সোনাইছড়ি ট্রেইল এর অবস্থান চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলায়। মিরসরাই সীতাকুন্ডে যতগুলো ট্রেইল আছে তার মধ্যে এই ট্রেইলটি সবচেয়ে এডভেঞ্চারাস, সবচেয়ে দূর্গম এবং সবচেয়ে সুন্দর! তিন্দুর মতো বড় বড় পাথরের বোল্ডার আছে সোনাইছড়ি ট্রেইলে। বৃষ্টির দিনে পাথরগুলো বেশ পিচ্ছিল হয়ে যায়। খাড়া পাহাড়ের পাথরের দেয়াল আর বাদুইজ্জাকুম এর ভয়ঙ্কর সুন্দর পথ রোমাঞ্চকর অনুভূতি দেয়। এই ট্রেইলের বাদুইজ্জাকুম বা বাঁদরে কুম সরু অথচ গভীর একটি কুম। এর দুইপাশে ১০০ থেকে ১৫০ ফুট উঁচু পাথরের দেয়াল। কুমে শত শত বাদুরের বসবাস। উপরে গাছপালা ও খাড়া দেয়ালের জন্য নিচে সূর্যের আলো আসেনা সব জায়গায়। এই দীর্ঘ পথ পার হয়ে ট্রেইলের শেষ মাথায় সোনাইছড়ি ঝর্ণা এর দেখা মিলবে। তখন ট্রেকিংয়ের সব ক্লান্তি নিমিষে উবে যাবে। সোনাইছড়ি ট্রেইলের দৈর্ঘ্য ২৮ কিলোমিটার!
কিভাবে যাবেন সোনাইছড়ি ট্রেইল
সোনাইছড়ি ঝর্ণা দেখতে হলে আপনাকে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার হাদি ফকির হাট বাজারে আসতে হবে। এরপর হাদি ফকিরহাটের জামে মসজিদের সামনে থেকে সিএনজি নিয়ে বড় পাথর স্থানে চলে আসুন। এখান থেকেই ট্রেকিং শুরু। পুরো সোনাইছড়ি ট্রেইল শেষ করে আসতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। যেতে ৪ ঘন্টা লাগলে, ফিরতে ১ ঘন্টা সময় লাগবে। পাহাড়ের উপর দিয়ে ফেরার শর্টকাট রাস্তা আছে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামী বাসে উঠে মিরসরাই এর হাদি ফকিরহাট বাজারে নামবেন। বাসে উঠে সুপারভাইজারকে আগে থেকে বলে রাখবেন আপনাকে যেন হাদি ফকিরহাট নামিয়ে দেয়। সীতাকুন্ডের পর আরো একটি ফকিরহাট আছে। আপনি নামবেন মিরসরাই হাদি ফকির হাট। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। এসব টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন সহ সব বড় কোম্পানির বাস আছে এই রুটে। বাসের মান ভেদে ভাড়া ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম থেকে সোনাইছড়ি ট্রেইল আসতে হলে চট্টগ্রামের কদমতলী, মাদারবাড়ি, অলংকার ও একে খান মোড় থেকে ফেনী বারৈয়ারহাটের বাস আছে। বাসে হাদি ফকিরহাট পর্যন্ত যেতে ১ থেকে ১.৫ ঘন্টার মতো সময় লাগবে। চট্টগ্রাম থেকে হাদি ফকির হাটের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটারের মতো।
ট্রেনে সোনাইছড়ি ট্রেইল
ঢাকা থেকে সোনাইছড়ি ট্রেইল তথা হাদি ফকিরহাটের সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যাবেন মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী বাসে করে মিরসরাই বাজার পার হয়ে হাদি ফকিরহাট নামতে হবে। মহিপাল থেকে হাদি ফকিরহাট বাস ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।
যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে আসা চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে হাদি ফকিরহাট বাজারে আসা যাবে।
কোথায় খাবেন
গাইডের সাথে কথা বলে স্থানীয় কোনো বাড়িতে বাজার করে দেওয়ার বিনিময়ে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। এছাড়া হাদি ফকিরহাট বাজারে খাবার পাওয়া যাবে। আরেকটু ভালো খাবার চাইলে নিকটস্থ মিরসরাই বাজার আছে। সেখানে আপনি ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ডাল, সবজি ইত্যাদি মেন্যু হিসেবে পাবেন। খাবার খরচ পড়বে জনপ্রতি ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মতো।
কোথায় থাকবেন
সোনাইছড়ি ট্রেইল গেলে থাকার জন্য আপনাকে সীতাকুন্ড বাজারে আসতে হবে। সীতাকুন্ডে মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।
সোনাইছড়ি ট্রেইল ভ্রমণ টিপস
ফকিরহাট বাজার থেকে স্থানীয় কাউকে গাইড হিসেবে নিয়ে নিন। গাইড ফি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। ঝর্ণার ট্রেইলে সবসময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ট্রেইলে প্রতিটা স্টেপে নিজের কমনসেন্স ব্যাবহার করুন। গ্রুপ করে ঘুরতে যাওয়াই ভালো। ভ্রমণ সম্পর্কিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।
কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডকে বলা যায় ঝর্ণা উপত্যকা। সোনাইছড়ি ট্রেইল এর আশেপাশে আরো অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান আছে। এগুলোর মধ্যে এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাওয়াছড়া লেক, হরিণমারা হাঁটুভাঙ্গা ট্রেইল। আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে কমলদহ ঝর্ণা, বড়তাকিয়া বাজারের কাছে আছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা, নদুয়ারী বাজারের কাছে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা। আর চট্টগ্রামের দিকে দশ বারো কিলোমিটার গেলে পড়বে চন্দ্রনাথ পাহাড় কিংবা গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত।
আরো পড়ুন