সেন্টমার্টিন

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এটি বাংলাদেশের মূলভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিনকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলে ডাকা হয়। নীল আকাশ আর সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ এ দ্বীপকে করেছে অনন্য। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান যা ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে দুর্নিবার আকর্ষনে কাছে টেনে নেয়।

কখন যাবেন সেন্টমার্টিন

সেইন্টমার্টিন যাওয়ার ভালো সময় হলো নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। তখন আকাশ পরিষ্কার থাকে এবং সমুদ্রের পানি থাকে ঘন নীল। এরকম নীল জলরাশির সমুদ্র বাংলাদেশে একমাত্র সেন্টমার্টিন থেকে দেখা যায়। টেকনাফ – সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল করে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। বছরের বাকি সময় জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। আর ট্রলারে যেতে চাইলে সারা বছরই যাওয়া যায়। তবে বর্ষাকালে ট্রলারে যাতায়ত নিরাপদ নয়।

কিভাবে সেন্টমার্টিন যাবেন

সেন্টমার্টিন যেতে হলে প্রথমে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে আসতে হবে। টেকনাফ থেকে জাহাজ, স্পিডবোট অথবা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে যেতে চাইলে সরাসরি বাসে টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে জাহাজে/ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া সুবিধাজনক। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনায় কক্সবাজার সহ থাকলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে তারপর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে টেকনাফ

ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ঈগল, এস আলম, মডার্ন লাইন, গ্রীন লাইন ইত্যাদি বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। এসি নন বাস ভাড়া ৯শ থেকে ১১শ টাকা, এসি বাস ভাড়া ১৮শ থেকে ২৩শ টাকা পর্যন্ত।  আবার ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়েও টেকনাফ যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ঢাকা থেকে প্রথমে কক্সবাজার এসে তারপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে হবে। এছাড়াও ঢাকা থেকে বিমানে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারবেন।

চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ

চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ যেতে হলে চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস থেকে এস আলম এবং সৌদিয়া বাস রাত ১২টায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া জিইসি গরিবুল্লাশাহ মাজার ও দামপাড়া থেকেও কিছু বাস চট্টগ্রাম-টেকনাফ রুটে চলাচল করে। আবার কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস বা মাইক্রো/জিপ ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যাবে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে সময় লাগে অবস্থা ভেদে ২ থেকে ৩ ঘন্টা।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে আসা-যাওয়া করে কুতুবদিয়া, আটলান্টিক ক্রুজ, বে ক্রুজ, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন ইত্যাদি জাহাজ। এছাড়াও এই সমুদ্র রুটে বেশ কিছু ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করে। জাহাজে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘন্টা। জাহাজের শ্রেনীভেদে আপ-ডাউন ভাড়া ৯০০ থেকে ১৬০০ টাকা। জেটি ঘাট থেকে জাহাজ ছাড়ে প্রতিদিন সকাল ৯ টায়। একই শিপ বিকাল ৩ টায় সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়ে আসে। আসা যাওয়ার সময় জাহাজ ছাড়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে জেটি ঘাটে উপস্থিত থাকলে উঠতে সুবিধা হবে। সধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ এই পাঁচ মাস জাহাজ চলাচল করে। এই সময় ছাড়া অন্য সময়ে গেলে ট্রলার কিংবা স্পিডবোট দিয়ে যেতে হবে।

ভ্রমণ পরিকল্পনা

অনেকে সকালের শিপে গিয়ে বিকালের শিপে ব্যাক করেন। এটা আসলে এক ধরণের ভুল সিদ্ধান্ত। এতে জাহাজ থেকে উঠা নামার মাঝখানে ১ ঘন্টা সময় পাওয়া যায়। এই ১ ঘন্টা জেটি ঘাটে কেটে যায়, দ্বীপ আর দেখা হয়না কিছুই। নূন্যতম ১ রাত সেন্টমার্টিন থাকলে ভালো। তবে ২ রাত থাকলে সবকিছু ভালোভাবে উপভোগ করা যায়।

সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে সুন্দর অংশ হলো সেন্টমার্টিনের পশ্চিম বিচ। পশ্চিম বিচ থেকে যতদূর চোখ যায় শুধু নীল জলরাশি। তাই পশ্চিম বিচের কোনো রিসোর্টে থাকাই ভালো। যারা ১ রাত থাকতে চান তারা প্রথমদিন বিকালেই ছেঁড়াদ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ট্রলারে করে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়া এখন নিষিদ্ধ। তবে চাইলে হেঁটে হেঁটে যেতে পারবেন। অথবা সাইকেল নিয়েও ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়া যায়।

যেদিন সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসবেন , সেদিন দুপুর দুইটার আগেই খাওয়া দাওয়া সহ সব কাজ শেষ করে দুইটার মধ্যে জেটি ঘাটে থাকতে হবে। নইলে শিপ মিস করার সম্ভাবনা থেকে যায়।

কী খাবেন কোথায় খাবেন

দ্বীপটার নামই নারিকেল জিঞ্জিরা। দ্বীপে এসে প্রচুর ডাব খেতে পারবেন। দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য সবচেয়ে ভালো পাওয়া যায় সামুদ্রিক মাছ ও শুটকি। এখানে রূপচাঁদা, ভেটকি, কোরাল, টুনা, চিংড়ি, স্যামন সহ হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ পাবেন। প্রায় প্রত্যেকটা রিসোর্টেই রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে খেতে পারবেন। প্রতিবেলা খাবার খরচ পড়বে মেন্যু ভেদে জনপ্রতি ১৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। রাতে চাইলে মাছ দিয়ে বারবিকিউ করা যাবে। রিসোর্টে বললে তারাই ব্যবস্থা করে দিবে।

সেন্টমার্টিনের রিসোর্ট সমূহ

থাকার জন্য সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো পশ্চিম বিচ এর রিসোর্ট সমূহ। সেন্টমার্টিনে থাকার অনেকগুলো হোটেল ও রিসোর্ট আছে। এগুলোর ভাড়া সিজন ভেদে উঠানামা করে। তবে ডিসেম্বর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারীতে ভাড়া সর্বোচ্চ থাকে। সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আগে থেকে হোটেল-রিসোর্ট কনফার্ম করে যাওয়াই ভালো। কারণ সিজনের সময় সপ্তাহর মাঝামাঝিতেও ভালো রিসোর্ট গুলোতে রুম ফাঁকা থাকেনা।
Dwipantar Beach Resort
ছবি : দ্বীপান্তর বিচ রিসোর্ট
দ্বীপান্তর বিচ রিসোর্ট: ভিউ ফ্যাসিলিটিজ ও কোয়ালিটি বিবেচনায় এটি সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে সেরা রিসোর্ট। সমুদ্র লাগোয়া এই রিসোর্টের স্থাপত্যশৈলী চমৎকার। আলাদা আলাদা বিচ কটেজ বাদেও এখানে রয়েছে কাঠের ডুপ্লেক্স রুম। রয়েছে কাঠের দোতলা রেস্টুরেন্ট। যেখানে খোলা ছাদে বসে গায়ে সমুদ্রের হাওয়া মেখে সমুদ্র উপভোগ করা যায়। ফ্যামিলি নিয়ে থাকার জন্য এটি বেশ ভালো। রিসোর্টের রুম ভাড়া রুম ভেদে ৫০০০  থেকে ৭০০০ টাকা। তাঁবু ভাড়া ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
ফেসবুক পেজঃ Dwipantor Beach Resort
গুগল ম্যাপঃ Dwipantor Beach Resort
ফোন নাম্বার:  01884-710723, 01886-363232
নীল দিগন্তে রিসোর্ট: সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সুন্দর একটি রিসোর্ট। এখানে সবগুলো রুমই টিনশেড। রুম ভাড়া দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা। কোনো বিচ ভিউ রুম নেই।
ফোন নাম্বার: 01730-051005
ব্লু মেরিন রিসোর্ট : সেন্টমার্টিনের আরেকটি সুন্দর রিসোর্ট হলো ব্লু মেরিন রিসোর্ট। এখানে আরো কিছু বাড়তি সুযোগ সুবিধা ব্যবস্থা আছে যেমন পার্টি জোন, হল রুম ইত্যাদি। কর্পোরেট ট্যুরের জন্য এটি বেশি ব্যবহৃত হয়। রুম ভাড়া ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01713-399001
সীমানা পেরিয়ে রিসোর্ট: এই রিসোর্টের অবস্থান পশ্চিম বিচে, ভ্যানে করে যেতে হবে। এতে চোদ্দটি রুম ও একটি নিজস্ব রেস্ট্যুরেন্ট আছে। এর ভাড়া এক হাজার পাঁচশো থেকে দুই হাজার পাঁচশো টাকা।
ফোন নাম্বার: 01911-121292
কোরাল ভিউ রিসোর্ট: এই রিসোর্টটি নৌবাহিনী পরিচালনা করে। এটি সেন্টমার্টিনের পূর্ব বিচে। জেটি থেকে বেশ খানিকটা দূরে বলে ভ্যান/বোট নিয়ে যেতে হবে। এর আয়তন অনেক বড়ো এবং রুমগুলো থেকে মোটামুটি সমুদ্র দেখা যায়। এর রুমপ্রতি ভাড়া দুই হাজার পাঁচশো টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01859-397045
দ্য আটলান্টিক রিসোর্ট: (আগের নাম ছিলো লাবিবা বিলাস) সুপ্রশস্ত এই দ্বিতল রিসোর্টে এর অবস্থান উত্তর বিচে।  রুম ভাড়া রুম ভেদে দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা।
সমুদ্র বিলাস রিসোর্ট: পশ্চিম বিচের এর রিসোর্টটি সাদামাটা আর দশটা রিসোর্টের মতোই। তবে এর একটি বিশেষত্ব আছে। এটি মূলত হুমায়ূন আহমেদ এর বাড়ি। এখানে রুম ভাড়া সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01911-920666
সি ভিউ রিসোর্ট এন্ড স্পোর্টস: এই রিসোর্টের অবস্থান জেটি ঘাট এর পাশে উত্তর বিচেই। কম খরচে থাকার জন্য এটি ভালো একটি রিসোর্ট। রুম ভাড়া দেড় থেকে তিন হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার:  01840-477957
হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজ: এই দ্বিতল হোটেলটির অবস্থান ব্লু মেরিনের কিছুটা উত্তরে। কম খরচে থাকার জন্য এটিও ভালো একটি রিসোর্ট। বিচ থেকে একটু দূরে বলে অল্প কয়েকটি রুম থেকে সমুদ্রের খানিকটা দেখা যায়। প্রাসাদ প্যারাডাইজের প্রতিটি রুমের ভাড়া দুই হাজার থেকে চারহাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01556-347711
হোটেল সী ইন: সেন্টমার্টিন বাজারের মূল রাস্তা ধরে পাঁচ মিনিট হাটলেই এই হোটেলটির অবস্থান। স্টুডেন্ট বা কম খরচে যারা থাকতে চান তাদের জন্য এটি ভালো একটি হোটেল। এখানে রুম ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
ফোন নাম্বার: 01764-190586
সি প্রবাল রিসোর্ট: উত্তর বিচে কম খরচে থাকার আরেকটি ভালো রিসোর্ট সি প্রবাল। এর রুম ভাড়া ১২শ থেকে ২৫শ পর্যন্ত। স্টুডেন্ট কিংবা যারা কম খরচে থাকতে চান তারা এই রিসোর্টে থাকতে পারবেন। 
ফোন নাম্বার: 01756-208383
এগুলো ছাড়াও সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাত্রিযাপনের জন্য কোরাল ব্লু, ড্রিম নাইট, সায়রি, অবকাশ, স্যান্ড শোর, ব্লু লেগুন, সিটিবি ইত্যাদি রিসোর্ট পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সেন্টমার্টিনে ভালো রিসোর্ট ও খারাপ রিসোর্টের রুম ভাড়ায় তেমন পার্থক্য নেই। ভালো রিসোর্ট গুলোর রুম ভাড়া নির্দিষ্ট থাকলেও, সাধারণ রিসোর্টগুলো সুযোগ বুঝে দাম অনেক বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ফ্যামিলি নিয়ে ভ্রমণ করলে আগে থেকে  ভালো রিসোর্টে বুকিং দেওয়াই ভালো। জেটি ঘাটের পাশে হোটেলগুলোতে কম খরচে থাকা যায়। প্রিমিয়াম রিসোর্ট গুলোর অবস্থান একটু ভিতরের দিকে। সেন্টমার্টিনে ভ্যান ভাড়া অনেক বেশি। তাই ভ্যানে চড়ার আগে ভালোমতো দরদাম করে নিন। ছেঁড়া দ্বীপে বিকেলের দিকে গেলেই ভালো, তখন রোদ কম থাকে।

সমুদ্রে নামার আগে জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিন। ভাটার সময় সমুদ্রে নামা ঝুঁকিপূর্ণ। সেন্টমার্টিনের জেটিঘাটের পাশে উত্তর বিচে রিপ কারেন্ট আছে। জেটিঘাটের পাশে সমুদ্রে নামবেন না।

দ্বীপের সাধারণ মানুষদের জন্য সবকিছু একদাম, আর পর্যটকের জন্য অনেক বেশি দাম। সেটা ভ্যান ভাড়া থেকে শুরু করে সবকিছু। তাই কোনো কিছু কেনার আগে ভালোমতো দরদাম করে নিন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers ‘এ।

আরো পড়ুন

কম্পাস ছাড়া দিক নির্ণয়

কম্পাসের সাহায্যে দিক নির্ণয় করা এখন বেশ সহজ। কিন্তু হাজার বছর ধরে মানুষ কম্পাস ছাড়া দিক নির্ণয় করে আসছে। সেটা হোক সমুদ্রে মুরুভূমিতে কিংবা পাহাড়ে। চুম্বক আবিষ্কারের আগে এই কাজটা বেশ কঠিন ছিলো। প্রায় ৪০০০ বছর আগের কথা। গল্প শোনা যায় চুম্বকের আবিষ্কার হয়েছিল এশিয়া মাইনরে, আবার কারও মতে গ্রিসের ম্যাগনাস এলাকায়। যেখানেই হোক, চুম্বক আবিষ্কারের পরে মানুষ আবিষ্কার করে যে এটার দুই মাথা সবসময় উত্তর দক্ষিণ দিকে তাক করা থাকে। এর পরে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি মানুষকে।

চন্দ্র সূর্য

চন্দ্র প্রতিদিন না উঠলেও সূর্য প্রতিদিন উঠে। পূর্বে তাদের উদয় হয়, পশ্চিমে অস্ত। এটা সহজ হিসেব। সময়টা যদি হয় সকাল কিংবা বিকেলের দিকে, তাহলে আপনার জন্য দিক নির্ণয় করা সহজ হয়ে গেল অনেকটাই। যদি সকাল হয়, তাহলে সূর্য কমবেশি পূর্ব দিকে হেলে থাকবে। যদি বিকেল হয়, তাহলে সূর্য কমবেশি পশ্চিম দিকে হেলে থাকবে। সেখান থেকে আপনি দিকের ধারণা পেয়ে যাবেন।  এটা খুব নিখুঁত না হলেও সবচেয়ে দ্রুত এবং সহজ পদ্ধতি। সূর্য পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়, শীতকালে খানিকটা দক্ষিণে এবং গ্রীষ্মকালে খানিকটা উত্তরে হেলে থাকে (বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী)। কিন্তু দুপুর ১২ টায় আপনি কী করবেন?

সূর্যের ছায়া দেখে দিক নির্ণয়

একটা জিনিস আমরা সবসময় জানি সূর্য পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়। সুতরাং সূর্যের ছায়া পশ্চিম পূর্বে যাবে। সূর্যের আলো আছে এরকম জায়গায় একটা লাঠি খাড়া সোজা করে মাটিতে পুঁতবেন। ওটার ছায়ার মাথা বরাবর একটা দাগ দিন। পনের মিনিট ছায়া কিছুটা সরে গেলে আবার ছায়ার মাথা বরাবর আরেকটা দাগ দিন। দুইটা দাগ বরাবর সোজা রেখা টানলে তা পূর্ব-পশ্চিম নির্দেশ করে। যে দাগ প্রথম দিয়েছিলে সবসময়েই পশ্চিম।

Compass

হাতঘড়ি দিয়ে দিক নির্ণয়

এনালগ কাঁটাওয়ালা ঘড়ি দিয়েও দিক নির্ণয় করতে পারবেন। ঘড়িকে মাটিতে বা সমতল কোন জায়গায় রাখেন। ঘন্টার কাঁটা সূর্য বরাবর রাখবেন। এরপর বারোটার দাগ আর ঘন্টার কাঁটার মাঝ বরাবর মনে মনে একটা দাগ টানেন। এই দাগের দুই প্রান্ত হচ্ছে উত্তর আর দক্ষিণ। এখন কোন প্রান্ত উত্তর আর কোনটা দক্ষিণ এটা বোঝার জন্য পূর্ব পশ্চিম চিনতে হবে। পূর্ব পশ্চিম চেনা সোজা। সূর্য পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়।

দিক নির্ণয়

তারা দেখে অবস্থান

ঠিক সন্ধ্যা বেলায় আপনি পশ্চিম আকাশের দিকে তাকালে দিগন্তরেখায় যে উজ্জ্বল তারাটি দেখতে পান, সেটিকে আমরা বলি সন্ধ্যাতারা। এই তারাটাই শেষরাত নাগাদ পশ্চিমে চলে যায়। তখন এটাকে আমরা বলি শুকতারা। এটি মূলত নক্ষত্র নয়, শুক্র গ্রহ।

ধ্রুবতারা ও সপ্তর্ষি মন্ডল

রাত বাড়ার সাথে সাথে সমস্ত নক্ষত্র দিক পরিবর্তন করে। শুধুমাত্র একটা তারা স্থির থাকে। সেই নক্ষত্রকে আমরা বলি ধ্রুবতারা। এই ধ্রুবতারা বিশুদ্ধ উত্তর দিক নির্দেশ করে। কথা হলো ধ্রুবতারা আপনি কিভাবে খুঁজে বের করবেন? ধ্রুবতারা বের করার জন্য আমাদেরকে প্রথমে সপ্তর্ষি মন্ডল খুঁজে বের করতে হবে। সপ্তর্ষি মন্ডল আমরা সবাই চিনি। এই মন্ডল এর সামনের দুইটা তারা বরাবর দাগ টানলে আকাশে উজ্জ্বল যে তারাটা পাওয়া যায় ওটা ধ্রুবতারা। ওটাই উত্তর দিক।

ধ্রুবতারা

আরো ট্রাভেল টিপস পড়ুন

জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers এ।

 

 

বিদেশ ভ্রমণ এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

ভ্রমণ এর জন্য বিদেশ যাওয়া সবসময় আনন্দের। এই দূরের পথ পাড়ি দেয়ার জন্য অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা এবং অনেক কঠোর প্রচেষ্টা থাকে। প্রথমবার বিদশ যাত্রা করার সময় যে গুরত্বপূর্ণ কথা খেয়াল করা উচিত সেটা হল সেই দেশের সংস্কৃতি,অর্থনীতি ও রাজনৈতিক বিষয়। প্রথমবার বিদেশ যাত্রার আগে কিছু বিষয়ের উপর খেয়াল রাখা উচিত। নিয়মিত দেশের বাইরে ভ্রমণ করলে এই বিষয়গুলো আপনাতেই আপনার আয়ত্বে চলে আসবে।

পাসপোর্ট সম্পর্কিত বিষয়

পাসপোর্টের মেয়াদ কতদিন আছে সেটা চেক করুন। তিনমাসের কম থাকলে বেশিরভাগ দেশেই ঢুকতে ঝামেলা হয়। এক এক দেশের ক্ষেত্রে একেক নিয়ম। আপনি যে দেশে যাচ্ছেন, সেই দেশের নিয়মটি জেনে নিন। ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা পাসপোর্টে এনডোর্স করে নিন। যত ডলার এনডোর্স করা থাকবে আপনি সর্বোচ্চ তত ডলার সাথে করে নিতে পারবেন। ক্রেডিট কার্ড থাকলে ডলার এন্ডোর্স ও একটিভ করে নিন।

বিদেশ ভ্রমণ এর এয়ার টিকিট

এয়ার টিকিটে পাসপোর্ট অনুযায়ী সঠিক ভাবে তথ্য দেয়া আছে কিনা ? টিকিটে আপনার যাত্রার তারিখ ও দেশে ফেরার তারিখ আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী আছে কিনা চেক করে দেখুন। টিকেট চেক করে দেখুন আপনার ব্যাগেজ এলাউন্স কত। ব্যাগেজ এলাউন্স ও নির্দিষ্ট মাপ অনুযায়ী ব্যাগেজ নিন। বাড়তি ওয়েইট না নেওয়াই ভালো।

বিমান যাত্রা

বিমানে যাত্রা করলে, প্রথমে আপনি বহির্গমন গেট দিয়ে ফ্লাইট এর সময়ের কমপক্ষে ৩ ঘন্টা আগে বিমানবন্দরে প্রবেশ করবেন। টিকেটে যাত্রার সময়, এয়ারপোর্টে উপস্থিত হওয়ার শেষ সময়, টার্মিনাল নম্বর, চেকইন কাউন্টার নম্বর ইত্যাদি চেক করে নিন। প্রবেশের পরে সাথে সাথে মালামাল স্ক্যানিং করাবেন এবং স্ক্যানিং ট্যাগ লাগাবেন এসময় লাগেজ সতর্কতার সাথে নজরে রাখবেন। এরপর আপনি রো এরিয়াতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট উড়োজাহাজের কাউন্টারে গিয়ে টিকেট এবং পাসপোর্ট দেখিয়ে বোর্ডিং কার্ড সংগ্রহ করবেন এবং চেক-ইন লাগেজ কাউন্টারে জমা দিবেন।

এরপর আপনি বোর্ডিং কার্ড, পাসপোর্ট, ভিসা এবং পুরণকৃত ইডি কার্ড সহ যাবতীয় কাগজ হাতে নিয়ে এবং হ্যান্ড লাগেজ সহ ইমিগ্রেশনে নির্ধারিত লাইনে দাড়াবেন এবং ইমিগ্রেশন করাবেন। আপনার পাসপোর্টে একটি বহির্গমন সিল দেয়া হবে এবং তারপর পাসপোর্ট বুঝে নিন। প্লেনে নিষিদ্ধ বস্তু কি কি, তা চেক করে নিন। নিষিদ্ধ কিছু নিয়ে প্লেনে ভ্রমণ করবেন না । প্রয়োজনীয় ওষুধ পত্র সাথে নিন।

তারপর ডিপার্চার কার্ড সংগ্রহ ও পূরণ করুন। এরপর সময় হলে উড়োজাহাজের গেট খুলে দিবে এবং আপনি আপনার বোর্ডিং কার্ডে প্রদেয় আসন নাম্বার অনুযায়ী উড়োজাহাজে আসন গ্রহন করুন। আপনার হ্যান্ড লাগেজ মাথার উপরে লাগেজ চ্যাম্বারে রাখুন। ল্যাপটপ ব্যাগ সিটের নীচেও রাখতে পারেন। সর্বশেষে সিট বেল্ট বেধে উড়োজাহাজে বসে থাকুন। বিমান থেকে নামার আগে ডিসএম্বারকেশন কার্ড সংগ্রহ ও পূরণ করুন, এবং সিরিয়ায়ল ধরে নামুন।

বৈদেশিক মুদ্রা

অনেকেরই প্রশ্ন থাকে একজন যাত্রী সর্বোচ্চ কত ডলার পর্যন্ত সাথে করে নিয়ে যেতে পারবে? কত ডলার সাথে নিতে পারবেন এটা নির্ভর করে আপনি কোন দেশে ভ্রমণে যাচ্ছেন তার উপর। সার্কভূক্ত দেশ সমূহ ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে আপনি বছরে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ডলার নিতে পারবেন। সার্কের বাইরের দেশগুলোর ক্ষেত্রে বছরে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ডলার নিতে পারবেন। ১২ বছরের কম বয়সী যাত্রী একজন প্রাপ্তবয়স্ক যাত্রীর অর্ধেক পরিমান ডলার সাথে নিতে পারবে।

বাংলাদেশে ফেরার সময় আপনি যে কোন অংকের বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে আনতে পারবেন। এনডোর্সমেন্টের বালাই নেই। তবে ৫,০০০ মার্কিন ডলার বা তার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার অধিক হলে নির্ধারিত FMJ ফরমে শুল্ক কর্তৃপক্ষের নিকট ঘোষণা দিন আপনার কাছে এর বেশি পরিমান টাকা আছে। এর জন্য কোনো শুল্ক প্রদান করতে হবেনা।

চিকিৎসার কাজে ডাক্তারি কাগজপত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে ১০,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত নেয়া যাবে। তার অতিরিক্ত দরকার হলে যেকোন অথরাইজড ব্যাংককে প্রয়োজনীয় কাজগপত্র দেখালেই চলবে! প্রয়োজন সাপেক্ষে অতিরিক্ত মুদ্রার অনুমোদন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাঁরাই নিয়ে দিবেন। শিক্ষাজনিত কাজে নেয়া যাবে ভ্রমণ কোটার সমান ডলার। তবে  টিউশন ফি, হোস্টেল ফি এসব ব্যাংকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিমাণ মুদ্রা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগেভাগেই জমা দেয়া যাবে কোটার বাইরে। ফরেইনার, এনআরবি’দের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি মুদ্রা সীমার শর্ত ছাড়া অন্য কোটা শর্ত খাটবেনা। যেই পরিমাণ বোইদেশিক মুদ্রা নিয়ে দেশে এসেছেন অনধিক সেই পরিমাণ মুদ্রা পাসপোর্টে এনডোর্স ছাড়াই নিয়ে যেতে পারবেন।

ভিসা এবং পোর্ট

ভিসা ভুয়া বা জাল কিনা তা চেক করে নিন, ভিসায় লেখা তথ্য ও নির্দেশনা ভালোভাবে পড়ুন। নিজে নিজে ভিসা করতে না পারলে অবশ্যই ভালো কোনো ট্রাভেল এজেন্ট এর পরামর্শ নিন। সরকারি চাকুরীজীবি হলে GO, বেসরকারি চাকুরীজিবি হলে NOC সাথে রাখুন। ভারত ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে বাই রোডে গেলে আপনার ভিসায় কোন পোর্ট উল্লেখ আছে সেটি দেখে নিন। যেই পোর্ট উল্লেখ থাকবে, শুধুমাত্র সেই পোর্ট দিয়েই ভারতে প্রবেশ করতে ও বের হতে পারবেন। যে কারণেই ভারত যান না কেন, মনে রাখবেন- ভারতীয় রুপি নিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারতে প্রবেশ বা ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরা নিষিদ্ধ।

আরো ট্রাভেল টিপস পড়ুন

জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers এ।

গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য

গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ নিয়ে অনেক চিন্তায় থাকেন হবু মায়ের প্রিয়জনেরা। তাই সাধারণত গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা কোথাও ট্রাভেল করতে অনিচ্ছুক থাকেন। পুরো বছর অনাগত সন্তানের কথা ভেবে কোথাও ভ্রমণ করাকে গর্ভের সন্তানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। এটা একইসাথে সত্যি, ভ্রমণ আনন্দদায়ক হলেও একজন নারী গর্ভকালীন সময়ে ভ্রমণ করে শারীরিক ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এই সময়ে ভ্রমণ করতে চাইলে তাই বিশেষ সতর্কতা নেওয়া উচিত। তখন কিছু বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।গর্ভকালীন কোন জটিলতা না থাকলে গর্ভাবস্থায় ভ্রমনে তেমন কোন বাধা নিষেধ নেই। তবে গর্ভাকালীন সময়ে দূরে কোথাও ভ্রমণ করতে চাইলে তার আদর্শ সময় হচ্ছে দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার। কারণ এ সময়টায় গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকটা কম থাকে।

লম্বা সময় জার্নি

প্রথম তিন মাসে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ সময় দীর্ঘ ভ্রমণ না করাই ভালো। এক শহর থেকে অন্য শহর, বা বিমানে করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ভ্রমণে কোথাও যাবার সিদ্ধান্ত নিলে চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া উচিত। একজন গর্ভবতী নারী ডাক্তারের কথা ও পরামর্শ মতো চললে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারবেন। ডাক্তার পরামর্শ না দিলে অনাগত সন্তানকে ঝুঁকির মুখে ফেলা হয়, এমন কোনো কাজ করা একদমই উচিত হবে না।

লম্বা জার্নি করলে ব্লাড ক্লট বা ডিপ ভেন থ্রম্বোসিস (DVT) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই লং জার্নিতে পর্যাপ্ত পানি খান। শরীর কোনও কারণে ডিহাইড্রেটেড হয়ে গেলে আরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেই সাথে হালকা খাবার খেতে হবে। আর যারা অ্যালকোহলিক, তাদের ক্ষেত্রে সপ্তাহে বড়জোর এক গ্লাস ওয়াইনের অনুমতি দেওয়া হয়। ঘন ঘন চা-কফি বা কোমল পানীয় খেয়ে গলা ভেজানো থেকেও বিরত থাকুন। মনে রাখতে হবে, কোনো ধরণের পানীয় কখনো পানির বিকল্প হতে পারে না।

টয়লেট

প্রেগন্যান্সির এই সময়ে যেকোনো ধরণের জার্নির আগে খেয়াল রাখতে হবে আপনি যেন আরামদায়ক অবস্থায় ভ্রমণ করতে পারেন। মেয়েরা সাধারণত পাবলিক টয়লেটে যাওয়া এড়ানোর জন্য লম্বা জার্নির আগে থেকেই পানি খাওয়া একেবারে কমিয়ে ফেলেন। গর্ভকালীন সময়ে তেমনটা ভুলেও করা না। পর্যাপ্ত পানি খান, আর প্রয়োজনমতো ওয়াশরুমে গিয়ে ব্লাডার খালি রাখুন। এটা না হলে কিন্তু গর্ভকালীন সময়ে মাথাব্যথা বা বমির মতো সমস্যা দেখা দিতে। কিন্তু এটাও ঠিক যে সাধারণ পাবলিক টয়লেট থেকে শুরু করে এমনকী বিলাসবহুল ট্রেন বা বিমানের টয়লেটের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন উঠে আমাদের দেশে। এখন অবশ্য একটা সুবিধে আছে। পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করার জন্য ডিসপোজ়েবল টয়লেট সিট কভার পাওয়া যায়। তেমন কিছু একটা নিজের সাথে রাখতে পারেন। একান্তই কিছু না পেলে স্যানিটাইজ়ার ক্যারি করুন। টিস্যু আর স্যানিটাইজার দিয়ে সিট কভার স্যানিটাইজ করে তবেই বসুন। শুধুমাত্র ট্রেন, বিমান বা পাবলিক টয়লেট নয়, এমনকি ফাইভ স্টার হোটেলের টয়লেট সিট থেকেও ইনফেকশন ছড়াতে পারে! তাই নিজের ঘরের বাইরে কোথাও ওয়াশরুম ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকুন।

যাঁদের জন্য ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ

যাদের আগেও এক বা একাধিকবার গর্ভপাতের হিস্ট্রি রয়েছে তারা ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন। তাদেরকে ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাঁদের অপরিণত অবস্থায় সন্তান জন্মের ইতিহাস রয়েছে তারাও সাবধানে থাকতে হবে।  এখানকার সময়ে নানান রকম টেস্টের মাধ্যমে বোঝা যায় গর্ভের সন্তান ঠিক কী অবস্থায় আছে। গর্ভে যদি একের অধিক সন্তান থাকে তাহলে গর্ভবতী নারীর জন্য ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ হবে। এই সকল পরিস্থিতিতে কোনো প্রয়োজনে যদি ভ্রমণ করতে হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে গর্ভাবস্থার মাঝখানের তিন মাস কোথাও ভ্রমণের জন্য নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়।

কোন পথে ভ্রমণ করবেন

স্থলপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্রেনে তুলনামূলক কম ঝাঁকি লাগে। তাই রেলপথকে সব সময়ই নিরাপদ বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া লং রুটেও এখন বেশ ভালোমানের বাস সার্ভিস আছে। রাস্তা ভালো হলে সড়কপথেও যাওয়া যায়। আর আকাশপথে গর্ভাবস্থার ৩০ থেকে ৩২ সপ্তাহ পর্যন্ত ভ্রমণ মোটামুটি নিরাপদ। নৌপথে পানির দুলুনির জন্য অনেকের ক্ষেত্রে বমিভাব বা বমি হতে পারে।

আকাশপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে করণীয়

আকাশপথে ভ্রমণের জন্য ভ্রমণে সমস্যা নেই-চিকিৎসকের কাছ থেকে এমন একটি নো অবজেকশন সনদ নিতে হবে। ভ্রমণের সময় আরামদায়ক পোশাক পরবেন। দীর্ঘ সময় ভ্রমণে একটানা বসে না থেকে মাঝেমাঝে হাত-পা নাড়ালে ও হাঁটলে শরীরের জন্য ভালো। ভ্রমণে আরামদায়ক স্যান্ডেল বা জুতা পরার অভ্যাস করুন। প্রয়োজন মনে করলে কম্প্রেশন স্টকিং ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি শরীরে রক্ত সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় রক্ত জমাট বাঁধার একটা ঝুঁকি থাকে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ প্রেগন্যান্সি, কোনো প্রকার শারীরিক জটিলতা, অথবা ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস বা গর্ভে একের অধিক সন্তান থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ও ইনজেকশন ব্যবহার করতে হবে।

আরো ট্রাভেল টিপস পড়ুন

জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers এ।

সলো ট্রাভেল বা একা ভ্রমণ এর টিপস

সলো ট্রাভেলিং বা একা ভ্রমণ সারা পৃথিবীতে খুবই জনপ্রিয়। একা ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবসময় কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলা উচিত। বন্ধুর সাথে পথে বেড়িয়ে পড়তে মন্দ লাগে না। কিন্তু জীবনে কোন না কোন সময় আসে যখন পথে একলা চলতে হয়। একা ভ্রমণ করার কথা শুনলে অনেকের শরীর ঠাণ্ডা হয়ে ওঠে! অথচ একা ভ্রমণের আনন্দটা আলাদা এবং বেশ মজার! যদিও এটা নির্ভর করে আপনি কীভাবে এবং কোথায় ভ্রমণে যাচ্ছেন। তবে একা ভ্রমণ বা সলো ট্রাভেল হলো পৃথিবী দেখার সবচেয়ে মুক্ত এবং ফলপ্রসূ পথ। এবং অবশ্যই সত্যিকার এ্যাডভেঞ্চার করতে একাকী ভ্রমণের জুড়ি নেই। তাই ব্যাকপ্যাক নিয়ে বের হবার আগে আপনাকে জেনে নিন একা ভ্রমণ এর কিছু টিপস।

কেন একা ভ্রমণ করবেন?

একা ভ্রমণে সাহস ও আত্মবিশ্বাসই সবচেয়ে বেশি দরকার। সাহস করে একবার বেরিয়ে পরলে নিজের প্রতি এমনিই বিশ্বাস বেড়ে যাবে বহুগুণ। আমাদের দেশে সাধারণত কোথাও একা যাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ নিরুৎসাহিত করা হয়। তাই একবার মনস্থির করে ফেললে সলো ট্রাভেলিং নিয়ে আশেপাশের নেতিবাচক মন্তব্যকে পাত্তা দিবেন না। একাকী ভ্রমণে আপনি যখন ইচ্ছা তখন বিশ্রাম নেয়া থেকে শুরু করে কোথায় কতক্ষণ সময় নিয়ে ভ্রমণ করবেন, কোথায় খাবেন, কি খাবেন, কোথায় থাকবেন, কখন যাবেন ইত্যাদি সিধান্ত গুলো খুব সহজেই নিজের নিতে পারবেন ইচ্ছেমতো।

আরেকটি সুবিধা হল যে আপনার ভুলগুলি শুধুমাত্র আপনার। এর জন্য আপনাকে কারও কাছে কৈফিয়ত বা জবাবদিহি করতে হবে না। শহর থেকে গ্রাম যে স্থানেই ভ্রমণে যান না কেন, কোথায় থেকে শুরু করে কোথায় গিয়ে শেষ করবেন এটার জন্য আপনাকে আপনার বন্ধু বা অন্য কারো কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে না। নিজের ইচ্ছে মত ঘুরতে পারবেন। আপনার যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন। একা ভ্রমণে আপনি নিজেই আপনার গাইড-কাউন্সিলর। নিজের বুদ্ধির উপর আস্থা রেখে সাহস নিয়ে যাত্রা শুরু করুন।

সলো ট্রাভেল এর বাজেট

কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাজেটের উপর ভ্রমণের অনেক বিষয়ই নির্ভর করে। আর বাজেটের একটা বড় অংশ চলে যায় আবাসিক হোটেলের পেছনে। কিন্তু একা ঘুরতে গেলে আবাসিক হোটেলে না থেকে নিজের সুবিধামতো হোস্টেল, বিএনবি, ব্যকপ্যাক হোস্টেল ব্যবহার করা যায়, ফলে হোটেলের খরচ অর্ধেক কমে যায়। তাই সলো ট্রাভেল এর ক্ষেত্রে হোস্টেল বা অনেক সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অর্থের বিনিময়ে থাকা ও খাওয়ার সুবিধা নেওয়া যায়। খাবার ক্ষেত্রেও দামী রেস্টুরেন্টে এড়িয়ে বাজেট রেস্টুরেন্ট বেছে নিতে পারেন।

খাওয়ার টিপস

অনেক ভ্রমণ কারি রয়েছেন যারা রাস্তার পাশের রেস্টুরেন্ট গুলোতে খেতে পছন্দ করেন। খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই রেস্টুরেন্ট এর খাবার তালিকা এবং মূল্য দেখে নিবেন। খাওয়ার সময় অনেকেই মোবাইল ব্যাবহার করতে থাকেন, সেই সময় আপনার পাশে রাখা আপনার ট্রাভেল ব্যাগটি গায়েব হয়ে যেতে পারে। তাই, খাওয়া এবং মোবাইল ব্যাবহারের পাশাপাশি ব্যাগ এর দিকেও লক্ষ্য রাখুন। অনেকে রেস্টুরেন্টে ঢুকেই আগে মোবাইল চার্জ দেন এবং খাওয়া দাওয়া শেষে মোবাইল নিয়ে আসতে ভুলে যান। এটা মোটেও করা যাবে না। একেবারে প্রয়োজন ছাড়া রেস্টুরেন্টে মোবাইল চার্জ না দেয়াই ভালো। যে রেস্টুরেন্টে খেতে ঢুকছেন সেটার খাবারের মান ভালো কিনা যাচাই করে নিন। রেস্টুরেন্টে ঢুকে ফ্রেশ হওয়ার সময় ব্যাগ সাথে রাখুন অথবা রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার এর কাছে রেখে যেতে পারেন। রেস্টুরেন্ট এর ওয়াশরুমে কতটুকু প্রাইভেসি রয়েছে সেটা লক্ষ্য রাখুন।

কাগজপত্র

দেশের বাইরে বেড়াতে গেলে পাসপোর্ট, ভিসার কাগজপত্র নিজের সাথে সাবধানে রাখুন। এছাড়াও পাসপোর্ট, ভিসা ও অন্যান্য জরুরী কাগজপত্রের কিছু ফটোকপি রাখতে ভুল করবেন না। পারলে ভিসা, পাসপোর্ট ও সর্বশেষ এন্ট্রি সিলের ছবি তুলে কাউকে না কাউকে পাঠিয়ে দিন, সুযোগ থাকলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজের লোকশন গুগলের মাধ্যমে আস্থাভাজন বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করুন। কাছের কারো সাথে যোগাযোগ রাখুন নিয়মিত। আপনি কোথায় আছেন, কি করছেন ইত্যাদি। চাইলে হোটেলের ঠিকানা, আপনার ফোন নম্বরও জানিয়ে রাখতে পারেন।

নিরাপত্তা

আপনাকেই আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাতের বেলা অপরিচিত বা দূর কোন স্থানে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। সন্ধ্যার পর খুব বেশি বাইরে যেতে ইচ্ছে হলে যাবেন। কিন্তু  জনসমাগম বেশি এমন সব জায়গায় যেতে পারেন। এছাড়া দামী ডিভাইস বা গহনা সাথে রাখবেন না। যে কোন সময় আপনি যে কোন ছোট বা বড় দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে কয়জন আছেন সেই “সংখ্যা” কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ নয়। একাকী ভ্রমণে নিরাপদ থাকার ভালো উপায় হলঃ ভ্রমণে নিজেকে পর্যটক হিসাবে নিজের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ না করা। অর্থাৎ আপনার প্রতি সবার মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা না করে বরং উল্টোটা করুন।

কিছু ফ্ল্যাশ টিপস

  • বিমানবন্দর থেকে আপনার হোটেল বা শহরের কেন্দ্রে যেতে কতসময় লাগে এবং কত খরচ হতে পারে তা আগেই জেনে রাখুন।
  • একা ভ্রমণে কোথাও যাত্রার পূর্বে বাস, রিক্সা, সিএনজি, অটো রিক্সা বা ট্যাক্সির ভাড়া কত ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে ঠিক করে নিন।
  • হোটেল বুক করার পূর্বে হোটেল সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন। হোটেল রিভিও, হোটেল এর মান ইত্যাদি সম্পর্কে যাচাই করে নিন। এগুলো আপনি ইন্টারনেট ঘেটেও জানতে পারবেন।
  • সর্বদা নিজের উপর আস্থা রাখুন। নিজের সিদ্ধান্ত অন্যের উপর ছেড়ে দিবেন না। কোন বিষয়ে আস্থা না পেলে সেটা পরিহার করুণ।
  • ভ্রমণে আপনার সঠিক পরিচয় দিন, এবং সব জায়গায় একই পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করুণ। এটা আপনাকে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করবে।
  • রাতে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে ঘোরাঘুরি বন্ধ করুন, পাবলিক প্লেসে থাকার চেষ্টা করুণ।
  • আপনার হাঁটাচলা এবং তাকানোর স্টাইল লোকাল মানুষের মত রাখার চেষ্টা করুণ। যাতে অন্য কেউ সন্দেহ না করতে পারে।
  • ভ্রমণে কোট-টাই, ফর্মাল ড্রেস পরিহার করে টিশার্ট বা খোলা জামাকাপড় পড়ার চেষ্টা করুণ।
  • চকচকে জামাকাপড় বা জুয়েলারী পড়ে নিজের দিকে অন্যেদের মনোযোগ আকর্ষণ করবেন না।
  • আপনি একা আছেন সেটা কাউকে ইচ্ছে করে বোঝানোর দরকার নাই।
  • “ভাই আমি এখানে নতুন এসেছি, ঐ লোকেশনে কীভাবে যাব?” এই টাইপের কথা বলা যাবে না।
  • ভ্রমণে কোথায় যাচ্ছেন এই বিষয়ে আপনার বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের সাথে জানিয়ে যাবেন এবং ফোনে, ভিডিও চ্যাট বা ইমেলের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করবেন।

মনে রাখতে হবে

দলবেঁধে ঘুরতে গেলে দলের সবার সময় জ্ঞান, শরীরের অবস্থা, খাবার দাবার, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি অনেক কিছুই ভ্রমণের উপর প্রভাব ফেলে। একা ভ্রমণে আপনি ইচ্ছে করলেই ছকে বাধা কাজের বাইরে গিয়ে রিলাক্সেশনের পাশাপাশি অনেক কিছু আত্মস্থ করতে পারবেন। যা ছক বাঁধা ভ্রমণে সম্ভব হয় না। সলো ট্রাভেল এর সেরা কারণগুলির মধ্যে একটি হল নতুন মানুষোদের সাথে সম্পর্ক হওয়া। কিন্তু আপনার ভুল সিদ্ধান্ত আপনাকে আরো বিপদে ফেলতে পারে। নতুন মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠার আগে ভালোমতা তাকে খেয়াল করুন। তবে আস্তে আস্তে আপনি দক্ষ হয়ে উঠবেন। আপনি মানুষ চিনতে শিখবেন। আর সবকিছু টাকা দিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করবেন না। আপনার মুখের কথা টাকার চেয়ে দামী। আন্তরিক ভাবে কথা বলে অনেক কিছু সমাধান করতে পারবেন। নিজের উপর সব সময় আস্থা রাখুন।

একা ভ্রমণ এবং সন্ন্যাস গ্রহণ এক জিনিস নয় – এটা মনে রাখা খুব জরুরী। যেখানেই যাবেন, পরিচয়পত্র সাথে রাখতে ভুলবেন না। কোনো বেআইনি কাজে সহায়তা করবেন না। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers এ।

আরো ট্রাভেল টিপস পড়ুন

Exit mobile version