বগালেক

বগালেক বান্দরবানের রুমা উপজেলার কেওক্রাডং পাহাড় রেঞ্জে অবস্থিত একটি লেক। বান্দরবান সদর থেকে প্রায় ৭০ কিঃমিঃ ও রুমা উপজেলা থেকে ১৭ কিঃমিঃ দূরত্বে এর অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৪০০ ফিট উচ্চতার এই লেক ভূতত্ত্ববিদদের মতে প্রায় ২ হাজার বছর আগে উল্কাপিন্ডের পতনে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি হয়। অনেকের মতে এটি মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামূখ। এটি ড্রাগন লেক ও বগাকাইন লেক নামেও পরিচিত।

দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তি শেষে এই লেকের সামনে আসার পর আপনি যাত্রাপথের সমস্ত কষ্ট ভুলে যাবেন। বগালেক ও তার আশেপাশের মোহময়ী প্রকৃতি এক নিমেষে আপনার মন ভালো করে দিবে। দিনের একেক সময় এখানে প্রকৃতি একেক রূপ ধারণ করে। সন্ধ্যার পর আপনার সামনে খুলে যাবে আকাশ ভরা নক্ষত্রের ডালি। দূষণমুক্ত পরিবেশ ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে প্রতিদিনই এখানে আকাশে তারার দেখা মেলে। আর কোনো এক জোছনা রাত যদি আপনি বগালেকে কাটাতে পারেন, সেটা আপনার জীবনের উল্লেখযোগ্য স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে। চাঁদের আলো যখন লেকের পনিতে ঢেউ খেলে, পাহাড়ি নিস্তব্ধ পরিবেশ তখন মোহনীয় রূপ ধারণ করে। চলুন জেনে নিই বগালেক ভ্রমণ এর বিস্তারিত।

বগালেক ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়

সৌন্দর্যের টানা বছরজুড়ে এখানে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসে। তবে বর্ষায় রুমাগামী জিপ প্রায়ই কাইক্ষংঝির পর্যন্ত যায়, এরপর ইঞ্জিন নৌকায় ১ঘন্টার বেশি পথ পড়ি দিয়ে রুমাবাজার পৌঁছাতে হয়। রুমা বাজার থেকে বগালেকের রাস্তা ভাঙাচোরা হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থার অসুবিধা হয়। এটা পুরোটাই হাঁটতে হয়। তাই নিতান্তই এডভেঞ্চারপ্রেমী না হলে শীতকালেই বগালেক যাওয়াকে সাজেস্ট করেন ভ্রমনকারীরা। অর্থাৎ বলা চলে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বগালেক ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

কিভাবে বগালেক যাবেন

বগালেক যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে বান্দরবান আসতে হবে। ঢাকা থেকে এসি – নন এসি সব ধরণের বাসই বান্দরবান যায়। নন এসির মধ্যে শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বাস পাবেন। বাস ছাড়ে কলাবাগান, ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে। রাত এগারোটার মধ্যে লাস্ট বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে উঠতে হবে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সূবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, মহানগর প্রভাতী ও গোধুলী সহ অনেকগুলো ট্রেইন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেন ও আসন ভেদে ভাড়া ২০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে হলে প্রথমে বহদ্দারহাট যেতে হবে। ওখান থেকে ৩০ মিনিট পরপর ‘পূর্বাণী’ ও ‘পূরবী’ নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২২০ টাকা।

বান্দরবান থেকে রুমা বাজার

বান্দরবান থেকে বগালেক যেতে হলে প্রথমে রুমা বাজার যেতে হবে। রুমা বান্দরবানের একটি উপজেলা। এটি জেলা শহর থেকে ৫০ কিঃমিঃ দূরে। বাসে বা জিপে করে আপনি রুমা বাজার যেতে পারবেন। বান্দরবান সদরের রুমা বাস স্ট্যান্ড থেকে ১ ঘন্টা পরপর রুমার বাস ছাড়ে। ভাড়া ১২০ টাকা। যেতে সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মতো। বিকাল ৩টার মধ্যে লাস্ট বাস ছেড়ে যায়।

জিপে করে রুমা যেতে চাইলে রিজার্ভ নিতে হবে। ভাড়া পড়বে সিজন ভেদে ২৫০০ থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে। এক জিপে ১২/১৩ জন বসা যায়। যেতে সময় লাগবে ২ ঘন্টার মতো। শীতের সিজনে এই রুটে লোকাল জিপ পাওয়া যায়। জনপ্রতি ৮০ থেকে ১২০ টাকা ভাড়া নেয়।

রুমা বাজার থেকে বগালেক

রুমা বাজার পৌঁছে আপনার প্রথম কাজ হবে বগালেক যাওয়ার জন্য গাইড ও জিপ ঠিক করা। গাইড সমিতির অফিস থেকে রেজিস্টার্ড গাইড কাউকে নিতে হবে। রেজিস্টার্ড গাইড ছাড়া আপনি বগালেকে যাওয়ার অনুমতি পাবেন না। এরপর রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্পে আপনাকে রিপোর্ট করতে হবে। সবার নাম ফোন নাম্বার সহ বিস্তারিত লিখে জমা দিতে হবে ক্যাম্পে। আপনার হয়ে গাইডই এই কাজগুলো করে দিবে। গাইড ফি প্রতিদিনের জন্য ৬০০ টাকা। এটা আর্মি দ্বারা নির্ধারিত। তবে গাইডের থাকা খাওয়ার সকল খরচ আপনাকেই বহন করতে হবে। বগালেকের কয়েকজন রেজিস্টার্ড গাইডের নাম্বার-

সুফল বড়ুয়া 01843-229547, ইসমাইল 01869-364977
প্রকাশ 01887-659360, হারুন 01828-872894
বাবুল 01552-432937, রঞ্জন 01827-713975
তাপস বড়ুয়া01884756482

রুমা বাজার থেকে বগালেক পর্যন্ত জিপ ভাড়া ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। এক জিপে ১২/১৩ জন যাওয়া যায়। আপনার টিমে সদস্য সংখ্যা কম হলে অন্য কারো সাথে জিপ শেয়ার করতে পারবেন। এছাড়া ১ ঘন্টা পরপর লোকাল জিপ ছাড়ে। ওগুলোতেও যেতে পারবেন। ভাড়া ১০০ টাকা। বিকাল ৪টার পর রুমা যেতে বগালেকের উদ্দেশ্যে কোনো গাড়ি যেতে দেয় না আর্মি। তাইল আপনাকে সকল কাজ ৪টার আগেই শেষ করতে হবে। রুমা থেকে বগালেকের দূরত্ব ১৭ কিঃমিঃ। যেতে ১ ঘন্টার মতো সময় লাগে।

বগালেকে কোথায় থাকবেন

বগালেকে থাকার জন্য উন্নতমানের কটেজ বা রিসোর্ট নেই। স্থানীয় আদিবাসীদের ছোট ছোট কিছু কটেজ আছে। ওগুলোতেই রাত্রি যাপন করতে হবে। এতে জনপ্রতি খরচ হবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এক রুমে ৫/৬ জন করে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ফিমেইলদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা। আর কাপল হলে আলাদা কাপল কটেজ পাওয়া যায়। সবকিছু আগে থেকে গাইডকে বলে রাখলে সে ব্যবস্থা করে রাখবে। অথবা আপনি চাইলে ওখানে গিয়েও ঠিক করতে পারবেন। ঢাকা থেকে কটেজ ঠিক করতে চাইলে বুুকিংয়ের জন্য ফোন দিতে পারেন লারাম বম- 01552376551, বা সিয়াম দিদির 01840721590 নাম্বারে।

খাওয়ার ব্যবস্থা আছে আদিবাসী ঘর ও কটেজগুলোতে। জনপ্রতি খাওয়ার খরচ পড়বে প্রতিবেলা ৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। খাবার হয় প্যাকেজ সিস্টেমে। মেনু হিসেবে ভাত, ডাল, ভর্তা, ডিম মুরগী ইত্যাদি পাওয়া যায়। খাবার কতজন খাবেন, কী দিয়ে খাবেন ইত্যাদি আগে থেকে অর্ডার করতে হয়। গাইডকে বললেই হবে, সে অর্ডার করে দিবে। অথবা চাইলে আপনি নিজেও কথা বলে অর্ডার করতে পারেন। কটেজগুলোতে নিজস্ব বারবিকিউর ব্যবস্থা আছে। রাতে বগালেক পাড়ে মনোরম পরিবেশে বারবিকিউ পার্টি করে নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারেন চাইলে।

বগালেক ভ্রমণ টিপস

  • বগালেকে বিদ্যুত নেই। সোলার প্যানেলে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা আছে। তবে সাথে করে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে গেলে ভালো।
  • রবি ও টেলিটক বাদে অন্য ফোনের নেটওয়ার্ক নেই বগালেকে। তাই এই সিমগুলো সাথে রাখুন।
  • বগালেকে গোসল করতে চাইলে সাবধানে করবেন। সবসময় সতর্ক থাকা ভালো। সাঁতার দিতে গিয়ে অতীতে একাধিক মৃত্যু দেখেছে বগালেক।
  • সাথে এনআইডি কার্ড রাখুন। এটা বাধ্যতামূলক নয়। যেকোনো ফটো আইডি সাথে থাকা জরুরি।
  • যাত্রাপথে জিপের ছাদে উঠবেন না। এটি করতে আর্মির পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে। তাছাড়া পাহাড়ি পথে জিপের ছাদে উঠা বিপদজনক।
  • আদিবাসীদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে ভুলবেন না। এটা সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান। আপনার কাণ্ডজ্ঞান আপনার ব্যাক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।
  • পাহাড়িদের কালচারের প্রতি সম্মান দেখান। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্যকেউ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগতো।
  • যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। সেটি শুধু পাহাড়ে নয়, এমনকি শহরেও।

আশেপাশে কী কী দেখার আছে

হাতে সময় থাকলে বগালেকের আশেপাশে আরো কিছু স্পট ঘুরে দেখতে পারেন। এরমধ্যে অন্যতম কেওক্রাডং। বগালেক থেকে কেওক্রাডং যেতে চাইলে ১ দিন বাড়তি সময় লাগবে। কেওক্রাডংয়ে থাকার ব্যবস্থা আছে। যাওয়ার পথে দেখতে পারবেন চিংড়ি ঝর্ণা। এছাড়া বান্দরবানের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে নীলগিরি। এটি সর্বাধিক জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। এছাড়া থানচিতে আছে নাফাখুম জলপ্রপাত এবং রোয়াংছড়িতে আছে দেবতাখুম নামে একটি গিরিখাদ উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের অন্যন্য লেক

মারায়ন তং

মারায়ন তং বা মারায়ং তং বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মিরিঞ্জা রেঞ্জের একটি পাহাড়ের নাম। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে এর উচ্চতা ১৬৫০ ফুট। এই পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় আছে একটি বৌদ্ধ উপাসনালয়। যেখানে রয়েছে গৌতম বুদ্ধের একটি আবক্ষ মূর্তি। উপাসনালয়টি পুরো স্থানটিকে একটি বিশেষত্ব দিয়েছে। মারায়ন তং জাদী পাহাড় এর চূড়ার অংশটি পুরোপুরি সমতল। চূড়ায় দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায় ততদূর শুধু পাহাড়ের সারি৷ এ যেন পাহাড়ের সমুদ্র। আর পাহাড়ের নিচে দিয়ে সাপের মতো এঁকেবেকে চলে গেছে মাতামুহুরি নদী।

মারায়ন তং জাদী পাহাড় ও এর আশেপাশে রয়েছে বিভিন্ন আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। এরমধ্যে অন্যতম হলো ত্রিপুরা মারমা আর মুরং। পাহাড়ের নিচের দিকে মারমাদের বসবাস। আর মুরং জাতির পাড়াগুলো ছড়িয়ে আছে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে। পাহাড়িরা সাধারণত মাচাংয়ের উপর ঘর বানায়। উপরে পরিবারের সদস্যরা বসবাস করে। আর নিচে মুরগী শূকর ইত্যাদি গবাদিপশু থাকে। বৈচিত্র্যময় এই সংস্কৃতির সৌন্দর্য বান্দরবানকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। এখানকার অধীবাসীরা জীবিকার জন্য পাহাড়ের উপর নির্ভরশীল। এখানে ফলমূল, শস্য, তামাক ইত্যাদির চাষ হয়।

কিভাবে মারায়ন তং যাবেন

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কক্সবাজারগামী বাসে উঠে চকরিয়া নামতে হবে। ওখান থেকে বাস জিপ বা সিএনজিতে আসতে হবে আলীকদম। লোকাল গাড়িতে গেলে ভাড়া আসবে ৭০ টাকা, আর জিপ রিজার্ভ করলে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এক জিপে ১২/১৩ জন বসতে পারবেন। আলীকদম থেকে অটোরিকশা নিয়ে আবাসিক নামক যায়গায় যেতে হবে। ভাড়া ২০ টাকা।

আবাসিকে গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই মারায়ন তং এর রাস্তা দেখিয়ে দিবে। একটাই রাস্তা। এই রাস্তা ধরে আড়াই তিন ঘন্টা হাঁটলে পৌঁছে যাবেন মারায়ং তং জাদীতে। এটি আলীকদমের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। এই পাহাড়টি মারায়ন ডং ও মেরাইথং নামেও পরিচিত।

কোথায় থাকবেন

 

মারায়ন তং’এ সবাই সাধারণত ক্যাম্পিং করতেই যায়। তাই ক্যাম্পিংয়ের জিনিসপত্র সাথে নিতে হবে। যেমন পানি গ্লুকোজ, শুকনো খাবার, ফার্স্ট এইড এবং রান্না করতে চাইলে রান্নার প্রয়োজনীয় উপকরণ সাথে নিবেন। তাঁবুর সাথে অবশ্যই চাদর ও স্লিপিং ব্যাগ নিবেন। কারণ গরমের দিনেও পাহাড়ে রাতে ঠান্ডা পড়ে।

ক্যাম্পিং করার সময় প্রথমে স্থানীয় পাড়ার হেডম্যানের সাথে কথা বলুন। উনাকে আপনার ফোন নাম্বার দিন, আপনিও উনার ফোন নাম্বার রাখুন। যাতে প্রয়োজনে কোনোপ্রকার সহযোগিতার জন্য হেডম্যানের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

আর যারা ক্যাম্পিং করতে চান না, তারা আলীকদমে বা চকরিয়ায় কিছু থাকার হোটেল আছে, ওখানে থাকতে পারেন। চাইলে চকরিয়া থেকে কক্সবাজারও চলে যেতে পারেন। চকরিয়া থেকে বাসে কক্সবাজার যেতে ২ ঘন্টা সময় লাগে।

পরামর্শ ও সতর্কতা

*এখানে অনেকক্ষণ পাহাড়ি পথে হাঁটতে হয়। তাই শিশু ও বয়স্কদের না যাওয়াই উচিত।
*ট্রেকিংয়ের জন্য ট্রেকিং বুট ব্যবহার করুন। চাইলে প্লাস্টিক বা রাবারের স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন।
*পর্যাপ্ত পরিমান পানি ও শুকনো খাবার বহন করুন।
*পূর্বে ক্যাম্পিংয়ের অভিজ্ঞতা না থাকলে, অভিজ্ঞতা আছে এরকম কাউকে সঙ্গে নিন।
*আশেপাশে শস্য কিংবা ফলজ গাছ থাকতে পারে। অনুমতি ছাড়া হাত দিবেন না। কথা বলে খুব সস্তায় কিনে নিতে পারবেন।
*অনুমতি না নিয়ে আদিবাসীদের ছবি তুলবেন না। এটি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান।
*আদিবাসীদের কালচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্যকোনো জাতির মানুষ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগতো।
*ক্যাম্পিং শেষে পাহাড় থেকে নামার সময় কাঠ কয়লা সহ অন্যান্য বর্জ্য পরিষ্কার করে আসুন।
*কোনো প্রকার অপচনশীল বস্তু পাহাড়ে ফেলবেন না। শুধু পাহাড় নয়, এমনকি শহরেও ফেলবেন না। এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।

আরো পড়ুন
⦿ কেওক্রাডং
⦿ দামতুয়া ঝর্ণা

বান্দরবানের অন্যান্য স্থানগুলোর ভ্রমণ তথ্য এখানে পড়ুন। ভ্রমণ বিষয়ক আপনার যেকোনো সাহায্যের জন্য গ্রিন বেল্ট এর ইনবক্সে নক করুন।

ভ্রমণ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ। মায়াদ্বীপ সম্পর্কে আপনার আরো কোনো তথ্য কিংবা পরামর্শ দেওয়ার থাকলে আমাদেরকে জানান।

বান্দরবানের হোটেল ও রিসোর্ট এর তথ্য | ফোন নাম্বার, রুম ভাড়া, রিভিউ

বান্দরবানকে বলা যায় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রাজধানী! বান্দরবান যদি ভ্রমণ তালিকায় না থাকে তাহলে একজন বাংলাদেশী পর্যটকের বাকেট লিস্ট অসম্পূর্ণ! প্রকৃতিক রূপ বৈচিত্র্যে অনিন্দ্য সুন্দর বান্দরবানকে “পাহাড়ি কন্যা” বলা হয়। আপনি মেঘ ছুঁয়ে দেখতে চাইলে যেমন এখানকার নীলগিরি নীলাচল যেতে হবে, তেমনি এডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য রয়েছে নাফাখুম, অমিয়াখুম, বগালেক, কেওক্রাডং, জাদিপাই ঝর্ণা, ডিম পাহাড়, দেবতাকুম, আলীকদম সহ অনেক জায়গা। যেহেতু একবার বান্দরবান এসে সবকিছু ঘুরে শেষ করা যাবেনা, তাই সৌন্দর্যের টানে আপনাকে বারবার বান্দরবান আসতে হবে। বান্দরবান হোটেল সমূহের রিভিউ নিয়ে আজকের আর্টিকেল।

বান্দরবানে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। রিসোর্টগুলো সব শহরের বাইরে ৩/৪কিঃমিঃ এর মধ্যে হয়। আর হোটেলগুলো শহরের ভিতরে। রিসোর্টে থাকার খরচ সাধারণত খরচ কিছুটা বেশি পড়ে। শুধু রুম ভাড়ায় বেশি খরচ তা না, যাতায়াতেও আপনাকে বাড়তি টাকা গুনতে হবে। আর হোটেলগুলোতে বাজেটের মধ্যে থাকা যায়। এই ভ্রমণ নির্দেশিকায় আমরা বান্দরবানের সেরা কিছু রিসোর্ট ও হোটেলের নাম জানানোর চেষ্টা করবো।

যারা এক দুই রাতের জন্য রিলাক্স ট্রিপে বান্দরবান যেতে চান, তারা পড়তে পারেন বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান

সাইরু হিল রিসোর্ট
শুধু বান্দরবান নয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর রিসোর্টগুলোর একটি সাইরু হিল রিসোর্ট। বান্দরবান শহর থেকে ১৮ কিঃমিঃ দূরত্বে এর অবস্থান। চিম্বুক যাওয়ার পথে এই রিসোর্টের দেখা মিলবে। চমৎকার পরিবেশ, নির্জন প্রকৃতি মাঝে পাহাড়ের ঢালে গড়ে উঠা আধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন রিসোর্ট এটি। এই রিসের্টে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম রয়েছে। প্রিমিয়ার, এক্সিকিউটিভ, সাঙ্গু ভিউ ইত্যাদি কটেজগুলোতে রুম ভাড়া পড়বে ১১০০০ থেকে ২১০০০ টাকা। বিভিন্ন সময় সাইরু রুমের উপর ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে।

যোগাযোগ: 01531-411111
ওয়েবসাইট: www.sairuresort.com
ফেসবুক পেইজ: Sairu Hill Resort
গুগল ম্যাপ: সাইরু হিল রিসোর্ট

নীলগিরি হিল রিসোর্ট
সাধারণত বান্দরবান গেলে সবারই ভ্রমণ তালিকায় নীলগিরি থাকে৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৪০০ ফিট উচ্চতায় এটি বাংলাদেশের জনপ্রিয় এক পর্যটন কেন। এখানে রয়েছে নীলগিরি হিল রিসোর্ট নামে সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি রিসোর্ট। এই রিসোর্টে থাকার সুবিধা হলো নীলগিরিতে রাতের জোছনা দেখতে পাবেন। আর সকালে জানালা খুললেই পাবেন মেঘের দেখা।

নীলগিরি হিল রিসোর্টে ৮ টি কটেজ রয়েছে। এগুলো হলো নীলাঞ্জনা, আকাশলীনা, মেঘদূত, মারমা, মারুইপ্রে, ইনছায়া, ইখিয়াই, মরুইফং। এগুলোতে থাকতে গেলে আপনাকে গুনতে হবে প্রতি রাতের জন্য ৬০০০ থেকে ১৩০০০ টাকা পর্যন্ত। আগে থেকে বুকিং না দিলে এখানে এসে রুম পাবেন না। উইক ডে গুলোতে রুম বুকিংয়ের জন্য পনের থেকে বিশদিন আগে বুকিং করা লাগে। আর শুক্রবার সহ সরকারী দিনগুলোতে রুমের জন্য যোগাযোগ করা লাগবে কমপক্ষে দেড় থেকে দুইমাস আগে। রুম বুকিংয়ের জন্য আর্মির অফিসার লেভেলের কারো রেফারেন্স লাগবে। ঢাকার ধানমন্ডিতে নীলগিরি হিল রিসোর্টের অফিস রয়েছে। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন-

পেট্রো এভিয়েশন ৬৯/২, লেভেল-৪,রোড-৭/এ,
ধানমন্ডি, ঢাকা।
ফোন: 01769-299999
গুগল ম্যাপ: Nilgiri Hill Resort

নীলাচল নীলাম্বরী রিসোর্ট
নীলাচল বান্দরবানের আরেকটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১৬০০ ফিট। এর কাছেই গড়ে উঠেছে নীলাচল নীলাম্বরী রিসোর্ট। এটি জেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে। নীলাচলে সারা বছর মেঘের দেখা পাওয়া যায়।

এই রিসোর্টে রুম আছে ৬টি। সবগুলোই কাপল রুম। আপনি একরুমে আরো বেশি মানুষ থাকতে চাইলে এক্সটা ম্যাট্রেস এর ব্যবস্থা করে দিবে বললে। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে। এখানে রুম ভাড়া ৩০০০ টাকা।

ফোন: 01551-444000, 01770-232625
ফেইসবুক: নীলাচল নীলাম্বরী রিসোর্ট

হোটেল হিলটন
যারা বান্দরবান শহরের ভিতরে থাকতে চান তাদের জন্য এটি আরেকটি ভালো হোটেল। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছিমছাম গুছানো। রুম ভাড়া পড়বে ১০০০ থেকে ৪০০০ টাকা।

যোগাযোগ:
অফিসার্স ক্লাব, ইসলামপুর রোড, বান্দরবান। পোস্ট কোড – ৪৬০০
ফোন: 01747-626111, 01551-712111

হোটেল নাইট হ্যাভেন
শহরের আরেক জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হলো – মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। এর কাছেই হোটেল নাইট হ্যাভেনের অবস্থান। এটি শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে। ফ্রি ওয়াইফাই, কম্প্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট সহ আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে এই হোটেলে। রয়েছে রেন্ট এ কার সুবিধা, সে সার্ভিস নিয়ে আপনি বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরতে যেতে পারবেন। যারা অফিস ট্যুরে বান্দরবান যাবেন, এবং কনফারেন্স রুমের দরকার পড়বে, তাদের জন্য এটি ভালো চয়েস হতে পারে। কারণ এখানে ৫০ জনের সুবিধা সম্বলিত কনফারেন্স হল রয়েছে। এই রিসোর্টের এসি, নন-এসি সহ বিভিন্ন ক্যাটারির রুম রয়েছে। রুম ভাড়া ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে।

যোগাযোগ:
ফোন: 01876-000444, 01875-000444
ওয়েবসাইট: www.hotelnightheaven.com

ঢাকা অফিস:
Plot-16, Road-1/A, Sector-13,Uttara, Dhaka -1230
ফোন: 01858-938273
ইমেইল: nightheaven365@gmail.com

হলিডে ইন রিসোর্ট
পাহাড় চূড়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠা একটি নান্দনিক রিসোর্ট হলো হলিডে ইন রিসোর্ট। চারপাশে ছোট বড় পাহাড়, লেক গাছপালা দিয়ে সজ্জিত এই রিসোর্ট। বান্দরবান শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এর কাছে এর অবস্থান।

বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম আছে এই রিসোর্টে। লেকভিউ, হানিমুন কটেজ, ফ্যামিলি কটেজ ইত্যাদির রুম ভাড়া ৩০০০ থেকে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত।

ফোন: 0361-62896, 01553-325347
ফেইসবুক: Holiday Inn Bandarban
গুগল ম্যাপ: হোটেল হলিডে ইন

গ্রিন পিক রিসোর্ট
এই রিসের্টটিও জনপ্রিয় মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এর কাছে। মেঘলা পার হয়ে আরো ৫০০ মিটার যাওয়ার পর রাস্তার উল্টোপাশে এই রিসোর্টটি পড়বে। এসি রুম, সুইমিংপুল, মাল্টিকুইজিন রেস্তোরাঁ সহ আধুনিক সক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন রিসোর্ট এটি। অতিথি সেবার মান ভালো হিসেবে এই রিসোর্টের সুনাম রয়েছে। সবুজের বুকে কোলাহল মুক্ত পরিবেশে যারা বান্দরবানে দুটি দিন কাটিয়ে আসতে চান, তাদের জন্য এটি ভালো একটি রিসোর্ট।

কাপল ডাবল ফ্যামিলি সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম রয়েছে এই রিসোর্টে। রুম ভেদে ভাড়া পড়বে ৩৫০০ থেকে ৫৫০০ টাকা পর্যন্ত।

যোগাযোগ:
Meghla (Opposite to TTC), Bandarban
Dhaka: 02-8714395, 01758-554466, 01793-339222
Bandarban: 0361-62393, 01845-776633
ওয়েবসাইট: www.greenpeakresort.com
ফেইসবুক: Bandarban Greenpeak Resorts

মিলনছড়ি হিলসাইড রিসোর্ট
বান্দরবান শহরের পর থানচি রোডের মিলনছড়িতে এই রিসোর্টের অবস্থান। এটি শহর থেকে ৪কিঃমিঃ দূরে। এই রিসোর্টে ঢুকে আপনার মাথায় প্রথম যে শব্দটি আসবে সেটি হল নান্দনিক! রিসোর্টের সব কিছুতে শৈল্পিক দিক ফুটে উঠেছে। এটি বান্দরবানের সবচেয়ে লাক্সারিয়াস রিসোর্ট নয়, কিন্তু এর আলাদা স্বতন্ত্রতা রয়েছে। রিসোটের আঙিনা থেকে দেখা যাবে দিগন্তজোড়া পাহাড়ের সারি, আর নিচ দিয়ে সাপের মতো এঁকেবেকে বয়ে চলা সাঙ্গু নদী।

হিলসাইড রিসোর্টে একটি ডর্মেটরি রয়েছে। থাকার জন্য ৫ বেডের ডর্মেটরির রুম ভাড়া পড়বে ১৮০০ টাকা। ১০ বেডের ডর্মেটরি রুম ভাড়া ৩০০০ টাকা। আর কটেজগুলোর ভাড়া এসি নন-এসি রুম ভেদে ২৫০০ থেকে ৫৫০০ টাকা পর্যন্ত।

যোগাযোগ:
Dhaka Office : 01730-045054
Bandarban Office: 01730-045050
ওয়েবসাইট: www.hillsideresort.info
ফেইসবুক: Hillside Resort – Milonchhori
গুগল ম্যাপ: মিলনছড়ি হিলসাইড রিসোর্ট

ফানুস রিসোর্ট
বান্দরবানের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট নীলাচলের কাছে গড়ে উঠা আরেকটি রিসোর্ট হলো ফানুস রিসোর্ট। শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। সাজানো গুছানো ছিমছাম এই রিসোর্টটি প্রথম দেখাতেই আপনার ভালো লেগে যাবে। পাহাড়ের কোলে নৈসর্গিক প্রকৃতির মাঝে গড়ে উঠা এই রিসোর্টে রাত্রিযাপন করতে আপনার খরচ হবে রুম ভেদে ১৭০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত।

যোগাযোগ:
ফোন: 01845-779999
ইমেইল: fanushresort.bandarban@gmail.com
ওয়েবসাইট: www.fanushresort.com
ফেইসবুক: ফানুস রিসোর্ট বান্দরবান
গুগল ম্যাপ: Fanush Resort Bandarban

হোটেল প্লাজা, বান্দরবান
যারা শহরের ভিতরে নির্ঝঞ্ঝাটে থাকতে চান তাদের জন্য পছন্দের একটি হোটেল হতে পারে হোটেল প্লাজা। অনেকে শহরের বাইরে থাকতে পছন্দ করেন না। তাদের জন্য এই হোটেলটি হতে পারে একটি সঠিক নির্বাচন। হোটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট রয়েছে, আছে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট এর সুবিধা। যারা অফিসিয়াল কোনো মিটিং বা কনফারেন্স করতে চান, তাদের জন্য রয়েছে ১০০ জনের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন কনফারেন্স হল। এই হোটেলে থাকার জন্য খরচ হবে রুম ভেদে ১৫০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা।

যোগাযোগ:
Bandarban Office:
Tel : 0361-63252
Mobile : 01678-060107, 01678-060273
Chittagong Office:
Tel: +88-031-2512563-65,
Mobile : 01678-060142, 01678-060124
Dhaka office:
Telephone: 88-02-8837237/8837238
ইমেইল: info@plazabandarban.com
ওয়েবসাইট: www.plazabandarban.com
ফেইসবুক: Hotel Plaza Bandarban

হিল প্যালেস রিসোর্ট
বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এর কাছে এই রিসোর্ট এর অবস্থান। এটি শহর থেকে চট্টগ্রাম হাইওয়ে ধরে ৪ কিলোমিটার গেলে হাতে বামে পড়বে। নীলচল ও মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে কাছেই হওয়ায় আপনি হেঁটেই এই রিসোর্ট থেকে এ পর্যটন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণ করতে পারবেন। রিসোর্টের নিজস্ব রেস্টুরেন্টে উপভোগ করতে পরবেন পাহাড়ি বা বাঙালী খাবারের স্বাদ।

হিল প্যালেস রিসোর্টে এসি নন এসি বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম রয়েছে। রুম ভেদে ভাড়া পড়বে ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত।

ফোন: 01988-330000
গুগল ম্যাপ: Hill Palace Resort

ভেনাস রিসোর্ট
বান্দরবান চট্টগ্রাম হাইওয়ে ধরে ৪ কিলোমিটার গেলেই মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র। এর কাছেই পাহাড় চূড়ায় ভেনাস রিসোর্টের অবস্থান। নৈসর্গিক প্রকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে শিল্প ও সৃজনশীলতার মিশেলে এই রিসোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। ছোটবড় বেশ কয়েকটা ভাস্কর্য দিয়ে সাজানো হয়েছে ভেনাস রিসোর্টের আঙ্গিনা। রিসোর্টের নিজস্ব রেস্টুরেন্টে বসে নিতে পারবেন পাহাড়ি ও বাঙালি খাবারের স্বাদ।

আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই রিসোর্টে রয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম। রুম ভেদে প্রতিরাতে থাকার জন্য খরচ করতে হবে ৩৮০০ থেকে ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত।

ফোন: 01552-808000
ওয়েবসাইট: www.venusresortbd.com
গুগল ম্যাপ: Venus Resort Bandarban

হোটেল হিল কুইন
বান্দরবান শহরের ভিতর অবস্থিত ছিমছাম গুছানো পরিচ্ছন্ন একটি হোটেল হলো হোটেল হিল কুইন। হিল কুইনের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। যারা অফিসিয়াল মিটিং বা কোনো কনফারেন্স করতে চান তাদের জন্য হিল কুইনের নিজস্ব কনফারেন্স হল রয়েছে। হিল কুইনের কাছেই একই মালিকানায় তাদের হিলটন নামে আরো একটি হোটেল রয়েছে। এসি নন এসি মিলিয়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম আছে এই হোটেলে। রুম ভাড়া ১২০০ থেকে শুরু করে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত।

যোগাযোগ:
ফোন: 01912-782398, 01838-970754
ফেইসবুক: Hotel Hill Queen

হোটেল হিল ভিউ
বান্দরবান শহরের প্রবেশ মুখে বাস স্ট্যান্ডের কাছেই এই হোটেলটির অবস্থান। হোটেল হিল ভিউ বান্দরবানের সবচেয়ে বড় আবাসিক হোটেল। ওয়াইফাই সুবিধা সম্বলিত এই হোটেলের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা, কনফারেন্স হল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এসি নন এসি বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম রয়েছে এই হোটেলে। প্রতি রাতের জন্য ক্যাটাগরি ভেদে রুম ভাড়া পড়বে ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত।

যোগাযোগ:
ফোন: 01828-866000, 0361-62035, 0361-62045
ওয়েবসাইট: hotelhillviewbandarban.com
ফেইসবুক: Hotel Hill View Bandarban

ফরেস্ট হিল রিসোর্ট
পাহাড়ের গায়ে গড়ে উঠা বান্দরবানের মিলনছড়ির আরেকটি চমৎকার রিসোর্ট হচ্ছে ফরেস্ট হিল রিসোর্ট। বান্দরবান শহর থেকে থানচি রোডে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে এই রিসোর্টের অবস্থান। ফরেস্ট হিল রিসোর্টের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া শহরের বাইরে হলেও ২৪ ঘন্টা পাওয়ার সাপ্লাই, ওয়াইফাই, পরিবহন ব্যবস্থা ও নিজস্ব রেস্টুরেন্ট রয়েছে। আর রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনি আপনি দেখতে পাবেন দিগন্ত বিস্তৃত ভিউ।

ডিলাক্স স্যুইট, ফ্যামিলি স্যুইট, ফ্যামিলি কটেজ সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম আছে এখানে। রুম ভেদে ভাড়া পড়বে ৩০০০ থেকে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত।

যোগাযোগ:
ফোন: 01716-406123, 01865-246101, 01816-158412
ইমেইল: info@fresort.com
ওয়েবসাইট: www.foresthillresortbd.com
গুগল ম্যাপ: Forest Hill Resort 
ফেসবুক: ফরেস্ট হিল রিসোর্ট

বন নিবাস হিল রিসোর্ট
মিলনছড়িতে যে কয়েকটি চমৎকার রিসোর্ট রয়েছে তার অন্যতম একটি রিসোর্ট হলো বন নিবাস হিল রিসোর্ট। বান্দরবান শহর থেকে থানচি সড়কে গেলে ৩ কিলোমিটারের মধ্যেই এই রিসোর্টের অবস্থান। নান্দনিক এই রিসোর্টের বিভিন্ন রুমের চমৎকার নাম রয়েছে।

ব্যাম্বো, জোনাকি, ধনেশ, মাথুরা, নিবাস, মনপুরা ও নৌকো নামের কটেজ রুমগুলোর ভাড়া পড়বে প্রতিরাতের জন্য ২৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত।

ফোন: 01725-159415, 01624-847411
ওয়েবসাইট: www.bandarbanbononibas.com
গুগল ম্যাপ: Bono Nibash Hill Resort
ফেসবুক: বন নিবাস হিল রিসোর্ট

হোটেল রিভার ভিউ
বান্দরবান শহরের মধ্যে থাকার জন্য বাজেট হোটেলগুলোর একটি হোটেল রিভার ভিউ। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদীর পাড়েই এই হোটেলটি গড়ে উঠেছে। এই হোটেলের রুম ও ছাদে দাঁড়িয়ে আপনি পাহাড়ি নদী সাঙ্গুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

ছিমছাম গুছানো এই হোটেলের বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম রয়েছে। রুম ভেদে দাম পড়বে ১৬০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত।

যোগাযোগ:
ফোন: 0361-62707, 01733-115585, 01731-112757
ওয়েবসাইট: www.hotelriverviewbandarban.com

পর্যটন মোটেল
ভ্রমণ পিপাসু অনেক মানুষের কাছে ভ্রমণে গিয়ে থাকার জন্য প্রথম পছন্দ পর্যটন মোটেল। দেশের প্রায় সব পর্যটন জেলায় পর্যটন কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন পর্যটন হোটেল রয়েছে। বান্দরবানের পর্যটন মোটেলটি শহর থেকে ৪ কিঃমিঃ দূরে মেঘলার পর্যটন কমপ্লেক্স এর কাছে। মোটেলে নিজস্ব কনফারেন্স হল সহ বিভিন্ন আধুনিক সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান। রুমের সাথে রয়েছে কম্প্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট।

থাকার জন্য পর্যটন মোটেলে প্রতিরাতের ভাড়া গুনতে হবে রুম ভেদে ১৫০০ টাকা থেকে ৫৪০০ টাকা পর্যন্ত।

যোগাযোগ:
ফোন: 0361-62741, 0361-62742, 01991-139026, 01991139548
ওয়েবসাইট: www.parjatan.gov.bd

হোটেল গ্রিনল্যান্ড
শহরের ভিতরে যারা কম খরচে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছিমছাম হোটেলে থাকতে চান তাদের জন্য গ্রিনল্যান্ড হোটেল হতে পারে একটি ভালো নির্বাচন। বান্দরবান শহরের পোস্ট অফিসের কাছেই হোটেলটির অবস্থান। হোটেলটিতে কনফারেন্স রুম, ২৪ ঘন্টা পাওয়ার সাপ্লাই সহ মৌলিক সব সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান। হোটেলের রয়েছে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা।

গ্রিনল্যান্ড হোটেলে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম রয়েছে। রুম ভেদে ভাড়া পড়বে ১৫০০ থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।

ফোন: 01845-995575
ফেইসবুক: হোটেল গ্রিনল্যান্ড

হোটেল ফোর স্টার
শহরের ভিতর কম খরচে থাকার জন্য আরেকটি জনপ্রিয় হোটেল হলো হোটেল ফোর স্টার। বাজেট ট্রাভেলাররা থাকার জন্য এই হোটেলটি বেছে নিতে পারেন। বান্দরবান শহরে জনতা ব্যাংকের যে ব্রাঞ্চ আছে, তার পাশেই হোটেলটির অবস্থান। রাতে থাকার জন্য রুম ভাড়া পড়বে ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত।

ফোন: 0361-62466, 01553-421

আরো পড়ুন

দামতুয়া ঝর্ণা

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার গহীন পাহাড়ে দমাতুয়া ঝর্ণার অবস্থান। বাংলাদেশের যে কয়টি ঝর্ণা আছে, আকৃতি প্রকৃতি ও সৌন্দর্যের দিক থেকে দামতুয়া ঝর্ণা প্রথম সারিতেই থাকবে। প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া আমাদের প্রথম শিক্ষা হচ্ছে সৌন্দর্য দেখতে হলে কষ্ট করা লাগবে। বিনা পরিশ্রমে প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর রূপটি উপভোগ করা যায়না। দামতুয়া ঝর্ণার রাস্তাটি বেশ দূর্গম ও এডভেঞ্চারাস। ঝর্ণার জলে গা ভেজাতে চাইলে এই পথ পাড়ি দিতেই হবে। ঝর্ণায় আসতে যেতে পাহাড়ি রাস্তায় ট্রেকিং হবে প্রায় ১২ কিঃমিঃ পথ।

ঝর্ণার নামকরণ

দামতুয়া ঝর্ণাটির অবস্থান মুরং আদিবাসী অধ্যুষিত ব্যাঙ ঝিরিতে। ঝর্ণাটি ডামতুয়া, তুক অ ঝর্ণা, লামোনোই ইত্যাদি নামেও পরিচিত। সাধারণত ঝিরির নামে ঝর্ণার নামেই ঝর্ণার নামকরণ করা হয়। মুরং ভাষায় তুক মানে ব্যাঙ, আর অ মানে ঝিরি। আর দামতুয়া মানে খাড়া দেয়াল, যেখানে ব্যাঙ বা মাছ লাফিয়ে উপরে উঠতে পারেনা।

যাওয়ার উপযুক্ত সময়

যেকোনো ঝর্ণা তার পূর্ণ যৌবন পায় বর্ষাকালে। তাই বর্ষা বা তার পরবর্তী সময়ে দামতুয়া অভিযানে যাওয়াই ভালো। অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দামতুয়া অভিযানের ভালো সময়। তবে বর্ষায় টানা কয়েকদিন ভারী বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলের কারণে আর্মি ঝর্ণায় যাওয়ার পারমিশন নাও দিতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখেই অভিযানের পরিকল্পনা করা উচিত।

কিভাবে যাবেন

একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, ঝর্ণাটি বান্দরবানের আলীকদমে হলেও সেখানে যেতে আপনাকে বান্দরবান শহরে যেতে হবেনা। এটির সুবিধাজনক যাতায়াত ব্যবস্থা মূলত কক্সবাজারের চকরিয়া দিয়ে। তাই দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কক্সবাজারগামী বাসে উঠে প্রথমে চকরিয়া নামতে হবে। ওখান থেকে বাস জিপ বা সিএনজিতে আসতে হবে আলীকদম। লোকাল গাড়িতে গেলে ভাড়া আসবে ৭০ টাকা, আর জিপ রিজার্ভ করলে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এক জিপে ১২/১৩ জন বসতে পারবেন।

আলীকদম থেকে দামতুয়া

আলীকদম থেকে দামতুয়া ঝর্ণায় যেতে হলে প্রথমে আসতে হবে ১৭ কিলোমিটার। “১৭ কিলোমিটার” একটি জায়গার নাম। আলীকদম থেকে ১৭ কিলোমিটার আপনি বাইকে যেতে পারবেন। এক বাইকে দুইজন বসা যায়। বাইক বাড়া নিতে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আবার টিমে সদস্য সংখ্যা বেশি হলে জিপেও যেতে পারেন।

১৭ কিলোমিটার এর উদ্দেশ্যে রওনা করে ১০ কিঃমিঃ যাওয়ার পর আর্মি চেকপোস্ট পড়বে। ওখানে সবার নাম এন্ট্রি করতে হবে। জমা দিতে হবে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি। আর্মি এই শর্তে আপনাকে যাওয়ার অনুমতি দিবে যে বিকেল পাঁচটার মধ্যে আবার ক্যাম্পে এসে রিপোর্ট করবেন। অকারণে সময় নষ্ট না করলে অনায়াসে বিকেল পাঁচটার আগে ক্যাম্পে এসে পৌঁছাতে পারবেন।

১৭ কিলোমিটার নামলেই ওখানে আদুপাড়া নামে একটা গ্রাম আছে। এই পাড়াটি ম্রো আদিবাসী অধ্যুষিত। এটাই মূলত আপনার বেজক্যাম্প। এখানে গাইড সমিতি আছে। সমিতি থেকে একজন গাইড নিতে পারবেন দামতুয়া যাওয়ার জন্য। গাইড ফি ১০০০ টাকা। আদুপাড়া থেকে দামতুয়া ঘুরে আসতে ৫/৬ ঘন্টা সময় লাগবে। তাই সময়ের বিষয়টি সবসময় খেয়াল রাখতে হবে।

কোথায় থাকবেন

দামতুয়া অভিযানে গেলে ওখানকার কোনো আদিবাসী পাড়ায় থাকার পারমিশন পাবেন না আর্মির কাছ থেকে। তাই আলীকদমে ফিরে আসতে হবে। আলীকদম ও চকরিয়ায় থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। তবে সেখানে থাকার চেয়ে রাতের বাসে গন্তব্যে ব্যাক করাই ভালো। এছাড়া চাইলে কক্সবাজার চলে যেতে পারেন। চকরিয়া থেকে কক্সবাজার যেতে দুই ঘন্টা সময় লাগে। আর যদি আলীকদমে থাকতেই হয় থাকতে পারেন হোটেল ‘দ্যা দামতুয়া ইন’ এ। যোগাযোগ ০১৭৪৮-৯১২১২৭

কোথায় খাবেন

দামতুয়াতে খাওয়ার জন্য কোনো রেস্টুরেন্ট বা দোকান পাবেন না। শেষ দোকান হিসেবে আদুপাড়ায় টং দোকান আছে। ওখানে চা বিস্কুট পাবেন। ভারী খাবার আপনাকে আলীকদমে খেতে হবে। আলীকদমের পানবাজারে সাধারণ মানের কয়েকটি রেস্টুরেন্ট আছে। কম খরচে ওখানে খাওয়া যাবে। এছাড়া ঝর্ণায় যাওয়ার সময় এখান থেকে দুপুরের খাবার কিনে নিন। দুপুরের খাবার হিসেবে চিপস, বিস্কুট, কলা, চকলেট ইত্যাদি খাবার বহন করা সুবিধাজনক হবে।

দামতুয়া ভ্রমণ খরচ

কোনো স্থানে ভ্রমণে গেলে খরচটা নির্ভর করে মূলত নিজের উপর। আপনি চাইলে কম খরচে ঘুরে আসতে পারেন। আবার কিছুটা কমফোর্টের জন্য কিছুটা বেশি খরচ করতেও রাজি থাকতে পারেন। দামতুয়া অভিযানের উল্লেখযোগ্য কিছু খরচ হলো-

*চকরিয়া আসা যাওয়ার বাস ভাড়া ৮৫০ x ২ = ১৭০০ টাকা
*চকরিয়া থেকে আলীকদম জিপ ১৪০০ টাকা। সর্বোচ্চ ১৩ জন।
*আলীকদম থেকে ১৭ কিলোমিটার বাইকে জনপ্রতি আসা যাওয়া ১৫০ x ২ = ৩০০ টাকা
*গাইড ফি ১০০০ টাকা
*খাবার ও শুকনো খাবার মিলিয়ে ৩ বেলার জন্য ৫০০ টাকার মতো আসবে।

দামতুয়া ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

*এখানে অনেকক্ষণ পাহাড়ি পথে হাঁটতে হয়। তাই শিশু ও বয়স্কদের না যাওয়াই উচিত।
*আর্মি ক্যাম্পে পারমিশনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্যকোনো ফটো আইডির ফটোকপি লাগবে। ওখানে ফটোকপির দোকান নেই। ঢাকা থেকেই করে নিতে হবে।
*আলীকদমের পর আপনাকে নেটওয়ার্কের বাইরে থাকতে হবে।
*ট্রেকিংয়ের জন্য ট্রেকিং বুট ব্যবহার করুন। চাইলে প্লাস্টিক বা রাবারের স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন।
*ট্রেকিং রুটে জোঁক থাকতে পারে। সতর্ক থাকুন। তবে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নয়।
*চান্দের গাড়ির ছাদে উঠবেন না। আঁকাবাঁকা রাস্তায় ছাদে উঠা বিপদজনক।
*অনুমতি না নিয়ে আদিবাসীদের ছবি তুলবেন না। এটি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান।
*আদিবাসীদের কালচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্যকোনো জাতির মানুষ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগতো।
*কোনো প্রকার অপচনশীল বস্তু পাহাড়ে ফেলবেন না। শুধু পাহাড় নয়, এমনকি শহরেও ফেলবেন না। এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।

আরো পড়ুন

⦿ নাফাখুম
⦿ দেবতাখুম

বান্দরবানের অন্যান্য স্থানগুলোর ভ্রমণ তথ্য এখানে পড়ুন। ভ্রমণ বিষয়ক আপনার যেকোনো সাহায্যের জন্য গ্রিন বেল্ট এর ইনবক্সে নক করুন।

কেওক্রাডং

একসময় কেওক্রাডং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড় হিসেবে স্বীকৃত ছিলো। আধুনিক উচ্চতা পরিমাপক পদ্ধতিতে জরিপ করার পর এটির অবস্থান এখন পঞ্চম। তারপরও কেওক্রাডং কে বাংলাদেশের ছাদ হিসেবে অভিহিত করা যায়। এই পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আপনার যতদূর চোখ যাবে, ততদূর শুধু পাহাড়ের সমুদ্র দেখতে পাবেন। এখানে মেঘ ভেসে বেড়ায় যখন তখন। মেঘের সাথে বন পাহাড়ের মিতালী দেখতে আপনাকে কেওক্রাডং ভ্রমণ এ অন্তত একবার আসতেই হবে। কেওক্রাডং শব্দটি এসেছে মারমা ভাষা থেকে। এর অর্থ উঁচু পাথরের পাহাড়।

কেওক্রাডং যাওয়ার উপায়

কেওক্রাডং যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে বান্দরবান আসতে হবে। রাতের বাসে আসাই ভালো। ঢাকা থেকে এসি – নন এসি সব ধরণের বাসই বান্দরবান যায়। নন এসির মধ্যে শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বাস পাবেন। বাস ছাড়ে কলাবাগান, ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে। রাত এগারোটার মধ্যে লাস্ট বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে উঠতে হবে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সূবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, চট্টলা, মহানগর ও গোধুলী সহ অনেকগুলো ট্রেইন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেন ও আসন ভেদে ভাড়া ২০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানের বাস ছাড়ে নতুন ব্রিজ, দামপাড়া ও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে। বহদ্দারহাট থেকে ৩০ মিনিট পরপর ‘পূর্বাণী’ ও ‘পূরবী’ নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২২০ টাকা।

বান্দরবান থেকে রুমা বাজার

বান্দরবান থেকে কেওক্রাডং যেতে হলে প্রথমে রুমা বাজার যেতে হবে। রুমা বাজার জেলা শহর থেকে ৫০ কিঃমিঃ দূরে। বাসে বা জিপে করে রুমা যাওয়া যায়। বান্দরবান থেকে ১ ঘন্টা পরপর রুমার বাস ছাড়ে। ভাড়া ১২০ টাকা। যেতে সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মতো। বিকাল ৩টার মধ্যে লাস্ট বাস ছেড়ে যায়।

জিপে করে রুমা যেতে চাইলে রিজার্ভ নিতে হবে। ভাড়া পড়বে সিজন ভেদে ২৫০০ থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে। এক জিপে ১২/১৩ জন বসা যায়। যেতে সময় লাগবে ২ ঘন্টার মতো। শীতের সিজনে এই রুটে লোকাল জিপ পাওয়া যায়। জনপ্রতি ৮০ থেকে ১২০ টাকা ভাড়া নেয়।

রুমা বাজার থেকে বগালেক

রুমা বাজার পৌঁছে আপনার প্রথমে গাইড ঠিক করতে হবে কেওক্রাডং যাওয়ার জন্য। গাইড সমিতির অফিস থেকে রেজিস্টার্ড গাইড ঠিক করতে পারবেন। রেজিস্টার্ড গাইড ছাড়া আপনি কেওক্রাডং যাওয়ার অনুমতি পাবেন না। এরপর রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্পে সবার নাম ফোন নাম্বার সহ বিস্তারিত লিখে জমা দিতে হবে। আপনার হয়ে গাইডই এই কাজগুলো করবে। গাইড ফি আপনি কতদিন থাকবেন তার উপর নির্ভর করে ১৬০০ থেকে ২৬০০ টাকা পর্যন্ত হয়। এছাড়া গাইডের থাকা খাওয়ার সকল খরচ আপনাকেই বহন করতে হবে। কেওক্রাডং যাওয়ার কয়েকজন রেজিস্টার্ড গাইডের নাম্বার-

সুফল বড়ুয়া 01843-229547, ইসমাইল 01869-364977
প্রকাশ 01887-659360, হারুন 01828-872894
বাবুল 01552-432937, রঞ্জন 01827-713975
তাপস বড়ুয়া 01884756482

কেওক্রাডং যেতে প্রথমে পড়বে বগালেক। ওই রাতটা বগালেক থেকে পরদিন ভোরে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে ট্রেকিং শুরু করতে হয়। রুমা বাজার থেকে বগালেক পর্যন্ত জিপে যেতে যেতে পারবেন। ভাড়া ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। এক জিপে ১২/১৩ জন যাওয়া যায়। আপনার টিমে সদস্য সংখ্যা কম হলে অন্য কারো সাথে জিপ শেয়ার করতে পারেন। এছাড়া ১ ঘন্টা পরপর লোকাল জিপ ছাড়ে। ওগুলোতেও যেতে পারেন। ভাড়া ১০০ টাকা। বিকাল ৪টার পর রুমা যেতে বগালেকের উদ্দেশ্যে কোনো গাড়ি যেতে দেয় না আর্মি। তাই আপনাকে সকল কাজ ৪টার আগেই শেষ করতে হবে। রুমা থেকে বগালেকের দূরত্ব ১৭ কিঃমিঃ। যেতে ১ ঘন্টার মতো সময় লাগে।

বগালেক থেকে কেওক্রাডং

বগালেক পৌঁছে কোনো একটা আদিবাসী কটেজে উঠে রাতটা বগালেকের মনোরম পরিবেশে কাটিয়ে দিন। পরদিন ভোরে উঠে রওনা করতে হবে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। বাগালেক থেকে দুইভাবে কেওক্রাডং যাওয়া যায়। হয় ট্রেকিং করে, অথবা জিপে করে। ট্রেকিং করে যেতে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা সময় লাগে। পাড়ি দিতে হয় ছোট বড় বেশ কয়েকটা পাহাড়। জিপে গেলে সোয়া ১ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় কেওক্রাডং এর পাদদেশে। শুধুমাত্র শুকনো মৌসুমে এই রুটে কিছু ফোর হুইলার গাড়ি পাবেন। বর্ষা মৌসুমে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে।

কেওক্রাডং এর চূড়ায় কিছুটা সময় কাটিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে বগালেক চলে আসতে পারবেন। রাতটা বগালেকে কাটিয়ে দিয়ে পরদিন বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওনা করতে পারেন। তবে সবচেয়ে ভালো একটা রাত কেওক্রাডংয়ের উপরে কাটিয়ে দিলে। তাহলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দেখা পাবেন দেশের পঞ্চম উচ্চতম শৃঙ্গ থেকে। কেওক্রাডংয়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে দেশের সবগুলো সর্বোচ্চ পাহাড় চূড়া দেখা যায়।

কেওক্রাডংয়ে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা

কেওক্রাডংয়ে থাকার জন্য কয়েকটা আদিবাসী কটেজ আছে। ওসব কটেজেই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। থাকার জন্য জনপ্রতি খরচ হবে ১৫০ টাকা। খাওয়ার খরচ প্রতিবেলা ১০০ থেকে ২০০ টাকা।

বগালেকে থাকার জন্য আদিবাসীদের ছোট ছোট বেশ কিছু কটেজ আছে। ওগুলোতেই রাত্রি যাপন করতে হবে। এতে জনপ্রতি খরচ হবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এক রুমে ৫/৬ জন করে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। ফিমেইলদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা। আর কাপল হলে আলাদা কাপল কটেজ পাওয়া যায়। সবকিছু আগে থেকে গাইডকে বলে রাখলে সে ব্যবস্থা করে রাখবে। অথবা আপনি চাইলে ওখানে গিয়েও ঠিক করতে পারবেন। ঢাকা থেকে কটেজ ঠিক করতে চাইলে বুুকিংয়ের জন্য ফোন দিতে পারেন লারাম বম- 01552376551, বা সিয়াম দিদির 01840721590 নাম্বারে।

খাওয়ার ব্যবস্থা আছে আদিবাসী ঘর ও কটেজগুলোতে। জনপ্রতি খাওয়ার খরচ পড়বে প্রতিবেলা ৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। খাবার হয় প্যাকেজ সিস্টেমে। মেনু হিসেবে ভাত, ডাল, ভর্তা, ডিম মুরগী ইত্যাদি পাওয়া যায়। খাবার কতজন খাবেন, কী দিয়ে খাবেন ইত্যাদি আগে থেকে অর্ডার করতে হয়। গাইডকে বললেই হবে, সে অর্ডার করে দিবে। অথবা চাইলে আপনি নিজেও কথা বলে অর্ডার করতে পারেন। কটেজগুলোতে নিজস্ব বারবিকিউর ব্যবস্থা আছে। রাতে বগালেক পাড়ে মনোরম পরিবেশে বারবিকিউ পার্টি করে নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবেন।

কখন যাবেন কেওক্রাডং

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়াগুলোর মধ্যে কেওক্রাডং সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সুন্দরতম। তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অমোঘ টানে বছরজুড়ে এখানে এডভেঞ্চারপ্রেমীরা ছুটে আসেন। বর্ষায় প্রকৃতি সতেজ থাকে বলে পাহাড় সবচেয়ে বেশি সুন্দর। তবে এসময় বেশিরভাগ রুমা বাজারের পর জিপ চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে রুমা থেকে কেওক্রাডং পর্যন্ত পুরো পথটাই হেঁটে আসা যাওয়া করতে হয়। ট্রেকিংয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও শক্ত মানসিকতা না থাকলে বর্ষায় কেওক্রাডং ভ্রমণ এ না যাওয়াই ভালো। যারা ট্রেকিংয়ে নতুন ও কম সময়ে কেওক্রাডং থেকে ঘুরে আসতে চান তাদের জন্য শুকনো মৌমুমই বেস্ট। অর্থাৎ বলা চলে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কেওক্রাডং ভ্রমণ এর ভালো সময়।

কেওক্রাডং ভ্রমণ টিপস

*রুমাবাজারের পর বিদ্যুত নেই। কটেজগুলোতে সোলার প্যানেলে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা আছে। তবে সাথে করে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে গেলে ভালো।

* রবি ও টেলিটক বাদে অন্য ফোনের নেটওয়ার্ক নেই বগালেকে। আর কেওক্রাডংয়ে কোনো ফোনেরই নেটওয়ার্ক নেই।

* বগালেকে গোসল করতে চাইলে সাবধানে করবেন। সবসময় সতর্ক থাকা ভালো। সাঁতার দিতে গিয়ে অতীতে একাধিক মৃত্যু দেখেছে বগালেক।

*সাথে এনআইডি কার্ড রাখুন। এনআইডি না থাকলে যেকোনো ফটোআইডি কার্ডেও কাজ চলবে।

*যাত্রাপথে জিপের ছাদে উঠবেন না। এটি করতে আর্মির পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আছে। তাছাড়া পাহাড়ি পথে জিপের ছাদে উঠা বিপদজনক।

*আদিবাসীদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে ভুলবেন না। এটা সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান। আপনার কাণ্ডজ্ঞান আপনার ব্যাক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।

*পাহাড়িদের কালচারের প্রতি সম্মান দেখান। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্যকেউ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগতো।

*যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। সেটি শুধু পাহাড়ে নয়, এমনকি শহরেও।

আশেপাশে কী কী দেখার আছে
বগালেক থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার পথে দেখতে পারবেন চিংড়ি ঝর্ণা। এছাড়া বান্দরবানের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর ভ্রমণ তথ্য এখানে পড়ুন

আরো পড়ুন
⦿ নাফাখুম

নীলগিরি

দিগন্ত জোড়া সবুজ পাহাড় আর বিস্তীর্ণ প্যানারোমা, এর মাঝে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘেদের দল। স্বপ্নের মতো এই দৃশ্য আপনি বাস্তবে দেখতে পাবেন বাংলার দার্জিলিং খ্যাত নীলগিরি তে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নীলগিরির উচ্চতা ২২০০ ফিট। বান্দরবানের দূর্গম পাহেড়ের কোলে নীলগিরি সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রকৃতি এখানে বৈচিত্র্যময়। ক্ষণে ক্ষণে তার রূপ বদলায়।

সকালে একরকম তো সন্ধ্যায় তার অন্য-রূপ।

বান্দরবান জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিঃমিঃ দূরে নীলগিরির অবস্থান। এর খুব কাছেই রয়েছে পাহাড়ি গ্রাম কাপ্রু পাড়া। এটি ম্রো আদিবাসী অধ্যুষিত একটি জনপদ। তাই পাহাড়ীদের জীবন যাপন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারবেন খুব কাছ থেকে। নীলগিরির চূড়ায় দাঁড়িয়ে আকাশ পরিষ্কার থাকলে দূরের সাগর পর্যন্ত দেখা যায়! এছাড়া দেখতে পাবেন দেশের সর্বোচ্চ পর্বত সাকাহাফং, বগালেক, কেওক্রাডং ও সাঙ্গু নদী! এটি সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি পর্যটন কেন্দ্র। এর কাছেই রয়েছে আর্মি ক্যাম্প। তাই নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রকার সমস্যা নেই। আপনার কোনো প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে। আপ পরিবার পরিজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরে আসার জন্য নীলগিরি একটি আদর্শ স্থান।

কিভাবে নীলগিরি যাবেন

নীলগিরি যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে বান্দরবান আসতে হবে। রাতের বাসে আসাই ভালো। ঢাকা থেকে এসি – নন এসি সব ধরণের বাসই বান্দরবান যায়। নন এসির মধ্যে শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বাস পাবেন। বাস ছাড়ে কলাবাগান, ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে। রাত এগারোটার মধ্যে লাস্ট বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে উঠতে হবে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সূবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, চট্টলা, মহানগর ও গোধুলী সহ অনেকগুলো ট্রেইন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেন ও আসন ভেদে ভাড়া ২০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানের বাস পাবেন নতুন ব্রিজ, দামপাড়া ও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে। বহদ্দারহাট থেকে ৩০ মিনিট পরপর ‘পূর্বাণী’ ও ‘পূরবী’ নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২২০ টাকা।

বান্দরবান থেকে নীলগিরি

বান্দরবান থেকে বাসে, জিপে, চন্দের গাড়ি অথবা সিএনজিতে আপনি নীলগিরি যেতে পারেন। সিএনজিতে গেলে ভাড়া পড়বে সিজন ভেদে ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা। যদি সদস্য সংখ্যা ৬/৭ জন হয় তাহলে ল্যন্ড ক্রুজার জিপ নিতে পারেন। এতে ভাড়া পড়বে ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকা। আর চান্দের গাড়ির ভাড়া ৪৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। চান্দের গাড়িতে বসতে পারে ১২/১৩ জন।

বর্ষা মৌসুমে কম বেশি সারাদিন মেঘের দেখা পাওয়া যায় এখানে। তবে শুকনো মৌসুমে নীলগিরিতে মেঘ থাকে মূলত ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত। তাই মেঘ দেখতে চাইলে খুব ভোরে আপনাকে রওনা করতে হবে। যেন সকাল সাতটা আটটার মধ্যে নীলগিরি থাকতে পারেন। বান্দরবান থেকে জিপে নীলগিরি যেতে দেড় থেকে দুই ঘন্টার মতো সময় লাগে।

ভ্রমণ পরিকল্পনা

নীলগিরি যাওয়ার পথে পড়বে মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট, শৈলপ্রপাত ও চিম্বুক পাহাড়। আপনি গাড়ি থামিয়ে এই স্থানগুলো দেখতে দেখতে নীলগিরি যেতে পারবেন। তাহলে দুপুরের পরের সময়টা নীলগিরিতে কাটালেন। আবার চাইলে প্রথমে সকালে একটানে নীলগিরি চলে যাবেন। ফেরার পথে চিম্বুক শৈলপ্রপাত ও মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট দেখতে দেখতে আসবেন। এসব স্পটে যে থামবেন, এটা গাড়ি ঠিক করার সময়ই ড্রাইভারের সাথে কনফার্ম হয়ে নিবেন। শৈলপ্রপাতের ঝর্ণার জলে গা এলিয়ে বিভিন্ন পাহাড়ি ফলের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবেন। শৈলপ্রপাতের পাশেই বম আদিবাসী অধ্যুষিত পাড়া। বম তরুণ তরুণীরা এখানে আম, লিচু, পেপে, পেয়ারা, কলা সহ বিভিন্ন পাহাড়ি ফল বিক্রি করে বছরজুড়ে। সুস্বাদু এসব ফলের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

যারা দুইদিন বান্দরবান থেকে  নীলগিরি বাদেও স্বর্ণমন্দির, নীলাচল, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স সহ মেইন স্পটগুলো দেখতে চান, তাদের জন্য আমাদের ১ রাত দুইদিনের বিস্তারিত ভ্রমণ তথ্য পোস্টের শেষে দেওয়া আছে।

নীলগিরি ভ্রমণের সময়

বলা হয়ে থাকে কোনো ভ্রমণ স্থান যতই সুন্দর হোক, ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় না গেলে, ভালো নাও লাগতে পারে। নীলগিরি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও নিরাপদ পর্যটন স্পষ্ট হিসেবে স্বীকৃত। তাই বছরজুড়ে ভ্রমণপ্রেমীরা এখানে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন প্রকৃতির অমোঘ টানে। তারপরও বলা যায় চৈত্রের প্রচন্ড গরমে ও বর্ষার শুরুতে নীলগিরি ভ্রমণ না করাই ভালো। নীলগিরি ভ্রমণের উপযুক্ত সময় বর্ষার শেষ থেকে শরৎ হেমন্ত ও শীতকাল। অর্থাৎ জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত। বর্ষায় প্রকৃতি সবচেয়ে সতেজ ও সবুজ থাকে। তখন মেঘেদের আনাগোনা লুকোচুরি চলে দিনভর। মেঘের জন্য খুব বেশি দূরে দেখা না গেলেও মেঘের সমুদ্রে একদিন ডুব দেওয়াই যায়। আর শীতে যতদূর চোখ যায় ততদূর দেখা যায় বলে চমৎকার ভিউয়ের সৃষ্টি হয়!

কম খরচে নীলগিরি ভ্রমণ

ট্যুরের সদস্য সংখ্যা কম হলে, কিংবা কম খরচে নীলগিরি যেতে চাইলে আপনি বাসে করে যেতে পারবেন। বান্দরবান থেকে থানচিগামী যেকোনো বাসে উঠলে নীলগিরিতে নামিয়ে দিবে। ভাড়া জনপ্রতি ১২০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য টিমের সাথে জিপ শেয়ার করতে পারেন। এতেও কম খরচ হবে। সবচেয়ে ভালো হয় নিজেরা গ্রুপ করে যেতে পারলে। গ্রুপে গেলে সব খরচ ভাগ হয় বলে কম খরচে ঘুরে আসা যায়।

কোথায় থাকবেন

নীলগিরিতে থাকার জন্য সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত কটেজ আছে ৬টি। এসব কটেজে থাকার জন্য রুম ভাড়া পড়বে ৪০০০ থেকে ১০০০০ টাকা। থাকতে চাইলে ক্ষেত্রবিশেষে দেড় থেকে দুই মাস আগে বুকিং দিতে হবে। বুকিংয়ের জন্য আর্মির অফিসার পর্যায়ের কারো রেফারেন্স লাগে। সুযোগ থাকলে নীলগিরিতে একটা রাত কাটানো যেতেই পারে।

তবে বেশিরভাগ পর্যটকই এত ঝামেলায় না গিয়ে নীলগিরি ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যে আবার বান্দরবান শহরে ফিরে আসেন। বান্দরবানে থাকার জন্য রয়েছে বিভিন্ন মানের অনেকগুলো হোটেল। রয়েছে কটেজ ও রিসোর্ট। এর মধ্যে কয়েকটি হোটেল হলো-

হোটেল হিল ভিউ: এর অবস্থান বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। এটি বেশ ভালো মানের একটি হোটেল। রুম ভাড়া ১২০০ থেকে ২৮০০ টাকা।
পর্যটন মোটেল: এটি শহর ৪ কিঃমিঃ দূরে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এর কাছে অবস্থিত। রুম ভাড়া ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
হোটেল নাইট হ্যাভেন: এটিও শহর থেকে ৪ কিঃমিঃ দূরে নীলাচলের কাছে। এর রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা।
হোটেল প্লাজা: এটি শহরের মধ্যেই। এই হেটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। ছিমছাম গুছানো সুন্দর হোটেল। রুম ভাড়া পড়বে ১৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা।
রিভার ভিউ: শহরের ভিতর সাঙ্গু নদীর পাড়ে এই হোটেলটির অবস্থান। রুম ভাড়া ৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা।

নীলগিরি আর্মি রিসোর্ট | ছবি: এ.কে.এম মাসুদুজ্জামান

কোথায় খাবেন

নীলগিরিতে খাওয়ার জন্য একটি ক্যান্টিন রয়েছে। ওখানে দুপুরে খাওয়া যেতে পারে। খাবার জন্য আগে থেকে অর্ডার করতে হয়। এছাড়া নীলগিরির আগে চিম্বুক পাহাড়ের সাথে আর্মির আরেকটি ক্যান্টিন আছে। ওখানে সাধারণত খিছুড়ি মুরগির মাংস পাওয়া যায়। আর বান্দরবান শহরে খাওয়ার জন্য রয়েছে বেশকিছু রেস্তোরা। এর মধ্যে রূপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট, কলাপাতা রেস্টুরেন্ট, ফুড প্যালেস, রি সং সং, তাজিং ডং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

নীলগিরি ভ্রমণ খরচ

ভ্রমণের খরচ সবসময় নিজের উপর নির্ভর করে। কেউ কম খরচে ঘুরে আসতে পারেন। অনেকে একটু বেশি আরাম আয়েশ পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে খরচ অনেকটা বাড়ে। বেশিরভাগ ভ্রমণকারী এই দুইটা বিষয়ে সামঞ্জস্য রেখে ঘুরতে পছন্দ করেন। নীলগিরি ভ্রমণের খরচ সম্পর্কে একটু ধারণা দেওয়া যাক।

বাস ভাড়া আসা যাওয়ায় ৬২০ x ২ = ১২৪০ টাকা।
এসি বাসের ভাড়া আসা যাওয়া ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
হোটেল ভাড়া জনপ্রতি ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
যানবাহন ভাড়া দুইদিনে সিএনজি নিলে ৩০০০ টাকা, জিপ ৫৫০০ ও চান্দের গাড়ি ভাড়া ৮৫০০ টাকা। সিএনজিতে ৪ জন, জিপে ৭ জন এবং চান্দের গাড়িতে ১৩ জন বসতে পারবেন সর্বোচ্চ।
খাবার খরচ প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।
নীলগিরি এন্ট্রি ফি জনপ্রতি ৫০ টাকা ও গাড়ি পার্কিং চার্জ ৩০০ টাকা।

নীলগিরি ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

*গ্রুপ ট্যুর হলে ভ্রমণ খরচ কমবে।
*হোটেল ও জিপ নেওয়ার সময় দরদাম করে নিবেন।
*চান্দের গাড়ির ছাদে উঠবেন না। আঁকাবাঁকা রাস্তায় ছাদে উঠা বিপদজনক। আর্মির পক্ষ থেকেও নিষেধ আছে।
*শৈলপ্রপাতে ঝর্ণার জলে ভিজতে চাইলে সাবধানে নামবে। জায়গাটা পিচ্ছিল।
*অনুমতি না নিয়ে আদিবাসীদের ছবি তুলবেন না। এটি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান।
*আদিবাসীদের কালচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্যকোনো জাতির মানুষ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগতো।
*কোনো প্রকার অপচনশীল বস্তু পাহাড়ে ফেলবেন না। শুধু পাহাড় নয়, এমনকি আপনার শহরেও ফেলবেন না। এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।

আরো পড়ুন

⦿ দুই দিনের বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান (নীলগিরি, নীলাচল, মেঘলা, স্বর্ণমন্দির ও শৈলপ্রপাত)

⦿ নাফাখুম, বগালেক কেওক্রাডং সহ বান্দরবানের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোর ভ্রমণ তথ্য এখানে পড়ুন

দেবতাখুম

দেবতাকুম বা দেবতাখুম (Debotakhum) বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়িতে অবস্থিত একটি খুম। বান্দরবানকে বলা যায় খুমের স্বর্গরাজ্য। এডভেঞ্চারপ্রেমীরা ঘুরতে পছন্দ করেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের এই পাড়া থেকে ওই পাড়ায়। বছরজুড়ে ছুটে যান পাহাড়ের আনাছে কানাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সৌন্দর্যের খোঁজে। বান্দরবানে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য মনি মুক্তোর মধ্যে নতুন করে জনপ্রিয় হওয়া একটি ভ্রমণ গন্তব্য হলো এই দেবতাকুম।

বান্দরবান জেলা শহর থেকে ২০ কিঃমিঃ দূরের রোয়াংছড়ি উপজেলার শীলবাঁধা পাড়ায় দেবতাকুমের অবস্থান। খুমের গভীরতা এখানে ৫০ থেকে ৭০ ফিট। আর দৈর্ঘে ৬০০ ফিট। এটি বান্দরবানের আরেক জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান ভেলাখুম থেকে অনেক বড় এবং অনেক বেশি ওয়াইল্ড। পাহাড়ে ট্রেকিং বরাবরই রোমাঞ্চকর। এই রোমাঞ্চের হাতছানিতে আপনি যখন ট্রেকিং করে দেবতাকুম এসে পৌঁছাবেন, প্রকৃতির রূপ লাবণ্যে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। দুই পাশে উঁচু পাথুরে ঢাল, কলকল শব্দে বয়ে যাও পাহাড়ি ঝিরি, আর শুনশান খুমের পাড়ে নিজেকে আবিষ্কার করবেন ভিন্ন এক স্বর্গীয় পরিবেশে! যে পরিবেশে নিজেকে বিলীন করে দিতে ইচ্ছে করে প্রকৃতির মাঝে।

কিভাবে দেবতাখুম যাবেন

দেবতাকুম যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে বান্দরবান আসতে হবে। রাতের বাসে আসাই ভালো। ঢাকা থেকে এসি – নন এসি সব ধরণের বাসই বান্দরবান যায়। নন এসির মধ্যে শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বাস পাবেন। বাস ছাড়ে কলাবাগান, ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে। রাত এগারোটার মধ্যে লাস্ট বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে উঠতে হবে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সূবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, চট্টলা, মহানগর ও গোধুলী সহ অনেকগুলো ট্রেইন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেন ও আসন ভেদে ভাড়া ২০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানের বাস ছাড়ে নতুন ব্রিজ, দামপাড়া ও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে। বহদ্দারহাট থেকে ৩০ মিনিট পরপর ‘পূর্বাণী’ ও ‘পূরবী’ নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২২০ টাকা।

বান্দরবান থেকে কচ্ছপতলী

বান্দরবান থেকে দেবতাখুম যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে রোয়াংছড়ি উপজেলার কচ্ছপতলী আর্মি ক্যাম্পে। বান্দরবান শহর থেকে রোয়াংছড়ির দূরত্ব ২০ কিঃমিঃ। রোয়াংছড়ি থেকে কচ্ছপতলী ৫/৬ কিঃমিঃ। প্রথমে বাসে করে রোয়াংছড়ি, পরে ওখান থেকে সিএনজি নিয়ে কচ্ছপতলী যাওয়া যায়। বান্দরবান থেকে প্রতি ঘন্টায় রোয়াংছড়ির বাস ছাড়ে, ভাড়া ৬০ টাকা। আর রোয়াছড়ি থেকে কচ্ছপতলীর সিএনজি ভাড়া ১৫০ টাকার মতো। এছাড়া আপনি চাইলে বান্দরবান শহর থেকে সরাসরি জিপেও কচ্ছপতলী চলে যেতে পারেন। জিপ ভাড়া ১৮০০ টাকা। এক জিপে ১২/১৩ জন বসতে পারবেন।

কচ্ছপতলী থেকে দেবতাখুম

কচ্ছপতলীতে প্রথম কাজ হবে ওখানকার আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে রিপোর্ট করা। সেখানে সবার জাতীয় পরিচয় পত্র বা অন্যকোনো ফটোআইডির ফটোকপি জমা দিয়ে পারমিশন নিতে হবে। ফটোকপি ঢাকা থেকেই করে নিবেন। যেহেতু ওখানে ফটোকপি করার কোনো দোকান পাওয়া যাবেনা। এরপর আর্মিকে বললে তারা গাইড ঠিক করে দিবে। আপনি চাইলে নিজেও গাইড ঠিক করতে পারবেন। গাইড ফি ৫০০ টাকা।

কয়েকজন গাইডের নাম্বার

আপন জয় তঞ্চঙ্গ্যা 01882-267714
শুভজয় তঞ্চঙ্গ্যা 01881-554582
রুন্ময় লাল 01857-272095
চিকু 01890-170803

গাইড ঠিক করার পর ট্রেকিং শুরু করুন দেবতাকুমের উদ্দেশ্যে। এটি মোটামোটি মধ্যম মানের একটি ট্রেকিং রুট। কচ্ছপতলী থেকে দেবতাখুম পৌঁছাতে আপনার ১.৫ থেকে ২ ঘন্টার মতো সময় লাগবে। পাহাড়, বন, নদী ঝিরির পাশ দিয়ে আপনার ট্রেকিং চলতে থাকবে। ঝিরি পার হতে কয়েকবার। একসময় পৌঁছে যাবেন শীলবাঁধা পাড়ায়। এই পাড়াই মূলত আপনার বেজক্যাম্প। পাড়ার পাশে শীলবাঁধা ঝর্ণা নামে একটি ঝর্ণা আছে। যাওয়া বা আসার পথে ওটাও দেখে আসতে পারবেন।

এই পাড়া থেকে দেবতাকুম যেতে ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে। চারপাশে পাখির ডাক, সবুজ বন, ছড়ানো ছিটানো ছোট বড় পাথর, আর কলকল শব্দে অবিরাম বয়ে যাওয়া ঝিরির পাশ দিয়ে শুধু হেঁটে চলা। দেবতাকুমে বাঁশের ভেলায় ভেসে আপনি অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারবেন অনেকটা সময়।

দেবতাখুম এর শুরুর অংশ | ছবি : ইমরান ইমু

কোথায় খাবেন

সকালের ব্রেকফাস্ট বান্দরবান শহরেই করে নিন। বাসস্ট্যান্ডের পাশেই অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট আছে। এর মধ্যে রূপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট ও কলাপাতা রেস্তোরা মানসম্পন্ন। ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ব্রেকফাস্ট হয়ে যাবে। কচ্ছপতলী পৌঁছে ট্রেকিং শুরু করার আগেই দুপুরের খাবারের অর্ডার দিয়ে নিন। নয়তো পরে ট্রেকিং শেষ করে এসে খাবার পাবেন না। কচ্ছপতলীতে ৩/৪টি খাবারের দোকান আছে। আপনি অর্ডার করলেই মূলত তারা রান্না করবে। মুরগী মাংস, ডাল আর আলুভর্তা পাবেন মেনু হিসেবে। খাবার খরচ আসবে ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মতো।

দেবতাখুম ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সারাবছরই দেবতাখুম যাওয়া যায়। তবে ভরা বর্ষায় অনেক সময় ঝিরি ও খুমে পানি অতিরিক্ত বেড়ে গেলে আর্মি তখন দেবতাকুম যাওয়ার পারমিশন দেয়না। আবার শীতের শেষ থেকে গ্রীষ্মের শুরু পর্যন্ত পানি খুব কমে যায়, তখন আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। অর্থাৎ জুন থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত দেবতাকুম যাওয়ার ভালো সময়। যেতে চাইলে এই সময়ের মধ্যেই ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন।

কোথায় থাকবেন

আপনি সকালে বান্দরবান থেকে দেবতাকুমের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে সন্ধ্যার মধ্যেই আবার শহরে এসে পৌঁছাতে পারবেন। তাই আপনি চাইলে রাতের খাবার শেষে সেদিনই ঢাকা অথবা আপনার গন্তব্যে ফিরে আসতে পারেন। আর থেকে যেতে চাইলে বান্দরবান শহরে বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল রয়েছে।

বান্দরবানের কয়েকটি হোটেল

হোটেল হিল ভিউ: বান্দরবান শহরের মূল বাস স্ট্যান্ডের পাশেই এই হোটেলটি। মোটামুটি বেশ ভালো মানের একটি হোটেল। রুম ভাড়া ১২০০ থেকে ২৮০০ টাকা।

হোটেল প্লাজা: এটিও বেশ ভালো মানের একটি হোটেল। এই হেটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। ছিমছাম গুছানো সুন্দর হোটেল। রুম ভাড়া পড়বে ১৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা।

রিভার ভিউ: শহরের ভিতর সাঙ্গু নদীর পাড়ে এই হোটেলটির অবস্থান। রুম ভাড়া ৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা।

হোটেল নাইট হ্যাভেন: এটিও শহর থেকে ৪ কিঃমিঃ দূরে নীলাচলের কাছে। এর রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা।

পর্যটন মোটেল: এটি শহর ৪ কিঃমিঃ দূরে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এর কাছে অবস্থিত। রুম ভাড়া ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

দেবতাকুম ভ্রমণ টিপস

*কচ্ছপতলীতে গিয়ে আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট না করে আপনি দেবতাকুম যেতে পারবেন না।
*পারমিশনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্যকোনো ফটো আইডির ফটোকপি লাগবে। ওখানে ফটোকপির দোকান নেই। ঢাকা থেকেই করে নিতে হবে।
*কচ্ছপতলী পর আপনাকে নেটওয়ার্কের বাইরে থাকতে হবে।
*ট্রেকিংয়ের জন্য ট্রেকিং বুট ব্যবহার করুন। চাইলে প্লাস্টিক বা রাবারের স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন।
* দেবতাখুম এ ভেলায় চড়ার জন্য লাইফ জ্যাকেট সাথে করে নিয়ে যাবেন।
*চান্দের গাড়ির ছাদে উঠবেন না। আঁকাবাঁকা রাস্তায় ছাদে উঠা বিপদজনক।
*অনুমতি না নিয়ে আদিবাসীদের ছবি তুলবেন না। এটি সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান।
*আদিবাসীদের কালচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। এমন কিছু বলবেন না, যেটি অন্যকোনো জাতির মানুষ আপনাকে বললে আপনারও খারাপ লাগতো।
*কোনো প্রকার অপচনশীল বস্তু পাহাড়ে ফেলবেন না। শুধু পাহাড় নয়, শহরেও ফেলবেন না। এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে রিপ্রেজেন্ট করে।

আরো পড়ুন

বান্দরবানের অন্যান্য স্থানগুলোর ভ্রমণ তথ্য এখানে পড়ুন। এছাড়া যারা ঝামেলা এড়াতে ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর দেবতাখুম ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান

বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরতম জেলার নাম বান্দরবান। আপনার বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান এ মেঘ ছুঁয়ে দেখতে চাইলে যেমন এখানকার নীলগিরি নীলাচল যেতে হবে, তেমনি পাহাড়ি রূপ ও পাহাড়ী সংস্কৃতি দেখার জন্য ঘুরতে হবে স্বর্ণমন্দির, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক ইত্যাদি। এছাড়া এডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য রয়েছে নাফাখুম, অমিয়াখুম, বগালেক, কেওক্রাডং, জাদিপাই ঝর্ণা, ডিম পাহাড়, দেবতাকুম, আলীকদম সহ অনেক জায়গা। বলা হয়ে থাকে বান্দরবান ভ্রমণ তালিকায় না থাকলে একজন বাংলাদেশী পর্যটকের বাকেট লিস্ট অসম্পূর্ণ থাকে! প্রকৃতিক রূপ বৈচিত্র্যে অনিন্দ্য সুন্দর এই জেলাকে বলা হয় “পাহাড়ি কন্যা”।

বান্দরবান ভ্রমণ পরিকল্পনা

এই বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান মূলত যারা ফ্যামিলি নিয়ে বান্দরবান যেতে চান তাদের জন্য। যেইসব জায়গা পরিবার পরিবার পরিজন নিয়ে ঘোরার উপযুক্ত না, সেইসব স্পট বাদ দেওয়া হয়েছে। যারা প্রথমবার বান্দরবান যাবেন, কিংবা মেঘের রাজ্যে পরিবার পরিজন বা বন্ধুবান্ধব সহ দুটো দিন কাটিয়ে আসতে চান, তাদের জন্য এই ভ্রমণ পরিকল্পনাটি ফলপ্রসু হবে। এই ট্যুর প্ল্যানে ঘোরার জন্য আপনার কমপক্ষে ১ রাত ২ দিন লাগবে। ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে নিখুঁত ট্যুর প্ল্যান খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে সময় বাঁচে এবং কম খরচে ঘোরা যায়।

যা যা দেখবো এই ট্যুরে
১ম দিনঃ নীলগিরি, চিম্বুক পাহাড়, শৈলপ্রপাত
২য় দিনঃ নীলাচল, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, স্বর্ণমন্দির

বান্দরবন ঘুরতে আপনাকে বাহন হিসেবে সিএনজি, ল্যন্ডক্রুজার জীপ বা চান্দের গাড়ি নিতে হবে। সিএনজিতে সর্বোচ্চ ৪ জন, ল্যান্ডক্রুজারে ৭ জন ও চান্দের গাড়িতে সর্বোচ্চ ১৩ জন বসা যায়। সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী ঘোরার বাহন ঠিক করুন।

প্রথম দিন

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে রাতের বাসে রওনা দিলে ভোরে বান্দরবান এসে পৌঁছে যাবেন। চট্টগ্রাম থেকে যারা আসবেন তারা খুব ভোরে রওনা করলে সকালের মধ্যে বান্দরবান থাকতে পারবেন। এরপর প্রথম কাজ হবে হোটেল নিয়ে নেওয়া। আগে থেকে হোটেল ঠিক করে রাখতে পারেন, চাইলে বান্দরবান এসেও হোটেল নেওয়া যাবে। এরপর ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা সেরে রওনা করুন নীলগিরির উদ্দেশ্যে। যাওয়ার পথে পড়বে শৈলপ্রপাত, মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট ও চিম্বুক পাহাড়। যাওয়ার সময় গাড়ি থামিয়ে এগুলো দেখতে দেখতে যেতে পারেন। অথবা সরাসরি নীলগিরি চলে যেতে পারেন। আসার পথে দেখতে দেখতে আসবেন। পাহাড়ের গা বেয়ে আকাবাঁকা পথ ধরে চলে যাওয়া নীলগিরির রাস্তা আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্রতিটা বাঁকে নতুন সৌন্দর্য।

সন্ধ্যার মধ্যে আবার বান্দরবান শহরে ফিরে আসুন। এরপর হোটেলে ফ্রেশ হয়ে সন্ধ্যার পরের সময়টা শহরে ঘোরাঘুরি করে কাটিয়ে দিতে পারেন। চাইলে সাঙ্গু ব্রিজে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ঘুরে আসা যায়। শহরে বিভিন্ন আদিবাসী পণ্যের দোকান আছে। প্রিয়জন বা কাউকে গিফট দেওয়ার জন্য এসব দোকানে বিভিন্ন রকম স্যুভেনির পাবেন।

বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরির দূরত্ব ৫০ কিঃমিঃ। আসা যাওয়াতে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা লাগবে। এর সাথে ঘোরাঘুরির সময় যুক্ত হলে ৭/৮ ঘন্টা লেগে যায়। সুতরাং ঘোরাঘুরির সময় ঘড়ির দিকে তাকাতে ভুলবেন না। এই স্পটগুলো ঘুরে দেখতে সিনজি ভাড়া সম্ভাব্য ২০০০ টাকা, জিপ ভাড়া ২৪০০ থেকে ৩০০০ টাকা, এবং চান্দের গাড়ির ভাড়া ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। গাড়ি নেওয়ার সময় ভালোমতো দরদাম করে নিবেন। ছুটির দিন ছাড়া গেলে গাড়ি কিছুটা কম খরচে পাওয়া যাবে।

দ্বিতীয় দিন

আগেরদিন অনেক সারাদিন যেহেতু ভ্রমণের ধকল গেছে, তাই এদিন চাইলে একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠতে পারেন। এরপর ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিন। এদিন আমরা দেখবো স্বর্ণমন্দির, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স ও নীলাচল। প্রত্যেকটা স্পটই শহর থেকে ৫ কিঃমিঃ এর মধ্যে।

এই জায়গাগুলো দুইভাবে ঘোরা যাবে। সকালবেলা স্বর্ণমন্দির ঘুরে হোটেলে এসে রেস্ট নিয়ে দুপুরের পর মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র এবং নীলাচল ঘোরা যায়। মেঘলা এবং নীলাচল পাশাপাশি।

অথবা দুপুর বারোটার দিকে বের হয়ে প্রথমে স্বর্ণমন্দির এরপর লাঞ্চ। তারপর চলে যান মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র। মনোরম পরিবেশের বিকেলটা কাটিয়ে দিতে পারেন নীলাচলে। নীলাচল থেকে শহরে ফিরতে ২০ মিনিট লাগবে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে শহরে ফিরে আসুন। এরপর রাতের খাবার খেয়ে রাতের বাসে আপনার গন্তব্যে ফিরে ফিরতে চলুন কিছু সুন্দর স্মৃতি নিয়ে।

বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান এর এদিনের স্পটগুলো ঘুরতে রিজার্ভ সিএনজিতে আপনার খরচ হবে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। জিপে লাগবে লাগবে ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা এবং চান্দের গাড়ি নিলে খরচ পড়বে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

নীলগিরি আর্মি রিসোর্ট | ছবি: এ.কে.এম মাসুদুজ্জামান

কিভাবে বান্দরবান যাবেন

দেশের প্রায় সব বিভাগীয় শহর থেকে বান্দরবানের বাস আছে। ঢাকা থেকে এসি – নন এসি সব ধরণের বাসই বান্দরবান যায়। নন এসির মধ্যে শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বাস পাবেন। বাস ছাড়ে কলাবাগান, ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে। রাত এগারোটার মধ্যে লাস্ট বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে উঠতে হবে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সূবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, মহানগর ও গোধুলী সহ অনেকগুলো ট্রেইন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেন ও আসন ভেদে ভাড়া ২০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে হলে প্রথমে বহদ্দারহাট যেতে হবে। ওখান থেকে ৩০ মিনিট পরপর ‘পূর্বাণী’ ও ‘পূরবী’ নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২২০ টাকা।

ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বান্দরবান প্রকৃতির এর অপূর্ব লীলাভূমি। এর সৌন্দর্যের টানে বছরজুড়েই এখানে পর্যটকরা ছুটে আসেন। প্রকৃতি এখানে রূপ বদলায় প্রতিটা মৌসুমে। এক এক সিজনে বান্দরবন একেক রকম। যারা মেঘ আর সতেজ প্রকৃতি দেখতে চান তাদের জন্য বান্দরবান ঘোরার আদর্শ সময় হলো বর্ষার শুরু থেকে হেমন্ত পর্যন্ত। অর্থাৎ জুন থেকে নভেম্বর। আর যারা বর্ষা এড়িয়ে শুকনো মৌসুমে বান্দরবানের ভিউ দেখতে চান তাদের জন্য ভালো সময় হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে মার্চ। এপ্রিল -মে – জুন এই তিন মাস প্রচন্ড গরম থাকে বলে তখন বান্দরবান ভ্রমণ পরিকল্পনা না করাই শ্রেয়।

থাকার ব্যবস্থা

বান্দরবানে থাকার জন্য শহর ও এর আশেপাশে বেশকিছু হোটেল ও রিসোর্ট আছে। আপনার সুবিধামতো এর যেকোনোটিতে থাকতে পারেন। কয়েকটি হোটেলের নাম ও ফোন নাম্বার-

হোটেল হিল ভিউ: এর অবস্থান বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। এটি বেশ ভালো মানের একটি হোটেল। রুম ভাড়া ১২০০ থেকে ২৮০০ টাকা।
পর্যটন মোটেল: এটি শহর ৪ কিঃমিঃ দূরে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এর কাছে অবস্থিত। রুম ভাড়া ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
হোটেল নাইট হ্যাভেন: এটিও শহর থেকে ৪ কিঃমিঃ দূরে নীলাচলের কাছে। এর রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা।
হোটেল প্লাজা: এটি শহরের মধ্যেই। এই হেটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। ছিমছাম গুছানো সুন্দর হোটেল। রুম ভাড়া পড়বে ১৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা।
রিভার ভিউ: শহরের ভিতর সাঙ্গু নদীর পাড়ে এই হোটেলটির অবস্থান। রুম ভাড়া ৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা।

নীলাচল | ছবি: মহিন রিয়াদ

কোথায় খাবেন

বান্দরবান শহরে খাওয়ার জন্য রয়েছে বেশকিছু রেস্তোরা। এর মধ্যে রূপসী বাংলা রেস্টুরেন্টে, কলাপাতা রেস্টুরেন্ট, ফুড প্যালেস, রি সং সং, তাজিং ডং ইত্যাদি রেস্তোরাঁয় খেতে পারেন।

বান্দরবান ভ্রমণ খরচ

একটা জায়গা ভ্রমণে কেমন খরচ হতে পারে সেটা সম্পূর্ণ নিজের উপর নিজের করে। কেউ হয়তো খুব কম খরচে ঘুরতে চান। আবার কেউ হয়তো একটু আরাম আয়েশ লাক্সারি বেশি পছন্দ করেন। এতে ভ্রমণ খরচ কিছুটা বাড়ে। বেশিরভাগ পর্যটক এই দুইটার মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে ঘুরতে পছন্দ করেন। এই বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান এর ভ্রমণ খরচ সম্পর্কে একটু ধারণা দেওয়া যাক-

বাস ভাড়া আসা যাওয়ায় ৬২০ x ২ = ১২৪০ টাকা।
এসি বাসের ভাড়া আসা যাওয়া ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
হোটেল ভাড়া জনপ্রতি ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
যানবাহন ভাড়া দুইদিনে সিএনজি নিলে ৩০০০ টাকা, জিপ ৫৫০০ ও চান্দের গাড়ি ভাড়া ৮৫০০ টাকা। সিএনজিতে ৪ জন, জিপে ৭ জন এবং চান্দের গাড়িতে ১৩ জন বসতে পারবেন সর্বোচ্চ।
খাবার খরচ প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।
এন্ট্রি ফি সবগুলো স্পট মিলে জনপ্রতি ২০০ টাকা।
*এর সাথে পার্সোনাল অন্যান্য খরচ যুক্ত হবে।

কম খরচে বান্দরবান ভ্রমণ

স্টুডেন্ট, ব্যাকপ্যাকার কিংবা বাজেট ট্রাভেলাররা কম খরচে ঘুরতে পছন্দ করেন। কম খরচে ঘুরতে হলে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। শুক্রবার কিংবা সরকারী ছুটির দিনে না যাওয়াই ভালো। মিড উইকে গেলে হোটেল ও জিপ ভাড়া কম পড়বে। শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে হেঁটে পাঁচ মিনিট সামনে গেলে বাজেট হোটেল আছে অনেক। ছিমছাম গুছানো পরিচ্ছন্ন এসব হোটেলে লাক্সারি না থাকলেও ব্যাকপ্যাকারদের জন্য আদর্শ। কম খরচে এসব হোটেল পেয়ে যাবেন। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসে পর্যটকদের প্রচুর ভিড় হয় বান্দরবানে। সবকিছুর খরচ তুলনামূলক বেশি থাকে। এসময় ওখানে ঘুরতে না যাওয়াই ভালো। ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে যে বিষটা সবসময় খেয়াল রাখবেন, নিজেরা গ্রুপ করে গেলে খরচ কম পড়ে। খরচ তখন সবার সাথে ভাগাভাগি হয়ে যায়। এতে খরচ কমলেও আনন্দের কমতি হবেনা।

নাফাখুম বগালেক সহ বান্দরবানের অন্যান্য স্থানগুলোর ভ্রমণ তথ্য এখানে পড়ুন। এছাড়া যারা ঝামেলা এড়াতে ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর বান্দরবান ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

নাফাখুম

নাফাখুম জলপ্রপাত (Nafakhum Waterfall) এর অবস্থান বান্দরবানের সর্বদক্ষিণের উপজেলা থানচির রেমাক্রি ইউনিয়নে। আয়তন ও পানিপ্রবাহের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলপ্রপাত। ঝর্ণাটি বাংলার নায়াগ্রা নামে পরিচিত। রেমাক্রি অঞ্চলটি মূলত মারমা অধ্যুষিত। মারমা ভাষায় খুম মানে জলপ্রপাত। রেমাক্রি খালের পানি পাথুরেপথে নামতে গিয়ে চমৎকার এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে। সবুজপাহাড় – বন – পাথুরে ভূমির মাঝখানে এটি স্বপ্নময় অসাধারণ একটি স্থান। নিজের চোখে দেখা ছাড়া এর বর্ণনা পড়ে কিছুই অনুধাবন করা যাবেনা। তাই এডভেঞ্চারপ্রেমীরা প্রকৃতির টানে নাফাখুম ভ্রমণ এর উদ্দেশ্যে ছুটে আসেন।

কিভাবে যাবেন নাফাখুম জলপ্রপাত

নাফাখুম যেতে হলে প্রথমে বান্দরবান যেতে হবে। ঢাকা থেকে এসি, নন এসি সব ধরণের বাসই বান্দরবান যায়। নন এসির মধ্যে শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বাস পাবেন। ভাড়া ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে যেতে হলে প্রথমে বহদ্দারহাট যেতে হবে। ওখান থেকে ৩০ মিনিট পরপর ‘পূর্বাণী’ ও ‘পূরবী’ নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২২০ টাকা।

বান্দরবান থেকে থানচি

বান্দরবান পৌছানোর পর আপনাকে যেতে হবে ৮২ কিঃমিঃ দূরের উপজেলা থানচিতে। বাসে অথবা রিজার্ভ জিপে দুইভাবে থানচি যাওয়া যায়। জিপে গেলে ভাড়া পড়বে ৫৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা। আসা যাওয়া ১২০০০ টাকা। এক জিপে ১২/১৩ জন বসা যায়। জিপে সময় লাগে সাড়ে ৩ ঘন্টা।

বাসে না যেতে চাইলে থানচি বাস স্ট্যান্ড থেকে লোকাল বাস পাবেন। ভাড়া ২০০ টাকা। এক ঘন্টা পরপর বাস ছাড়ে। লাস্ট বাস দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে ছেড়ে যায়। বাসে যেতে সময় লাগবে সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা। যাত্রাপথে পড়বে মিলনছড়ি, চিম্বুক পাহাড় ও নীলগিরি।

থানচি থেকে রেমাক্রি

থানচি পৌছানোর পর আপনার প্রথম কাজ হবে গাইড ঠিক করা। গাইড সমিতির অফিস আছে, আপনি যে কাউকে বললেই দেখিয়ে দিবে। সমিতির অফিস ফি ১০০ টাকা, এবং গাইড ফি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা।

এরপর সাদাকাগজে আপনার টিমের সব টুরিষ্টদের নাম, ঠিকানা, পিতার নাম, ফোন নাম্বার, মাঝির নাম, গাইডের নামও জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি ইত্যাদি জমা দিয়ে নাফাখুম জলপ্রপাত যাওয়ার অনুমতি নিতে হবে। আপনার হয়ে গাইডই কাজগুলো করে দিবে।

রেমাক্রি যেহেতু নৌপথে যেতে হবে, তাই আপনাকে নৌকা নিতে হবে। আপডাউন নৌকা ভাড়া পড়বে ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকা। এক নৌকায় ৪ থেকে ৫ জন বসা যায়। থানচি থেকে রেমাক্রি পর্যন্ত যেতে নোকায় সময় লাগবে ২.৫ থেকে ৩ ঘন্টার মতো। শুকনো মৌসুমে সাঙ্গু ( শঙ্খ ) নদীতে পানি কম থাকে বলে কয়েক জায়য়ায় আপনাকে নৌকা থেকে নামতে হতে পারে। যাত্রাপথে সাঙ্গু নদীর অপার সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। যাওয়ার পথেই পরবে পদ্মমুখ ঝিরি, ভূ-স্বর্গ খ্যাত তিন্দু, রাজাপাথর বড়পাথর এলাকা ও রেমাক্রি ফলস।

একটা বিষয় বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে দুপুর ৩ টার পর ঘাট থেকে কোনো নৌকা রেমাক্রির উদ্দেশ্যে ছাড়ার পারমিশন পাওয়া যাবেনা। অর্থাৎ আপনাকে দিনে দিনে রেমাক্রি পৌঁছাতে চাইলে দুপুর ২টার মধ্যে থানচি থাকতে হবে। অন্যথায় ট্যুর শেষ করতে ১ দিন বেশি সময় লাগবে।

রেমাক্রি থেকে নাফাখুম জলপ্রপাত

বান্দরবান থেকে সকালে রওনা দিলে রেমাক্রী পৌঁছাতে বিকাল হয়ে যায়। ঐদিন আর নাফাখুম জলপ্রপাত যাওয়া যায়না। সবাই সাধারণত পরদিন ভোরে নাফাখুমের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রেমাক্রি থেকে নাফাখুম হেঁটে যেতে ২ থেকে ৩ ঘন্টা লাগে। কত সময় লাগবে তা মূলত নির্ভর করে আপনার টিমে যিনি সবচেয়ে আস্তে হাঁটেন তার হাঁটার গতির উপর।

বর্ষায় রেমাক্রী খালের পানি বেশি থাকে। এমনকি কোথাও কোমর সমান বা তার বেশি পানি থাকতে পারে। এসব জায়গায় পার হতে আপনার গাইডই আপনাকে সহায়তা করবে। আপনি চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতেই একসময় নাফাখুমের গর্জন শুনতে পাবেন!

নাফাখুম ভ্রমনে রাতে কোথায় থাকবেন

থানচিতে থাকার জন্য একটি সরকারী রেষ্ট হাউজ আছে। রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। কিন্তু থানচিতে রাতে না থাকাটাই উত্তম, অযথা টাকা ও সময় নষ্ট। সময় বাঁচাতে চাইলে রেমাক্রিতে থাকাই ভালো। এখানে আদিবাসীদের ঘর ও তাদের ছোট কটেজ আছে। জনপ্রতি থাকার খরচ পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।

খাবেন কোথায়

থানচি বাজারে মোটামোটি মানের কয়েকটা হোটেল আছে। এর যে কোনোটাতে খেতে পারেন। আর রেমাক্রিতে খাওয়ার ব্যাবস্থা হয় আদিবাসীদের বাড়িতে/ দোকানে। খেতে চাইলে আগে থেকে বলে রাখতে হবে। খাবার সাধারণত প্যাকেজ সিস্টেমে বিক্রি করে। প্রতিবেলা খাবার খরচ পড়বে ১২০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে।

নাফাখুম ট্যুর প্ল্যান কিভাবে সাজাবেন

যেখান থেকেই রওনা করেন সকাল বেলাতেই বান্দরবান থাকার চেষ্টা করবেন। এরপর সময় নষ্ট না করে বাস অথবা জিপে থানচিতে চলে যান। থানচিতে আপনার প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নৌকায় রেমাক্রিতে চলে আসুন বিকেলের মধ্যে। রাতটা রেমাক্রিতে কাটিয়ে দিন। পরদিন সকালে রেমক্রি থেকে নাফাখুম জলপ্রপাত এর উদ্দেশ্যে রওনা করলে দুপুরের মধ্যে ঘুরে আসতে পারবেন। এরপর সময় নষ্ট না করে নৌকায় করে আবার থানচির উদ্দেশ্যে রওনা করুন। তারপর বাসে অথবা জিপে সন্ধ্যার মধ্যে বান্দরবান শহরে ফিরে আসুন। এদিন রাতে চাইলে বান্দরবান থাকতে পারেন, অথবা রাতের বাসে ঢাকা বা আপনার গন্তব্যে ফিরতে পারবেন।

নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণের সময়

সারা বছরই নাফাখুমে পর্যাপ্ত পানি থাকে। তাই এডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষজন বছরজুড়ে ছুটে যায় নাফাখুম ভ্রমণ এর উদ্দেশ্যে। বর্ষায় বেশিরভাগ সময় নাফাখুমের পানি বিপদসীমার বেশি থাকে বলে এই সময় নাফাখুম ভ্রমণের অনুমতি দেয়না স্থানীয় প্রশাসন। আবার শীতের শেষ থেকে গ্রীষ্মের শুরু পর্যন্ত (January to April) পানি অনেক কম থাকে বলে অনেকে এই সময়টায় যেতে পছন্দ করেন না। মোটের উপর বলা যায় বর্ষার শেষ থেকে শীতের শুরু পর্যন্ত নাফাখুম ভ্রমণের সবচেয়ে সেরা সময়। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে যে মৌসুমেই যাননা কেন- নাফাখুম ভ্রমন আপনার জীবনে উল্লেখযোগ্য স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে আজীবন।

কম খরচে নাফাখুম ভ্রমণ

নাফাখুম ভ্রমণ খরচ মূলত বেশি হয় যাতায়ত খরচের কারণে। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে আপনি খরচ কমাতে পারবেন। যেহেতু এক জিপে সর্বোচ্চ ১৩ জন বসতে পারে, এবং এক নৌকাতে গাইড সহ ৫ জন বসতে পারে, তাই খরচ কমাতে চাইলে টিমের সদস্যসংখ্যর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ আপনার টিমের সদস্য সংখ্যা হতে হবে ৪, ৯ বা ১৩ জন।

উল্লেখযোগ্য খরচ সমূহ

ঢাকা থেকে বাস ভাড়া ৬২০ X ২ = ১২০০ (জনপ্রতি)
খাবার খরচ প্রতিবেলা গড়ে ১৫০ টাকা (জনপ্রতি)
বান্দবান থেকে থানচি আসা যাওয়া বাস ভাড়া ২০০ X ২ = ৪০০ টাকা
জিপে গেলে আসা যাওয়া ১২০০০ টাকা (টিমের সবার মধ্যে ভাগ হবে।)
নাফাখুম ভ্রমনে গাইড ফি ৩০০০ টাকা (টিমের সবার মধ্যে ভাগ হবে।)
নৌকা ভাড়া ৪৫০০ টাকা (এক নৌকায় গাইড সহ সর্বোচ্চ ৫ জনের পারমিশন। )
নাফাখুমে থাকার খরচ ১৫০ টাকা। (জনপ্রতি)

নাফাখুম ভ্রমণ টিপস এবং সতর্কতা

⦿নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণে জাতীয় পরিচয় সাথে রাখুন।
⦿খরচ কমাতে চাইলে দলগতভাবে ভ্রমণ করুন।
⦿ট্রেকিং এর জন্য প্লাস্টিক অথবা রাবারের স্যন্ডেল ব্যবহার করুন।
⦿পানির বোতল, শুকনো খাবার, টর্চ লাইট, স্যাভলন, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ফার্স্ট এইড সাথে রাখুন।
⦿বর্ষায় নাফাখুম জলপ্রপাত গেলে রেমাক্রি খাল পার হওয়ার জন্য দড়ি লাগবে। নিজেরা নিলে ভালো, অন্যথায় গাইডের কাছেও পাওয়া যাবে।
⦿ বর্ষায় লাইফ জ্যাকেট মাস্ট লাগবে।
⦿থানচির পর বিদ্যুত ও মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। ডিভাইস চার্জ দেওয়ার জন্য পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখুন।
⦿থানচির পর পান করার জন্য ঝিরির পানিই একমাত্র উৎস।
⦿একা একা কোথাও যাবেন না, পাহাড়ে পথ হারালে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। দলবদ্ধ ভাবে থাকুন।
⦿সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। পাশেরজনকে সহায়তা করুন।
⦿নাফাখুম জলপ্রপাত অনেক গভীর এবং নিচে বড়বড় পাথর ছড়ানো ছিটানো আছে। কোনোভাবেই উপর থেকে জলপ্রপাতে লাফ দিবেন না।
⦿পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন। প্লাস্টিক সহ কোনোপ্রকার অপচনশীল বস্তু পাহাড় ঝর্না ঝিরিতে ফেলবেন না।

নাফাখুম জলপ্রপাত ভ্রমণে দেখতে আরো পাবেন

চিম্বুক, নীলগিরি, সাঙ্গু নদী, থানচি, তিন্দু, রাজাপাথর বা বড়পাথর, পদ্মমুখ ঝিরি, রেমাক্রি পাড়া ও রেমাক্রি ফলস। আশেপাশে বান্দরবানের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বগালেক, অমিয়খুম, কেওক্রাডং, স্বর্ণমন্দির দেবতাকুম, নীলাচল ইত্যাদি।

আরো দেখুন

error: Content is protected !!
Exit mobile version