কিশোরগঞ্জের চারটি উপজেলা হাওরবেষ্টিত। এগুলো হলো নিকলী, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা। বর্ষাকালে যখন হাওরাঞ্চল পানিতে কানায় কানায় ভরে উঠে। একসময় এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা একমাত্র নৌকার উপর নির্ভরশীল ছিলো। হাওরের প্রবাদও আছে “বর্ষাকালে নাও আর শুকনায় পাও” ; অর্থাৎ বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হাঁটাই যাতায়তের একমাত্র মাধ্যম। এখন দিন বদলেছে। বর্তমানে হাওরে যোগাযোগের জন্য নির্মিত হয়েছে অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সাবমারসিবল সড়ক। ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি অল ওয়েদার সড়ক নামে পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যানে এটি এখন পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে!
কখন যাবেন
হাওর মূলত সব সিজনেই তার রূপ বদলায়। এক এক মৌসুমে আর এক এক রঙ। তবে অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক ভ্রমণের আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তখন হাওরের আসল রূপ দেখতে পাবেন। চারদিকে জলমগ্ন থাকে। তার মাঝখান দিয়ে চলে গেছে পিচ ঢালা কালো রস্তা। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাবমারসিবল রোড ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় যেতে।
কিভাবে যাবেন সাবমারসিবল রোড
অষ্টগ্রাম মিঠামইন রোড ভ্রমণের জন্য প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার গোলাপবাগ থেকে অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। দিনে গিয়ে আবার ঐদিনই ঢাকায় ফিরে আসতে চাইলে আপনাকে সকাল ৭টার মধ্যে রওনা করতে হবে।
ঢাকা থেকে চাইলে এগারোসিন্ধুর ট্রেনেও কিশোরগঞ্জ যেতে পারবেন। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে এই ট্রেনটি সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১২৫ থেকে ২৫০ টাকা। মনে রাখা দরকার আসার পথে আপনি ট্রেন পাবেন না, যদি ঐদিনই ফিরে আসতে চান। বাসেই ফিরতে হবে।
কিশোরগঞ্জ থেকে হাওর রোড
সাবমারসিবল রোড ভ্রমণ করতে চাইলে প্রথমে কিশোরগঞ্জ সদর থেকে করিমগঞ্জ বালিখোলা ঘাট যেতে হবে। কিশোরগঞ্জ সদর থেকে বালিখোলা ফেরী ঘাটের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। সেখান থেকে ফেরী দিয়ে ধনু নদী পার হয়ে মিঠামইন বাজার। নদী পার হতে ঘন্টাখানেক সময় লাগবে। বাজার থেকে একটু সামনে গেলে তিন রাস্তার মোড়। সেখানে সাইনবোর্ডে লিখা দেখবেন বামে ইটনা ডানে অষ্টগ্রাম। এরপর অল ওয়েদার সড়ক ধরে ইটনা বা অষ্টগ্রামের দিকে যেতে পারবেন। যে পথেই যান, একই পথে ফিরে আসতে হবে। দুইটা রাস্তাতেই যেতে চাইলে কিছুদূর গিয়ে ফিরে এসে অন্য রাস্তাতে যান। সেখানে ঘোরার জন্য মোটরবাইক বা ইজিবাইক ভাড়ায় পাবেন। তবে মোটরবাইক সবসময় নাও থাকতে পারে। কিশোরগঞ্জ থেকে যাওয়া আসা ঘোরাঘুরি মিলিয়ে আবার কিশোরগঞ্জ ফেরত আসতে ৬/৭ ঘন্টা সময় লাগবে। আপনি যদি নিকলী হাওর সহ ঐ রাস্তায় ঘুরতে চান তাহলে নিকলী বেড়িবাধ থেকে আপনাকে নৌকা রিজার্ভ নিতে হবে। দেড় ঘন্টার হাওর ভ্রমণ শেষে পৌছে যাবেন ঐ রাস্তায়।
কোথায় খাবেন
খাবারের জন্য অষ্টগ্রাম বা মিঠামইনে ভালো কোনো রেস্টুরেন্ট নাই। তবে মোটামুটি মানের অনেক খাবারের দোকান পেয়ে যাবেন। এসব দোকানে হাওরের তাজা মাছ, ভাত ভর্তা মাংস পাওয়া যায়। জনপ্রতি খাবার খরচ পড়োবে ১০০ থেকে ২০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
অষ্টগ্রাম বা মিঠামইনে থাকার জন্য সরকারী ডাক বাংলো আছে। থাকতে চাইলে আগে থেকে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া থাকার ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই। একান্তই থাকতে হলে কিশোরগঞ্জ শহরে এলে ভালো মানের কিছু হোটেল পাবেন। এগুলোর মধ্যে হোটেল রিভারভিউ, ক্যাসেল সালাম, নিরালা, হোটেল গাঙচিল, উজানভাটি উল্লেখযোগ্য। এইসব হোটেলে থাকতে পারবেন।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
বর্ষায় হাওর ভ্রমণ এখন খুবই জনপ্রিয়। অষ্টগ্রাম মিঠামইন রোড ভ্রমণে অনেকে বাইক নিয়ে আসেন। অনেক বাইকারদেরকে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে উশৃঙ্খল বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাতে দেখা যায়। যার ফলে এখানে প্রতিনিয়ত মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। বাইকারদেরকে অতিরিক্ত গতিতে বাইক চালাতে নিরুৎসাহিত করা হলো। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নৌকায় চড়বেন না। স্থানীয় লোকজন ও মাঝিদের সাথে মার্জিত আচরণ করুন। নৌকা ভাড়া নেওয়ার সময় দরদাম করে নিবেন ভালোমতো। অষ্টগ্রামের রয়েছে ৪০০ বছরের পুরনো পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট কুতুবশাহ মসজিদ। আর মিঠামইনের কামালপুরে আছে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের গ্রামের বাড়ি। সময় পেলে এগুলোতেও ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। অষ্টগ্রাম মিঠামইন রোড খুবই পরিচ্ছন্ন জায়গা। যেখানে সেখানে অপচনশীল দ্রব্য ফেলবেন না।
আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
অষ্টগ্রাম মিঠামন ইটনা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিকলি হাওর, মিঠামইন হাওর, বালিখলা হাওর, অষ্টগ্রাম হাওর ইত্যাদি।
আরো পড়ুন