রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলায় বালিয়াটি জমিদার বাড়ি অবস্থিত। ১৯৮৭ সালে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর বালিয়াটি প্রাসাদকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা করে। এই বিখ্যাত জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয় গোবিন্দ রাম সাহার হাত ধরে। ২শ বছর আগে ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ছিলেন লবণের বণিক। জমিদার পরিবারে অনেক উত্তরাধিকার ছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কিশোরিলাল রায় চৌধুরী, রায়বাহাদুর হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী। শিক্ষাখাতে তাদের অবদান বিশেষ ভাবে উল্লেখ করার মতো। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ (পরবর্তীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কিশোরিলাল রায় চৌধুরীর পিতা এবং যার নামানুসারে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি (Baliaati zamindar Bari) নামে পরিচিত এই ঐতিহাসিক স্থাপনা ৭ টি দালান নিয়ে গঠিত। সামনের চারটি প্রসাদ ব্যবহৃত হত ব্যবসায়িক কাজে। পেছনের প্রাসাদকে বলা হয় অন্দর মহল যেখানে জমিদার পরিবারের সদস্যরা বসবাস করতেন। পুরো চত্বরের আয়তন প্রায় ১৬,৫৫৪ বর্গমিটার। এই দালানগুলো একসাথে স্থাপিত হয়নি। উত্তরাধিকারগণ ১৯ শতকের মাঝামাঝি থেকে ২০ শতকের শুরুর সময়কালে নির্মান করেন। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত ও পরিচালিত।
কিভাবে যাবেন বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি যেতে হলে প্রথমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া আসতে হবে। ঢাকার গাবতলী থেকে পাটুরিয়া, আরিচা বা মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসে উঠে মানিকগঞ্জের ৮ কিমি আগেই সাটুরিয়া বাসস্টপে নামতে হবে। ভাড়া লাগবে ৩৫-৪০ টাকা। আর মানিকগঞ্জ থেকে সাটুরিয়া যেতে চাইলে শুভযাত্রা, পল্লীসেবা, শুকতারা ইত্যাদি বাসে চড়ে চলে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে ভাড়া লাগবে ২০ টাকার মত। সাটুরিয়া বাসস্টপে থেকে ১২ কিমি দূরে এই বালিয়াটি জমিদার বাড়ির অবস্থান। সাটুরিয়া থেকে যেতে হবে সাটুরিয়া জিরো পয়েন্ট। জিরো পয়েন্ট এর ১ কিলোমিটারের মধ্যেই বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। সাটুরিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি নিয়েও যেতে পারবেন। এছাড়া নিজস্ব গাড়ি নিয়েও ঘুরে আসতে পারেন এই ঐতিহাসিক স্থান।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি প্রবেশের সময়সীমা
গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) বালিয়াটি জমিদারবাড়ি খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ০৬টা পর্যন্ত। শীতকালে (অক্টোবর থেকে মার্চ) সকাল ০৯টা থেকে বিকেল ০৫টা পর্যন্ত খোলা পাবেন। আর প্রতিদিন দুপুর ০১টা থেকে ০১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং শুক্রবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত নামাজ ও খাবারের বিরতি চলে। ঐ সময়টু অফিস কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি রবিবার পূর্ণদিবস আর সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও বন্ধ থাকে।
প্রবেশ ফি: জমিদার বাড়িতে প্রবেশ ফি জনপ্রতি ২০ টাকা। বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য এই ফি ২০০ টাকা। আর সার্কভূক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ১০০ টাকা।
কোথায় খাবেন?
জমিদার বাড়ির আশেপাশে খাওয়ার জন্য বেশকিছু রেস্টুরেন্ট ও হোটেল রয়েছে। বাস থেকে সাটুরিয়া নেমে স্থানীয় খাবার হোটেল আছে। মোটামুটি ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়। ১২০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। খাবারের মেনু হিসেবে ভাত, মাছ, মাংস, ভর্তা, ডাল সবজি ইত্যাদি পাবেন।
কোথায় থাকবেন?
ঢাকা থেকে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে যায়। তারপরও কেউ থাকতে চাইলে মানিকগঞ্জে গিয়ে থাকতে পারবেন। মানিকগঞ্জে থাকার জন্য কিছু হোটেল ও গেস্ট হাউজ আছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মানিকগঞ্জ রেসিডেনসিয়াল বোর্ডিং, নবীন রেসিডেনসিয়াল বোর্ডিং, জেলা পরিষদ বোর্ড হাউজ (সরকারি)।
ভ্রমণ টিপস ও পরামর্শ
হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে পারে। তাই ভ্রমনে যাওয়ার আগে সর্বশেষ ভাড়া ও খরচ সম্পর্কে জেনে ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। ঢাকা থেকে যাতায়তের ক্ষেত্রে রাস্তায় জ্যামের হিসেব করে বের হবেন। ডে ট্যুরে কোথাও গেলে সকাল সকাল বের হয়ে যাওয়াই উত্তম। ভ্রমণে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে আসবেন না। পাশের জনকেও এই বিষয়ে সতর্ক করুন। এটা অভ্যাসের বিষয়।
ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর
ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো কেরানিগঞ্জের সারি ঘাট, গাজীপুর এর বেলাই বিল, সাভারের সাদুল্লাপুর এর গোলাপগ্রাম ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি সম্পর্কে আরো নির্দিষ্ট কোনো তথ্য আপনার জানা থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।