সুপ্তধারা ঝর্ণা সুপ্তধারা জলপ্রপাত

সুপ্তধারা ঝর্ণা

সুপ্তধারা ঝর্ণা (Suptadhara Waterfall) এর অবস্থান চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার চন্দ্রনাথ রিজার্ভ ফরেস্ট এর ভিতরে। বিশাল চিরসবুজ বনভূমি, বন্যপ্রাণী ও হরেক রকম বৃক্ষরাজির মনোরম পরিবেশেকে অন্য একটা মাত্রা দিয়েছে এই ঝর্ণা। সারা বছরই এখানে কম বেশি পানি থাকে। শীতকালে সুপ্তধারা জলপ্রপাত এ পানি একটু কম থাকলেও বর্ষায় দানবীয় হয়ে উঠে। সুপ্তধারা ঝর্ণার কাছাকাছি সহস্রধারা নামে আরো একটা ঝর্ণা আছে। এই ঝর্ণা উপত্যকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের নানান প্রান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা সীতাকুন্ডে ছুটে আসেন।

কখন যাবেন

ঝর্ণা দেখার উত্তম সময় বর্ষাকাল। বর্ষায় ঝর্ণাগুলো তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পায়। অর্থাৎ জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সুপ্তধারা ঝর্ণা যাওয়ার উপযুক্ত সময়। তখন জলপ্রপাতের সৌন্দর্য ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন। তবে টানা কয়েকদিন ভারী বৃষ্টি হলে ঝর্ণায় না যাওয়াই ভালো। ওইসময় ঝিরিতে পানির তীব্র স্রোত থাকে। ঝিরিপথেই যেহেতু ঝর্ণার কাছে যেতে হয়, সেমময় ঝর্ণার কাছাকাছি পর্যন্ত নাও যেতে পারতে পারেন। শুধুমাত্র কয়েকদিন টানা ভারী বর্ষন হলেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

কিভাবে যাবেন সুপ্তধারা ঝর্ণা

সুপ্তধারা জলপ্রপাত এর অবস্থান সীতাকুন্ড ইকোপার্ক এর ভিতরে। সুপ্তধারা ঝর্ণা যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি সীতাকুন্ড আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। এসব টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন সহ সব বড় কোম্পানির বাস আছে এই রুটে। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত আসতে সময় লাগে পাঁচ ঘন্টা। বাসের মান ভেদে ভাড়া ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। বাসে এলে আপনাকে নামতে হবে সীতাকুন্ড বাজার থেকে ২ কিলোমিটার সামনে ফকিরহাট নামক জায়গায়।

চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ডের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। চট্টগ্রামের কদমতলী, মাদারবাড়ি, অলংকার ও একে খান মোড় থেকে সীতাকুন্ডের বাস আছে। বাসে যেতে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার মতো সময় লাগে। বাস থেকে নামতে হবে সীতাকুন্ডের আগে ফকিরহাট স্টপেজে।

ট্রেনে সীতাকুন্ড

ঢাকা থেকে সুপ্তধারা তথা সীতাকুন্ডের সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যাবেন মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী বাসে করে সীতাকুন্ড বাজার পার হয়ে ফকিরহাট নামতে হবে। মহিপাল থেকে সীতাকুন্ডের বাস ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।

যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে আসা চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে সীতাকুন্ড বাজারে আসা যাবে।

কোথায় খাবেন

হালকা নাস্তা করার মতো কয়েকটি দোকান আছে সুপ্তধারা জলপ্রপাত যাওয়ার আগে ইকোপার্কের প্রবেশ মুখে। আর ভারী খাবারের জন্য আপনাকে সীতাকুন্ড বাজারে আসতে হবে। খাবারের জন্য হোটেল সৌদিয়া, আল আমিন ও আপন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এখানে আপনি ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ডাল, সবজি ইত্যাদি মেন্যু হিসেবে পাবেন। খাবার খরচ পড়বে প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো। রাতের বাসে গেলে সকালের ব্রেকফাস্টও এখানে সেরে নিতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

সীতাকুন্ড বাজারে মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।

সুপ্তধারা ঝর্ণা ভ্রমণ টিপস

সীতাকুন্ড ইকোপার্ক এর আশাপাশে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান আছে। সারাদিনে অনেকগুলো স্পটে ঘুরতে চাইলে একটা সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে নিন। সারাদিনের জন্য রিজার্ভ নিলে ভাড়া পড়বে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। রাতের বাসে গেলে অনেক ভোরবেলা পৌঁছে যাবেন। সেক্ষেত্রে ফকিরহাট না নেমে সীতাকুন্ড বাজারে নামুন। সীতাকুন্ডে নাস্তা সেরে তারপর রওয়ানা করুন। যেখানে সেখানে আপনি নিশ্চই ময়লা ফেলেন না। এটা আপনার ব্যক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে অনেকগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান রয়েছে। সীতাকুন্ড ইকোপার্ক গেলে সুপ্তধারা ঝর্ণা বাদেও সহস্রধারা ঝর্ণা দেখতে পারবেন। এর বাইরে নিচের যেকোনো একটি বা দুইটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন একইদিন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর।  চন্দ্রনাথ পাহাড় আর গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত সীতাকুন্ড ইকো পার্কের পাঁচ কিলোমিটার এর মধ্যে। কাছেই আছে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। আর হাইওয়ে ধরে ঢাকার দিকে দশ কিলোমিটার এগুলে পাবেন কমলদহ ঝর্ণা। যদি বিশ কিলোমিটার যান তাহলে  খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার ট্রেইল পাড়বে। ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যের নিয়মিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।

আরো পড়ুন

Published by

greenbelt

We started organizing travel events to contribute in the expansion of education in Hill tracks. Later on Green Belt becomes a Brand in this arena. And becomes a tour planner company. Now a days, Green Belt regularly organizes tour both inbound & outbound. Ph-01869649817

Exit mobile version