নুহাশ পল্লী

নুহাশ পল্লী (Nuhash Polli) গাজীপুর জেলার পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত। গাজীপুর জেলা সদর থেকে নুহাশ পল্লীর দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর স্মৃতিবিজড়িত এই পল্লীটি প্রায় ৪০ বিঘা জমির উপর নির্মিত। উনার বড় ছেলে নুহাশ এর নাম অনুসারে এই পারিবারিক অবসর যাপন কেন্দ্র ও শুটিং স্পট এর নাম রাখা হয়। জীবনের দীর্ঘ একটা সময় তিনি এখানে কাটিয়েছেন। এখানকার প্রতিটি স্থাপনায় মিশে আছে তাঁর ছোঁয়া এবং ভালোবাসা। নুহাশ পল্লী বিভিন্ন ভাবে এসেছে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যে, নাটকে, সিনেমায়। কিংবদন্তী এই সাহিত্যিক চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন এখানকার লিচুতলায়।

কোনো এক বৃষ্টির দিনে সারাটা দিন শালবনের ভিতরে এই পল্লীতে কাটিয়ে দিতে খারাপ লাগবেনা। কদমের ঘ্রাণ এসে নাকে লাগবে। হয়তো কোথাও থেকে মৃদু সুরে ভেসে আসতে পারে ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো…!’ একদিনের ডে ট্যুরে ঢাকা থেকে ঘুরে আসতে পারেন নুহাশ পল্লী থেকে।

কী দেখবেন

নুহাশ পল্লীর মূল ফটক পেরোলে সবুজ ঘাস এর গালিচা। শান্ত সৌম্য পরিবেশ। চারদিকে পরিকল্পিত ভাবে লাগানো প্রচুর ফলজ বনজ ঔষুধি ও মশলা জাতীয় বৃক্ষ। প্রত্যেকটি গাছে সাঁটানো আছে গাছের পরিচিতি ফলক। বৃক্ষরাজির ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন অবকাঠামো, কাঠের কটেজ, সুইমিংপুল। আরো কিছদূর এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে টিনশেড এর ঘর বৃষ্টিবিলাস! ঝড় বৃষ্টির দিনে টিনের চালের মাতাল করা ঝমঝম শব্দ শুনতেই লেখকের এই আয়োজন। শিশুদের বিনোদনের জন্য আছে এখানে ভূত বিলাস নামের আরেকটি কটেজ। তার পাশেই লীলাবতী দীঘি। মাঝখানে দ্বীপ। কাঠের সাঁকো পার হয়ে দ্বীপে যাওয়া যায়। এখানককার সবকিছুতে আপনি হুমায়ূন আহমেদ এর অস্তিত্ব অনুভব করবেন।

কিভাবে যাবেন নুহাশ পল্লী

নুহাশ পল্লী যাওয়ার জন্য ঢাকার যে কোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে গাজীপুর চৌরাস্তা আসতে হবে। এরপর গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে যেতে হবে ময়মনসিংহ রোডের হোতাপাড়া। ঢাকা থেকে সরাসরি ময়মনসিংসগামী বাসে উঠলে হোতাপাড়া নামা যায়। এছাড়া ঢাকা থেকে কাপাসিয়াগামী বাসেও হোতাপাড়া নামতে পারবেন। ঢাকা থেকে হোতাপাড়ার বাস ভাড়া ৬০ থেকে ৮০ টাকা। উল্লেখ্য ময়মনসিংহ বা কাপাসিয়ার বাসগুলো গাজীপুর চৌরাস্তায় অনেকক্ষণ দেরী করে।

হোতাপাড়া থেকে নুহাশ পল্লী যাওয়ার জন্য সিএনজি, লেগুনা বা ব্যাটারি চালিত রিকশা পাওয়া যায়। সিএনজি ভাড়া নিবে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। আর লেগুনাতে ভাড়া পড়বে ৪০ টাকার মতো। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে হোতাপাড়ার দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। আর হোতাপাড়া থেকে নুহাশ পল্লীর দূরত্ব ৮ কিলোমিটারের মতো।

দর্শনার্থী প্রবেশ ফি

নুহাশ পল্লী ভ্রমণের জন্য আগে থেকে কোনো অনুমতির প্রয়োজন পড়েনা। ১২ বছরের উপরের সবার ক্ষেত্রে প্রবেশ ফি ২০০ টাকা। ১২ বছরের নিচের শিশুদের জন্য কোনো প্রবেশ ফি নেই। ড্রাইভারদেরও কোনো প্রবেশ ফি দিতে হয়না। এই টাকাটা মূলত হুমায়ূন আহমেদের নির্মিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠ এর ব্যায় নির্বাহের জন্য খরচ হয়। আর কেউ হুমায়ূন আহমেদ এর কবর জিয়ারত করতে চাইলে তার জন্য কোনো প্রবেশ ফি নেই। মূল ফটকের বাইরে বাম দিকে আরেকটি ফটক আছে। সেদিক দিয়ে প্রবেশ করে যে কেউ কবর জিয়ারত করতে পারবেন।

কোথায় খাবেন

নুহাশ পল্লীর ভিতরে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে বাইরে কিছু ঝুপড়ি দোকান আছে। সেখানে চা সহ মোটামুটি মানের শুকনো খাবার পাওয়া যায়। কেউ চাইলে সাথে করে খাবার নিয়ে যেতে পারবেন। নইলে দুপুরের খাবারের জন্য হোতাপাড়া বাজারে আসতে হবে।

নুহাশ পল্লী থাকার ব্যবস্থা

রাতে থাকার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই নুহাশ পল্লীতে। তবে বৃষ্টি বিলাস’এ সবার জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা আছে। আর ভূত বিলাস নামের বাংলো বিশ্রামের জন্য নিতে চাইলে ৩০০০ থেকে ৫০০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান

কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। এছাড়া ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো জায়গা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো কেরানিগঞ্জের সারি ঘাট, বালিয়াটি জমিদার বাড়ি, চৌদ্দার চর ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। নুহাশ পল্লী সম্পর্কে আরো নির্দিষ্ট কোনো তথ্য আপনার জানা থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।

আরো পড়ুন

গোলাপ গ্রাম

ডে ট্যুর এ ঢাকার কাছাকাছি যারা বেড়াতে পছন্দ করেন তাদের জন্য চমৎকার একটি স্থান হতে পারে গোলাপ গ্রাম। তুরাগ নদীর পাড়ে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাহপুর গ্রামই মূলত গোলাপ গ্রাম। খুব কম সময়ে এবং কম খরচে ঢাকা থেকে এখানে ঘুরে আসতে পারবেন। শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তির জন্য মাঝে মাঝে আমাদের কিছুটা বিশ্রামের দরকার পড়ে। সেজন্য সবসময় দূরে কোথাও যেতে হবে এমন কথা নেই। মাঝে মাঝে বেড়িয়ে আসা যায় কাছে ধারের কোনো স্থান থেকে। ঢাকার কাছাকাছি জায়গাগুলোর মধ্যে বর্তমানে গোলাপ গ্রাম খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

কিভাবে যাবেন গোলাপ গ্রাম

বিভিন্ন রুট দিয়ে গোলাপ গ্রাম যাওয়া যায়। এর মধ্যে ঢাকার মিরপুর বা উত্তরা দিয়ে যাওয়াটা সুবিধাজনক। যারা মিরপুর দিয়ে যেতে চান তারা ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে মিরপুর ১ আসতে হবে। মিরপুর ১ থেকে রিকশায় দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট। মাথায় রাখতে হবে এটা মিরপুরের দিয়াবাড়ি, উত্তরার দিয়াবাড়ি না। দিয়াবাড়ি ঘাট থেকে প্রতি ১০ মিনিট পরপর সাদুল্লাহপুরের নৌকা ছাড়ে। যেতে সময় লাগবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। লোকাল নৌকায় ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৩০ টাকা। রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

উত্তরা থেকে যেতে চাইলে প্রথমে উত্তরা দিয়াবাড়ি আসতে হবে। উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এর সামনে থেকে দিয়াবাড়ির লেগুনা পাওয়া যায়। দিয়াবাড়ি থেকে লোকাল ট্রান্সপোর্টে করে যেতে হবে বিরুলিয়া ব্রিজ। সেখান থেকে ২০ টাকা অটো ভাড়া দিয়ে চলে আসুন সাদুল্লাহপুর। চাইলে বিরুলিয়া ব্রিজ থেকে নৌকায় করেও সাদুল্লাহপুর আসা যাবে। রিজার্ভ নৌকা ভাড়া পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এক নৌকায় অনায়াসেই ২০ জন বসা যায়।

টঙ্গী থেকে আসতে চাইলে টঙ্গীর কামারপাড়া হয়ে সিএনজি নিয়ে চলে আসুন বিরুলিয়া ব্রিজ। সেখান থেকে একই ভাবে আসতে হবে সাদুল্লাপুর। সাভার থেকে আসতে চাইলে আলিফ বা মোহনা পরিবহনে করে বিরুলিয়া ব্রিজ নামা যাবে।

সাদুল্লাপুর নেমে হেঁটেই গোলাপ গ্রাম ঘুরে দেখা যাবে। অথবা ঘুরে দেখার জন্য ঘন্টা হিসেবে রিকশাও নিতে পারেন। রিকশা ভাড়া পড়বে ঘন্টাপ্রতি ১০০ টাকা।

কি দেখবেন

পুরো গ্রামটাই এখানে গোলাপ গোলাপের বাগান দিয়ে ভরে আছে। লাল হলুদ সাদা সহ বিভিন্ন রঙের গোলাপ ফুটে থাকে বাগানগুলোতে। এখানে শুধু গোলাপ নয়- আছে রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারাভারা সহ বিভিন্ন জাতের ফুল। প্রতিদিন সন্ধ্যায় গোলাপের হাট বসে। শাহবাগ সহ ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তের ফুল ব্যবসায়ীরা কেনাকাটার জন্য এখানে আসেন। গ্রামীন পরিবেশে এখানে নানান জাতের ফুলের বাগান আপনাকে মুগ্ধ করবে।

যারা বিরুলিয়া ব্রিজ বা মিরপুরের দিয়াবাড়ি থেকে নৌকায় করে সাদুল্লাপুর যাবেন, তারা নৌপথের ভ্রমণটাও উপভোগ করতে পারবেন। নদীপথে যাওয়ার সময় দুইপাশে ফসলি জমি, শস্যক্ষেত আর হাঁসের খামার পড়বে।

কখন যাবেন গোলাপ গ্রাম

সাদুল্লাহপুরে সারা বছর ফুলের চাষ হয়। সারা বছরই কমবেশি ফুল ফোটে। তাই বছরের যেকোনো সময় গেলেই ফুলের দেখা পাবেন। তবে গোলাপ ফোটার উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল। তখন সবগুলো বাগান হরেক রঙের ফুলে ভরে থাকে। ফুলগুলো আকারে বড় থাকে। এই সময় গোলাপ গ্রাম ভ্রমণ এ গেলে বেশি ভালো লাগবে।

কোথায় খাবেন

খাবার জন্য সাদুল্লাপুর ঘাটের কাছে কয়েকটি সাধারণ মানের দোকান আছে। সেখানে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন। বেশি মানুষ একসাথে গেলে সেখানে খাবার নাও পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে গিয়ে সাথে সাথে খাবার অর্ডার করলে কিছুটা সময় নিয়ে খাবার রান্না করে দিবে। আর স্ন্যাকস জাতীয় খাবারের জন্য অনেকগুলো ঝুপড়ি চা এর দোকান আছে। সেখানে হালকা খাবার খেতে পারবেন।

ভ্রমণ টিপস ও পরামর্শ

গোলাপ গ্রাম গিয়ে বাগান থেকে গোলাপ ছিঁড়বেন না। আপনার প্রয়োজন হলে সেখান থেকে গোলাপ কিনে নিতে পারবেন। গ্রামের মানুষ বিরক্ত হয়, কিংবা গ্রামের পরিবেশ নষ্ট হয়, এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সেখানে ভালো খাবারের দোকান নেই। চাইলে সাথে করে খাবার নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু খাবারের খালি প্যাকেট বা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে আসবেন না। মনে রাখতে হবে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাই সন্ধ্যার মধ্যেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করুন।

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর

ঢাকার কাছাকাছি ডে ট্যুর এর জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো বালিয়াটি জমিদার বাড়ি, কেরানিগঞ্জের সারি ঘাট,  চৌদ্দার চর ইত্যাদি। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে দেখুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল ফেসবুক গ্রুপ Green Belt The Travelers ‘এ। গোলাপ গ্রাম সম্পর্কে আরো নির্দিষ্ট কোনো তথ্য আপনার জানা থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।

আরো পড়ুন

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান

ঢাকার কাছেই, সবুজেঘেরা কোলাহলমুক্ত পরিবেশের জন্য ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান বিখ্যাত। দেশে যে কয়টি প্রাকৃতিক বনভূমি রয়েছে তার মধ্যে মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় একটি।  ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে একসময় বাঘ, কালো চিতা, চিতাবাঘ, মেঘাবাঘ, হাতি, ময়ূর, মায়া হরিণ ও সম্বর হরিণ দেখা যেত। এ বনে এক সময় খেকশিয়াল, বাঘডাস, বেজি, কাঠবিড়ালী, গুঁইসাপ আর কয়েক প্রজাতির সাপ দেখা যেত। বর্তমানে সে সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। বন বিভাগ এই বনে অজগর, ময়ূর, হরিণ ও মেছোবাঘ ছেড়েছে। উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের দিক দিয়েও এ বন বিশেষভাবে আলোচিত।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে উত্তরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর উপজেলায় এই উদ্যানটি অবস্থিত। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে এই বনের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যে কোনো বাসে চড়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ফটকের সামনেই নামা যায়। এছাড়া ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস চলে এই পথে। ন্যাশনাল পার্কের ৩ নাম্বার গেটে নামার কথা বললে সরাসরি ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের প্রধান গেটে নামতে পারবেন। বাস ভেদে জনপ্রতি ভাড়া ৮০ থেকে ১০০ টাকা। নিজস্ব বাহনে গেলে জয়দেবপুর চৌরাস্তা ছাড়িয়ে ময়মনসিংহের দিকে কিছু দূর চলতে হাতের ডানে পড়বে এর প্রধান প্রবেশপথ।

বনের ভেতরে আছে ৩১টি বনভোজন কেন্দ্র। কেন্দ্রগুলোর নাম আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর, বিনোদন ইত্যাদি। পিকনিক বা পারিবারিকভাবে দলবদ্ধ ভ্রমণের জন্য ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানটি একটি সুন্দরতম স্থান।

কোথায় থাকবেন?

ঢাকা থেকে ভাওয়াল উদ্যানে সারাদিন ঘুরে বিকাল বা সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসা যায়। চাইলে অনুমতি ও বুকিং সাপেক্ষে উদ্যানের ভেতর প্রাকৃতিক পরিবেশে দিন অতিবাহিত করা যায়। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ভেতরে আছে ১৯টি বিশ্রামাগার ও কটেজ। এগুলোর নামও বেশ মজার। চম্পা, জেসমিন, অর্কিড, রজনীগন্ধা, শাপলা, মালঞ্চ, গোলাপ, মাধবী, বকুল, জুঁই, চামেলী, বেলি, আনন্দ-১, আনন্দ-২, আনন্দ -৩, শ্রান্তি ও কেয়া। খুবই চমৎকার ডিজাইলের কটেজ ও রেস্ট হাউজগুলো আগে থেকে বুক করে যেতে হয়। রেস্ট হাউজেই খাবারের ব্যবস্থা আছে। সেটার জন্যও আগে থেকে বলে রাখা লাগে। এসব গেস্ট হাউজে রাত্রী যাপনের অনুমতি নেই।

পুরো পিকনিক স্পট বা রেস্ট হাউজ ভাড়া নেওয়ার জন্য বন বিভাগের মহাখালি কার্যালয় থেকে অগ্রিম বুকিং দিতে হয়। এছাড়া ভাওয়াল গড় থেকেই সামান্য দূরে অবস্থিত রাজেন্দ্রপুর জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কার্যালয় থেকেও নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের বুকিং নেওয়া যায়। মোবাইল: 01781-733000, 01713-575055

এছাড়াও এছাড়া রাতে থাকার জন্য ভাওয়াল গড়ের কাছে আছে সারাহ, সোহাগ পল্লী, স্প্রিং ভ্যালী, ছুটি, নক্ষত্রবাড়ি এবং জল ও জঙ্গলের কাব্যের মতো বেশ কিছু বেসরকারি রিসোর্ট। রিসোর্টগুলোতে যেতে চাইলে আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখা ভাল।

ভ্রমণ টিপস সতর্কতা

ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এর ভেতর নিজেদের সাথে যাওয়া ছোট শিশুদের নজরের ভেতর রাখবেন। বিশেষ করে ওয়াচ টাওয়ারে বা জঙ্গলে হাটার সময়। ভ্রমণের সময় কোন আবর্জনা ময়লা জঙ্গলে ফেলবেন না। উদ্যানে মাছ বা পাখি শিকার বা উচ্চ শব্দ করলে জরিমানা সহ শাস্তির মুখে পড়তে পারেন। এছাড়া উদ্যানের সিসিটিভি রেঞ্জের বাইরে যাওয়াটা নিরাপদ নয় একদমই।

ডে ট্যুর এর অন্যান্য স্থান

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর এর জন্য অনেকগুলো চমৎকার জায়গা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মৈনট ঘাট, মায়াদ্বীপ, সারিঘাট, বেলাই বিল, ছুটি রিসোর্ট, গোলাপ গ্রাম সহ অনেকগুলো স্থান রয়েছে। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে পড়ুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers

বেলাই বিল – গাজীপুর

বিল বা নৌকা ভ্রমণ যাদের পছন্দ, তাদের কাছে গাজীপুরের বেলাই বিল হতে পারে ডে ট্যুর এর জন্য চমৎকার একটি জায়গা। বেলাই বিল ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। চেলাই নদীর সাথে বেলাই বিল। চেলাই নদী সংলগ্ন বাড়িয়া, ব্রাহ্মণগাঁও, বক্তারপুর ও বামচিনি মৌজা গ্রাম ঘেরা একটি মনোমুগ্ধকর বিলের নাম বেলাই বিল। কথিত আছে ভাওয়ালের ভূস্বামী ঘটেশ্বর ঘোষ ৮০ টি খাল কেটে চেলাই নদীর পানি নিঃশেষ করে ফেলেন। তারপরই এটি প্রকাণ্ড বিলে পরিণত হয়। বর্ষায় জেলেরা বিলের চারপাশে মাছ ধরার জন্য ডাঙ্গি খনন করে। নদী ও বিলের অপূর্ব সংমিশ্রণ এই বিলটি গাজীপুরের কানাইয়া বাজার নামক এলাকায় অবস্থিত।

খরস্রোতা চেলাই নদীর কারণে বিলটিও খরস্রোতা রূপে বিরাজমান ছিল। বর্ষা মৌসুমে জেলেরা বিলের চারপাশে মাছ ধরার জন্য ডাঙ্গি খনন করে। আর শুষ্ক মৌসুমে বিলটি হয়ে ওঠে একফসলি জমি। তাতে চাষ হয় বোরো ধান।

কিভাবে যাবেন বেলাই বিল

রাজধানী ঢাকার যেকোন স্থান থেকে বাস বা যেকোন সুবিধাজনক পরিবহণে গাজীপুর বাসস্ট্যান্ড অথবা গাজীপুর শিববাড়ি নেমে সেখান থেকে রিকশা বা সিএনজি দিয়ে কানাইয়া বাজার আসতে হবে। চাইলে টেম্পুতেও কানাইয়া বাজার যেতে পারেন, ভাড়া নেবে ১০ টাকা করে।  কানাইয়া বাজার ঘাটে বেলাই বিল ভ্রমণের জন্য নৌকা ভাড়া পাবেন। কানাইয়া বাজারে নেমেই সামনে ব্রিজ আছে, ব্রিজ পার হয়েই নদীতে বাধা নৌকা ঠিক করে উঠে পড়ুন। দরদাম করে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন উন্মুক্ত বিলে। এখানে ইঞ্জিন চালিত আর ডিঙ্গি নৌকা দুটোই পাওয়া যায়। তাড়া থাকলে ইঞ্জিন নৌকা, আর হাতে সময় থাকলে হাতে বাওয়া ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে নিন। মাঝির সাথে কথা বলে নিজেই সেই নৌকা বেয়ে দেখতে পারেন, ভিন্ন একটা অভিজ্ঞতা হবে সন্দেহ নেই। চাইলে নৌকা সারাদিনের জন্য ভাড়া করতে পারবেন।

বেলাই বিল ভ্রমণে কি দেখবেন?

প্রায় ৮ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত এই বিলের অনেক স্থানেই প্রায় সারা বছর পানি থাকে। তবে বেলাই বিলের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে বর্ষা কালের বিকল্প নেই।  বিলে সারাবছর পানি না থাকলেও বর্ষায় দ্বিগুণ সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয়। সারা বিল জুড়ে চলে শাপলা ফুলের রাজত্ব। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন বিলের মধ্যে অবস্থিত বামচিনি মৌজা নামক দ্বীপ গ্রামটি থেকে। এই গ্রামটির মজার একটি ব্যাপার  হলো গ্রামটির একটা মৌজায় কেবলমাত্র একটিই বাড়ি, বাংলাদেশের আর কোথাও এমন নজির নেই।

কোথায় খাবেন?

কানাইয়া বাজারে দুপুরে খাওয়ার মতো ভালো দোকান নেই। তবে চা বা হালকা স্ন্যাকস পাবেন এখানে। দুপুরে খাওয়ার জন্য গাজীপুর শিববাড়ি আসতে হবে। দীর্ঘ সময়ের জন্য ভ্রমণে গেলে সাথে কিছু খাবার নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।

কোথায় থাকবেন?

কানাইয়া যাবার পথে নীলের পাড়ায় বেশ কিছু রিসোর্ট আছে। উল্লেখযোগ্য হল, আনন্দবাড়ি, সবুজ ছায়া, নির্জন নিবাস। চাইলে আগে থেকে ওখানে বুকিং দিয়ে একবেলা বা একদিনের জন্য সংরক্ষণ করতে পারেন।

সতর্কতা

বর্ষা কালে নৌকায় চড়তে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। এইক্ষেত্রে সাথে লাইফ জ্যাকেট থাকলে সবচেয়ে ভালো। যারা সাতার জানেন না, বয়স্ক বা শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে পুরোটা সময়। ভ্রমণের সময় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোন ময়লা-উচ্ছিষ্ট যেন আমরা ভ্রমণ স্পটগুলোতে ফেলে না আসি।

ডে ট্যুর এর অন্যান্য স্থান

ঢাকার আশেপাশে ডে ট্যুর এর জন্য অনেকগুলো চমৎকার জায়গা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মৈনট ঘাট, মায়াদ্বীপ, সারিঘাট, জিন্দা পার্ক, ছুটি রিসোর্ট, গোলাপ গ্রাম সহ অনেকগুলো স্থান রয়েছে। সবগুলো ডে ট্যুর এর বিস্তারিত এখানে পড়ুন। জয়েন করতে পারেন গ্রিন বেল্ট ট্রাভেলার্সদের নিয়মিত আড্ডাস্থল Green Belt The Travelers এ। বেলাই বিল সম্পর্কে আপনার কোনো তথ্য শেয়ার করার থাকলে আমাদেরকে জানান।

error: Content is protected !!
Exit mobile version