লালাখাল

লালাখাল (Lalakhal) এর অবস্থান সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী জৈন্তিয়াপুর উপজেলায়। সিলেট জেলাশহর থেকে এর দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। নীল পানির সাথে নদীর দুপাশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য – ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে। নাম লালাখাল হলেও এর পানির রং স্বচ্ছ নীল, মনে হবে মালদ্বীপের সাগরের পানির হুবুহু প্রতিচ্ছবি দেখছেন। এখানে লালাখাল মিশে গেছে সারি নদীর সাথে। লালাখাল এর তামাবিল অংশের নাম সারি নদী।  স্বচ্ছ নীল জলরাশী, দুপাশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, সবুজ বন, পাহাড়, বালুচর, চা বাগান – কি নেই লালাখালে। ৪৫ মিনিটের দারুন এক নৌকাভ্রমণ এর সাথে প্রকৃতির অপরুপ দৃশ্যের সাক্ষী হতে একটা দিন লালাখাল এ কাটানো যেতেই পারে। লালাখাল ভ্রমণের সাথে একইদিনে জাফলং, সারিঘাট, সহ কাছাকাছি আরো কয়েকটি পর্যটন স্পট ঘুরে আসতে পারবেন। এই পোস্ট এর শেষের দিকে সেই বিষয়ে দিক নির্দেশনা থাকবে।

কিভাবে লালাখাল যাবেন

লালাখাল যাওয়ার জন্য দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে চায়ের দেশ সিলেট আসতে হবে। বাস, ট্রেন অথবা উড়োজাহাজে করে আপনি সিলেট আসতে পারবেন। বাসে এলে ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে ঢাকা সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টার মতো।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে লালাখাল

সিলেট শহর থেকে লালাখাল যাওয়ার জন্য প্রথমে জৈন্তাপুর আসতে হবে। জাফলংগামী যেকোনো বাসে উঠলে আপনাকে সারিঘাট নামিয়ে দিবে। ওসমানী শিশু পার্কের সামনে থেকে জাফলংয়ের বাস, মাইক্রোবাস বা লোকাল সিএনজি পাওয়া যায়। যেতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘন্টার মতো। রিজার্ভ মাইক্রোবাস ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

লোকাল ট্রান্সপোর্টে সারিঘাট পর্যন্ত গেলে সেখান থেকে লালাখাল যাওয়ার লেগুনা ও সিএনজি পাওয়া যায়। চাইলে সেখান থেকে নৌপথেও যেতে পারবেন। রিজার্ভ নৌকা ভাড়া পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

কখন যাবেন

লালাখাল যাওয়ার আদর্শ সময় হচ্ছে শীতকাল। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে গেলে লালাখাল এর নীল জলরাশির সবচেয়ে সুন্দর রূপটা দেখতে পাবেন। শীতের সময় লালাখালের পানি এতটাই স্বচ্ছ থাকে যে, উপর থেকে একদম নদীর তলদেশ পর্যন্ত দেখা যায়। শীতকালে নদীর দুপাশের দৃশ্য আরো বেশি মনমুগ্ধকর হয়ে উঠে। প্রকৃতি তখন নতুন আমেজে সেজে উঠে। তাই এককথায় বলা চলে শীতকাল লালাখাল ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়।

লালাখাল কি কি দেখবেন

নীল জলরাশী, সবুজ বন, দুপাশের চমৎকার দৃশ্য, চা বাগান, জিরো পয়েন্ট ইত্যাদি আপনাকে মুগ্ধ করবে। একটা দারুন নৌকা ভ্রমন করতে পারবেন। নীল জলরাশীর উপর নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন, চাইলে স্পিডবোট নিয়ে ঘুরতে পারেন। নৌকা ভ্রমন এর পথে দেখতে পাবেন দারুন সব মনমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য। তারপর পৌঁছে যাবেন জিরো পয়েন্টে৷ ওখানে বালুচর পাবেন, বালুচর টা পায়ে হেটে উটেই পাবেন চা বাগান আর পাহাড়।

নৌকা ভাড়া

সিজন ভেদে লালখাল এ নৌকাভাড়া উঠানামা করে। লালাখাল ঘাটেই ছোট বড় সব রকমের নৌকা পাওয়া যায়। ইঞ্জিন চালিত ছোট নৌকার ভাড়া ঘন্টায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। আর বড় নৌকাগুলোর ভাড়া ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। এক নৌকায় ১০-১৫ জন বসা যায়।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য লালাখালের কাছেই নর্দান রিসোর্টটি বেছে নিতে পারেন। বাজেট বেশি থাকলে বিলাসবহুল নাজিমগড় রিসোর্টে থাকতে পারবেন। আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই রিসোর্টের সর্বনিন্ম রুম ভাড়া পড়বে ৭ হাজার টাকা। আর প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট নিলে খরচ পড়বে ১৫ হাজার টাকা। এক রুমে ৩ জন থাকা যায়। সিজনে এখানে আগে থেকে রুম বুকিং দিয়ে না গেলে খালি পাওয়া মুশকিল।

তবে রাতে সন্ধ্যার দিকে সিলেটে ফিরে আসাই ভালো। এখানে কম খরচে ভালো মানের হোটেল পাবেন। সিলেট এর মাজার গেট, জিন্দাবাজার, জেল রোডে বিভিন্ন মানের অনেকগুলো হোটেল আছে। ৪০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে এখানে রুম পেয়ে যাবেন। বাংলাদেশের জেলা শহরগুলোর মধ্যে কক্সবাজারের পর সিলেটেই সবচেয়ে বেশি হোটেল আছে।

সতকর্তা

সাতার না জানলে পানিতে নামবেন না। লালাখাল এর কিছু জায়গায় পানির গভীরতা অনেক বেশি। মানুষ বেশি হলে একটু বড় নৌকা নিবেন। নৌকার ছাদের উপর বেশি মানুষ উঠবেন না। স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। নৌকা, লেগুনা, সিএনজি, মাইক্রোবাস বা হোটেল নেওয়ার সময় ঠিকঠাক দরদাম করে নিন। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। এটা অভ্যাসের বিষয়।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

লালাখাল এর কাছেই রয়েছে জাফলং আর তামাবিল। জাফলং থেকে পিয়াইন নদী পার হয়ে কিছুটা সামনে গেলে সংগ্রামপুঞ্জী ঝর্ণা। এছাড়া একই দিনে চাইলে লালাখাল থেকে ঘুরে আসতে পারবেন রাতারগুল থেকে। আর বিছানাকান্দি ঘুরতে চাইলে খুব ভোরে রওয়ানা করতে হবে। এছাড়া যেতে পারেন পান্থুমাই ঝর্ণা বা ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর।

আরো পড়ুন

জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক ট্রাভেল গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। লালাখাল সম্পর্কে আরো বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে চাইলে আমাদেরকে জানান।

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এই ঝর্ণার আরেকটি নাম হলো মায়াবী ঝর্ণা। সিলেট শহর থেকে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার দূরত্ব ৬২ কিঃমিঃ। সিলেটের জাফলং থেকে হাঁটাপথে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দূরত্বে এর অবস্থান।  মায়াবী এই ঝর্ণা মূলত ভারতীয় ভূখন্ডে পড়েছে। তারপরও বিএসএফ এর প্রহরায় সেখানে বাংলাদেশীরা ভ্রমণ করতে পারে। সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার মূলত তিনটি ধাপ। শেষ ধাপে রয়েছে একটী রহস্যময় সুড়ঙ্গ! ঝর্ণা বেয়ে উপরে উঠা খুব ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। পানির স্রোতের কারণে ঝর্ণার গা সবসময় পিচ্ছিল থাকে। তাই পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে ঝর্ণার উপরে উঠার চেষ্টা না করাই ভালো। নিচ থেকেও চমৎকার ভাবে এই ঝর্ণাটি দেখা যায়। এই ঝর্ণাটি মূলত জাফংলং জিরো পয়েন্টের কাছে।

কিভাবে যাবেন সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

সংগ্রামপুঞ্জি মায়াবী ঝর্ণায় যেতে হলে প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে চায়ের দেশ সিলেট আসতে হবে। বাস, ট্রেন কিংবা উড়োজাহাজে করে আপনি সিলেট আসতে পারবেন। বাসে এলে ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে জাফলং

এই সংগ্রামপুঞ্জি মায়াবী ঝর্ণা অভিযানের জন্য প্রথমে সিলেট থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা বা মাইক্রোবাসে করে আপনি জাফলং যেতে হবে। লোকাল বাস ছাড়ে শহরের শিবগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। মাইক্রোবাসে গেলে আসা যাওয়া রিজার্ভ ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। আর সিএনজি নিলে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা। তাই দলগত ভাবে খরচ কম পড়বে। সিলেট থেকে জাফলং যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।

জাফলং থেকে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

জাফলংয়ে যে নদীটি বয়ে গেছে সেটি পিয়াইন নদী। নদীর তীরেই নৌকা ঘাট পাবেন। সেখান থেকে নৌকা নিয়ে নদী পার হতে হবে। নদীর ওপারে গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণায় যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিবে। সেখান থেকে হেঁটে যেতে ১৫ মিনিটের মতো সময় লাগবে। মনে রাখা দরকার নদী পার হয়ে ৫ মিনিট হাঁটার পরই আপনার মোবাইলে আর নেটওয়ার্ক থাকবেনা। কারণ জায়গাটি ভারতের মেঘালয়ের সীমান্তঘেঁষা।

কখন যাবেন সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারা বছরই ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে ছুটে আসেন। তবে শীতকালে এখানে পানি থাকেনা তেমন। তাই মায়াবী এই ঝর্ণার আসল রূপ দেখতে চাইলে বর্ষায় আসা উচিত। এক কথায় বলা যায় বর্ষা ও তার পরবর্তী সময়টা সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত।

কোথায় থাকবেন

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার নিকটস্থ জনপদ জাফলং। কিন্তু জাফলংয়েও রাতে থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই।  তাই সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার সিলেট শহরে চলে আসতে পারেন। সিলেট শহরে প্রচুর হোটেল রয়েছে। আম্বরখানা, দরগাহ গেইট, জিন্দাবাজার এসব এলাকায় অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হিল টাউন, হোটেল ব্রিটানিয়া, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট হোটেল। এখানে ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যাবে।

বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র‍্যান্ড প্যালেস, হোটেল নূরজাহান ইত্যাদি। রুম ভাড়া ৫০০০ থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে। সিজন অনুযায়ী রুম ভাড়ায় তারতম্য হয়।

একদম সস্তার মধ্যে সিলেটের দরগাহ গেইট এলাকায় অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার সাধ্যমতন হোটেল ভাড়া করতে পারবেন ওখান থেকে।

কি খাবেন কোথায় খাবেন

দুপুরের খাবার জাফলংয়ে খেতে হবে। এছাড়া সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার পথেও একাধিক ভালো মানের রেস্টুরেন্ট পাবেন।  চাইলে ওখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। জাফলংয়ে দুপুরে খাওয়ার খরচ পড়বে জনপ্রতি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা। মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ভর্তা ইত্যাদি মেনু পাওয়া যাবে এখানে।

এছাড়া সিলেট শহরে অনেকগুলো বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসী, ভোজন বাড়ি, পালকি, এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার ভর্তার সাথে আপনার পছন্দ মতো মেনু পাবেন এখানে। খরচ হবে জনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকার মতন। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ২৯ রকমের ভর্তা আছে! চাইলে সকালের নাস্তাও এইসব রেস্টুরেন্টে সেরে নিতে পারবেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা দেখতে গেলে এমনিতেই জাফলং দেখে আসতে পারবেন। কাছাকাছি রয়েছে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। সেগুলোর মধ্যে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল অন্যতম। এছাড়া ঘুরে আসতে পারেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, ভোলাগঞ্জ, কিংবা বিছানাকান্দি  অথবা পান্থুমাই ঝর্ণা থেকেও।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা ভ্রমণের সময় বর্ষাকাল। বর্ষাকালে ঝর্ণা থাকে পূর্ণ যৌবণা। এডভেঞ্চারের নেশায় ঝর্ণায় উঠতে গিয়ে অসতর্ক হয়ে পড়লে যেকোনো দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তখন পিয়াইন নদীতেও অনেক স্রোত থাকে। নদী পার হওয়ার সময়ও সাবধান থাকতে হবে। মনে রাখবেন দলগত ভাবে ভ্রমণ করলে সবসময় খরচ কম পড়বে।

অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

আরো পড়ুন

পান্থুমাই ঝর্ণা

পান্থুমাই ভারতের মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামের নাম। এই গ্রামের নামেই পান্থুমাই ঝর্ণা (Panthumai Waterfall) এর নামকরণ। গ্রামটির অবস্থান সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলংয়ে। শুধু ঝর্ণা নয়, এই গ্রামটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর একটি। মেঘালয়ের পাহাড়, পিয়াইন নদী আর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে এই ঝর্ণা। পান্থুমাই ঝর্ণার অবস্থান মূলত ভারতে। সেখানে এটি বড়হিল ঝর্ণা বা বোরহিল ঝর্ণা নামে পরিচিত। ভারতে হলেও নোকা নিয়ে এই ঝর্ণার কাছাকাছি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত বাংলাদেশীরা যেতে পারে। নৌকা ভাড়া ২শ থেকে ৩শ টাকা।

পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সিলেটকে বলা হয় সৌন্দর্যের রাণী। প্রকৃতির অমোঘ টানে সারা বছরই পর্যটকরা সিলেট ভ্রমণ এ ছুটে আসেন। তবে এখানকার প্রকৃত রূপ দেখা যায় বর্ষায়। পান্থুমাই ঝর্ণাও বর্ষায় দেখতে যেতে হয়। তখন ঝর্ণা থাকে পূর্ণযৌবণা। পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকে মেঘ আর পিয়াইন নদীতে টলটোলে স্বচ্চ জল। তাই এক কথায় বলা যায় জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণ এর ভালো সময়। শুকনো মৌসুমে এখানে নৌকায় যাওয়া যায়না।

কিভাবে পান্থুমাই ঝর্ণা যাবেন

পান্থুমাই ঝর্ণা যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে সিলেট আসতে হবে। বলে রাখা ভালো পান্থুমাই এবং বিছানাকান্দি কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থিত। তাই পান্থুমাই প্রায় একই খরচে বিছানাকান্দি সহ ঘুরে আসতে পারবেন।

ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে পান্থুমাই ঝর্ণা

পান্থুমাই যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে সিলেট নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। সেখানে বিমানবন্দর রোডের মুখে সিএনজি স্টেশন রয়েছে। এই স্টেশন থেকে লোকাল সিএনজি যায় হাদারপাড় বাজার পর্যন্ত। ভাড়া জনপ্রতি ১০০-১২০ টাকা। চাইলে আপনি পুরো সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে মাথাপিছু পাঁচজন হিসাব করে যে ভাড়া আসবে তারচেয়ে খানিক বেশি দেওয়া লাগতে পারে। রিজার্ভ নিতে চাইলে সিএনজি ছাড়াও লেগুনা ও মাইক্রোবাস ভাড়া পাবেন। হাদারপাড় বাজারে নামার পর আপনি নৌকাঘাট পেয়ে যাবেন। এখান থেকে পান্থুমাই ঝর্ণা ও বিছানাকান্দি যাওয়ার জন্য একসাথে নৌকা রিজার্ভ করুন। সিলেট শহর থেকে হাঁদারপাড় যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। ফিরতেও একই সময় লাগবে। তাই ট্যুর প্ল্যান করার সময় যাওয়া আসার দীর্ঘ সময়টি হিসেবের মধ্যে রাখুন।

নৌকা ভাড়া

হাদারপাড় ঘাট থেকে রিজার্ভ নৌকাভাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্তৃক নির্ধারিত ১৫৫০ টাকা। এক নৌকায় যেতে পারবেন ১০ জন। ইঞ্জিনচালিত এসব নৌকায় বিছনাকান্দি যেতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট। পান্থুমাই আসা যাওয়ায় বাড়তি দেড় ঘন্টা সময় লাগে। বেশিরভাগ সময় মাঝিরা বিছানাকান্দির সাথে পান্থুমাই যেতে বাড়তি টাকা দাবি করে।

সিলেটে কোথায় থাকবেন

পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণ এর জন্য সিলেট শহরকে আপনার কেন্দ্রস্থল বিবেচনা করতে হবে। সিলেট শহরে প্রচুর হোটেল রয়েছে। আম্বরখানা, দরগাহ গেইট, জিন্দাবাজার এসব এলাকায় অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হিল টাউন, হোটেল ব্রিটানিয়া, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট হোটেল। এখানে ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যাবে।

বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র‍্যান্ড প্যালেস, হোটেল নূরজাহান ইত্যাদি। রুম ভাড়া ৪৫০০ থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে। সিজন অনুযায়ী রুম ভাড়ায় তারতম্য হয়।

একদম সস্তার মধ্যে সিলেটের দরগাহ গেইট এলাকায় অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার সাধ্যের মধ্যে হোটেল ভাড়া নিতে পারবেন ওখান থেকে।

কি খাবেন কোথায় খাবেন

পান্থুমাইতে কোনো খাবার দোকান নাই। বিছনাকান্দিতে দুটি ভাসমান রেস্টুরেন্ট রয়েছে। চাইলে ওখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। খরচ পড়বে জনপ্রতি ১২০ থেকে ২০০ টাকা। মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ভর্তা ইত্যাদি মেনু পাওয়া যাবে এখানে। হাদারপাড় বাজারেও কিছু খাবার দোকান আছে। বেশিরভাগ দোকানেই খিচুড়ি হয় বেশি। দাম পড়বে ৫০-১০০ টাকার মধ্যে।

এছাড়া সিলেট শহরে অনেকগুলো বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসী, ভোজন বাড়ি, পালকি, এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার ভর্তার সাথে আপনার পছন্দ মতো মেনু পাবেন এখানে। খরচ হবে জনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকার মতন। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ২৯ রকমের ভর্তা আছে! চাইলে সকালের নাস্তাও এইসব রেস্টুরেন্টে সেরে নিতে পারবেন।

 ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

*নৌকা ও সিএনজি রিজার্ভের সময় ভালোভাবে দরদাম করে নিবেন।
*সাতার না জানলে বেশি পানিতে নামা থেকে বিরত থাকুন।
* বর্ষাকালে পানির প্রবাহ বেশি থাকায় সাঁতার জানলেও গভীর পানিতে না নামাই নিরাপদ।
* দলগতভাবে ভ্রমণ করুন, এতে খরচ অনেকাংশে কম হবে।
*পান্থুমাই ভারতের ভিতরে পড়েছে। তাই মাঝির পরিপূর্ণ নির্দেশনা মেনে চলুন।
*বিছনাকান্দিতে প্রচুর পাথর, হাটাচলার সময় তাই একটু সাবধানে থাকতে হবে। পিচ্ছিল পাথরে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
* স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী থাকুন।
* চেষ্টা করবেন সন্ধ্যার আগে সিলেট ফিরে আসার।
*চাইলে একইদিনে রাতারগুল, বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই ভ্রমণ করতে পারবেন।
* পরিবেশ এবং প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।

অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণে গেলে সিলেটে আরো অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান আছে। এগুলোর মধ্যে আছে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, সারি নদীর লালাখাল,  গোয়াইনঘাটের জাফলং, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। এছাড়া যেতে পারেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ও বিছানাকান্দি

আরো পড়ুন

জাফলং

জাফলং (Jaflong) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব ৬২ কিঃমিঃ। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে এর অবস্থান। জাফলং জিরো পয়েন্টে দাঁড়ালেই সামনে পড়বে ডাউকি ব্রিজ। তার নিচ দিয়ে বয়ে গেছে পিয়াইন নদী। পাহাড়, পাথুরে নদী, ঝর্ণা সব মিলিয়ে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ মোহনীয় রূপ ধারণ করেছে। জাফলংকে বলা হয় প্রকৃতি কন্যা! জাফলংকে বিশেষত্ব দিয়েছে এখানকার আদিবাসীদের জীবনধারা। পিয়াইন নদী পার হলেই খাসিয়াপুঞ্জি। খাসিয়া ভাষায় পুঞ্জি মানে গ্রাম। খাসিয়াদের বাড়ি নির্মাণশৈলী কিংবা সেখানকার পানের বরজ, সবকিছু মিলিয়ে জাফলং ভ্রমণ এ একটা দিন আপনি কাটিয়ে দিতে পারবেন।

জাফলং শুধু সিলেট বিভাগ নয়, এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য। এখানকার প্রকৃতির সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায় ভারতের বিখ্যাত শৈল শহর শিলং চেরাপুঞ্জির। শিলং এর প্রবেশদ্বার ডাউকি শহর জাফলং থেকেই দেখা যায়। যারা জাফলং ভ্রমণ এর ভিডিও গাইডলাইন পেতে আগ্রহী, তারা গ্রিন বেল্ট ট্রাভেল চ্যানেলের নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।

জাফলং ভ্রমণ গাইডলাইন | যাতায়ত হোটেল ভাড়া ও ভ্রমণ খরচ এর বিস্তারিত দেখুন | Jaflong Tour Sylhet

 

কিভাবে যাবেন

জাফলং যেতে হলে আপনাকে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে চায়ের দেশ সিলেট আসতে হবে। বাস, ট্রেন কিংবা উড়োজাহাজে করে আপনি সিলেট আসতে পারবেন। বাসে এলে ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে জাফলং

সিলেট থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা বা মাইক্রোবাসে করে আপনি জাফলং যেতে পারবেন। লোকাল বাস ছাড়ে শহরের শিবগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। মাইক্রোবাসে গেলে আসা যাওয়া রিজার্ভ ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। আর সিএনজি নিলে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা। তাই দলগত ভাবে খরচ কম পড়বে। সিলেট থেকে জাফলং যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।

কখন যাবেন জাফলং

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারা বছরই ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে ছুটে আসেন। শীতে এখানে নদীতে পানি কম থাকে বলে হেঁটেই পার হওয়া যায়। আর বর্ষায় নদীতে অনেক স্রোত থাকে। তখন চারপাশে ছড়ানো পাথর, সবুজ পাহাড়, আর মায়াবী ঝর্ণা মিলে জাফলং তার রূপের দুয়ার মেলে দেয়। তাই এক কথায় বলা যায় বর্ষা ও তার পরবর্তী সময়টা জাফলং ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জাফলং ভ্রমণ করলে বেশি ভালো লাগবে।

কোথায় থাকবেন

জাফলংয়ে রাতে থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই।  তাই সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার সিলেট শহরে চলে আসতে পারেন। সিলেট শহরে প্রচুর হোটেল রয়েছে। আম্বরখানা, দরগাহ গেইট, জিন্দাবাজার এসব এলাকায় অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হিল টাউন, হোটেল ব্রিটানিয়া, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট হোটেল। এখানে ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যাবে।

বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র‍্যান্ড প্যালেস, হোটেল নূরজাহান ইত্যাদি। রুম ভাড়া ৫০০০ থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে। সিজন অনুযায়ী রুম ভাড়ায় তারতম্য হয়।

একদম সস্তার মধ্যে সিলেটের দরগাহ গেইট এলাকায় অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার সাধ্যমতন হোটেল ভাড়া করতে পারবেন ওখান থেকে।

কি খাবেন কোথায় খাবেন

জাফলংয়ে খাওয়ার জন্য বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়া সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার পথেও একাধিক ভালো মানের রেস্টুরেন্ট পাবেন।  চাইলে ওখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। জাফলং এ দুপুরে খাওয়ার খরচ পড়বে জনপ্রতি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা। মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ভর্তা ইত্যাদি মেনু পাওয়া যাবে এখানে।

এছাড়া সিলেট শহরে অনেকগুলো বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসী, ভোজন বাড়ি, পালকি, এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার ভর্তার সাথে আপনার পছন্দ মতো মেনু পাবেন এখানে। খরচ হবে জনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকার মতন। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ২৯ রকমের ভর্তা আছে! চাইলে সকালের নাস্তাও এইসব রেস্টুরেন্টে সেরে নিতে পারবেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

জাফলং ভ্রমণ এ গেলে কাছাকাছি রয়েছে আরো কয়েকটি দর্শনীয় স্থান দেখতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে সংগ্রামপুঞ্জী মায়ারী ঝর্ণা। যেটি পিয়াইন নদী পার হয়ে ১৫ কিঃমিঃ হাঁটলেই পাওয়া যাবে। এটি মূলত ভারতের অংশে পড়েছে। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারবেন। এছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল। এছাড়া আছে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, বিছানাকান্দির কাছে পান্থুমাই ঝর্ণা। সারি নদীর লালাখাল,  কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। এছাড়া যেতে পারেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ও বিছানাকান্দি

জাফলং ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সিলেট বিভাগের যেকোনো দর্শনীয় স্থান বর্ষাতেই সুন্দর। জাফলং ভ্রমণের সময়ও বর্ষাকাল। তখন নদীতে অনেক স্রোত থাকে। সাঁতার না জানলে নদী নামবেন না। সাঁতার জানলেও লাইফ জ্যাকেট পরুন। মনে রাখবেন দলগত ভাবে ভ্রমণ করলে সবসময় খরচ কম পড়বে। জাফলংয়ে অনেক ভারতীয় পণ্যের দোকান পাবেন। বেশিরভাগই নকল, তাই কিছু কিনতে চাইলে সাবধানে কিনতে হবে। আর নৌকা নেওয়ার সময় দরদাম করে নিন। ছুটির দিনে সব কিছুর দাম বেড়ে যায়, তখন ভ্রমণে খরচ বেশি হয়।

অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

আরো পড়ুন

ভোলাগঞ্জ

ভোলাগঞ্জ (Bholaganj) সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানিগঞ্জের একটি পাথর কোয়ারি। ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর নামে এটি পরিচিত । প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে বর্তামানে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান উঠেছে। একপাশে মেঘালয়ের সবুজ পাহাড়, সেখান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঝর্ণা, আর অন্যপাশে পাথুরে নদী এই জায়গাটির সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মেঘালয়ের পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো থেকে যে নদীটির উৎপত্তি হয়ে ভোলাগঞ্জে উপর দিয়ে বয়ে গেছে তার নাম ধলাই নদ। পাহাড় থেকে ঝর্ণার পানির স্রোতে এই নদী বেয়ে নেমে আসে সাদা পাথর। ধলাই নদের উৎসমুখের এই জায়গাটির নাম ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট। এর কাছাকাছি আরো দুইটি সুন্দর জায়গা রয়েছে উৎমাছড়া ও তুরুংছড়া নামে। ভোলাগঞ্জ কিভাবে যাবো এই প্রশ্নটা আপনার মনে প্রথমেই আসতে পারে।

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ভ্রমণ এর বিস্তারিত ভিডিও গাইডলাইন পেতে গ্রিন বেল্ট ট্রাভেল চ্যানেলের নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।

YouTube video player

কিভাবে যাবেন

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর দেখতে যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে সিলেট আসতে হবে। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ

সিলেটের আম্বরখানা থেকে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর যাওয়ার সিএনজি পাবেন। লোকাল সিএনজিতে জনপ্রতি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা নিবে। চাইলে সিএনজি রিজার্ভও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আসা যাওয়ায় ভাড়া পড়বে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। এক সিএনজিতে ৫ জন বসতে পারবেন। আম্বরখানা থেকে ভোলাগঞ্জ যেতে কমবেশি দেড় ঘন্টার মতো সময় লাগে। ভোলাগঞ্জ বাজারে নেমে দশ নম্বর নৌকা ঘাটে যেতে হবে। নৌকা ঘাট থেকে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর যাওয়ার নৌকা পাওয়া যায়। আসা যাওয়ার ভাড়া ৮০০ টাকা। এক নৌকায় ১০ জন বসা যায়। এক্ষেত্রে নিজেরা গ্রুপ করে গেলে খরচ কমে আসে।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর

উৎমাছড়া ও তুরংছড়া

ভোলাগঞ্জ এর কাছেই আরো দুইটি পর্যটন স্থান উৎমাছড়া ও তুরংছড়া। অনেকেই ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর থেকে উৎমাছড়া ও তুরংছড়া ঘুরতে যান। সেখানে যেতে হলে  প্রথমেই যেতে হবে দয়ারবাজার। ভোলাগঞ্জ যে নৌকায় যাবেন সেই নৌকার মাঝিকে বললে আপনাকে দয়ারবাজার ঘাটে নামিয়ে দিবে। সেক্ষেত্রে নৌকা ঠিক করার সময়ই এই বিষয়ে কথা বলে রাখতে হবে। দয়ারবাজার থেকে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়ায় চলে যান চরার বাজার। চরার বাজার নেমে ১৫/২০ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন উৎমাছড়া। আর তুরংছড়া যেতে ৩০/৪০ মিনিট সময় লাগবে। চাইলে সেখান থেকে লোকাল বাইক ভাড়া করেও যেতে পারবেন। বাইকে ভাড়া পড়বে ২০০ টাকা। ফেরার সময় চরারবাজার-দয়ারবাজার-ভোলাগঞ্জ হয়ে চলে আসতে পারবেন আম্বরখানায়। ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এর সাথে উৎমাছড়া তুরংছড়া ঘুরে আসতে চাইলে বাড়তি ৩/৪ ঘন্টা সময় লাগবে।

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর কখন যাবেন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারাবছরই ভ্রমণপিপাসুরা ভোলাগঞ্জ ছুটে আসেন। তবে বর্ষায় এখানে পানি থাকে বলে বর্ষাকালে প্রকৃতি বেশি সুন্দর। তখন মেঘালয়ের পাহাড়, সেখান থেকে নেমে আসা ঝর্ণা, পাথুরে নদী- সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক মোহনীয় রূপের সৃষ্টি হয়। তাই এক কথায় বলা যায় জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ ভ্রমণের ভালো সময়।

কোথায় খাবেন

ভোলাগঞ্জ দুপুরের খাবারের জন্য সাধারণ মানের কিছু খাবার হোটেল আছে। কোম্পানিগঞ্জ সদরে খেতে চাইলে দেশবন্ধু রেস্টুরেন্ট বা আলম হোটেলে খেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সকালের খাবার সিলেট থেকে খেয়ে গেলে দুপুরের খাবারটা লোকাল কোনো হোটেলে খেয়ে নিবেন। আর রাতের খাবারটা সিলেট শহরে এসে খেতে পারবেন। আর দুপুরের খাবারের প্যাকেট সিলেট থেকে নিয়ে যেতে চাইলে কোনো অবস্থাতেই সেটা যেখানে সেখানে ফেলে আসবেন না।

কোথায় থাকবেন

ভোলাগঞ্জ ঘুরতে গেলে সেখানে থাকার জন্য আশেপাশে কোনো ভালো হোটেল নাই। তাও যদি কোনো কারণে থাকতে হয় কোম্পানিগঞ্জ সদরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল আল সাদিক বা হালিমা বোর্ডিং অন্যতম। আর সিলেটে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের সব ধরণের হোটেল আছে। আশাকরি পুরো আর্টিকেলের মাধম্যে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর কিভাবে যাবো এই উত্তরটি পেয়ে গেছেন।

ভোলাগঞ্জ ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

* সময়ের দিকে খেয়াল রাখবেন। যেন সন্ধ্যার আগেই শহরে ফিরে আসতে পারেন।
* ভোলাগঞ্জ একটি সীমান্তবর্তী এলাকা। তাই সাবধানে থাকবেন।
*খাওয়ার জন্য ভালো হোটেল নেই। যেগুলো আছে ওগুলোতেই খেতে হবে।
*বর্ষায় নদীতে অনেক স্রোত থাকে। তাই সাঁতার জানলেও লাইফ জ্যাকেট ছাড়া বেশি পানিতে নামা যাবেনা।
* মনে রাখবেন অতিরিক্ত এডোভেঞ্চার দূর্ঘটনা ডেকে আনে।
* উৎমাছড়া ও তুরংছড়া সহ ঘুরতে চাইলে খুব সকালে রওনা করতে হবে। নইলে সময়ে কুলাবেনা।
*সিএনজি ও নৌকা ভাড়ার সময় ঠিকঠাক দরদাম করে নিবেন।
* কম খরচে ঘুরতে চাইলে গ্রুপ করে ঘুরতে হবে।
* পরিবেশ এবং প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ভ্রমণে গেলে সিলেটে আরো অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান আছে। এর মধ্যে রয়েছে গোয়াইনঘাটের জাফলং এবং  সংগ্রামপুঞ্জী মায়ারী ঝর্ণা। যেটি জাফলং গিয়ে পিয়াইন নদী পার হয়ে ১৫ কিঃমিঃ হাঁটলেই পাওয়া যাবে। এটি মূলত ভারতের অংশে পড়েছে। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারবেন। এছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল। এছাড়া আছে বিছানাকান্দির কাছে পান্থুমাই ঝর্ণা। সারি নদীর লালাখাল,  গোয়াইনঘাটের জাফলং। যেতে পারেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ও বিছানাকান্দি

আরো পড়ুন

রাতারগুল বিছানাকান্দি পান্থুমাই | সিলেট ভ্রমণ

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হলো সিলেট। মেঘালয়ের পাহাড় বেষ্টিত সিলেটের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে প্রচুর দর্শনীয় স্থান। আজকে আমরা জানবো সিলেট ভ্রমণ এর পর্যটন আকর্ষণ রাতারগুল বিছানাকান্দি ও পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণ সম্পর্কে। যেকোনো জায়গা ভ্রমণের ক্ষেত্রে পূর্ণতা আসে সঠিক ট্যুর প্ল্যানে। যে জায়গাটা আপনি রিলাক্সে একদিনে ঘুরতে পারবেন, ভুলভাল ট্যুর প্ল্যান করলে সেটা ঘুরতে দুইদিন লাগে। একদিনে কিভাবে বিছনাকান্দি রাতারগুল এবং পান্তুমাই ঝর্ণা থেকে ঘুরে আসা যায় সে বিষয়টির খুটিনাটি নিয়েই আজকের আলোচনা।

কখন যাবেন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে এখানে সারা বছরই পর্যটকরা ছুটে আসেন। তবে সিলেট ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। বর্ষায় মেঘালয় পাহাড় সাজে সবুজের আবরণে। ঝর্ণা ও পাথরের উপত্যকা থাকে পূর্ণ যৌবণা। সব মিলিয়ে এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলো যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উপচে পড়ে! তাই এক কথায় বলা চলে মে থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সিলেট ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

বিছনাকান্দি

বিছনাকান্দি (Bichanakandi) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত৷ ঢাকা থেকে ৩১৫ কিলোমিটার এবং সিলেট থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। । বিছানাকান্দির তিনদিকে মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড়। সেখান থেকে নেমে আসা অসংখ্য ঝর্ণাধারা, আর যতদুর চোখ যায় শুধু পাথরের সমারোহ। ঝর্ণার পানি যখন পাথরের গায়ে ধাক্কা লেগে প্রবাহিত হয়, তখন কলকল শব্দের মোহনীয় আবেশ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।

রাতারগুল

রাতারগুল (Ratargul) দেশের সবচেয়ে বড় সোয়াম্প ফরেস্ট। অনেকে রাতারগুলকে বাংলার আমাজন নামে অভিহিত করেন। সিলেট শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এ বনের অবস্থান। অরণ্যের মধ্যে ঘুরে ঘুরে প্রকৃতির আরো নিকটে যেতে হলে আপনাকে ডিঙি নৌকায় চড়তে হবে। কোনো এক বৃষ্টির দিনে ডিঙি নৌকায় রাতারগুলে ঘুরে বেড়ানোর সময় আপনার মনে হবে চমৎকার এক জলে ভাসা জীবন!

পান্থুমাই ঝর্ণা

পান্তুমাই ঝর্ণা (Panthumai Waterfall) গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের একটি গ্রামে অবস্থিত। বিছনাকান্দি থেকে নৌকা নিয়ে যাওয়া যায় এই ঝর্ণার কাছে। তবে ঝর্ণার খুব কাছাকাছি যাওয়া যায় না। ঝর্ণাটি ভারতে অবস্থিত। ভারতে এই ঝর্ণা বোরহিল নামে পরিচিত৷

কিভাবে যাবেন সিলেট

রাতারগুল বিছানাকান্দি পান্থুমাই যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে সিলেট আসতে হবে। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে ট্যুর প্ল্যান

তিনটি স্থান (রাতারগুল বিছানাকান্দি পান্থুমাই) ভ্রমণ করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনি সময়টা কিভাবে ব্যবহার করছেন। সময়ের সঠিক ব্যবহারে আপনি খুব ভালো ভাবেই ঘুরতে পারেন একদিনে এই তিনটি জায়গায়। সেক্ষেত্রে সিলেট পৌঁছে হোটেল ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে আপনার দলের সদস্য সংখ্যাভিত্তিতে সিএনজি অথবা লেগুনা বা মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে নিতে পারেন। রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া নিবে ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা সারাদিনের জন্য। তবে ভাড়া করার সময় অবশ্যই কথা বলে নিবেন যে একসাথে রাতারগুল এবং বিছনাকান্দি এই দুই জায়গা দেখবেন। একইভাবে লেগুনা রিজার্ভ নিলে ভাড়া পড়বে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে। সিএনজি বা মাইক্রোবাস রিজার্ভ করতে পারবেন সিলেট শহরের আম্বরখানা পয়েন্টের স্ট্যান্ড থেকে আর লেগুনা রিজার্ভ করতে হবে সোবহানীঘাট পয়েন্ট এর শিশুপার্কের সামনের লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে। গাড়ি রিজার্ভ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রওয়ানা দেওয়া ভালো।

এখানে বলে রাখা আপনি দুইভাবে যেতে পারবেন। প্রথমে রাতারগুল পরে বিছনাকান্দি ও পান্তুমাই, কিংবা প্রথমে বিছনাকান্দি ও পান্তুমাই পরবর্তীতে রাতারগুল। ভ্রমণকারীরা সাধারণত প্রথমে রাতারগুল দেখতে চায়। বিকেলটা বিছানাকান্দির স্বচ্চ জলে কাটিয়ে দিবে বলে।

সিলেট থেকে রাতারগুল

সিলেট শহর থেকে রওয়ানা দেওয়ার পর রাতারগুল পৌঁছাতে ১ ঘন্টার একটু বেশি সময় লাগবে। রাতারগুল নৌকাঘাট হচ্ছে তিনটি। মোটরঘাট, মাঝের ঘাট এবং চৌরঙ্গী ঘাট। তিনটি ঘাটের মধ্যে সবচেয়ে শেষের ঘাট চৌরঙ্গী ঘাট। এইখান থেকে  নৌকা ভাড়া তুলনামূলক সস্তা। এক নৌকায় একসাথে ৫ জন উঠা যায়। নৌকাভাড়া ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা। নৌকা দেড় ঘন্টার মত সময় নিয়ে জলাবনে ঘুরাবে। রাতারগুল ঘুরে আবার ঘাটে ফিরে আসুন। এর পরের গন্তব্য বিছানাকান্দি।

বিছানাকান্দি যাওয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে চলে আসতে হবে হাদারপাড় বাজার। এখানে নামার পর আপনি নৌকাঘাট পেয়ে যাবেন। তবে হাদারপাড় পৌঁছানোর তিন কিলোমিটার আগে পীরের বাজারেও চাইলে নেমে যেতে পারেন। পীরের বাজারেও বড় একটা নৌকাঘাট আছে। চাইলে এখান থেকেও আপনি নৌকা নিয়ে বিছনাকান্দি যেতে পারবেন। রাতারগুল থেকে হাঁদারপাড় যেতে দুই ঘন্টা সময় লাগে।

হাদারপাড় বা পীরের বাজার ঘাট থেকে রিজার্ভ নৌকাভাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্তৃক নির্ধারিত ১৫৫০ টাকা। এক নৌকায় যেতে পারবেন ১০ জন। মাঝির সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে ১২ জন পর্যন্ত বসতে পারবেন। ইঞ্জিনচালিত এসব নৌকায় বিছনাকান্দি যেতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট।

বিছানাকান্দিতে ৪০ মিনিট সময় কাটিয়ে নৌকা নিয়ে চলে যান পান্থুমাই এর উদ্দেশ্যে। বিছানাকান্দিতে এর বেশি সময় দিলে পান্থুমাই ভ্রমণের সময় থাকবেনা হাতে। বিছানাকান্দি থেকে পান্থুমাই যেতে নৌকায় ১ ঘন্টা সময় লাগবে।

রাতারগুল
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

কোথায় থাকবেন

আম্বরখানা, দরগাহ গেইট, জিন্দাবাজার এসব এলাকায় অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হিল টাউন, হোটেল ব্রিটানিয়া, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট হোটেল। এখানে ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যাবে।

বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র‍্যান্ড প্যালেস, হোটেল নূরজাহান ইত্যাদি। রুম ভাড়া ৪৫০০ থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে। সিজন অনুযায়ী রুম ভাড়ায় তারতম্য হয়।

একদম সস্তার মধ্যে সিলেট ভ্রমণ এর সময় থাকতে চাইলে দরগাহ গেইট এলাকায় অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার পছন্দমতো হোটেল নিতে পারবেন ওখান থেকে।

কি খাবেন কোথায় খাবেন

বিছনাকান্দিতে দুটি ভাসমান রেস্টুরেন্ট রয়েছে। চাইলে ওখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। খরচ পড়বে জনপ্রতি ১২০ থেকে ২০০ টাকা। মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ভর্তা ইত্যাদি মেনু পাওয়া যাবে এখানে। হাদারপাড় বাজারেও কিছু খাবার দোকান আছে। বেশিরভাগ দোকানেই খিচুড়ি হয় বেশি। দাম পড়বে ৫০-১০০ টাকার মধ্যে।

এছাড়া সিলেট শহরে অনেকগুলো বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসী, ভোজন বাড়ি, পালকি, এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার ভর্তার সাথে আপনার পছন্দ মতো মেনু পাবেন এখানে। খরচ হবে জনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকার মতন। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ২৯ রকমের ভর্তা আছে! চাইলে সকালের নাস্তাও এইসব রেস্টুরেন্টে সেরে নিতে পারবেন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

*নৌকা ও সিএনজি রিজার্ভের সময় ভালোভাবে দরদাম করে নিবেন।
*সাতার না জানলে বেশি পানিতে নামা থেকে বিরত থাকুন।
* বর্ষাকালে পানির প্রবাহ বেশি থাকায় সাঁতার জানলেও গভীর পানিতে না নামাই নিরাপদ।
* দলগতভাবে ভ্রমণ করুন, এতে খরচ অনেকাংশে কম হবে।
*বিছনাকান্দিতে প্রচুর পাথর, হাটাচলার সময় তাই একটু সাবধানে থাকতে হবে। পিচ্ছিল পাথরে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
* স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী থাকুন।
* চেষ্টা করবেন সময়ের ব্যাপারে সচেতন থাকার
*পান্তুমাই ঝর্ণার বেশি কাছে যাবেন না। সীমান্ত এলাকায় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা শ্রেয়।
* রাতারগুলে বর্ষায় বিভিন্ন প্রজাতির সাপ গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। তাই গাছে হাত দেওয়া কিংবা চড়ে বসা থেকে বিরত থাকুন।
* পরিবেশ এবং প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।

অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

সিলেটে রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে গোয়াইনঘাটের জাফলং সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়া জাফলংয়ের কাছে রয়েছে সংগ্রামপুঞ্জী মায়ারী ঝর্ণা। যেটি পিয়াইন নদী পার হয়ে ১৫ কিঃমিঃ হাঁটলেই পাওয়া যাবে। এটি মূলত ভারতের অংশে পড়েছে। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারবেন। অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল। এছাড়া আছে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, বিছানাকান্দির কাছে পান্থুমাই ঝর্ণা। সারি নদীর লালাখাল, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর

আরো পড়ুন

 

 

বিছানাকান্দি

বিছনাকান্দি (Bisnakandi) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে ৩১৫ কিলোমিটার এবং সিলেট থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। । বিছানাকান্দির তিনদিকে মেঘালয়ের সুউচ্চ পাহাড়। সেখান থেকে নেমে আসা অসংখ্য ঝর্ণাধারা, আর যতদুর চোখ যায় শুধু পাথরের সমারোহ। ঝর্ণার পানি যখন পাথরের গায়ে ধাক্কা লেগে প্রবাহিত হয়, তখন কলকল শব্দের মোহনীয় আবেশ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। সেই পাথুরে জলে পা ডুবিয়ে আপনার নিজেকে মনে হবে পৃথিবীর সুখীতম মানব! যেন আকাশের গায়ে পাহাড় হেলান দিয়ে আছে, আর তার পায়ের কাছে আপনি আছেন পাথরের বিছানায়। পড়ুন বিছানাকান্দি ভ্রমণ এর বিস্তারিত গাইডলাইন।

বিছানাকান্দি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সিলেটকে বলা যায় সৌন্দর্যের রাণী। প্রকৃতির অমোঘ টানে সারা বছরই পর্যটকরা বিছানাকান্দি ভ্রমণ এ ছুটে আসেন। তবে এর প্রকৃত রূপ দেখা যায় বর্ষায়। তখন বিছানাকান্দিতে মেঘ ভেসে বেড়ায় যখন তখন। পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা মেঘ আর পূর্ণযৌবনা ঝর্ণাধারার জলে ডুবে থাকা পাথরগুলো এখানে অপার্থিব সৌন্দর্যের জন্ম দেয়। তাই এক কথায় বলা যায় মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিছানাকান্দি ভ্রমণ এর ভালো সময়।

কিভাবে বিছানাকান্দি যাবেন

বিছানাকান্দি যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে সিলেট আসতে হবে। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে বিছনাকান্দি

বিছনাকান্দি যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে সিলেট নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। সেখানে বিমানবন্দর রোডের মুখে সিএনজি স্টেশন রয়েছে। এই স্টেশন থেকে লোকাল সিএনজি যায় হাদারপাড় বাজার পর্যন্ত। ভাড়া জনপ্রতি ১০০-১২০ টাকা। চাইলে আপনি পুরো সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে মাথাপিছু পাঁচজন হিসাব করে যে ভাড়া আসবে তারচেয়ে খানিক বেশি দেওয়া লাগতে পারে। রিজার্ভ নিতে চাইলে সিএনজি ছাড়াও লেগুনা ও মাইক্রোবাস ভাড়া পাবেন। হাদারপাড় বাজারে নামার পর আপনি নৌকাঘাট পেয়ে যাবেন। তবে হাদারপাড় যাওয়ার তিন কিলোমিটার আগে পীরের বাজারেও চাইলে নেমে যেতে পারেন। এখানে অনেক নৌকা নিয়ে বড় একটা নৌকাঘাট আছে। চাইলে এখান থেকেও আপনি নৌকা নিয়ে বিছনাকান্দি যেতে পারবেন। সিলেট শহর থেকে হাঁদারপাড় যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। ফিরতেও একই সময় লাগবে। তাই ট্যুর প্ল্যান করার সময় যাওয়া আসার দীর্ঘ সময়টি হিসেবের মধ্যে রাখুন।

বিছানাকান্দির নৌকা ভাড়া

হাদারপাড় বা পীরের বাজার ঘাট থেকে রিজার্ভ নৌকাভাড়া স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্তৃক নির্ধারিত ১৫৫০ টাকা। এক নৌকায় যেতে পারবেন ১০ জন। মাঝির সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে ১২ জন পর্যন্ত বসতে পারবেন। ইঞ্জিনচালিত এসব নৌকায় বিছনাকান্দি যেতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট। বিছনাকান্দি ঘুরে এসে একইভাবে আপনি সিলেট ফিরতে পারেন হাদারপাড় কিংবা পীরের বাজার থেকে সিএনজি নিয়ে।

সিলেটে কোথায় থাকবেন

বিছানাকান্দি ভ্রমণ এর জন্য সিলেট শহরকে আপনার কেন্দ্রস্থল বিবেচনা করতে হবে। সিলেট শহরে প্রচুর হোটেল রয়েছে। আম্বরখানা, দরগাহ গেইট, জিন্দাবাজার এসব এলাকায় অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হিল টাউন, হোটেল ব্রিটানিয়া, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট হোটেল। এখানে ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যাবে।

বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র‍্যান্ড প্যালেস, হোটেল নূরজাহান ইত্যাদি। রুম ভাড়া ৪৫০০ থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে। সিজন অনুযায়ী রুম ভাড়ায় তারতম্য হয়।

একদম সস্তার মধ্যে সিলেটের দরগাহ গেইট এলাকায় অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার সাধ্যমতন হোটেল ভাড়া করতে পারবেন ওখান থেকে।

কি খাবেন কোথায় খাবেন

বিছনাকান্দিতে দুটি ভাসমান রেস্টুরেন্ট রয়েছে। চাইলে ওখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। খরচ পড়বে জনপ্রতি ১২০ থেকে ২০০ টাকা। মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ভর্তা ইত্যাদি মেনু পাওয়া যাবে এখানে। হাদারপাড় বাজারেও কিছু খাবার দোকান আছে। বেশিরভাগ দোকানেই খিচুড়ি হয় বেশি। দাম পড়বে ৫০-১০০ টাকার মধ্যে।

এছাড়া সিলেট শহরে অনেকগুলো বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসী, ভোজন বাড়ি, পালকি, এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার ভর্তার সাথে আপনার পছন্দ মতো মেনু পাবেন এখানে। খরচ হবে জনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকার মতন। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ২৯ রকমের ভর্তা আছে! চাইলে সকালের নাস্তাও এইসব রেস্টুরেন্টে সেরে নিতে পারবেন।

বিছনাকান্দি ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

*নৌকা ও সিএনজি রিজার্ভের সময় ভালোভাবে দরদাম করে নিবেন।
*সাতার না জানলে বেশি পানিতে নামা থেকে বিরত থাকুন।
* বর্ষাকালে পানির প্রবাহ বেশি থাকায় সাঁতার জানলেও গভীর পানিতে না নামাই নিরাপদ।
* দলগতভাবে ভ্রমণ করুন, এতে খরচ অনেকাংশে কম হবে।
*বিছনাকান্দিতে প্রচুর পাথর, হাটাচলার সময় তাই একটু সাবধানে থাকতে হবে। পিচ্ছিল পাথরে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
* স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী থাকুন।
* চেষ্টা করবেন সন্ধ্যার আগে সিলেট ফিরে আসার।
*চাইলে একইদিনে রাতারগুল এবং বিছনাকান্দি ভ্রমণ করতে পারবেন।
* পরিবেশ এবং প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।

অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

সিলেটে রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে গোয়াইনঘাটের জাফলং সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়া জাফলংয়ের কাছে রয়েছে সংগ্রামপুঞ্জী মায়ারী ঝর্ণা। যেটি পিয়াইন নদী পার হয়ে ১৫ কিঃমিঃ হাঁটলেই পাওয়া যাবে। এটি মূলত ভারতের অংশে পড়েছে। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারবেন। অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল। এছাড়া আছে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, বিছানাকান্দির কাছে পান্থুমাই ঝর্ণা। সারি নদীর লালাখাল,  গোয়াইনঘাটের জাফলং, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। এছাড়া যেতে পারেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট।

আরো পড়ুন

 

রাতারগুল

রাতারগুল দেশের সবচেয়ে বড় সোয়াম্প ফরেস্ট (Ratargul Swamp Forest)। ক্লান্তিকর ব্যস্ততা থেকে খানিক অবকাশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য এটি সিলেটের অসাধারণ একটি জায়গা। অনেকে রাতারগুলকে বাংলার আমাজন নামে অভিহিত করেন। সিলেট শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় এ বনের অবস্থান। অরণ্যের মধ্যে ঘুরে ঘুরে প্রকৃতির আরো নিকটে যেতে হলে আপনাকে ডিঙি নৌকায় চড়তে হবে। কোনো এক বৃষ্টির দিনে ডিঙি নৌকায় রাতারগুলে ঘুরে বেড়ানোর সময় আপনার মনে হবে চমৎকার এক জলে ভাসা জীবন!

প্রাণী বৈচিত্রে ভরপুর এই বনে রয়েছে নানান প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে মাছরাঙা, বিভিন্ন প্রজাতির বক, ঘুঘু, ফিঙে, বালিহাঁস, পানকৌড়ি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বন্যপ্রাণীর মধ্যে আছে— বানর, উদবিড়াল, কাঠবেড়ালি, মেছোবাঘ ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও গুঁইসাপের অভায়শ্রম এই বন।এখানে  ডালে ডালে বিচরণ নানা প্রজাতির পাখি আর বানরের। ভেতরের দিকে কিছু জায়গায় জঙ্গলের গভীরতা এত বেশি যে, সূর্যের আলো গাছের পাতা ভেদ করে জল ছুঁতে পারে না।

কখন রাতাগুল যাবেন

সৌন্দর্যের টানে এখানে কমবেশি সারাবছরই ভ্রমণপিপাসুরা ঘুরতে আসেন। তবে রাতারগুলের প্রকৃত সৌন্দর্যের দেখা মেলে বর্ষাকালে। তখন গাছগুলোর অর্ধেক পানিতে ডুবে থাকে বলে এক মোহনীয় রূপের সৃষ্টি হয়। তাই এককথায় বলা চলে মে থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

কিভাবে রাতারগুল যাবেন

রাতারগুল যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে প্রথমে সিলেট আসতে হবে। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির সিলেট রুটে বাস আছে । এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। আপনি ট্রেনে উঠতে পারবেন ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন থেকেও। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে রাতারগুল

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে সিলেট নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। সেখানে বিমানবন্দর রোডের মুখে সিএনজি স্টেশন রয়েছে। এই স্টেশন থেকে লোকাল সিএনজি যায় রাতারগুল বাজার পর্যন্ত। ভাড়া জনপ্রতি ৬০-৮০ টাকা। চাইলে আপনি পুরো সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে মাথাপিছু ৫ জন হিসাব করে যে ভাড়া আসবে তারচেয়ে খানিক বেশি দেওয়া লাগতে পারে। সময় লাগবে একঘন্টার একটু বেশি।

লোকাল সিএনজিতে এলে রাতারগুল বাজারে নামিয়ে দিবে। সেখান থেকে আপনাকে যেতে হবে রাতারগুল নৌকা ঘাটে। বাজার থেকে ঘাট পর্যন্ত আপনি ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা রিজার্ভ নিতে পারবেন। ভাড়া নিবে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। এছাড়া সিলেট থেকে সিএনজি, লেগুনা ও মাইক্রোবাস রিজার্ভ নিলে সরাসরি ঘাট পর্যন্ত যায়।

রাতারগুল নৌকাঘাট হচ্ছে তিনটি। মোটরঘাট, মাঝের ঘাট এবং চৌরঙ্গী ঘাট। তিনটি ঘাটের মধ্যে সবচেয়ে শেষের ঘাট চৌরঙ্গী ঘাট। এইখান থেকে নৌকা ভাড়া তুলনামূলক সস্তা। এক নৌকায় একসাথে ৫ জন উঠা যায়। নৌকাভাড়া ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা। নৌকা দেড় ঘন্টার মত সময় নিয়ে জলাবনে ঘুরাবে।

সিলেটে কোথায় থাকবেন

রাতারগুল ভ্রমণের জন্য সিলেট শহরকে আপনার কেন্দ্রস্থল বিবেচনা করতে হবে। সিলেট শহরে প্রচুর হোটেল রয়েছে। আম্বরখানা, দরগাহ গেইট, জিন্দাবাজার এসব এলাকায় অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হিল টাউন, হোটেল ব্রিটানিয়া, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট হোটেল। এখানে ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যাবে।

বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র‍্যান্ড প্যালেস, হোটেল নূরজাহান ইত্যাদি। রুম ভাড়া ৪৫০০ থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে। সিজন অনুযায়ী রুম ভাড়ায় তারতম্য হয়।

একদম সস্তার মধ্যে সিলেটের দরগাহ গেইট এলাকায় অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার সাধ্যমতো হোটেল ভাড়া করতে পারবেন ওখান থেকে।

কি খাবেন কোথায় খাবেন

রাতারগুলে দুপুরে খাবার মতো কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। যারা রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট থেকে বিছানাকান্দি যাবেন, তারা বিছানাকান্দিতে লাঞ্চ করতে পারবেন। অন্যথায় খাবারের প্ল্যান সিলেট শহরে রাখাই ভালো। সিলেটে অনেকগুলো বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসী, ভোজন বাড়ি, পালকি, এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার ভর্তার সাথে আপনার পছন্দ মতো মেনু পাবেন এখানে। খরচ হবে জনপ্রতি ১২০ থেকে ২৫০ টাকার মতন। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ২৯ রকমের ভর্তা আছে! চাইলে সকালের নাস্তাও এইসব রেস্টুরেন্টে সেরে নিতে পারবেন।

সাবধানতা ও টিপস

রাতারগুল বেড়ানোর উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। তখন বনের চারিদিকে জলে পূর্ণ থাকে বলে ভ্রমণকালীন সময় কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বর্ষায় বন ডুবে গেলে বেশিরভাগ সাপ আশ্রয় নেয় গাছের ডাল কিংবা শুকনো অংশে। তাই চারপাশ খেয়াল করে চলতে হবে। এ ছাড়া এ সময় জোঁকেরও উপদ্রব আছে। সাঁতার না জানলে সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখা জরুরি। এ ছাড়া ছাতা সাথে রাখা ভালো। যেকোনোসময় যেকোথাও ভ্রমণের সময় একটা ব্যাপার মাথায় রাখবেন, কোনো অবস্থাতেই স্থানীয়দের সাথে খারাপ আচরণ করা যাবেনা। পৃথিবীর যে প্রান্তেই ভ্রমণ করুন – স্থানীয়দের প্রতি বিনয়ী থাকুন।

অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

সিলেটে রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে গোয়াইনঘাটের জাফলং সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়া জাফলংয়ের কাছে রয়েছে সংগ্রামপুঞ্জী মায়ারী ঝর্ণা। যেটি পিয়াইন নদী পার হয়ে ১৫ কিঃমিঃ হাঁটলেই পাওয়া যাবে। এটি মূলত ভারতের অংশে পড়েছে। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারবেন। অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল। এছাড়া আছে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, বিছানাকান্দির কাছে পান্থুমাই ঝর্ণা। সারি নদীর লালাখাল,  গোয়াইনঘাটের জাফলং, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। এছাড়া যেতে পারেন গোয়াইনঘাট এর বিছানাকান্দি

আরো পড়ুন

 

Exit mobile version