Travelling in Pregnancy

গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য

গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ নিয়ে অনেক চিন্তায় থাকেন হবু মায়ের প্রিয়জনেরা। তাই সাধারণত গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা কোথাও ট্রাভেল করতে অনিচ্ছুক থাকেন। পুরো বছর অনাগত সন্তানের কথা ভেবে কোথাও ভ্রমণ করাকে গর্ভের সন্তানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। এটা একইসাথে সত্যি, ভ্রমণ আনন্দদায়ক হলেও একজন নারী গর্ভকালীন সময়ে ভ্রমণ করে শারীরিক ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এই সময়ে ভ্রমণ করতে চাইলে তাই বিশেষ সতর্কতা নেওয়া উচিত। তখন কিছু বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।গর্ভকালীন কোন জটিলতা না থাকলে গর্ভাবস্থায় ভ্রমনে তেমন কোন বাধা নিষেধ নেই। তবে গর্ভাকালীন সময়ে দূরে কোথাও ভ্রমণ করতে চাইলে তার আদর্শ সময় হচ্ছে দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার। কারণ এ সময়টায় গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকটা কম থাকে।

লম্বা সময় জার্নি

প্রথম তিন মাসে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ সময় দীর্ঘ ভ্রমণ না করাই ভালো। এক শহর থেকে অন্য শহর, বা বিমানে করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ভ্রমণে কোথাও যাবার সিদ্ধান্ত নিলে চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া উচিত। একজন গর্ভবতী নারী ডাক্তারের কথা ও পরামর্শ মতো চললে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারবেন। ডাক্তার পরামর্শ না দিলে অনাগত সন্তানকে ঝুঁকির মুখে ফেলা হয়, এমন কোনো কাজ করা একদমই উচিত হবে না।

লম্বা জার্নি করলে ব্লাড ক্লট বা ডিপ ভেন থ্রম্বোসিস (DVT) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই লং জার্নিতে পর্যাপ্ত পানি খান। শরীর কোনও কারণে ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেলে আরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেই সাথে হালকা খাবার খেতে হবে। আর যারা অ্যালকোহলিক, তাদের ক্ষেত্রে সপ্তাহে বড়জোর এক গ্লাস ওয়াইনের অনুমতি দেওয়া হয়। ঘন ঘন চা-কফি বা কোমল পানীয় খেয়ে গলা ভেজানো থেকেও বিরত থাকুন। মনে রাখতে হবে, কোনো ধরণের পানীয় কখনো পানির বিকল্প হতে পারে না।

টয়লেট

প্রেগন্যান্সির এই সময়ে যেকোনো ধরণের জার্নির আগে খেয়াল রাখতে হবে আপনি যেন আরামদায়ক অবস্থায় ভ্রমণ করতে পারেন। মেয়েরা সাধারণত পাবলিক টয়লেটে যাওয়া এড়ানোর জন্য লম্বা জার্নির আগে থেকেই পানি খাওয়া একেবারে কমিয়ে ফেলেন। গর্ভকালীন সময়ে তেমনটা ভুলেও করা না। পর্যাপ্ত পানি খান, আর প্রয়োজনমতো ওয়াশরুমে গিয়ে ব্লাডার খালি রাখুন। এটা না হলে কিন্তু গর্ভকালীন সময়ে মাথাব্যথা বা বমির মতো সমস্যা দেখা দিতে। কিন্তু এটাও ঠিক যে সাধারণ পাবলিক টয়লেট থেকে শুরু করে এমনকী বিলাসবহুল ট্রেন বা বিমানের টয়লেটের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন উঠে আমাদের দেশে। এখন অবশ্য একটা সুবিধে আছে। পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করার জন্য ডিসপোজ়েবল টয়লেট সিট কভার পাওয়া যায়। তেমন কিছু একটা নিজের সাথে রাখতে পারেন। একান্তই কিছু না পেলে স্যানিটাইজ়ার ক্যারি করুন। টিস্যু আর স্যানিটাইজার দিয়ে সিট কভার স্যানিটাইজ করে তবেই বসুন। শুধুমাত্র ট্রেন, বিমান বা পাবলিক টয়লেট নয়, এমনকি ফাইভ স্টার হোটেলের টয়লেট সিট থেকেও ইনফেকশন ছড়াতে পারে! তাই নিজের ঘরের বাইরে কোথাও ওয়াশরুম ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকুন।

যাঁদের জন্য ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ

যাদের আগেও এক বা একাধিকবার গর্ভপাতের হিস্ট্রি রয়েছে তারা ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন। তাদেরকে ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাঁদের অপরিণত অবস্থায় সন্তান জন্মের ইতিহাস রয়েছে তারাও সাবধানে থাকতে হবে।  এখানকার সময়ে নানান রকম টেস্টের মাধ্যমে বোঝা যায় গর্ভের সন্তান ঠিক কী অবস্থায় আছে। গর্ভে যদি একের অধিক সন্তান থাকে তাহলে গর্ভবতী নারীর জন্য ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এই সকল পরিস্থিতিতে কোনো প্রয়োজনে যদি ভ্রমণ করতে হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে গর্ভাবস্থার মাঝখানের তিন মাস কোথাও ভ্রমণের জন্য নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়।

কোন পথে ভ্রমণ করবেন

স্থলপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্রেনে তুলনামূলক কম ঝাঁকি লাগে। তাই রেলপথকে সব সময়ই নিরাপদ বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া লং রুটেও এখন বেশ ভালোমানের বাস সার্ভিস আছে। রাস্তা ভালো হলে সড়কপথেও যাওয়া যায়। আর আকাশপথে গর্ভাবস্থার ৩০ থেকে ৩২ সপ্তাহ পর্যন্ত ভ্রমণ মোটামুটি নিরাপদ। নৌপথে পানির দুলুনির জন্য অনেকের ক্ষেত্রে বমিভাব বা বমি হতে পারে।

আকাশপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে করণীয়

আকাশপথে ভ্রমণের জন্য ভ্রমণে সমস্যা নেই-চিকিৎসকের কাছ থেকে এমন একটি নো অবজেকশন সনদ নিতে হবে। ভ্রমণের সময় আরামদায়ক পোশাক পরবেন। দীর্ঘ সময় ভ্রমণে একটানা বসে না থেকে মাঝেমাঝে হাত-পা নাড়ালে ও হাঁটলে শরীরের জন্য ভালো। ভ্রমণে আরামদায়ক স্যান্ডেল বা জুতা পরার অভ্যাস করুন। প্রয়োজন মনে করলে কম্প্রেশন স্টকিং ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি শরীরে রক্ত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় রক্ত জমাট বাঁধার একটা ঝুঁকি থাকে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ প্রেগন্যান্সি, কোনো প্রকার শারীরিক জটিলতা, অথবা ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা গর্ভে একের অধিক সন্তান থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ও ইনজেকশন ব্যবহার করতে হবে।

আরো ট্রাভেল টিপস পড়ুন

জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers এ।