খৈয়াছড়া ঝর্ণা

খৈয়াছড়া ঝর্ণা

খৈয়াছড়া ঝর্ণা (Khoiyachora Waterfalls) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় অবস্থিত। বড়তাকিয়া বাজার থেকে এর দূরত্ব ৪.২ কিলোমিটার।  গঠনগত দিক দিয়ে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণা গুলোর একটি। চারপাশে পাহাড়, ঘন জঙ্গল, ঝিরিপথ আর মনোমুগ্ধকর ট্রেইল এই ঝর্ণাকে অনন্যতা দিয়েছে। আপনি যখন ট্রেকিং করে ক্লান্ত অবস্থায় ঝর্ণার সামনে এসে দাঁড়াবেন তখন এক নিমিষে আপনার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। এডভেঞ্চারপ্রেমীদের অনেকে খৈয়াছড়াকে ঝর্ণার রাণী হিসেবে আখ্যায়িত করেন। খৈয়াছড়া ঝর্ণায় মোট নয়টি ধাপ রয়েছে। প্রত্যেকটা ধাপেরই আছে আলাদা সৌন্দর্য! কোনোদিন জোছনা রাতে যদি এখানে ক্যাম্পিং করতে পারেন, তাহলে সেই সময়গুলো আপনার আজীবন মনে থাকবে। চাঁদের আলো, ঝিঝির ডাক, জোনাক পোকা আর ঝর্ণার জলের অবিরাম শব্দ আপনাকে বিমোহিত করে রাখবে পুরোটা সময়। নাপিত্তাছড়া ও খৈয়াছড়া এই রেঞ্জের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঝর্ণা।

 

 

কিভাবে যাবেন

খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া বাজারে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে আপনি বড়তাকিয়া আসতে পারবেন। ঢাকার প্রায় সব বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামগামী বাস ছাড়ে। তবে আরামবাগ সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে বেশি সুবিধাজনক। চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে আপনাকে নামতে হবে মিরসরাই এর বড়তাকিয়া বাজারে। রাতের বাসে সায়েদাবাদ থেকে বড়তাকিয়া পর্যন্ত যেতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে। বাস ভাড়া মান ভেদে ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

ট্রেনে খৈয়াছড়া ঝর্ণা

ঢাকা থেকে বড়তাকিয়ার সরাসরি কোনো ট্রেন নেই। তবে সূবর্ণ ও সোনারবাংলা এক্সপ্রেস বাদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সব ট্রেন ফেনী ইস্টিশনে থামে। ফেনীতে নেমে রিকশা নিয়ে চলে যেতে হবে মহিপাল। সেখান থকে চট্টগ্রামগামী সব বাসে করেই বড়তাকিয়া বাজার যেতে পারবেন। মহিপাল থেকে বড়তাকিয়ার বাস ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা। আর ঢাকা থেকে ফেনীর ট্রেন ভাড়া আসনভেদে ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।

যারা সিলেট থেকে আসবেন তারাও চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে আসতে পারবেন। সিলেট থেকে চট্টগ্রামের সব ট্রেন ফেনীতে থামে। ফেনী নেমে একই ভাবে মহিপাল হয়ে বড়তাকিয়া বাজারে আসা যাবে।

খৈয়াছড়া ঝর্ণা ট্রেইল

বড়তাকিয়া বাজারে নেমে সিএনজিতে করে খৈয়াছড়া ঝর্ণার ঝিরিপথ পর্যন্ত আসা যাবে। সিএনজি ভাড়া নিবে ১০০ টাকা। চাইলে এই পথটুকু হেঁটেও আসতে পারবেন। স্থানীয় যে কাউকে বললে পথ দেখিয়ে দিবে। বাজার থেকে ঝিরিপথের দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার। যেখান থেকে ঝিরিপথ শুরু, সেখান থেকে ট্রেকিংও শুরু।

শুরুতে বাড়িঘর, ধানক্ষেত, তারপর পাহাড় জঙ্গলের মঝখান দিয়ে ট্রেইল। প্রায় ৪৫ মিনিট হাঁটার পর আপনি ঝর্ণার প্রথম ধাপে পৌঁছে যাবেন। এখানে পথ হারানোর ভয় নেই। ছুটির দিনগুলোতে সাধারণত অনেক পর্যটকের দেখা পাবেন একই পথে। ঝিরিপথের শুরুতে অনেক বাড়িঘর আছে। চাইলে সেখান থেকে কাউকে গাইড হিসেবে নিতে পারে। গাইড ফি দিতে হবে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।

ঝর্ণার প্রথম ধাপে পৌঁছানোর পর বাকি ধাপগুলোতে উঠার রাস্তা পেয়ে যাবেন একটু খেয়াল করলে। তবে সাবধানে ট্রেকিং করতে হবে। সামান্য সাবধান হয়ে ট্রেকিং করা কোনো পর্যটকের এখন পর্যন্ত কোনো দূর্ঘটনা ঘটেনি খৈয়াছড়াতে। কিন্তু অতিরিক্ত এডভেঞ্চার করতে যাওয়া, হৈ হল্লা লম্ফঝম্প করা প্রচুর পর্যটক সেখানে গিয়ে দূর্ঘটনায় পড়েছে। তাই এমন কিছু থেকে বিরত থাকুন।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য খৈয়াছড়া বা বড়তাকিয়া বাজারে কোনো হোটেল নাই। খৈয়াছড়া গ্রামে কারো বাড়িতে থাকতে চাইলে স্থানীয় চেয়ারম্যান এর অনুমতি নিতে হবে।  অথবা নিকটস্থ থাকার হোটেলের জন্য আপনাকে যেতে হবে সীতাকুন্ড বাজারে। সীতাকুন্ড পৌরসভায় মোটামুটি মানের তিন চারটি আবাসিক হোটেল আছে। এর মধ্যে হোটেল সৌদিয়া উল্লেখযোগ্য। রুম ভাড়া ৮০০ থেকে ১৬০০ টাকা। এটি পৌর বাজারের ডিটি রোডে। এছাড়া আছে হোটেল সাইমুন। রুম ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। আর আপনি বেশ ভালো মানের হোটেল চাইলে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকতে হবে। বড়তাকিয়া থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটারের মতো।

কোথায় খাবেন

ঝিরিপথের শুরুতে বেশ কিছু খাবারের দোকান আছে। যাওয়ার সময় খাবার অর্ডার করে গেলে ফেরার পথে খেতে পারবেন। এসব খাবারের দোকানে মাছ মাংস ভাত ডাল ইত্যাদি পাবেন। অন্যান্য দোকানের সাথে সেখানে রয়েছে ফখরুল মিয়ার দোকান। ফখরুলকে গ্রিন বেল্ট ট্রাভেল গ্রুপ এর রেফারেন্স দিলে আপনি দিকনির্দেশনা সহ সব কিছুতে ভালো আতিথেয়তা পাবেন।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

খৈয়াছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। শুকনো মৌসুমে এখানে পানি কমে যায়। তাই বর্ষাতেই ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। ঝর্ণার ট্রেইল যত সহজ মনে হোক না কেন, ঝর্ণা মানেই এদিক ওদিক বিপদ ওৎ পেতে থাকে। এজন্য প্রতি পদে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ট্রেইলে প্রতিটা স্টেপে নিজের কমনসেন্স ব্যাবহার করুন। গ্রুপ করে ঘুরতে যাওয়াই ভালো। ক্যাম্পিং করতে চাইলে ক্যাম্পিং এর বেসিক জেনে যাবেন। রাতে আগুন জ্বালালে সকালে সেগুলোর ছাই পরিষ্কার করে আসতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা ছোটলোকি। ভুলেও এই কাজ করবেন না, গোপনেও না।

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

পাশাপাশি দুই উপজেলা মিরসরাই ও সীতাকুন্ডকে বলা যায় ঝর্ণা উপত্যকা। খৈয়াছড়া ঝর্ণা অভিযানে গেলে একইদিন নিচের যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন। পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপর। খৈয়াছড়ার একদম কাছাকাছি আছে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ও কমলদহ ঝর্ণা। বিশ কিলোমিটার দূরের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত কিংবা চন্দ্রনাথ পাহাড়ও চাইলে একই দিন কাভার করতে পারবেন। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের কাছে আছে সীতাকুন্ড ইকোপার্ক। ইকোপার্ক এর ভিতরে আছে সুপ্তধারাসহস্রধারা নামে দুইটা ঝর্ণা।  আর ঝর্ণায় গিয়ে ক্লান্ত থাকায় আবার পাহাড়ে যেতে না চাইলে মহামায়া লেকে ঘুরে আসতে পারেন।

আরো পড়ুন

error: Content is protected !!
Exit mobile version