ঝরঝরি ঝর্ণা সীতাকুন্ড

স্বর্গের সিঁড়ি ক্যাসকেড

ঝরঝরি ঝর্ণা ট্রেইল

ঝরঝরি ঝর্ণা ট্রেইল হলো সীতাকুন্ড মিরসরাই রেঞ্জের অন্যতম এডভেঞ্চারাস একটি ট্রেইল। এর অবস্থান চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায়। সবুজে ঘেরা পাহাড়ি পথ দিয়ে হেঁটে যখন আপনি ঝর্ণার কাছে পৌঁছাবেন তখন আপনার সমস্ত ক্লান্তি উবে যাবে। ঝরঝরি ঝর্ণার পাশ দিয়ে পাহাড় বেয়ে উপরে গেলে আরো কয়েকটি ক্যাসকেড পাবেন। এর মধ্যে স্বর্গের সিঁড়ি নামে একটি ক্যাসকেড আপনাকে মুগ্ধ করবে। এটি দেখতে অনেকটা খাঁজকাটা সিঁড়ির মতো। এই ট্রেইলের শেষে রয়েছে মূর্তি ঝর্ণা নামে আরো একটি ক্যাসকেড।

কিভাবে যাবেন ঝরঝরি ঝর্ণা

ঝরঝরি ঝর্ণা যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার পন্থিছিলা বাজারে আসতে হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামী বাসে উঠে মিরসরাই এর পরে পন্থিছিলা বাজারে নামবেন। এটি সীতাকুন্ডের আগেই পড়বে। বাসে উঠে সুপারভাইজারকে আগে থেকে বলে রাখবেন আপনাকে যেন পন্থিছিলা নামিয়ে দেয়। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। এসব টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন সহ সব বড় কোম্পানির বাস আছে এই রুটে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে পন্থিছিলা পর্যন্ত আসতে সময় লাগে পাঁচ ঘন্টা। বাসের মান ভেদে ভাড়া ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

চট্টগ্রাম থেকে ঝরঝরি ঝর্ণা আসতে হলে চট্টগ্রামের কদমতলী, মাদারবাড়ি, অলংকার ও একে খান মোড় থেকে ফেনী বারৈয়ারহাটের বাস আছে। বাসে পন্থিছিলা পর্যন্ত যেতে ১ থেকে দেড় ঘন্টার মতো সময় লাগবে। চট্টগ্রাম থেকে পন্থিছিলার দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটারের মতো।

ট্রেনে সীতাকুন্ড

ঢাকা থেকে পন্থিছিলা তথা সীতাকুন্ডের সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যাবেন মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী বাসে করে মিরসরাই বাজার পার হয়ে পন্থিছিলা নামতে হবে। মহিপাল থেকে পন্থিছিলার বাস ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।

যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে আসা চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে পন্থিছিলা বাজারে আসা যাবে।

পন্থিছিলা থেকে ঝরঝরি ঝর্ণা

পন্থিছিলা বাজার থেকে পূর্বদিকে কিছুদূর হেঁটে গেলে রেললাইন পাবেন। রেললাইন ধরে বামদিকে ৫/৭ মিনিট হাঁটলে একটা মাটির রাস্তা দেখবেন ডান দিকে চলে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে ২০ মিনিট গেলে কানি ঝিরির দেখা মিলবে। তারপর হাঁটতে থাকলে কিছুক্ষণ পর একটা পাহাড় ডিঙাতে হবে। ৩০ মিনিট হাঁটলে ঝরঝরি ঝর্ণা আপনার সামনে চলে আসবে। ঝিরি ধরে আরো ২০ মিনিট সামনে গেলে স্বর্গের সিঁড়ি নামক মায়াবী ক্যাসকেড পাবেন। এরপর আরো ঘন্টাখানেক হাঁটার পর মানুষের মূর্তি আকৃতির একটা ঝর্ণা পাবেন। যেটি মূর্তি ঝর্ণা নামে পরিচিত। পন্থিছিলা বাজার থেকে ঝরঝরি ঝর্ণা পর্যন্ত যেতে ১ ঘন্টা সময় লাগে। আর পুরো ট্রেইল শেষ করতে ৫/৬ ঘন্টা সময় লাগতে পারে।

কোথায় খাবেন

ঝরঝরি ঝর্ণা এর আশেপাশে খাবার মতো দোকান নেই। গাইডের সাথে কথা বলে স্থানীয় কোনো বাড়িতে বাজার করে দেওয়ার বিনিময়ে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। এছাড়া আরেকটু ভালো খাবার চাইলে  সীতাকুন্ড বাজারে খাওয়া যায়। সীতাকুন্ড বাজারে হোটেল সৌদিয়া, আল আমিন ও আপন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এখানে আপনি ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ডাল, সবজি ইত্যাদি মেন্যু হিসেবে পাবেন। খাবার খরচ পড়বে প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো।

কোথায় থাকবেন

পন্থিছিলার কাছে সীতাকুন্ড বাজারে মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।

ভ্রমণ টিপস

পন্থিছিলা বাজার থেকে স্থানীয় কাউকে গাইড হিসেবে নিয়ে নিন। গাইড ফি ৩০০/৪০০ টাকা। ঝরঝরি ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় বর্ষার শেষে। ভরা বর্ষায় ঝরঝরির পর বাকি ঝর্ণাগুলো একটু দূর্গম হয়ে যায়। নতুন ট্রেকার হলে আপনি ট্রেইল নাও শেষ করতে পারতে পারেন। ঝর্ণার ট্রেইল যত সহজ মনে হোক না কেন, ঝর্ণা মানেই এদিক ওদিক বিপদ ওৎ পেতে থাকে। এজন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ট্রেইলে প্রতিটা স্টেপে নিজের কমনসেন্স ব্যাবহার করুন। গ্রুপ করে ঘুরতে যাওয়াই ভালো। ভ্রমণ সম্পর্কিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডকে বলা যায় ঝর্ণা উপত্যকা। ঝরঝরির ঝর্ণার আশেপাশে আরো অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাওয়াছড়া লেক, হরিণমারা হাঁটুভাঙ্গা ট্রেইল সহ আশেপাশে আরো কয়েকটা ঝর্ণা। আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে কমলদহ ঝর্ণা,  বড়তাকিয়া বাজারের কাছে আছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা, নদুয়ারী বাজারের কাছে  নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা। আর চট্টগ্রামের দিকে দশ বারো কিলোমিটার গেলে পড়বে চন্দ্রনাথ পাহাড় কিংবা গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। মিরসরাইতে আছে এই রেঞ্জের সবচেয়ে এডভেঞ্চারাস ঝর্ণা সোনাইছড়ি ট্রেইল

আরো পড়ুন