সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এই ঝর্ণার আরেকটি নাম হলো মায়াবী ঝর্ণা। সিলেট শহর থেকে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার দূরত্ব ৬২ কিঃমিঃ। সিলেটের জাফলং থেকে হাঁটাপথে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দূরত্বে এর অবস্থান। মায়াবী এই ঝর্ণা মূলত ভারতীয় ভূখন্ডে পড়েছে। তারপরও বিএসএফ এর প্রহরায় সেখানে বাংলাদেশীরা ভ্রমণ করতে পারে। সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার মূলত তিনটি ধাপ। শেষ ধাপে রয়েছে একটী রহস্যময় সুড়ঙ্গ! ঝর্ণা বেয়ে উপরে উঠা খুব ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। পানির স্রোতের কারণে ঝর্ণার গা সবসময় পিচ্ছিল থাকে। তাই পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে ঝর্ণার উপরে উঠার চেষ্টা না করাই ভালো। নিচ থেকেও চমৎকার ভাবে এই ঝর্ণাটি দেখা যায়। এই ঝর্ণাটি মূলত জাফংলং জিরো পয়েন্টের কাছে।
কিভাবে যাবেন সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা
সংগ্রামপুঞ্জি মায়াবী ঝর্ণায় যেতে হলে প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে চায়ের দেশ সিলেট আসতে হবে। বাস, ট্রেন কিংবা উড়োজাহাজে করে আপনি সিলেট আসতে পারবেন। বাসে এলে ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে সিলেটের বাস ছাড়ে। ইউনিক, শ্যামলী, গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এনা পরিবহন ও লন্ডন এক্সপ্রেস সহ দেশের সব বড় কোম্পানির বাস আছে সিলেট রুটে। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা। বাসে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৭ ঘন্টা।
ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট
ঢাকা সিলেট রুটে প্রতিদিন ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। কমলাপুর থেকে সকাল ৬:৪০ মিনিটে পারাবত, দুপুর ১২:০০ টায় জয়ন্তিকা, বিকাল ৪:০০টায় কালনী এবং রাত ৯:৫০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। ট্রেনের ভাড়া পড়বে আসনভেদে জনপ্রতি ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা। ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে ৭/৮ ঘন্টা সময় লাগে। সেক্ষেত্রে রাতের উপবন এক্সপ্রেসে যাওয়া সুবিধাজনক। সারারাত জার্নি করে ভোরে সিলেট পৌঁছানো যায়।
চট্টগ্রাম থেকে সিলেট
চট্টগ্রাম থেকে সৌদিয়া, বিআরটিসি ও এনা পরিবহণের সিলেট রুটে বাস রয়েছে। ভাড়া ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮:১৫ মিনিটে পাহাড়িকা এবং শনিবার বাদে প্রতিদিন রাত ৯:৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া সিটের শ্রেণীভেদে ১৪৫ থেকে ১২০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে সিলেট যেতে সময় লাগে ৯ থেকে ১১ ঘন্টা।
সিলেট থেকে জাফলং
এই সংগ্রামপুঞ্জি মায়াবী ঝর্ণা অভিযানের জন্য প্রথমে সিলেট থেকে বাস, সিএনজি, লেগুনা বা মাইক্রোবাসে করে আপনি জাফলং যেতে হবে। লোকাল বাস ছাড়ে শহরের শিবগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। মাইক্রোবাসে গেলে আসা যাওয়া রিজার্ভ ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা। আর সিএনজি নিলে খরচ পড়বে ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা। তাই দলগত ভাবে খরচ কম পড়বে। সিলেট থেকে জাফলং যেতে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে।
জাফলং থেকে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা
জাফলংয়ে যে নদীটি বয়ে গেছে সেটি পিয়াইন নদী। নদীর তীরেই নৌকা ঘাট পাবেন। সেখান থেকে নৌকা নিয়ে নদী পার হতে হবে। নদীর ওপারে গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণায় যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিবে। সেখান থেকে হেঁটে যেতে ১৫ মিনিটের মতো সময় লাগবে। মনে রাখা দরকার নদী পার হয়ে ৫ মিনিট হাঁটার পরই আপনার মোবাইলে আর নেটওয়ার্ক থাকবেনা। কারণ জায়গাটি ভারতের মেঘালয়ের সীমান্তঘেঁষা।
কখন যাবেন সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারা বছরই ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে ছুটে আসেন। তবে শীতকালে এখানে পানি থাকেনা তেমন। তাই মায়াবী এই ঝর্ণার আসল রূপ দেখতে চাইলে বর্ষায় আসা উচিত। এক কথায় বলা যায় বর্ষা ও তার পরবর্তী সময়টা সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত।
কোথায় থাকবেন
সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণার নিকটস্থ জনপদ জাফলং। কিন্তু জাফলংয়েও রাতে থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার সিলেট শহরে চলে আসতে পারেন। সিলেট শহরে প্রচুর হোটেল রয়েছে। আম্বরখানা, দরগাহ গেইট, জিন্দাবাজার এসব এলাকায় অনেক হোটেল পাওয়া যাবে। এর মধ্যে হোটেল পলাশ ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হিল টাউন, হোটেল ব্রিটানিয়া, হোটেল সুপ্রিম, হোটেল ডালাস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট হোটেল। এখানে ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে রুম পাওয়া যাবে।
বিলাসবহুল হোটেলের মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ ভিউ কমপ্লেক্স, হোটেল নির্ভানা ইন, হোটেল গ্র্যান্ড প্যালেস, হোটেল নূরজাহান ইত্যাদি। রুম ভাড়া ৫০০০ থেকে ১২০০০ টাকার মধ্যে। সিজন অনুযায়ী রুম ভাড়ায় তারতম্য হয়।
একদম সস্তার মধ্যে সিলেটের দরগাহ গেইট এলাকায় অনেকগুলো হোটেল রয়েছে। আপনার সাধ্যমতন হোটেল ভাড়া করতে পারবেন ওখান থেকে।
কি খাবেন কোথায় খাবেন
দুপুরের খাবার জাফলংয়ে খেতে হবে। এছাড়া সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার পথেও একাধিক ভালো মানের রেস্টুরেন্ট পাবেন। চাইলে ওখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। জাফলংয়ে দুপুরে খাওয়ার খরচ পড়বে জনপ্রতি ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা। মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, মাছ, ভর্তা ইত্যাদি মেনু পাওয়া যাবে এখানে।
এছাড়া সিলেট শহরে অনেকগুলো বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট আছে। পাঁচ ভাই, পানসী, ভোজন বাড়ি, পালকি, এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন প্রকার ভর্তার সাথে আপনার পছন্দ মতো মেনু পাবেন এখানে। খরচ হবে জনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকার মতন। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে ২৯ রকমের ভর্তা আছে! চাইলে সকালের নাস্তাও এইসব রেস্টুরেন্টে সেরে নিতে পারবেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা দেখতে গেলে এমনিতেই জাফলং দেখে আসতে পারবেন। কাছাকাছি রয়েছে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। সেগুলোর মধ্যে খাসিয়া পুঞ্জি, তামাবিল জিরো পয়েন্ট এবং লালাখাল অন্যতম। এছাড়া ঘুরে আসতে পারেন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, ভোলাগঞ্জ, কিংবা বিছানাকান্দি অথবা পান্থুমাই ঝর্ণা থেকেও।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা ভ্রমণের সময় বর্ষাকাল। বর্ষাকালে ঝর্ণা থাকে পূর্ণ যৌবণা। এডভেঞ্চারের নেশায় ঝর্ণায় উঠতে গিয়ে অসতর্ক হয়ে পড়লে যেকোনো দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তখন পিয়াইন নদীতেও অনেক স্রোত থাকে। নদী পার হওয়ার সময়ও সাবধান থাকতে হবে। মনে রাখবেন দলগত ভাবে ভ্রমণ করলে সবসময় খরচ কম পড়বে।
অনেকেই ঝামেলা এড়ানোর জন্য ট্রাভেল এজেন্সির সাথে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন। তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর এক্সক্লুসিভ সিলেট ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।
আরো পড়ুন