Golden Temple Bandarban

বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান

বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরতম জেলার নাম বান্দরবান। আপনার বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান এ মেঘ ছুঁয়ে দেখতে চাইলে যেমন এখানকার নীলগিরি নীলাচল যেতে হবে, তেমনি পাহাড়ি রূপ ও পাহাড়ী সংস্কৃতি দেখার জন্য ঘুরতে হবে স্বর্ণমন্দির, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক ইত্যাদি। এছাড়া এডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য রয়েছে নাফাখুম, অমিয়াখুম, বগালেক, কেওক্রাডং, জাদিপাই ঝর্ণা, ডিম পাহাড়, দেবতাকুম, আলীকদম সহ অনেক জায়গা। বলা হয়ে থাকে বান্দরবান ভ্রমণ তালিকায় না থাকলে একজন বাংলাদেশী পর্যটকের বাকেট লিস্ট অসম্পূর্ণ থাকে! প্রকৃতিক রূপ বৈচিত্র্যে অনিন্দ্য সুন্দর এই জেলাকে বলা হয় “পাহাড়ি কন্যা”।

বান্দরবান ভ্রমণ পরিকল্পনা

এই বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান মূলত যারা ফ্যামিলি নিয়ে বান্দরবান যেতে চান তাদের জন্য। যেইসব জায়গা পরিবার পরিবার পরিজন নিয়ে ঘোরার উপযুক্ত না, সেইসব স্পট বাদ দেওয়া হয়েছে। যারা প্রথমবার বান্দরবান যাবেন, কিংবা মেঘের রাজ্যে পরিবার পরিজন বা বন্ধুবান্ধব সহ দুটো দিন কাটিয়ে আসতে চান, তাদের জন্য এই ভ্রমণ পরিকল্পনাটি ফলপ্রসু হবে। এই ট্যুর প্ল্যানে ঘোরার জন্য আপনার কমপক্ষে ১ রাত ২ দিন লাগবে। ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে নিখুঁত ট্যুর প্ল্যান খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে সময় বাঁচে এবং কম খরচে ঘোরা যায়।

যা যা দেখবো এই ট্যুরে
১ম দিনঃ নীলগিরি, চিম্বুক পাহাড়, শৈলপ্রপাত
২য় দিনঃ নীলাচল, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, স্বর্ণমন্দির

বান্দরবন ঘুরতে আপনাকে বাহন হিসেবে সিএনজি, ল্যন্ডক্রুজার জীপ বা চান্দের গাড়ি নিতে হবে। সিএনজিতে সর্বোচ্চ ৪ জন, ল্যান্ডক্রুজারে ৭ জন ও চান্দের গাড়িতে সর্বোচ্চ ১৩ জন বসা যায়। সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী ঘোরার বাহন ঠিক করুন।

প্রথম দিন

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে রাতের বাসে রওনা দিলে ভোরে বান্দরবান এসে পৌঁছে যাবেন। চট্টগ্রাম থেকে যারা আসবেন তারা খুব ভোরে রওনা করলে সকালের মধ্যে বান্দরবান থাকতে পারবেন। এরপর প্রথম কাজ হবে হোটেল নিয়ে নেওয়া। আগে থেকে হোটেল ঠিক করে রাখতে পারেন, চাইলে বান্দরবান এসেও হোটেল নেওয়া যাবে। এরপর ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা সেরে রওনা করুন নীলগিরির উদ্দেশ্যে। যাওয়ার পথে পড়বে শৈলপ্রপাত, মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট ও চিম্বুক পাহাড়। যাওয়ার সময় গাড়ি থামিয়ে এগুলো দেখতে দেখতে যেতে পারেন। অথবা সরাসরি নীলগিরি চলে যেতে পারেন। আসার পথে দেখতে দেখতে আসবেন। পাহাড়ের গা বেয়ে আকাবাঁকা পথ ধরে চলে যাওয়া নীলগিরির রাস্তা আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্রতিটা বাঁকে নতুন সৌন্দর্য।

সন্ধ্যার মধ্যে আবার বান্দরবান শহরে ফিরে আসুন। এরপর হোটেলে ফ্রেশ হয়ে সন্ধ্যার পরের সময়টা শহরে ঘোরাঘুরি করে কাটিয়ে দিতে পারেন। চাইলে সাঙ্গু ব্রিজে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ঘুরে আসা যায়। শহরে বিভিন্ন আদিবাসী পণ্যের দোকান আছে। প্রিয়জন বা কাউকে গিফট দেওয়ার জন্য এসব দোকানে বিভিন্ন রকম স্যুভেনির পাবেন।

বান্দরবান শহর থেকে নীলগিরির দূরত্ব ৫০ কিঃমিঃ। আসা যাওয়াতে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা লাগবে। এর সাথে ঘোরাঘুরির সময় যুক্ত হলে ৭/৮ ঘন্টা লেগে যায়। সুতরাং ঘোরাঘুরির সময় ঘড়ির দিকে তাকাতে ভুলবেন না। এই স্পটগুলো ঘুরে দেখতে সিনজি ভাড়া সম্ভাব্য ২০০০ টাকা, জিপ ভাড়া ২৪০০ থেকে ৩০০০ টাকা, এবং চান্দের গাড়ির ভাড়া ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। গাড়ি নেওয়ার সময় ভালোমতো দরদাম করে নিবেন। ছুটির দিন ছাড়া গেলে গাড়ি কিছুটা কম খরচে পাওয়া যাবে।

দ্বিতীয় দিন

আগেরদিন অনেক সারাদিন যেহেতু ভ্রমণের ধকল গেছে, তাই এদিন চাইলে একটু বেলা করে ঘুম থেকে উঠতে পারেন। এরপর ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিন। এদিন আমরা দেখবো স্বর্ণমন্দির, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স ও নীলাচল। প্রত্যেকটা স্পটই শহর থেকে ৫ কিঃমিঃ এর মধ্যে।

এই জায়গাগুলো দুইভাবে ঘোরা যাবে। সকালবেলা স্বর্ণমন্দির ঘুরে হোটেলে এসে রেস্ট নিয়ে দুপুরের পর মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র এবং নীলাচল ঘোরা যায়। মেঘলা এবং নীলাচল পাশাপাশি।

অথবা দুপুর বারোটার দিকে বের হয়ে প্রথমে স্বর্ণমন্দির এরপর লাঞ্চ। তারপর চলে যান মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র। মনোরম পরিবেশের বিকেলটা কাটিয়ে দিতে পারেন নীলাচলে। নীলাচল থেকে শহরে ফিরতে ২০ মিনিট লাগবে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে শহরে ফিরে আসুন। এরপর রাতের খাবার খেয়ে রাতের বাসে আপনার গন্তব্যে ফিরে ফিরতে চলুন কিছু সুন্দর স্মৃতি নিয়ে।

বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান এর এদিনের স্পটগুলো ঘুরতে রিজার্ভ সিএনজিতে আপনার খরচ হবে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। জিপে লাগবে লাগবে ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা এবং চান্দের গাড়ি নিলে খরচ পড়বে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা।

নীলগিরি বান্দরবান
নীলগিরি আর্মি রিসোর্ট | ছবি: এ.কে.এম মাসুদুজ্জামান

কিভাবে বান্দরবান যাবেন

দেশের প্রায় সব বিভাগীয় শহর থেকে বান্দরবানের বাস আছে। ঢাকা থেকে এসি – নন এসি সব ধরণের বাসই বান্দরবান যায়। নন এসির মধ্যে শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, ডলফিন, সেন্টমার্টিন, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের বাস পাবেন। বাস ছাড়ে কলাবাগান, ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে। রাত এগারোটার মধ্যে লাস্ট বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৫৮০ থেকে ৬২০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো ট্রেনে উঠতে হবে। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, সূবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, মহানগর ও গোধুলী সহ অনেকগুলো ট্রেইন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেন ও আসন ভেদে ভাড়া ২০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে হলে প্রথমে বহদ্দারহাট যেতে হবে। ওখান থেকে ৩০ মিনিট পরপর ‘পূর্বাণী’ ও ‘পূরবী’ নামে দুটি পরিবহনের বাস ছাড়ে। ভাড়া ২২০ টাকা।

ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

বান্দরবান প্রকৃতির এর অপূর্ব লীলাভূমি। এর সৌন্দর্যের টানে বছরজুড়েই এখানে পর্যটকরা ছুটে আসেন। প্রকৃতি এখানে রূপ বদলায় প্রতিটা মৌসুমে। এক এক সিজনে বান্দরবন একেক রকম। যারা মেঘ আর সতেজ প্রকৃতি দেখতে চান তাদের জন্য বান্দরবান ঘোরার আদর্শ সময় হলো বর্ষার শুরু থেকে হেমন্ত পর্যন্ত। অর্থাৎ জুন থেকে নভেম্বর। আর যারা বর্ষা এড়িয়ে শুকনো মৌসুমে বান্দরবানের ভিউ দেখতে চান তাদের জন্য ভালো সময় হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে মার্চ। এপ্রিল -মে – জুন এই তিন মাস প্রচন্ড গরম থাকে বলে তখন বান্দরবান ভ্রমণ পরিকল্পনা না করাই শ্রেয়।

থাকার ব্যবস্থা

বান্দরবানে থাকার জন্য শহর ও এর আশেপাশে বেশকিছু হোটেল ও রিসোর্ট আছে। আপনার সুবিধামতো এর যেকোনোটিতে থাকতে পারেন। কয়েকটি হোটেলের নাম ও ফোন নাম্বার-

হোটেল হিল ভিউ: এর অবস্থান বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই। এটি বেশ ভালো মানের একটি হোটেল। রুম ভাড়া ১২০০ থেকে ২৮০০ টাকা।
পর্যটন মোটেল: এটি শহর ৪ কিঃমিঃ দূরে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স এর কাছে অবস্থিত। রুম ভাড়া ক্যাটাগরি ভেদে ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
হোটেল নাইট হ্যাভেন: এটিও শহর থেকে ৪ কিঃমিঃ দূরে নীলাচলের কাছে। এর রুম ভাড়া ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা।
হোটেল প্লাজা: এটি শহরের মধ্যেই। এই হেটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে। ছিমছাম গুছানো সুন্দর হোটেল। রুম ভাড়া পড়বে ১৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা।
রিভার ভিউ: শহরের ভিতর সাঙ্গু নদীর পাড়ে এই হোটেলটির অবস্থান। রুম ভাড়া ৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা।

নীলাচল বান্দরবান
নীলাচল | ছবি: মহিন রিয়াদ

কোথায় খাবেন

বান্দরবান শহরে খাওয়ার জন্য রয়েছে বেশকিছু রেস্তোরা। এর মধ্যে রূপসী বাংলা রেস্টুরেন্টে, কলাপাতা রেস্টুরেন্ট, ফুড প্যালেস, রি সং সং, তাজিং ডং ইত্যাদি রেস্তোরাঁয় খেতে পারেন।

বান্দরবান ভ্রমণ খরচ

একটা জায়গা ভ্রমণে কেমন খরচ হতে পারে সেটা সম্পূর্ণ নিজের উপর নিজের করে। কেউ হয়তো খুব কম খরচে ঘুরতে চান। আবার কেউ হয়তো একটু আরাম আয়েশ লাক্সারি বেশি পছন্দ করেন। এতে ভ্রমণ খরচ কিছুটা বাড়ে। বেশিরভাগ পর্যটক এই দুইটার মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে ঘুরতে পছন্দ করেন। এই বান্দরবান ট্যুর প্ল্যান এর ভ্রমণ খরচ সম্পর্কে একটু ধারণা দেওয়া যাক-

বাস ভাড়া আসা যাওয়ায় ৬২০ x ২ = ১২৪০ টাকা।
এসি বাসের ভাড়া আসা যাওয়া ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
হোটেল ভাড়া জনপ্রতি ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
যানবাহন ভাড়া দুইদিনে সিএনজি নিলে ৩০০০ টাকা, জিপ ৫৫০০ ও চান্দের গাড়ি ভাড়া ৮৫০০ টাকা। সিএনজিতে ৪ জন, জিপে ৭ জন এবং চান্দের গাড়িতে ১৩ জন বসতে পারবেন সর্বোচ্চ।
খাবার খরচ প্রতিবেলা ১২০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে হয়ে যাবে।
এন্ট্রি ফি সবগুলো স্পট মিলে জনপ্রতি ২০০ টাকা।
*এর সাথে পার্সোনাল অন্যান্য খরচ যুক্ত হবে।

কম খরচে বান্দরবান ভ্রমণ

স্টুডেন্ট, ব্যাকপ্যাকার কিংবা বাজেট ট্রাভেলাররা কম খরচে ঘুরতে পছন্দ করেন। কম খরচে ঘুরতে হলে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। শুক্রবার কিংবা সরকারী ছুটির দিনে না যাওয়াই ভালো। মিড উইকে গেলে হোটেল ও জিপ ভাড়া কম পড়বে। শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে হেঁটে পাঁচ মিনিট সামনে গেলে বাজেট হোটেল আছে অনেক। ছিমছাম গুছানো পরিচ্ছন্ন এসব হোটেলে লাক্সারি না থাকলেও ব্যাকপ্যাকারদের জন্য আদর্শ। কম খরচে এসব হোটেল পেয়ে যাবেন। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসে পর্যটকদের প্রচুর ভিড় হয় বান্দরবানে। সবকিছুর খরচ তুলনামূলক বেশি থাকে। এসময় ওখানে ঘুরতে না যাওয়াই ভালো। ঘোরাঘুরির ক্ষেত্রে যে বিষটা সবসময় খেয়াল রাখবেন, নিজেরা গ্রুপ করে গেলে খরচ কম পড়ে। খরচ তখন সবার সাথে ভাগাভাগি হয়ে যায়। এতে খরচ কমলেও আনন্দের কমতি হবেনা।

নাফাখুম বগালেক সহ বান্দরবানের অন্যান্য স্থানগুলোর ভ্রমণ তথ্য এখানে পড়ুন। এছাড়া যারা ঝামেলা এড়াতে ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন তারা দেশের সবচেয়ে ফিমেইল ফ্রেন্ডলি ট্যুর অর্গানাইজার গ্রিন বেল্ট এর বান্দরবান ট্যুর প্যাকেজটি দেখতে পারেন।

Exit mobile version