হাসন রাজা জাদুঘর

সুনামগঞ্জ ও সিলেটে হাসন রাজার জমিদারি ছিলো। তার পরিচিতি একজন মরমি কবি হিসেবে। সমাদৃত হয়েছেন দেশ বিদেশে। রবীন্দ্রনাথ থাকুর পর্যন্ত তাঁর গানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। সেই মরমি কবি হাসন রাজার বাড়ি এখন জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। হাসন রাজার জাদুঘর সুনামগঞ্জ শহরের সুরমা নদীর পাড়ে অবস্থিত। সুনামগঞ্জের লক্ষণশ্রীর বিখ্যাত জমিদার দেওয়ান পরিবারে ১৮৫৪ সালে হাসন রাজার জন্ম।

জাদুঘরে ঢুকতে প্রথমেই চোখে পড়বে লালন ফকিরের ছবি। কলকাতার একটি ফটো স্টুডিওতে তোলা হাসন রাজার একমাত্র আলোকচিত্রটি এখানে সংরক্ষিত আছে। তবে অনেক শিল্পীর হাতে আঁকা আরো কিছু হাসন রাজার ছবি এখানে দেখতে পাবেন। তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এখানে প্রথম মেলা হয় ১৯৬২ সালে। এরপর থেকে এই বাড়ি ও সংগ্রহশালা দেখতে দেশের নানান প্রান্ত থেকে হাছন রাজার ভক্তরা এখানে ভিড় জমান। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিব হাছন রাজা একাডেমিকে নগদ ২৫ হাজার টাকা অনুদান দেন। যা দিয়ে হাসন রাজা মিউজিয়াম গড়ে উঠে।

হাসন রাজা মিউজিয়াম

হাসন রাজা মিউজিয়ামে তার ব্যবহৃত বহু মূল্যবান জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রঙিন আলখাল্লা। সাধারণত তিনি ধুতি পাঞ্জাবি পরতেন। তবে নওয়াবদের সাথে সাক্ষাতের সময় এই আলখাল্লাটি পরিধান করতেন। পানি শোধনের পাত্র অর্থাৎ পানির ফিল্টার। উইলিয়াম লিটল নামের এক ইংরেজ নায়েব তাকে সেই আমলে অস্ট্রিয়া থেকে এনে এই উপহারটি দিয়েছিলেন। তার একটি বাহারি তলোয়ার ছিলো। এটি তাদের পারিবারিক। বংশানুক্রমে এটি তার হাতে এসে পৌছেছিল। এগুলো ছাড়াও হাসনের ব্যবহৃত চেয়ার টেবিল, খড়ম, মোমদানি সহ ইংরেজ আমলের বহু জিনিস মিউজিয়ামে আছে। এমনকি হাসন রাজার নিজের হাতে লেখা গানের কপিও এখানে সংরক্ষিত আছে।

কিভাবে যাবেন

হাসন রাজার বাড়ি যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সুনামগঞ্জ শহরে আসতে হবে। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন মামুন পরিবহন, এনা পরিবহন ও শ্যামলী পরিবহনের বাস সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ টাকা। যেতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা। সুনামগঞ্জ নেমে রিকশা বা অটোরিকশা নিয়ে সুরমা পাড়ের হাসন রাজা জাদুঘর এ যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

সুনামগঞ্জ থাকার মোটামোটি মানের কিছু হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হলো-  নুরানী হোটেল, সুরমা ভ্যালি রেসিডেন্সিয়াল রিসোর্ট, হোটেল মিজান, হোটেল সারপিনিয়া, হোটেল প্যালেস, হোটেল গুলবাগ ও সুনামগঞ্জ রেস্ট হাউজ উল্লেখযোগ্য।

কোথায় খাবেন

সুনামগঞ্জে খাওয়ার জন্য বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সিলেটের প্রখ্যাত পানসি হোটেলের একটি শাখা রয়েছে এখানে। এছাড়া হোটেল ফাইভ স্টার, জনতা, রাজ হোটেল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্ষায় গেলে এসব খাবারের দোকানে হাওরের মাছ খেতে ভুলবেন না। তখন চাইলে নৌকায় করে হাওরে একটা চক্কর দিয়ে আসতে পারেন।

সুনামগঞ্জ জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পুরো সুনামগঞ্জ জেলা গত কয়েক বছর ধরে পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। সুনামগঞ্জে রয়েছে অনেকগুলো হাওর। একপাশে মেঘালয়ের পাহাড়, লেক, ঝর্ণা ইত্যাদি। পড়ুন টাঙ্গুয়ার হাওর পূর্ণাঙ্গ ট্যুর প্ল্যান, শুধুমাত্র নীলাদ্রি লেক অথবা শিমুল বাগান হতে পারে আপনার একদিনের ভ্রমণ গন্তব্য।

আরো পড়ুন

টাঙ্গুয়ার হাওর নৌকার তথ্য

সাজেক ভ্যালি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন

বিছানাকান্দি রাতারগুল পান্থুমাই

ভ্রমণে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। শুধু ঘুরতে গিয়ে নয়, এমনকি আপনার শহরেও আবর্জনা ফেলবেন না যত্রতত্র। এটা আপনার ব্যাক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।

শিমুল বাগান

শিমুল বাগান (Shimul Bagan) সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর তীরে মানিগাঁও গ্রামে অবস্থিত। ২০০৩ সালে স্থানীয় জয়নাল আবেদিন নামে এক শৌখিন ব্যবসায়ী এই বাগান গড়ে তোলেন। পুরো বাগানের আয়তন একশ বিঘার বেশি। এখানে শিমুল গাছ আছে ৩ হাজার এর মতো। ফাল্গুনে যখন রক্তরাঙা শিমুল ফুল ফোটে তখন দেখে মনে হয় বাগানে আগুন ধরে গেছে। পাশের মেঘালয়ের পাহাড় – বারিক্কা টিলা আর যাদুকাটা নদীর পাড়ের এই বাগানে একটা বিকেল অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারবেন। সেখান থেকে চাইলে যেতে পারবেন কাছাকাছি নীলাদ্রি লেক ও টেকেরঘাটে।

কিভাবে যাবেন

শিমুল বাগান আসতে হলে আপনাকে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সুনামগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন মামুন পরিবহন, এনা পরিবহন ও শ্যামলী পরিবহনের বাস সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ টাকা। যেতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা। সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা ব্রিজের উপর থেকে বারিক্কা টিলা যাওয়ার সিএনজি ও মোটর সাইকেল ভাড়ায় পাবেন। এক মোটর সাইকেলে দুইজন বসা যায়। মোটর সাইকেল ভাড়া নিবে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। যেতে সময় লাগবে দেড় ঘন্টার মতো। বারিক্কা টিলায় নেমে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই শিমুল বাগান দেখিয়ে দিবে।
 
সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ: যারা সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ যেতে চান, তারা সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জ যেতে পারবেন। কুমারগাঁও থেকে লোকাল ও সিটিং দুই ধরণের বাসই পাওয়া যায়। সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ এর সিটিং বাসে ভাড়া ১০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ২ ঘন্টার মতো।

কখন যাবেন শিমুল বাগান

শিমুল বাগান যাওয়ার সময় মূলত দুইটি। রক্তরাঙা শিমুল ফুল দেখতে চাইলে আপনাকে ফাল্গুন মাসে যেতে হবে। শিমুল ফুল গাছে থাকে মাত্র ১৫/২০ দিন। এর পর ঝরে যায়। তাই ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ থেকে ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখের মধ্যে যেতে হবে। অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে শিমুল বাগানে না যেতে পেরে বাগানের ফুল দেখতে পায়না।
 
আর বর্ষায় গেলে ঘন সবুজ শিমুল বাগান দেখে আসতে পারবেন। তখন টাঙ্গুয়ার হাওর পানিতে ভরপুর থাকে। তাই একসাথে নৌকায় টাঙ্গুয়া হাওর ভ্রমণ করে আসতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

শিমুল বাগান এর আশেপাশে থাকার জন্য ভালো হোটেল নেই। বড়ছড়া বাজারে কয়েকটি গেস্ট হাউজ ও তাহিরপুর বাজারে দুইটি হোটেল রয়েছে। শুকনো মৌসুমে গেলে রাতে সুনামগঞ্জ থাকাই ভালো। আর বর্ষাকালে গেলে নৌকায় থাকা যাবে।
 
শিমুল বাগানের কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে পড়তে পারেন-
 
 

কোথায় খাবেন

কাছাকাছি বারিক্কা টিলার পাশে ছোট বাজার আছে। ওখানে খেতে পারবেন। এছাড়া টেকেরঘাট বাজার, বড়ছড়া বাজার বা তাহিরপুর বাজারে আপনি মোটামোটি মানের খাবারের দোকান পেয়ে যাবেন। তবে ভালো রেস্টুরেন্টে এর জন্য সুনামগঞ্জ শহরে আসতে হবে। আর বর্ষায় নৌকা ভাড়া নিলে নৌকায় রান্নার ব্যবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে বোটে উঠার আগে বাজার করে উঠতে হবে।
আরো পড়ুন

নীলাদ্রি লেক

নীলাদ্রি লেক সুনামগঞ্জ এর একটি অন্যতম পর্যটন স্থান। এটি মূলত লাইমস্টোন বা চুনাপাথরের খনির পরিত্যাক্ত লেক। এর অবস্থান সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী টেকেরঘাট গ্রামে। নীলাদ্রী লেক এর প্রকৃত নাম শহীদ সিরাজ লেক। তবে পর্যটকদের কাছে এটি নীলাদ্রি লেক নামে বেশি পরিচিত। আর স্থানীয়দের কাছে এর নাম টেকেরঘাট পাথর কোয়ারি। ঘন নীল জলের এই লেকের একপাশে মেঘালয়ের পাহাড়, তার চারপাশে ছড়ানো ছিটানো পাথর। অনেকে একে বাংলার কাশ্মীর নামে অভিহিত করেন। মোহনীয় এই লেকের পাড়ে একটা দিন কাটিয়ে দেওয়াই যায়।

কিভাবে যাবেন

নীলাদ্রি লেক মোটামোটি ৩ ভাবে যাওয়া যায়। সুনামগঞ্জ লাউড়ের গড় হয়ে, সুনামগঞ্জ তাহিরপুর হয়ে এবং নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ হয়ে। তবে ঢাকা থেকে গেলে সুনামগঞ্জ হয়ে যাওয়াটাই সুবিধাজনক।
 
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ: ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন মামুন পরিবহন, এনা পরিবহন ও শ্যামলী পরিবহনের বাস সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ টাকা। যেতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা। সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা ব্রিজের উপর থেকে নীলাদ্রী লেক যাওয়ার মোটর সাইকেল ভাড়ায় পাবেন। এক মোটর সাইকেলে দুইজন বসা যায়। মোটর সাইকেল ভাড়া নিবে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। ফেরার সময় ওখান থেকে মোটর সাইকেল পেয়ে যাবেন। আর সারাদিনের জন্য বাইক রিজার্ভ নিলে সিজন ভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা।

বর্ষাকালে নীলাদ্রি লেক ভ্রমণে গেলে সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর হয়ে যেতে পারবেন। তখন তাহিরপুর থেকে নৌকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর এর উপর দিয়ে চলে যাবেন টেকেরঘাট। ওখান থেকে হেঁটে ৩/৪ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন নীলাদ্রি লেক।

মোহনগঞ্জ থেকে নীলাদ্রি লেক: আপনি চাইলে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ হয়েও নীলাদ্রি লেক যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে রাত ১১টার হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রথমে মোহনগঞ্জ। মোহনগঞ্জ নেমে অটোরিকশায় মধ্যনগর যেতে হবে। সময় লাগবে ১ ঘন্টা। মধ্যনগর থেকে টেকেরঘাট যাওয়ার নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোট পাবেন। আর শুকনো মৌসুমে মধ্যনগর থেকে বাইক রিজার্ভ নিয়ে নীলাদ্রী লেক যাওয়া যায়। তবে এই রুটে সময় ও খরচ কিছুটা বেশি হবে। তাই সুনামগঞ্জ হয়ে নীলাদ্রী লেক যাওয়ার প্ল্যান করা ভালো। তবে যাদের বাড়ি নেত্রকোনার আশেপাশে তারা এই পথ দিয়ে নীলাদ্রী লেক যেতে পারেন।

ভ্রমণ পরিকল্পনা

নীলাদ্রি লেক এর কাছাকাছি যাদুকাটা নদী, বারিক্কা টিলা, শিমুল বাগান, লাকমাছড়া ও টাঙ্গুয়ার হাওর আছে। আপনি দুইদিন সময় বের করতে পারলে এগুলো সব স্পট রিলাক্সে ঘুরতে পারবেন। তাছাড়া বাইক নিয়ে আপনি একদিনেও ঘুরে আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে স্ক্যাজিউল অনেক টাইট হয়ে যায় বলে ভ্রমণে পূর্ণতা আসেনা। পড়ুন এর ১ রাত ২ দিন এর পূর্ণাঙ্গ টাঙ্গুয়ার হাওর ট্যুর প্ল্যান

কখন যাবেন নীলাদ্রি লেক

নীলাদ্রি লেক বা হাওর এলাকার প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা যায় বর্ষায়। তখন রোদ মেঘ বৃষ্টির লুকোচুরিতে প্রকৃতি মোহনীয় রূপ ধারণ করে। তাই বলা যায় বর্ষাকালই নীলাদ্রি লেক ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে পাখি প্রেমীরা শীতকালেও এই এলাকা ভ্রমণ করেন। শীতে এখানে প্রচুর পাখি আসে।

কোথায় থাকবেন

নীলাদ্রি লেক এর আশেপাশে থাকার জন্য ভালো হোটেল নেই। বড়ছড়া বাজারে কয়েকটি গেস্ট হাউজ ও তাহিরপুর বাজারে দুইটি হোটেল রয়েছে। আর বর্ষাকালে গেলে নৌকায় থাকা যাবে। টাঙ্গুয়ার হাওর এর বোট সম্পর্কে এখানে পড়ুন।

কোথায় খাবেন

টেকেরঘাট বাজার, বড়ছড়া বাজার বা তাহিরপুর বাজারে আপনি মোটামোটি মানের খাবারের দোকান পেয়ে যাবেন। ভালো রেস্টুরেন্টে এর জন্য সুনামগঞ্জ শহরে আসতে হবে। আর বর্ষায় নৌকা ভাড়া নিলে নৌকায় রান্নার ব্যবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে বোটে উঠার আগে বাজার করে উঠতে হবে।

নীলাদ্রি লেক ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

* ভ্রমণের সময় টিম সাইজ যত বড় হবে খরচ তত কম হবে। দলে সদস্য সংখ্যা একেবারে কম হলে কোনো ট্যুর গ্রুপ এর সাথে ভ্রমণ করতে পারেন। এতে ভ্রমণ খরচ কমে আসবে। নিরাপত্তাও বাড়বে।
 
* যাদুকাটা নদীতে অল্প পানিতে কিছুদূর হাঁটার পর হঠাৎ খাড়া গভীর! নদীর তলদেশে তীব্র স্রোত আছে। যা উপর থেকে দেখে বোঝা যায়না। তাই যাদুকাটা নদীতে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নামবেন না।
 
*বর্ষায় টাংগুয়া হাওর ভ্রমণে বজ্রবৃষ্টি বা ভারী বৃষ্টি হলে নৌকার ছাদ থেকে নেমে ভিতরে অবস্থান নিন।
 
*টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে লাইফ জ্যাকেট সাথে নিন। তাহিরপুরে ৫০থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায় লাইফ জ্যাকেট পাবেন। এছাড়া প্রিমিয়াম বোট গুলোর নিজস্ব লাইফজ্যাকেট থাকে। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া অল্প পানিতেও নামবেন না।
 
* হাওরে কোনো ভাবেই মাইক এমনকি স্পীকারও ব্যাবহার করে গান বাজাবেন না। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। স্থানীয়রাও বিরক্ত হয়।
 
*ভ্রমণের সময় ছাতা নিন সাথে। রোদ বৃষ্টি যেকোনো সময় কাজে দিবে। মাঝি ও স্থানীয়দের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করুন।
 
*কোনো ধরণের অপচনশীল দ্রব্য হাওরে ফেলবেন না। পরিবেশ সংরক্ষণে মনযোগ দিন। শুধু টাঙ্গুয়ার হাওড় এ গিয়ে নয়, আপনার দৈনন্দিন জীবনেও যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা আপনার ব্যাক্তিত্বের পরিচায়ক।
 
অনেকে ঝামেলা এড়াতে ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর টাঙ্গুয়া হাওর ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন। আপনার স্বপ্নগুলো স্মৃতি হোক।

আরো পড়ুন

টাঙ্গুয়ার হাওরের নৌকা – চন্দ্রাবতী

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী ছুটে আসেন টাঙ্গুয়ার হাওরে। উদ্দেশ্য থাকে টাঙ্গুয়ার হাওর নৌকা ভ্রমণ। বর্ষায় মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢলে হাওর কানায় কানায় ভরে উঠে। এখানকার সীমান্তঘেঁষা গ্রাম টেকেরঘাট, এটা হাওরের শেষ প্রান্ত। এখান থেকে মেঘালয় পাহাড়ের শুরু। টেকেরঘাটেই আছে চুনাপাথরের লেক নীলাদ্রী (শহীদ সিরাজ লেক), আর লাকমাছড়া। এছাড়া জাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান কিংবা বারিক্কা টিলা, টাঙ্গুয়ার হাওরের যে প্রান্তেই যান না কেন এর রূপ বৈচিত্রে আপনি মুগ্ধ হবেন।

বর্ষাকালে টাঙ্গুয়া হাওরে চলাচলের একমাত্র বাহন হলো নৌকা। পর্যটকরা হাওরে বেড়ানোর জন্য তাহিরপুর ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তবে ভালো নৌকার জন্য আগে থেকে বুকিং দিয়ে আসতে হয়। আজকে জানাবো টাঙ্গুয়ার হাওরের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও সুযোগসুবিধা সম্পন্ন নৌকা চন্দ্রাবতী সম্পর্কে।

চন্দ্রাবতীর ছাদে

 

টাঙ্গুয়ার হাওর নৌকা চন্দ্রাবতী এর সুযোগ সুবিধা

* এই নৌকায় প্যান এবং কমোড দুইটাই আছে এবং পর্যাপ্ত স্পেস সহ। যেখানে হাওরের বেশিরভাগ নৌকাতেই ঝুলন্ত টয়লেট।

* ছেলে ও মেয়েদের রাতে ঘুমানোর জন্য দুইটি আলাদা কম্পার্টমেন্ট আছে এই বোট এ। যেখানে প্রায় ১৮ জন ঘুমাতে পারে। এছাড়া নৌকার ছাদে বসার ব্যাবস্থা আছে ৫০ জন এর।

*জেনারেটর, ৩টা হাই স্পিড মুভিং ফ্যান এবং ২টা এয়ার পাসার এক্সস্টেড ফ্যান আছে। মোবাইল ও ক্যামেরা চার্জিং পয়েন্ট আছে প্রতিটি কর্নারে। বোটের অভ্যন্তরের সবই এলইডি বাল্ব, যে কারনে পোকা আসে না।

* পার্সনাল লকার ফ্যাসিলিটি আছে, বুক সেলফ আছে, স্যানিটারি ন্যাপকিন প্যাড আছে ফ্রি ইউজের জন্য।

* ১৬টা লাইফ জ্যাকেট আছে। ফার্স্ট এইড বক্স আছে। উপরে ফ্ল্যাড লাইট আছে। আছে এমার্জেন্সি সিগনাল লাইট। পানি নিষ্কাশন পাম্প আছে। কোন কারনে নৌকাতে বেশি পানি উঠলে পাম্প চালালে ৪-৫ মিনিটের মধ্যেই সব পানি বাইরে ফেলে দেয়া যায়।

*রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে আছে স্পেশাল ত্রিপল। পুরাটাই ছাতার ফাইবার দিয়ে বানানো। একটু আয়েশ করে উপরে শুয়ে রাতের জ্যোতস্না বিলাশের জন্য শীতল পাটি আছে।

 

চন্দ্রাবতীতে

নৌকা ভাড়া

শুক্র-শনিবার (১ রাত ২ দিন)
৪৫,০০০ টাকা (১০ জনের জন্য)
১০ জনের কম হলেও ৪৫ হাজার টাকা থাকবে। ১০ জন এর বেশি হলে অতিরিক্ত প্রতি জনের জন্য জনপ্রতি ২৫০০ টাকা যুক্ত হবে।
রবি থেকে বৃহস্পতিবার (১ রাত ২ দিন)
৩৬,০০০ টাকা (১০ জনের জন্য)
১০ জনের কম হলেও ৩৬ হাজার টাকা থাকবে। ১০ জন এর বেশি হলে অতিরিক্ত প্রতি জনের জন্য জনপ্রতি ২০০০ টাকা যুক্ত হবে।
রবি থেকে বৃহস্পতিবার (১ রাত ১ দিন)
৩০,০০০ টাকা (১০ জনের জন্য)
১০ জনের কম হলেও ৩২ হাজার টাকা থাকবে। ১০ জন এর বেশি হলে অতিরিক্ত প্রতি জনের জন্য জনপ্রতি ১৫০০ টাকা যুক্ত হবে।
❑ ফুড মেনু
১ম দিন
ব্রেকফাস্টঃ খিচুড়ি + ডিম + সালাদ + আচার
নুন স্ন্যাকসঃ চা + কেক/বিস্কিট
লাঞ্চঃ ভাত + ভর্তা/সবজি + হাওড়ের মাছ + ডাল।
ইভিনিং স্ন্যাকসঃ নুডুলস + চা
ডিনারঃ ভাত + ভর্তা/সবজি + হাঁসের মাংস + ডাল।
২য় দিন
ব্রেকফাস্টঃ খিচুড়ি + ডিম + আচার
নুন স্ন্যাকসঃ চা + কেক/বিস্কিট
লাঞ্চঃ ভাত + ভর্তা/সবজি + হাওড়ের মাছ + ডাল।
ইভিনিং স্ন্যাকসঃ নুডুলস + চা

প্যাকেজে যা যা থাকছে

⦿ প্রথমদিন সকালের খাবার থেকে শুরু করে আসার দিন সান্ধ্যকালীন খাবার পর্যন্ত ২ দিনে ৯ বেলা খাবার।
⦿ সুনামগঞ্জ থেকে পিকআপ ও ড্রপ।
⦿ রাতে নীলাদ্রী লেকের পাড়ে টেকেরঘাটে অবস্থান।

যোগাযোগ

ঢাকা অফিস:
রুম নং ১৪০৩; ১৪ তম তলা;
শাহ্‌ শাহ্‌ আলী প্লাজা। মিরপুর ১০ গোলচত্বর।

ফোনঃ 01884710723
01869649817
01810137002

চন্দ্রাবতীর ফেসবুক পেজ: Daughter of Tangua

টাংগুয়া হাওড় ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

*যারা সরাসরি তাহিরপুর গিয়ে ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া নিবেন তারা ভালোমতো দরদাম করে নিবেন। সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিবেন। লোকাল বোট সাধারণত ৮০০০ টাকা থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। আর হাওরে ২/৩টা প্রিমিয়াম বোট আছে। এগুলোর ভাড়া ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

*টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে লাইফ জ্যাকেট সাথে নিন। তাহিরপুরে ৫০থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায় লাইফ জ্যাকেট পাবেন। এছাড়া প্রিমিয়াম বোট গুলোর নিজস্ব লাইফজ্যাকেট থাকে। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া অল্প পানিতেও নামবেন না।

* ভ্রমণের সময় টিম সাইজ যত বড় হবে খরচ তত কম হবে। দলে সদস্য সংখ্যা একেবারে কম হলে কোনো ট্যুর গ্রুপ এর সাথে ভ্রমণ করতে পারেন। এতে ভ্রমণ খরচ কমে আসবে।

*জাদুকাটা নদীতে অল্প পানিতে কিছুদূর হাঁটার পর হঠাৎ খাড়া গভীর! নদীর তলদেশে তীব্র স্রোত আছে। যা উপর থেকে দেখে বোঝা যায়না। তাই জাদুকাটা নদীতে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নামবেন না।

* লাকমাছড়া মূলত ইন্ডিয়াতে পড়েছে। তাই লাকমাছড়াতে গেলে সাইনবোর্ড দেওয়া নির্দিষ্ট অংশ পর্যন্ত ভ্রমণ করুন। ভারতের অংশে প্রবেশ কবেন না।

*হাওরে কোনো ভাবেই মাইক এমনকি স্পীকারও ব্যাবহার করে গান বাজাবেন না। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। স্থানীয়রাও বিরক্ত হয়।

*ভ্রমণের সময় ছাতা নিন সাথে। রোদ বৃষ্টি যেকোনো সময় কাজে দিবে। মাঝি ও স্থানীয়দের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করুন।

* জুলাই থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত হাওরে কানায় কানায় পানি থাকে। তাই এই সময়টার মধ্যেই টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করুন। বছরের অন্য সময় এখানে পানি থাকেনা। শুকনো মৌসুমে পাখি দেখতে অনেক পর্যটক আসেন। তবে তখন নৌকা চলে না।

ট্রাভেল এজেন্সি

এছাড়া যারা ঝামেলা এড়াতে ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর টাঙ্গুয়া হাওর ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন। এটি ১ রাত ২ দিনের ভ্রমণ প্যাকেজ। ভ্রমণ আপনার স্বপ্ন। আপনার স্বপ্নগুলো স্মৃতি হোক।

 

আরো পড়ুন

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ গাইডলাইন

বান্দরবানের সেরা ২০ টি রিসোর্ট

সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ তথ্য

কোনো ধরণের অপচনশীল দ্রব্য হাওরে ফেলবেন না। পরিবেশ সংরক্ষণে মনযোগ দিন। শুধু হাওরে গিয়ে নয়, আপনার দৈনন্দিন জীবনেও যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা আপনার ব্যাক্তিত্বের পরিচায়ক।

টাঙ্গুয়ার হাওর

টাঙ্গুয়ার হাওর (Tanguar Haor) সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এরিয়া জুড়ে বিস্তৃত। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। তার মাঝে ডুবে আছে অসংখ্য গ্রাম। বর্ষায় সেখানে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যাতায়াতের বাহন নৌকা। হাওরের একপ্রান্তে মেঘালয়ের পাহাড়, সেখান থেকে নেমে আসা ছোটবড় ৩০টি ঝর্ণাধারা আর দিগন্তজোড়া নীল আকাশ। সাত হাজার একরের এই টাঙ্গুয়ার হাওর এর আয়তন বর্ষায় বেড়ে তিনগুন হয়।

বাংলাদেশে যত দর্শনীয় স্থান আছে একই রকমের জায়গা দক্ষিণ এশিয়ায় অন্য কোথাও না কোথাও আছে। কিন্তু টাঙ্গুয়া হাওর এর মতো বৈচিত্রময় স্থান আর কোথাও নেই। তাই একজন বিদেশী পর্যটক বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানের নাম জানতে চাইলে তাকে টাঙ্গুয়ার হাওরের নাম সাজেস্ট করার কথা জানান ট্রাভেল এক্সপার্টরা।

টাঙ্গুয়া হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বর্ষাকাল টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পুরো হাওর তখন কানায় কানায় ভরে উঠে। পাশাপাশি দুই বাড়িতে বিয়েও হয় নৌকায়! এক কথায় বলা চলে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত টাঙ্গুয়া হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। তবে পাখি প্রেমীরা শীতকালেও টাঙ্গুয়া হাওর ভ্রমণ করেন।

টাঙ্গুয়ার হাওর এর দর্শনীয় স্থান গুলো

প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে পুরো হাওরটাই দর্শনীয়। তবে নির্দিষ্ট করে বললে- হাওরে রয়েছে অনেকগুলো ছোট ছোট সোয়াম্প ফরেস্ট। এছাড়া নীলাদ্রি লেক (শহীদ সিরাজ লেক), লাকমাছড়া, বারিক্কা টিলা, শিমুল বাগান, ওয়াচ টাওয়ার, যাদুকাটা নদী উল্লেখযোগ্য। হাওরের সূর্যাস্ত আপনার স্মৃতিতে অনেকদিন থাকবে। চাঁদনী রাতে গেলে মাতাল জোছনা আর বাউলা বাতাস আপনাকে মাতাল করে দিবে!

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ: ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন মামুন পরিবহন, এনা পরিবহন ও শ্যামলী পরিবহনের বাস সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাস ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ টাকা। যেতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা।

সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ: যারা সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ যেতে চান, তারা সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জ যেতে পারবেন। সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের বাস ভাড়া ১০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ২ ঘন্টার মতো।

সুনামগঞ্জ থেকে টাংগুয়া: সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা ব্রিজের উপর থেকে টাংগুয়া যাওয়ার সিএনজি, লেগুনা এবং বাইক পাবেন। যেতে সময় লাগবে দেড় ঘন্টার মতো। তাহিরপুর নেমে ঘাট থেকে নৌকা পেয়ে যাবেন। ট্যুরের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী ছোট বড় নৌকা ভাড়া করেতে পারবেন বাজেটের মধ্যে। তবে সবচেয়ে ভালো নৌকা গুলো পেতে আগে থেকে ফোন করে বুকিং করাই ভালো।

রাতে কোথায় থাকবেন

রাতে থাকার জন্য টাঙ্গুয়া হাওরে ভালো হোটেলের ব্যাবস্থা নেই। হাওর বিলাস নামে একটি কটেজ রয়েছে হাওরের মাঝখানে, এছাড়া টেকেরঘাটে একটি বোর্ডিং আছে। সাধারণত হাওর ভ্রমণ এ রাতে সবাই নৌকাতেই ঘুমায়। যারা রাতে ঘুমানোর সময় প্রাইভেসি পছন্দ করেন তারা মাঝিকে বলে হোটেলের ব্যাবস্থা করতে পারবেন।

টাঙ্গুয়ার হাওর এর নৌকা ভাড়া

টাংগুয়া হাওড়ের নৌকা ভাড়া আসলে বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন নৌকার ধারণ ক্ষমতা, নৌকার সুযোগ সুবিধা, কতদিনের জন্য ভাড়া নিচ্ছেন ইত্যাদি। সাধারণত মাঝারি আকারের একটা নৌকা ভাড়া ৫০০০ থেকে ৭০০০ টাকা। এসব নৌকায় ১৫/২০ জন বসতে পারে, ৭/৮ জন রাতে ঘুমাতে পারে। বড় নৌকার ভাড়া ৭০০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। বড় নৌকাতে বসতে পারে ৩০/৩৫ জন, রাতে ঘুমাতে পারে ১০/১২ জন। নৌকা নেওয়ার সময় সোলার আছে কিনা, টয়লেটের অবস্থা কেমন ইত্যাদি দেখে নিতে হবে।

এছাড়া টাংগুয়া হাওরে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন দুই তিনটি বোট আছে। এগুলোতে জেনারেটর থেকে শুরু করে হাই কমোড, লাইট ফ্যান, গ্যাসের চুলা ইত্যাদি রয়েছে। এসব নৌকায় প্রায় ৪০ জন বসতে পারে। রাতে ঘুমাতে পারে ১৪ থেকে ১৮ জন। দুইদিনের জন্য এসব নৌকার ভাড়া পড়ে ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে সব ধরণের নৌকা ভাড়া শুক্র শনিবারে কিছুটা বেশি ও অন্যান্য দিন কিছুটা কম থাকে।

টাঙ্গুয়ার হাওরের সবয়েচে প্রিমিয়াম হাউজবোট চন্দ্রাবতীর ফোন নাম্বার সহ বিস্তারিত তথ্য দেখুন  এখানে।

খাবার ব্যাবস্থা

টাঙ্গুয়ার হাওড় এর তাহিরপুর ও টেকেরঘাটে কয়েকটা খাবারের দোকান আছে। এসব দোকানে হাওরের নানান সুস্বাদু মাছ, হাঁস, ভর্তা ইত্যাদি দিয়ে দুপুর ও রাতের খাবার খেতে পারবেন। আর নিজেরা রান্না করতে চাইলে তাহিরপুর বাজার থেকে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে উঠতে হবে। লোকজন বেশি হলে মাঝিকে বলে একজন বাবুর্চি নিতে পারবেন বোটে। দুই দিনের জন্য বাবুর্চিকে দিতে হবে ১৫০০ টাকা।

নীলাদ্রি লেক | ছবি: গ্রিন বেল্ট

টাঙ্গুয়ার হাওর ট্যুর প্ল্যান ২ দিন ১ রাত

হাওড়ে যেতে হলে রাতের বাসে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে সুনামগঞ্জ চলে আসতে হবে। ভোরের মধ্যে সুনামগঞ্জ পৌঁছে যাবেন। এরপর সুনামগঞ্জের সুরমা ব্রিজ থেকে সিএনজি লেগুনা বা বাইকে করে রওনা করে দিন তাহিরপুরের উদ্দেশ্যে। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর যেতে ঘন্টা দেড়েক সময় লাগবে। তাহিরপুর পৌঁছে প্রথমে নৌকা ঠিক করে এরপর প্রয়োজনীয় বাজার করে নিন। সব কাজ শেষে নৌকা নিয়ে প্রথমেই চলে আসুন ওয়াচ টাওয়ার।

ওয়াচ টাওয়ার এলাকায় রয়েছে ছোট ছোট অনেক জলাবন। এখানে আপনি গোসল সেরে নিতে পারেন। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া হাওরে নামবেন না। এর মধ্যেই দুপুরের খাবারের আয়োজন করে ফেলুন। গোসল শেষে মাঝ হাওর দিয়ে চলে যান টেকেরঘাট। টেকেরঘাট পৌঁছাতে বিকেল হবে। সেদিনের জন্য নৌকা ওখানেই বাধা থাকবে। টেকেরঘাট হচ্ছে সীমান্তঘেঁষা গ্রাম। নৌকা থেকে নেমে পায়ে হেঁটে ঘুরে আসুন লাকমাছড়া। ঘাট থেকে লাকমাছড়া হেঁটে যেতে বিশ মিনিটের মতো সময় লাগবে। স্থানীয় যে কাউকে বললে পথ দেখিয়ে দিবে। আর সন্ধ্যেটা কাটিয়ে দিন চুনাপাথরের লেক নীলাদ্রি এর মনোরম পরিবেশে।

পরদিন সকালের খাবারের পর চলে যাবেন যাদুকাটা নদী, বারিক্কা টিলা ও শিমুল বাগানের উদ্দেশ্যে। এই তিনটা স্পটে আপনি লোকাল বাইক ভাড়া নিয়ে যেতে পারেন। ১৫০ টাকা নিবে জনপ্রতি। আর নৌকায় যেতে চাইলে নৌকা ভাড়া নেওয়ার সময়ই মাঝিকে বলতে হবে। নইলে পরে বাড়তি ভাড়া দাবি করতে পারে। এই স্থানগুলো ঘুরতে ঘুরতে বিকেল হয়ে যাবে। এরপর তাহিরপুর হয়ে বা টেকেরঘাট থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জ চলে আসুন। তারপর রাতের বাসে গন্তব্যে ফিরে যান।

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ খরচ

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জের বাস ভাড়া আসা যাওয়া ১১০০ টাকা। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর সিএনজি বা বাইক ভাড়া আসা যাওয়া ২০০ থেকে ৪০০ টাকা জনপ্রতি। নৌকা ভাড়া ৫০০০ থেকে ১৫০০০ টাকা, এটা আপনার দলের সদস্যদের মধ্যে ভাগ হবে। খাবার খরচ প্রতি বেলা গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পড়বে। দলে কম মানুষ হলে নিজেরা রান্না করে খেলে একটু বেশি খরচ হবে। এগুলোই মূল খরচ। এর বাইরে টুকটাক ১০০ টাকা জনপ্রতি খরচ হতে পারে।

টাংগুয়া হাওড় ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

*টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে লাইফ জ্যাকেট সাথে নিন। তাহিরপুরে ৫০থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায় লাইফ জ্যাকেট পাবেন। এছাড়া প্রিমিয়াম বোট গুলোর নিজস্ব লাইফজ্যাকেট থাকে। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া অল্প পানিতেও নামবেন না।

* ভ্রমণের সময় টিম সাইজ যত বড় হবে খরচ তত কম হবে। দলে সদস্য সংখ্যা একেবারে কম হলে কোনো ট্যুর গ্রুপ এর সাথে ভ্রমণ করতে পারেন। এতে ভ্রমণ খরচ কমে আসবে। নিরাপত্তাও বাড়বে।

*জাদুকাটা নদীতে অল্প পানিতে কিছুদূর হাঁটার পর হঠাৎ খাড়া গভীর! নদীর তলদেশে তীব্র স্রোত আছে। যা উপর থেকে দেখে বোঝা যায়না। তাই জাদুকাটা নদীতে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নামবেন না।

* টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে বজ্রবৃষ্টি বা ভারী বৃষ্টি হলে নৌকার ছাদ থেকে নেমে ভিতরে অবস্থান নিন।

* হাওরে কোনো ভাবেই মাইক এমনকি স্পীকারও ব্যাবহার করে গান বাজাবেন না। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। স্থানীয়রাও বিরক্ত হয়।

*ভ্রমণের সময় ছাতা নিন সাথে। রোদ বৃষ্টি যেকোনো সময় কাজে দিবে। মাঝি ও স্থানীয়দের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করুন।

*কোনো ধরণের অপচনশীল দ্রব্য হাওরে ফেলবেন না। পরিবেশ সংরক্ষণে মনযোগ  দিন। শুধু টাঙ্গুয়ার হাওড় এ গিয়ে নয়, আপনার দৈনন্দিন জীবনেও যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা আপনার ব্যাক্তিত্বের পরিচায়ক।

অনেকে ঝামেলা এড়াতে ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর টাঙ্গুয়া হাওর ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন। ভ্রমণ সম্পর্কিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ। আপনার স্বপ্নগুলো স্মৃতি হোক।

আরো পড়ুন

error: Content is protected !!
Exit mobile version