সীতাকুন্ড মিরসরাইকে ঝর্ণা উপত্যকা বলা যায়! পাশাপাশি এই দুই উপজেলার ২০ কিলোমিটারের মধ্যে ছড়িয়ে আছে ছোট বড় অনেকগুলো ঝর্ণা। সহস্রধারা ঝর্ণা এর অবস্থানও চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায়। এটি সীতাকুন্ড ইকোপার্ক এর ভিতরে। সহস্রধারা জলপ্রপাত এ সারা বছর কম বেশি পানি থাকে। শীতকালে একটু কম পানি থাকলেও বর্ষায় জলপ্রপাত তার রূপের পূর্ণতা পায়। সহস্রধারা ঝর্ণা এর কাছাকাছি সুপ্তধারা নামে আরো একটা ঝর্ণা আছে।
কখন যাবেন
বৃষ্টির দিনে প্রকৃতি সবচেয়ে সুন্দর থাকে। ঝর্ণা দেখার সেরা সময়ও বর্ষাকাল। বর্ষায় ঝর্ণাগুলো তার পূর্ণ যৌবন লাভ করে। বলা চলে জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সহস্রধারা ঝর্ণা যাওয়ার উপযুক্ত সময়। তখন জলপ্রপাতের সৌন্দর্য ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। সৌন্দর্যের টানে দেশের নানান প্রান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা সীতাকুন্ডে ছুটে আসেন।
কিভাবে যাবেন সহস্রধারা ঝর্ণা
সহস্রধারা জলপ্রপাত এর অবস্থান সীতাকুন্ড ইকোপার্ক এর ভিতরে। তাই আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি সীতাকুন্ড আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। এসব টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন সহ সব বড় কোম্পানির বাস আছে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত আসতে সময় লাগে পাঁচ ঘন্টা। বাসের মান ভেদে ভাড়া ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। বাসে এলে আপনাকে নামতে হবে সীতাকুন্ড বাজার থেকে ২ কিলোমিটার সামনে ফকিরহাট নামক জায়গায়।
চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ডের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। চট্টগ্রামের কদমতলী, মাদারবাড়ি, অলংকার ও একে খান মোড় থেকে সীতাকুন্ডের বাস পাবেন। বাসে যেতে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার মতো সময় লাগে। বাস থেকে নামতে হবে সীতাকুন্ডের আগে ফকিরহাট স্টপেজে।
ট্রেনে সীতাকুন্ড
ঢাকা থেকে সহস্রধারা ঝর্ণা তথা সীতাকুন্ড যাওয়ার একটাই ট্রেন আছে। চট্টগ্রাম মেইল। এছাড়া সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যাবেন মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী বাসে করে সীতাকুন্ড বাজার পার হয়ে ফকিরহাট নামতে হবে। মহিপাল থেকে সীতাকুন্ডের বাস ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।
যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে আসা চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে সীতাকুন্ড বাজারে আসা যাবে।
কোথায় থাকবেন
সীতাকুন্ড পৌরসভায় থাকার জন্য মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে আপনাকে ৪০ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে।
কোথায় খাবেন
হালকা নাস্তা করার মতো কয়েকটি দোকান আছে সহস্রধারা ঝর্ণা যাওয়ার আগে সীতাকুন্ড ইকোপার্কের প্রবেশ মুখে। আর ভারী খাবার খেতে চাইলে আপনাকে সীতাকুন্ড বাজারে আসতে হবে। খাবারের জন্য হোটেল আল আমিন, সৌদিয়া ও আপন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এখানে আপনি ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, ভর্তা, সবজি ইত্যাদি মেন্যু হিসেবে পাবেন। খাবার খরচ পড়বে প্রতিবেলা জনপ্রতি ১৩০ থেকে ২০০ টাকার মতো। রাতের গাড়িতে গেলে সকালের ব্রেকফাস্টও এখানে সেরে নিতে পারবেন।
সহস্রধারা ঝর্ণা ভ্রমণ টিপস
সীতাকুন্ড ইকোপার্ক এর আশাপাশে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান আছে। সারাদিনে অনেকগুলো স্পটে ঘুরে দেখতে চাইলে একটা সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে নিন। সারাদিনের জন্য রিজার্ভ নিলে ভাড়া পড়বে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। রাতের বাসে গেলে বেশ ভোরে পৌঁছে যাবেন। সেক্ষেত্রে ফকিরহাট পর্যন্ত না গিয়ে সীতাকুন্ড বাজারে নামুন। সীতাকুন্ডে নাস্তা সেরে তারপর রওয়ানা করুন। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না। এটা আপনার পার্সোনালিটিকে রিপ্রেজেন্ট করে।
কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ড প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। সীতাকুন্ড গেলে সুপ্তধারা ও সহস্রধারা ঝর্ণা বাদেও আরো অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান আছে। আপনি কয়টা স্পট ভ্রমণ করতে পারবেন এটা নির্ভর করবে আপনার ম্যানেজমেন্টের উপর। চন্দ্রনাথ পাহাড় আর গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত সীতাকুন্ড ইকো পার্কের পাঁচ কিলোমিটার এর মধ্যে। কাছেই আছে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। আর হাইওয়ে ধরে ঢাকার দিকে দশ কিলোমিটার এগুলে পাবেন কমলদহ ঝর্ণা। যদি বিশ কিলোমিটার যান তাহলে খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার ট্রেইল পাড়বে। ভ্রমণ বিষয়ক তথ্য সম্পর্কে আপডেট থাকতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।