গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায়। সীতাকুন্ড মানেই একপাশে সাগর আর অন্যপাশে পাহাড়। সীতাকুন্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালী সি বিচ এর দুরত্ব ৫ কিলোমিটার। স্থানীয়দের কাছে এই সৈকত “মুরাদপুর সী বিচ” নামে পরিচিত। গুলিখালীর অন্যতম বৈশিষ্ট হলো এখানকার পুরো সমুদ্র পাড় ঢেকে আছে গালিচার মতো সবুজ ঘাসে! সৈকতের তিনদিকে শোভা বর্ধন করছে ছোট ছোট ম্যানগ্রোভ বন। আর অন্যদিকে অসীম সমুদ্র। বনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালার মধ্যে কেওড়া অন্যতম। ম্যানগ্রোভ বনের শ্বাসমূল ছড়িয়ে আছে সৈকত জুড়ে। তার মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে বড় ছোট অনেকগুলো খাল। জোয়ারের সময় খালগুলো পানিতে ভরে যায়। গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকত কিছুটা কম পরিচিত হওয়ায় বেশিরভাগ সময়ই এখানে পর্যটক থাকেনা। তাই আপনি সমুদ্রের বাতাসের সাথে নিরবতা উপভোগ করতে পারবেন মন ভরে। গুলিয়াখালি সী বিচ এর কাছাকাছি জেলে পল্লী থাকায় শুনশান সৈকতও নিরাপদ। গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত এর কাছেই আছে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত।
কিভাবে যাবেন গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি সীতাকুন্ড আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। এসব টার্মিনাল থেকে সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, ইউনিক, সোহাগ, গ্রিন লাইন সহ সব বড় কোম্পানির বাস আছে এই রুটে। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত যেতে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
ট্রেনে সীতাকুন্ড
ঢাকা থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত তথা সীতাকুন্ডের সরাসরি একটি ট্রেন আছে চট্টলা একপ্রেস নামে। এছাড়া সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই সীতাকুন্ড বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে সীতাকুন্ডের বাস ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।
যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে সীতাকুন্ড বাজারে আসা যাবে।
সীতাকুন্ড থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত
সীতাকুন্ড বাজারের হাইওয়ে ওভারপাসের নিচ থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত যাওয়ার সিএনজি পাওয়া যায়। বাজার থেকে সমুদ্রের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। রিজার্ভ সিএনজিতে ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। যেতে সময় লাগে ২৫/৩০ মিনিট। সিএনজি নেওয়ার সময় ঠিকঠাক দরদাম করে নিবেন। চাইলে আপডাউন রিজার্ভও করতে পারেন। গুলিয়াখালীর কাছে বেড়িবাঁধে সিএনজি আপনাকে নামিয়ে দিবে। ওখান থেকে হেঁটে সমুদ্রপাড়ে গেলে ১০/১২ মিনিট লাগে। ঘুরতে গিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলে অনেক সময় ফেরার সিএনজি পাওয়া যায়না। তাই নামার সময় ড্রাইভারের ফোন নাম্বার নিয়ে রাখুন।
কোথায় থাকবেন
সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার।
কোথায় খাবেন
সীতাকুন্ড বাজারে খাবারের অনেকগুলো দোকান আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া, আল আমিন ও আপন রেস্টুরেন্ট উল্লেখযোগ্য। এখানে আপনি ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ডাল, সবজি ইত্যাদি মেন্যু হিসেবে পাবেন। খাবার খরচ পড়বে প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো। রাতের বাসে গেলে সকালের ব্রেকফাস্টও এখানে সেরে নিতে পারেন।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে বিকেলে গেলে ভালো লাগবে। সীতাকুন্ড থেকে ঘুরে আসতে সব মিলিয়ে দুই তিন ঘন্টা সময়ই যথেষ্ট। তাই সারাদিনের জন্য সীতাকুন্ডের প্ল্যান থাকলে সকালটা আশেপাশের অন্য কোনো দর্শনীয় স্থানে কাটাতে পারেন। ভ্রমণের সময় জোয়ার ভাটার টাইম জেনে নিন। স্থানীয় জেলেরাও এই ব্যাপারে ভালো ধারণা দিতে পারবে। জোয়ারের সময় সমুদ্রের কাছে না থাকাই ভালো। কারণ খালগুলো জোয়ারের পানিতে ভরে গেলে ফিরতে অসুবিধা হবে। সন্ধ্যার মধ্যেই সীতাকুন্ড বাজারে ফিরে আসুন। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ছোটলোকি। ভুলেও এই কাজ করবেন না, গোপনেও না। জয়েন করতে পারেন আমাদের নিয়মিত ট্রাভেল আড্ডার গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।
কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে অনেকগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান রয়েছে। গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। গুলিয়াখালী সি বিচ এর একদম কাছাকাছি আছে বাঁশ বাড়িয়া সমুদ্র সৈকত আর চন্দ্রনাথ পাহাড় । কাছাকাছি আছে এই রুটের সবচেয়ে এডভেঞ্চারাস ট্রেইল সোনাইছড়ি। সীতাকুন্ড ইকো পার্ক এর ভিতরে আছে সুপ্তধারা আর সহস্রধারা জলপ্রপাত। আর হাইওয়ে ধরে ঢাকার দিকে দশ কিলোমিটার এগুলে পাবেন কমলদহ ঝর্ণা। যদি বিশ কিলোমিটার যান তাহলে খৈয়াছড়া ঝর্ণা আর নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার ট্রেইল পাড়বে।
আরো পড়ুন