ট্রাভেল ফটোগ্রাফি হচ্ছে এমন এক শখ যা আপনার ব্যাক্তিত্বকে বহুগুন বাড়িয়ে দেয়। ঘুরতে গিয়ে আমরা সবাই কমবেশি ছবি তুলি। এর মাধ্যমে নিজের ফটোগ্রাফি স্কিল যেমন বাড়ে, তেমনি পরবর্তীতে ছবি দেখে ভ্রমণের দিনগুলোর স্মৃতি আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠে। কাজেই আলুটিলা গুহায় প্রবেশের আগ মুহূর্তে কিংবা কক্সবাজারে প্যারাসেইলিং করার সময় নিজের একটা ছবি তুলে রাখতে ভুলে যাবেন না। একটি সুন্দর ছবি মানে এক টুকরো স্মৃতি আর ছবির পেছনে একটি গল্প।
নিজেকে আড়াল করুন
ট্রাভেল ফটোগ্রাফি এর সময় যথা সম্ভব কম জিনিষ সাথে নিন। ভীড়ের মাঝে মিশে যান। দেখেই চেনা যায় এমন ক্যামেরা ব্যাগ বহন করবেন না। যদি আপনি অপরাধ-প্রবণ এলাকায় ছবি তুলতে যান তাহলে ক্যামেরাটা ডান কাঁধে ঝুলিয়ে নিন এবং এর উপরে একটা জ্যাকেট পরে নিন। ক্যামেরার লেন্স টা এক্ষেত্রে আপনার শরীরের দিকে তাক করা থাকবে, যাতে প্রয়োজন কব্জির এক মোচড়েই ক্যামেরাটা আপনার চোখের সামনে নিয়ে আসা যায়।
ভোরে উঠুন
আমরা অনেকেই ঘুরতে গেলে একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠি। ভালো ছবির জন্য আপনাকে ভোরে উঠতে হবে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে অনেক কিছু পাল্টে যায়। ধরুণ ভোরবেলা কক্সবাজার সৈকতে কিংবা সাজেক ভ্যালির পাহাড়ে যে ছবিটা তুলতে পারবেন, সকাল দশটায় সেটা পারবেন না। কারণ ততক্ষণে মানুষের ভিড়ে সাবজেক্টকে ফাঁকা পাবেন না। তাছাড়া ভোরে তোলা ছবি সুন্দর আসে।
নিজের পছন্দকে প্রাধাণ্য দিন
যদি স্বর্ণ মন্দিরের চাইতে চা বিক্রেতাকে আপনার কাছে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়ে থাকে তবে সেই চা বিক্রেতার ছবিই তুলুন। গতানুগতিক ট্যুরিস্টরা যেসব ছবি তুলে থাকেন সেগুলো আপনি গুগলে শত-শত পাবেন। অ্যাডভেঞ্চারাস হোন, যেখানে যাবেন সেখানকার স্থানীয়দের ছবি তুলতে চেষ্টা করুন, অবশ্যই তাদের অনুমতি নিতে ভুলবেন না। তাদের দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটাবেন না। তারা যদি আপনাকে ছবি তুলতে অনুমতি না দেয় তবে তাদের মতামত কে সম্মান দিন এবং অন্য কিছুর ছবি তুলুন। তবে সাধারণত কেউ না করে না, এর ফলে আপনি পাবেন সুন্দর ছবি আর সেই ছবির একটি চমৎকার গল্প।
মানুষের জীবনযাত্রা
হয়তো কেউ ইট মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে, বা ছোট ছোট বাচ্চারা খেলছে, কেউ বা মাছ বিক্রি করছে…এধরনের ছবি গুলো নিন। যাতে আপনার ছবির দর্শকরা বুঝতে পারে সেই এলাকার লোকজন কী ধরনের জীবন যাপন করছে। অনুগহ করে এধরনের ছবি তোলার সময় তাদের কে পোজ দিতে বলবেন না। আপনার ছবির সাবজেক্ট কে তাদের নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকতে দিন এবং সে সময়ে তাদের ছবি তুলুন। হ্যা, অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু কিছু পোর্ট্রেট খুবই চমৎকার দেখায় নিঃসন্দেহে। কিন্তু মনে রাখবেন তা যেন আপনি যার ছবি তুলছেন তার বিরক্তির উদ্রেক না করে।
কম্পোজিশন এক্সপেরিমেন্ট
একই ছবি বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে তুলুন। আপনার আই লেভেল থেকে একটা ছবি যেরকম দেখাবে, বসে তুললে হয়তো আরো ভালোও দেখাতে পারে! আপনি ভাবলেন এই ছবিটা এভাবেই ভালো আসবে। পরে বাসায় গিয়ে দেখলেন সেটা ভালো আসেনি। বরং অন্য এঙ্গেল থেকে কোনোমতে তোলা ছবিটাই ভালো হয়েছে!
নৈসর্গিক দৃশ্য
ট্রাভেল ফটোগ্রাফি করার মূল উদ্দেশ্যই হলো স্মৃতি জমা করা। আপনি অবশ্যই মনে করতে চাইবেন যেখানে আপনি ঘুরতে গিয়েছিলেন সে জায়গাটা কত সুন্দর ছিলো। যা দেখে আপনার মন বিমোহিত হয় যেমন ফুল, সূর্যাস্ত কিংবা পাহাড়ি ঝর্ণা, তার একটা ছবি তুলে নিন।
ভ্রমণসঙ্গীদের ছবি
আপনার ভ্রমণসঙ্গীদের ছবি নিতে ভুল করবেন না। এটা ট্রাভেল ফটোগ্রাফি এর গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। নৈসর্গিক দৃশ্যের ছবি নেয়ার সাথে সাথে যাদের সাথে আপনি ঘুরতে গিয়েছেন তাদের ছবিও নিন। আপনার স্মৃতির ভান্ডারে ট্যুরমেটরাও থাকুক। সমুদ্র পারে, বা কোন রেস্টুরেন্টের কিংবা রিসোর্টের সামনে তাদের একটা ছবি তুলে ফেলুন।
ডে লাইট এর সুবিধা
দিনের বিভিন্ন সময়ের আলোর সুবিধা নিন। ঠিক সূর্যোদয়ের পরে এবং সূর্যাস্তের আগ মুহূর্তে দিনের আলো সবচাইতে আকর্ষণীয় থাকে, এসময় অনেক সাধারণ ছবিও দেখে মোহময় মনে হতে পারে। নিজের কিছু ল্যান্ডস্কেপ এবং স্ট্রিট ফটোগ্রাফি এসময় তোলার জন্য মনে মনে একট প্ল্যান তৈরি করে রাখুন।
ক্যামেরার জুম অপশন
ডিজিটাল জুম ব্যাবহার করবেন না। ডিজিটাল ক্যামেরাতে অপ্টিক্যাল এবং ডিজিটাল দু ধরনের জুম অপশন আছে। সাধারণত ডিজিটাল জুম ব্যাবহার করে ছবি তুললে ছবি ঝাপসা আসে। অপ্টিক্যাল জুম এ ছবি অপেক্ষাকৃত ভালো আসে। আপনার ক্যামেরার সেটিংস এ গিয়ে ডিজিটাল জুম টার্ন অফ করে দিন।