নুহাশ পল্লী (Nuhash Polli) গাজীপুর জেলার পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত। গাজীপুর জেলা সদর থেকে নুহাশ পল্লীর দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর স্মৃতিবিজড়িত এই পল্লীটি প্রায় ৪০ বিঘা জমির উপর নির্মিত। উনার বড় ছেলে নুহাশ এর নাম অনুসারে এই পারিবারিক অবসর যাপন কেন্দ্র ও শুটিং স্পট এর নাম রাখা হয়। জীবনের দীর্ঘ একটা সময় তিনি এখানে কাটিয়েছেন। এখানকার প্রতিটি স্থাপনায় মিশে আছে তাঁর ছোঁয়া এবং ভালোবাসা। নুহাশ পল্লী বিভিন্ন ভাবে এসেছে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যে, নাটকে, সিনেমায়। কিংবদন্তী এই সাহিত্যিক চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন এখানকার লিচুতলায়।
কোনো এক বৃষ্টির দিনে সারাটা দিন শালবনের ভিতরে এই পল্লীতে কাটিয়ে দিতে খারাপ লাগবেনা। কদমের ঘ্রাণ এসে নাকে লাগবে। হয়তো কোথাও থেকে মৃদু সুরে ভেসে আসতে পারে ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো…!’ একদিনের ডে ট্যুরে ঢাকা থেকে ঘুরে আসতে পারেন নুহাশ পল্লী থেকে।
কী দেখবেন
নুহাশ পল্লীর মূল ফটক পেরোলে সবুজ ঘাস এর গালিচা। শান্ত সৌম্য পরিবেশ। চারদিকে পরিকল্পিত ভাবে লাগানো প্রচুর ফলজ বনজ ঔষুধি ও মশলা জাতীয় বৃক্ষ। প্রত্যেকটি গাছে সাঁটানো আছে গাছের পরিচিতি ফলক। বৃক্ষরাজির ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন অবকাঠামো, কাঠের কটেজ, সুইমিংপুল। আরো কিছদূর এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে টিনশেড এর ঘর বৃষ্টিবিলাস! ঝড় বৃষ্টির দিনে টিনের চালের মাতাল করা ঝমঝম শব্দ শুনতেই লেখকের এই আয়োজন। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে এখানে ভূত বিলাস নামের আরেকটি কটেজ। তার পাশেই লীলাবতী দীঘি। মাঝখানে দ্বীপ। কাঠের সাঁকো পার হয়ে দ্বীপে যাওয়া যায়। এখানককার সবকিছুতে আপনি হুমায়ূন আহমেদ এর অস্তিত্ব অনুভব করবেন।
কিভাবে যাবেন নুহাশ পল্লী
নুহাশ পল্লী যাওয়ার জন্য ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে গাজীপুর চৌরাস্তা আসতে হবে। এরপর গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে যেতে হবে ময়মনসিংহ রোডের হোতাপাড়া। ঢাকা থেকে সরাসরি ময়মনসিংসগামী বাসে উঠলে হোতাপাড়া নামা যায়। এছাড়া ঢাকা থেকে কাপাসিয়াগামী বাসেও হোতাপাড়া নামতে পারবেন। ঢাকা থেকে হোতাপাড়ার বাস ভাড়া ৬০ থেকে ৮০ টাকা। উল্লেখ্য ময়মনসিংহ বা কাপাসিয়ার বাসগুলো গাজীপুর চৌরাস্তায় অনেকক্ষণ দেরী করে।
হোতাপাড়া থেকে নুহাশ পল্লী যাওয়ার জন্য সিএনজি, লেগুনা বা ব্যাটারি চালিত রিকশা পাওয়া যায়। সিএনজি ভাড়া নিবে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। আর লেগুনাতে ভাড়া পড়বে ৪০ টাকার মতো। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে হোতাপাড়ার দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। আর হোতাপাড়া থেকে নুহাশ পল্লীর দূরত্ব ৮ কিলোমিটারের মতো।
দর্শনার্থী প্রবেশ ফি
নুহাশ পল্লী ভ্রমণের জন্য আগে থেকে কোনো অনুমতির প্রয়োজন পড়েনা। ১২ বছরের উপরের সবার ক্ষেত্রে প্রবেশ ফি ২০০ টাকা। ১২ বছরের নিচের শিশুদের জন্য কোনো প্রবেশ ফি নেই। ড্রাইভারদেরও কোনো প্রবেশ ফি দিতে হয়না। এই টাকাটা মূলত হুমায়ূন আহমেদের নির্মিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠ এর ব্যায় নির্বাহের জন্য খরচ হয়। আর কেউ হুমায়ূন আহমেদ এর কবর জিয়ারত করতে চাইলে তার জন্য কোনো প্রবেশ ফি নেই। মূল ফটকের বাইরে বাম দিকে আরেকটি ফটক আছে। সেদিক দিয়ে প্রবেশ করে যে কেউ কবর জিয়ারত করতে পারবেন।
কোথায় খাবেন
নুহাশ পল্লীর ভিতরে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে বাইরে কিছু ঝুপড়ি দোকান আছে। সেখানে চা সহ মোটামুটি মানের শুকনো খাবার পাওয়া যায়। কেউ চাইলে সাথে করে খাবার নিয়ে যেতে পারবেন। নইলে দুপুরের খাবারের জন্য হোতাপাড়া বাজারে আসতে হবে।
নুহাশ পল্লী থাকার ব্যবস্থা
রাতে থাকার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই নুহাশ পল্লীতে। তবে বৃষ্টি বিলাস’এ সবার জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা আছে। আর ভূত বিলাস নামের বাংলো বিশ্রামের জন্য নিতে চাইলে ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। এছাড়া ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো জায়গা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো কেরানিগঞ্জের সারি ঘাট, বালিয়াটি জমিদার বাড়ি, চৌদ্দার চর ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। নুহাশ পল্লী সম্পর্কে আরো নির্দিষ্ট কোনো তথ্য আপনার জানা থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।