লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

ছবি: Hasib Wahab

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এর  অবস্থান মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ উপজেলায়। এটি বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বাংলাদেশের সাতটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য আছে। আর সংরক্ষিত বনাঞ্চল আছে দশটি। এরমধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে লাউয়াছড়ার দূরত্ব ১০ কিলোমিটারের মতো। বারোশো পঞ্চাশ হেক্টর আয়তনের এই বনকে প্রাকৃতিক জাদুঘর বলা যায়। বৈচিত্রে ভরপুর এই এই বনটি ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট হিসেবে পরিচিত। এক সময় বৃহত্তর সিলেটের অনেক জায়গায় এরকম বড় বনাঞ্চল ছিল। মানব সৃষ্ট নানান কারণে এবং চা বাগান করার সময় এই বনাঞ্চল নির্বিচারে ধ্বংস হয়। বর্তমানে এটি শুধুমাত্র মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল এবং কমলগঞ্জে এসে ঠেকেছে। জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দরবন অঞ্চল এবং মৌলভীবাজার জেলার সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান।

কিভাবে যাবেন লাউয়াছড়া

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান যেতে হলে প্রথমে শ্রীমঙ্গল আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাস অথবা ট্রেনে আপনি শ্রীমঙ্গল আসতে পারবেন। ঢাকার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়মিত বিরতিতে শ্রীমঙ্গলের বাস ছাড়ে। হানিফ, শ্যামলী, এনা পরিবহনের বাস আছে এই রুটে। নন এসি বাসের ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। এসি বাস এর ভাড়া ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা। যেতে সময় লাগবে ৪-৫ ঘন্টার মতো। 

এছাড়া কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশন থেকে শ্রীমঙ্গল ট্রেন পাবেন। সিলেটগামী  উপবন জয়ন্তিকা কালনী ট্রেনে শ্রীমঙ্গল যেতে পারবেন।  ভাড়া  পড়বে  আসনভেদে ১১৫ থেকে ৭৬৫ টাকা।

শ্রীমঙ্গল থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এর দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। সিএনজি, মোটর রিকশা, জিপ বা ব্যক্তিগত গাড়িতে লাউয়াছড়া যেতে পারবেন।

একদিনের শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ পরিকল্পনা

লাউয়াছড়া ঘুরে দেখার জন্য দুই তিন ঘন্টা সময় যথেষ্ট। তাই দিনের বাকিটা সময় আপনি চাইলে শ্রীমঙ্গল এর আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। শ্রীমঙ্গলের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা নীলকন্ঠ চা কেবিন বাইক্কা বিল চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, মাধবপুর লেক, চা বাগান, মনিপুরী পল্লী, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি।

রাতের বাসে শ্রীমঙ্গল গেলে ভোরের মধ্যেই আপনি শ্রীমঙ্গল থাকতে পারবেন। শহরের কোন রেস্টুরেন্টে ব্রেকফাস্ট সেরে একটি সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে নিন সারাদিনের জন্য। সারাদিনের জন্য সিএনজি ভাড়া নিবে ১০০০ থেকে পনেরশো টাকা। সিএনজি নিয়ে প্রথমে চলে যাবেন কমলগঞ্জের মাধবপুর লেক। মাধবপুর লেক ঘুরে চলে আসুন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। দুপুরের মধ্যে দুটি স্থান ঘুরে ফেলতে পারবেন।

এরপর শ্রীমঙ্গল শহরে এসে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। বিকেলটা বরাদ্দ রাখুন মনিপুরী পল্লী নীলকন্ঠ টি কেবিন এবং আশেপাশের চা ও রাবার বাগানের জন্য।

লাউয়াছড়া কি দেখবেন

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এর প্রধান আকর্ষণ এখানকার জীববৈচিত্র্য। এই বনে নানান প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এরমধ্যে ১৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ, 20 প্রজাতির স্তন্যপায়ী, 240 প্রজাতির পাখি ও 6 প্রজাতির সরীসৃপ আছে। উল্লেখযোগ্য বন্য প্রাণীর মধ্যে আছে লজ্জাবতী বানর মুখ পোড়া হনুমান বনরুই গন্ধগোকুল বাগদাস বনমোরগ গুইসাপ অজগর সাপ সজারু, হনুমান শেয়াল মেছো বাঘ, চিতা বাঘ, বিড়াল বিড়াল কাঠবিড়ালি বন্য কুকুর নানান রকম বিরল প্রজাতির সাপ, সবুজ ঘুঘু সহ বিরল প্রজাতির পাখি ইত্যাদি। এখানে সবচেয়ে বেশি দেখা মেলে বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের।

বনের জীব বৈচিত্র দেখার জন্য বোনের ভিতরে রয়েছে তিনটি ট্রেইল। আধাঘন্টা একঘন্টা ও তিন ঘণ্টার এই ট্রেইল গুলোতে আপনি হাইকিং করে যেতে পারবেন। তার জন্য এখানে গাইড সার্ভিসের ব্যবস্থা আছে।

এই রেইনফরেস্ট এতই ঘন যে এখানে সূর্যের আলো মাটিতে পড়ে না বললেই চলে! সূর্যের আলোর জন্য এই বনের গাছপালা প্রতিযোগিতা করে উপরের দিকে বেড়ে উঠে। তাই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এর গাছপালা অনেক লম্বা হয়ে থাকে।

কোথায় থাকবেন

শ্রীমঙ্গলে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। চা বাগান ঘেরা এইসব রিসোর্টে অগ্রিম বুকিং সাপেক্ষে আপনি থাকতে পারবেন। শ্রীমঙ্গল এর হোটেল রিসোর্ট সমুহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-

গ্রান্ড সুলতান গলফ রিসোর্ট: এটি শুধু শ্রীমঙ্গল নয়, সিলেট বিভাগেরই প্রথম 5 তারকা মানের রিসোর্ট। গ্রান্ড সুলতানের অবস্থান লাউয়াছড়া বন ঘেঁষে। এখানে রুম ভাড়া ২৪ হাজার থেকে ৭৮ হাজার টাকা। বিভিন্ন সময়ে এখানে ডিসকাউন্ট পাওয়া যায় 20 থেকে 50 পারসেন্ট পর্যন্ত। রিজার্ভেশন ও ইনফরমেশন এর জন্য ফোন করতে পারেন- 01730793501-4.

দুসাই রিসোর্ট এন্ড স্পা: এটি শ্রীমঙ্গলের সবচেয়ে জনপ্রিয় রিসোর্ট। হোটেল এবং ভিলা এই দুই ক্যাটাগরিতে এখানে রুম আছে। হোটেল ক্যাটাগরির রুম ভাড়া 9600 থেকে 12000 টাকা। আর ভিলা ক্যাটাগরিতে রুম ভাড়া 16000 থেকে 6000 টাকা। যোগাযোগ- 086164100

টি রিসোর্ট ও মিউজিয়াম: বাংলাদেশ চা বোর্ডের অধীনে এই রিসোর্টটি পরিচালিত হয়। অবস্থান শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ রোডের পাশে। এখানে প্রতিটি বাংলোয় 4 থেকে 8 জন থাকা যাবে। প্রতি রাতের জন্য ভাড়া পড়বে পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা। যোগাযোগ- ০১৭৪৯০১৪৩০৬ 

নভেম ইকো রিসোর্ট: আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই রিসোর্টের অবস্থান শ্রীমঙ্গলের রাধানগরে। মাটির ঘর কাঠের ঘর ফ্যামিলি ভিলা ও তাবুতে থাকার ব্যবস্থা আছে এখানে। রুম ভেদে এখানে ভাড়া পড়বে ৮ থেকে ১৭৫০০ টাকা।

নিসর্গ ইকো কটেজ: শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ রোডের পাশে গড়ে ওঠা এই রিসোর্টে থাকার জন্য খরচ পড়বে রুম প্রতি দুই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। যোগাযোগ- ০১৭৬৬৫৫৭৭৮০ 

লেমন গার্ডেন রিসোর্ট: এই রিসোর্ট টিও লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এর পাশে। এখানে রুম ভাড়া 3 থেকে 8 হাজার টাকা। যোগাযোগযোগাযোগ- ০১৭৬৩৫৫৫০০০

শান্তিবাড়ি রিসোর্ট: শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ রোডে মূল রাস্তা থেকে একটু ভেতরের দিকে এই রিসোর্টের অবস্থান। যোগাযোগ- ০১৭১৬১৮৯২৮৮

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাদেও মৌলভীবাজার জেলায় আরো অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো  মাধবপুর লেক, মাধবকুন্ড জনপ্রপাত, হামহাম জলপ্রপাত, বাইক্কা বিল, মনিপুরী পল্লী, হাকালুকি হাওর ইত্যাদি। এছাড়া সিলেট বিভাগে আরো আছে জাফলং, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, গোয়াইনঘাট এর পান্থুমাই ঝর্ণা, জৈন্তিয়াপুর এর লালাখাল ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক ট্রাভেল গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। লালাখাল সম্পর্কে আরো বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে চাইলে আমাদেরকে জানান।