাক্তারের কাছ থেকে সুপারিশ।

⦿ হাসপাতালে ভর্তি বা দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য, আর্থিক সম্পদের প্রমাণ, যেমনটি প্রয়োজন হতে পারে: ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর কপি (বিগত ৬ মাসের) ও ব্যাংক থেকে সচ্ছলতার সনদ।

পাসপোর্টে ডলার এন্ডোর্স

সরকারি বেসরকারি যেকোন ব্যাংক থেকেই আপনি ডলার এনডোর্স্মেন্ট করতে পারেন। তবে সাধারণত সরকারি সোনালি ব্যাংক থেকে করাটাই সুবিধাজনক ও বেশিরভাগ মানুষ করে থাকে। কারণ সোনালী ব্যাংকে একাউন্ট থাকা লাগে না।

আপনি পাসপোর্ট নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে বললেই হবে যে আপনি ডলার কিনবেন। তাহলে ওরা আপনাকে ওইদিনের রেট অনুযায়ী টাকা হিসেব করে আর সার্ভিস ফি নিয়ে ডলার দিবে ও পাসপোর্টের শেষের দিকে পাতায় সিল মেরে দিবে। সাথে একটা কাগজ দিবে এটা হল ‘এনডোর্স্মেন্ট সার্টিফিকেট’।

বর্ডার ও ইমিগ্রেশন

যারা স্থলপথে ভারত যান, বেশিরভাগ মানুষই সাধারণত বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করেন। সবগুলো স্থলবন্দরেই মূল নিয়মাবলী একই। আগে থেকে ট্রাভেল ট্যাক্স জমা না দিয়ে থাকলে প্রথমে বর্ডারে গিয়ে সোনালী ব্যাংকে ট্রাভেল ট্যাক্স জমা দিতে হবে। এরপর প্রথমে কাস্টমস ও পরে ইমিগ্রেশন এর লাইনে দাঁড়িয়ে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে হয়। সব কাজ শেষ করে বর্ডার ক্রস করতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগতে পারে। ভারতে যাওয়া ও ফেরার সময় ভারতীয় কাস্টমস প্রায়ই বাংলাদেশী যাত্রীদের হয়রানি করে। কোনো কারণ ছাড়াই ১/২শ রুপি/টাকা ঘুষ দাবি করে। আপনার কাছে চাইলে এর প্রতিবাদ করুন।

বৈদেশিক মুদ্রা

অনেকেরই প্রশ্ন থাকে একজন যাত্রী সর্বোচ্চ কত ডলার পর্যন্ত সাথে করে নিয়ে যেতে পারবে? ভারত ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে আপনি বছরে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ডলার নিতে পারবেন। ১২ বছরের কম বয়সী যাত্রী একজন প্রাপ্তবয়স্ক যাত্রীর অর্ধেক পরিমান ডলার সাথে নিতে পারবে।

বাংলাদেশে ফেরার সময় আপনি যে কোন অংকের বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে আনতে পারবেন। এনডোর্সমেন্ট লাগবেনা। তবে ৫,০০০ মার্কিন ডলার বা এর বেশি হলে নির্ধারিত FMJ ফরমে শুল্ক কর্তৃপক্ষের নিকট ঘোষণা দিন আপনার কাছে এর বেশি পরিমান টাকা আছে। এর জন্য কোনো শুল্ক প্রদান করতে হবেনা।

চিকিৎসার কাজে ডাক্তারি কাগজপত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে ১০,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত নেয়া যাবে। তার অতিরিক্ত দরকার হলে যেকোন অথরাইজড ব্যাংককে প্রয়োজনীয় কাজগপত্র দেখালেই চলবে! প্রয়োজন সাপেক্ষে অতিরিক্ত মুদ্রার অনুমোদন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাঁরাই নিয়ে দিবেন। শিক্ষাজনিত কাজে নেয়া যাবে ভ্রমণ কোটার সমান ডলার। তবে  টিউশন ফি, হোস্টেল ফি এসব ব্যাংকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ মুদ্রা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগেভাগেই জমা দেয়া যাবে কোটার বাইরে। ফরেইনার, এনআরবি’দের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি মুদ্রা সীমার শর্ত ছাড়া অন্য কোটা শর্ত খাটবেনা। যেই পরিমাণ বোইদেশিক মুদ্রা নিয়ে দেশে এসেছেন অনধিক সেই পরিমাণ মুদ্রা পাসপোর্টে এনডোর্স ছাড়াই নিয়ে যেতে পারবেন।

আরো পড়ুন

ট্রাভেল সংক্রান্ত তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers এ।

সাজেক ভ্যালি রিসোর্ট রিভিউ

সাজেক ভ্যালিতে থাকার জন্য ছোট বড় প্রায় ১০০টি রিসোর্ট রয়েছে। সাজেক ভ্যালি রিসোর্ট সমূহে থাকার জন্য জনপ্রতি সর্বনিন্ম খরচ হয় ৬শ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। শুক্রবার বা ছুটির দিন এর সাথে অন্যান্য দিনের রুম ভড়ায় পার্থক্য থাকে। ভালো রিসোর্টগুলো সাধারণত  সপ্তাহে ৭ দিনই ফুল বুক থাকে। তাই ভালো রিসোর্টে থাকতে চাইলে আগে থেকে রুম বুকিং দিয়ে যাওয়াই ভালো। সাজেক রিসোর্ট ও কটেজ গুলো নিয়ে আজকের রিভিউ।

সাজেকের ভ্যালি রিসোর্ট ও কটেজ এর ফোন নাম্বার

রিসোর্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রিসোর্টের কোয়ালিটি ও রিসোর্টের অবস্থানকে প্রাধান্য দিবেন। ভিউ খুব একটা ইমপর্টেন্ট না। কারণ সব রিসোর্ট থেকেই কমবেশি ভিউ পাওয়া যায়। রিসোর্ট থেকে বের হলে ভিউতো আছেই। অনেক সময় এরকম দেখা যায় রিসোর্টের ভিউ ভালো, কিন্তু কোয়ালিটির কারণে ওয়াশরুমে ঢোকা যাচ্ছেনা। কিংবা বিছানা ও রুম এতটাই নোংরা, যে থাকার অনুপযোগী। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রিসোর্টের অবস্থান। কিছু রিসোর্ট আছে সাজেকের বাইরে। আবার কিছু রিসোর্ট এমন একটা অবস্থানে যেখান থেকে মূল পয়েন্টে আসতে অনেক বেশি সময় নষ্ট হবে। তাই এই আর্টিকেলে আমরা রিসোর্টের কোয়ালিটি, অবস্থান এবং ভিউ এর সমন্বয় রাখার চেষ্টা করেছি।

রিসোর্ট রুংরাং
রুংরাং রিসোর্ট


রিসোর্ট রুংরাং:
সাজেকের বেস্ট রিসোর্ট গুলোর মধ্যে একটি রিসোর্ট রুংরাং। রিসোর্টের বারান্দা থেকে দিগন্তজোড়া পাহাড়সারি ও মেঘ দেখতে পাবেন। এর অবস্থান আর্মি রিসোর্টের উল্টো পাশে প্রিমিয়াম লোকেশনে। এই রিসোর্টের ইন্টেরিয়র এবং ওয়াশরুম সাজেকের অন্যতম সেরা। রিসোর্টে কাপল ডাবল মিলিয়ে ৮টি রুম আছে। শুক্রবারে এর রুম ভাড়া পড়বে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মতো। অন্যান্য দিন ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে রুম পাবেন। রুংরাংয়ের বুকিং নাম্বার: 01869-649817, 01632-698158, 01884-710723। ফেসবুক পেজ: Resort RungRang

সাজেক রিসোর্ট: এই রিসোর্টটি বাংলাদেশ আর্মি কর্তৃক পরিচালিত। রুম ভেদে এসি ও নন এসি রুমের ভাড়া পড়বে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো। সাজেক রিসোর্টের রয়েছে নিজস্ব রেস্টুরেন্ট। সেনাবাহিনী বা প্রথম সারির সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য এখানে ডিসকাউন্ট এর ব্যবস্থা রয়েছে। সাজেক রিসোর্টে রুম ভাড়া নেওয়ার জন্য আর্মির রেফারেন্স লাগে। রুম বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন 01859-025694, 01847-070395 অথবা 01769-302370 নাম্বারে।

রুন্ময় রিসোর্ট (Runmoy Resort) : এটি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ দ্বারা পরিচালিত রিসোর্ট। এই রিসোর্টের মোট ৫ টি রুম আছে। প্রতিটি রুমে সর্বোচ্চ ২ জন থাকার ব্যবস্থা আছে। ৬০০ টাকা বাড়তি পরিশোধ করলে রুমে অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করা হয়। নিচতলার রুম ভাড়া ৪৪৫০ টাকা, উপরের তলার রুম ভাড়া ৪৯৫০ টাকা। বুকিংয়ের জন্য ফোন করতে পারেন 0186547688 নাম্বারে।

মেঘ মাচাং (Megh Machang): ব্র্যান্ডিং বিবেচনায় এটি সাজেকের অন্যতম একটি রিসোর্ট। এর ভিউ সাজেকের অন্যতম সেরা। মেঘ মাচাংয়ের রুম রয়েছে ৫টি। এখানে রুম বুকিং দেওয়ার জন্য অনেক আগে থেকে ফোন করতে হয়। রুম ভাড়া ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন 01822-168877 নাম্বারে।

মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট: সাজেকের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট। এর অবস্থান সাজেক ভ্যালির মাঝামাঝিতে। এই রিসোর্টে রয়েছে ৪টি রুম। রুম ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। বুকিং নাম্বার 01884-208060

জুমঘর রিসোর্ট: এটি সাজেকের আরেকটি ভালো রিসোর্ট। এর অবস্থান সাজেক ভ্যালির চার্চের কাছাকাছি। জুমঘর রিসোর্ট এর রুম ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন 01884-208060 নাম্বারে।

সাজেক রিসোর্ট বুকিং এজেন্ট: সাজেকের রিসোর্ট গুলো বুকিংয়ের জন্য অনেকগুলো বুকিং এজেন্ট আছে। আপনার বাজেটের মধ্যে চাহিদামতো রুম বুকিং করে দিতে পারবেন উনারা। উনাদের নিজেদেরও সাজেকে ৩টি রিসোর্ট রয়েছে। ফোন নাম্বার- 01810137002

রিসোর্ট রুংরাং: সাজেকের অন্যতম সেরা একটি রিসোর্ট রুংরাং। রিসোর্টের বারান্দা থেকে দিগন্তজোড়া পাহাড়সারি ও মেঘ দেখতে পাবেন। এর অবস্থান আর্মি রিসোর্টের উল্টো পাশে প্রিমিয়াম লোকেশনে। এই রিসোর্টের ইন্টেরিয়র এবং ওয়াশরুম সাজেকের অন্যতম সেরা। শুক্রবারে এর রুম ভাড়া পড়বে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মতো। অন্যান্য দিন ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে রুম পাবেন। রুংরাংয়ের বুকিং নাম্বার: 01869-649817

ম্যাডভেঞ্চার রিসোর্ট: লোকেশন ও ভিউ বিবেচনায় সাজেক এর ভালো একটি রিসোর্ট। এর অবস্থান আর্মি নিয়ন্ত্রণাধীন সাজেক রিসোর্ট এর উল্টোপাশে।  এখানে রুম ভাড়া পড়বে ২০০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকার মতো। গ্রিন বেল্ট এর রেফারেন্স দিলে বিশেষ ডিস্কাউন্ট সুবিধা পাওয়া যাবে। ফোন নাম্বার +8801885424242

হাফং তং: এটিও বাজেটের মধ্যে ভালো একটি রিসোর্ট। এই রিসোর্টে ৫টি রুম রয়েছে। রুম ভাড়া পড়বে। ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন 01875-999678 নাম্বারে।

মেঘ বাড়ি হিল কটেজ: কম খরচে থাকার জন্য এটি সাজেকের আরেকটি ভালো রিসোর্ট। ৬টি রুম রয়েছে এই রিসোর্টে। এখানে রুম ভাড়া পড়বে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। এখানে রুম বুকিংয়ের সময় গ্রিন বেল্ট এর রেফারেন্স দিলে বিশেষ ডিস্কাউন্ট সুবিধা পাওয়া যাবে।  রুম বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন 01884-710723 নাম্বারে।

আলো রিসোর্ট:  আলো রিসোর্ট সাজেক ভ্যালি কটেজ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন। এটি সাজেক এর প্রথম কটেজ। কম খরচে থাকার জন্য এটি একটি ভালো রিসোর্ট। কোনো ভিউ নাই। এই রিসোর্টে রুম রয়েছে ৬টি। রুম ভাড়া পড়বে প্রতিরাতের জন্য ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা। বুকিং দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন 01841-000645 নাম্বারে।

লুসাই কটেজ (TGB Lushai Cottage): কাপল ডাবল সব রকম রুম আছে এই রিসোর্টে। মধ্যম মানের ভালো একটি রিসোর্ট। রুম ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মতো। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন 01634-198005 নাম্বারে।

সাম্পারি রিসোর্ট: খোলামেলা পরিবেশ এর জন্য এই রিসোর্ট এর সুনাম আছে। রিসোর্টের ভিউ ভালো। এটি পাহাড়ী আদিবাসী মালিকানাধীন একটি রিসোর্ট।এর রুম ভাড়া ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। ফোন নাম্বার 01849889055

সালকা রিসোর্ট: পাহাড়ি মালিকানায় পরিচালিত সালকা কটেজ আরেকটি ভালো রিসোর্ট। এখানে ৪টি রুম আছে। রুম ভাড়া পড়োবে ২৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। ফোন নাম্বার +8801847356781

পাহাড়িকা রিসোর্ট: কম বাজেটের মধ্যে এটি আরেকটি ভালো রিসোর্ট। স্টুডেন্ট বাজেট ট্রাভেলাররা এই রিসোর্টে কম খরচে থাকতে পারেন।পাহাড়িকা রিসোর্টে ১২টির মতো রুম রয়েছে। রুম ভাড়া পড়বে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এর বেশি চাইলে না নেওয়াই ভালো। বুকিং নাম্বার 01724-658766, 01871-771777

হিল কটেজ: বাজেটের মধ্যে ভালো একটি রিসোর্ট। এই রিসোর্টের লোকেশন বেশ ভালো। রিসোর্টের সামনেই ফুল ভিউ আছে। রুম ভাড়া ২০০০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকা পর্যন্ত। ফোন নাম্বার 01869-649817

খাসরাং রিসোর্ট: সাজেকের সবচেয়ে লাক্সারিয়াস রিসোর্ট। এখানে রুম ভাড়া ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা। ফোন নাম্বার- +8801838049742, +8801568496708

রক প্যারাডাইস: যারা কংলাক পাড়ার উপরে রাত্রি যাপন করতে চান তারা বেছে নিতে পারেন রক প্যারাডাইস কটেজ। তবে মনে রাখা দরকার এটি সাজেক ভ্যালির বাইরে আলাদা একটি পাড়ায়। নিরিবিলিতে থাকার জন্য ভালো রিসোর্ট। ফোন নাম্বার +8801855470477

আদিবাসী ঘর: আপনি ব্যাকপ্যাকার হলে কম খরচে আদিবাসীদের ঘরে থাকতে পারেন। জনপ্রতি ২০০ – ৪০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। ফ্যামিলি নিয়ে থাকার জন্য আদিবাসী ঘর ভালো চয়েস হবেনা। তবে বন্ধু বান্ধব মিলে চাইলে থাকা যায়। পরিবার নিয়ে গেলে সাজেক ভ্যালি রিসোর্ট Sajek Valley Resort গুলোতে থাকা উচিত।

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ

সাজেক ভ্যালিতে থাকা খাওয়া কিছুটা খরচ সাপেক্ষ। তাই নিজেরা গ্রুপ করে গেলে খরচ কমানো যেতে পারে। তারপরও খরচ সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়া যাক। জিপ ভাড়া ৮ থেকে ১১ হাজার টাকা। আপনি কী কী ঘুরবেন তার উপর জিপ ভাড়া নির্ভর করে। এক জিপে দশ থেকে বারো জন বসা যায়। খাবার জন্য প্রতি বেলা খরচ হবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। বিভিন্ন এন্ট্রি ফি ও জিপ পার্কিং চার্জ বাবদ খরচ হতে পারে জনপ্রতি ১৫০ টাকা। মনে রাখা দরকার সাজেকে রবি এবং এয়ারটেল ছাড়া আর কোনো ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। সাজেক ভ্রমণ এর টিপস সহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য পেতে নিচে দেওয়া গাইডলাইন পড়ুন। ট্যুর প্যাকেজ চাইলে এখানে দেখুন

আরো পড়ুন

ট্রাভেল বিষয়ে নিয়মিত আপডেট থাকতে জয়েন করুন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers ফেসবুক গ্রুপে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- কোনো কটেজ বা রিসোর্ট এর সাথে কোন প্রকার আর্থিক লেনদেন নিজ দায়িত্বে করতে হবে। আর্থিক লেনদেন এর বিষয়ে গ্রিন বেল্ট কোনো দায় দায়িত্ব বহন করবে না।

সাজেক ভ্যালি রিসোর্ট রুংরাং

সাজেক ভ্যালি ঘুরতে গেলে আপনার প্রথমেই দরকার পড়বে রিসোর্ট বা কটেজ এর। একটি ভালো রিসোর্ট আপনার ভ্রমণকে আনন্দময় করে তুলতে পারে। সাজেকে ছোট বড় অনেকগুলো রিসোর্ট আছে। এছাড়া থাকার জন্য রয়েছে আদিবাসীদের ঘর। তবে ফ্যামিলি সহ বেড়াতে গেলে আদিবাসী ঘরে থাকা উচিত হবেনা। আজকে আমরা কথা বলবো রুংরাং রিসোর্ট নিয়ে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য। প্রতিটি মৌসুমে সাজেক ভ্যালির আলাদা আলাদা সৌন্দর্য চোখে পড়ে। বর্ষাকালে সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য একরকম, শরতে একরকম আর শীতে অন্যরকম। তাই ভ্রমণপিপাসুরা বছরজুড়ে সাজেকে ছুটে আসেন।  তবে বর্ষার শুরু থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত, অর্থাৎ মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রকৃতি সবচেয়ে সতেজ থাকে বলে এসময় সাজেক বেশি সুন্দর। বর্ষাকালে সাজেক ভ্যালিতে সারাদিন মেঘ ভেসে বেড়ায় এখানে সেখানে। মেঘ এসে আপনাকে ঢেকে দিতে পারে যখন তখন।

রুংরাং রিসোর্ট

সাজেক এর প্রানকেন্দ্রে আর্মি রিসোর্ট থেকে কয়েকশ গজের মধ্যেই Sajek Valley Resort রিসোর্ট রুংরাং – Resort RungRang‘এর অবস্থান। দোতলা রিসোর্টের তিন পাশে খোলা বারান্দা। যতদূর চোখ যায় পাহাড়ের সারি। আর ভোর বেলা বারান্দা থেকে দেখা যায় মেঘের মিছিল! রুংরাংয়ের সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও পেছনের বারান্দা থেকে সূর্যাস্ত দেখা যায়। একই রিসোর্ট থেকে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় উপভোগ করার মতো কটেজ সাজেকে আর খুব একটা নেই।
রুংরাং রিসোর্টে বিদ্যুত সংযোগ আছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক সৌর বিদ্যুৎ এবং বিদ্যুত না থাকলে জেনারেটর এর ব্যবস্থা আছে। সাজেক ভ্যালির বিভিন্ন রিসোর্টে যেখানে পানির সমস্যা, সেখানে এই রিসোর্টে রয়েছে সার্বক্ষণিক পানির ব্যবস্থা। রয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দৃষ্টিনন্দন ইন্টেরিওর এর কথা বিবেচনায় নিলে রুংরাং রিসোর্ট প্রথম সারিতে থাকবে। আর ওয়াশরুম যাদের অন্যতম কনসার্ন তাদের জন্য রুংরাং’এর রয়েছে সাজেকের সবচেয়ে অত্যাধুনিক ওয়াশরুম। ৪টি ফ্যামিলি এবং ৪টি কাপল রুমের প্রতিটির সাথেই এটাচ ওয়াশরুম রয়েছে।
রুম ভাড়া সিজন ভেদে উঠানামা করে। সাধারণত রুম ভাড়া ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে। রুম বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করা যাবে নিচের ফোন নাম্বারে।
রিসোর্ট রুংরাং
রুইলুই পাড়া, সাজেক ভ্যালি।
ফোন নাম্বার:
0186 9649 817
01810-137002
সাজেক ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে আর্মি স্কর্ট গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আর্মি স্কর্ট এর সময় জানার জন্য আগে থেকে রিসোর্টে কথা বলে নিন। চান্দের গাড়ি ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রেও রিসোর্টের সহায়তা নেওয়া যায়।

সেন্টমার্টিন

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এটি বাংলাদেশের মূলভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিনকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলে ডাকা হয়। নীল আকাশ আর সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ এ দ্বীপকে করেছে অনন্য। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান যা ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে দুর্নিবার আকর্ষনে কাছে টেনে নেয়।

কখন যাবেন সেন্টমার্টিন

সেইন্টমার্টিন যাওয়ার ভালো সময় হলো নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। তখন আকাশ পরিষ্কার থাকে এবং সমুদ্রের পানি থাকে ঘন নীল। এরকম নীল জলরাশির সমুদ্র বাংলাদেশে একমাত্র সেন্টমার্টিন থেকে দেখা যায়। টেকনাফ – সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল করে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। বছরের বাকি সময় জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। আর ট্রলারে যেতে চাইলে সারা বছরই যাওয়া যায়। তবে বর্ষাকালে ট্রলারে যাতায়ত নিরাপদ নয়।

কিভাবে সেন্টমার্টিন যাবেন

সেন্টমার্টিন যেতে হলে প্রথমে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে আসতে হবে। টেকনাফ থেকে জাহাজ, স্পিডবোট অথবা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে যেতে চাইলে সরাসরি বাসে টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে জাহাজে/ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া সুবিধাজনক। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনায় কক্সবাজার সহ থাকলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে তারপর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে টেকনাফ

ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ঈগল, এস আলম, মডার্ন লাইন, গ্রীন লাইন ইত্যাদি বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। এসি নন বাস ভাড়া ৯শ থেকে ১১শ টাকা, এসি বাস ভাড়া ১৮শ থেকে ২৩শ টাকা পর্যন্ত।  আবার ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়েও টেকনাফ যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ঢাকা থেকে প্রথমে কক্সবাজার এসে তারপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে হবে। এছাড়াও ঢাকা থেকে বিমানে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারবেন।

চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ

চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ যেতে হলে চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস থেকে এস আলম এবং সৌদিয়া বাস রাত ১২টায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া জিইসি গরিবুল্লাশাহ মাজার ও দামপাড়া থেকেও কিছু বাস চট্টগ্রাম-টেকনাফ রুটে চলাচল করে। আবার কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস বা মাইক্রো/জিপ ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যাবে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে সময় লাগে অবস্থা ভেদে ২ থেকে ৩ ঘন্টা।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে আসা-যাওয়া করে কুতুবদিয়া, আটলান্টিক ক্রুজ, বে ক্রুজ, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন ইত্যাদি জাহাজ। এছাড়াও এই সমুদ্র রুটে বেশ কিছু ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করে। জাহাজে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘন্টা। জাহাজের শ্রেনীভেদে আপ-ডাউন ভাড়া ৯০০ থেকে ১৬০০ টাকা। জেটি ঘাট থেকে জাহাজ ছাড়ে প্রতিদিন সকাল ৯ টায়। একই শিপ বিকাল ৩ টায় সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়ে আসে। আসা যাওয়ার সময় জাহাজ ছাড়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে জেটি ঘাটে উপস্থিত থাকলে উঠতে সুবিধা হবে। সধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ এই পাঁচ মাস জাহাজ চলাচল করে। এই সময় ছাড়া অন্য সময়ে গেলে ট্রলার কিংবা স্পিডবোট দিয়ে যেতে হবে।

ভ্রমণ পরিকল্পনা

অনেকে সকালের শিপে গিয়ে বিকালের শিপে ব্যাক করেন। এটা আসলে এক ধরণের ভুল সিদ্ধান্ত। এতে জাহাজ থেকে উঠা নামার মাঝখানে ১ ঘন্টা সময় পাওয়া যায়। এই ১ ঘন্টা জেটি ঘাটে কেটে যায়, দ্বীপ আর দেখা হয়না কিছুই। নূন্যতম ১ রাত সেন্টমার্টিন থাকলে ভালো। তবে ২ রাত থাকলে সবকিছু ভালোভাবে উপভোগ করা যায়।

সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে সুন্দর অংশ হলো সেন্টমার্টিনের পশ্চিম বিচ। পশ্চিম বিচ থেকে যতদূর চোখ যায় শুধু নীল জলরাশি। তাই পশ্চিম বিচের কোনো রিসোর্টে থাকাই ভালো। যারা ১ রাত থাকতে চান তারা প্রথমদিন বিকালেই ছেঁড়াদ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ট্রলারে করে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়া এখন নিষিদ্ধ। তবে চাইলে হেঁটে হেঁটে যেতে পারবেন। অথবা সাইকেল নিয়েও ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়া যায়।

যেদিন সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসবেন , সেদিন দুপুর দুইটার আগেই খাওয়া দাওয়া সহ সব কাজ শেষ করে দুইটার মধ্যে জেটি ঘাটে থাকতে হবে। নইলে শিপ মিস করার সম্ভাবনা থেকে যায়।

কী খাবেন কোথায় খাবেন

দ্বীপটার নামই নারিকেল জিঞ্জিরা। দ্বীপে এসে প্রচুর ডাব খেতে পারবেন। দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য সবচেয়ে ভালো পাওয়া যায় সামুদ্রিক মাছ ও শুটকি। এখানে রূপচাঁদা, ভেটকি, কোরাল, টুনা, চিংড়ি, স্যামন সহ হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ পাবেন। প্রায় প্রত্যেকটা রিসোর্টেই রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে খেতে পারবেন। প্রতিবেলা খাবার খরচ পড়বে মেন্যু ভেদে জনপ্রতি ১৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। রাতে চাইলে মাছ দিয়ে বারবিকিউ করা যাবে। রিসোর্টে বললে তারাই ব্যবস্থা করে দিবে।

সেন্টমার্টিনের রিসোর্ট সমূহ

থাকার জন্য সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো পশ্চিম বিচ এর রিসোর্ট সমূহ। সেন্টমার্টিনে থাকার অনেকগুলো হোটেল ও রিসোর্ট আছে। এগুলোর ভাড়া সিজন ভেদে উঠানামা করে। তবে ডিসেম্বর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারীতে ভাড়া সর্বোচ্চ থাকে। সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আগে থেকে হোটেল-রিসোর্ট কনফার্ম করে যাওয়াই ভালো। কারণ সিজনের সময় সপ্তাহর মাঝামাঝিতেও ভালো রিসোর্ট গুলোতে রুম ফাঁকা থাকেনা।
Dwipantar Beach Resort
ছবি : দ্বীপান্তর বিচ রিসোর্ট
দ্বীপান্তর বিচ রিসোর্ট: ভিউ ফ্যাসিলিটিজ ও কোয়ালিটি বিবেচনায় এটি সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে সেরা রিসোর্ট। সমুদ্র লাগোয়া এই রিসোর্টের স্থাপত্যশৈলী চমৎকার। আলাদা আলাদা বিচ কটেজ বাদেও এখানে রয়েছে কাঠের ডুপ্লেক্স রুম। রয়েছে কাঠের দোতলা রেস্টুরেন্ট। যেখানে খোলা ছাদে বসে গায়ে সমুদ্রের হাওয়া মেখে সমুদ্র উপভোগ করা যায়। ফ্যামিলি নিয়ে থাকার জন্য এটি বেশ ভালো। রিসোর্টের রুম ভাড়া রুম ভেদে ৫০০০  থেকে ৭০০০ টাকা। তাঁবু ভাড়া ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
ফেসবুক পেজঃ Dwipantor Beach Resort
গুগল ম্যাপঃ Dwipantor Beach Resort
ফোন নাম্বার:  01884-710723, 01886-363232
নীল দিগন্তে রিসোর্ট: সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সুন্দর একটি রিসোর্ট। এখানে সবগুলো রুমই টিনশেড। রুম ভাড়া দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা। কোনো বিচ ভিউ রুম নেই।
ফোন নাম্বার: 01730-051005
ব্লু মেরিন রিসোর্ট : সেন্টমার্টিনের আরেকটি সুন্দর রিসোর্ট হলো ব্লু মেরিন রিসোর্ট। এখানে আরো কিছু বাড়তি সুযোগ সুবিধা ব্যবস্থা আছে যেমন পার্টি জোন, হল রুম ইত্যাদি। কর্পোরেট ট্যুরের জন্য এটি বেশি ব্যবহৃত হয়। রুম ভাড়া ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01713-399001
সীমানা পেরিয়ে রিসোর্ট: এই রিসোর্টের অবস্থান পশ্চিম বিচে, ভ্যানে করে যেতে হবে। এতে চোদ্দটি রুম ও একটি নিজস্ব রেস্ট্যুরেন্ট আছে। এর ভাড়া এক হাজার পাঁচশো থেকে দুই হাজার পাঁচশো টাকা।
ফোন নাম্বার: 01911-121292
কোরাল ভিউ রিসোর্ট: এই রিসোর্টটি নৌবাহিনী পরিচালনা করে। এটি সেন্টমার্টিনের পূর্ব বিচে। জেটি থেকে বেশ খানিকটা দূরে বলে ভ্যান/বোট নিয়ে যেতে হবে। এর আয়তন অনেক বড়ো এবং রুমগুলো থেকে মোটামুটি সমুদ্র দেখা যায়। এর রুমপ্রতি ভাড়া দুই হাজার পাঁচশো টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01859-397045
দ্য আটলান্টিক রিসোর্ট: (আগের নাম ছিলো লাবিবা বিলাস) সুপ্রশস্ত এই দ্বিতল রিসোর্টে এর অবস্থান উত্তর বিচে।  রুম ভাড়া রুম ভেদে দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা।
সমুদ্র বিলাস রিসোর্ট: পশ্চিম বিচের এর রিসোর্টটি সাদামাটা আর দশটা রিসোর্টের মতোই। তবে এর একটি বিশেষত্ব আছে। এটি মূলত হুমায়ূন আহমেদ এর বাড়ি। এখানে রুম ভাড়া সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01911-920666
সি ভিউ রিসোর্ট এন্ড স্পোর্টস: এই রিসোর্টের অবস্থান জেটি ঘাট এর পাশে উত্তর বিচেই। কম খরচে থাকার জন্য এটি ভালো একটি রিসোর্ট। রুম ভাড়া দেড় থেকে তিন হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার:  01840-477957
হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজ: এই দ্বিতল হোটেলটির অবস্থান ব্লু মেরিনের কিছুটা উত্তরে। কম খরচে থাকার জন্য এটিও ভালো একটি রিসোর্ট। বিচ থেকে একটু দূরে বলে অল্প কয়েকটি রুম থেকে সমুদ্রের খানিকটা দেখা যায়। প্রাসাদ প্যারাডাইজের প্রতিটি রুমের ভাড়া দুই হাজার থেকে চারহাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01556-347711
হোটেল সী ইন: সেন্টমার্টিন বাজারের মূল রাস্তা ধরে পাঁচ মিনিট হাটলেই এই হোটেলটির অবস্থান। স্টুডেন্ট বা কম খরচে যারা থাকতে চান তাদের জন্য এটি ভালো একটি হোটেল। এখানে রুম ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
ফোন নাম্বার: 01764-190586
সি প্রবাল রিসোর্ট: উত্তর বিচে কম খরচে থাকার আরেকটি ভালো রিসোর্ট সি প্রবাল। এর রুম ভাড়া ১২শ থেকে ২৫শ পর্যন্ত। স্টুডেন্ট কিংবা যারা কম খরচে থাকতে চান তারা এই রিসোর্টে থাকতে পারবেন। 
ফোন নাম্বার: 01756-208383
এগুলো ছাড়াও সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাত্রিযাপনের জন্য কোরাল ব্লু, ড্রিম নাইট, সায়রি, অবকাশ, স্যান্ড শোর, ব্লু লেগুন, সিটিবি ইত্যাদি রিসোর্ট পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সেন্টমার্টিনে ভালো রিসোর্ট ও খারাপ রিসোর্টের রুম ভাড়ায় তেমন পার্থক্য নেই। ভালো রিসোর্ট গুলোর রুম ভাড়া নির্দিষ্ট থাকলেও, সাধারণ রিসোর্টগুলো সুযোগ বুঝে দাম অনেক বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ফ্যামিলি নিয়ে ভ্রমণ করলে আগে থেকে  ভালো রিসোর্টে বুকিং দেওয়াই ভালো। জেটি ঘাটের পাশে হোটেলগুলোতে কম খরচে থাকা যায়। প্রিমিয়াম রিসোর্ট গুলোর অবস্থান একটু ভিতরের দিকে। সেন্টমার্টিনে ভ্যান ভাড়া অনেক বেশি। তাই ভ্যানে চড়ার আগে ভালোমতো দরদাম করে নিন। ছেঁড়া দ্বীপে বিকেলের দিকে গেলেই ভালো, তখন রোদ কম থাকে।

সমুদ্রে নামার আগে জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিন। ভাটার সময় সমুদ্রে নামা ঝুঁকিপূর্ণ। সেন্টমার্টিনের জেটিঘাটের পাশে উত্তর বিচে রিপ কারেন্ট আছে। জেটিঘাটের পাশে সমুদ্রে নামবেন না।

দ্বীপের সাধারণ মানুষদের জন্য সবকিছু একদাম, আর পর্যটকের জন্য অনেক বেশি দাম। সেটা ভ্যান ভাড়া থেকে শুরু করে সবকিছু। তাই কোনো কিছু কেনার আগে ভালোমতো দরদাম করে নিন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers ‘এ।

আরো পড়ুন

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায়। সীতাকুন্ড মানেই একপাশে সাগর আর অন্যপাশে পাহাড়। সীতাকুন্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালী সি বিচ এর দুরত্ব ৫ কিলোমিটার। স্থানীয়দের কাছে এই সৈকত “মুরাদপুর সী বিচ” নামে পরিচিত। গুলিখালীর অন্যতম বৈশিষ্ট হলো এখানকার পুরো সমুদ্র পাড় ঢেকে আছে গালিচার মতো সবুজ ঘাসে! সৈকতের তিনদিকে শোভা বর্ধন করছে ছোট ছোট ম্যানগ্রোভ বন। আর অন্যদিকে অসীম সমুদ্র। বনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালার মধ্যে কেওড়া অন্যতম। ম্যানগ্রোভ বনের শ্বাসমূল ছড়িয়ে আছে সৈকত জুড়ে। তার মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে বড় ছোট অনেকগুলো খাল। জোয়ারের সময় খালগুলো পানিতে ভরে যায়। গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত কিছুটা কম পরিচিত হওয়ায় বেশিরভাগ সময়ই এখানে পর্যটক থাকেনা। তাই আপনি সমুদ্রের বাতাসের সাথে নিরবতা উপভোগ করতে পারবেন মন ভরে। গুলিয়াখালি সী বিচ এর কাছাকাছি জেলে পল্লী থাকায় শুনশান সৈকতও নিরাপদ। গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত এর কাছেই আছে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত

কিভাবে যাবেন গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি সীতাকুন্ড আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। এসব টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন সহ সব বড় কোম্পানির বাস আছে এই রুটে। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত যেতে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

ট্রেনে সীতাকুন্ড

ঢাকা থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত তথা সীতাকুন্ডের সরাসরি একটি ট্রেন আছে চট্টলা একপ্রেস নামে। এছাড়া সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই সীতাকুন্ড বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে সীতাকুন্ডের বাস ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।

যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে সীতাকুন্ড বাজারে আসা যাবে।

সীতাকুন্ড থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত

সীতাকুন্ড বাজারের হাইওয়ে ওভারপাসের নিচ থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত যাওয়ার সিএনজি পাওয়া যায়। বাজার থেকে সমুদ্রের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। রিজার্ভ সিএনজিতে ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ২৫/৩০ মিনিট। সিএনজি নেওয়ার সময় ঠিকঠাক দরদাম করে নিবেন। চাইলে  আপডাউন রিজার্ভও করতে পারেন। গুলিয়াখালীর কাছে বেড়িবাঁধে সিএনজি আপনাকে নামিয়ে দিবে। ওখান থেকে হেঁটে সমুদ্রপাড়ে গেলে ১০/১২ মিনিট লাগে। ঘুরতে গিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলে অনেক সময় ফেরার সিএনজি পাওয়া যায়না। তাই নামার সময় ড্রাইভারের ফোন নাম্বার নিয়ে রাখুন।

কোথায় থাকবেন

সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।

কোথায় খাবেন

সীতাকুন্ড বাজারে খাবারের অনেকগুলো দোকান আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া, আল আমিন ও আপন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এখানে আপনি ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ডাল, সবজি ইত্যাদি মেন্যু হিসেবে পাবেন। খাবার খরচ পড়বে প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো। রাতের বাসে গেলে সকালের ব্রেকফাস্টও এখানে সেরে নিতে পারেন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে বিকেলে গেলে ভালো লাগবে। সীতাকুন্ড থেকে ঘুরে আসতে সব মিলিয়ে দুই তিন ঘন্টা সময়ই যথেষ্ট। তাই সারাদিনের জন্য সীতাকুন্ডের প্ল্যান থাকলে সকালটা আশেপাশের অন্য কোনো দর্শনীয় স্থানে কাটাতে পারেন। ভ্রমণের সময় জোয়ার ভাটার টাইম জেনে নিন। স্থানীয় জেলেরাও এই ব্যাপারে ভালো ধারণা দিতে পারবে। জোয়ারের সময় সমুদ্রের কাছে না থাকাই ভালো। কারণ খালগুলো জোয়ারের পানিতে ভরে গেলে ফিরতে অসুবিধা হবে। সন্ধ্যার মধ্যেই সীতাকুন্ড বাজারে ফিরে আসুন। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ছোটলোকি। ভুলেও এই কাজ করবেন না, গোপনেও না। জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে অনেকগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান রয়েছে। গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। গুলিয়াখালী সি বিচ এর একদম কাছাকাছি আছে বাঁশ বাড়িয়া সমুদ্র সৈকত আর চন্দ্রনাথ পাহাড় । কাছাকাছি আছে এই রুটের সবচেয়ে এডভেঞ্চারাস ট্রেইল সোনাইছড়ি। সীতাকুন্ড ইকো পার্ক এর ভিতরে আছে সুপ্তধারা আর সহস্রধারা জলপ্রপাত।  আর হাইওয়ে ধরে ঢাকার দিকে দশ কিলোমিটার এগুলে পাবেন কমলদহ ঝর্ণা। যদি বিশ কিলোমিটার যান তাহলে  খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার ট্রেইল পাড়বে।

আরো পড়ুন

সীতাকুন্ড ইকোপার্ক

সীতাকুন্ড ইকোপার্ক চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায়। পাহাড়ে পাহাড়ে বিশাল বনভূমি, বন্যপ্রাণী ও হরেক রকম বৃক্ষরাজির মনোরম পরিবেশে একটা দিন কাটানোর জন্য প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক পর্যটক এখানে ছুটে আসেন। ইকোপার্কের ভিতরে সুপ্তধারাসহস্রধারা নামের দুইটি ঝর্ণা আছে। ঝর্ণায় যেতে হলে পাহাড় দিয়ে কিছুটা উঠানামা করা লাগে। এখানে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও এসেছিলেন। পাহাড় ও ঝর্ণার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি “আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ঐ” নামে বিখ্যাত গানটি রচনা করেন। যার ফলক এখনো ইকো পার্কের ভিতরে আছে। বোটানিক্যাল গার্ডেন এর ভিতরে পাহাড়ের উপর থেকে বঙ্গোপসাগরও দেখা যায়।

কিভাবে যাবেন সীতাকুন্ড ইকোপার্ক

সীতাকুন্ড ইকোপার্ক যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি সীতাকুন্ড আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। এসব টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন সহ সব বড় কোম্পানির বাস আছে এই রুটে। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত যেতে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

ট্রেনে সীতাকুন্ড

ঢাকা থেকে সীতাকুন্ড ইকোপার্ক যাওয়ার সরাসরি ট্রেন হলো চট্টলা এক্সপ্রেস। এছাড়া সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই সীতাকুন্ড বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে সীতাকুন্ডের বাস ভাড়া ৮০ থেকে ১৫০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।

যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে সীতাকুন্ড বাজারে আসা যাবে। চট্টগ্রাম থেকে এলে অলংকার বা  একে খান বাস স্ট্যান্ড থেকে সীতাকুন্ডের বাস আছে। ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা।

সীতাকুন্ড থেকে ইকোপার্ক

সীতাকুন্ড বাজার থেকে হাইওয়ে ধরে চট্টগ্রামের দিকে ২ কিলোমিটার গেলে ফকিরহাট বাজার পড়োবে। ফকিরহাট থেকে হাইওয়ের পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে দেড় কিলোমিটার গেলেই সীতাকুন্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন অর্থাৎ সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। জনপ্রতি প্রবেশ ফি ৫০ টাকা। সিএনজি নিয়ে প্রবেশ করলে বাড়োতি ৮০ টাকা দিতে হয়। জীব বৈচিত্র ও প্রাণী বৈচিত্রের সাথে পরিচিত হতে প্রতি বছর শিক্ষা সফরে দেশের নানান প্রান্ত থেকে প্রচুর ছাত্রছাত্রী এখানে আসেন। সীতাকুন্ড ইকোপার্ক এর ভিতরে বিশুদ্ধ পানি ও ওয়াশরুমের সুব্যবস্থা আছে।

কোথায় থাকবেন

সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।

কোথায় খাবেন

হালকা নাস্তা করার মতো কয়েকটি দোকান আছে সীতাকুন্ড ইকোপার্ক এর প্রবেশ মুখে। ভারী খাবারের জন্য আপনাকে সীতাকুন্ড বাজারে আসতে হবে। খাবারের জন্য হোটেল সৌদিয়া, আল আমিন ও আপন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এখানে আপনি ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ডাল, সবজি ইত্যাদি মেন্যু হিসেবে পাবেন। খাবার খরচ পড়বে প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো। রাতের বাসে গেলে সকালের ব্রেকফাস্টও এখানে সেরে নিতে পারেন।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে অনেকগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান রয়েছে। সীতাকুন্ড ইকোপার্ক এর ভিতরে রয়েছে সুপ্তধারা ও সহস্রধারা নামে দুইটি ঝর্ণা। এছাড়া ইকো পার্ক এর বাইরে নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন একইদিন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর।  চন্দ্রনাথ পাহাড় আর গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত সীতাকুন্ড ইকো পার্কের পাঁচ কিলোমিটার এর মধ্যে। কাছেই বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। আর হাইওয়ে ধরে ঢাকার দিকে দশ কিলোমিটার এগুলে পাবেন কমলদহ ঝর্ণা। যদি বিশ কিলোমিটার যান তাহলে  খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার ট্রেইল পাড়বে। জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।

আরো পড়ুন

বগালেক

বগালেক বান্দরবানের রুমা উপজেলার কেওক্রাডং পাহাড় রেঞ্জে অবস্থিত একটি লেক। বান্দরবান সদর থেকে প্রায় ৭০ কিঃমিঃ ও রুমা উপজেলা থেকে ১৭ কিঃমিঃ দূরত্বে এর অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৪০০ ফিট উচ্চতার এই লেক ভূতত্ত্ববিদদের মতে প্রায় ২ হাজার বছর আগে উল্কাপিন্ডের পতনে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি হয়। অনেকের মতে এটি মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামূখ। এটি ড্রাগন লেক ও বগাকাইন লেক নামেও পরিচিত।

দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তি শেষে এই লেকের সামনে আসার পর আপনি যাত্রাপথের সমস্ত কষ্ট ভুলে যাবেন। বগালেক ও তার আশেপাশের মোহময়ী প্রকৃতি এক নিমেষে আপনার মন ভালো করে দিবে। দিনের একেক সময় এখানে প্রকৃতি একেক রূপ ধারণ করে। সন্ধ্যার পর আপনার সামনে খুলে যাবে আকাশ ভরা নক্ষত্রের ডালি। দূষণমুক্ত পরিবেশ ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে প্রতিদিনই এখানে আকাশে তারার দেখা মেলে। আর কোনো এক জোছনা রাত যদি আপনি বগালেকে কাটাতে পারেন, সেটা আপনার জীবনের উল্লেখযোগ্য স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে। চাঁদের আলো যখন লেকের পনিতে ঢেউ খেলে, পাহাড়ি নিস্তব্ধ পরিবেশ তখন মোহনীয় রূপ ধারণ করে। চলুন জেনে নিই বগালেক ভ্রমণ এর বিস্তারিত।

বগালেক ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়

সৌন্দর্যের টানা বছরজুড়ে এখানে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসে। তবে বর্ষায় রুমাগামী জিপ প্রায়ই কাইক্ষংঝির পর্যন্ত যায়, এরপর ইঞ্জিন নৌকায় ১ঘন্টার বেশি পথ পড়ি দিয়ে রুমাবাজার পৌঁছাতে হয়। রুমা বাজার থেকে বগালেকের রাস্তা ভাঙাচোরা হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থার অসুবিধা হয়। এটা পুরোটাই হাঁটতে হয়। তাই নিতান্তই এডভেঞ্চারপ্রেমী না হলে শীতকালেই বগালেক যাওয়াকে সাজেস্ট করেন ভ্রমনকারীরা। অর্থাৎ বলা চলে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বগালেক ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

কিভাবে বগালেক যাবেন

বগালেক যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে বান্দরবান আসতে হবে। ঢাকা থেকে এসি – নন এসি সব ধরণের বাসই বান্দরবান যায়। নন এসির মধ্যে শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বাস পাবেন। বাস ছাড়ে কলাবাগান, ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে। রাত এগারোটার মধ্যে লাস্ট বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে উঠতে হবে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সূবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, মহানগর প্রভাতী ও গোধুলী সহ অনেকগুলো ট্রেইন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেন ও আসন ভেদে ভাড়া ২০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে হলে প্রথমে বহদ্দারহাট যেতে হবে। ওখান থেকে ৩০ মিনিট পরপর ‘পূর্বাণী’ ও ‘পূরবী’ নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২২০ টাকা।

বান্দরবান থেকে রুমা বাজার

বান্দরবান থেকে বগালেক যেতে হলে প্রথমে রুমা বাজার যেতে হবে। রুমা বান্দরবানের একটি উপজেলা। এটি জেলা শহর থেকে ৫০ কিঃমিঃ দূরে। বাসে বা জিপে করে আপনি রুমা বাজার যেতে পারবেন। বান্দরবান সদরের রুমা বাস স্ট্যান্ড থেকে ১ ঘন্টা পরপর রুমার বাস ছাড়ে। ভাড়া ১২০ টাকা। যেতে সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মতো। বিকাল ৩টার মধ্যে লাস্ট বাস ছেড়ে যায়।

জিপে করে রুমা যেতে চাইলে রিজার্ভ নিতে হবে। ভাড়া পড়বে সিজন ভেদে ২৫০০ থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে। এক জিপে ১২/১৩ জন বসা যায়। যেতে সময় লাগবে ২ ঘন্টার মতো। শীতের সিজনে এই রুটে লোকাল জিপ পাওয়া যায়। জনপ্রতি ৮০ থেকে ১২০ টাকা ভাড়া নেয়।

রুমা বাজার থেকে বগালেক

রুমা বাজার পৌঁছে আপনার প্রথম কাজ হবে বগালেক যাওয়ার জন্য গাইড ও জিপ ঠিক করা। গাইড সমিতির অফিস থেকে রেজিস্টার্ড গাইড কাউকে নিতে হবে। রেজিস্টার্ড গাইড ছাড়া আপনি বগালেকে যাওয়ার অনুমতি পাবেন না। এরপর রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্পে আপনাকে রিপোর্ট করতে হবে। সবার নাম ফোন নাম্বার সহ বিস্তারিত লিখে জমা দিতে হবে ক্যাম্পে। আপনার হয়ে গাইডই এই কাজগুলো করে দিবে। গাইড ফি প্রতিদিনের জন্য ৬০০ টাকা। এটা আর্মি দ্বারা নির্ধারিত। তবে গাইডের থাকা খাওয়ার সকল খরচ আপনাকেই বহন করতে হবে। বগালেকের কয়েকজন রেজিস্টার্ড গাইডের নাম্বার-

সুফল বড়ুয়া 01843-229547, ইসমাইল 01869-364977
প্রকাশ 01887-659360, হারুন 01828-872894
বাবুল 01552-432937, রঞ্জন 01827-713975
তাপস বড়ুয়া01884756482

রুমা বাজার থেকে বগালেক পর্যন্ত জিপ ভাড়া ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। এক জিপে ১২/১৩ জন যাওয়া যায়। আপনার টিমে সদস্য সংখ্যা কম হলে অন্য কারো সাথে জিপ শেয়ার করতে পারবেন। এছাড়া ১ ঘন্টা পরপর লোকাল জিপ ছাড়ে। ওগুলোতেও যেতে পারবেন। ভাড়া ১০০ টাকা। বিকাল ৪টার পর রুমা যেতে বগালেকের উদ্দেশ্যে কোনো গাড়ি যেতে দেয় না আর্মি। তাইল আপনাকে সকল কাজ ৪টার আগেই শেষ করতে হবে। রুমা থেকে বগালেকের দূরত্ব ১৭ কিঃমিঃ। যেতে ১ ঘন্টার মতো সময় লাগে।

বগালেকে কোথায় থাকবেন

বগালেকে থাকার জন্য উন্নতমানের কটেজ বা রিসোর্ট নেই। স্থানীয় আদিবাসীদের ছোট ছোট কিছু কটেজ আছে। ওগুলোতেই রাত্রি যাপন করতে হবে। এতে জনপ্রতি খরচ হবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এক রুমে ৫/৬ জন করে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ফিমেইলদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা। আর কাপল হলে আলাদা কাপল কটেজ পাওয়া যায়। সবকিছু আগে থেকে গাইডকে বলে রাখলে সে ব্যবস্থা করে রাখবে। অথবা আপনি চাইলে ওখানে গিয়েও ঠিক করতে পারবেন। ঢাকা থেকে কটেজ ঠিক করতে চাইলে বুুকিংয়ের জন্য ফোন দিতে পারেন লারাম বম- 01552376551, বা সিয়াম দিদির 01840721590 নাম্বারে।

খাওয়ার ব্যবস্থা আছে আদিবাসী ঘর ও কটেজগুলোতে। জনপ্রতি খাওয়ার খরচ পড়বে প্রতিবেলা ৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। খাবার হয় প্যাকেজ সিস্টেমে। মেনু হিসেবে ভাত, ডাল, ভর্তা, ডিম মুরগী ইত্যাদি পাওয়া যায়। খাবার কতজন খাবেন, কী দিয়ে খাবেন ইত্যাদি আগে থেকে অর্ডার করতে হয়। গাইডকে বললেই হবে, সে অর্ডার করে দিবে। অথবা চাইলে আপনি নিজেও কথা বলে অর্ডার করতে পারেন। কটেজগুলোতে নিজস্ব বারবিকিউর ব্যবস্থা আছে। রাতে বগালেক পাড়ে মনোরম পরিবেশে বারবিকিউ পার্টি করে নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারেন চাইলে।

বগালেক ভ্রমণ টিপস

  • বগালেকে বিদ্যুত নেই। সোলার প্যানেলে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা আছে। তবে সাথে করে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে গেলে ভালো।
  • রবি ও টেলিটক বাদে অন্য ফোনের নেটওয়ার্ক নেই বগালেকে। তাই এই সিমগুলো সাথে রাখুন।
  • বগালেকে গোসল করতে চাইলে সাবধানে করবেন। সবসময় সতর্ক থাকা ভালো। সাঁতার দিতে গিয়ে অতীতে একাধিক মৃত্যু দেখেছে বগালেক।
  • সাথে এনআইডি কার্ড রাখুন। এটা বাধ্যতামূলক নয়। যেকোনো ফটো আইডি সাথে থাকা জরুরি।
  • যাত্রাপথে জিপের ছাদে উঠবেন না। এটি করতে আর্মির পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে। তাছাড়া পাহাড়ি পথে জিপের ছাদে উঠা বিপদজনক।
  • আদিবাসীদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে ভুলবেন না। এটা সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান। আপনার কাণ্ডজ্ঞান আপনার ব্যাক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।
  • পাহাড়িদের কালচারের প্রতি সম্মান দেখান। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্যকেউ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগতো।
  • যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। সেটি শুধু পাহাড়ে নয়, এমনকি শহরেও।

আশেপাশে কী কী দেখার আছে

হাতে সময় থাকলে বগালেকের আশেপাশে আরো কিছু স্পট ঘুরে দেখতে পারেন। এরমধ্যে অন্যতম কেওক্রাডং। বগালেক থেকে কেওক্রাডং যেতে চাইলে ১ দিন বাড়তি সময় লাগবে। কেওক্রাডংয়ে থাকার ব্যবস্থা আছে। যাওয়ার পথে দেখতে পারবেন চিংড়ি ঝর্ণা। এছাড়া বান্দরবানের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে নীলগিরি। এটি সর্বাধিক জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। এছাড়া থানচিতে আছে নাফাখুম জলপ্রপাত এবং রোয়াংছড়িতে আছে দেবতাখুম নামে একটি গিরিখাদ উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের অন্যন্য লেক

মৈনট ঘাট

মিনি কক্সবাজার হিসেবে খ্যাত মৈনট ঘাট ডে ট্যুর এর জন্য এটি চমৎকার একটি স্থান! পরিবার বা বন্ধুবান্ধব সহ যারা একটা দিন ঢাকার বাইরে কাটিয়ে আসতে চান, তারা মইনট ঘাট ভ্রমণ এর কথা মাথায় রাখতে পারেন।  মৈনট ঘাট এর অবস্থান ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায়। গুলিস্তান থেকে এর দূরত্ব ৬০ কিঃমিঃ এর মতো। রাজধানী ঢাকা থেকে দিনে গিয়ে দিনেই বেড়িয়ে আসতে পারবেন। এখানে এসে আপনি মুগ্ধ হবেন, বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকবেন পদ্মা নদীর অপার জলরাশির দিকে। এই বিশাল জলরাশি, পদ্মায় হেলেদুলে ভেসে বেড়ানো জেলেদের নৌকা, আর পদ্মার তীরে হেটে বেড়ানো। সব মিলিয়ে কিছুক্ষণের জন্য আপনার মনে হবে আপনি এখন ঢাকার দোহারের মইনট ঘাট এ নয়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আছেন। মূলত এই কারণেই মৈনট ঘাট অনেকের কাছে মিনি কক্সবাজার নামে পরিচিত।

কিভাবে মৈনট ঘাট যাবেন

মৈনট ঘাট ভ্রমণ করতে হলে ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে প্রথমে দোহারে আসতে হবে। গুলিস্তান থেকে দোহারের একাধিক বাস আছে। তবে যমুনা ডিলাক্সই শুধু মইনট ঘাট পর্যন্ত যায়। এটি গুলিস্তান মাজারের সামনে থেকে ছাড়ে। ভাড়া ৯০ টাকা। যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। ফেরার পথে সন্ধ্যা ৬টায় শেষ বাস ছেড়ে আসে। তাই ছ’টার মধ্যেই বাস স্ট্যান্ডে চলে আসুন।

যমুনা পরিবন ছাড়াও “এন মল্লিক পরিবহন” গুলিস্তানের যেই স্থান থেকে ছাড়ে, একই স্থান থেকে জয়পাড়া পরিবহন নামক মিনিবাসটিও ছেড়ে আসে দোহারের জয়পাড়ার উদ্দেশ্যে। যারা প্রাইভেট কার অথবা বাইক নিয়ে আসতে চাচ্ছেন তারা এই বাসের রুটটাকে ব্যবহার করতে পারেন। আসতে সুবিধা হবে।

গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া থেকে “নগর পরিবহনে”ও আসতে পারবেন। ভাড়া ৯০ টাকা। নগর পরিবহন নবাবগঞ্জের রুট ব্যবহার করে না। এই বাসটি আসে মুন্সিগঞ্জ হয়ে। এক্ষেত্রে আপনাকে কার্তিকপুর বাজারে নামতে হবে।

সিএনজিতে মৈনট ঘাট ভ্রমণ করতে চাইলে ঢাকার বাবুবাজার ব্রীজ পার হয়ে কদমতলী থেকে লোকাল সিনজি পাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। লোকাল সিএনজি কার্তিকপুর বাজার পর্যন্ত যায়। ওখান থেকে অটোরিকশায় মইনট ঘাট যাওয়া যাবে।

মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকেও মৈনট ঘাট এর সিএনজি পাওয়া যায়। বসিলার তিন রাস্তার মোড় থেকে আপনি সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারবেন। এই রাস্তাটা বেশ সুন্দর। রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া নিবে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা। এই রাস্তাটা বেশ সুন্দর।

কখন যাবেন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারা বছরই এখানে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন। পদ্মার উত্তাল রূপ ও সতেজ প্রকৃতি দেখতে চাইলে বর্ষায় আসতে হবে। আর শরৎকালে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে এখানে কাশফুলে ভরে যায়। তখন ছবি তোলার জন্য ভালো সময়। শীতকালে গেলে শান্ত পদ্মা পাবেন। মৈনট যাওয়ার পথে সরিষা ক্ষেত দেখতে পাবেন অনেক। শীতে পদ্মার মাঝখানে চর জেগে উঠে। নৌকা বা স্পিডবোট নিয়ে সেই চরে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

মৈনট ঘাট কি কি দেখবেন?

মৈনট ঘাট যাওয়ার আগেই বান্দুরা এলাকায় পড়বে কোকিল প্যারি জমিদার বাড়ি। এটি স্থানীয় ভাবে কালাকোপা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত। প্রায় ১৫০ বছরের ইতিহাসের স্বাক্ষী এই বাড়ি। ভাগ্যকুলের জমিদার যদুনাথ রায় তার সন্তানদের জন্য এই বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া কাছাকাছি জজবাড়ি, উকিলবাড়ি, আন্ধারকোঠা নামে পুরাতন জমিদার বাড়ি আছে। সবগুলোই যদুনাথের প্রতিষ্ঠা করা। পুরাকীর্তির প্রতি আকর্ষণ থাকলে এসব স্থাপনায় একটা চক্কর দিয়ে আসতে ভুলবেন না।

কোথায় খাবেন?

শুকনো মৌসুমে নদীর পাড়ে বেশ কিছু অস্থায়ী খাবারের দোকান পাবেন। পদ্মার তাজা ইলিশ দিয়ে দুপুরের লাঞ্চ সেরে নিতে পারেন এখানে। ইলিশ খেতে চাইলে দাম পড়বে ৬০ থেকে ১০০ টাকা। তবে বর্ষাকালে ঘাটে কোনো দোকান থাকেনা। তখন খাবারের জন্য নিকটস্থ কার্তিকপুর বাজারে আসতে হবে। কার্তিকপুর বাজারে মোটামোটি মানের কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। এছাড়া কার্তিকপুরের বিখ্যাত রণজিৎ ও নিরঞ্জন মিষ্টান্ন ভান্ডারের রসগোল্লাও কিনতে পারবেন এখান থেকে। প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পড়বে পড়বে। রসগোল্লা ছাড়াও এখানে আছে সুস্বাদু দই।

ট্রলার ভাড়া

মৈনট ঘাট ভ্রমণ এ ট্রলার রিজার্ভ করে পদ্মায় ঘুরতে চাইলে ১ ঘন্টার জন্য ভাড়া পড়োবে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। ইঞ্জিনযুক্ত ছোট নৌকায় খরচ হবে ১ ঘন্টায় ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। ভাড়া নেওয়ার সময় অবশ্যই দামাদামি করে নেবেন। শুক্রবারে বা সরকারী ছুটির দিনগুলোতে পর্যটক বেশি থাকে বলে ট্রলার ভাড়া একটু বেশি হয়।

কোথায় থাকবেন

মইনট ঘাট ঢাকার কাছে হওয়ায় আপনি দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে পারবেন। যেতে দুই ঘন্টা সময় লাগে, ফিরতে দুই ঘণ্টা। পর্যটকদের থাকার জন্য মৈনট ঘাট এর আশপাশে কোনো হোটেল, রিসোর্ট, বোর্ডিং এখনও তৈরি করা হয়নি। তারপরও আপনি থাকতে চাইলে স্থানীয় কোনো বাসিন্দার বাড়ি ম্যানেজ করতে পারেন। না পারলে দিনে এসে দিনেই ফিরে আসুন।

সতর্কতা

সাঁতার না জানলে মৈনট ঘাট এর পদ্মা নদীতে গোসল করার সময় বেশি গভীরে যাবেন না। সিগারেট অথবা খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল অথবা যেকোনো প্রকার ময়লা যেখানে সেখানে ফেলবেন না। পাখি মারা থেকে বিরত থাকুন। যার তার সামনে সিগারেট ফোঁকা থেকে বিরত থাকুন। দোকানদার, নৌকাচালক সহ সবার সাথে মার্জিত ব্যবহার করুন। এদেরকে ছোট করে দেখবেন না। খেয়াল রাখুন নিজের কোনো আচরণের দ্বারা কোনো নারী বিরক্ত হলো কিনা।

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর

ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো সাভারের সাদুল্লাপুর এর গোলাপগ্রাম,  , রূপগঞ্জ এর জিন্দা পার্ক, কেরানিগঞ্জের সারিঘাট,  লঞ্চে চাঁদপুর ডে ট্যুর, গাজীপুর এর বেলাই বিল,ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ।

ভ্রমণ মানব জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। একটা সময় আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের ধারণা ছিলো ভ্রমণ মানেই বিলাসিতা। কালের পরিক্রমায় মানুষ গবেষণা করে বের করেছে ভ্রমণ মানে বিলাসিতা নয়। স্বাভাবিক জীবনে ভ্রমণ মানুষকে মানসিক ভাবে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। মানসিক ভাবে ভালো থাকলে কাজের গতি বৃদ্ধি পায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সম্পর্কগুলো সুস্থ থাকে। যারা ভ্রমণ এর জন্য বড় ধরণের বাজেট রাখতে পারেন না, তারা মাঝে মাঝেই ডে ট্যুরে যেতে পারেন। প্রতি সপ্তাহ শেষে বা প্রতি পনের দিনে আপনি আপনার কাছের মানুষকে নিয়ে কোনো ডে ট্যুরে গেলে সর্বনিন্ম ৩০০ টাকা দিয়েও ঘুরে আসতে পারবেন। মৈনট ঘাট ছাড়াও ঢাকার আশেপাশে অন্তত ৩০ টি ডে ট্যুর দেওয়ার মতো জায়গা আছে। মাসে দুইটা ডে ট্যুরে গেলেও আপনি মাসশেষে আপনার মানসিক পরিবর্তন বুঝতে পারবেন।

আরো পড়ুন

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সর্ববৃহৎ পর্যটন স্থান। পৃথিবীর দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকতে দেশী বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে সারা বছর। বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা, সারি বেধে থাকা ঝাউবন, ভোরে সমুদ্র ফুঁড়ে যে সূর্যের উদয় হয়, সন্ধ্যায় আবার ঢেউয়ের মাঝে বিলীন হয় তা। প্রকৃতির এই মোহনীয় রূপ আপনাকে মায়ার জালে আবদ্ধ করে ফেলবে। দেশের ভিতরে ফ্যামিলি বা বন্ধু বান্ধব সহ কোনো ট্রিপের কথা বললে প্রথমেই মাথায় আসে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত এর নাম। নানান কারণে অনেকের কক্সবাজার ট্যুর শতভাগ ভালো হয়না সুন্দর একটি গাইডলাইনের কারণে। এই আর্টিকেল আপনার কক্সবাজার ভ্রমণ আরো প্রাণবন্ত করতে সাহায্য করবে।

আপনার প্রতিষ্ঠানের কক্সবাজার কর্পোরেট ট্যুর এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট সাথে।

কক্সবাজার ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে ঢেউয়ের গর্জন শুনতে এখানে বছরজুড়ে ভ্রমণপ্রেমীরা ছুটে আসেন। শীতকালে সবাই বেড়াতে পছন্দ করে বলে শীতেই বেশি পর্যটকমুখর থাকে কক্সবাজার। কিন্তু সমুদ্র এমন একটি জায়গা যেখানে আপনি সারা বছরই যেতে পারেন। প্রতিটা মৌসুমে সমুদ্র তার রূপ বদলায়। শীতের রাতে সৈকতে হাঁটতে আপনার যেমন ভালো লাগবে, তেমনি ঝুম বৃষ্টির কোন এক সন্ধ্যায় বৃষ্টিশেষে আপনি বিচে গেলে যে স্নিগ্ধ অনুভূতি পাবেন, কোন কিছুর সাথে তার তুলনা হবেনা। আবার হেমন্তের হেমন্তের কোনো জোছনা রাতে বিচে বসে সমুদ্রের যে রূপ লাবন্য দেখতে পাবেন, সেটা আপনার জীবনের সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকবে অনেককাল। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখা ভালো নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কক্সবাজার ভ্রমণে আপনার যে পরিমাণ খরচ হবে, বছরের অন্য সময় গেলে তার থেকে ৩০ ভাগ সময় লাগবে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে কক্সবাজার সড়ক, রেল এবং আকাশপথে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বাসগুলোর মধ্যে সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শ্রেণী ভেদে বাসগুলোর প্রতি সীটের ভাড়া ৯০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার পর্যন্ত।

ঢাকা থেকে ট্রেনে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশান হতে সোনার বাংলা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী, চট্রগ্রাম মেইলে যাত্রা করতে পারেন। এরপর চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকা অথবা দামপাড়া বাস্ট স্ট্যান্ড থেকে এস আলম, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণ ও মানের বাস পাবেন। বাস ভেদে ভাড়া ২৮০ থেকে ৫৫০ টাকা।

এছাড়া বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা সহ বেশকিছু বিমান ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া আকাশপথে চট্রগ্রাম এসে সড়ক পথে উপরে উল্লেখিত উপায়ে কক্সবাজার যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

ফাইভ স্টার হোটেল থেকে শুরু করে সস্তার বের্ডিং পর্যন্ত বিভিন্ন মানের প্রায় ৫০০র বেশি হোটেল মোটেল রয়েছে কক্সবাজারে। এসব হোটেলের সর্বমোট ধারণ ক্ষমতা ১.৫ থেকে ২ লাখ জন। এর মধ্যে ভালো মানের হোটেলগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৫০ হাজার। তাই অফ সিজনে বুকিং না দিয়ে গেলেও সিজনে রুম বুকিং না করে কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়া ঠিক হবেনা। একদম সস্তার হোটেলগুলো বাদ দিয়ে বাকিগুলোকে প্রিমিয়াম, এক্সিকিউটিভ ও স্ট্যান্ডার্ড তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়।

প্রিমিয়াম ক্যাটারির হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশান প্যারাডাইস, লং বিচ বিচ রিসোর্ট, সি-গাল, সি প্যালেস, রয়্যাল টিউলিপ, হেরিটেজ, কক্স টুডে ইত্যাদি। এগুলোর রুম ভাড়া পড়বে ৬০০০ থেকে ১২০০০ হাজার টাকার মধ্যে।

এক্সিকিউটিভ ক্যাটাগরির রিসোর্ট এর মধ্যে আছে হোটেল সি ক্রাউন, কোরাল রিফ, নিটোল রিসোর্ট, বিচ ভিউ রিসোর্ট, আইল্যান্ডিয়া, ইউনি রিসোর্ট ইত্যাদি। এগুলোর রুম প্রতি ভাড়া পড়বে ৩০০০ থেকে ৬০০০ টাকার মধ্যে।

স্ট্যান্ডার্ড ক্যাটাগরির প্রচুর রিসোর্ট রয়েছে কক্সবাজারে। এর মধ্যে রয়েছে সি ওয়ার্ল্ড, সেন্টমার্টিন রিসোর্ট, হানিমুন রিসোর্ট, ইকরা বিচ রিসোর্ট, হোয়াইট বিচ রিসোর্ট, নীলিমা রিসোর্ট ইত্যাদি। এসব হোটেলের ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে।

অফ সিজনে কক্সবাজারের হোটেল ভাড়া ক্ষেত্র বিশেষ অর্ধেকেরও কমে যায়। এসময় বড় হোটেলগুলোতেও ডিসকাউন্ট অফার করে। অফসিজনে কক্সবাজার পৌঁছে একটু দেখেশুনে দরদাম করে হোটেল নিতে পারলে কম খরচে ভালো হোটেল পাওয়া যায়। কক্সবাজার পৌঁছানোর পর যে কাজটি একদমই করবেন না, সেটি হলো অটোরিকশা বা সিএনজিওয়ালার পরামর্শ মেনে কোনো হোটেল নেওয়া। এতে আপনার হোটেল ভাড়া নিশ্চিত বেশি পড়বে। কারণ হোটেল থেকে সিএনজিওয়ালা কমিশন নেয়। এছাড়া মেইন বিচ থেকে যতটা দূরে হোটেলের অবস্থান হবে, রুম ভাড়াও তত কম পড়বে। কক্সবাজারের প্রত্যেকটা হোটেলের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ রয়েছে। আপনি অগ্রিম বুকিং দিতে চাইলে সেগুলোতে যোগাযোগ করতে পারেন।

ফ্যামিলি নিয়ে কক্সবাজার যারা যাবেন, পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হলে চাইলে ফ্ল্যাটও ভাড়া নিতে পারেন৷ দুই তিন চার বেডরুমের ফ্ল্যাট আছে কক্সবাজারে। এসি, নন এসি ও ক্যাটাগরি ভেদে এগুলোর ভাড়া পড়বে ২৫০০ থেকে ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত।

কক্সবাজার ভ্রমণে যা যা করবেন

সমুদ্র মনকে প্রশান্ত করে। বলা হয়ে থাকে সমুদ্রের সামনে গেলে মনের দুয়ারও সমুদ্রের মতো উন্মুক্ত হয়ে যায়। আপনি সকাল বিকাল সন্ধ্যায় হয়তো সমুদ্র পাড়ে যাবেন, নির্জনে বসে হয়তো ঢেউয়ের গর্জ শুনবেন বা এলোমেলো হেঁটে বেড়াবেন সারি বেধে থাকা ঝাউবনের ভিতর। তবে সবসময় একটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে সেফটি ফার্স্ট। সমুদ্রে নামার আগে জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিন। ভাটার সময় সমুদ্রে নামবেন না।

যদি বৃষ্টির দিনে কক্সবাজার যান, তাহলে বৃষ্টির পরের সময়টা বিচে যেতে চেষ্টা করবেন। এসময় একটা স্নিগ্ধ অনুভূতি হবে। আর জোৎস্ন্যা রাতে রুপালী আলোর নিচে বসে সমুদ্রের গর্জন আপনার মন ভালো করবে। ঢেউয়ের গর্জন, মৃদু বাতাসের সাথে জোছনার মাখামাখি আপনাকে বিমুগ্ধ করবে।

কক্সবাজারের কাছেই হিমছড়ি ঝর্ণা, ইনানী বিচ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রামু বৌদ্ধ বিহার ও সেন্টমার্টিন এর মতো পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। আপনি সময় সুযোগ ও সুবিধামতো এগুলো থেকেও বেড়িয়ে আসতে পারেন। ভ্রমণের আনন্দময় মুহূর্তগুলো ছবি তুলে স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখতে চান সবাই। চাইলে বিচ ফটোগ্রাফার দিয়েও আপনি ছবি তুলতে পারবেন। এছাড়া স্পিডবোট রাইড, প্যারাগ্লাইডিং সহ বিভিন্ন এক্টিভিটিজের সুযোগ আছে কক্সবাজারে।

কি খাবেন – কোথায় খাবেন

কক্সবাজারে প্রায় সব হোটেলেরই নিজস্ব খাবারের ব্যবস্থা আছে। এর বাইরেও বিচের আশেপাশে ও মেইনরোডে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট পাবেন। এর মধ্যে রোদেলা, ধানসিড়ি, পৌউষি, ঝাউবন ইত্যাদি উল্লেখ করা যায়। খাবারের দাম পড়বে প্রতিবেলা ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। যেহেতু সমুদ্র পাড়ের শহরে গিয়েছেন সামুদ্রিক মাছ চেখে দেখতে ভুলবেন না। প্রচুর সামুদ্রিক মাছের আইটেম আছে মেনু হিসেবে এসব রেস্টুরেন্টে। আর সন্ধ্যার পর বিচের আশেপাশে ছাপড়া রেস্টুরেন্টগুলোয় স্কুইড, কাঁকড়া সহ বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক তাজা মাছ পাবেন। আপনি তাজা মাছ বাছাই করার পর, ওগুলো আপনার সামনেই ফ্রাই করে দিবে।

কক্সবাজার ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

*সমুদ্রে নামার সময় জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিন। ভাটার সময় সমুদ্রে নামবেন না।
*কোনোকিছু খাবার আগে অবশ্যই খাবারের দাম জেনে নিবেন।
*রিকশা বা অটোরিকশায় উঠার আগে ভালোমতো দরদাম করে নিবেন।
*অফসিজনে গেলে হোটেল ভাড়া কম পড়বে। ঈদ পুজো বা এরকম টানা সরকারি ছুটির সময়ে কক্সবাজার না যাওয়াই ভালো। তখন অনেক বেশি ভিড় হয় বলে সমুদ্র উপভোগ করতে পারবেন না। খরচও অনেক বেশি হবে।
*ইনানী গেলে খালি পায়ে হাঁটা যাবেনা। কারণ প্রবাল অনেক ধারালো হয়।
*বিচে অপচনশীল কোনোকিছু ফেলবেন না। শুধু বিচে নয় এমনকি আপনার শহরেও ফেলবেন না। এটা আপনার ব্যক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।
*যেকোনো সহযোগিতার জন্য টুরিস্ট পুলিশের সাহায্য নিন।

আরো পড়ুন

মহামায়া লেক

মহামায়া লেক (Mohamaya Lake) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি কৃত্রিম হ্রদ। ১১ বর্গ কিলোমিটার এর এই লেকের অবস্থান মিরসরাইয়ের ঠাকুরদীঘি ইউনিয়নে। বিস্তীর্ণ লেকের মধ্যে ডুবে আছে অনেকগুলো পাহাড়, আছে পাহাড়ি ঝর্ণা। টলটলে পানি আর সবুজ প্রকৃতির মাঝে নৌকা নিয়ে এসব পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে ঘুরে বেড়ানো যায়। কায়াকিং এর ব্যাবস্থাও আছে এই লেকে। রাতে থাকতে চাইলে এখানে ক্যাম্পিং করা যাবে। মহামায়া লেক মূলত একটি রাবার ড্যাম এর জন্য সৃষ্টি হয়েছে। লেকটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে আছে।

কিভাবে যাবেন মহামায়া লেক

মহামায়া লেক যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ঠাকুরদীঘি বাজারে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি ঠাকুরদীঘি আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে মিরসরাই এর ঠাকুরদীঘি বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে ঠাকুরদীঘি পর্যন্ত যেতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

ট্রেনে মহামায়া লেক

ঢাকা থেকে ঠাকুরদীঘির সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই ঠাকুরদীঘি বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে ঠাকুরদীঘির বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।

যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে ঠাকুরদীঘি বাজারে আসা যাবে। আর চট্টগ্রাম থেকে আসতে চাইলে চট্টগ্রামের অলংকার বা সিটি গেইট থেকে ফেনী বা বারৈয়ারহাট এর বাসে উঠলেই হবে। বারৈয়ারহাট এর সরাসরি চয়েস বাস আছে। ভাড়া ৮০ টাকা।

ঠাকুরদীঘি বাজারে নেমে সিএনজিতে করে মহামায়া ইকো পার্ক এ আসা যাবে। ইকো পার্ক এর ভিতরেই মহামায়া লেক। লোকাল সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ১৫/২০ টাকা। আর রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে ৮০ থেকে ১২০ টাকা।

মহামায়া লেকে কায়াকিং

মহামায়া লেকে কায়াকিং করার ব্যবস্থা আছে। এক কায়াক বোটে ২ জন বসতে পারবেন। ঘন্টাপ্রতি কায়াক ভাড়া ৩০০ টাকা। আধা ঘন্টার জন্য ২০০ টাকা। স্টুডেন্টদের জন্য ডিসকাউন্ট অফার করে তারা। স্টুডেন্টরা আধা ঘন্টার ভাড়াতেই এক ঘন্টা কায়াকিং এর সুযোগ পেয়ে থাকে। কায়াকিং ছাড়াও এখানে ইঞ্জিন বোটে ঘুরতে পারবেন আপনি। ১০ জন বসার মতো একটা ইঞ্জিন বোটের ভাড়া ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। ইঞ্জিন নৌকা আপনাকে পুরো মহামায়া লেক ঘুরে দেখাবে।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য ঠাকুরদীঘি বা নিকটস্থ বারৈয়ারহাট বাজারে কোনো হোটেল নাই।  থাকতে চাইলে সেখানে ক্যাম্পিং করতে পারবেন। অথবা থাকার হোটেলের জন্য আপনাকে যেতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। ঠাকুরদীঘি বাজার থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটারের মতো।

কোথায় খাবেন

মহামায়া লেক এর আশেপাশে কোনো খাবার দোকান নাই। ঘুরতে গেলে আপনাকে খাবার নিয়ে যেতে হবে। ঠাকুরদীঘি বাজারে কিছু খাবারের দোকান পাবেন। তবে ভালো মানের খাবারের জন্য আপনাকে আসতে হবে বারৈয়ারহাট বাজারে। এখানে ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। মেনু হিসেবে ভাত মাছ মাংস ভর্তা ইত্যাদি পাওয়া যাবে।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। মহামায়া লেক ভ্রমণে গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। মহামায়ার একদম কাছাকাছি আছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা, নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ও কমলদহ ঝর্ণা। বিশ কিলোমিটার দূরের সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত কিংবা চন্দ্রনাথ পাহাড়ও চাইলে একই দিন কাভার করতে পারবেন। যেতে পারেন সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। যার ভিতরে আছে সুপ্তধারাসহস্রধারা নামে মায়াবী দুইটা ঝর্ণা। জয়েন করুন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।

আরো পড়ুন 

সাজেক ভ্যালি

এই মুহুর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হচ্ছে সাজেক ভ্যালি (Sajek Valley)। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফিট উচ্চতায় এর অবস্থান। সাজেক রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে আপনাকে খাগড়াছড়ি হয়ে যেতে হবে। খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭৩ কিঃমিঃ আর দীঘিনালা থেকে ৪০ কিঃমিঃ এর মতো। ভ্রমণ পিপাসুদের অনেকে সাজেক ভ্যালিকে বাংলার ভূস্বর্গ নামে অভিহিত করেন। চারপাশে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি, আর তুলোর মতো মেঘ, এর মধ্যেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সাজেক ভ্যালি। প্রকৃতি এখানে সকাল বিকাল রঙ বদলায়। দিনের প্রতিটি মুহুর্তে আপনি সাজেকের আলাদা রূপ দেখতে পাবেন। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ সহ বিস্তারিত গাইডলাইন থাকবে এই আর্টিকেলে।

কী কী দেখবেন সাজেক ভ্যালিতে

প্রকৃতিপ্রেমী হলে আপনার কাছে পুরো সাজেক ভ্যালিটাই দর্শনীয় মনে হবে। তারপরও বলতে হয় পর্যটকদের কাছে সবচয়ে আকর্ষণীয় স্থান কংলাক পাড়া। এছাড়া হ্যালিপ্যাড, রুইলুই পাড়া, রক গার্ডেন, লুসাই ভিলেজ উল্লেখযোগ্য।

কংলাক হলো সাজেকের সবচেয়ে উঁচু স্থান। এটি লুসাই অধ্যুষিত পাড়া। কংলাকের চূড়া থেকে আপনি পুরো সাজেক ভ্যালি এক নজরে দেখতে পাবেন। ভাগ্য ভালো হলে দিগন্তে দেখা পাবেন রংধনুর। এই অপার সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য কংলাকের চূড়া পর্যন্ত উঠতে আপনাকে ৪০ মিনিটের মতো ট্রেকিং করতে হবে। বিকেল বেলা কংলাক ভ্রমণের আদর্শ সময়। আপনি চাইলে কংলাকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখতে পারেন। এটি আপনার ভ্রমণ জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য স্মৃতি হয়ে থাকবে।

সাজেকের নিচে একটি ঝর্ণা আছে। প্রচলিত ভাষায় এটি কমলক ঝর্ণা নামে পরিচিত। এর মূল নাম পিদাম তৈসা বা সিকাম তৈসা। রুইলুক পাড়া থেকে এখানে ট্রেকিং করে যেতে চাইলে আসা যাওয়ায় ৪ ঘন্টার মতো সময় লাগবে।

সূর্যাস্তের পরও সাজেক তার রূপবদল থামাবে না। সন্ধ্যার পরপরই আকাশ ভরা নক্ষত্রের দেখা মিলবে। রাত যত বাড়বে তার রূপও তত গাঢ় হবে। দূষণমুক্ত পরিবেশ ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এখানে প্রতিদিনই রাতের আকাশে তারার মেলা বসে। জোছনারাতে প্রকৃতি হয়ে উঠে আরো স্বর্গীয়! খোলা মাঠে বাতাসে গা এলিয়ে দিয়ে রাতের আকাশ দেখতে চাইলে হ্যালিপ্যাড সবচেয়ে চমৎকার জায়গা।

সাজেকে মেঘ দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় ভোরবেলা। সারারাত জেগে থেকে যদি আপনি ভোর মিস করেন, তাহলে আপনি অনেক কিছুই মিস করবেন। ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সবচেয়ে ফ্রেশ মেঘ দেখা যায়। যেন হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারেন। মেঘের গায়ে যখন সূর্যের আলো পড়তে শুরু করে তখন অবর্ণনীয় এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। এইসময় প্রতি ১০ মিনিটে একবার করে প্রকৃতির রঙ বদলে যেতে দেখবেন। তাই খেয়াল রাখবেন সূর্যোদয় দেখা যেন কোনোভাবেই মিস না হয়। শুধু মেঘের গায়ে সূর্যোদয় দেখার জন্যই সাজেক ভ্যালি আসা যায়।

সাজেক থেকে ফেরার সময় আপনার যাত্রাপথেই পড়বে হাজাছড়া ঝর্ণা। সুযোগ থাকলে ঢুঁ মেরে আসতে ভুলবেন না।

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সত্যি বলতে প্রতিটি মৌসুমে সাজেকের আলাদা আলাদা সৌন্দর্য আপনার চোখে পড়বে। শীতের সাজেক একরকমতো বর্ষায় সম্পূর্ণ অন্যরকম। তাই ভ্রমণপিপাসুরা বছরজুড়ে সাজেকে ছুটে যায়। তবে বর্ষার শুরু থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত, অর্থাৎ মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রকৃতি সবচেয়ে সতেজ থাকে বলে এসময় সাজেক বেশি সুন্দর। তখন সারাদিন মেঘ ভেসে বেড়ায় এখানে সেখানে। মেঘ এসে আপনাকে ঢেকে দিতে পারে যখন তখন।

সাজেক ভ্যালি যাওয়ার উপায়

সাজেক ভ্যালি রাঙ্গামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি থেকে যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক সহজ। তাই দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে প্রথমে খাগড়াছড়ি আসতে হবে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির প্রধান বাস শান্তি পরিবহন। এছাড়া সৌদিয়া, শ্যামলী, ঈগল, হানিফ, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহনের বাস আছে। নন এসি বাসে সব পরিবহনের ভাড়া ৫২০ টাকা। এসি বাসের মধ্যে রয়েছে শান্তি, হানিফ, ঈগল ও সেন্টমার্টিন পরিবহনের বাস। এসি বাস ভাড়া ৯৫০ থেকে ১২৫০ টাকা। ঢাকার গাবতলী, কলাবাগান, ফকিরাপুল ও আরামবাগ থেকে এসব বাস ছাড়ে। লাস্ট বাস রাত এগারোটার মধ্যে ছেড়ে যায়। সরকারী ছুটির দিন বা বৃহস্পতিবার শুক্রবার যেতে চাইলে আগে থেকে টিকিট কেটে রাখলে ঝামেলা এড়ানো যায়। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ বাস থেকে শুরু হবে।

খাগড়াছড়ি থেকে জিপে সাজেক ভ্যালি

খাগড়াছড়ির থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার জন্য কোনো লোকাল গাড়ি বা শেয়ার্ড জিপ নেই। আপনাকে গাড়ি রিজার্ভ করতে হবে। এক্ষেত্রে চান্দের গাড়ি অথবা মাহেন্দ্র জিপ প্রধাণ বাহন। আপ-ডাউন রিজার্ভ জিপ ভাড়া পড়বে ৮০০০ থেকে ১০০০০ টাকা। এক গাড়িতে সর্বোচ্চ ১২ জন বসার পরমিশন আছে।

আপনার টিমে সদস্য সংখ্যা কম হলে অন্য কারো সাথে জিপ শেয়ার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে খরচ কমবে। যদি শেয়ার করার মতো কাউকে না পান, তবে সিএনজি নিতে পারেন। সিএনজি ভাড়া পড়বে ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকার মতো। তবে সম্ভব হলে সিএনজিতে না যাওয়াই ভালো। তাছাড়া সিএনজিতে সাজেক পৌঁছাতে কখনো কখনো ৬ ঘন্টাও লেগে যায়। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ এর অন্যতম খরচ হলো জিপ খরচ।

খাগড়াছড়ি জিপ সমিতির ভাড়ার নির্ধারিত তালিকা

সাজেক জিপ

আপনি যদি একা বা ২/৩ জন হন, তাহলে চেষ্টা করবেন অন্য কোনো গ্রুপের সাথে জয়েন করে ফেলতে। নিজে কোনো গ্রুপ ম্যানেজ করতে না পারলে জিপ সমিতির অফিসে গিয়ে বললেও হবে। তারাই আপনাকে কোনো গ্রুপের সাথে জযেন করিয়ে দিতে আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করবে।

আপনি খাগড়াছড়ি থেকে মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিয়েও সাজেক ভ্যালি যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে আগে থেকে দরদাম করে নিবেন ভালোভাবে। আপনি যে বাহনই রিজার্ভ করেন না কেন, আগে থেকেই বলে নিবেন কোন কোন স্পট দেখতে চান।

এছাড়া আপনি যদি ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি দীঘিনালার বাসে উঠেন, তাহলে দীঘিনালা থেকেও আপনি সাজেকের জিপ পাবেন। খাগড়াছড়ি থেকে জিপে উঠলে সেটাও দীঘিনালা হয়েই যায়। খাগড়াছড়ি থেকে জিপে সাজেক যেতে ৩ ঘন্টার মতো সময় লাগে।

দীঘিনালার পরের আর্মি ক্যাম্প থেকে আমি স্কর্ট দিয়ে প্রত্যেকটা গাড়ি সাজেকে নিয়ে যায়। স্কর্ট ছাড়ে সকাল ৯ঃ৩০ মিনিট এবং দুপুর ২ঃ৩০ মিনিটে। অর্থাৎ সকাল ৯ঃ৩০ মিনিটের মধ্যে আপনি ওখানে উপস্থিত থাকতে না পারলে আপনাকে দুপুর ২ঃ৩০ মিনিটের স্কর্টে সাজেক যেতে হবে। দুপুরের স্কর্টেও যদি আপনি আর্মি ক্যাম্পে উপস্থিত না থাকতে পারেন, তাহলে আপনি ওইদিন আর সাজেক যেতে পারবেন না৷ পরদিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর্মি স্কর্ট বাদে একা কোনো গাড়ির সাজেক যাওয়ার পারমিশন নেই। আবার একা জিপ বা সিএনজি নিয়ে গেলে আপনার সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ বেশি পড়বে।

সাজেক ভ্রমণে পাহাড়ি আঁকাবাতা এই পথের সৌন্দর্যের বর্ণনা দেওয়া অসম্ভব! রাস্তার প্রতিটি বাঁকে নতুন সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। যাওয়ার পথে জিপের এই জার্নিটাই স্মরণীয় হয়ে থাকবে অনেকদিন। যতক্ষণে সাজেক গিয়ে পৌঁছাবেন তার আগেই মনোরম পরিবেশ আর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের জন্য আপনার ভ্রমণক্লান্তি অনেকটাই কেটে যাবে।

চট্টগ্রাম থেকে সাজেক ভ্রমণ

চট্টগ্রামের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বিআরটিসির এসি বাস ছাড়ে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। দিনে এসি বাস অবশ্য মাত্র ৪টি। ভাড়া ২০০ টাকা। এছাড়া অক্সিজেন মোড় থেকে ১ ঘন্টা পরপর শান্তি পরিবহনের বাস আছে। ভাড়া ১৯০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে বাসে খাগড়াছড়ি যেতে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা সময় লাগে।

রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক ভ্রমণ

রাঙামাটি থেকে সাজেক ভ্রমণ করার জন্য সড়ক ও নৌপথে আলাদা রুট আছে। রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে বাঘাইছড়ির লঞ্চ ছাড়ে। যেতে ৫/৬ ঘন্টা সময় লাগে। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। এছাড়া রাঙামাটি বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭ঃ৩০ মিনিটে বাস ছাড়ে। ২শ টাকা ভাড়া ও ৫/৬ ঘন্টা সময় লাগে। বাঘাইছড়ি থেকে মোটর সাইকেলে সাজেক যাওয়া যায়। আসা যাওয়া জনপ্রতি ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা। তবে সাজেক যেতে চাইলে রাঙামাটি হয়ে না যাওয়াই ভালো। এই পথে গেলে আপনার সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ বেশি হবে, সময়ও বেশি লাগবে।

সাজেকে থাকার রিসোর্ট

সাজেকে ছোট বড় মিলিয়ে বিভিন্ন কোয়ালিটির ১০০র মতো রিসোর্ট রয়েছে। এসব রিসোর্টে সর্বনিম্ন জনপ্রতি ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা ভাড়া পড়বে। শুক্রবার বা সরকারি ছুটিতে যেতে চাইলে কমপক্ষে ১৫/২০ দিন আগে রুম বুকিং করে রাখা ভালো। নইলে ভালো রিসোর্টে রুম পাওয়া যায়না সাধারণত। রিসোর্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রিসোর্টের কোয়ালিটি ও অবস্থানকে প্রাধান্য দিবেন। ভিউ খুব একটা ইমপর্টেন্ট না। কারণ সব রিসোর্ট থেকেই কমবেশি ভিউ পাওয়া যায়। রিসোর্ট থেকে বের হলে ভিউতো আছেই।

রিসোর্টের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিছু রিসোর্ট আছে সাজেকের বাইরে। আবার কিছু রিসোর্ট এমন একটা অবস্থানে যেখান থেকে মূল পয়েন্টে আসতে অনেক বেশি সময় নষ্ট হবে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় রিসোর্টের ভিউ তুলনামূলক ভালো, কিন্তু ইন্টেরিয়র ও ওয়াশরুম বেশ জরাজীর্ণ। তাই রিসোর্ট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ইন্টেরিয়র কোয়ালিটি ও লোকেশনকে প্রাধান্য দিন। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ কিছুটা বাড়লেও রিসোর্ট এর ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ না করাই ভালো।

সাজেক ভ্যালি
সাজেকের সকাল। Photo: G’Son Biswas

সাজেকের উল্লেখযোগ্য কিছু রিসোর্ট ও কটেজ এর ফোন নাম্বার

রিসোর্ট রুংরাং: সাজেকের বেস্ট রিসোর্ট গুলোর মধ্যে একটি রিসোর্ট রুংরাং। রিসোর্টের বারান্দা থেকে দিগন্তজোড়া পাহাড়সারি ও মেঘ দেখতে পাবেন। এর অবস্থান আর্মি রিসোর্টের উল্টো পাশে প্রিমিয়াম লোকেশনে। এই রিসোর্টের ইন্টেরিয়র এবং ওয়াশরুম সাজেকের অন্যতম সেরা। রিসোর্টে কাপল ডাবল মিলিয়ে ৮টি রুম আছে। শুক্রবারে এর রুম ভাড়া পড়বে ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মতো। অন্যান্য দিন ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে রুম পাবেন। রুংরাংয়ের বুকিং নাম্বার 01869-649817, 01632-698158, 01869-649817। ফেসবুক পেজ: Resort RungRang

সাজেক রিসোর্ট: এই রিসোর্টটি বাংলাদেশ আর্মি পরিচালিত। রুম ভেদে এসি ও নন এসি রুমের ভাড়া পড়বে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো। সাজেক রিসোর্টের রয়েছে নিজস্ব রেস্টুরেন্ট। সেনাবাহিনী বা প্রথম সারির সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য এখানে ডিসকাউন্ট এর ব্যবস্থা রয়েছে। রুম বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন 01859-025694, 01847-070395 অথবা 01769-302370 নাম্বারে।

রুন্ময় রিসোর্ট (Runmoy Resort) : এই রিসোর্টের মোট ৫ টি রুম আছে। প্রতিটি রুমে সর্বোচ্চ ২ জন থাকার ব্যবস্থা আছে। ৬০০ টাকা বাড়তি পরিশোধ করলে রুমে অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করা হয়। নিচতলার রুম ভাড়া ৪৪৫০ টাকা, উপরের তলার রুম ভাড়া ৪৯৫০ টাকা। বুকিংয়ের জন্য ফোন করতে পারেন 0186547688 নাম্বারে।

মেঘ মাচাং (Megh Machang): ব্র্যান্ডিং বিবেচনায় এটি সাজেকের অন্যতম একটি রিসোর্ট। এর ভিউ সাজেকের অন্যতম সেরা। মেঘ মাচাংয়ের রুম রয়েছে ৫টি। রুম ভাড়া ২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন 01822-168877 নাম্বারে।

মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট: সাজেকের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট। এই রিসোর্টে রয়েছে ৪টি রুম। রুম ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। বুকিং নাম্বার 01884-208060

জুমঘর রিসোর্ট: এটি সাজেকের আরেকটি ভালো রিসোর্ট। এর রুম ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন 01884-208060 নাম্বারে।

কম খরচের কিছু রিসোর্ট

কম খরচের রিসোর্টগুলো আপনার সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ কমাতে সাহায্য করবে। যারা বাজেট ফ্রেন্ডলি ভ্রমণ করতে চান তারা এই রিসোর্টগুলো দেখতে পারেন।

আলো রিসোর্ট: কম খরচে থাকার জন্য এটি একটি ভালো রিসোর্ট। কোনো ভিউ নাই। এই রিসোর্টে রুম রয়েছে ৬টি। রুম ভাড়া পড়বে প্রতিরাতের জন্য ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা। বুকিং দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন 01841-000645 নাম্বারে।

লুসাই কটেজ (TGB Lushai Cottage): কাপল ডাবল সব রকম রুম আছে এই রিসোর্টে। সাদামাটা ভালো একটি রিসোর্ট। রুম ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকার মতো। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন 01634-198005 নাম্বারে।

মেঘের ঘর রিসোর্ট: কম খরচে থাকার জন্য এটি সাজেকের আরেকটি ভালো রিসোর্ট। ৮টি রুম রয়েছে এই রিসোর্টে। এখানে রুম ভাড়া পড়বে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। এর বেশি দিয়ে থাকা ঠিক হবেনা। রুম বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন 01842605788 নাম্বারে।

হাফং তং: এটিও বাজেটের মধ্যে একটি রিসোর্ট। এই রিসোর্টে ৬টি রুম রয়েছে। রুম ভাড়া পড়বে। ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন 01869-649817 নাম্বারে।

পাহাড়িকা রিসোর্ট: কম বাজেটের মধ্যে এটি আরেকটি ভালো রিসোর্ট। এই রিসোর্টে ১২টির মতো রুম রয়েছে। রুম ভাড়া পড়বে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এর বেশি চাইলে না নেওয়াই ভালো। বুকিং নাম্বার 01724-658766, 01871-771777

আদিবাসী ঘর: আপনি ব্যাকপ্যাকার হলে কম খরচে আদিবাসীদের ঘরে থাকতে পারেন। জনপ্রতি ১৫০ – ৩০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে। ফ্যামিলি নিয়ে থাকার জন্য আদিবাসী ঘর ভালো চয়েস হবেনা। তবে বন্ধু বান্ধব মিলে চাইলে থাকা যায়।

সাজেকে খাওয়ার ব্যবস্থা

সাজেকে খাওয়ার জন্য অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট আছে। এছাড়া অনেক রিসোর্টের নিজস্ব খাবার ব্যবস্থা রযেছে। জনপ্রতি প্রতিবেলা খাবার খরচ পড়বে ১২০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে। খাবারের মেনু হিসেবে পাবেন ভাত, মুরগী, আলুভর্তা, সবজি ইত্যাদি। রাতে বারকিউর ব্যবস্থা রয়েছে অনেকগুলো রেস্টুরেন্টে। এছাড়া ভালো মানের রিসোর্টগুলোতে নিজস্ব চুলায় বারবিকিউর ব্যবস্থা আছে। সাজেকে পেপে কলা আনারস সহ অনেক সুস্বাদু পাহাড়ি ফল পাবেন বেশ সস্তায়। খেয়ে পরখ করতে ভুলবেন না।

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ

ভ্রমণের সময় সাজেক ভ্যালিতে থাকা খাবার খরচ কিছুটা বেশি হয়। তাই নিজেরা গ্রুপ করে গেলে খরচ কমানো যেতে পারে। তারপরও সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়া যাক। জিপ ভাড়া ৮ থেকে ১১ হাজার টাকা। আপনি কী কী ঘুরবেন তার উপর জিপ ভাড়া নির্ভর করে। এক জিপে দশ থেকে বারো জন বসা যায়। খাবার জন্য প্রতি বেলা খরচ হবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। বিভিন্ন এন্ট্রি ফি ও জিপ পার্কিং চার্জ বাবদ খরচ হতে পারে জনপ্রতি ১৫০ টাকা। আর কটেজ ভাড়া গড়ে জনপ্রতি ৫০০ টাকা। মনে রাখা দরকার বর্ষাকালে সাজেক ভ্রমণ করলে খরচ কম হয় তুলনামূক। তখন মেঘও বেশি দেখা যায়।

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ টিপস

*শুধুমাত্র রবি ও এয়ারটেলের নেটওয়ার্ক রয়েছে সাজেক ভ্যালিতে। তাই রবি বা এয়ারটেল সাথে রাখার চেষ্টা করুন।

* সাজেকে বিদ্যুত নেই। সোলার ও জেনারেটরে পাওয়ার সাপ্লাই করে রিসোর্টগুলো। তাই পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখুন।

*সাজেকের যাত্রাপথে জিপের ছাদে উঠবেন না। এটি করতে আর্মির পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে। তাছাড়া পাহাড়ি পথে জিপের ছাদে উঠা বিপদজনক।

* আদিবাসীদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে ভুলবেন না। এটা বেসিক ম্যানার। আপনার ব্যাক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।

*পাহাড়িদের কালচারের প্রতি সম্মান দেখান। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্যকেউ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগতো।

* যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। সেটি শুধু পাহাড়ে নয়, এমনকি শহরেও।

অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর সাজেক ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন। এতে আপনার সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ খরচ কিছুটা বেশি হলেও ঝামেলাহীন ভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন।

আরো পড়ুন

সারিঘাট

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুরের জন্য চমৎকার একটি স্থান কেরানীগঞ্জ এর সারিঘাট। ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতা থেকে সরে কিছুটা প্রাকৃতিক ছোঁয়ার জন্য সারিঘাট থেকে ঘুরে আসা যায়। সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশ, নদী, খোলা জায়গা, কাশবন আর সাথে নৌকা ভ্রমণ। এখানকার নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে একটা বিকেল অনায়াসেই কাটিয়ে দেওয়া যায়। সারিঘাট গিয়ে হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির মাঝে। ঢাকায় যারা বসবাস করেন, তারা ঢাকার কাছাকাছি একটা দিন বেড়িয়ে আসার জন্য সারিঘাট কে বেছে নিতে পারেন।

সারিঘাট কিভাবে যাবেন

সারিঘাট এর নাম শুনলে প্রথমে আমাদের মাথায় আসে সিলেটের লালাখাল এর সারিঘাটের কথা। কিন্তু ঢাকার কাছে কেরানীগঞ্জের সারিঘাট যাওয়ার জন্য ঢাকার যে কোন জায়গা প্রথমে যাত্রাবাড়ী আসতে হবে। সেখান থেকে জুরাইন রেল গেইট। বাস বা লেগুনাতে ভাড়া ৮ টা। জুরাইন রেল গেইট থেকে পোস্তগলা ব্রিজ পার হতে হবে। পোস্তাগলা ব্রিজ পার হলেই সারিঘাট যাওয়ার অটোরিক্সা বা সিএনজি পেয়ে যাবেন। লোকাল সিএনজিতে ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা।

লোকাল সিএনজির ঝামেলায় যেতে না চাইলে জুরাইন রেল গেইট থেকে সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১২০ টাকা। একসাথে ৪/৫ জন গেলে জুরাইন বা পোস্তগোলা থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে যাওয়াই ভালো। ফেরার পথেও ওখান থেকে সিএনজি পাওয়া যাবে।

সারিঘাট কেরানীগঞ্জ ডে ট্যুর | বিস্তারিত গাইডলাইন | Sarighat Keraniganj

কখন যাবেন

সারাবছরই সারিঘাট যাওয়া যায়।  সারিঘাট ভ্রমণের জন্য একটা বিকেলই যথেষ্ট। সাধারণত শুক্রবার বিকালে এখানে প্রচুর লোক সমাগম হয়। ভীড় পছন্দ না করলে শুক্রবার বিকেলে না যাওয়াই ভালো। কেউ চাইলে সারিঘাট এ ক্যাম্পিং করতে পারবেন। সেখানেই ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা আছে। তবে ক্যাম্পিংয়ের ক্ষেত্রে গ্রুপ করে যাওয়াই ভালো।

কি দেখবেন সারিঘাট

সারিঘাট এর বিশাল সবুজ প্রকৃতি, নদী, গাছপালা, খোলা জায়গা এসব আপনাকে প্রশান্তি দিবে। নদীতে কায়াকিং ও নৌকা ভ্রমণের সুযোগ আছে। কেউ চাইলে কায়াকিং ও নৌকা ভ্রমণও করতে পারবেন। গোসলও করা যাবে এখানে। নদীর পানি যথেষ্ট পরিষ্কার। কায়াকিং এর খরচ পড়বে জনপ্রতি ঘন্টায় ১৫০ টাকা, ৩০ মিনিটের জন্য ৭৫ টাকা। নৌকা ভ্রমণ ১০০-১৫০ টাকা। তবে আগে থেকে দরদাম করে নেয়াই ভালো। কায়াক হচ্ছে এক ধরণের ছোট ফাইবার বোট। বৈঠা বা লগি ব্যবহার করে এটি চালানো যায়। কায়াকে করে ভেসে বেড়াতে পারবেন পানি দেখতে দেখতে। এর জন্য কোনো ধরণের অগ্রিম প্রশিক্ষণের দকরকার হয়না। শুধুমাত্র ডানে ও বামে নেওয়ার কৌশল রপ্ত করলেই হবে।

এছাড়া সারিঘাট এর খোলা জায়গার নির্জনতায় অনেকটা সময় কাটিয়ে দিতে পারেন। এখানে কিছু ঝুপড়ি দোকান আছে। হালকা খাবার দাবারের জন্য এই দোকানগুলোই যথেষ্ট। সেখানে দুপুরের খাবার দাবারও পাওয়া যাবে। দুপুরের খাবারের ক্ষেত্রে খরচ হবে জনপ্রতি খরচ হবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। খাবারের মেনু হিসেবে থাকবে ভাত, ভর্তা, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল।

সতর্কতা

সাঁতার না জানলে কায়াকিং এর সময় অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পরে নিবেন। এর জন্য কোনো অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে না।কায়াকিং শুরুর আগে এবং শেষে নিজের ব্যাক্তিগত জিনিসপত্র সামলে রাখবেন। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অতিরিক্ত লোক সমাগম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন, চিপস ও বিরিয়ানির প্যাকেট বা খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না। শুধু ভ্রমণে গিয়ে নয়, প্রত্যাহিক জীবনেও যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন।

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর

ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো দোহারের মৈনট ঘাট, সাভারের সাদুল্লাপুর এর গোলাপগ্রাম, নুহাশ পল্লী, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, বেলাই বিল, নারায়ণগঞ্জ এর চৌদ্দার চর, মায়াদ্বীপ, পানাম নগরী ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক ট্রাভেল গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। সারিঘাট সম্পর্কে আরো বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে চাইলে আমাদেরকে জানান।

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান

ঢাকার কাছেই, সবুজেঘেরা কোলাহলমুক্ত পরিবেশের জন্য ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বিখ্যাত। দেশে যে কয়টি প্রাকৃতিক বনভূমি রয়েছে তার মধ্যে মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় একটি।  ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে একসময় বাঘ, কালো চিতা, চিতাবাঘ, মেঘাবাঘ, হাতি, ময়ূর, মায়া হরিণ ও সম্বর হরিণ দেখা যেত। এ বনে এক সময় খেকশিয়াল, বাঘডাস, বেজি, কাঠবিড়ালী, গুঁইসাপ আর কয়েক প্রজাতির সাপ দেখা যেত। বর্তমানে সে সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। বন বিভাগ এই বনে অজগর, ময়ূর, হরিণ ও মেছোবাঘ ছেড়েছে। উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের দিক দিয়েও এ বন বিশেষভাবে আলোচিত।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে উত্তরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় এই উদ্যানটি অবস্থিত। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে এই বনের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যে কোনো বাসে চড়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ফটকের সামনেই নামা যায়। এছাড়া ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস চলে এই পথে। ন্যাশনাল পার্কের ৩ নাম্বার গেটে নামার কথা বললে সরাসরি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের প্রধান গেটে নামতে পারবেন। বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। নিজস্ব বাহনে গেলে জয়দেবপুর চৌরাস্তা ছাড়িয়ে ময়মনসিংহের দিকে কিছু দূর চলতে হাতের ডানে পড়বে এর প্রধান প্রবেশপথ।

বনের ভেতরে আছে ৩১টি বনভোজন কেন্দ্র। কেন্দ্রগুলোর নাম আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর, বিনোদন ইত্যাদি। পিকনিক বা পারিবারিকভাবে দলবদ্ধ ভ্রমণের জন্য ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানটি একটি সুন্দরতম স্থান।

কোথায় থাকবেন?

ঢাকা থেকে ভাওয়াল উদ্যানে সারাদিন ঘুরে বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসা যায়। চাইলে অনুমতি ও বুকিং সাপেক্ষে উদ্যানের ভেতর প্রাকৃতিক পরিবেশে দিন অতিবাহিত করা যায়। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ভেতরে আছে ১৯টি বিশ্রামাগার ও কটেজ। এগুলোর নামও বেশ মজার। চম্পা, জেসমিন, অর্কিড, রজনীগন্ধা, শাপলা, মালঞ্চ, গোলাপ, মাধবী, বকুল, জুঁই, চামেলী, বেলি, আনন্দ-১, আনন্দ-২, আনন্দ -৩, শ্রান্তি ও কেয়া। খুবই চমৎকার ডিজাইলের কটেজ ও রেস্ট হাউজগুলো আগে থেকে বুক করে যেতে হয়। রেস্ট হাউজেই খাবারের ব্যবস্থা আছে। সেটার জন্যও আগে থেকে বলে রাখা লাগে। এসব গেস্ট হাউজে রাত্রী যাপনের অনুমতি নেই।

পুরো পিকনিক স্পট বা রেস্ট হাউজ ভাড়া নেওয়ার জন্য বন বিভাগের মহাখালি কার্যালয় থেকে অগ্রিম বুকিং দিতে হয়। এছাড়া ভাওয়াল গড় থেকেই সামান্য দূরে অবস্থিত রাজেন্দ্রপুর জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কার্যালয় থেকেও নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের বুকিং নেওয়া যায়। মোবাইল: 01781-733000, 01713-575055

এছাড়াও এছাড়া রাতে থাকার জন্য ভাওয়াল গড়ের কাছে আছে সারাহ, সোহাগ পল্লী, স্প্রিং ভ্যালী, ছুটি, নক্ষত্রবাড়ি এবং জল ও জঙ্গলের কাব্যের মতো বেশ কিছু বেসরকারি রিসোর্ট। রিসোর্টগুলোতে যেতে চাইলে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা ভাল।

ভ্রমণ টিপস সতর্কতা

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এর ভেতর নিজেদের সাথে যাওয়া ছোট শিশুদের নজরের ভেতর রাখবেন। বিশেষ করে ওয়াচ টাওয়ারে বা জঙ্গলে হাটার সময়। ভ্রমণের সময় কোন আবর্জনা ময়লা জঙ্গলে ফেলবেন না। উদ্যানে মাছ বা পাখি শিকার বা উচ্চ শব্দ করলে জরিমানা সহ শাস্তির মুখে পড়তে পারেন। এছাড়া উদ্যানের সিসিটিভি রেঞ্জের বাইরে যাওয়াটা নিরাপদ নয় একদমই।

ডে ট্যুর এর অন্যান্য স্থান

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর এর জন্য অনেকগুলো চমৎকার জায়গা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মৈনট ঘাট, মায়াদ্বীপ, সারিঘাট, বেলাই বিল, ছুটি রিসোর্ট, গোলাপ গ্রাম সহ অনেকগুলো স্থান রয়েছে। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে পড়ুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers

বেলাই বিল – গাজীপুর

বিল বা নৌকা ভ্রমণ যাদের পছন্দ, তাদের কাছে গাজীপুরের বেলাই বিল হতে পারে ডে ট্যুর এর জন্য চমৎকার একটি জায়গা। বেলাই বিল ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। চেলাই নদীর সাথে বেলাই বিল। চেলাই নদী সংলগ্ন বাড়িয়া, ব্রাহ্মণগাঁও, বক্তারপুর ও বামচিনি মৌজা গ্রাম ঘেরা একটি মনোমুগ্ধকর বিলের নাম বেলাই বিল। কথিত আছে ভাওয়ালের ভূস্বামী ঘটেশ্বর ঘোষ ৮০ টি খাল কেটে চেলাই নদীর পানি নিঃশেষ করে ফেলেন। তারপরই এটি প্রকাণ্ড বিলে পরিণত হয়। বর্ষায় জেলেরা বিলের চারপাশে মাছ ধরার জন্য ডাঙ্গি খনন করে। নদী ও বিলের অপূর্ব সংমিশ্রণ এই বিলটি গাজীপুরের কানাইয়া বাজার নামক এলাকায় অবস্থিত।

খরস্রোতা চেলাই নদীর কারণে বিলটিও খরস্রোতা রূপে বিরাজমান ছিল। বর্ষা মৌসুমে জেলেরা বিলের চারপাশে মাছ ধরার জন্য ডাঙ্গি খনন করে। আর শুষ্ক মৌসুমে বিলটি হয়ে ওঠে একফসলি জমি। তাতে চাষ হয় বোরো ধান।

কিভাবে যাবেন বেলাই বিল

রাজধানী ঢাকার যেকোন স্থান থেকে বাস বা যেকোন সুবিধাজনক পরিবহণে গাজীপুর বাসস্ট্যান্ড অথবা গাজীপুর শিববাড়ি নেমে সেখান থেকে রিকশা বা সিএনজি দিয়ে কানাইয়া বাজার আসতে হবে। চাইলে টেম্পুতেও কানাইয়া বাজার যেতে পারেন, ভাড়া নেবে ১০ টাকা করে।  কানাইয়া বাজার ঘাটে বেলাই বিল ভ্রমণের জন্য নৌকা ভাড়া পাবেন। কানাইয়া বাজারে নেমেই সামনে ব্রিজ আছে, ব্রিজ পার হয়েই নদীতে বাধা নৌকা ঠিক করে উঠে পড়ুন। দরদাম করে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন উন্মুক্ত বিলে। এখানে ইঞ্জিন চালিত আর ডিঙ্গি নৌকা দুটোই পাওয়া যায়। তাড়া থাকলে ইঞ্জিন নৌকা, আর হাতে সময় থাকলে হাতে বাওয়া ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে নিন। মাঝির সাথে কথা বলে নিজেই সেই নৌকা বেয়ে দেখতে পারেন, ভিন্ন একটা অভিজ্ঞতা হবে সন্দেহ নেই। চাইলে নৌকা সারাদিনের জন্য ভাড়া করতে পারবেন।

বেলাই বিল ভ্রমণে কি দেখবেন?

প্রায় ৮ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত এই বিলের অনেক স্থানেই প্রায় সারা বছর পানি থাকে। তবে বেলাই বিলের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে বর্ষা কালের বিকল্প নেই।  বিলে সারাবছর পানি না থাকলেও বর্ষায় দ্বিগুণ সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়। সারা বিল জুড়ে চলে শাপলা ফুলের রাজত্ব। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন বিলের মধ্যে অবস্থিত বামচিনি মৌজা নামক দ্বীপ গ্রামটি থেকে। এই গ্রামটির মজার একটি ব্যাপার  হলো গ্রামটির একটা মৌজায় কেবলমাত্র একটিই বাড়ি, বাংলাদেশের আর কোথাও এমন নজির নেই।

কোথায় খাবেন?

কানাইয়া বাজারে দুপুরে খাওয়ার মতো ভালো দোকান নেই। তবে চা বা হালকা স্ন্যাকস পাবেন এখানে। দুপুরে খাওয়ার জন্য গাজীপুর শিববাড়ি আসতে হবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য ভ্রমণে গেলে সাথে কিছু খাবার নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।

কোথায় থাকবেন?

কানাইয়া যাবার পথে নীলের পাড়ায় বেশ কিছু রিসোর্ট আছে। উল্লেখযোগ্য হল, আনন্দবাড়ি, সবুজ ছায়া, নির্জন নিবাস। চাইলে আগে থেকে ওখানে বুকিং দিয়ে একবেলা বা একদিনের জন্য সংরক্ষণ করতে পারেন।

সতর্কতা

বর্ষা কালে নৌকায় চড়তে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। এইক্ষেত্রে সাথে লাইফ জ্যাকেট থাকলে সবচেয়ে ভালো। যারা সাতার জানেন না, বয়স্ক বা শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে পুরোটা সময়। ভ্রমণের সময় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোন ময়লা-উচ্ছিষ্ট যেন আমরা ভ্রমণ স্পটগুলোতে ফেলে না আসি।

ডে ট্যুর এর অন্যান্য স্থান

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর এর জন্য অনেকগুলো চমৎকার জায়গা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মৈনট ঘাট, মায়াদ্বীপ, সারিঘাট, জিন্দা পার্ক, ছুটি রিসোর্ট, গোলাপ গ্রাম সহ অনেকগুলো স্থান রয়েছে। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে পড়ুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers এ। বেলাই বিল সম্পর্কে আপনার কোনো তথ্য শেয়ার করার থাকলে আমাদেরকে জানান।

Exit mobile version