জাফলং ভ্রমণ গাইড

জাফলং

জাফলং (Jaflong) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব ৬২ কিঃমিঃ। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে এর অবস্থান। জাফলং জিরো পয়েন্টে দাঁড়ালেই সামনে পড়বে ডাউকি ব্রিজ। তার নিচ দিয়ে বয়ে গেছে পিয়াইন নদী। পাহাড়, পাথুরে নদী, ঝর্ণা সব মিলিয়ে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ মোহনীয় রূপ ধারণ করেছে। জাফলংকে বলা হয় প্রকৃতি কন্যা! জাফলংকে বিশেষত্ব দিয়েছে এখানকার আদিবাসীদের জীবনধারা। পিয়াইন নদী পার হলেই খাসিয়াপুঞ্জি। খাসিয়া ভাষায় পুঞ্জি মানে গ্রাম। খাসিয়াদের বাড়ি নির্মাণশৈলী কিংবা সেখানকার পানের বরজ, সবকিছু মিলিয়ে জাফলং ভ্রমণ এ একটা দিন আপনি কাটিয়ে দিতে পারবেন।

জাফলং শুধু সিলেট বিভাগ নয়, এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য। এখানকার প্রকৃতির সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায় ভারতের বিখ্যাত শৈল শহর শিলং চেরাপুঞ্জির। শিলং এর প্রবেশদ্বার ডাউকি শহর জাফলং থেকেই দেখা যায়। যারা জাফলং ভ্রমণ এর ভিডিও গাইডলাইন পেতে আগ্রহী, তারা গ্রিন বেল্ট ট্রাভেল চ্যানেলের নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।

 

কিভাবে যাবেন

জাফলং যেতে হলে আপনাকে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে চায়ের দেশ সিলেট আসতে হবে। বাস, ট্রেন কিংবা উড়োজাহাজে করে আপনি সিলেট আসতে পারবেন। বাসে এলে ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট

ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট

চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।

সিলেট থেকে জাফলং

সিলেট থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা বা মাইক্রোবাসে করে আপনি জাফলং যেতে পারবেন। লোকাল বাস ছাড়ে শহরের শিবগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। মাইক্রোবাসে গেলে আসা যাওয়া রিজার্ভ ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। আর সিএনজি নিলে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা। তাই দলগত ভাবে খরচ কম পড়বে। সিলেট থেকে জাফলং যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।

কখন যাবেন জাফলং

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারা বছরই ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে ছুটে আসেন। শীতে এখানে নদীতে পানি কম থাকে বলে হেঁটেই পার হওয়া যায়। আর বর্ষায় নদীতে অনেক স্রোত থাকে। তখন চারপাশে ছড়ানো পাথর, সবুজ পাহাড়, আর মায়াবী ঝর্ণা মিলে জাফলং তার রূপের দুয়ার মেলে দেয়। তাই এক কথায় বলা যায় বর্ষা ও তার পরবর্তী সময়টা জাফলং ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জাফলং ভ্রমণ করলে বেশি ভালো লাগবে।

কোথায় থাকবেন

জাফলংয়ে রাতে থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই।  তাই সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার সিলেট শহরে চলে আসতে পারেন। সিলেট শহরে প্রচুর হোটেল রয়েছে। আম্বরখানা, দরগাহ গেইট, জিন্দাবাজার এসব এলাকায় অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হিল টাউন, হোটেল ব্রিটানিয়া, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট হোটেল। এখানে ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যাবে।

বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র‍্যান্ড প্যালেস, হোটেল নূরজাহান ইত্যাদি। রুম ভাড়া ৫০০০ থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে। সিজন অনুযায়ী রুম ভাড়ায় তারতম্য হয়।

একদম সস্তার মধ্যে সিলেটের দরগাহ গেইট এলাকায় অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার সাধ্যমতন হোটেল ভাড়া করতে পারবেন ওখান থেকে।

কি খাবেন কোথায় খাবেন

জাফলংয়ে খাওয়ার জন্য বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়া সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার পথেও একাধিক ভালো মানের রেস্টুরেন্ট পাবেন।  চাইলে ওখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। জাফলং এ দুপুরে খাওয়ার খরচ পড়বে জনপ্রতি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা। মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ভর্তা ইত্যাদি মেনু পাওয়া যাবে এখানে।

এছাড়া সিলেট শহরে অনেকগুলো বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসী, ভোজন বাড়ি, পালকি, এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার ভর্তার সাথে আপনার পছন্দ মতো মেনু পাবেন এখানে। খরচ হবে জনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকার মতন। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ২৯ রকমের ভর্তা আছে! চাইলে সকালের নাস্তাও এইসব রেস্টুরেন্টে সেরে নিতে পারবেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

জাফলং ভ্রমণ এ গেলে কাছাকাছি রয়েছে আরো কয়েকটি দর্শনীয় স্থান দেখতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে সংগ্রামপুঞ্জী মায়ারী ঝর্ণা। যেটি পিয়াইন নদী পার হয়ে ১৫ কিঃমিঃ হাঁটলেই পাওয়া যাবে। এটি মূলত ভারতের অংশে পড়েছে। তবে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত যেতে পারবেন। এছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল। এছাড়া আছে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, বিছানাকান্দির কাছে পান্থুমাই ঝর্ণা। সারি নদীর লালাখাল,  কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। এছাড়া যেতে পারেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট ও বিছানাকান্দি

জাফলং ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সিলেট বিভাগের যেকোনো দর্শনীয় স্থান বর্ষাতেই সুন্দর। জাফলং ভ্রমণের সময়ও বর্ষাকাল। তখন নদীতে অনেক স্রোত থাকে। সাঁতার না জানলে নদী নামবেন না। সাঁতার জানলেও লাইফ জ্যাকেট পরুন। মনে রাখবেন দলগত ভাবে ভ্রমণ করলে সবসময় খরচ কম পড়বে। জাফলংয়ে অনেক ভারতীয় পণ্যের দোকান পাবেন। বেশিরভাগই নকল, তাই কিছু কিনতে চাইলে সাবধানে কিনতে হবে। আর নৌকা নেওয়ার সময় দরদাম করে নিন। ছুটির দিনে সব কিছুর দাম বেড়ে যায়, তখন ভ্রমণে খরচ বেশি হয়।

অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

আরো পড়ুন