চৌদ্দারচর

ছবি : চৌদ্দার চর

চৌদ্দার চর – আড়াইহাজার

চৌদ্দর চর মেঘনা নদীর মাঝখানে জেগে উঠা সাড়ে তিন কিলোমিটার লম্বা একটি চরের নাম। এটি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার (Araihazar)  উপজেলায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে মাত্র দেড় থেকে/দুই ঘণ্টার পথ। নদীর চারপাশ জুড়ে আছে বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেত, ক্ষীরাই আর বাঙ্গী ক্ষেত। তার মধ্যেই বিশাল বালুকাবেলা। এটি আপনাকে কুয়াকাটার কথা মনে করিয়ে দিবে। নদীর স্বচ্চ টলটোলে পানিতে কিছুক্ষণের জন্য গা ভিজিয়ে নিতে পারবেন চাইলে। এখানকার পানি টলটলে নীলাভ। যারা একটাদিন ঢাকার আশেপাশে ঘুরে আসতে চান, তাদের জন্য চৌদ্দারচর চমৎকার একটি জায়গা।

কিভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে আড়াইহাজার গামী অভিলাস পরিবহণ এর বাস পাবেন। ভাড়া ৬৫ টাকা। এটা মদনপুর দিয়ে যায়। আর গুলিস্তান থেকে যেতে চাইলে দোয়েল/স্বদেশ পরিবহনে মদনপুর নেমে ওখান থেকে ওখান থেকে আড়াইহাজার এর সি এন জি নিতে পারবেন। লোকাল জনপ্রতি ভাড়া ৫০ টাকা।

আর ঢাকার  কলাবাগান থেকে পাবেন মেঘলা পরিবহনের বাস। এগুলোতে গেলে নামতে হবে ভুলতা/গাউসিয়া। ভাড়া ৬৫ টাকা। গাউসিয়া নেমে কিছুটা সামনে যেয়ে লোকাল সি এন জি তে আড়াইহাজার বাজার । এতে ভাড়া ৩০ টাকা।

আড়াইহাজার নেমে থানার মোড় থেকে সিএনজিতে যেতে হবে খাগকান্দা ঘাট। ভাড়া নিবে ৪০ টাকা। খাগকান্দা ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে চৌদ্দার চর ভ্রমণ করতে পারবেন। রিজার্ভ নৌকায় ভাড়া পড়বে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।

কখন যাবেন চৌদ্দার চর

আড়াই হাজারে একেক মৌসুমে একেক রকম দৃশ্য দেখা  যায়৷ বর্ষায় মেঘনা নদীতে পানি বেশি থাকে বলে অনেকে তখন ভ্রমণ করতে চান না। বলা যায় অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত চৌদ্দার চর ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়। তখন নদী শান্ত থাকে। আড়াইহাজার এর চৌদ্দার চর এর বালি অনেক শক্ত। চোরাবালির কোন ভয় নেই। শীতে চরে অনেক রকমের শস্য ক্ষেত দেখা যায়। তখন হরেক রকমের পাখি আসে এখানে।

আড়াইহাজার উপজেলায় চৌদ্দার চর ছাড়াও আরো অনেকগুলো চর আছে। আপনি চাইলে নৌকা নিয়ে এসব চরে যেতে পারবেন। চৌদ্দারচর এর আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ১২৫ বছরের পুরানো স্কুল। ১০৫ বছরের পুরানো জমিদার বাড়ি। শদাসদি ভুইয়া বাড়ি (জমিদার বাড়ি), আড়াইহাজার চৌধুরী পাড়া রাজ বাড়ি। কয়েকশ বছরের পুরানো বটগাছ ইত্যাদি। এছাড়া যাবার পথে  রাস্তার পাশেই লতব্দি মোড়ে কাতান শাড়ীর শিল্প, গামছা শিল্পের তাঁতঘর চোখে পড়বে। কম দামে ভাল কাতান শাড়ি কিনতে পারবেন এখান থেকে।

কোথায় খাবেন

চৌদ্দারচর এ কোনো খাবারের দোকান নেই। খাওয়ার জন্য আপনাকে নিকটস্থ আড়াইহাজার বাজারে আসতে হবে। আড়াইহাজারে খাবারের বেশ কিছু দোকান আছে। এখানে আপনি দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারবেন। এছাড়া দস্তরদি মোড়ে চাচার মালাই চা, আড়াইহাজার বাজারে জিয়ার ডাল পুরি, পাশেই আরেকটা দোকানে আলু পুরি, নোয়াপাড়া ব্র্যাক এর পাশে ডাল পুরি, গোপালদি বাজার এ নাজিমুদ্দিন হোটেল এর গরুর মাংসের টেস্ট নিতে পারেন ভ্রমণে গেলে।

কোথায় থাকবেন

থাকার জন্য আড়াইহাজার বা চৌদ্দারচর এ কোনো ব্যবস্থা নাই। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা ভালো। তবে কেউ একান্তই থাকতে চাইলে আড়াইহাজার এর জেলা পরিষদ ডাকবাংলোতে থাকতে পারবেন। মোবাইল নম্বর ০১৯১৭-০০৮-৪৯৬।

ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা

আড়াইহাজার বা চৌদ্দার চর কোনো পর্যটন এলাকা না। এটি সম্পূর্ণ নদী কেন্দ্রীক একটি জনপদ। যারা সাদামাটা প্রকৃতি পছন্দ করেন, তাদের ভালো লাগবে। সাঁতার না জানলে নদীতে নামবেন না। প্রয়োজনে লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন। বর্ষায় মেঘনা নদীতে পানির স্রোত অনেক বেশি ও নদী উত্তাল থাকে। পরিবার নিয়ে যেতে চাইলে বর্ষায় না যাওয়াই ভালো। ভ্রমণের সময় স্থানীয় মানুষজন ও নৌকার মাঝির সাথে ভালো ব্যবহার করুন। যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলবেন না। এটা শুধু ঘুরতে গিয়ে না, এমনকি শহরেও।

আরো পড়ুন