ইন্ডিয়ান ভিসা ভারতীয়

ভারতীয় ভিসা

একই সময়ে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা। উত্তর ভারতে যখন বরফ পড়ে; দক্ষিণে তখন গরম। একপাশে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। অন্যপাশে পাহাড় আর মরুভূমি। এই হচ্ছে বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারতের দৃশ্য। শিক্ষা চিকিৎসা, বানিজ্য কিংবা ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের ভারতে যাওয়া হয়ে থাকে। কিছু নিয়মাবলীর মেনে খুব সহজেই ভারতে যাওয়া যায়৷ এর জন্য সর্ব প্রথম প্রয়োজন ভারতীয় ভিসা।

বাংলাদেশীদের জন্য ভারতীয় স্টেট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে ১৫টি ভারতীয় ভিসা আবেদনপত্র কেন্দ্র বা আইভ্যাক আছে। সেগুলো হচ্ছে ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্ক, যশোর, খুলনা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা, বগুড়া, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এ অবস্থিত। ভারত ভ্রমণ এর বিস্তারিত গাইডলাইন নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করবো।

ভারতীয় ভিসা আবেদন এর নিয়মাবলী

সব ধরণের ভারতীয় ভিসা ওয়াক-ইন পদ্ধতিতে কোন অনলাইন সাক্ষাতের তারিখ ছাড়া গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী যারা চট্টগ্রাম বিভাগ, রাজশাহী বিভাগ,  সিলেট বিভাগ, খুলনা বিভাগ ব্যতীত অন্যান্য বিভাগ বসবাস করছে তারা ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্ক, ময়মনসিংহ, যশোর এবং বরিশালে ভিসা আবেদনপত্র কেন্দ্র থেকে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারে। যেসব পাসপোর্টধারী চট্টগ্রাম বিভাগ এর বাসিন্দা কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া তারা চট্টগ্রামের ভিসা আবেদনপত্র কেন্দ্র থেকে  ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বাংলাদেশী নাগরিক, যারা রাজশাহী বিভাগে বাস করছে, তারা রাজশাহী বা  রংপুরের ভিসা আবেদনপত্র কেন্দ্র থেকে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

যারা সিলেট বিভাগে আওতাভুক্ত বসবাসকারী তারা সিলেট মিশন বরাবর আবেদন করবে। যারা খুলনা জেলা আওতাভুক্ত বসবাসকারী তারা খুলনা মিশন বরাবর আবেদন করবে। ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদনকারী বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদেরও কোন ভিসা ফি প্রয়োজন নেই।

বাংলাদেশের যেকোন আইভ্যাক (Indian Visa Application Center)  এ ভিসার জন্য আবেদন পত্র জমা দেয়ার আগেই আবেদনকারী সকল ব্যক্তিবর্গেরও ভিসা প্রসেসিং ফি  পরিশোধ করতে হবে। আপনি বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও যদি আপনার কাছে অন্যদেশের পাসপোর্ট থাকে তবে বৈদেশিক পাসপোর্ট দ্বারা ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

ভিসা আবেদনপত্র প্রত্যাখ্যান

আপনার ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে যদি আপনি জীবনের জন্য হুমকীসরূপ কোন রোগে ভোগেন, মানসিক রোগে ভোগেন। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্য ভারত ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়া মাদকাসক্ত বা মাদক পাচার করেন, অপরাধী বা কোন দেশে কোন অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে থাকেন, কোন দেশ হতে দ্বীপান্তুরিত বা বহিষ্কৃত হয়ে থাকেন, অপর্যাপ্ত/ অসম্পূর্ণ/ মিথ্যা কাগজপত্র দিয়ে থাকেন, অবৈধ ভ্রমণ নথির অধিকারী হয়ে থাকেন, প্রাসঙ্গিক কোন তথ্য গোপন করে থাকেন অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে এমন কোন ভিত্তিতে, যা আবেদনকারীকে ভিসার জন্য অযোগ্য হিসাবে পেশ করবে। কোনো কারণে ভিসা আবেদন রিজেক্ট হলে কী কারণে রিজেক্ট হলো তা আবেদনকারীর কাছে মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে জানানো হবেনা।

ভারতীয় ভিসা আবেদন পদ্ধতি

ভারতীয় টুরিস্ট ভিসা আবেদন এর নিয়মাবলী ও আবেদন এর জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে এগুলো হলো-

⦿ পাসপোর্ট এর ফটোকপি। (প্রথম দুই পেজ)

⦿ ভোটার আইডি কার্ড/ জন্মনিবন্ধন/ স্মার্ট কার্ড এর ফটোকপি (যে ডকুমেন্ট দিয়ে পাসপোর্ট করেছেন।)

⦿ বিদ্যুৎ বিল অথবা ওয়াসার বিল অথবা টেলিফোন বিল এর ফটোকপি।

⦿ যেখানে কর্মরত আছেন সেই কোম্পানির নাম এবং ডেজিগনেশন। শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর আইডি কার্ড। যিনি অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি তার ক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত কাগজপত্র থাকতে হবে। ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে তার ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। গৃহিনী হলে বাড়তি কিছু লাগবেনা।

⦿ ইন্ডিয়ান ভিসা সাইজ ছবি। ( ২ ইঞ্চি বাই ২ ইঞ্চি সাইজের রঙিন ছবি। ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা হতে হবে এবং ছবি পূর্বের কোন ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এমন হওয়া যাবে না। )

⦿ যেইদিন ভিসার আবেদন করবেন আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ সেইদিন থেকে কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে।  অন্তত দু’টি সাদা পাতা থাকতে হবে পাসপোর্টে।

⦿ পুরাতন পাসপোর্ট থাকলে নতুন পাসপোর্টের সাথে পুরোনো পাসপোর্টও জমা দিতে হবে।

⦿ আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ স্বরূপ পাসপোর্টে কমপক্ষে ১৫০ মার্কিন ডলার সমমানের বৈদেশিক মুদ্রার এসডোর্সমেন্ট করতে হবে। ক্রেডিট কার্ড থাকলে কার্ডে এনডোর্স করলেই হবে।

⦿ সর্বশেষ ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর অনুলিপি দিতে হবে। একাউন্টে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা ব্যালেন্স থাকলে ভালো হয়।

⦿ আবেদনকারীকে তাদের ছবি স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে অনলাইন এপ্লিকেশন ফরম এ দেয়া নির্ধারিত স্থানে। আবেদনকারীকে অবশ্যই নিশ্চিত থাকতে হবে যেন বর্তমান পাসপোর্টের জন্মতারিখ এবং জন্মস্থান এর সাথে পুরোনো পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং/ অথবা জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্যের মিল থাকে। আবেদনপত্র পূরণ করার পর অবশ্যই ৮ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে |

⦿ ভারতে শিক্ষার্থী ভিসার উপর আগত ১৮ বছরের নীচের সন্তানের বাবা-মা / আইনী অভিভাবকরা এন্ট্রি ভিসা বিভাগের অধীনে আবেদন করতে পারেন, ১৮ বছরেরও বেশি বয়সের সন্তানের বাবা-মা ভারত ভ্রমণের জন্য পর্যটন ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

ভারতীয় বিজনেস ভিসা

ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে ভারত গমনে ইচ্ছুক ব্যাক্তিগণ চাইলে ভারতের বিজনেস ভিসা নিতে পারবেন। বিজনেস ভিসার জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত  ডকুমেন্ট প্রয়োজন সেগুলো হলো-

⦿ বাংলাদেশে আবেদনকারীর প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ের নাম, ঠিকানা ও যোগাযোগের নম্বর। ভারত থেকে যে প্রতিষ্ঠান/ কোম্পানী স্পন্সর করছে, তার চিঠি।

⦿ বাংলাদেশের স্বীকৃত কোন চেম্বার অব কমার্স থেকে সুপারিশ চিঠি, কোন ভারতীয় কোম্পানীর সাথে হয় শেষ ব্যবসায়িক লেনদেন এর ব্যাপারে, নতুবা ব্যবসায়িক লেনদেনের আবেদনপত্র।

⦿ টিন সহ ট্রেড লাইসেন্স এর একটি কপি, সফরের উদ্দেশ্য এবং ব্যবসায়িক চুক্তির প্রকৃতি বর্ণনা করে সহায়ক পত্র, বিগত ছয় মাসের আবেদনকারীর কোম্পানীর ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর কপি।

⦿ কোন কোম্পানী বা প্রাইভেট ফার্মে কর্মরত থাকলে, কর্মসংস্থান চুক্তিপত্রের কপি যেটাতে আবেদনকারীর চুক্তিবদ্ধ হওয়ার তারিখ, অধিষ্ঠিত পদ এবং মাসিক বেতন উল্লেখ থাকবে |

⦿ ভারতে কোন বাণিজ্য / ব্যবসায় প্রদর্শনী/মেলায় অংশগ্রহণ করতে বা ঘুরতে গেলে, অংশগ্রহণের ধরণের বর্ণনা এবং ফেডারেশনের  সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অথবা প্রদর্শনী কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ পত্র। স্বল্পমেয়াদী একক সফর ভিসা।

ভারতীয় মেডিকেল ভিসা

⦿ টুরিস্ট ভিসার সাধারণ কাগজপত্র (উপরে উল্লেখিত আছে)।

⦿ নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে ভারত থেকে মেডিকেল আমন্ত্রণ পত্র, সব ঔষধ মূল নথি,পেশা প্রমাণ। স্বীকৃত হাসপাতাল/ ডাক্তার এর কাছ থেকে রোগীর চিকিৎসাধীন অবস্থার বিশদ নির্দেশ সহকারে চিকিৎসার মূল সনদপত্র।

⦿ প্রথম ভ্রমণের ক্ষেত্রে, বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা উপভোগের জন্য উপস্থিত ডাক্তারের কাছ থেকে সুপারিশ।

⦿ হাসপাতালে ভর্তি বা দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জন্য, আর্থিক সম্পদের প্রমাণ, যেমনটি প্রয়োজন হতে পারে: ব্যাংক স্টেটমেন্ট এর কপি (বিগত ৬ মাসের) ও ব্যাংক থেকে সচ্ছলতার সনদ।

পাসপোর্টে ডলার এন্ডোর্স

সরকারি বেসরকারি যেকোন ব্যাংক থেকেই আপনি ডলার এনডোর্স্মেন্ট করতে পারেন। তবে সাধারণত সরকারি সোনালি ব্যাংক থেকে করাটাই সুবিধাজনক ও বেশিরভাগ মানুষ করে থাকে। কারণ সোনালী ব্যাংকে একাউন্ট থাকা লাগে না।

আপনি পাসপোর্ট নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে বললেই হবে যে আপনি ডলার কিনবেন। তাহলে ওরা আপনাকে ওইদিনের রেট অনুযায়ী টাকা হিসেব করে আর সার্ভিস ফি নিয়ে ডলার দিবে ও পাসপোর্টের শেষের দিকে পাতায় সিল মেরে দিবে। সাথে একটা কাগজ দিবে এটা হল ‘এনডোর্স্মেন্ট সার্টিফিকেট’।

বর্ডার ও ইমিগ্রেশন

যারা স্থলপথে ভারত যান, বেশিরভাগ মানুষই সাধারণত বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করেন। সবগুলো স্থলবন্দরেই মূল নিয়মাবলী একই। আগে থেকে ট্রাভেল ট্যাক্স জমা না দিয়ে থাকলে প্রথমে বর্ডারে গিয়ে সোনালী ব্যাংকে ট্রাভেল ট্যাক্স জমা দিতে হবে। এরপর প্রথমে কাস্টমস ও পরে ইমিগ্রেশন এর লাইনে দাঁড়িয়ে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে হয়। সব কাজ শেষ করে বর্ডার ক্রস করতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগতে পারে। ভারতে যাওয়া ও ফেরার সময় ভারতীয় কাস্টমস প্রায়ই বাংলাদেশী যাত্রীদের হয়রানি করে। কোনো কারণ ছাড়াই ১/২শ রুপি/টাকা ঘুষ দাবি করে। আপনার কাছে চাইলে এর প্রতিবাদ করুন।

বৈদেশিক মুদ্রা

অনেকেরই প্রশ্ন থাকে একজন যাত্রী সর্বোচ্চ কত ডলার পর্যন্ত সাথে করে নিয়ে যেতে পারবে? ভারত ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে আপনি বছরে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ডলার নিতে পারবেন। ১২ বছরের কম বয়সী যাত্রী একজন প্রাপ্তবয়স্ক যাত্রীর অর্ধেক পরিমান ডলার সাথে নিতে পারবে।

বাংলাদেশে ফেরার সময় আপনি যে কোন অংকের বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে আনতে পারবেন। এনডোর্সমেন্ট লাগবেনা। তবে ৫,০০০ মার্কিন ডলার বা এর বেশি হলে নির্ধারিত FMJ ফরমে শুল্ক কর্তৃপক্ষের নিকট ঘোষণা দিন আপনার কাছে এর বেশি পরিমান টাকা আছে। এর জন্য কোনো শুল্ক প্রদান করতে হবেনা।

চিকিৎসার কাজে ডাক্তারি কাগজপত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে ১০,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত নেয়া যাবে। তার অতিরিক্ত দরকার হলে যেকোন অথরাইজড ব্যাংককে প্রয়োজনীয় কাজগপত্র দেখালেই চলবে! প্রয়োজন সাপেক্ষে অতিরিক্ত মুদ্রার অনুমোদন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাঁরাই নিয়ে দিবেন। শিক্ষাজনিত কাজে নেয়া যাবে ভ্রমণ কোটার সমান ডলার। তবে  টিউশন ফি, হোস্টেল ফি এসব ব্যাংকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ মুদ্রা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগেভাগেই জমা দেয়া যাবে কোটার বাইরে। ফরেইনার, এনআরবি’দের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি মুদ্রা সীমার শর্ত ছাড়া অন্য কোটা শর্ত খাটবেনা। যেই পরিমাণ বোইদেশিক মুদ্রা নিয়ে দেশে এসেছেন অনধিক সেই পরিমাণ মুদ্রা পাসপোর্টে এনডোর্স ছাড়াই নিয়ে যেতে পারবেন।

আরো পড়ুন

ট্রাভেল সংক্রান্ত তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers এ।