নুহাশ পল্লী

নুহাশ পল্লী (Nuhash Polli) গাজীপুর জেলার পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত। গাজীপুর জেলা সদর থেকে নুহাশ পল্লীর দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর স্মৃতিবিজড়িত এই পল্লীটি প্রায় ৪০ বিঘা জমির উপর নির্মিত। উনার বড় ছেলে নুহাশ এর নাম অনুসারে এই পারিবারিক অবসর যাপন কেন্দ্র ও শুটিং স্পট এর নাম রাখা হয়। জীবনের দীর্ঘ একটা সময় তিনি এখানে কাটিয়েছেন। এখানকার প্রতিটি স্থাপনায় মিশে আছে তাঁর ছোঁয়া এবং ভালোবাসা। নুহাশ পল্লী বিভিন্ন ভাবে এসেছে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যে, নাটকে, সিনেমায়। কিংবদন্তী এই সাহিত্যিক চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন এখানকার লিচুতলায়।

কোনো এক বৃষ্টির দিনে সারাটা দিন শালবনের ভিতরে এই পল্লীতে কাটিয়ে দিতে খারাপ লাগবেনা। কদমের ঘ্রাণ এসে নাকে লাগবে। হয়তো কোথাও থেকে মৃদু সুরে ভেসে আসতে পারে ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো…!’ একদিনের ডে ট্যুরে ঢাকা থেকে ঘুরে আসতে পারেন নুহাশ পল্লী থেকে।

কী দেখবেন

নুহাশ পল্লীর মূল ফটক পেরোলে সবুজ ঘাস এর গালিচা। শান্ত সৌম্য পরিবেশ। চারদিকে পরিকল্পিত ভাবে লাগানো প্রচুর ফলজ বনজ ঔষুধি ও মশলা জাতীয় বৃক্ষ। প্রত্যেকটি গাছে সাঁটানো আছে গাছের পরিচিতি ফলক। বৃক্ষরাজির ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন অবকাঠামো, কাঠের কটেজ, সুইমিংপুল। আরো কিছদূর এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে টিনশেড এর ঘর বৃষ্টিবিলাস! ঝড় বৃষ্টির দিনে টিনের চালের মাতাল করা ঝমঝম শব্দ শুনতেই লেখকের এই আয়োজন। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে এখানে ভূত বিলাস নামের আরেকটি কটেজ। তার পাশেই লীলাবতী দীঘি। মাঝখানে দ্বীপ। কাঠের সাঁকো পার হয়ে দ্বীপে যাওয়া যায়। এখানককার সবকিছুতে আপনি হুমায়ূন আহমেদ এর অস্তিত্ব অনুভব করবেন।

কিভাবে যাবেন নুহাশ পল্লী

নুহাশ পল্লী যাওয়ার জন্য ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে গাজীপুর চৌরাস্তা আসতে হবে। এরপর গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে যেতে হবে ময়মনসিংহ রোডের হোতাপাড়া। ঢাকা থেকে সরাসরি ময়মনসিংসগামী বাসে উঠলে হোতাপাড়া নামা যায়। এছাড়া ঢাকা থেকে কাপাসিয়াগামী বাসেও হোতাপাড়া নামতে পারবেন। ঢাকা থেকে হোতাপাড়ার বাস ভাড়া ৬০ থেকে ৮০ টাকা। উল্লেখ্য ময়মনসিংহ বা কাপাসিয়ার বাসগুলো গাজীপুর চৌরাস্তায় অনেকক্ষণ দেরী করে।

হোতাপাড়া থেকে নুহাশ পল্লী যাওয়ার জন্য সিএনজি, লেগুনা বা ব্যাটারি চালিত রিকশা পাওয়া যায়। সিএনজি ভাড়া নিবে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। আর লেগুনাতে ভাড়া পড়বে ৪০ টাকার মতো। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে হোতাপাড়ার দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। আর হোতাপাড়া থেকে নুহাশ পল্লীর দূরত্ব ৮ কিলোমিটারের মতো।

দর্শনার্থী প্রবেশ ফি

নুহাশ পল্লী ভ্রমণের জন্য আগে থেকে কোনো অনুমতির প্রয়োজন পড়েনা। ১২ বছরের উপরের সবার ক্ষেত্রে প্রবেশ ফি ২০০ টাকা। ১২ বছরের নিচের শিশুদের জন্য কোনো প্রবেশ ফি নেই। ড্রাইভারদেরও কোনো প্রবেশ ফি দিতে হয়না। এই টাকাটা মূলত হুমায়ূন আহমেদের নির্মিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠ এর ব্যায় নির্বাহের জন্য খরচ হয়। আর কেউ হুমায়ূন আহমেদ এর কবর জিয়ারত করতে চাইলে তার জন্য কোনো প্রবেশ ফি নেই। মূল ফটকের বাইরে বাম দিকে আরেকটি ফটক আছে। সেদিক দিয়ে প্রবেশ করে যে কেউ কবর জিয়ারত করতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

নুহাশ পল্লীর ভিতরে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে বাইরে কিছু ঝুপড়ি দোকান আছে। সেখানে চা সহ মোটামুটি মানের শুকনো খাবার পাওয়া যায়। কেউ চাইলে সাথে করে খাবার নিয়ে যেতে পারবেন। নইলে দুপুরের খাবারের জন্য হোতাপাড়া বাজারে আসতে হবে।

নুহাশ পল্লী থাকার ব্যবস্থা

রাতে থাকার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই নুহাশ পল্লীতে। তবে বৃষ্টি বিলাস’এ সবার জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা আছে। আর ভূত বিলাস নামের বাংলো বিশ্রামের জন্য নিতে চাইলে ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। এছাড়া ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো জায়গা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো কেরানিগঞ্জের সারি ঘাট, বালিয়াটি জমিদার বাড়ি, চৌদ্দার চর ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। নুহাশ পল্লী সম্পর্কে আরো নির্দিষ্ট কোনো তথ্য আপনার জানা থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।

আরো পড়ুন

গোলাপ গ্রাম

ডে ট্যুর এ ঢাকার কাছাকাছি যারা বেড়াতে পছন্দ করেন তাদের জন্য চমৎকার একটি স্থান হতে পারে গোলাপ গ্রাম। তুরাগ নদীর পাড়ে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাহপুর গ্রামই মূলত গোলাপ গ্রাম। খুব কম সময়ে এবং কম খরচে ঢাকা থেকে এখানে ঘুরে আসতে পারবেন। শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তির জন্য মাঝে মাঝে আমাদের কিছুটা বিশ্রামের দরকার পড়ে। সেজন্য সবসময় দূরে কোথাও যেতে হবে এমন কথা নেই। মাঝে মাঝে বেড়িয়ে আসা যায় কাছে ধারের কোনো স্থান থেকে। ঢাকার কাছাকাছি জায়গাগুলোর মধ্যে বর্তমানে গোলাপ গ্রাম খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

কিভাবে যাবেন গোলাপ গ্রাম

বিভিন্ন রুট দিয়ে গোলাপ গ্রাম যাওয়া যায়। এর মধ্যে ঢাকার মিরপুর বা উত্তরা দিয়ে যাওয়াটা সুবিধাজনক। যারা মিরপুর দিয়ে যেতে চান তারা ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে মিরপুর ১ আসতে হবে। মিরপুর ১ থেকে রিকশায় দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট। মাথায় রাখতে হবে এটা মিরপুরের দিয়াবাড়ি, উত্তরার দিয়াবাড়ি না। দিয়াবাড়ি ঘাট থেকে প্রতি ১০ মিনিট পরপর সাদুল্লাহপুরের নৌকা ছাড়ে। যেতে সময় লাগবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। লোকাল নৌকায় ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩০ টাকা। রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

উত্তরা থেকে যেতে চাইলে প্রথমে উত্তরা দিয়াবাড়ি আসতে হবে। উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এর সামনে থেকে দিয়াবাড়ির লেগুনা পাওয়া যায়। দিয়াবাড়ি থেকে লোকাল ট্রান্সপোর্টে করে যেতে হবে বিরুলিয়া ব্রিজ। সেখান থেকে ২০ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে চলে আসুন সাদুল্লাহপুর। চাইলে বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে নৌকায় করেও সাদুল্লাহপুর আসা যাবে। রিজার্ভ নৌকা ভাড়া পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এক নৌকায় অনায়াসেই ২০ জন বসা যায়।

টঙ্গী থেকে আসতে চাইলে টঙ্গীর কামারপাড়া হয়ে সিএনজি নিয়ে চলে আসুন বিরুলিয়া ব্রিজ। সেখান থেকে একই ভাবে আসতে হবে সাদুল্লাপুর। সাভার থেকে আসতে চাইলে আলিফ বা মোহনা পরিবহনে করে বিরুলিয়া ব্রিজ নামা যাবে।

সাদুল্লাপুর নেমে হেঁটেই গোলাপ গ্রাম ঘুরে দেখা যাবে। অথবা ঘুরে দেখার জন্য ঘন্টা হিসেবে রিকশাও নিতে পারেন। রিকশা ভাড়া পড়বে ঘন্টাপ্রতি ১০০ টাকা।

কি দেখবেন

পুরো গ্রামটাই এখানে গোলাপ গোলাপের বাগান দিয়ে ভরে আছে। লাল হলুদ সাদা সহ বিভিন্ন রঙের গোলাপ ফুটে থাকে বাগানগুলোতে। এখানে শুধু গোলাপ নয়- আছে রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারাভারা সহ বিভিন্ন জাতের ফুল। প্রতিদিন সন্ধ্যায় গোলাপের হাট বসে। শাহবাগ সহ ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তের ফুল ব্যবসায়ীরা কেনাকাটার জন্য এখানে আসেন। গ্রামীন পরিবেশে এখানে নানান জাতের ফুলের বাগান আপনাকে মুগ্ধ করবে।

যারা বিরুলিয়া ব্রিজ বা মিরপুরের দিয়াবাড়ি থেকে নৌকায় করে সাদুল্লাপুর যাবেন, তারা নৌপথের ভ্রমণটাও উপভোগ করতে পারবেন। নদীপথে যাওয়ার সময় দুইপাশে ফসলি জমি, শস্যক্ষেত আর হাঁসের খামার পড়বে।

কখন যাবেন গোলাপ গ্রাম

সাদুল্লাহপুরে সারা বছর ফুলের চাষ হয়। সারা বছরই কমবেশি ফুল ফোটে। তাই বছরের যেকোনো সময় গেলেই ফুলের দেখা পাবেন। তবে গোলাপ ফোটার উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল। তখন সবগুলো বাগান হরেক রঙের ফুলে ভরে থাকে। ফুলগুলো আকারে বড় থাকে। এই সময় গোলাপ গ্রাম ভ্রমণ এ গেলে বেশি ভালো লাগবে।

কোথায় খাবেন

খাবার জন্য সাদুল্লাপুর ঘাটের কাছে কয়েকটি সাধারণ মানের দোকান আছে। সেখানে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। বেশি মানুষ একসাথে গেলে সেখানে খাবার নাও পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে গিয়ে সাথে সাথে খাবার অর্ডার করলে কিছুটা সময় নিয়ে খাবার রান্না করে দিবে। আর স্ন্যাকস জাতীয় খাবারের জন্য অনেকগুলো ঝুপড়ি চা এর দোকান আছে। সেখানে হালকা খাবার খেতে পারবেন।

ভ্রমণ টিপস ও পরামর্শ

গোলাপ গ্রাম গিয়ে বাগান থেকে গোলাপ ছিঁড়বেন না। আপনার প্রয়োজন হলে সেখান থেকে গোলাপ কিনে নিতে পারবেন। গ্রামের মানুষ বিরক্ত হয়, কিংবা গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হয়, এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সেখানে ভালো খাবারের দোকান নেই। চাইলে সাথে করে খাবার নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু খাবারের খালি প্যাকেট বা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে আসবেন না। মনে রাখতে হবে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাই সন্ধ্যার মধ্যেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করুন।

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর

ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো বালিয়াটি জমিদার বাড়ি, কেরানিগঞ্জের সারি ঘাট,  চৌদ্দার চর ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। গোলাপ গ্রাম সম্পর্কে আরো নির্দিষ্ট কোনো তথ্য আপনার জানা থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।

আরো পড়ুন

বালিয়াটি জমিদারবাড়ি, মানিকগঞ্জ

রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলায় বালিয়াটি জমিদার বাড়ি অবস্থিত। ১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর বালিয়াটি প্রাসাদকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে। এই বিখ্যাত জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয় গোবিন্দ রাম সাহার হাত ধরে। ২শ বছর আগে ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ছিলেন লবণের বণিক। জমিদার পরিবারে অনেক উত্তরাধিকার ছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কিশোরিলাল রায় চৌধুরী, রায়বাহাদুর হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী। শিক্ষাখাতে তাদের অবদান বিশেষ ভাবে উল্লেখ করার মতো। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ (পরবর্তীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কিশোরিলাল রায় চৌধুরীর পিতা এবং যার নামানুসারে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়।

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি (Baliaati zamindar Bari) নামে পরিচিত এই ঐতিহাসিক স্থাপনা ৭ টি দালান নিয়ে গঠিত। সামনের চারটি প্রসাদ ব্যবহৃত হত ব্যবসায়িক কাজে। পেছনের প্রাসাদকে বলা হয় অন্দর মহল যেখানে জমিদার পরিবারের সদস্যরা বসবাস করতেন। পুরো চত্বরের আয়তন প্রায় ১৬,৫৫৪ বর্গমিটার। এই দালানগুলো একসাথে স্থাপিত হয়নি। উত্তরাধিকারগণ ১৯ শতকের মাঝামাঝি থেকে ২০ শতকের শুরুর সময়কালে নির্মান করেন।  বর্তমানে এটি বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত ও পরিচালিত।

কিভাবে যাবেন বালিয়াটি জমিদার বাড়ি

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া আসতে হবে। ঢাকার গাবতলী থেকে পাটুরিয়া, আরিচা বা মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসে উঠে মানিকগঞ্জের ৮ কিমি আগেই সাটুরিয়া বাসস্টপে নামতে হবে। ভাড়া লাগবে ৩৫-৪০ টাকা। আর মানিকগঞ্জ থেকে সাটুরিয়া যেতে চাইলে শুভযাত্রা, পল্লীসেবা, শুকতারা ইত্যাদি বাসে চড়ে চলে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ২০ টাকার মত। সাটুরিয়া বাসস্টপে থেকে ১২ কিমি দূরে এই বালিয়াটি জমিদার বাড়ির অবস্থান। সাটুরিয়া থেকে যেতে হবে সাটুরিয়া জিরো পয়েন্ট। জিরো পয়েন্ট এর ১ কিলোমিটারের মধ্যেই বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। সাটুরিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি নিয়েও যেতে পারবেন। এছাড়া নিজস্ব গাড়ি নিয়েও ঘুরে আসতে পারেন এই ঐতিহাসিক স্থান।

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি প্রবেশের সময়সীমা

গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) বালিয়াটি জমিদারবাড়ি খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ০৬টা পর্যন্ত। শীতকালে (অক্টোবর থেকে মার্চ) সকাল ০৯টা থেকে বিকেল ০৫টা পর্যন্ত খোলা পাবেন। আর প্রতিদিন দুপুর ০১টা থেকে ০১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং শুক্রবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত নামাজ ও খাবারের বিরতি চলে। ঐ সময়টু অফিস কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি রবিবার পূর্ণদিবস আর সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও বন্ধ থাকে।

প্রবেশ ফি: জমিদার বাড়িতে প্রবেশ ফি জনপ্রতি ২০ টাকা। বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য এই ফি ২০০ টাকা। আর সার্কভূক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ১০০ টাকা।

কোথায় খাবেন?

জমিদার বাড়ির আশেপাশে খাওয়ার জন্য বেশকিছু রেস্টুরেন্ট ও হোটেল রয়েছে। বাস থেকে সাটুরিয়া নেমে স্থানীয় খাবার হোটেল আছে। মোটামুটি ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়। ১২০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। খাবারের মেনু হিসেবে ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ডাল সবজি ইত্যাদি পাবেন।

কোথায় থাকবেন?

ঢাকা থেকে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে যায়। তারপরও কেউ থাকতে চাইলে মানিকগঞ্জে গিয়ে থাকতে পারবেন। মানিকগঞ্জে থাকার জন্য কিছু হোটেল ও গেস্ট হাউজ আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মানিকগঞ্জ রেসিডেনসিয়াল বোর্ডিং, নবীন রেসিডেনসিয়াল বোর্ডিং, জেলা পরিষদ বোর্ড হাউজ (সরকারি)।

ভ্রমণ টিপস ও পরামর্শ

হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ  সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে পারে। তাই  ভ্রমনে যাওয়ার আগে সর্বশেষ ভাড়া ও খরচ সম্পর্কে জেনে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। ঢাকা থেকে যাতায়তের ক্ষেত্রে রাস্তায় জ্যামের হিসেব করে বের হবেন। ডে ট্যুরে কোথাও গেলে সকাল সকাল বের হয়ে যাওয়াই উত্তম। ভ্রমণে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে আসবেন না। পাশের জনকেও এই বিষয়ে সতর্ক করুন। এটা অভ্যাসের বিষয়।

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর

ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো কেরানিগঞ্জের সারি ঘাট, গাজীপুর এর বেলাই বিল,  সাভারের সাদুল্লাপুর এর গোলাপগ্রাম ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি সম্পর্কে আরো নির্দিষ্ট কোনো তথ্য আপনার জানা থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।

আরো পড়ুন

পদ্মা রিসোর্ট

মুন্সীগঞ্জ জেলার পদ্মা নদীর পাড়ে গড়ে উঠা নয়নাভিরাম একটি রিসোর্টের নাম পদ্মা রিসোর্ট। যারা কর্মব্যস্ত শহরের গন্ডি পেরিয়ে কিছুটা সময় প্রকৃতি আর নদীর সান্নিধ্যে কাটাতে চান তাদের জন্য এটি আদর্শ একটি স্থান। জীবনের শত ধরাবাঁধা নিয়ম, শব্দ আর বায়ুদূষন, নাগরিক কোলাহল থেকে কিছুটা প্রশান্তি এনে দিতে পারে পদ্মা নদীর মাঝখানে জেগে উঠা চরে গড়া নির্মিত এই পদ্মা রিসোর্ট। পরিবার নিয়ে কিংবা বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠার জন্য এটি আদর্শ একটি জায়গা। ঢাকা থেকে পদ্মা রিসোর্ট এর দূরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার। সাথে গাড়ি থাকলে যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টা। পদ্মা রিসোর্ট গড়ে উঠেছে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার লৌহজং থানার পাশে পদ্মা নদীর বুকে।

কিভাবে যাবেন পদ্মা রিসোর্ট

পদ্মা রিসোর্টে যেতে হলে ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে লৌহজং আসতে হবে। ঢাকার গুলিস্তান থেকে ছেড়ে আসা গাংচিল অথবা ইলিশ পরিবহনে সরাসরি লৌহজং থানা মসজিদ পর্যন্ত আসতে পারবেন। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৭০ টাকা। মিরপুর ১০, ফার্মগেট বা শাহবাগ থেকে যেতে পারবেন স্বাধীন পরিবহনে। অথবা মাওয়া ঘাট রুটের বাস ‘গ্রেট বিক্রমপুর’ কিংবা ‘গোধুলী’ গেলে নামতে হবে মাওয়া ঘাটের আগেই লৌহজং থানায় যাওয়ার চৌরাস্তার মোড়ে। সেখান থেকে রিকশা বা অটোরিকশাতে ১৫ মিনিটের পথ। আর নিজের গাড়ি নিয়ে গেলে সরাসরিই যাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে দুই জায়গায় ৬০ টাকা টোল দিতে হবে।

পদ্মা রিসোর্টে যা আছে

এখানে রিসোর্টের বাইরে আছে বিচ চেয়ার। যেখানে হেলান দিয়ে আপনি উপভোগ করতে পারবেন পদ্মা পারের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। পদ্মা রিসোর্টের রয়েছে নিজস্ব ঘোড়া। ঘোড়ায় চড়েও আপনি ঘুরে বেড়াতে পারবেন চাইলে। রিসোর্টের ভিতরে বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে আছে সুসজ্জিত রেস্টুরেন্ট। এখানে ১২০ জন পর্যন্ত বসতে পারে। যারা নৌকা ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি ভালো একটি জায়গা। রিসোর্টের নিজস্ব স্পিডবোট ও রিভারক্রুজের ব্যবস্থা আছে। কান্ট্রিবোটে উঠা যায় একসাথে ২০/২৫ জন। আর যাদের নদীতে মাছ ধরার শখ আছে তারা ফিশিং বোটেও চড়তে পারেন। সব বোটেই সেফটি কিট হিসেবে লাইফ জ্যাকেট আছে।

খাবারের ব্যবস্থা

খাবারের জন্য পদ্মা রিসোর্টে দৃষ্টিনন্দন রেস্টুরেন্ট আছে। সুপরিসর জায়গা নিয়ে করা এই রেস্টুরেন্টে অনায়াসে ২০০ জন মানুষ খেতে পারে। আপনি চাইলে এখানে লাঞ্চ বা ডিনার পার্টির আয়োজন করতে পারবেন। রেস্টুরেন্টে ঢোকার আগে ৩৫০টাকা দিয়ে ফুড টোকেন সংগ্রহ করতে হবে রিসোর্ট অফিস থেকে। লাঞ্চে থাকবে ভাত, ডাল, ইলিশ ফ্রাই, মুরগীর মাংস, সবজি সালাদ। আলাদা ভাবে কিনতে হবে মিনারেল ওয়াটার। দাম পড়বে প্রতি লিটার ৪০ টাকা। আর সকালের নাস্তায় খরচ পড়বে জনপ্রতি ১০০ টাকা। মেনু হিসেবে থাকবে পরোটা, সবজি, ডিম, চা।

পদ্মা রিসোর্ট থাকার খরচ

সারাদিন থাকতে চাইলে এখানে কটেজ ভাড়া পড়বে ভ্যাটসহ ২৩০০ টাকা। সারাদিন এবং একরাত কাটাতে চাইলে ভ্যাটসহ গুনতে হবে ৩৪৫০ টাকা। পদ্মায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য স্পিডবোট নিলে ঘন্টাপ্রতি পড়বে ২৫০০ টাকা। সাম্পান নৌকায় ১২০০ টাকা। আর ট্রলারে খরচ হবে ১২০০ টাকা।

পদ্মা রিসোর্ট এর কটেজ সমূহ

থাকার জন্য এখানে ১৬ টি ডুপ্লেক্স কটেজ আছে। এর মধ্যে ১২টির নামকরণ করা হয়েছে বাংলা ১২ মাসের নামে। আর বাকি ৪টা ঋতুর নামে। প্রতিটি কটেজে একটি মাস্টারবেড রুম, দুইটি সিঙ্গেল বেডরুম, এবং একটি ড্রয়িংরুম আছে। আছে দুইটি ব্যালকনি এবং একটি বাথরুম। একটি কটেজে সর্বোচ্চ ৮ জন থাকতে পারবেন। কটেজের চাল দেওয়া হয়েছে সুন্দরী পাতা দিয়ে। ডুপ্লেক্স এইসব কটেজের নিচতলায় রয়েছে একসেট সোফা, টেবিল এবং একটি সিঙ্গেল বেড। শীতে এখানে বাহারী রঙের ফুল ফোটে। আর বর্ষায় পদ্মার অপরূপ রূপ দেখা যাবে রিসোর্টে বসেই।

ভ্রমণ টিপস

পদ্মা রিসোর্ট ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় এখানে প্রচুর পর্যটক ঘুরতে আসে। তাই আসার জন্য আগে থেকে বুকিং দিয়ে আসলে বিড়ম্বনায় পড়তে হবেনা। পর্যটন সম্পর্কিত হোটেল রিসোর্ট সমূহের ভাড়া, যানবাহন ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ পরিবর্তিত হতে পারে সময়ের সাথে। তাই ভ্রমণ পরিকল্পনা করার আগে সর্বশেষ খরচ সম্পর্কে জেনে নিন।

যোগাযোগ
পদ্মা রিসোর্ট, লৌহজং – মুন্সীগঞ্জ
ফোন: 01712-170330, 01625-788920
ইমেইল: info@padmaresort.net
ফেসবুক : fb.com/ATrueFamilyVacation

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর

ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো সাভারের সাদুল্লাপুর এর গোলাপ গ্রাম, দোহারের মৈনট ঘাট, কেরানিগঞ্জের সারি ঘাট,  ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ।

আরো পড়ুন

ছুটি রিসোর্ট

ছুটি রিসোর্ট এর অবস্থান ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ঘেঁষে গাজীপুরের সুকুন্দি গ্রামে। প্রায় ৫০ বিঘা জায়গা নিয়ে এই রিসোর্টটি গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে নৌ ভ্রমণ এর ব্যবস্থা। বিরল প্রজাতির বৃক্ষরাজির সমন্বয়ে গড়ে উঠা এখানকার সংরক্ষিত বনে তাঁবু টানানো আছে। এখানকার দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে নানান মৌসুমি ফল। যেগুলো বিনামূল্যে সরবরাহ করে কতৃপক্ষ। অতিথিদেরকে সকালে পরিবেশন করা চালের রুটি অথবা চিতই পিঠা। সাথে সবজি ডাল ভুনা আর মুরগির মাংস। খুব কাছ থেকে বিল ঝিলের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন এখানে। ছুটি রিসোর্ট এর বড় আকর্ষণ এখানকার মাছ ধরার ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট ফি এর বিনিময়ে রিসোর্টের লেকে মাছ ধরতে পারবেন। এইসব আয়োজন আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে নিজের শৈশবে!

কিভাবে যাবেন ছুটি রিসোর্ট

ছুটি রিসোর্ট যাওয়ার জন্য প্রথমে গাজীপুর চৌরাস্তা আসতে হবে। সেখান থেকে নিজস্ব পরিবহন বা যাত্রীবাহী বাসে করে গাজীপুর ডিসি অফিস (রাজবাড়ী) এর সামনে আসতে হবে। সেখান থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে আমতলী বাজারের কাছে সুকুন্দি গ্রামে সুকুন্দি গ্রামে ছুটি রিসোর্ট এর অবস্থান।

কি দেখবেন

দৃষ্টিনন্দন এই রিসোর্টে রয়েছে ছনের ঘর, রেগুলার কটেজ, বার্ড হাউজ, মাছ ধরার ব্যবস্থা, আধুনিক রেস্টুরেন্ট, ঔষুধি গাছের বাগান, অর্গানিক ফলের বাগান, ফুল বাগান ইত্যাদি। এছাড়া দুইটি খেলার মাঠ, দুইটি পিকনিক স্পট, গ্রামীণ পিঠা ঘর। এখানে সারাদিন পাখির ডাক শোনা যাবে। সন্ধ্যা নামলে জোনাকি পোকার মিছিল, ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। জোছনা রাতে এই রিসোর্টটি আপনার আরো ভালো লাগবে। রিসোর্টের নিয়ম অনুসারে এখানে জোছনা রাতে বাইরের বাতি জ্বালানো হয়না! জোছনা রাত কিংবা বৃষ্টির সময় এখানে একটা রাত কাটানো যেতেই পারে!
ছুটি রিসোর্ট এর ভিতরে রয়েছে একাধিক বড় লেক। এগুলো দেখলে মনে হবে বিশাল আকারের কোনো বিল ঝিল! দর্শনার্থীদের জন্য এখানে ক্রিকেট ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা আছে।

কোথায় খাবেন

ছুটি রিসোর্টে ট্রেডিশনাল বাংলা খাবার, ইন্ডিয়ান, থাই, চাইনিজ খাবারের জন্য রয়েছে দীঘির জল লেকভিউ রেস্তোরা। এছাড়া স্ন্যাক্স, বারবিকিউ, জুস কিংবা ট্রেডিশনাল পিঠার জন্য এখানে একটি ক্যাফে পুল রয়েছে। স্পেশাল অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য এখানে আছে ছায়াবিথী হল। সেখানে আপনার মতো খাবার কাস্টমাইজ করতে পারবেন।

ছুটি রিসোর্ট এ থাকার খরচ

থাকার জন্য মোট ১১ ধরণের রুম আছে ছুটি রিসোর্টে। এখানে আপনি আপনার পছন্দমতো রুম বেছে নিতে পারবেন। রুম গুলোর ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে উডেন কটেজ, ঐতিহ্য কটেজ, ডুপ্লেক্স ভিলা, ডিলাক্স টুইন, ভাওয়াল কটেজ, ফ্যামিলি কটেজ, এক্সিকিউটিভ স্যুইট কিংবা প্লাটিনাম কিং। এই রিসোর্ট এর সবচেয়ে ব্যায়বহুল রুমটির নাম রয়েল স্যুইট।

রিসোর্ট এর রুম ভাড়া পড়বে ২৪ ঘন্টার জন্য ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা। রয়্যাল স্যুইট ১৭ হাজার টাকা। কনফারেন্স রুম ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এবং পিকনিকের জন্য ১০০ থেকে ২০০ জনের ভাড়া ৯০ হাজার টাকা। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অফিসিয়াল মিটিং কিংবা ওয়ার্কশপ করতে চাইলে সেই ব্যবস্থাও এখানে আছে।

ডে আউট প্যাকেজ

সর্বনিন্ম ৭ থেকে ৮ জন হলে এখানে ডে আউট প্যাকেজ নিতে পারবেন। এই প্যাকেজের মধ্যে পাবেন সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, দেশীয় পিঠা, বিশ্রামের জন্য এসি রুম সহ আরো সুযোগ সুবিধা। এক্ষেত্রে জনপ্রতি গুনতে হবে ২৫৩০ টাকা। এই প্যাকেজ নিতে চাইলে আগে থেকে যোগাযোগ করতে হবে।

ছুটি রিসোর্ট ভ্রমণ এর আগে

হোটেল রিসোর্ট রুম বা যানবাহন ভাড়া সিজন ভেদে পরিবর্তন হতে পারে। তাই যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া সমপর্কে জেনে নিন। হিডেন চার্জ সমূহ সম্পর্কে জেনে নিন। খাবারের দাম সম্পর্কে একটা ধারণা নিয়ে রাখতে পারেন যাওয়ার আগে। আপনার রুম এর সাথে কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে কোন কোন সুবিধা পাবেন সেটাও জেনে নিন। এখানকার লেক কিংবা সুইমিং পুলে নামার ব্যপারে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। রিসোর্টে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন রয়েছে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
যোগাযোগ :
ছুটি রিসোর্ট
সুকুন্দি গ্রাম, আমতলী, জয়দেবপুর, গাজীপুর
ফোন: 01777-114488, 01777-114499
ইমেইল: info@chutibd.com
ফেসবুক : facebook.com/chutiresort

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর

ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো মানিকগঞ্জের বালিয়াটি জমিদার বাড়ি, গাজীপুরের বেলাই বিল, সাভারের সাদুল্লাপুর এর গোলাপ গ্রাম ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। ছুটি রিসোর্ট সম্পর্কে আরো কোনো তথ্য আপনার জানা থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।

আরো পড়ুন

মৈনট ঘাট

মিনি কক্সবাজার হিসেবে খ্যাত মৈনট ঘাট ডে ট্যুর এর জন্য এটি চমৎকার একটি স্থান! পরিবার বা বন্ধুবান্ধব সহ যারা একটা দিন ঢাকার বাইরে কাটিয়ে আসতে চান, তারা মইনট ঘাট ভ্রমণ এর কথা মাথায় রাখতে পারেন।  মৈনট ঘাট এর অবস্থান ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায়। গুলিস্তান থেকে এর দূরত্ব ৬০ কিঃমিঃ এর মতো। রাজধানী ঢাকা থেকে দিনে গিয়ে দিনেই বেড়িয়ে আসতে পারবেন। এখানে এসে আপনি মুগ্ধ হবেন, বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকবেন পদ্মা নদীর অপার জলরাশির দিকে। এই বিশাল জলরাশি, পদ্মায় হেলেদুলে ভেসে বেড়ানো জেলেদের নৌকা, আর পদ্মার তীরে হেটে বেড়ানো। সব মিলিয়ে কিছুক্ষণের জন্য আপনার মনে হবে আপনি এখন ঢাকার দোহারের মইনট ঘাট এ নয়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আছেন। মূলত এই কারণেই মৈনট ঘাট অনেকের কাছে মিনি কক্সবাজার নামে পরিচিত।

কিভাবে মৈনট ঘাট যাবেন

মৈনট ঘাট ভ্রমণ করতে হলে ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে প্রথমে দোহারে আসতে হবে। গুলিস্তান থেকে দোহারের একাধিক বাস আছে। তবে যমুনা ডিলাক্সই শুধু মইনট ঘাট পর্যন্ত যায়। এটি গুলিস্তান মাজারের সামনে থেকে ছাড়ে। ভাড়া ৯০ টাকা। যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। ফেরার পথে সন্ধ্যা ৬টায় শেষ বাস ছেড়ে আসে। তাই ছ’টার মধ্যেই বাস স্ট্যান্ডে চলে আসুন।

যমুনা পরিবন ছাড়াও “এন মল্লিক পরিবহন” গুলিস্তানের যেই স্থান থেকে ছাড়ে, একই স্থান থেকে জয়পাড়া পরিবহন নামক মিনিবাসটিও ছেড়ে আসে দোহারের জয়পাড়ার উদ্দেশ্যে। যারা প্রাইভেট কার অথবা বাইক নিয়ে আসতে চাচ্ছেন তারা এই বাসের রুটটাকে ব্যবহার করতে পারেন। আসতে সুবিধা হবে।

গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া থেকে “নগর পরিবহনে”ও আসতে পারবেন। ভাড়া ৯০ টাকা। নগর পরিবহন নবাবগঞ্জের রুট ব্যবহার করে না। এই বাসটি আসে মুন্সিগঞ্জ হয়ে। এক্ষেত্রে আপনাকে কার্তিকপুর বাজারে নামতে হবে।

সিএনজিতে মৈনট ঘাট ভ্রমণ করতে চাইলে ঢাকার বাবুবাজার ব্রীজ পার হয়ে কদমতলী থেকে লোকাল সিনজি পাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। লোকাল সিএনজি কার্তিকপুর বাজার পর্যন্ত যায়। ওখান থেকে অটোরিকশায় মইনট ঘাট যাওয়া যাবে।

মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকেও মৈনট ঘাট এর সিএনজি পাওয়া যায়। বসিলার তিন রাস্তার মোড় থেকে আপনি সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারবেন। এই রাস্তাটা বেশ সুন্দর। রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া নিবে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা। এই রাস্তাটা বেশ সুন্দর।

কখন যাবেন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারা বছরই এখানে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন। পদ্মার উত্তাল রূপ ও সতেজ প্রকৃতি দেখতে চাইলে বর্ষায় আসতে হবে। আর শরৎকালে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে এখানে কাশফুলে ভরে যায়। তখন ছবি তোলার জন্য ভালো সময়। শীতকালে গেলে শান্ত পদ্মা পাবেন। মৈনট যাওয়ার পথে সরিষা ক্ষেত দেখতে পাবেন অনেক। শীতে পদ্মার মাঝখানে চর জেগে উঠে। নৌকা বা স্পিডবোট নিয়ে সেই চরে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

মৈনট ঘাট কি কি দেখবেন?

মৈনট ঘাট যাওয়ার আগেই বান্দুরা এলাকায় পড়বে কোকিল প্যারি জমিদার বাড়ি। এটি স্থানীয় ভাবে কালাকোপা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত। প্রায় ১৫০ বছরের ইতিহাসের স্বাক্ষী এই বাড়ি। ভাগ্যকুলের জমিদার যদুনাথ রায় তার সন্তানদের জন্য এই বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া কাছাকাছি জজবাড়ি, উকিলবাড়ি, আন্ধারকোঠা নামে পুরাতন জমিদার বাড়ি আছে। সবগুলোই যদুনাথের প্রতিষ্ঠা করা। পুরাকীর্তির প্রতি আকর্ষণ থাকলে এসব স্থাপনায় একটা চক্কর দিয়ে আসতে ভুলবেন না।

কোথায় খাবেন?

শুকনো মৌসুমে নদীর পাড়ে বেশ কিছু অস্থায়ী খাবারের দোকান পাবেন। পদ্মার তাজা ইলিশ দিয়ে দুপুরের লাঞ্চ সেরে নিতে পারেন এখানে। ইলিশ খেতে চাইলে দাম পড়বে ৬০ থেকে ১০০ টাকা। তবে বর্ষাকালে ঘাটে কোনো দোকান থাকেনা। তখন খাবারের জন্য নিকটস্থ কার্তিকপুর বাজারে আসতে হবে। কার্তিকপুর বাজারে মোটামোটি মানের কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। এছাড়া কার্তিকপুরের বিখ্যাত রণজিৎ ও নিরঞ্জন মিষ্টান্ন ভান্ডারের রসগোল্লাও কিনতে পারবেন এখান থেকে। প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পড়বে পড়বে। রসগোল্লা ছাড়াও এখানে আছে সুস্বাদু দই।

ট্রলার ভাড়া

মৈনট ঘাট ভ্রমণ এ ট্রলার রিজার্ভ করে পদ্মায় ঘুরতে চাইলে ১ ঘন্টার জন্য ভাড়া পড়োবে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। ইঞ্জিনযুক্ত ছোট নৌকায় খরচ হবে ১ ঘন্টায় ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। ভাড়া নেওয়ার সময় অবশ্যই দামাদামি করে নেবেন। শুক্রবারে বা সরকারী ছুটির দিনগুলোতে পর্যটক বেশি থাকে বলে ট্রলার ভাড়া একটু বেশি হয়।

কোথায় থাকবেন

মইনট ঘাট ঢাকার কাছে হওয়ায় আপনি দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে পারবেন। যেতে দুই ঘন্টা সময় লাগে, ফিরতে দুই ঘণ্টা। পর্যটকদের থাকার জন্য মৈনট ঘাট এর আশপাশে কোনো হোটেল, রিসোর্ট, বোর্ডিং এখনও তৈরি করা হয়নি। তারপরও আপনি থাকতে চাইলে স্থানীয় কোনো বাসিন্দার বাড়ি ম্যানেজ করতে পারেন। না পারলে দিনে এসে দিনেই ফিরে আসুন।

সতর্কতা

সাঁতার না জানলে মৈনট ঘাট এর পদ্মা নদীতে গোসল করার সময় বেশি গভীরে যাবেন না। সিগারেট অথবা খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল অথবা যেকোনো প্রকার ময়লা যেখানে সেখানে ফেলবেন না। পাখি মারা থেকে বিরত থাকুন। যার তার সামনে সিগারেট ফোঁকা থেকে বিরত থাকুন। দোকানদার, নৌকাচালক সহ সবার সাথে মার্জিত ব্যবহার করুন। এদেরকে ছোট করে দেখবেন না। খেয়াল রাখুন নিজের কোনো আচরণের দ্বারা কোনো নারী বিরক্ত হলো কিনা।

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর

ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো সাভারের সাদুল্লাপুর এর গোলাপগ্রাম,  , রূপগঞ্জ এর জিন্দা পার্ক, কেরানিগঞ্জের সারিঘাট,  লঞ্চে চাঁদপুর ডে ট্যুর, গাজীপুর এর বেলাই বিল,ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ।

ভ্রমণ মানব জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। একটা সময় আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের ধারণা ছিলো ভ্রমণ মানেই বিলাসিতা। কালের পরিক্রমায় মানুষ গবেষণা করে বের করেছে ভ্রমণ মানে বিলাসিতা নয়। স্বাভাবিক জীবনে ভ্রমণ মানুষকে মানসিক ভাবে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। মানসিক ভাবে ভালো থাকলে কাজের গতি বৃদ্ধি পায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সম্পর্কগুলো সুস্থ থাকে। যারা ভ্রমণ এর জন্য বড় ধরণের বাজেট রাখতে পারেন না, তারা মাঝে মাঝেই ডে ট্যুরে যেতে পারেন। প্রতি সপ্তাহ শেষে বা প্রতি পনের দিনে আপনি আপনার কাছের মানুষকে নিয়ে কোনো ডে ট্যুরে গেলে সর্বনিন্ম ৩০০ টাকা দিয়েও ঘুরে আসতে পারবেন। মৈনট ঘাট ছাড়াও ঢাকার আশেপাশে অন্তত ৩০ টি ডে ট্যুর দেওয়ার মতো জায়গা আছে। মাসে দুইটা ডে ট্যুরে গেলেও আপনি মাসশেষে আপনার মানসিক পরিবর্তন বুঝতে পারবেন।

আরো পড়ুন

সারিঘাট

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুরের জন্য চমৎকার একটি স্থান কেরানীগঞ্জ এর সারিঘাট। ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতা থেকে সরে কিছুটা প্রাকৃতিক ছোঁয়ার জন্য সারিঘাট থেকে ঘুরে আসা যায়। সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশ, নদী, খোলা জায়গা, কাশবন আর সাথে নৌকা ভ্রমণ। এখানকার নিরিবিলি শান্ত পরিবেশে একটা বিকেল অনায়াসেই কাটিয়ে দেওয়া যায়। সারিঘাট গিয়ে হারিয়ে যাবেন প্রকৃতির মাঝে। ঢাকায় যারা বসবাস করেন, তারা ঢাকার কাছাকাছি একটা দিন বেড়িয়ে আসার জন্য সারিঘাট কে বেছে নিতে পারেন।

সারিঘাট কিভাবে যাবেন

সারিঘাট এর নাম শুনলে প্রথমে আমাদের মাথায় আসে সিলেটের লালাখাল এর সারিঘাটের কথা। কিন্তু ঢাকার কাছে কেরানীগঞ্জের সারিঘাট যাওয়ার জন্য ঢাকার যে কোন জায়গা প্রথমে যাত্রাবাড়ী আসতে হবে। সেখান থেকে জুরাইন রেল গেইট। বাস বা লেগুনাতে ভাড়া ৮ টা। জুরাইন রেল গেইট থেকে পোস্তগলা ব্রিজ পার হতে হবে। পোস্তাগলা ব্রিজ পার হলেই সারিঘাট যাওয়ার অটোরিক্সা বা সিএনজি পেয়ে যাবেন। লোকাল সিএনজিতে ভাড়া জনপ্রতি ১০ টাকা।

লোকাল সিএনজির ঝামেলায় যেতে না চাইলে জুরাইন রেল গেইট থেকে সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১২০ টাকা। একসাথে ৪/৫ জন গেলে জুরাইন বা পোস্তগোলা থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে যাওয়াই ভালো। ফেরার পথেও ওখান থেকে সিএনজি পাওয়া যাবে।

কখন যাবেন

সারাবছরই সারিঘাট যাওয়া যায়।  সারিঘাট ভ্রমণের জন্য একটা বিকেলই যথেষ্ট। সাধারণত শুক্রবার বিকালে এখানে প্রচুর লোক সমাগম হয়। ভীড় পছন্দ না করলে শুক্রবার বিকেলে না যাওয়াই ভালো। কেউ চাইলে সারিঘাট এ ক্যাম্পিং করতে পারবেন। সেখানেই ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা আছে। তবে ক্যাম্পিংয়ের ক্ষেত্রে গ্রুপ করে যাওয়াই ভালো।

কি দেখবেন সারিঘাট

সারিঘাট এর বিশাল সবুজ প্রকৃতি, নদী, গাছপালা, খোলা জায়গা এসব আপনাকে প্রশান্তি দিবে। নদীতে কায়াকিং ও নৌকা ভ্রমণের সুযোগ আছে। কেউ চাইলে কায়াকিং ও নৌকা ভ্রমণও করতে পারবেন। গোসলও করা যাবে এখানে। নদীর পানি যথেষ্ট পরিষ্কার। কায়াকিং এর খরচ পড়বে জনপ্রতি ঘন্টায় ১৫০ টাকা, ৩০ মিনিটের জন্য ৭৫ টাকা। নৌকা ভ্রমণ ১০০-১৫০ টাকা। তবে আগে থেকে দরদাম করে নেয়াই ভালো। কায়াক হচ্ছে এক ধরণের ছোট ফাইবার বোট। বৈঠা বা লগি ব্যবহার করে এটি চালানো যায়। কায়াকে করে ভেসে বেড়াতে পারবেন পানি দেখতে দেখতে। এর জন্য কোনো ধরণের অগ্রিম প্রশিক্ষণের দকরকার হয়না। শুধুমাত্র ডানে ও বামে নেওয়ার কৌশল রপ্ত করলেই হবে।

এছাড়া সারিঘাট এর খোলা জায়গার নির্জনতায় অনেকটা সময় কাটিয়ে দিতে পারেন। এখানে কিছু ঝুপড়ি দোকান আছে। হালকা খাবার দাবারের জন্য এই দোকানগুলোই যথেষ্ট। সেখানে দুপুরের খাবার দাবারও পাওয়া যাবে। দুপুরের খাবারের ক্ষেত্রে খরচ হবে জনপ্রতি খরচ হবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। খাবারের মেনু হিসেবে থাকবে ভাত, ভর্তা, মাছ, মাংস, সবজি, ডাল।

সতর্কতা

সাঁতার না জানলে কায়াকিং এর সময় অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পরে নিবেন। এর জন্য কোনো অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে না।কায়াকিং শুরুর আগে এবং শেষে নিজের ব্যাক্তিগত জিনিসপত্র সামলে রাখবেন। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অতিরিক্ত লোক সমাগম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন, চিপস ও বিরিয়ানির প্যাকেট বা খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না। শুধু ভ্রমণে গিয়ে নয়, প্রত্যাহিক জীবনেও যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন।

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর

ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো দোহারের মৈনট ঘাট, সাভারের সাদুল্লাপুর এর গোলাপগ্রাম, নুহাশ পল্লী, ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, বেলাই বিল, নারায়ণগঞ্জ এর চৌদ্দার চর, মায়াদ্বীপ, পানাম নগরী ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক ট্রাভেল গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। সারিঘাট সম্পর্কে আরো বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে চাইলে আমাদেরকে জানান।

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান

ঢাকার কাছেই, সবুজেঘেরা কোলাহলমুক্ত পরিবেশের জন্য ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বিখ্যাত। দেশে যে কয়টি প্রাকৃতিক বনভূমি রয়েছে তার মধ্যে মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় একটি।  ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে একসময় বাঘ, কালো চিতা, চিতাবাঘ, মেঘাবাঘ, হাতি, ময়ূর, মায়া হরিণ ও সম্বর হরিণ দেখা যেত। এ বনে এক সময় খেকশিয়াল, বাঘডাস, বেজি, কাঠবিড়ালী, গুঁইসাপ আর কয়েক প্রজাতির সাপ দেখা যেত। বর্তমানে সে সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। বন বিভাগ এই বনে অজগর, ময়ূর, হরিণ ও মেছোবাঘ ছেড়েছে। উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের দিক দিয়েও এ বন বিশেষভাবে আলোচিত।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে উত্তরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় এই উদ্যানটি অবস্থিত। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে এই বনের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যে কোনো বাসে চড়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ফটকের সামনেই নামা যায়। এছাড়া ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস চলে এই পথে। ন্যাশনাল পার্কের ৩ নাম্বার গেটে নামার কথা বললে সরাসরি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের প্রধান গেটে নামতে পারবেন। বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। নিজস্ব বাহনে গেলে জয়দেবপুর চৌরাস্তা ছাড়িয়ে ময়মনসিংহের দিকে কিছু দূর চলতে হাতের ডানে পড়বে এর প্রধান প্রবেশপথ।

বনের ভেতরে আছে ৩১টি বনভোজন কেন্দ্র। কেন্দ্রগুলোর নাম আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর, বিনোদন ইত্যাদি। পিকনিক বা পারিবারিকভাবে দলবদ্ধ ভ্রমণের জন্য ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানটি একটি সুন্দরতম স্থান।

কোথায় থাকবেন?

ঢাকা থেকে ভাওয়াল উদ্যানে সারাদিন ঘুরে বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসা যায়। চাইলে অনুমতি ও বুকিং সাপেক্ষে উদ্যানের ভেতর প্রাকৃতিক পরিবেশে দিন অতিবাহিত করা যায়। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ভেতরে আছে ১৯টি বিশ্রামাগার ও কটেজ। এগুলোর নামও বেশ মজার। চম্পা, জেসমিন, অর্কিড, রজনীগন্ধা, শাপলা, মালঞ্চ, গোলাপ, মাধবী, বকুল, জুঁই, চামেলী, বেলি, আনন্দ-১, আনন্দ-২, আনন্দ -৩, শ্রান্তি ও কেয়া। খুবই চমৎকার ডিজাইলের কটেজ ও রেস্ট হাউজগুলো আগে থেকে বুক করে যেতে হয়। রেস্ট হাউজেই খাবারের ব্যবস্থা আছে। সেটার জন্যও আগে থেকে বলে রাখা লাগে। এসব গেস্ট হাউজে রাত্রী যাপনের অনুমতি নেই।

পুরো পিকনিক স্পট বা রেস্ট হাউজ ভাড়া নেওয়ার জন্য বন বিভাগের মহাখালি কার্যালয় থেকে অগ্রিম বুকিং দিতে হয়। এছাড়া ভাওয়াল গড় থেকেই সামান্য দূরে অবস্থিত রাজেন্দ্রপুর জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কার্যালয় থেকেও নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের বুকিং নেওয়া যায়। মোবাইল: 01781-733000, 01713-575055

এছাড়াও এছাড়া রাতে থাকার জন্য ভাওয়াল গড়ের কাছে আছে সারাহ, সোহাগ পল্লী, স্প্রিং ভ্যালী, ছুটি, নক্ষত্রবাড়ি এবং জল ও জঙ্গলের কাব্যের মতো বেশ কিছু বেসরকারি রিসোর্ট। রিসোর্টগুলোতে যেতে চাইলে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা ভাল।

ভ্রমণ টিপস সতর্কতা

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এর ভেতর নিজেদের সাথে যাওয়া ছোট শিশুদের নজরের ভেতর রাখবেন। বিশেষ করে ওয়াচ টাওয়ারে বা জঙ্গলে হাটার সময়। ভ্রমণের সময় কোন আবর্জনা ময়লা জঙ্গলে ফেলবেন না। উদ্যানে মাছ বা পাখি শিকার বা উচ্চ শব্দ করলে জরিমানা সহ শাস্তির মুখে পড়তে পারেন। এছাড়া উদ্যানের সিসিটিভি রেঞ্জের বাইরে যাওয়াটা নিরাপদ নয় একদমই।

ডে ট্যুর এর অন্যান্য স্থান

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর এর জন্য অনেকগুলো চমৎকার জায়গা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মৈনট ঘাট, মায়াদ্বীপ, সারিঘাট, বেলাই বিল, ছুটি রিসোর্ট, গোলাপ গ্রাম সহ অনেকগুলো স্থান রয়েছে। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে পড়ুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers

বেলাই বিল – গাজীপুর

বিল বা নৌকা ভ্রমণ যাদের পছন্দ, তাদের কাছে গাজীপুরের বেলাই বিল হতে পারে ডে ট্যুর এর জন্য চমৎকার একটি জায়গা। বেলাই বিল ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। চেলাই নদীর সাথে বেলাই বিল। চেলাই নদী সংলগ্ন বাড়িয়া, ব্রাহ্মণগাঁও, বক্তারপুর ও বামচিনি মৌজা গ্রাম ঘেরা একটি মনোমুগ্ধকর বিলের নাম বেলাই বিল। কথিত আছে ভাওয়ালের ভূস্বামী ঘটেশ্বর ঘোষ ৮০ টি খাল কেটে চেলাই নদীর পানি নিঃশেষ করে ফেলেন। তারপরই এটি প্রকাণ্ড বিলে পরিণত হয়। বর্ষায় জেলেরা বিলের চারপাশে মাছ ধরার জন্য ডাঙ্গি খনন করে। নদী ও বিলের অপূর্ব সংমিশ্রণ এই বিলটি গাজীপুরের কানাইয়া বাজার নামক এলাকায় অবস্থিত।

খরস্রোতা চেলাই নদীর কারণে বিলটিও খরস্রোতা রূপে বিরাজমান ছিল। বর্ষা মৌসুমে জেলেরা বিলের চারপাশে মাছ ধরার জন্য ডাঙ্গি খনন করে। আর শুষ্ক মৌসুমে বিলটি হয়ে ওঠে একফসলি জমি। তাতে চাষ হয় বোরো ধান।

কিভাবে যাবেন বেলাই বিল

রাজধানী ঢাকার যেকোন স্থান থেকে বাস বা যেকোন সুবিধাজনক পরিবহণে গাজীপুর বাসস্ট্যান্ড অথবা গাজীপুর শিববাড়ি নেমে সেখান থেকে রিকশা বা সিএনজি দিয়ে কানাইয়া বাজার আসতে হবে। চাইলে টেম্পুতেও কানাইয়া বাজার যেতে পারেন, ভাড়া নেবে ১০ টাকা করে।  কানাইয়া বাজার ঘাটে বেলাই বিল ভ্রমণের জন্য নৌকা ভাড়া পাবেন। কানাইয়া বাজারে নেমেই সামনে ব্রিজ আছে, ব্রিজ পার হয়েই নদীতে বাধা নৌকা ঠিক করে উঠে পড়ুন। দরদাম করে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন উন্মুক্ত বিলে। এখানে ইঞ্জিন চালিত আর ডিঙ্গি নৌকা দুটোই পাওয়া যায়। তাড়া থাকলে ইঞ্জিন নৌকা, আর হাতে সময় থাকলে হাতে বাওয়া ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে নিন। মাঝির সাথে কথা বলে নিজেই সেই নৌকা বেয়ে দেখতে পারেন, ভিন্ন একটা অভিজ্ঞতা হবে সন্দেহ নেই। চাইলে নৌকা সারাদিনের জন্য ভাড়া করতে পারবেন।

বেলাই বিল ভ্রমণে কি দেখবেন?

প্রায় ৮ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত এই বিলের অনেক স্থানেই প্রায় সারা বছর পানি থাকে। তবে বেলাই বিলের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে বর্ষা কালের বিকল্প নেই।  বিলে সারাবছর পানি না থাকলেও বর্ষায় দ্বিগুণ সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়। সারা বিল জুড়ে চলে শাপলা ফুলের রাজত্ব। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন বিলের মধ্যে অবস্থিত বামচিনি মৌজা নামক দ্বীপ গ্রামটি থেকে। এই গ্রামটির মজার একটি ব্যাপার  হলো গ্রামটির একটা মৌজায় কেবলমাত্র একটিই বাড়ি, বাংলাদেশের আর কোথাও এমন নজির নেই।

কোথায় খাবেন?

কানাইয়া বাজারে দুপুরে খাওয়ার মতো ভালো দোকান নেই। তবে চা বা হালকা স্ন্যাকস পাবেন এখানে। দুপুরে খাওয়ার জন্য গাজীপুর শিববাড়ি আসতে হবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য ভ্রমণে গেলে সাথে কিছু খাবার নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।

কোথায় থাকবেন?

কানাইয়া যাবার পথে নীলের পাড়ায় বেশ কিছু রিসোর্ট আছে। উল্লেখযোগ্য হল, আনন্দবাড়ি, সবুজ ছায়া, নির্জন নিবাস। চাইলে আগে থেকে ওখানে বুকিং দিয়ে একবেলা বা একদিনের জন্য সংরক্ষণ করতে পারেন।

সতর্কতা

বর্ষা কালে নৌকায় চড়তে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। এইক্ষেত্রে সাথে লাইফ জ্যাকেট থাকলে সবচেয়ে ভালো। যারা সাতার জানেন না, বয়স্ক বা শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে পুরোটা সময়। ভ্রমণের সময় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোন ময়লা-উচ্ছিষ্ট যেন আমরা ভ্রমণ স্পটগুলোতে ফেলে না আসি।

ডে ট্যুর এর অন্যান্য স্থান

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর এর জন্য অনেকগুলো চমৎকার জায়গা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মৈনট ঘাট, মায়াদ্বীপ, সারিঘাট, জিন্দা পার্ক, ছুটি রিসোর্ট, গোলাপ গ্রাম সহ অনেকগুলো স্থান রয়েছে। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে পড়ুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers এ। বেলাই বিল সম্পর্কে আপনার কোনো তথ্য শেয়ার করার থাকলে আমাদেরকে জানান।

মায়াদ্বীপ

নারায়গঞ্জে মেঘনা নদীর মাঝখানে মায়াদ্বীপ এর অবস্থান। এটি মূলত মেঘনার বুকে জেগে উঠা ত্রিকোন আকৃতির একটি চর। ডে ট্যুরে একবেলা কাটানোর জন্য মায়াদ্বীপ চমৎকার একটি স্থান। সবুজ প্রকৃতি, সবজি ক্ষেত, বিশাল মেঘনা নদী আর নদী পাড়ের জনপদ। এই মধ্যেই কখন একটা বেলা কেটে যাবে আপনি খেয়ালই করবেন না। মায়াদ্বীপ খুব একটা বড় না। তবে সবুজ প্রকৃতি আর এখানকার মনোরম পরিবেশ আপনার ভালো লাগবে। নদীর বাতাস একটানা বইতে থাকে এখানে। সেই নির্মল বাতাসকে কিছুক্ষণের জন্য আপনার মনে হবে মাতাল হাওয়া! ঢাকার কাছে ডে ট্যুর দিতে চাইলে কোনো এক ছুটির দিনে মায়াদ্বীপ থেকে ঘুরে আসা যায়।

কিভাবে যাবেন মায়াদ্বীপ

ঢাকার গুলিস্তান থেকে সারাদিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এর বাস পাওয়া যায়। পাঁচ দশ মিনিট পরপরই বাস ছাড়ে। বাসে উঠে নামতে হবে সোনারগাঁও বা চৈতি গার্মেন্টস এর সামনে। তারপর সেখানে থেকে মোটর রিকশা বা ইজিবাইকে করে যেতে হবে বৈদ্যের বাজার। বৈদ্যের বাজার গিয়ে নৌকা ঘাট পাবেন। সেখান থেকে মায়াদ্বীপ যাওয়ার জন্য নৌকা পাওয়া যায়। মায়াদ্বীপ থেকে ঘুরে আসার জন্য নৌকা রিজার্ভ নিতে হবে। তিন চার ঘন্টার জন্য ভাড়া নিলে ঘন্টায় ভাড়া পড়বে ৪শ থেকে ৫শ টাকা। এক নৌকাতে ৭ থেকে ৮ জন বসতে পারবেন। যেতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটের মতো। মেঘনার বুকে এই নৌভ্রমণ বেশ উপভোগ করতে পারবেন। স্থানীয়রা এই দ্বীপকে নুনেরটেক নামে চিনে। তাই মায়াদ্বীপ নামে কোনো মাঝি চিনতে না পারলে নুনেরটেক বলুন।

মায়াদ্বীপে কোনো ধরণের অবকাঠামো নেই। আপনি কোনো ধরণের ওয়াশরুম পাবেন না সেখানে। নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। খুব জরুরী হলে স্থানীয়দের বাড়িতে গিয়ে ওয়াশরুম ব্যবহার করা যেতে পারে।

মায়াদ্বীপ ফেরার সময় ঘুরে আসতে পারেন। এটা বৈদ্যের বাজার থেকে মেইনরোডে আসার পথেই পড়বে। সকালটা মায়াদ্বীপে কাটিয়ে, দুপুরে বৈদ্যের বাজারে লাঞ্চ করে বিকেলটা পানাম নগরীতে কাটাতে পারেন। এরপর সন্ধ্যার মধ্যে বাসে উঠে বাড়ি ফিরতে পারেন। হাইওয়েতে জ্যামের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

কোথায় খাবেন মায়াদ্বীপ

মায়াদ্বীপে খাওয়ার জন্য কোনো ধরণের খাবারের দোকান নাই। দুপুরে খাওয়ার জন্য আপনাকে বৈদ্যের বাজারে আসতে হবে। বৈদ্যের বাজারে অনেকগুলো খাবারের দোকান আছে। এগুলোর মধ্যে ঘাটের কাছেই সবুজ পাতা রেস্টুরেন্ট অন্যতম। এখানে আপনি ভাত মাছ সবজি ভর্তা ইত্যাদি পাবেন। দুপুরের খাওয়ার জন্য জনপ্রতি খরচ পড়বে ১২০ থেকে ১৮০ টাকা। মায়াদ্বীপ যাওয়ার সময় খাওয়ার পানি ও হালকা স্ন্যাকস কিনে নিয়ে যেতে পারেন বৈদ্যের বাজার থেকে।

কোথায় থাকবেন

ঢাকার কাছাকাছি হওয়াতে আপনি দিনে গিয়ে দিনেই মায়াদ্বীপ থেকে ফিরতে পারবেন। তাই রাতের বেলা সেখানে থাকার প্রয়োজন পড়বে না। তারপরও থাকতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ এসে থাকতে হবে। নারায়ণগঞ্জ থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল রিসোর্ট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্ট উল্লেখযোগ্য।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সাঁতার না জানলে কোনোভাবেই নদীতে নামবেন না। প্রয়োজনে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন। বর্ষাকালে মেঘনা নদীতে পানির স্রোত অনেক বেশি থাকে। তাই ভরা বর্ষায় মায়াদ্বীপ না যাওয়াই মঙ্গল। সন্ধ্যার পর ওখানে থাকা যাবে না। মায়াদ্বীপ থেকে ফেরার সময় নৌকা এমনভাবে ছাড়বেন যেন সন্ধ্যার আগে বৈদ্যের বাজার এসে পৌছাতে পারেন। আর নৌকা ভাড়া নেওয়ার সময় ভালোমতো দরদাম করে নিবেন। নৌকার মাঝি ও স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলফেন না। এটা শুধু ভ্রমণে গিয়ে নয়, এমনকি আপনার প্রত্যাহিক জীবনেও।

ডে ট্যুরে আরো যেতে পারেন

ভ্রমণ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ। মায়াদ্বীপ সম্পর্কে আপনার আরো কোনো তথ্য কিংবা পরামর্শ দেওয়ার থাকলে আমাদেরকে জানান।

জিন্দা পার্ক

জিন্দা পার্ক এর অবস্থান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আধ ঘন্টার দূরত্বে ১৫০ একর জমির উপর এই সুন্দর পার্ক এর অবস্থান। সবুজ গাছপালা বেষ্টিত এই পার্ক পাখির কলকাকলীতে মুখরিত থাকে সবসময়। এখানে পার্কের ভিতরে রয়েছে ছোট বড় ৫টি লেক। পর্যাপ্ত জলাধার থাকায় গরম কালেও পার্কের পরিবেশ শীতল থাকে তুলনামূলক। পরিবার নিয়ে ঢকার কাছে ভ্রমণ এর জন্য জিন্দা পার্ক এখন বেশ সুপরিচিত জায়গা। লেকের মাঝে দ্বীপের মতো জায়গায় গড়ে উঠা বাঁশের টি রুমে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে এক কাপ চা কিংবা জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে বেশ ভালো লাগবে। দারুণ উপভোগ করবেন কাটানো সময়গুলো। সাথে নিজস্ব গাড়ি না থাকলেও সমস্যা নেই। দিনশেষে বাড়ি ফেরার জন্য পার্কের সামনেই পাবেন রিকশা অথবা সিএনজি। মেইনরোডে এসেই কুড়িল বিশ্বরোড আসার বাস পেয়ে যাবেন। আর হ্যাঁ, বেশি সংখ্যক সদস্য নিয়ে পিকনিক করতে চাইলে কয়েকদিন আগেই যোগাযোগ করুন। পিকনিকের খাবারের আয়োজন পার্ক কর্তৃপক্ষই করবে।

কিভাবে যাবেন জিন্দা পার্ক

জিন্দা পার্ক যাওয়ার অনেকগুলো পথ আছে। ঢাকা থেকে সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হলো ঢাকার ৩০০ফিট দিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ কুড়িল বিশ্বরোড হাইওয়ে দিয়ে। কুড়িল হয়ে যেতে হবে কাঞ্চন ব্রিজ। তারপর এরপর কাঞ্চন ব্রিজ থেকে অটোরিকশা নিয়ে জিন্দা পার্ক পর্যন্ত যেতে পারবেন।

আর ঢাকা টঙ্গী হতে যেতে চাইলে মীরের বাজার হয়ে বাইপাস রাস্তা দিয়েও যেতে পারবেন। এছাড়া কাঁচপুর ব্রিজ দিয়েও জিন্দা পার্ক যাওয়া যায়। কাঁচপুর থেকে ভুলতা গাওছিয়া দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ হয়ে জিন্দা পার্কে যেতে পারবেন।

কি দেখবেন

জিন্দা পার্ক গড়ে উঠেছে প্রায় ১০০ একর জায়গার উপর। এখানে রয়েছে একটি কমিউনিটি স্কুল। আছে কমিউনিটি ক্লিনিক। জিন্দা পার্কে নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী বিশিষ্ট একটি লাইব্রেরি আছে। পার্কের ভিতরে মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান আছে। নির্মল সবুজে ঘেরা বিশাল এই পার্কে ২৫০ প্রজাতির ১০ হাজারেরও বেশি গাছ আছে। তাই স্থানটি পাখির কলতানে মুখরিত থাকে সবসময়। পার্কের ভিতরে লেক সদৃশ ছোট বড় ৫টি জলাধার রয়েছে।

সবুজ গাছপালায় ঘেরা বনের ভিতরে কিছুদূর গেলেই একটা লেক। সেখানে অনেক মানুষ কেউ ব্যাডমিন্টন খেলছে, কেউ চাদর বিছিয়ে গল্প করছে। লেকের মাঝখানে চোখে পড়বে কৃত্রিম দ্বীপ। দ্বীপে যাওয়ার রাস্তা বানানো হয়েছে ভাসমান প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে। যদিও একসাথে বেশি মানুষ ব্রিজে উঠলে ব্রিজ দোলে।

দারুন এই দ্বীপে পানিতে পা ডুবিয়ে ঘাসের উপর বসে থাকতে পারবেন। এরকম মোট পাঁচটি ছোট বড় লেক আছে জিন্দা পার্কে। লেকের ঘাটে বাধা আছে ছোত নৌকা। মন চাইলে নোউকায় চড়ে লেকে ভেসে বেড়াতে পারবেন কিছুক্ষণ। পাশাপাশি উপভোগ করতে পারবেন প্রকৃতিকে। লেকের পাড়েই আছে গাছের ওপর কয়েকটা টংঘর। চাইলে টংঘরে উঠে ছবি তোলা যাবে।

জিন্দা পার্কে প্রবেশ টিকেট এর মূল্য​ প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিজনের জন্য জনপ্রতি ১০০ টাকা। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৫০টাকা। পার্কে খাবার নিয়ে প্রবেশ করা যাবে। সেক্ষেত্রে টিকিটের মুল্য হবে ১২৫টাকা। জিন্দা পার্কের লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতে চাইলে আলাদা ফি দিতে হবে ১০ টাকা করে। নৌকায় ঘুরে বেড়াতে খরচ পড়বে প্রতি ৩০ মিনিট ২০০ টাকা। গাড়ি নিয়ে গেলে পার্কিং ফি দিতে হবে। গাড়ি ভেদে খরচ পড়বে ৫০থেকে ১০০ টাকা।

পার্কের পেছনের গল্প​

জিন্দা মূলত একটি গ্রামের নাম। গ্রামের “অগ্রপথিক পল্লী সমিতি”-র তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে পার্কটি। প্রায় চল্লিশ বছর আগে, ১৯৭৯ সালে রূপগঞ্জ পূর্বাচল উপশহরে জিন্দা ঐকতান পার্ক গড়ে তুলেন সমিতির সদস্যরা। এত স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং ভীষণ আলাদা রকমের পার্কটি কোনো সরকারি উদ্যাগে তৈরি নয়। আবার কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেও নির্মাণ করা হয়নি জিন্দা পার্ক। পার্কটি তৈরি হয়েছে এলাকাবাসীর প্রাণবন্ত অংশগ্রহনের মাধ্যমে। গ্রামের নামেই পার্কের নামকরণ। এই গ্রামটিকে একটি আদর্শ গ্রাম বলা চলে।

কোথায় খাবেন

জিন্দা পার্কের ভিতরেই রয়েছে খাবার রেস্টুরেন্ট। যেখানে মিলবে ভাত, ভাজি, ডাল, মাংস ইত্যাদি। একবেলা খাবার খরচ পড়োবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন হালকা খাবার এবং সফট ড্রিঙ্কস পাবেন পার্কের ভিতরে।

কোথায় থাকবেন

যদি রাতে থাকতে চান তাহলে তার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। থাকার জন্য রয়েছে মহুয়া গেস্ট হাউজ। এছাড়া ঘোরাঘুরির জন্য জিন্দা পার্ক খোলা থাকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

ভ্রমণ সতর্কতা ও টিপস

পার্কের ভেতরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে দর্শনার্থীদেরকে অনুরোধ করা হয়। এটা এমনিতেও একজন ভ্রমণকারীর দায়িত্ব। প্রকৃতিতে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। পার্কের ভিতরে উচ্চস্বরে লাউডস্পিকারে গান বাজানো যাবেনা।

ডে ট্যুর এর অন্যান্য স্থান

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর এর জন্য অনেকগুলো চমৎকার জায়গা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মৈনট ঘাট, মায়াদ্বীপ, সারিঘাট, বেলাই বিল, ছুটি রিসোর্ট, গোলাপ গ্রাম সহ অনেকগুলো স্থান রয়েছে। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে পড়ুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers

আরো পড়ুন

চাঁদপুর – ডে ট্যুর

একদিনের ছুটি কাটানোর জন্য চাঁদপুর চমৎকার একটি জায়গা। অল্প সময়ে এবং অল্প জার্নিতে সুন্দর একটি ট্রিপ হতে পারে চাঁদপুরে। লঞ্চ ভ্রমণ, নদী, খোলা বাতাস, মিনি কক্সবাজার, চাঁদপুরের ইলিশ ও বিখ্যাত আইসক্রিম এবং মিষ্টি। সেখানে পদ্মা নদীর পাড়ে আড্ডা দেয়া,এবং নদীর মোহনা (পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া) উপভোগ করা যায়। সম্ভব হলে নদীতে ঝাপাঝাপি করেও আসতে পারেন। সব মিলিয়ে খুব ভালো একটা রিফ্রেশমেন্ট। এমনিতেই লঞ্চ জার্নিতে ক্লান্তি আসেনা। তাই ডে ট্যুর এর জন্য চাঁদপুরকে বেছে নিতে পারেন।

কিভাবে যাবেন চাঁদপুর

ঢাকা থেকে চাঁদপুর বাসে,ট্রেনে কিংবা লঞ্চে যাওয়া যায়। কিন্তু ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গেলে লঞ্চে যাওয়াই ভালো। ঢাকা-চাঁদপুর রুটে চলাচলকারী লঞ্চের মধ্যে এমভি সোনারতরী, এমভি তাকওয়া, এমভি বোগদাদীয়া, এমভি মেঘনা রাণী, এমভি আল বোরাক, এমভি ঈগল, এমভি রফরফ, এমভি তুতুল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সদরঘাট থেকে সকাল ৬/৬:৩০ থেকে এক/আধ ঘন্টা পরপরই লঞ্চ ছাড়ে৷ আসন ভেদে লঞ্চ ভাড়া ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। আর কেবিন নিলে ভাড়া পড়বে ৫০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা।

সদরঘাট থেকে লঞ্চ উঠে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে পৌঁছাতে সময় লাগে ৩ ঘন্টা। চাঁদপুর নেমেই লঞ্চঘাট থেকে ফেরার সিডিউল টা জেনে নিবেন।

চাঁদপুর লঞ্চঘাটে নেমে বড় স্টেশনে রিকশা অথবা অটোতে করে চলে যেতে পারেন তিন নদীর মোহনায়। ভাড়া পড়বে রিকশায় ৩০-৩৫ টাকা, অটো তে একজনের ১০ টাকা। চলে যাবেন বড় স্টেশন পার্কে। সেখানে একটা ইলিশের ভাস্কর্য আছে। ওটার সামনে পিছে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে চলে যাবেন পার্কের শেষ মাথায়। সেখান থেকে তিন নদীর মোহনা দেখা যায়। আর এই মাথায় আসতে আসতে দেখবেন অদ্ভুত আকৃতির রক্তের ফোঁটার একটা ভাস্কর্য আছে।

কি দেখবেন চাঁদপুর

প্রত্যকটা নদীর রয়েছে আলাদা আলাদা রূপ। চাঁদপুর গেলে সেটা আরো ভালোভাবে বোঝা যায়। নদীর পাড়ে একটি ছোট পার্ক রয়েছে। পার্কের মধ্যেই রয়েছে “রক্ত ধারা” নামের মনোমুগ্ধকর একটি ভাস্কর্য। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ভাস্কর্যটি নির্মিত। শীতকালে মেঘনার মাঝখানে অনেক চর জাগে। নদীর পাড় থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে সেইসব চরে ঘুরে আসতে পারবেন কিছুক্ষণের জন্য। যাওয়া আসা আর আধা ঘণ্টা থাকার জন্য বোট ভাড়া করতে ৫০০ টাকা দিতে হয়।

কোথায় খাবেন

চাঁদপুর মানেই ইলিশের শহর। লঞ্চঘাটেই খাবার হোটেল আছে কয়েকটা। সবগুলোতে দাম প্রায় একই। ইলিশ প্রতি পিস ১২০টাকা। আপনি চাইলে ইলিশ চত্বর থেকে ইলিশ মাছ কিনে যেকোনো দোকানে ১০০ টাকায় ভেজে নিয়ে সাথে আলুর ভর্তা আর ডাল দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আসতে পারবেন।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে চলে যাবেন কালীবাড়ি। ঘাটের থেকেই অটোরিক্সা পাবেন জনপ্রতি ৫ টাকা নিবে। কালীবাড়ি নেমে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই স্থানীয়রা দেখিয়ে দিবে “ওয়ান মিনিট” মিষ্টির দোকান। মিষ্টির দোকানেই পাওয়া যায় স্পেশাল আইস্ক্রিম। দাম নিবে ৪০ টাকা। চেখে দেখতে পারেন ওয়ান মিনিট এর মিষ্টি গুলো। মিষ্টির দাম নিবে প্রতি পিস ১০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

ইলিশ খাওয়া কিংবা এক দিনের ভ্রমণে ঢাকা হতে চাঁদপুর দিনে গিয়ে রাতের মধ্যে ফিরে আসা যায়। আর এই ডে লং ট্যুরই চাঁদপুর ভ্রমণে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তবুও পর্যটকদের রাত্রি যাপনের কথা বিবেচনা করে এখানে হোটেল তাজমহল, হোটেল শ্যামলী, হোটেল জোনাকী ছাড়াও বেশকিছু আবাসিক হোটেল আছে।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

চাঁদপুর ভ্রমণ যেহেতু লঞ্চ এর উপর নির্ভর করে, তাই লঞ্চের টাইম টেবিল ঠিকভাবে খেয়াল রাখুন। নৌকায় চড়ার জন্য লাইফ জ্যাকেট সাথে নিন। নদীতে কিংবা কোথাও ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। চাঁদপুর ইলিশের শহর, তাই এখানে এসে ইলিশ চেখে দেখতে ভুলবেন না।

ডে ট্যুরে আরো যেতে পারেন

চৌদ্দার চর – আড়াইহাজার

চৌদ্দর চর মেঘনা নদীর মাঝখানে জেগে উঠা সাড়ে তিন কিলোমিটার লম্বা একটি চরের নাম। এটি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার (Araihazar)  উপজেলায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে মাত্র দেড় থেকে/দুই ঘণ্টার পথ। নদীর চারপাশ জুড়ে আছে বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেত, ক্ষীরাই আর বাঙ্গী ক্ষেত। তার মধ্যেই বিশাল বালুকাবেলা। এটি আপনাকে কুয়াকাটার কথা মনে করিয়ে দিবে। নদীর স্বচ্চ টলটোলে পানিতে কিছুক্ষণের জন্য গা ভিজিয়ে নিতে পারবেন চাইলে। এখানকার পানি টলটলে নীলাভ। যারা একটাদিন ঢাকার আশেপাশে ঘুরে আসতে চান, তাদের জন্য চৌদ্দারচর চমৎকার একটি জায়গা।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে আড়াইহাজার গামী অভিলাস পরিবহণ এর বাস পাবেন। ভাড়া ৬৫ টাকা। এটা মদনপুর দিয়ে যায়। আর গুলিস্তান থেকে যেতে চাইলে দোয়েল/স্বদেশ পরিবহনে মদনপুর নেমে ওখান থেকে ওখান থেকে আড়াইহাজার এর সি এন জি নিতে পারবেন। লোকাল জনপ্রতি ভাড়া ৫০ টাকা।

আর ঢাকার  কলাবাগান থেকে পাবেন মেঘলা পরিবহনের বাস। এগুলোতে গেলে নামতে হবে ভুলতা/গাউসিয়া। ভাড়া ৬৫ টাকা। গাউসিয়া নেমে কিছুটা সামনে যেয়ে লোকাল সি এন জি তে আড়াইহাজার বাজার । এতে ভাড়া ৩০ টাকা।

আড়াইহাজার নেমে থানার মোড় থেকে সিএনজিতে যেতে হবে খাগকান্দা ঘাট। ভাড়া নিবে ৪০ টাকা। খাগকান্দা ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে চৌদ্দার চর ভ্রমণ করতে পারবেন। রিজার্ভ নৌকায় ভাড়া পড়বে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।

কখন যাবেন চৌদ্দার চর

আড়াই হাজারে একেক মৌসুমে একেক রকম দৃশ্য দেখা  যায়৷ বর্ষায় মেঘনা নদীতে পানি বেশি থাকে বলে অনেকে তখন ভ্রমণ করতে চান না। বলা যায় অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত চৌদ্দার চর ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। তখন নদী শান্ত থাকে। আড়াইহাজার এর চৌদ্দার চর এর বালি অনেক শক্ত। চোরাবালির কোন ভয় নেই। শীতে চরে অনেক রকমের শস্য ক্ষেত দেখা যায়। তখন হরেক রকমের পাখি আসে এখানে।

আড়াইহাজার উপজেলায় চৌদ্দার চর ছাড়াও আরো অনেকগুলো চর আছে। আপনি চাইলে নৌকা নিয়ে এসব চরে যেতে পারবেন। চৌদ্দারচর এর আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ১২৫ বছরের পুরানো স্কুল। ১০৫ বছরের পুরানো জমিদার বাড়ি। শদাসদি ভুইয়া বাড়ি (জমিদার বাড়ি), আড়াইহাজার চৌধুরী পাড়া রাজ বাড়ি। কয়েকশ বছরের পুরানো বটগাছ ইত্যাদি। এছাড়া যাবার পথে  রাস্তার পাশেই লতব্দি মোড়ে কাতান শাড়ীর শিল্প, গামছা শিল্পের তাঁতঘর চোখে পড়বে। কম দামে ভাল কাতান শাড়ি কিনতে পারবেন এখান থেকে।

কোথায় খাবেন

চৌদ্দারচর এ কোনো খাবারের দোকান নেই। খাওয়ার জন্য আপনাকে নিকটস্থ আড়াইহাজার বাজারে আসতে হবে। আড়াইহাজারে খাবারের বেশ কিছু দোকান আছে। এখানে আপনি দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারবেন। এছাড়া দস্তরদি মোড়ে চাচার মালাই চা, আড়াইহাজার বাজারে জিয়ার ডাল পুরি, পাশেই আরেকটা দোকানে আলু পুরি, নোয়াপাড়া ব্র্যাক এর পাশে ডাল পুরি, গোপালদি বাজার এ নাজিমুদ্দিন হোটেল এর গরুর মাংসের টেস্ট নিতে পারেন ভ্রমণে গেলে।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য আড়াইহাজার বা চৌদ্দারচর এ কোনো ব্যবস্থা নাই। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা ভালো। তবে কেউ একান্তই থাকতে চাইলে আড়াইহাজার এর জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে থাকতে পারবেন। মোবাইল নম্বর ০১৯১৭-০০৮-৪৯৬।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

আড়াইহাজার বা চৌদ্দার চর কোনো পর্যটন এলাকা না। এটি সম্পূর্ণ নদী কেন্দ্রীক একটি জনপদ। যারা সাদামাটা প্রকৃতি পছন্দ করেন, তাদের ভালো লাগবে। সাঁতার না জানলে নদীতে নামবেন না। প্রয়োজনে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন। বর্ষায় মেঘনা নদীতে পানির স্রোত অনেক বেশি ও নদী উত্তাল থাকে। পরিবার নিয়ে যেতে চাইলে বর্ষায় না যাওয়াই ভালো। ভ্রমণের সময় স্থানীয় মানুষজন ও নৌকার মাঝির সাথে ভালো ব্যবহার করুন। যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলবেন না। এটা শুধু ঘুরতে গিয়ে না, এমনকি শহরেও।

আরো পড়ুন

error: Content is protected !!
Exit mobile version