সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এটি বাংলাদেশের মূলভূখন্ডের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। স্থানীয় ভাষায় সেন্টমার্টিনকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলে ডাকা হয়। নীল আকাশ আর সাথে সমুদ্রের নীল জলের মিতালী, সারি সারি নারিকেল গাছ এ দ্বীপকে করেছে অনন্য। অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান যা ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে দুর্নিবার আকর্ষনে কাছে টেনে নেয়।
কখন যাবেন সেন্টমার্টিন
সেইন্টমার্টিন যাওয়ার ভালো সময় হলো নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। তখন আকাশ পরিষ্কার থাকে এবং সমুদ্রের পানি থাকে ঘন নীল। এরকম নীল জলরাশির সমুদ্র বাংলাদেশে একমাত্র সেন্টমার্টিন থেকে দেখা যায়। টেকনাফ – সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচল করে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। বছরের বাকি সময় জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। আর ট্রলারে যেতে চাইলে সারা বছরই যাওয়া যায়। তবে বর্ষাকালে ট্রলারে যাতায়ত নিরাপদ নয়।
কিভাবে সেন্টমার্টিন যাবেন
সেন্টমার্টিন যেতে হলে প্রথমে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে আসতে হবে। টেকনাফ থেকে জাহাজ, স্পিডবোট অথবা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে যেতে চাইলে সরাসরি বাসে টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে জাহাজে/ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া সুবিধাজনক। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনায় কক্সবাজার সহ থাকলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে তারপর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে টেকনাফ
ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ঈগল, এস আলম, মডার্ন লাইন, গ্রীন লাইন ইত্যাদি বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। এসি নন বাস ভাড়া ৯শ থেকে ১১শ টাকা, এসি বাস ভাড়া ১৮শ থেকে ২৩শ টাকা পর্যন্ত। আবার ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়েও টেকনাফ যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ঢাকা থেকে প্রথমে কক্সবাজার এসে তারপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে হবে। এছাড়াও ঢাকা থেকে বিমানে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারবেন।
চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ
চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ যেতে হলে চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেস থেকে এস আলম এবং সৌদিয়া বাস রাত ১২টায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া জিইসি গরিবুল্লাশাহ মাজার ও দামপাড়া থেকেও কিছু বাস চট্টগ্রাম-টেকনাফ রুটে চলাচল করে। আবার কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস বা মাইক্রো/জিপ ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যাবে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে সময় লাগে অবস্থা ভেদে ২ থেকে ৩ ঘন্টা।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে আসা-যাওয়া করে কুতুবদিয়া, আটলান্টিক ক্রুজ, বে ক্রুজ, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন ইত্যাদি জাহাজ। এছাড়াও এই সমুদ্র রুটে বেশ কিছু ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করে। জাহাজে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘন্টা। জাহাজের শ্রেনীভেদে আপ-ডাউন ভাড়া ৯০০ থেকে ১৬০০ টাকা। জেটি ঘাট থেকে জাহাজ ছাড়ে প্রতিদিন সকাল ৯ টায়। একই শিপ বিকাল ৩ টায় সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়ে আসে। আসা যাওয়ার সময় জাহাজ ছাড়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে জেটি ঘাটে উপস্থিত থাকলে উঠতে সুবিধা হবে। সধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ এই পাঁচ মাস জাহাজ চলাচল করে। এই সময় ছাড়া অন্য সময়ে গেলে ট্রলার কিংবা স্পিডবোট দিয়ে যেতে হবে।
ভ্রমণ পরিকল্পনা
অনেকে সকালের শিপে গিয়ে বিকালের শিপে ব্যাক করেন। এটা আসলে এক ধরণের ভুল সিদ্ধান্ত। এতে জাহাজ থেকে উঠা নামার মাঝখানে ১ ঘন্টা সময় পাওয়া যায়। এই ১ ঘন্টা জেটি ঘাটে কেটে যায়, দ্বীপ আর দেখা হয়না কিছুই। নূন্যতম ১ রাত সেন্টমার্টিন থাকলে ভালো। তবে ২ রাত থাকলে সবকিছু ভালোভাবে উপভোগ করা যায়।
সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে সুন্দর অংশ হলো সেন্টমার্টিনের পশ্চিম বিচ। পশ্চিম বিচ থেকে যতদূর চোখ যায় শুধু নীল জলরাশি। তাই পশ্চিম বিচের কোনো রিসোর্টে থাকাই ভালো। যারা ১ রাত থাকতে চান তারা প্রথমদিন বিকালেই ছেঁড়াদ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ট্রলারে করে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়া এখন নিষিদ্ধ। তবে চাইলে হেঁটে হেঁটে যেতে পারবেন। অথবা সাইকেল নিয়েও ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়া যায়।
যেদিন সেন্টমার্টিন থেকে ফিরে আসবেন , সেদিন দুপুর দুইটার আগেই খাওয়া দাওয়া সহ সব কাজ শেষ করে দুইটার মধ্যে জেটি ঘাটে থাকতে হবে। নইলে শিপ মিস করার সম্ভাবনা থেকে যায়।
কী খাবেন কোথায় খাবেন
দ্বীপটার নামই নারিকেল জিঞ্জিরা। দ্বীপে এসে প্রচুর ডাব খেতে পারবেন। দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য সবচেয়ে ভালো পাওয়া যায় সামুদ্রিক মাছ ও শুটকি। এখানে রূপচাঁদা, ভেটকি, কোরাল, টুনা, চিংড়ি, স্যামন সহ হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ পাবেন। প্রায় প্রত্যেকটা রিসোর্টেই রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে খেতে পারবেন। প্রতিবেলা খাবার খরচ পড়বে মেন্যু ভেদে জনপ্রতি ১৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। রাতে চাইলে মাছ দিয়ে বারবিকিউ করা যাবে। রিসোর্টে বললে তারাই ব্যবস্থা করে দিবে।
সেন্টমার্টিনের রিসোর্ট সমূহ
থাকার জন্য সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো পশ্চিম বিচ এর রিসোর্ট সমূহ। সেন্টমার্টিনে থাকার অনেকগুলো হোটেল ও রিসোর্ট আছে। এগুলোর ভাড়া সিজন ভেদে উঠানামা করে। তবে ডিসেম্বর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারীতে ভাড়া সর্বোচ্চ থাকে। সেন্টমার্টিন ভ্রমণে আগে থেকে হোটেল-রিসোর্ট কনফার্ম করে যাওয়াই ভালো। কারণ সিজনের সময় সপ্তাহর মাঝামাঝিতেও ভালো রিসোর্ট গুলোতে রুম ফাঁকা থাকেনা।
দ্বীপান্তর বিচ রিসোর্ট: ভিউ ফ্যাসিলিটিজ ও কোয়ালিটি বিবেচনায় এটি সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে সেরা রিসোর্ট। সমুদ্র লাগোয়া এই রিসোর্টের স্থাপত্যশৈলী চমৎকার। আলাদা আলাদা বিচ কটেজ বাদেও এখানে রয়েছে কাঠের ডুপ্লেক্স রুম। রয়েছে কাঠের দোতলা রেস্টুরেন্ট। যেখানে খোলা ছাদে বসে গায়ে সমুদ্রের হাওয়া মেখে সমুদ্র উপভোগ করা যায়। ফ্যামিলি নিয়ে থাকার জন্য এটি বেশ ভালো। রিসোর্টের রুম ভাড়া রুম ভেদে ৫০০০ থেকে ৭০০০ টাকা। তাঁবু ভাড়া ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
নীল দিগন্তে রিসোর্ট: সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত সুন্দর একটি রিসোর্ট। এখানে সবগুলো রুমই টিনশেড। রুম ভাড়া দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা। কোনো বিচ ভিউ রুম নেই।
ফোন নাম্বার: 01730-051005
ব্লু মেরিন রিসোর্ট : সেন্টমার্টিনের আরেকটি সুন্দর রিসোর্ট হলো ব্লু মেরিন রিসোর্ট। এখানে আরো কিছু বাড়তি সুযোগ সুবিধা ব্যবস্থা আছে যেমন পার্টি জোন, হল রুম ইত্যাদি। কর্পোরেট ট্যুরের জন্য এটি বেশি ব্যবহৃত হয়। রুম ভাড়া ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01713-399001
সীমানা পেরিয়ে রিসোর্ট: এই রিসোর্টের অবস্থান পশ্চিম বিচে, ভ্যানে করে যেতে হবে। এতে চোদ্দটি রুম ও একটি নিজস্ব রেস্ট্যুরেন্ট আছে। এর ভাড়া এক হাজার পাঁচশো থেকে দুই হাজার পাঁচশো টাকা।
ফোন নাম্বার: 01911-121292
কোরাল ভিউ রিসোর্ট: এই রিসোর্টটি নৌবাহিনী পরিচালনা করে। এটি সেন্টমার্টিনের পূর্ব বিচে। জেটি থেকে বেশ খানিকটা দূরে বলে ভ্যান/বোট নিয়ে যেতে হবে। এর আয়তন অনেক বড়ো এবং রুমগুলো থেকে মোটামুটি সমুদ্র দেখা যায়। এর রুমপ্রতি ভাড়া দুই হাজার পাঁচশো টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01859-397045
দ্য আটলান্টিক রিসোর্ট: (আগের নাম ছিলো লাবিবা বিলাস) সুপ্রশস্ত এই দ্বিতল রিসোর্টে এর অবস্থান উত্তর বিচে। রুম ভাড়া রুম ভেদে দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা।
সমুদ্র বিলাস রিসোর্ট: পশ্চিম বিচের এর রিসোর্টটি সাদামাটা আর দশটা রিসোর্টের মতোই। তবে এর একটি বিশেষত্ব আছে। এটি মূলত হুমায়ূন আহমেদ এর বাড়ি। এখানে রুম ভাড়া সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01911-920666
সি ভিউ রিসোর্ট এন্ড স্পোর্টস: এই রিসোর্টের অবস্থান জেটি ঘাট এর পাশে উত্তর বিচেই। কম খরচে থাকার জন্য এটি ভালো একটি রিসোর্ট। রুম ভাড়া দেড় থেকে তিন হাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01840-477957
হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজ: এই দ্বিতল হোটেলটির অবস্থান ব্লু মেরিনের কিছুটা উত্তরে। কম খরচে থাকার জন্য এটিও ভালো একটি রিসোর্ট। বিচ থেকে একটু দূরে বলে অল্প কয়েকটি রুম থেকে সমুদ্রের খানিকটা দেখা যায়। প্রাসাদ প্যারাডাইজের প্রতিটি রুমের ভাড়া দুই হাজার থেকে চারহাজার টাকা।
ফোন নাম্বার: 01556-347711
হোটেল সী ইন: সেন্টমার্টিন বাজারের মূল রাস্তা ধরে পাঁচ মিনিট হাটলেই এই হোটেলটির অবস্থান। স্টুডেন্ট বা কম খরচে যারা থাকতে চান তাদের জন্য এটি ভালো একটি হোটেল। এখানে রুম ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
ফোন নাম্বার: 01764-190586
সি প্রবাল রিসোর্ট: উত্তর বিচে কম খরচে থাকার আরেকটি ভালো রিসোর্ট সি প্রবাল। এর রুম ভাড়া ১২শ থেকে ২৫শ পর্যন্ত। স্টুডেন্ট কিংবা যারা কম খরচে থাকতে চান তারা এই রিসোর্টে থাকতে পারবেন।
ফোন নাম্বার: 01756-208383
এগুলো ছাড়াও সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাত্রিযাপনের জন্য কোরাল ব্লু, ড্রিম নাইট, সায়রি, অবকাশ, স্যান্ড শোর, ব্লু লেগুন, সিটিবি ইত্যাদি রিসোর্ট পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
সেন্টমার্টিনে ভালো রিসোর্ট ও খারাপ রিসোর্টের রুম ভাড়ায় তেমন পার্থক্য নেই। ভালো রিসোর্ট গুলোর রুম ভাড়া নির্দিষ্ট থাকলেও, সাধারণ রিসোর্টগুলো সুযোগ বুঝে দাম অনেক বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ফ্যামিলি নিয়ে ভ্রমণ করলে আগে থেকে ভালো রিসোর্টে বুকিং দেওয়াই ভালো। জেটি ঘাটের পাশে হোটেলগুলোতে কম খরচে থাকা যায়। প্রিমিয়াম রিসোর্ট গুলোর অবস্থান একটু ভিতরের দিকে। সেন্টমার্টিনে ভ্যান ভাড়া অনেক বেশি। তাই ভ্যানে চড়ার আগে ভালোমতো দরদাম করে নিন। ছেঁড়া দ্বীপে বিকেলের দিকে গেলেই ভালো, তখন রোদ কম থাকে।
সমুদ্রে নামার আগে জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিন। ভাটার সময় সমুদ্রে নামা ঝুঁকিপূর্ণ। সেন্টমার্টিনের জেটিঘাটের পাশে উত্তর বিচে রিপ কারেন্ট আছে। জেটিঘাটের পাশে সমুদ্রে নামবেন না।
দ্বীপের সাধারণ মানুষদের জন্য সবকিছু একদাম, আর পর্যটকের জন্য অনেক বেশি দাম। সেটা ভ্যান ভাড়া থেকে শুরু করে সবকিছু। তাই কোনো কিছু কেনার আগে ভালোমতো দরদাম করে নিন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers ‘এ।
We started organizing travel events to contribute in the expansion of education in Hill tracks. Later on Green Belt becomes a Brand in this arena. And becomes a tour planner company. Now a days, Green Belt regularly organizes tour both inbound & outbound.
Ph-01869649817
View all posts by greenbelt