চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মন্দির

চন্দ্রনাথ পাহাড়

চন্দ্রনাথ পাহাড় চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায়। একপাশে সাগর আর অন্যপাশে পাহাড়; এই দুই মিলে সীতাকুন্ডের প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্রকে করেছে অনন্য। সীতাকুন্ড বাজার থকে এর দুরত্ব ৪ কিলোমিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ১১৫২ ফুট। পাহাড় চূড়া থেকে সমুদ্র দর্শনের চমৎকার অভিজ্ঞতা পাবেন এই ভ্রমণে। চন্দ্রনাথের চূড়ায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের একটি মন্দির আছে। যেটি চন্দ্রনাথ মন্দির নামে পরিচিত। চট্টগ্রাম সহ এই অঞ্চলটি দীর্ঘকাল আরাকানের দখলে ছিলো। পরবর্তীতে দখল এর নেয় পর্তুগীজরা। ষোড়শ শতকে মোঘলরা পর্তুগীজ ও আরাকানীদের হটিয়ে এই অঞ্চল দখলমুক্ত করেন।

কিভাবে যাবেন চন্দ্রনাথ পাহাড়

চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান আছে। এই অঞ্চলকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার বলা যায়। চন্দ্রনাথ পাহাড় যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি সীতাকুন্ড আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। এসব টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন সহ সব বড় কোম্পানির বাস আছে এই রুটে। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত যেতে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

ট্রেনে সীতাকুন্ড

ঢাকা থেকে সীতাকুন্ডের সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই সীতাকুন্ড বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে সীতাকুন্ডের বাস ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।

যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে সীতাকুন্ড বাজারে আসা যাবে।

সীতাকুন্ড থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়

সীতাকুন্ড থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড় এর গেট ৪ কিলোমিটার। রিকশা বা সিএনজিতে করে গেট পর্যন্ত যেতে পারবেন। পাহাড়ে উঠার আগে ছোট্ট একটি ঝর্ণা (ক্যাসকেড) পাবেন। এখান থেকে রাস্তা রাস্তা দুই ভাগ হয়ে গেছে। বাম পাশের রাস্তা পাহাড়ি, আর ডান পাশের রাস্তায় সিড়ি করা আছে। উপরে উঠার সময় পাহাড়ি পথ দিয়ে উঠাই সুবিধাজনক। সময়ও কম লাগে। আর নামার সময় সিঁড়ি পথ দিয়ে নামুন, এতে সুবিধা হবে। পাহাড়ের গোড়া থেকে চূড়া পর্যন্ত উঠতে সর্বোচ্চ দেড় ঘন্টা সময় লাগবে রিলাক্সে উঠতে। এটি মূলত আপনার হাঁটার গতির উপর নির্ভর করে। উপরে উঠা কিছুটা পরিশ্রমসাধ্য কাজ হলেও, চূড়ায় উঠার পর চারপাশের সৌন্দর্য দেখে আপনি সব কষ্ট ভুলে যাবেন। সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হবেন। পাহাড়ের শুরুতে মাঝখানে ও চূড়ায় টং দোকান আছে। হালকা খাবার খেতে পারবেন এখান থেকে।

কোথায় থাকবেন

সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।

কোথায় খাবেন

সীতাকুন্ড বাজারে বেশ কিছু খাবারের দোকান আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া, আল আমিন ও আপন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এখানে আপনি ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ডাল, সবজি ইত্যাদি মেন্যু হিসেবে পাবেন। খাবার খরচ পড়বে প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো। রাতের বাসে গেলে সকালের ব্রেকফাস্টও এখানে সেরে নিতে পারেন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

চন্দ্রনাথ পাহাড় এর তিন পাশে ঘন জঙ্গল। কোনো লোকালয় নেই। রাতের বাসে চন্দ্রনাথ পাহাড় ভ্রমণে গেলে ভোর পাঁচটার মধ্যেই সীতাকুন্ড বাজারে পৌঁছে যাবেন। ভোরের আলো ফোটার পরপরই চন্দ্রনাথ রওনা করবেন না। এর আগে আকাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ভোরে পাহাড়ে চলে যাওয়ার কারণে। তাই অন্তত সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর রওনা করুন। এর আগে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে নিন স্থানীয় কোনো রেস্টুরেন্টে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ছোটলোকি। ভুলেও এই কাজ করবেন না, গোপনেও না। জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে অনেকগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান রয়েছে। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। চন্দ্রনাথ পাহাড় এর একদম কাছাকাছি আছে সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। ইকোপার্ক এর ভিতরে আছে সুপ্তধারাসহস্রধারা নামে আলাদা দুইটা জলপ্রপাত। আছে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। গুলিয়ালীর কাছাকাছি বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। আর হাইওয়ে ধরে ঢাকার দিকে দশ কিলোমিটার এগুলে পাবেন কমলদহ ঝর্ণা। যদি বিশ কিলোমিটার যান তাহলে  খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার ট্রেইল পাড়বে। মিরসরাইতে আরো আছে এই রুটের সবচেয়ে এডভেঞ্চারাস সোনাইছড়ি ট্রেইল

আরো পড়ুন

error: Content is protected !!
Exit mobile version