মৈনট ঘাট

মৈনট ঘাট

মিনি কক্সবাজার হিসেবে খ্যাত মৈনট ঘাট ডে ট্যুর এর জন্য এটি চমৎকার একটি স্থান! পরিবার বা বন্ধুবান্ধব সহ যারা একটা দিন ঢাকার বাইরে কাটিয়ে আসতে চান, তারা মইনট ঘাট ভ্রমণ এর কথা মাথায় রাখতে পারেন।  মৈনট ঘাট এর অবস্থান ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায়। গুলিস্তান থেকে এর দূরত্ব ৬০ কিঃমিঃ এর মতো। রাজধানী ঢাকা থেকে দিনে গিয়ে দিনেই বেড়িয়ে আসতে পারবেন। এখানে এসে আপনি মুগ্ধ হবেন, বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকবেন পদ্মা নদীর অপার জলরাশির দিকে। এই বিশাল জলরাশি, পদ্মায় হেলেদুলে ভেসে বেড়ানো জেলেদের নৌকা, আর পদ্মার তীরে হেটে বেড়ানো। সব মিলিয়ে কিছুক্ষণের জন্য আপনার মনে হবে আপনি এখন ঢাকার দোহারের মইনট ঘাট এ নয়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আছেন। মূলত এই কারণেই মৈনট ঘাট অনেকের কাছে মিনি কক্সবাজার নামে পরিচিত।

কিভাবে মৈনট ঘাট যাবেন

মৈনট ঘাট ভ্রমণ করতে হলে ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনাকে প্রথমে দোহারে আসতে হবে। গুলিস্তান থেকে দোহারের একাধিক বাস আছে। তবে যমুনা ডিলাক্সই শুধু মইনট ঘাট পর্যন্ত যায়। এটি গুলিস্তান মাজারের সামনে থেকে ছাড়ে। ভাড়া ৯০ টাকা। যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। ফেরার পথে সন্ধ্যা ৬টায় শেষ বাস ছেড়ে আসে। তাই ছ’টার মধ্যেই বাস স্ট্যান্ডে চলে আসুন।

যমুনা পরিবন ছাড়াও “এন মল্লিক পরিবহন” গুলিস্তানের যেই স্থান থেকে ছাড়ে, একই স্থান থেকে জয়পাড়া পরিবহন নামক মিনিবাসটিও ছেড়ে আসে দোহারের জয়পাড়ার উদ্দেশ্যে। যারা প্রাইভেট কার অথবা বাইক নিয়ে আসতে চাচ্ছেন তারা এই বাসের রুটটাকে ব্যবহার করতে পারেন। আসতে সুবিধা হবে।

গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া থেকে “নগর পরিবহনে”ও আসতে পারবেন। ভাড়া ৯০ টাকা। নগর পরিবহন নবাবগঞ্জের রুট ব্যবহার করে না। এই বাসটি আসে মুন্সিগঞ্জ হয়ে। এক্ষেত্রে আপনাকে কার্তিকপুর বাজারে নামতে হবে।

সিএনজিতে মৈনট ঘাট ভ্রমণ করতে চাইলে ঢাকার বাবুবাজার ব্রীজ পার হয়ে কদমতলী থেকে লোকাল সিনজি পাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। লোকাল সিএনজি কার্তিকপুর বাজার পর্যন্ত যায়। ওখান থেকে অটোরিকশায় মইনট ঘাট যাওয়া যাবে।

মোহাম্মদপুরের বসিলা থেকেও মৈনট ঘাট এর সিএনজি পাওয়া যায়। বসিলার তিন রাস্তার মোড় থেকে আপনি সিএনজি রিজার্ভ নিতে পারবেন। এই রাস্তাটা বেশ সুন্দর। রিজার্ভ সিএনজি ভাড়া নিবে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা। এই রাস্তাটা বেশ সুন্দর।

কখন যাবেন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারা বছরই এখানে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন। পদ্মার উত্তাল রূপ ও সতেজ প্রকৃতি দেখতে চাইলে বর্ষায় আসতে হবে। আর শরৎকালে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে এখানে কাশফুলে ভরে যায়। তখন ছবি তোলার জন্য ভালো সময়। শীতকালে গেলে শান্ত পদ্মা পাবেন। মৈনট যাওয়ার পথে সরিষা ক্ষেত দেখতে পাবেন অনেক। শীতে পদ্মার মাঝখানে চর জেগে উঠে। নৌকা বা স্পিডবোট নিয়ে সেই চরে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

মৈনট ঘাট কি কি দেখবেন?

মৈনট ঘাট যাওয়ার আগেই বান্দুরা এলাকায় পড়বে কোকিল প্যারি জমিদার বাড়ি। এটি স্থানীয় ভাবে কালাকোপা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত। প্রায় ১৫০ বছরের ইতিহাসের স্বাক্ষী এই বাড়ি। ভাগ্যকুলের জমিদার যদুনাথ রায় তার সন্তানদের জন্য এই বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া কাছাকাছি জজবাড়ি, উকিলবাড়ি, আন্ধারকোঠা নামে পুরাতন জমিদার বাড়ি আছে। সবগুলোই যদুনাথের প্রতিষ্ঠা করা। পুরাকীর্তির প্রতি আকর্ষণ থাকলে এসব স্থাপনায় একটা চক্কর দিয়ে আসতে ভুলবেন না।

কোথায় খাবেন?

শুকনো মৌসুমে নদীর পাড়ে বেশ কিছু অস্থায়ী খাবারের দোকান পাবেন। পদ্মার তাজা ইলিশ দিয়ে দুপুরের লাঞ্চ সেরে নিতে পারেন এখানে। ইলিশ খেতে চাইলে দাম পড়বে ৬০ থেকে ১০০ টাকা। তবে বর্ষাকালে ঘাটে কোনো দোকান থাকেনা। তখন খাবারের জন্য নিকটস্থ কার্তিকপুর বাজারে আসতে হবে। কার্তিকপুর বাজারে মোটামোটি মানের কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। এছাড়া কার্তিকপুরের বিখ্যাত রণজিৎ ও নিরঞ্জন মিষ্টান্ন ভান্ডারের রসগোল্লাও কিনতে পারবেন এখান থেকে। প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পড়বে পড়বে। রসগোল্লা ছাড়াও এখানে আছে সুস্বাদু দই।

ট্রলার ভাড়া

মৈনট ঘাট ভ্রমণ এ ট্রলার রিজার্ভ করে পদ্মায় ঘুরতে চাইলে ১ ঘন্টার জন্য ভাড়া পড়োবে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। ইঞ্জিনযুক্ত ছোট নৌকায় খরচ হবে ১ ঘন্টায় ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। ভাড়া নেওয়ার সময় অবশ্যই দামাদামি করে নেবেন। শুক্রবারে বা সরকারী ছুটির দিনগুলোতে পর্যটক বেশি থাকে বলে ট্রলার ভাড়া একটু বেশি হয়।

কোথায় থাকবেন

মইনট ঘাট ঢাকার কাছে হওয়ায় আপনি দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে পারবেন। যেতে দুই ঘন্টা সময় লাগে, ফিরতে দুই ঘণ্টা। পর্যটকদের থাকার জন্য মৈনট ঘাট এর আশপাশে কোনো হোটেল, রিসোর্ট, বোর্ডিং এখনও তৈরি করা হয়নি। তারপরও আপনি থাকতে চাইলে স্থানীয় কোনো বাসিন্দার বাড়ি ম্যানেজ করতে পারেন। না পারলে দিনে এসে দিনেই ফিরে আসুন।

সতর্কতা

সাঁতার না জানলে মৈনট ঘাট এর পদ্মা নদীতে গোসল করার সময় বেশি গভীরে যাবেন না। সিগারেট অথবা খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল অথবা যেকোনো প্রকার ময়লা যেখানে সেখানে ফেলবেন না। পাখি মারা থেকে বিরত থাকুন। যার তার সামনে সিগারেট ফোঁকা থেকে বিরত থাকুন। দোকানদার, নৌকাচালক সহ সবার সাথে মার্জিত ব্যবহার করুন। এদেরকে ছোট করে দেখবেন না। খেয়াল রাখুন নিজের কোনো আচরণের দ্বারা কোনো নারী বিরক্ত হলো কিনা।

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর

ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো সাভারের সাদুল্লাপুর এর গোলাপগ্রাম,  , রূপগঞ্জ এর জিন্দা পার্ক, কেরানিগঞ্জের সারিঘাট,  লঞ্চে চাঁদপুর ডে ট্যুর, গাজীপুর এর বেলাই বিল,ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ।

ভ্রমণ মানব জীবনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। একটা সময় আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের ধারণা ছিলো ভ্রমণ মানেই বিলাসিতা। কালের পরিক্রমায় মানুষ গবেষণা করে বের করেছে ভ্রমণ মানে বিলাসিতা নয়। স্বাভাবিক জীবনে ভ্রমণ মানুষকে মানসিক ভাবে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। মানসিক ভাবে ভালো থাকলে কাজের গতি বৃদ্ধি পায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সম্পর্কগুলো সুস্থ থাকে। যারা ভ্রমণ এর জন্য বড় ধরণের বাজেট রাখতে পারেন না, তারা মাঝে মাঝেই ডে ট্যুরে যেতে পারেন। প্রতি সপ্তাহ শেষে বা প্রতি পনের দিনে আপনি আপনার কাছের মানুষকে নিয়ে কোনো ডে ট্যুরে গেলে সর্বনিন্ম ৩০০ টাকা দিয়েও ঘুরে আসতে পারবেন। মৈনট ঘাট ছাড়াও ঢাকার আশেপাশে অন্তত ৩০ টি ডে ট্যুর দেওয়ার মতো জায়গা আছে। মাসে দুইটা ডে ট্যুরে গেলেও আপনি মাসশেষে আপনার মানসিক পরিবর্তন বুঝতে পারবেন।

আরো পড়ুন

error: Content is protected !!
Exit mobile version