লালাখাল

লালাখাল

লালাখাল (Lalakhal) এর অবস্থান সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী জৈন্তিয়াপুর উপজেলায়। সিলেট জেলাশহর থেকে এর দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। নীল পানির সাথে নদীর দুপাশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য – ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে। নাম লালাখাল হলেও এর পানির রং স্বচ্ছ নীল, মনে হবে মালদ্বীপের সাগরের পানির হুবুহু প্রতিচ্ছবি দেখছেন। এখানে লালাখাল মিশে গেছে সারি নদীর সাথে। লালাখাল এর তামাবিল অংশের নাম সারি নদী।  স্বচ্ছ নীল জলরাশী, দুপাশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, সবুজ বন, পাহাড়, বালুচর, চা বাগান – কি নেই লালাখালে। ৪৫ মিনিটের দারুন এক নৌকাভ্রমণ এর সাথে প্রকৃতির অপরুপ দৃশ্যের সাক্ষী হতে একটা দিন লালাখাল এ কাটানো যেতেই পারে। লালাখাল ভ্রমণের সাথে একইদিনে জাফলং, সারিঘাট, সহ কাছাকাছি আরো কয়েকটি পর্যটন স্পট ঘুরে আসতে পারবেন। এই পোস্ট এর শেষের দিকে সেই বিষয়ে দিক নির্দেশনা থাকবে।

কিভাবে লালাখাল যাবেন

লালাখাল যাওয়ার জন্য দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে চায়ের দেশ সিলেট আসতে হবে। বাস, ট্রেন অথবা উড়োজাহাজে করে আপনি সিলেট আসতে পারবেন। বাসে এলে ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে ঢাকা সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টার মতো।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে লালাখাল

সিলেট শহর থেকে লালাখাল যাওয়ার জন্য প্রথমে জৈন্তাপুর আসতে হবে। জাফলংগামী যেকোনো বাসে উঠলে আপনাকে সারিঘাট নামিয়ে দিবে। ওসমানী শিশু পার্কের সামনে থেকে জাফলংয়ের বাস, মাইক্রোবাস বা লোকাল সিএনজি পাওয়া যায়। যেতে সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘন্টার মতো। রিজার্ভ মাইক্রোবাস ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

লোকাল ট্রান্সপোর্টে সারিঘাট পর্যন্ত গেলে সেখান থেকে লালাখাল যাওয়ার লেগুনা ও সিএনজি পাওয়া যায়। চাইলে সেখান থেকে নৌপথেও যেতে পারবেন। রিজার্ভ নৌকা ভাড়া পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

কখন যাবেন

লালাখাল যাওয়ার আদর্শ সময় হচ্ছে শীতকাল। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে গেলে লালাখাল এর নীল জলরাশির সবচেয়ে সুন্দর রূপটা দেখতে পাবেন। শীতের সময় লালাখালের পানি এতটাই স্বচ্ছ থাকে যে, উপর থেকে একদম নদীর তলদেশ পর্যন্ত দেখা যায়। শীতকালে নদীর দুপাশের দৃশ্য আরো বেশি মনমুগ্ধকর হয়ে উঠে। প্রকৃতি তখন নতুন আমেজে সেজে উঠে। তাই এককথায় বলা চলে শীতকাল লালাখাল ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়।

লালাখাল কি কি দেখবেন

নীল জলরাশী, সবুজ বন, দুপাশের চমৎকার দৃশ্য, চা বাগান, জিরো পয়েন্ট ইত্যাদি আপনাকে মুগ্ধ করবে। একটা দারুন নৌকা ভ্রমন করতে পারবেন। নীল জলরাশীর উপর নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন, চাইলে স্পিডবোট নিয়ে ঘুরতে পারেন। নৌকা ভ্রমন এর পথে দেখতে পাবেন দারুন সব মনমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য। তারপর পৌঁছে যাবেন জিরো পয়েন্টে৷ ওখানে বালুচর পাবেন, বালুচর টা পায়ে হেটে উটেই পাবেন চা বাগান আর পাহাড়।

নৌকা ভাড়া

সিজন ভেদে লালখাল এ নৌকাভাড়া উঠানামা করে। লালাখাল ঘাটেই ছোট বড় সব রকমের নৌকা পাওয়া যায়। ইঞ্জিন চালিত ছোট নৌকার ভাড়া ঘন্টায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। আর বড় নৌকাগুলোর ভাড়া ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা। এক নৌকায় ১০-১৫ জন বসা যায়।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য লালাখালের কাছেই নর্দান রিসোর্টটি বেছে নিতে পারেন। বাজেট বেশি থাকলে বিলাসবহুল নাজিমগড় রিসোর্টে থাকতে পারবেন। আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই রিসোর্টের সর্বনিন্ম রুম ভাড়া পড়বে ৭ হাজার টাকা। আর প্রেসিডেন্সিয়াল সুইট নিলে খরচ পড়বে ১৫ হাজার টাকা। এক রুমে ৩ জন থাকা যায়। সিজনে এখানে আগে থেকে রুম বুকিং দিয়ে না গেলে খালি পাওয়া মুশকিল।

তবে রাতে সন্ধ্যার দিকে সিলেটে ফিরে আসাই ভালো। এখানে কম খরচে ভালো মানের হোটেল পাবেন। সিলেট এর মাজার গেট, জিন্দাবাজার, জেল রোডে বিভিন্ন মানের অনেকগুলো হোটেল আছে। ৪০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে এখানে রুম পেয়ে যাবেন। বাংলাদেশের জেলা শহরগুলোর মধ্যে কক্সবাজারের পর সিলেটেই সবচেয়ে বেশি হোটেল আছে।

সতকর্তা

সাতার না জানলে পানিতে নামবেন না। লালাখাল এর কিছু জায়গায় পানির গভীরতা অনেক বেশি। মানুষ বেশি হলে একটু বড় নৌকা নিবেন। নৌকার ছাদের উপর বেশি মানুষ উঠবেন না। স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করুন। নৌকা, লেগুনা, সিএনজি, মাইক্রোবাস বা হোটেল নেওয়ার সময় ঠিকঠাক দরদাম করে নিন। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। এটা অভ্যাসের বিষয়।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

লালাখাল এর কাছেই রয়েছে জাফলং আর তামাবিল। জাফলং থেকে পিয়াইন নদী পার হয়ে কিছুটা সামনে গেলে সংগ্রামপুঞ্জী ঝর্ণা। এছাড়া একই দিনে চাইলে লালাখাল থেকে ঘুরে আসতে পারবেন রাতারগুল থেকে। আর বিছানাকান্দি ঘুরতে চাইলে খুব ভোরে রওয়ানা করতে হবে। এছাড়া যেতে পারেন পান্থুমাই ঝর্ণা বা ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর।

আরো পড়ুন

জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক ট্রাভেল গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। লালাখাল সম্পর্কে আরো বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে চাইলে আমাদেরকে জানান।