বালিখলা

দিগন্ত বিস্তৃত হাওর। চারদিকে থইথই পানি। এর মাঝখান দিনে চলে গেছে রাস্তা। এরকম ছবির মতো সুন্দর একটি জায়গা কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা! প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রস্তাটি চলে গেছে বালিখলা থেকে নিয়ামতপুর পর্যন্ত। হাওর থেকে রাস্তাটি বেশ উঁচু হওয়ায় বর্ষাকালেও এটি ডুবে যায়না। এখান থেকে আপনি চাইলে নৌকা নিয়ে হাওরে ভ্রমণ করতে পারবেন। ঢাকা থেকে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার জন্য বালিখোলা হতে পারে চমৎকার একটি স্থান।

কখন যাবেন বালিখলা

বছরের এক এক সময় হাওরের এক এক রূপ থাকে। তবে রাস্তার দুইপাশে পানি দেখতে চাইলে আপনাকে বর্ষাকালে বালিখলা আসতে হবে। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বালিখলা ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় আসতে।

কিভাবে যাবেন

বালিখলা যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার গোলাপবাগ থেকে অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। দিনে গিয়ে আবার ঐদিনই ঢাকায় ফিরে আসতে চাইলে আপনাকে সকাল ৭টার মধ্যে রওনা করতে হবে। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘন্টা। সেখান থেকে নিকলি হাওরের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। রিজার্ভ সিএনজি নিলে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হবে। যেতে সময় লাগে ১ ঘন্টা ২০ মিনিট এর মতো।

ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ

ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যেতে চাইলে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে যেতে হবে। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে এই ট্রেনটি সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১২৫ থেকে ২৫০ টাকা। কমলাপুর থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত যেতে প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা সময় লাগে। মনে রাখা দরকার আসার পথে আপনি ট্রেন পাবেন না। যদি ঐদিনই ফিরে আসতে চান তবে বাসেই ফিরতে হবে।

কিশোরগঞ্জ থেকে বালিখলা

কিশোরগঞ্জ নেমে রিকশা বা অটোরিকশায় করে আপনি চলে আসুন একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ডে। এখান থেকে রিজার্ভ সিএনজিতে বালিখোলা যেতে পারবেন। সময় লাগবে ১ ঘন্টা। ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। একরামপুর থেকে বালিখলার দূরত্ব প্রায় ১৯ কিলোমিটার। হাওরের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া বালিখলা রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার। রাস্তার শেষ মাথায় বালিখলা বাজার। এখান থেকে নৌকা নিয়ে হাওরে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। এখানে নৌকা ভাড়া হয় ঘন্টাপ্রতি। প্রতি ঘন্টার জন্য নৌকা ভাড়া পড়োবে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। আপনার হাতে সময় থাকলে বালিখলা থেকে মিঠামইন ঘুরে আসতে পারেন। যেতে আসতে সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মতো।

কোথায় খাবেন

বালিখলায় খাওয়ার জন্য কোনো খাবারের দোকান নেই। ছোট কিছু টং দোকান পাবেন। সেখানে হালকা নাস্তা করা যাবে। ভারী খাবারের জন্য কিশোরগঞ্জেই আসতে হবে। অথবা যাত্রাপথে করিমগঞ্জ বাজারে থেকে খেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য কিশোরগঞ্জ শহরে ভালো মানের কিছু হোটেল পাবেন। এগুলোর মধ্যে হোটেল রিভারভিউ, ক্যাসেল সালাম, নিরালা, হোটেল গাঙচিল, উজানভাটি উল্লেখযোগ্য। এইসব হোটেলে থাকতে পারবেন। একদিনের জন্য ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

বালিখলা ভ্রমণে আপনি সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নৌকায় চড়বেন না। স্থানীয় লোকজন ও মাঝিদের সাথে মার্জিত আচরণ করুন। নৌকা ভাড়া নেওয়ার সময় দরদাম করে নিবেন ভালোমতো। মিঠামইনের কামালপুরে আছে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের গ্রামের বাড়ি। সময় পেলে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চাইলে সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। হাওর এলাকা খুবই পরিচ্ছন্ন জায়গা। যেখানে সেখানে অপচনশীল দ্রব্য ফেলবেন না।

আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

বালিখলা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিকলি হাওর, মিঠামইন হাওর, অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক, অষ্টগ্রাম হাওর ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক

কিশোরগঞ্জের চারটি উপজেলা হাওরবেষ্টিত। এগুলো হলো নিকলী, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা। বর্ষাকালে যখন হাওরাঞ্চল পানিতে কানায় কানায় ভরে উঠে। একসময় এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা একমাত্র নৌকার উপর নির্ভরশীল ছিলো। হাওরের প্রবাদও আছে “বর্ষাকালে নাও আর শুকনায় পাও” ; অর্থাৎ বর্ষায় নৌকা আর শুকনো মৌসুমে পায়ে হাঁটাই যাতায়তের একমাত্র মাধ্যম। এখন দিন বদলেছে। বর্তমানে হাওরে যোগাযোগের জন্য নির্মিত হয়েছে অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সাবমারসিবল সড়ক। ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি অল ওয়েদার সড়ক নামে পরিচিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যানে  এটি এখন পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে!

কখন যাবেন

হাওর মূলত সব সিজনেই তার রূপ বদলায়। এক এক মৌসুমে আর এক এক রঙ। তবে অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক ভ্রমণের আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তখন হাওরের আসল রূপ দেখতে পাবেন। চারদিকে জলমগ্ন থাকে। তার মাঝখান দিয়ে চলে গেছে পিচ ঢালা কালো রস্তা। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাবমারসিবল রোড ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় যেতে।

কিভাবে যাবেন সাবমারসিবল রোড

অষ্টগ্রাম মিঠামইন রোড ভ্রমণের জন্য প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার গোলাপবাগ থেকে অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। দিনে গিয়ে আবার ঐদিনই ঢাকায় ফিরে আসতে চাইলে আপনাকে সকাল ৭টার মধ্যে রওনা করতে হবে।

ঢাকা থেকে চাইলে এগারোসিন্ধুর ট্রেনেও কিশোরগঞ্জ যেতে পারবেন। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে এই ট্রেনটি সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১২৫ থেকে ২৫০ টাকা। মনে রাখা দরকার আসার পথে আপনি ট্রেন পাবেন না, যদি ঐদিনই ফিরে আসতে চান। বাসেই ফিরতে হবে।

কিশোরগঞ্জ থেকে হাওর রোড

সাবমারসিবল রোড ভ্রমণ করতে চাইলে প্রথমে কিশোরগঞ্জ সদর থেকে করিমগঞ্জ বালিখোলা ঘাট যেতে হবে। কিশোরগঞ্জ সদর থেকে বালিখোলা ফেরী ঘাটের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। সেখান থেকে ফেরী দিয়ে ধনু নদী পার হয়ে মিঠামইন বাজার। নদী পার হতে ঘন্টাখানেক সময় লাগবে। বাজার থেকে একটু সামনে গেলে তিন রাস্তার মোড়। সেখানে সাইনবোর্ডে লিখা দেখবেন বামে ইটনা ডানে অষ্টগ্রাম। এরপর অল ওয়েদার সড়ক ধরে ইটনা বা অষ্টগ্রামের দিকে যেতে পারবেন। যে পথেই যান, একই পথে ফিরে আসতে হবে। দুইটা রাস্তাতেই যেতে চাইলে কিছুদূর গিয়ে ফিরে এসে অন্য রাস্তাতে যান। সেখানে ঘোরার জন্য মোটরবাইক বা ইজিবাইক ভাড়ায় পাবেন। তবে মোটরবাইক সবসময় নাও থাকতে পারে। কিশোরগঞ্জ থেকে যাওয়া আসা ঘোরাঘুরি মিলিয়ে আবার কিশোরগঞ্জ ফেরত আসতে ৬/৭ ঘন্টা সময় লাগবে। আপনি যদি নিকলী হাওর সহ ঐ রাস্তায় ঘুরতে চান তাহলে নিকলী বেড়িবাধ থেকে আপনাকে নৌকা রিজার্ভ নিতে হবে। দেড় ঘন্টার হাওর ভ্রমণ শেষে পৌছে যাবেন ঐ রাস্তায়।

কোথায় খাবেন

খাবারের জন্য অষ্টগ্রাম বা মিঠামইনে ভালো কোনো রেস্টুরেন্ট নাই। তবে মোটামুটি মানের অনেক খাবারের দোকান পেয়ে যাবেন। এসব দোকানে হাওরের তাজা মাছ, ভাত ভর্তা মাংস পাওয়া যায়। জনপ্রতি খাবার খরচ পড়োবে ১০০ থেকে ২০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

অষ্টগ্রাম বা মিঠামইনে থাকার জন্য সরকারী ডাক বাংলো আছে। থাকতে চাইলে আগে থেকে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া থাকার ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই। একান্তই থাকতে হলে কিশোরগঞ্জ শহরে এলে ভালো মানের কিছু হোটেল পাবেন। এগুলোর মধ্যে হোটেল রিভারভিউ, ক্যাসেল সালাম, নিরালা, হোটেল গাঙচিল, উজানভাটি উল্লেখযোগ্য। এইসব হোটেলে থাকতে পারবেন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

বর্ষায় হাওর ভ্রমণ এখন খুবই জনপ্রিয়। অষ্টগ্রাম মিঠামইন রোড ভ্রমণে অনেকে বাইক নিয়ে আসেন। অনেক বাইকারদেরকে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে উশৃঙ্খল বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাতে দেখা যায়। যার ফলে এখানে প্রতিনিয়ত মোটরসাইকেল দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। বাইকারদেরকে অতিরিক্ত গতিতে বাইক চালাতে নিরুৎসাহিত করা হলো। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। লাইফ জ্যাকেট ছাড়া নৌকায় চড়বেন না। স্থানীয় লোকজন ও মাঝিদের সাথে মার্জিত আচরণ করুন। নৌকা ভাড়া নেওয়ার সময় দরদাম করে নিবেন ভালোমতো। অষ্টগ্রামের রয়েছে ৪০০ বছরের পুরনো পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট কুতুবশাহ মসজিদ। আর মিঠামইনের কামালপুরে আছে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের গ্রামের বাড়ি। সময় পেলে এগুলোতেও ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। অষ্টগ্রাম মিঠামইন রোড খুবই পরিচ্ছন্ন জায়গা। যেখানে সেখানে অপচনশীল দ্রব্য ফেলবেন না।

আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

অষ্টগ্রাম মিঠামন ইটনা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিকলি হাওর, মিঠামইন হাওর, বালিখলা হাওর, অষ্টগ্রাম হাওর ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

মিঠামইন হাওর

মিঠামইন হাওর এর অবস্থান কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায়। হাওর মানেই চারদিকে থইথই পানি, ছোট নৌকায় মানুষের কর্মচাঞ্চল্যতা, হাওরের পানিতে দ্বীপের মতো ভেসে থাকা গ্রাম। ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে হাওর আলাদা বিশেষত্ব বহন করে। বর্ষায় হাওর মানেই এক ভিন্ন রকম প্রকৃতি, ভিন্ন রকমের জীবনধারা। নিজের দৈনন্দিন জীবন থেকে কিছুটা সময় বের করে বর্ষায় একবার হাওর জীবন উপভোগ করতেই পারেন। মিঠামইন এর চারপাশে রয়েছে কিশোরগঞ্জের অন্য তিনটি হাওর উপজেলা ইটনা, অষ্টগ্রাম ও নিকলী। তাই বলা চলে ভ্রমণের জন্য আদর্শ একটি জায়গা। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়ি এই উপজেলার কমলাপুর গ্রামে। চাইলে ভ্রমণের সময় সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসতে পারেন।

কখন যাবেন মিঠামইন হাওর

হাওরের প্রকৃতি একেক সিজনে একেক রকম। হাওর সব মৌসুমেই তার রূপ বদলায়। মিঠামইন হাওর ভ্রমণে আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তখন হাওরের আসল রূপ দেখতে পাবেন। চারদিকে জলমগ্ন থাকে। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিঠামইন ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় যেতে।

কিভাবে যাবেন

মিঠামইন যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার মহাখালী গোলাপবাগ ও সায়েদাবাদ থেকে অনন্যা, অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যেতে সময় লাগে সাড়ে তিন ঘন্টার মতো।

ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ

ট্রেনে মিঠামইন যেতে চাইলে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে আসতে হবে। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে এই ট্রেনটি সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। চাইলে বিমানবন্দর  থেকেও উঠতে পারবেন। এটি টঙ্গী, নরসিংদী ও ভৈরব বাজার ইস্টিশন হয়ে কিশোরগঞ্জ যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১৩০ থেকে ২৮০ টাকা। কমলাপুর থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত যেতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লাগে।

কিশোরগঞ্জ থেকে মিঠামইন হাওর

কিশোরগঞ্জে বাস বা ট্রেন থেকে নেমে প্রথমে একরামপুর বাস/সিএনজি স্টেশনে যেতে হবে। একরামপুর থেকে লোকাল সিনজি বা অটোরিকশা নিয়ে চামড়া বন্দর ঘাট। ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে মিঠামইন হাওর ঘুরে আসতে পারবেন। ভ্রমণের জন্য নৌকা ভাড়া হয়ে থেকে ঘন্টা হিসেবে। ঘন্টাপ্রতি ভাড়া নিবে ২৫০-৩৫০ টাকার মতো। আপনি চাইলে সারাদিনের জন্যও নৌকা ভাড়া করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে খরচ কমে আসবে। চামড়া ঘাট থেকে নৌকায় মিঠামইন যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টার মতো।

মিঠামইনে হাওর বাদেও দেখার মতো অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। এর মধ্যে মালিকের দরগা, দিল্লির আখড়া ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এর বাড়ি উল্লেখযোগ্য। এই অঞ্চলে অনেক ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার এখনো প্রচলন আছে। যেমন নৌকা বাইচ, লাঠিখেলা ইত্যাদি। বর্ষায় প্রায়ই নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয় মিঠামইন হাওরে। আগে থেকে খোঁজ খবর নিয়ে গেলে এই খেলাটি দেখতে পারবেন। নৌকা বাইচ এর স্মৃতি আপনার অনেকদিন মনে থাকবে।

কোথায় থাকবেন

মিঠামইনে থাকার ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই। তারপরও কোনো কারণে চাইলে শিকদার হোটেল ও সোহেল গেস্ট হাউজে থাকতে পারবেন। এগুলো সাধারণ মানের বোর্ডিং। এছাড়া উপজেলা ডাকবাংলোতে থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে আগে থেকে যোগাযোগ করে যেতে হবে। অথবা কিশোরগঞ্জ শহরে হোটেল রিভারভিউ, ক্যাসেল সালাম, নিরালা, হোটেল গাঙচিল, উজানভাটি নামে ভালো মানের কিছু হোটেল রয়েছে। এগুলোতে থাকতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

খাওয়ার জন্য মিঠামইন বাজারে মোটামুটি মানের কয়েকটি খাবারের দোকান আছে। এসব রেস্টুরেন্টে ভাত ভর্তার সাথে মিঠামইন হাওরের হরেক রকম তাজা মাছের আইটেম পাবেন। জনপ্রতি খাবার খরচ পড়োবে ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। মিঠামইন হাওরে রাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাধারণ মানের। বড় গ্রুপ না হলে রাতে নৌকায় রাত না কাটানোই শ্রেয়। নৌকা ভাড়ার বিষয়টা ওইদিনের পর্যটক সমাগমের উপর নির্ভর করে। সাধারণত শুক্রবার বা সরকারী ছুটির দিনে নৌকা ভাড়া কিছুটা বেশি থাকে। স্থানীয় মাঝি ও অন্যান্যদের সাথে সবসময় ভালো ব্যবহার করুন। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।

আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

অষ্টগ্রাম মিঠামন ইটনা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিকলি হাওর, অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক, বালিখলা হাওর, অষ্টগ্রাম হাওর ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

অষ্টগ্রাম হাওর

অষ্টগ্রাম হাওর এর অবস্থান কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলায়। কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। যতদূর চোখ যায় চারপাশে থইথই পানি, সেই পানির মাঝখানে ভেসে থাকা দ্বীপের মতো ছোট ছোট গ্রাম। নৌকায় মানুষের দৈনন্দিন যাতায়ত, জেলেদের মাছ ধরার কর্মচাঞ্চল্যতা। সব মিলিয়ে ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে বেড়ানোর জন্য আদর্শ একটি জায়গা অষ্টগ্রাম হাওর।

কখন যাবেন অষ্টগ্রাম হাওর

হাওর মূলত সব সিজনেই তার রূপ বদলায়। এক এক মৌসুমে আর এক এক রঙ। তবে অষ্টগ্রাম হাওর ভ্রমণের আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তখন হাওরের আসল রূপ দেখতে পাবেন। চারদিকে জলমগ্ন থাকে। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অষ্টগ্রাম হাওর ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় যেতে।

কিভাবে যাবেন

অষ্টগ্রাম হাওর যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ জেলায় আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে কিশোরগঞ্জ আসা যায়। ঢাকার গোলাপবাগ থেকে অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। বাস থেকে নামবেন কুলিয়ারচর। কুলিয়ার লঞ্চ ঘাট থেকে সকাল ৮টা থেকে এক দেড় ঘন্টা পরপর লঞ্চ ছাড়ে অষ্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। ভাড়া ৯০ টাকা। চাইলে স্পিডবোটেও যেতে পারবেন অষ্টগ্রাম। সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া পড়োবে ২০০ থকে ২৫০ টাকা। আর বেশি মানুষ গেলে নৌকাও রিজার্ভ করতে পারবেন ঘাট থেকে।

ঢাকা থেকে ট্রেনেও অষ্টগ্রাম হাওর যেতে পারবেন। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে সকাল সাতটায় কিশোরগঞ্জগামী এগারোসিন্ধুর ট্রেন ছেড়ে যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১১০ থেকে ২৫০ টাকা। ট্রেন থেকে নামবেন কুলিয়ারচর ইস্টিশনে। তারপর লঞ্চঘাট থেকে একইভাবে অষ্টগ্রাম যেতে পারবেন।

অন্যকোনো ট্রেনে গেলে ভৈরব বাজার ইস্টিশনে নেমে সেখান থকে সিএনজিতে কুলিয়ারচর আসা যাবে। ভৈরব বাজার থকে কুলিয়ারচরের লোকাল সিএনজি ভাড়া ৪০ টাকা। রিজার্ভ নিলে ২শ টাকার নিবে।

কোথায় থাকবেন অষ্টগ্রাম হাওর

অষ্টগ্রামে থাকার ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই। তারপরও কোনো কারণে চাইলে উপজেলা ডাকবাংলোতে থাকতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আগে থেকে যোগাযোগ করে যেতে হবে। আর কয়েকজন একসাথে গেলে নৌকাতেও রাত্রিযাপন করতে পারবেন। জোছনা রাতে হাওরে কাটাতে পারলে আপনার অনেকদিন সেই স্মৃতি মনে থাকবে। ১৫ জনের বেশি মানুষ হলে রাত্রিযাপনের আগে থানায় রিপোর্ট করতে হয়। রাতে হাওরে নৌকায় থাকলে নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন।

কোথায় খাবেন

খাওয়ার জন্য অষ্টগ্রাম বাজারে সাধারণ মানের কয়েকটি খাবারের দোকান আছে। এসব রেস্টুরেন্টে ভাত ভর্তার সাথে অষ্টগ্রাম হাওরের হরেক রকম তাজা মাছের আইটেম পাবেন। জনপ্রতি খাবার খরচ পড়োবে ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পনির এখানেই পাওয়া যায়। পনির খেতে চাইলে আগেরদিন রাতে স্থানীয় পনির বিক্রেতাদের জানিয়ে রাখতে হবে।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। অষ্টগ্রাম হাওরে রাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাধারণ মানের। বড় গ্রুপ না হলে রাতে নৌকায় রাত না কাটানোই শ্রেয়। আর নৌকা ভাড়ার বিষয়টা ওইদিনের পর্যটক সমাগমের উপর নির্ভর করে। সাধারণত শুক্রবার বা সরকারী ছুটির দিনে নৌকা ভাড়া কিছুটা বেশি থাকে। রাতে যেখানে সেখানে নৌকা না রেখে, অষ্টগ্রাম বাজারের কাছাকাছি নোঙ্গর করুন। স্থানীয় মাঝি ও অন্যান্যদের সাথে সবসময় ভালো ব্যবহার করুন। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেন না।

অষ্টগ্রামের উত্তরে কিশোরগঞ্জের ইটনা ও মিঠামইন। দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর। পূর্বে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই ও পশ্চিমে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা। এগুলোও হাওর এলাকা। এসব এলাকায় গেলে সেখান থেকে অষ্টগ্রাম বেড়িয়ে আসতে পারেন সহজেই। কিংবা অষ্টগ্রাম গেলে হাতে সময় থাকলে এর যেকোনোটিতে ঘুরে আসতে পারবেন।

আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

অষ্টগ্রাম মিঠামন ইটনা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নিকলি হাওর, অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক, বালিখলা হাওর, মিঠামইন হাওর ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

নিকলী হাওর

নিকলী হাওর (Nikli Haor) কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলি উপজেলায় অবস্থিত। কিশোরগঞ্জ সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। প্রকৃতি এখানে তার রূপের পসরা সাজিয়ে রেখেছে ভ্রমণপ্রেমীদের আতিথেয়তা দিয়ে। চারদিকে বিস্তৃর্ণ জলরাশি, থইথই পানি, এর মাঝখানে দ্বীপের মতো ভেসে আছে ছোট ছোট গ্রাম। এর মধ্যেও জেলেদের মাছ ধরার কর্মচাঞ্চল্যতা। ঢাকা থেকে একদিনে বেড়িয়ে আসার মতো আদর্শ একটি জায়গা নিকলি হাওর। ইচ্ছে হলে বড় নৌকা ভাড়া নিয়ে রাতেও থাকতে পারবেন এখানে।

নিকলী হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বছরের এক এক সময় হাওরের এক এক রূপ থাকে। তবে পানি দেখতে চাইলে আপনাকে বর্ষাকালে নিকলি আসতে হবে। অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিকলী হাওর ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে হাওরে পানি কমতে থাকে। তাই চেষ্টা কববেন তার আগেই ভরা বর্ষায় আসতে।

নিকলী যাওয়ার উপায়

নিকলী হাওর যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিশোরগঞ্জ আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি কিশোরগঞ্জ আসতে পারবেন। ঢাকার গোলাপবাগ থেকে অনন্যা সুপার সার্ভিস ও যাতায়ত বাস প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ১৫ মিনিট পরপর কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা। দিনে গিয়ে আবার ঐদিনই ঢাকায় ফিরে আসতে চাইলে আপনাকে সকাল ৭টার মধ্যে রওনা করতে হবে। বাস থেকে নামতে হবে কিশোরগঞ্জের আগেই কটিয়াদি বাস স্ট্যান্ডে। ঢাকা থেকে কটিয়াদি পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা। সেখান থেকে নিকলি হাওরের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। রিজার্ভ সিএনজি নিলে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হবে। যেতে সময় লাগে ১ ঘন্টা ২০ মিনিট এর মতো।

ঢাকা থেকে ট্রেনে কিশোরগঞ্জ

নিকলী হাওরে ডে ট্যুর দিতে চাইলে এগারোসিন্ধুর ট্রেনে আসতে হবে। কমলাপুর ইস্টিশন থেকে এই ট্রেনটি সকাল সাতটায় ছেড়ে যায়। এগারোসিন্ধুর ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন বুধবার। আসন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ১২৫ থেকে ২৫০ টাকা। সবচেয়ে ভালো হবে কিশোরগঞ্জের আগে গচিহাটা ইস্টিশনে নেমে যেতে পারলে। এখানেও ট্রেন থামে। কমলাপুর থেকে গচিহাটা পর্যন্ত যেতে প্রায় ৪ ঘন্টা সময় লাগে। সেখান থেকে নিকলীর দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। সিএনজি রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মতো। যেতে সময় লাগবে ৪০ মিনিট। মনে রাখা দরকার আসার পথে আপনি ট্রেন পাবেন না, যদি ঐদিনই ফিরে আসতে চান। বাসেই ফিরতে হবে।

কিশোরগঞ্জ থেকে নিকলী হাওর

কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকেও নিকলি হাওর যেতে পারবেন। কিশোরগঞ্জ রেল ইস্টিশনের পাশেই আছে নিকলি যাওয়ার সিএনজি ইস্টিশন। ওখান থেকে নিকলীর দূরত্ব ২৭ কিলোমিটার। লোকাল সিএনজিতে ভাড়া জনপ্রতি ৭০ টাকা। আর রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টার মতো।

ভৈরব থেকে নিকলী হাওর

ভৈরব বাজার থেকে লোকাল কিংবা রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে নিকলী হাওর যাওয়া যায়। লোকাল সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ১২০ টাকা। আর রিজার্ভ নিলে খরচ পড়োবে ৬০০ টাকা। ভৈরব থেকে সিএনজিতে নিকলি যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টার মতো। আপনি যেখান থেকে যেভাবে নিকলী হাওর যান না কেন, পথের দুই পাশের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। হাওরের কাছাকাছি যেতেই আপনার মন প্রশান্তিতে ভরে উঠবে।

কোথায় খাবেন

সিএনজি থেকে যেখানে নামবেন সেখানে মোটামোটি মানের কয়েকটি খাবারের দোকান আছে। তার মধ্যে হোটেল সেতু বা ক্যাফে ঢেউ উল্লেখযোগ্য। এসব রেস্টুরেন্টে ভাত ভর্তার সাথে নিকলী হাওরের হরেক রকম তাজা মাছের আইটেম পাবেন। জনপ্রতি খাবার খরচ পড়োবে ১২০ থেকে ২০০ টাকার মতো।

নিকলী হাওরে নৌকা ভ্রমণ

খাওয়া দাওয়া শেষে ইজিবাইকে বেড়ি বাঁধের শেষ প্রান্তে চলে আসুন। সেখান থেকে দরদাম করে নৌকা ঠিক করতে পারবেন। ছোট নৌকার ভাড়া ঘন্টাপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর বড় নৌকার ভাড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। ছোট নৌকায় ৮/১০ জন আর বড়ো নৌকায় ৩০ জন বসতে পারবেন অনায়াসেই। দুই তিন ঘন্টার জন্য নৌকা নিলে ভাড়া একটু কমে আসবে।

চেষ্টা করবেন কমপক্ষে তিন ঘন্টা যেন নৌকায় ঘোরা যায়। নৌকায় উঠার পর প্রথমেই নৌকা নিয়ে চলে যান ছাতিরচর গ্রামে। এখানে আছে ছোটখাটো সোয়াম্প ফরেস্ট। চাইলে জলাবনে নেমে গোসল সেরে নিতে পারেন। তারপরে আপনার গন্তব্য হবে চর মনপুরা। এই চরে নেমে কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়াতে পারেন। ঘোরাঘুরি শেষে ঘাটে ফিরে এসে নিকলী সিএনজি স্টেশন থেকে সিএনজি নিয়ে কটিয়াদি চলে আসুন। কটিয়াদি থেকে ঢাকাগামী লাস্ট বাস ছেড়ে যায় সন্ধ্যা সাতটায়। তাই সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন।

কোথায় থাকবেন

নিকলীতে থাকার ভালো কোনো আবাসিক হোটেল নেই। তারপরও কোনো কারণে চাইলে চেয়ারম্যান গেস্ট হাউজ বা উপজেলা ডাকবাংলোতে থাকতে পারবেন। অথবা কিশোরগঞ্জ শহরে এলে ভালো মানের কিছু হোটেল পাবেন। সেখানে থাকতে পারবেন। আবার কয়েকজন একসাথে এলে নৌকাতেও রাত্রিযাপন করতে পারবেন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

আপনি ঢাকা থেকে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চাইলে অবশ্যই বাসে যাবেন। সকাল সাতটার মধ্যে রওনা করাই ভালো। কটিয়াদি স্টেশনে নামলে আপনার সময় বাঁচবে। কটিয়াদি থেকে ফেরার পথে ঢাকার লাস্ট বাস সন্ধ্যা সাতটায়। তাই সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন। সাঁতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পানিতে নামবেন না। নিকলী হাওরে রাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাধারণ মানের। বড় গ্রুপ না হলে রাতে নৌকায় রাত না কাটানোই শ্রেয়। আর নৌকা ভাড়ার বিষয়টা ওইদিনের পর্যটক সমাগমের উপর নির্ভর করে। সাধারণত শুক্রবার বা সরকারী ছুটির দিনে নৌকা ভাড়া কিছুটা বেশি থাকে।

আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

অষ্টগ্রাম মিঠামন ইটনা ভ্রমণে গেলে আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আসতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মিঠামইন হাওর, অষ্টগ্রাম মিঠামইন ইটনা সড়ক, বালিখলা হাওর, অষ্টগ্রাম হাওর ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

Exit mobile version