নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা (Napittachora Waterfalls) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত। এডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে এই ঝর্ণাটি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। নাপিত্তাছড়া ট্রেইলে একাধিক ঝর্ণা ও কুম আছে কাছাকাছি। এগুলো হলো বান্দরকুম, কুপিকাটাকুম, বাঘবিয়ানি ঝর্ণা, টিপরাকুম। চারপাশে পাহাড়, ঘন জঙ্গল, ঝিরিপথ আর মনোমুগ্ধকর ট্রেইল এই ঝর্ণাকে অনন্যতা দিয়েছে। ৪/৫ ঘন্টা সময় নিয়ে গেলে পুরো ট্রেইল সুন্দরভাবে শেষ করে আসা সম্ভব। খৈয়াছড়া আর নাপিত্তাছড়া জলপ্রপাত এই রেঞ্জের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেইল।
কিভাবে যাবেন নাপিত্তাছড়া
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার নয়দুয়ারী (ন’দুয়ারী) বাজারে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি নয়দুয়ারী আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে মিরসরাই এর নয়দুয়ারী বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে নয়দুয়ারী পর্যন্ত যেতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
ট্রেনে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা
ঢাকা থেকে নয়দুয়ারী বাজারের সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই নয়দুয়ারী বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে নয়দুয়ারীর বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।
যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে নয়দুয়ারী বাজারে আসা যাবে।
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
নয়দুয়ারী বাজারে নেমে হাইওয়ের পূর্ব পাশে একটা রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তা ধরে ২০/২৫ মিনিট হাঁটলে রেললাইন। রেল লাইন পার হয়ে আবার সোজা ২০/২৫ মিনিট গেলে নাপিত্তাছড়া নামের একটা ত্রিপুরা পাড়া পাবেন। এখান থেকে ট্রেইল ও ঝিরিপথের শুরু। প্রথম ক্যাসকেড হিসেবে স্বাগত জানাবে টিপরা কুম। এরপর কুপিকাটা কুম। কুপিকাটা কুমের ডান পাশদিয়ে পাহাড়ের উপর উঠে কিছুদূর হেঁটে গেলে আবার ঝিরিপথ পাবেন। এই ঝিরিপথের শেষে বাগবিয়ানি ঝর্ণা, তার আগে পাবেন ট্রেইলের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণা বান্দরকুম।
যারা ট্রেকিংয়ে অভিজ্ঞ তারা সহজেই পথ চিনতে পারবেন। অভিজ্ঞতা না থাকলে নয়দুয়ারী বাজার বা রেললাইনের আশেপাশে কোনো বাড়ি থেকে কাউকে গাইড হিসেবে নিতে পারেন। গাইডকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হতে পারে। গাইড নিয়ে গেলে সবগুলো খুম, ক্যাসকেড ও ঝর্ণা সুন্দর ভাবে ঘুরে আসা যাবে কম সময়ে।
কোথায় থাকবেন নাপিত্তাছড়া
থাকার জন্য নয়দুয়ারী বাজারে কোনো হোটেল নাই। নিকটস্থ থাকার হোটেলের জন্য আপনাকে যেতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। বড়তাকিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটারের মতো।
কোথায় খাবেন
নয়দুয়ারী বাজার থেকে কিছুদূর গেলে একটা খাবারের দোকান আছে। যাওয়ার সময় খাবার অর্ডার করে গেলে ফেরার পথে খেতে পারবেন। সেখানে খাবার না পেলে মিরসরাই বাজারে এসে খেতে হবে। তাই সাথে কিছু শুকনো খাবার ও পানি বহন করুন।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। শুকনো মৌসুমে এখানে পানি থাকেনা। তাই বর্ষাতেই ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। ঝর্ণার ট্রেইল যত সহজ মনে হোক না কেন, ঝর্ণা মানেই এদিক ওদিক বিপদ ওৎ পেতে থাকে। এজন্য প্রতি পদে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ট্রেইলে প্রতিটা স্টেপে নিজের কমনসেন্স ব্যাবহার করুন। গ্রুপ করে ঘুরতে যাওয়াই ভালো। ক্যাম্পিং করতে চাইলে ক্যাম্পিং এর বেসিক জেনে যাবেন। রাতে আগুন জ্বালালে সকালে সেগুলোর ছাই পরিষ্কার করে আসতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ছোটলোকি। ভুলেও এই কাজ করবেন না, গোপনেও না। জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।
কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডকে বলা যায় ঝর্ণা উপত্যকা। নাপিত্তাছড়া ট্রেইলে গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। নাপিত্তাছড়ার একদম কাছাকাছি আছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর কমলদহ ঝর্ণা। এছাড়া বিশ কিলোমিটার দূরের চন্দ্রনাথ পাহাড় কিংবা গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতেও যেতে পারেন। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের কাছেই সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। ইকোপার্ক এর ভিতরে আছে সুপ্তধারা ও সহস্রধারা নামে দুইটা মায়াবী জলপ্রপাত।
আরো পড়ুন