ডে ট্যুর এ ঢাকার কাছাকাছি যারা বেড়াতে পছন্দ করেন তাদের জন্য চমৎকার একটি স্থান হতে পারে গোলাপ গ্রাম। তুরাগ নদীর পাড়ে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাহপুর গ্রামই মূলত গোলাপ গ্রাম। খুব কম সময়ে এবং কম খরচে ঢাকা থেকে এখানে ঘুরে আসতে পারবেন। শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তির জন্য মাঝে মাঝে আমাদের কিছুটা বিশ্রামের দরকার পড়ে। সেজন্য সবসময় দূরে কোথাও যেতে হবে এমন কথা নেই। মাঝে মাঝে বেড়িয়ে আসা যায় কাছে ধারের কোনো স্থান থেকে। ঢাকার কাছাকাছি জায়গাগুলোর মধ্যে বর্তমানে গোলাপ গ্রাম খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
কিভাবে যাবেন গোলাপ গ্রাম
বিভিন্ন রুট দিয়ে গোলাপ গ্রাম যাওয়া যায়। এর মধ্যে ঢাকার মিরপুর বা উত্তরা দিয়ে যাওয়াটা সুবিধাজনক। যারা মিরপুর দিয়ে যেতে চান তারা ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে মিরপুর ১ আসতে হবে। মিরপুর ১ থেকে রিকশায় দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট। মাথায় রাখতে হবে এটা মিরপুরের দিয়াবাড়ি, উত্তরার দিয়াবাড়ি না। দিয়াবাড়ি ঘাট থেকে প্রতি ১০ মিনিট পরপর সাদুল্লাহপুরের নৌকা ছাড়ে। যেতে সময় লাগবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। লোকাল নৌকায় ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩০ টাকা। রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
উত্তরা থেকে যেতে চাইলে প্রথমে উত্তরা দিয়াবাড়ি আসতে হবে। উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এর সামনে থেকে দিয়াবাড়ির লেগুনা পাওয়া যায়। দিয়াবাড়ি থেকে লোকাল ট্রান্সপোর্টে করে যেতে হবে বিরুলিয়া ব্রিজ। সেখান থেকে ২০ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে চলে আসুন সাদুল্লাহপুর। চাইলে বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে নৌকায় করেও সাদুল্লাহপুর আসা যাবে। রিজার্ভ নৌকা ভাড়া পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এক নৌকায় অনায়াসেই ২০ জন বসা যায়।
টঙ্গী থেকে আসতে চাইলে টঙ্গীর কামারপাড়া হয়ে সিএনজি নিয়ে চলে আসুন বিরুলিয়া ব্রিজ। সেখান থেকে একই ভাবে আসতে হবে সাদুল্লাপুর। সাভার থেকে আসতে চাইলে আলিফ বা মোহনা পরিবহনে করে বিরুলিয়া ব্রিজ নামা যাবে।
সাদুল্লাপুর নেমে হেঁটেই গোলাপ গ্রাম ঘুরে দেখা যাবে। অথবা ঘুরে দেখার জন্য ঘন্টা হিসেবে রিকশাও নিতে পারেন। রিকশা ভাড়া পড়বে ঘন্টাপ্রতি ১০০ টাকা।
কি দেখবেন
পুরো গ্রামটাই এখানে গোলাপ গোলাপের বাগান দিয়ে ভরে আছে। লাল হলুদ সাদা সহ বিভিন্ন রঙের গোলাপ ফুটে থাকে বাগানগুলোতে। এখানে শুধু গোলাপ নয়- আছে রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারাভারা সহ বিভিন্ন জাতের ফুল। প্রতিদিন সন্ধ্যায় গোলাপের হাট বসে। শাহবাগ সহ ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তের ফুল ব্যবসায়ীরা কেনাকাটার জন্য এখানে আসেন। গ্রামীন পরিবেশে এখানে নানান জাতের ফুলের বাগান আপনাকে মুগ্ধ করবে।
যারা বিরুলিয়া ব্রিজ বা মিরপুরের দিয়াবাড়ি থেকে নৌকায় করে সাদুল্লাপুর যাবেন, তারা নৌপথের ভ্রমণটাও উপভোগ করতে পারবেন। নদীপথে যাওয়ার সময় দুইপাশে ফসলি জমি, শস্যক্ষেত আর হাঁসের খামার পড়বে।
কখন যাবেন গোলাপ গ্রাম
সাদুল্লাহপুরে সারা বছর ফুলের চাষ হয়। সারা বছরই কমবেশি ফুল ফোটে। তাই বছরের যেকোনো সময় গেলেই ফুলের দেখা পাবেন। তবে গোলাপ ফোটার উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল। তখন সবগুলো বাগান হরেক রঙের ফুলে ভরে থাকে। ফুলগুলো আকারে বড় থাকে। এই সময় গোলাপ গ্রাম ভ্রমণ এ গেলে বেশি ভালো লাগবে।
কোথায় খাবেন
খাবার জন্য সাদুল্লাপুর ঘাটের কাছে কয়েকটি সাধারণ মানের দোকান আছে। সেখানে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। বেশি মানুষ একসাথে গেলে সেখানে খাবার নাও পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে গিয়ে সাথে সাথে খাবার অর্ডার করলে কিছুটা সময় নিয়ে খাবার রান্না করে দিবে। আর স্ন্যাকস জাতীয় খাবারের জন্য অনেকগুলো ঝুপড়ি চা এর দোকান আছে। সেখানে হালকা খাবার খেতে পারবেন।
ভ্রমণ টিপস ও পরামর্শ
গোলাপ গ্রাম গিয়ে বাগান থেকে গোলাপ ছিঁড়বেন না। আপনার প্রয়োজন হলে সেখান থেকে গোলাপ কিনে নিতে পারবেন। গ্রামের মানুষ বিরক্ত হয়, কিংবা গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হয়, এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সেখানে ভালো খাবারের দোকান নেই। চাইলে সাথে করে খাবার নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু খাবারের খালি প্যাকেট বা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে আসবেন না। মনে রাখতে হবে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাই সন্ধ্যার মধ্যেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করুন।
ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর
ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো বালিয়াটি জমিদার বাড়ি, কেরানিগঞ্জের সারি ঘাট, চৌদ্দার চর ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। গোলাপ গ্রাম সম্পর্কে আরো নির্দিষ্ট কোনো তথ্য আপনার জানা থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।