ঘূর্ণিঝড় এর আগেই আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের বিভিন্ন সতর্কতা সংকেত জারী করেন। স্থানীয় প্রশাসন থেকে ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা সংকেত মাইকেও প্রচার করা হয়। এলাকাবাসীকে সতর্ক করার জন্য এটি করা হয়ে থাকে। আজকে আমরা জানবো কোন ঘূর্ণিঝড় সংকেত এর মানে কী। সমুদ্র বন্দরের ১১ টি সংকেতকে বিপদের মাত্রায় ৭ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো- দূরবর্তী সতর্কসংকেত, দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত, স্থানীয় সতর্কসংকেত, স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত, বিপৎসংকেত, মহাবিপৎসংকেত ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত। নদী বন্দরের জন্যও আছে ৪ টি নির্ধারিত সংকেত।
সমুদ্রবন্দর এর ১১টি সংকেত
১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত: বন্দর থেকে জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী কোনো এলাকায় ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার। ফলে সামুদ্রিক ঝড়ের সৃষ্টি হতে পারে।
২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত: এর অর্থ গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বাতাসের গতিবেগ আছে ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার। এর জন্য বন্দর এখনই ঝড়ে কবলে পড়বে না। তবে বন্দর ছেড়ে যাওয়া জাহাজ পথে বিপদে পড়তে পারে।
৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত: বন্দরে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। বন্দর এবং বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলো দুর্যোগ কবলিত হতে পারে। বন্দরে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার হতে পারে।
৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত: বন্দর ঘূর্ণিঝড়ে কবলিত। বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৫১ থেকে ৬০ কিলোমিটার হতে পারে। তবে ঘূর্ণিঝড়ে চূড়ান্ত রকমের প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় এখনো হয়নি।
৫ নম্বর বিপদসংকেত: এর অর্থ হলো ছোট বা মাঝারি আকারের এক তীব্র ঝড়ের কবলে পরবে বন্দর। এসময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার হতে পারে। ঝড়টি বন্দরকে বামে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৬ নম্বর বিপদসংকেত: এই সংকেতটি ৫ নম্বর সংকেতের মতোই। বন্দর ছোট বা মাঝারি ঝড়ের কবলে পড়বে। বাতাসের গতিবেগ থাকবে একটানা ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৭ নম্বর বিপদসংকেত: এই ঝড়ের তীব্রতা ৫ ও ৬ নম্বর সংকেত এর মতোই। বন্দর ছোট বা মাঝারি ঝড়ের কবলে পড়বে। বাতাসের গতিবেগ থাকবে একটানা ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরের উপর দিয়ে বা কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৮ নম্বর মহাবিপদসংকেত: এই সংকেতের মানে বন্দর প্রচণ্ড তীব্রতার ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা এর বেশি হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বাম দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
৯ নম্বর মহাবিপদসংকেত: এই ঘূর্ণিঝড় সংকেত ৮ নাম্বার সংকেতের এর মতোই। বন্দর প্রচন্ড তীব্র ঘূর্ণিঝড় এর কবলে পড়তে পারে। এসময় বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার বা এর বেশি হতে পারে। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
১০ নম্বর মহাবিপদসংকেত: উপকূলের জন্য এই সংকেত ৮ ও ৯ নম্বর সংকেত এর মতোই। বন্দর প্রচন্ড তীব্র ঘূর্ণিঝড় এর কবলে পড়তে পারে। বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮৯ কিলোমিটার বা এর বেশি হতে পারে। ঝড়টি বন্দরের উপর দিয়ে বা খুব কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে।
১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত: এর অর্থ ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সাথে সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তার বিবেচনায় চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যান্য আর্টিকেল
ঘূর্ণিঝড়ে পতাকা উত্তোলন পদ্ধতি
ঘূর্ণিঝড় এর সময় বন্দর এবং উপকূলে পতাকা উত্তলোন করতে হয়। পতাকার মাধ্যমেই সবাই সতর্ক হবে বলে ধরে নেওয়া হয়। ১,২,৩,৪ নম্বর সিগন্যাল এর জন্য একটি পতাকা, ৫,৬,৭ নম্বর সিগন্যাল এর জন্য দুইটি পতাকা এবং ৮,৯,১০ নম্বর সিগন্যাল এর জন্য তিনটি পতাকা একই খুঁটির মধ্যে উত্তোলন করে ঘূর্ণিঝড় সংকেত দিতে হয়। নিচের ছবিতে দ্রষ্টব্য।
নদীবন্দরের চারটি সংকেত
১ নম্বর নৌ সতর্কতা সংকেত: বন্দর এলাকা ক্ষণস্থায়ী ঝোড়ো আবহাওয়ার কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ৬০ কিলোমিটার। এই সংকেত আবহাওয়ার অবস্থার ওপর সতর্ক নজর রাখতে বলে।
২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত: বন্দর এলাকায় নিম্নচাপের সমান তীব্রতার একটি ঝড়, এর গতিবেগ ঘণ্টায় অনূর্ধ্ব ৬১ কিলোমিটার বা একটি কালবৈশাখী, যার বাতাসের গতিবেগ ৬১ কিলোমিটার বা তদূর্ধ্ব। এর কবলে নৌযান পড়লে নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। ৬৫ ফুট বা তার কম দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট নৌযানকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।
৩ নম্বর নৌ বিপদসংকেত: বন্দর এলাকা ঝড়ে কবলিত। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ একটানা ৬২-৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগের একটি সামুদ্রিক ঝড় শিগগিরই বন্দর এলাকায় আঘাত হানতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড় সংকেত এ সব নৌযানকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।
৪ নম্বর নৌ মহাবিপদসংকেত: বন্দর এলাকা একটি প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার সামুদ্রিক ঝড়ে কবলিত। এটি শিগগিরই বন্দর এলাকায় আঘাত হানবে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তদূর্ধ্ব। সব ধরনের নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
আরো পড়ুন
ভ্রমণ সম্পর্কিত আপডেট পেতে জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।